কয়েক মাস আগের কথা, তখনো শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় নি। একদিন বিকেল বেলা বের হয়েছি সাইকেল নিয়ে। আমাদের এলাকাতে বেশ কয়েকটা খাবার হোটেল আছে। এই হোটেলগুলোর প্রায় সব গুলোতেই আমি খাওয়া দাওয়া করি। একেক হোটেলে একেক জিনিস আমার পছন্দ । আমার সাইকেলে যাওয়ার পথে দুইটা হোটেল পড়ে। তার ভেতরে একটা হোটেলে চিকেনবান তৈরি করে । মোটামুটি আমার এলাকাতে কেবল এই একটা হোটেলেই এই জিনিস পাওয়া যায় । আর কেউ বানায় না । এই চিকেনবানটা আমার বেশ পছন্দের। প্রায় দিনই আমি এখান থেকে এই জিনিস খাই। তবে মূলত এটা খাওয়া হয়, যেদিন আমি বিকেলের দিকে বাসায় চলে আসি । কিন্তু ঐদিন আমি ও সবে মাত্র বের হচ্ছি। তখন একেবারে গরম গরম ভাজতেছে । দেখে মনে হল যে একটু বসে খেয়েই যাই একটা । তবে সেই ইচ্ছে দমন করে রওয়ানা দিলাম নিজের পথে। তবে চিকেনবান খাওয়ার ইচ্ছেটা মনের ভেতরে রয়েই গেল। মনে মনে ঠিক করলাম যে আগামীকাল আমি ওটা খাবোই খাব।
কিন্তু পরের দিন যখন খেতে যাব তখনই দেখি, পেছনের ঘর বাড়ির সাথে সাথে সেই হোটেলটাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখানে বড় বিল্ডিং হবে। সেটা হোক কিন্তু হোটেল তো বন্ধ । আর আগেই বলেছি যে এই বান আমাদের এলাকার আর কোন হোটেলে বানায় না। আর আমার তখন মনে হচ্ছে এই বান আমাকে খেতেই হবে এবং এই হোটেল থেকেই খেতে হবে।
ঐদিন রাতেই আমার মনে এক অদ্ভুত চিন্তা এসে হাজির হল । সেটা হচ্ছে আমার বুঝি আর এই চিকেনবানটা খাওয়া হবে না। তার আগেই আমি কোন না কোণ ভাবে মারা যাবো। এবং যখন আমি মারা যাবো তখন আমার মন জুড়ে কেবল এই চিকেনবানের কথাই মনে পড়বে। একটা আফসোস নিয়ে আমি মরব।
আমার জীবনে বর্তমানে খুব একটা আফসোস নেই । মানে যদি মরেটরে যাই আমার আফসোস থাকবে না । মানে ছিল না এই পর্যন্ত । কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে যে একবার যদি আমি এই চিকেনবান না খেয়ে মরি তাহলে জীবনে আফসোসের সীমা থাকবে না।
তারপরই জুলাই বিল্পব শুরু হল । দেশের পরিস্থিতি অশান্ত হল । এবং আমার মনে সেই বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হয়ে শুরু হল যে এই চিকেনবান না খেয়েই আমি মারা যাব। কোন দিক দিয়ে কোন একটা গুলি এসে লাগবে আমার গায়ে ।
তবে জুলাই বিপ্লব শেষ। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল । কিন্তু আমার মনের সেই হোটেলের চিকেনবানটা না খাওয়ার আফসোস আর গেল না। বিপ্লবের জন্য বিল্ডিংতৈরির কাজ অনেক দিন বন্ধ হয়ে ছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে গত সপ্তাহে আমি সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে খেয়াল করলাম যে পাশের একটা খুপড়ির মত দোকানে সেই হোটেলটা আবার চালু হয়েছে এবং গেস হোয়াট, সেই চিকেনবান আবারও তৈরি হচ্ছে ।
কিন্তু এখানেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি খেয়াল করলাম । এতো দিন এ হোটেলের এ চিকেনবান খাওয়ার জন্য আমার আত্মারাম শেষ হয়ে যাচ্ছিল অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে আমি যাওয়ার সময় নিয়মিতই সেই চিকেনবান দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আমি নামছি না খেতে, আমার ভেতরে সে তীব্র ইচ্ছেটা আর জাগছে না । এমন কি এটাও মনে হচ্ছে না যে এটা না খেয়ে আমি মরে যাবো কিংবা যদি মরে যাইও তবে আমার কোন আফসোস থাকবে না।
বড়ই আচানক ব্যাপার !
ছবিসুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৭