প্রিয় এবং অপ্রিয় ব্লগারগন, আশা করি সবাই ভাল আছেন । ব্লগার ইন্টারভিউয়ের আরেকটি পর্ব নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের মাঝে । আমাদের আজকের অতিথি ব্লগার ভুয়া মফিজ । সময় করে আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ব্লগার ভুয়া মফিজকে অনেক ধন্যবাদ । আর দেরি না করে ইন্টারভিউ শুরু করা যাক !
অপুঃ কেমন আছেন?
ভুয়া মফিজঃ আপনাদের দোয়ায় ভালো।
অপুঃ নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন । মানে, একটা পাব্লিক প্লাটফর্মে যতটা বলা যায় আর কি !
ভুয়া মফিজঃ আমি অতি সাধারন একজন বাংলাদেশী বৃটিশ। একটা বৃটিশ মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কামলা দেই। প্রায় দুই যুগের মতো হয়ে গেল আমার প্রবাস জীবন। দ্যাটস ইট। আর বিশেষ কিছু বলার নাই।
অপুঃ ব্লগ সম্পর্কে ধারণা কিভাবে পেয়েছিলেন ? কিংবা কার মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলেন এই ব্লগের কথা?
ভুয়া মফিজঃ ২৯ শে মার্চ, ২০২০ এ একটা পোষ্ট করেছিলাম, সেখান থেকেই তুলে দিলাম.....…
২০১৩ সালে কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ব্লগার থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দার নিহত হয়। দেশব্যাপী ব্লগ এবং ব্লগার শব্দদু'টো বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। আমিও একটু কৌতুহলী হলাম, একটা মানুষ কি এমন লিখলো যে তাকে এভাবে অকালে প্রান হারাতে হলো? রাজীব হায়দার আরও কয়েকটা ব্লগের সাথে সাথে সামু'তেও লিখতো। পড়লাম ওর কিছু লেখা, পড়ে দেশের অন্য অনেকের মতো ব্লগ এবং ব্লগার সম্পর্কে আমারও বিরুপ ধারনা হলো। আরেকটা জিনিসও তখন আমার পছন্দ হয়নি। সেটা হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্লগটার নাম সামহোয়্যার ইন!! বাংলা ব্লগের ইংরেজি নাম! হলি কাউ!! ব্লগ সম্পর্কিত কিউরিওসিটির ওখানেই সমাপ্তি ঘটে।
এরপরে ২০১৫ সালের দিকে বেশ কিছুদিন দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন ভার্সান পড়তাম। তখন হোমপেইজের একপাশে সামু'র আলোচিত পোষ্টগুলির শিরোনাম লিঙ্কসহ থাকতো। কোন শিরোনাম পছন্দ হলে পড়তাম। পড়তে পড়তে কিছু কিছু ক্যাচালও নজরে পড়তো। মজাই লাগতো। এভাবেই অতিথি পাঠক হিসাবে সামু'তে মোটামুটি নিয়মিত হয়ে গেলাম।
অপুঃ তারপর কীভাবে মনে হল যে এখানে একটা নিক খুলে লেখালেখি শুরু করা যায়?
ভুয়া মফিজঃ একপর্যায়ে ভাবলাম, টুকটাক ছাইপাশ লেখালেখির অভ্যাস যেহেতু আমারও আছে……. রেজিষ্ট্রেশানটা করেই ফেলি। ২০১৬ এর মাঝামাঝি কোন এক সময়ে করে ফেললাম (আর সেই শুভক্ষণেই জন্ম হলো ভুয়া মফিজ এর) এবং ভুলে গেলাম। আরো প্রায় বছরখানেক পর হঠাৎ একদিন মনে হলো, আরে! আমি না সামু'তে যুক্ত হয়েছি? বেশী চিন্তা-ভাবনা না করেই একটা লেখা পোষ্ট করলাম। তখন রেজিস্ট্রেশানের পর কিছুদিন অবজার্ভেশানে থাকা, সেইফ হয়ে প্রথম পাতায় এক্সেস পাওয়া এসবের কিছুই জানতাম না। আমার প্রথম লেখা এমনিতেই প্রথম পাতায় এসেছিল। সম্ভবতঃ মডারেটর মহোদয় আমার কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়েই আমাকে প্রথম পাতায় সরাসরি এক্সেস দিয়ে দেন!!
অপুঃ আপনার কেন ছদ্মনামে লেখার কথা মনে হল? আর এতো রেখে এই ভুয়া নাম কেন নিলেন?
ভুয়া মফিজঃ আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশ নিয়ে বলতে গেলে বেশ লম্বা কথা বলতে হবে। অতি সংক্ষেপে বলি। আমার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল স্বনামে আবির্ভূত হওয়ার। ব্লগে ভিজিটর হিসাবে যখন আসতাম, দেখতাম আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের খেলা। তো ব্লগে যখন একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি জানতাম এইধরনের হামলা-পাল্টা হামলার প্রসিডিওরের মধ্য দিয়ে একদিন না একদিন আমাকে যেতেই হবে। এদিকে মানুষ হিসাবে আমি ধৈর্য্যহীন, শর্ট-টেম্পারড। দেশে আমার যে ক্ষুদ্র পরিচিতিটা আছে, তাতে সবাই আমাকে বদরাগী, কিন্তু একজন নিপাট ভদ্রলোক হিসাবেই জানে। কাজেই নিজের নামে আসলে আর আক্রমণের মুখে আমার প্রতিক্রিয়া দেখলে পরিচিত লোকজন আছাড় খেতো বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে তা না করলে আমাকে প্রতিনিয়ত হাসিমুখে কিল হজম করতে হতো, যেটা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তখনই সিদ্ধান্ত নেই ছদ্মনামে আসার, তাতে সবদিকই রক্ষা হয়। তাছাড়া, লেখালেখিতেও একটা স্বাধীনতা পাওয়া যায়। সুশীল টাইপের মেন্দামারা ব্লগিং আমার সাথে যায় না একদমই। নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেয়া কোন ভালো বিষয় না, কি বলেন?
দ্বিতীয় অংশের জন্য বলি...........ছদ্মনাম একটা নিবো সিদ্ধান্ত তো নিলাম, কি নেয়া যায়? একটা মজার মিম ভিডিও দেখেছিলাম তখন, সেটাতে মফিজ নামে একটা ক্যারেকটার ছিল। সেই নামটাই মনে গেথে যায়। উত্তরবঙ্গের বোকাসোকা মানুষদেরকে ''মফিজ'' বলে জানেন বোধহয়। প্রথমে নিক ঠিক করেছিলাম ''মফিজ মিয়া''। পরে ভাবলাম, আরে!! মানুষ হিসাবে তো আমি বোকাসোকা না, উত্তরবঙ্গেরও না; তাহলে আমি মিথ্যামিথ্যি মফিজ, অর্থাৎ ''ভুয়া মফিজ''!!! এই হলো ইতিহাস!!!
অপুঃ এই সামু ব্লগের আগেও কি অন্য কোথাও লেখালেখি করেছেন? অনলাইন এবং অফলাইন?
ভুয়া মফিজঃ দেশে সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে সময়ে সময়ে কিছু লেখা পাঠিয়েছিলাম। কিছু ছেপেছে, কিছু ছাপায় নাই। ইংল্যান্ডে 'ক্লিয়ার ভয়েস' নামের একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টুকটাক লিখেছি।
অপুঃ যখন এই ব্লগে লেখালেখি শুরু করেছিলেন তখন আসলে কী মনে করে লেখালেখি শুরু করেছিলেন?
ভুয়া মফিজঃ বেড়ানো যেহেতু আমার নেশা; বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্লগারের এ'সংক্রান্ত লেখা পড়েছি। তো একপর্যায়ে ভাবলাম, আমিও যেহেতু বেশ ঘোরাঘুরি করি, আমার অভিজ্ঞতাগুলোও এই প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই শুরু।
অপুঃ আপনি যখন প্রথম ব্লগটা দেখেছিলেন আর এখন যখন দেখছেন, এই দুই সময়ের ভেতরে কেমন পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন?
ভুয়া মফিজঃ খুব বেশী যে পার্থক্য আছে তা না। পার্থক্যটা আসলে মূলতঃ সংখ্যাগত। ভালো লেখা, বাকোয়াজ লেখা আগেও যেমন আসতো, এখনও তেমনই আসে। ব্লগার যেহেতু কমে গিয়েছে, তাই দু'টারই পরিমানটাও কমে গিয়েছে। আর হ্যা, আরেকটা পার্থক্য আছে। এখন অনেক ব্লগারের লেখাতেই ফেসবুকীয় প্রভাব দেখা যায়, যেটা আমি যখন থেকে দেখা শুরু করেছি, এতোটা প্রকট ছিল না। সংজ্ঞানুযায়ী একটা ব্লগ লেখা যেমন হওয়া উচিত, কিছু কিছু ব্লগারের লেখায় তেমনটা দেখা যায় না।
অপুঃ সামু ব্লগ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? আর কী কী পরিবর্তন বা উন্নয়ন আনলে আপনি খুশি হতেন?
ভুয়া মফিজঃ মুল্যায়ন কিছুটা হতাশাজনক। আমি যখন শুরু করি, ব্লগ সম্পর্কে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল। এখন মনোভাবটা এমন.....চলছে, চলুক। এর থেকে খুব বেশী কিছু আশা করা ঠিক না। শুরুর দিকটাতে ব্লগ জমজমাট ছিল, কারন অপশান খুব বেশী ছিল না। এখন প্রচুর অপশান আছে। তার মানে ব্লগকে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। পরিবর্তন বা উন্নয়নের কথা বলতে গেলে অনেক লম্বা সময় নিয়ে বলতে হবে। বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এসব নিয়ে বলেছেন, আমিও বলেছি। নতুন করে কিছু বলতে চাই না। শুধু বলবো, ব্লগের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করার আছে, যদি করার ইচ্ছা থাকে। একটা আধুনিক ব্লগের যেসব বৈশিস্ট্য থাকে, সামুতে তার অনেকটাই অনুপস্থিত।
অপুঃ সামুর ব্লগারদের ব্যাপারে আপনার মনভাব কী? সামগ্রিক ভাবে?
ভুয়া মফিজঃ আমার মতে, সামগ্রিকভাবে ব্লগারদের মান কমে গিয়েছে। যেমনটা আগে বলেছি, ফেসবুকের প্রভাব এর জন্য অনেকটাই দায়ী। শর্টকাটের পিছনে দৌড়ানোর পরিমান বেড়ে গিয়েছে। একটা ব্লগ পোষ্টের জন্য যেই পরিমান পড়ালেখা, রিসার্চ আর মনোযোগ দরকার, সেটা এখন খুব কমই দেখা যায়।
অপুঃ এই ব্লগ থেকে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?
ভুয়া মফিজঃ ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও, সম্ভব। তবে সেইজন্য ব্লগেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসাটা জরুরী।
অপুঃ ব্লগে ব্লগাররা নিজেদের মত প্রকাশের ব্যাপারে কত টুকু স্বাধীন বলে আপনার মনে হয়?
ভুয়া মফিজঃ ক্ষেত্র বিশেষে বেশ স্বাধীন। মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়, একটু বেশীই স্বাধীন; যেটা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে কোনও সময়ে বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে; কারন অনেকেই এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে।
অপুঃ বাক-স্বাধীনতা মানে আসলে আপনার কাছে কী? প্রশ্নটা আরেকটু ঘুরিয়ে যদি বলি, বাক স্বাধীনতা থাকা মানেই কি আমি কাউকে গালি দেওয়ার অধিকার রাখি?
ভুয়া মফিজঃ আমার তো মনে হয়, অনেক ব্লগার বাক-স্বাধীনতার সংজ্ঞাটাই ঠিকমতো জানে না। আবার অনেকে জেনেও এটার অপব্যবহার করে। অবশ্য তাদেরও দোষ দেয়া যায় না। বাক-স্বাধীনতা নিয়ে একটা হিপোক্রেসী সারা দুনিয়াতেই আছে। বিশেষ করে বাক-স্বাধীনতার ধ্বজাধারী উন্নত বিশ্বে এখন এটা অনেকটাই নেইকেড একটা ব্যাপার। আপনার কথায় আসি.........বাক-স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে অন্যকে গালি দেওয়াটা এর অপব্যবহারের মধ্যেই পড়ে।
অপুঃ সামু ব্লগে ‘ধর্মের উপর কটাক্ষ’ এর ঘটনা ঘটে, এই ব্যাপারে আপনার মনভাব কি?
ভুয়া মফিজঃ প্রথমেই একটা কথা পরিস্কার করি। সামু ব্লগে ধর্ম মানেই ইসলাম ধর্ম। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ কারা করে? সোজা কথায় এরা শ্যুগার কোটেড সায়ানাইড পিলের মতো নাস্তিকের আড়ালে ইসলামোফোব। আমি দেশে-বিদেশে বহু নাস্তিকের সাথে মিশেছি। একজন প্রকৃত নাস্তিক ধর্মের অসাঢ়তা প্রমানের চেষ্টা করে শালীনতার মধ্যে থেকে। তারা কখনও অন্য যে কোনও ধর্ম-বিশ্বাসীকে আঘাত করে কিছু বলে না। ব্লগে মোটামুটিভাবে নাস্তিক আমি একজনকেই পেয়েছি। ব্লগার নুতন। বাকীসব ইসলামোফোব। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এপার-ওপার বাংলার কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্লগার আছে যারা সুযোগ পেলেই নাস্তিকতার নামে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কুৎসা রটায়। আর এদের সাথে জ্বী-হুজুর জ্বী-হুজুর করে কিছু মুসলমান নামধারী ইসলামোফোব। অনেককেই দেখেছি এদের কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হতে। এদের ব্যাপারে সাবধান থাকা দরকার।
অপুঃ অনেকেই অভিযোগ করেন যে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ধর্মের উপরে বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোন যথাযত ব্যবস্থা নেন না। এই অভিযোগ আপনার কাছে কতটুকু সত্যি মনে হয় ?
ভুয়া মফিজঃ না, পুরোপুরি সত্যি মনে হয় না। মাঝে-মধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনেক সময়ে কিছুটা দেরী হয়; তবে, নেয়া হয়। আবার অনেক সময়ে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়। কেন এমনটা হয় সেটা অন্য আলোচনা।
অপুঃ আপনার কি মনে হয় ব্লগ কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে কোন বিশেষ ব্লগারদের প্রতি অসম আচরণ করে থাকেন? অর্থ্যাৎ কারো প্রতি হয়ত বেশি নিয়ম আরোপ করছে আবার কাউকে একটু বেশি ছাড় দিচ্ছে ! এই ব্যাপারে আপনার মনভাব কী?
ভুয়া মফিজঃ হা হা হা.............এটা বহুল আলোচিত একটা বিষয়। ঘটনা সত্যি, সাক্ষীও কিন্তু একেবারে দূর্বল না। তবে মনোভাবের কথা যদি বলেন তাহলে বলবো, সবারই সমান ট্রিটমেন্ট পাওয়ার অধিকার আছে!!!
অপুঃ ব্লগের অনেকেই কপিপেস্ট বড় কোন অপরাধ মনে করেন না। এই ব্যাপারে আপনার মনভাব কী? এছাড়া কপিপেস্টকারী ব্লগারদের আপনি কেমন চোখে দেখেন?
ভুয়া মফিজঃ আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে চলা কিছু বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন আছে যেগুলো ঠিক না। যেমন শারীরিক অসুখকে অসুখ হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, কিন্তু মানসিক অসুখকে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না যতোক্ষণ পর্যন্ত না কেউ পরনের জামা-কাপড় খুলে ফেলে ভর দুপুরে রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়ে। অথচ উন্নত বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই কথা ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কপি/পেস্ট বা প্লেইজারিজম যে একটা ক্রিমিনাল অফেন্স এটা নিয়ে ব্লগে অনেক আলোচনা করেছি, পোষ্টও দিয়েছি। আপনি আর ব্লগার আরইউ তো শুরু থেকে শুরু করে এখনও এটার পিছনে লেগে আছেন। আপনাদের কারনেই অনেকে অনেক সাবধান হয়েছে; নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করেছে।
এদেরকে আমি সিম্পলী ''লেখাচোর'' বলি। যে কোনও আন্দোলনেরই প্রাথমিক কিছু চ্যালেন্জ থাকে, তবে লেগে থাকলে সাফল্য আসে। আপনি আর আরইউকে আমি ব্লগে এই কপি/পেস্ট বিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের প্রধান কারিগর বলে মনে করি।
অপুঃ ব্লগের ট্যাগিং কালচার আপনার কাছে কেমন মনে হয়? এই যে মতের অমিল হলেই জামাত শিবির রাজাকার পাকিস্তানি ভারতীয় দালাল সহ আরও নানান ধরনের ট্যাগিং করা হয় ! এই ব্যাপারে আপনার মনভাব কী?
ভুয়া মফিজঃ ট্যাগিং নিয়ে ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা জানা আপাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আমি আর কি বলবো? আওয়ামী লীগ পছন্দ না করলেই জামাত-শিবির-রাজাকার; ভারত পছন্দ না করলে পাকিস্তানী দালাল; ইসলাম ধর্ম নিয়ে কথা বললে জঙ্গি মৌলবাদী.........এগুলো সবই অত্যন্ত নিম্নরুচির ট্যাগিং। কোন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ এসব করবে না। কু-শিক্ষা মানুষকে কোথায় নিয়ে ফেলে তার নমুনা হলো এসব ট্যাগিং। সফলভাবে যৌক্তিক ট্যাগিং করাও যে একটা আর্ট, এটা অর্ধ-শিক্ষিত বা কু-শিক্ষিতদেরকে কে বোঝাবে?
অপুঃ ব্লগের পেছনে আগে কত সময় দিতেন গড়ে? সাপ্তাহিত একটা হিসাব দেন । আর বর্তমানে কত সময় দিয়ে থাকেন?
ভুয়া মফিজঃ পোষ্ট লেখা, অন্যের পোষ্ট পড়া, মন্তব্য আদান-প্রদান ইত্যাদি মিলিয়ে আগে সপ্তাহে গড়ে ৩০ ঘন্টা ব্যয় করতাম। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অপুঃ এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন । বিয়ে কি প্রেম করে করেছেন নাকি এরেঞ্জ?
ভুয়া মফিজঃ হা হা হা............একজন জামাত-শিবির-রাজাকার, ভারত বিরোধী জঙ্গি ট্যাগ খাওয়া মানুষকে এমন বিব্রতকর প্রশ্ন করা কি ঠিক? প্রেম তো আমাদের জন্য হারাম!! তবে আফসোসের ব্যাপার হলো, বিয়েটা প্রেম করেই করেছি। সেই সময় যদি জানতাম যে ভবিষ্যতে এই ট্যাগ খাইতে হবে, তাহলে কস্মিনকালেও প্রেম করতাম না!!!
অপুঃ আপনার কি কোন মাল্টি আছে নাকি?
ভুয়া মফিজঃ না। মাল্টি নাই। তবে ইদানীং ভাবছি একটা খুলে ফেলবো।
অপুঃ একটা ট্রিকি প্রশ্ন করি । ধরেন ব্লগে আপনার পছন্দের একজন মানুষ (যেমন আমি) কোন একটা আকাম করল । এবং আপনি নিজেও জানেন যে সেটা অন্যায় । এখন অন্য ব্লগাররা এটা নিয়ে জোর প্রতিবাদ করল । এখন আপনি কী করবেন? আপনার পছন্দের মানুষের পক্ষ নিবেন নাকি অন্যায়ের প্রতিবাদীদের দলে যাবেন নাকি চুপ থাকবেন?
ভুয়া মফিজঃ একটা ঘটনা বলি। আমি এমবিএ করার সময়ে বিজনেস কমিউনিকেশানে একটা প্রশ্ন এসেছিল..........একজন চাকুরীর ইন্টারভিউতে অকৃতকার্য প্রার্থীকে একটা চিঠি লিখতে হবে যে তাকে মনোনীত করা হয় নাই, কিন্তু একটাও নেগেটিভ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। আমার চিঠিটা প্রফেসর খুব পছন্দ করেছিলেন। কি বলতে চাচ্ছি নিশ্চয়ই বুঝেছেন!!
আমি কোন পক্ষে/বিপক্ষে যাবো না। কোন ধরনের নেগেটিভ শব্দ ব্যবহার না করে আপনাকে বোঝাবো যে, আপনি কাজটা ঠিক করেন নাই!!!
অপুঃ আসলে এমনই তো হওয়ার উচিৎ । কিন্তু আমাদের সামুর কালচার দেখে কী রকম । পছন্দের লোক চোর হলেও সেই চুরিকে ডিফেন্ট করার যুক্তির অভাব হয় না। শেষ করার আগে সামু ব্লগারদের ব্যাপারে আপনার কোন উপদেশ বানী আছে?
ভুয়া মফিজঃ অবশ্যই!! উপদেশ দিতে আমার খুব ভালো লাগে!!!
আমার সংক্ষিপ্ত উপদেশ হবে ''পোষ্ট লেখার ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু নিয়ে খানিকটা পড়ালেখা করেন। বিচার-বিশ্লেষণ করেন। তারপরে নিজস্ব ভিউজ ব্যাখ্যা করেন। কপি/পেষ্ট করবেন না। খবরের কাগজ থেকে কোন একটা খবর হুবহু তুলে না দিয়ে সেটাতে নিজের এনালাইটিক্যাল দক্ষতাকে কাজে লাগান। লেখাটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মতো না করে একটু কমপ্রিহেনসিভ করেন। মন্তব্যের ক্ষেত্রে পোষ্ট ভালো করে পড়ে মন্তব্য করেন।
বানানের ব্যাপারে যত্নবান হোন। চমৎকার একটা লেখাও স্ব-আবিস্কৃত বানান ব্যবহার করার কারনে মিডিওকার হয়ে যায়। বাক্য গঠনেও যত্নবান হওয়া দরকার। লেখাটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে অন্ততঃ একবার পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে পড়েন। অনেক ইনকন্সিসটেন্সি চোখে পড়বে। অনেকে অনুবাদের ক্ষেত্রে গুগল ট্রানস্লেটর ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে বাক্যগুলোকে রিফ্রেইজ করা খুবই জরুরী।
মনে রাখবেন, ব্লগে আপনাকে মানুষ চিনবে আপনার পোষ্ট আর মন্তব্যের মাধ্যমে। কাজেই পোষ্ট আর মন্তব্যে কৌশলী হন। আমার মনে হয়, এটুকু করতে পারলেই আপনার ব্লগিং অন্যদের কাছে আকর্ষনীয় হবে। তাতে করে ''শ্রেষ্ঠ ব্লগার'' হতে না পারলেও কাছাকাছি যেতে পারবেন!''
অপুঃ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । পাঠকরা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারে। আশা করি সময় করে উত্তর দিবেন।
ভুয়া মফিজঃ আপনাকেও ধন্যবাদ । চেষ্টা করব সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার !
আজকের পোস্ট তাহলে এখানেই শেষ করা যাক । আগেই বলেছি ব্লগের সকলের কাছেই আমি আস্তে ধিরে যোগাযোগ করব এবং সবার সাথেই কথা বলার চেষ্টা করব। আশা করি সকল ব্লগাররাই এই কাজে অংশ গ্রহন করবেন । এছাড়া ভুয়া সাহেবের কাছে কিছু জানার থাকলে মন্তব্য অংশে সেটা করতে পারেন । আশা করি তিনি জবাব দিবেন !
সবাই ভাল থাকুন । এই কামনা করি !
প্রথম পর্বঃ ব্লগার শায়মা
ইন্টারভিউয়ের জন্য আপনার একটা ইমেল আমার কাছে পাঠাতে পারেন । নিচের এই গুগল ফর্মটা পূরণের অনুরোধ করছি সবাইকে ।
ছবিসুত্র