somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোভিয়েত রাশিয়ার মানুষের গল্প

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে যদি সোভিয়েত রাশিয়ার নাম নেওয়া হয় সবার আগে যে ব্লগারের নাম মনে আসে সেটা হচ্ছে ব্লগার শেরজা তপন । শেরজা তপনের বাবনিক আশা করি সবাই পড়েছেন । আমাদের দেশে রাশিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বলা চলে খুবই কম । আমরা মূলত পশ্চিমা ঘেষা । আমাদের শিল্প সাহিত্যের ব্যাপারেও তাই । এই সব বইতেই রাশিয়াকে সব সময় একটা ভিলেন চরিত্রেই উপস্থাপন করা হয়েছে । রাশিয়ান মানেই হচ্ছে হার্ডকোর রাফটাফ একটা ব্যাপার । তবে পশ্চিমা বই পত্র এদেশে যত পাওয়া যায়, যতমুভি আমরা দেখি হলিউডের রাশিয়ান শিল্প সাহিত্য সেই তুলনায় অনেক কম । অথচ হওয়া দরকার ছিল উল্টো ।

বই পত্র যখন পড়তে শিখেছি তখন রাশিয়ান রূপকথা নিয়ে পড়েছিলাম কয়য়েকটা বই । এরপর কেবল গোর্কির বই পড়েছি । সেই বই পড়ে রাশিয়া সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ জন্মেছে তবে সেটা কোথায় যেন থেকে গিয়েছিলো । ব্লগার শেরজা তপনের বাবনিক পড়ে শেষ করার পড়ে কেন জানি তীব্র ভাবে আবার রাশিয়ার সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মালো । তপন ভাইয়ের লেখা বইটা হাতে আসার পরপরই পড়ে ফেললাম । তারপর তার ব্লগে গিয়েই জানতে চাইলাম আর কোন বই আছে কিনা যা পড়ে আমি আরও জানতে পারবো রাশিয়া সম্পর্কে ।
তখনই আরেকজন ব্লগার এগিয়ে এলেন । ব্লগার মুনিরা সুলতানা আপা নিজ থেকেই কয়েকটি বইয়ের নাম বলেদিলেন । তবে কেবল নামই বললেন না, তিনি নিজের কাছে থাকা সেই বই গুলো আমাকে পাঠিয়ে দিলেন ।
দুটি বই । লেখক একই । লেখকের নাম শাহাব আহমেদ । একটি বইয়ের নাম ''লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া'' আর অন্য বইটির নাম ''ককেশিয়ার দিন রাত্রি'' বৃহৎ ভাবে লেখা দুটি বই । বইটি মুলত লেখকের নিজ জীবনের সাথে যুক্ত । লেখক জীবনের একটা অংশ কাটিয়েছেন সোভিয়েত রাশিয়াতে । সেখানে নিজ চোখে দেখেছেন সেখানকার মানুষের জীবন যাত্রা । মিশেছেন মানুষের সাথে ।

বই দুটির পুরো কাহিনী বলতে গেলে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । এই তিন ভাগের গল্প এগিয়ে চলেছে একই সাথে । এক ভাগে লেখক বলেছেন রাশিয়ার মানুষের গল্প । রাশিয়ার জারতন্ত্র থেকে শুরু করে সোভিয়েত গঠিত হওয়া, সোভিয়েত রাশিয়ার ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্ট্যালিনের গল্প । কিভাবে মানুষ সেই সময়ে বেঁচে ছিল কীসের ভেতর দিয়ে গিয়েছে সব কিছু । অন্য একটা ভাগে লেখক বলেছেন মিথ আর মিথোলজির গল্প । আর শেষ ভাবে বলেছেন নিজের বাস্তব জীবনের গল্প । বাংলাদেশের ছোট্ট গ্রাম থেকে কিভাবে একদল ছেে মেয়ে সোভিয়েত রাশিয়াতে গিয়ে হাজির হল । কিভাবে সেখানে তাদের জীবন যাত্রা চলল এই নিয়ে গল্প । এই অংশের প্রধান চরিত্র গুলো ছিল লেখক নিজে এবং তার রাশিয়ান প্রেমিকা নাতালিয়া । তবে পুরো বইয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিল রায়হান আর অন্বেষা আর ঈশিতার গল্প । গল্প ছিল পার্টির লোকজনের গল্প।
এই বইতে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রাশিয়ার কবি আর সাহিত্যিকদের গল্প । তারা সোভিয়েত সরকারের আমলে আসলে কিভাবে নির্যাতিত হয়েছেন কিভাবে তাদের জীবন কেটেছে সে সবের বর্ণনা করা হয়েছে বইতে । এছাড়া বড় পার্টির গুরুত্বপূর্ন পদে অধিস্থিত হওয়া মানুষ গুলো কিভাবে এক সময়ে পার্টির শত্রুতে পরিনত হয়েছে সেটাও আস্তে ধীরে বর্ণনা করা হয়েছে ।

পশ্চিমাদের দেখা চোখে রাশিয়াকে আমরা যেভাবে দেখে এসেছি এই বই পড়লে সেটার সাথে ঠিক মেলানো যাবে না । বিশেষ করে রাশিয়ান মেয়েদের আপনারা চিনতে পারবেন অন্য ভাবে । মনে হল সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে যাই কোন রাশিয়ান কন্যার কাছে । তার সাথেই ঘরবাধি ।

বইতে রায়হানের গল্প গুলো সব থেকে উল্লেখযোগ্য । তার বাংলাদেশী প্রেমিকা অন্বেষার জন্য ভালোবাসা কথা শুনলে মনে হবে পুরুষ মানুষ আসলে কত অসহায় তার ভালোবাসার মানুষের কাছে । বারবার কষ্ট পেয়েও ছুটে চলে যায় সে তার কাছেই । রাশিয়াতে গিয়ে যখন ঈশিতার সাথে পরিচয় হয়, তখনও তার মনের ভেতরের কোথাও যেন অন্বেষাই লুকিয়ে থাকে । অন্য দিকে হাসি এসে হাজির চায় রায়হানের জীবনে । কিন্তু রায়হান কিভাবে নিজের মনে অন্য কাউকে জায়গা দিবে । হাসির সেই কিশোরী মন কত প্রবল ভাবেই না রায়হানকে ভালোবেসেছিলো কিন্তু রায়হান ছিল অপারগ ! এই রকম কত ছোট ছোট গল্প এসে জমা হয়েছে এই বইতে । শেরজা তপন ভাইয়ের বাবনিক পরে সেই রাশিয়ান কন্যার জন্য যেমন করে তীব্র এক কষ্ট এসে জমা হয়েছিলো একই ভাবে এই বইয়ের নাতালিয়ার জন্যও একই কষ্ট এসে জমা হয়েছে মনে ।

যাদের রাশিয়া নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, রাশিয়ার মানুষ সম্পর্কে জানতে চান আরও তাদের অবশ্যই এই দুইটি বই পড়া উচিৎ ।

বই দুটোর রকমারি লিংক দিলাম
ককেশিয়ার দিন রাত্রি
লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া


ব্লগার মুনিরা সুলতানা আপুকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই । সে না থাকে হয়তো এই বই দুটির কথা আমার কোন কালে জানাই হত না । তার উপর নিজের কাছে থাকা বইদুটো আমার কাছে পাঠিয়ে খুবই উপকার করেছেন । আমি আমার বই কাউকে ধার দিই না পড়তে । তাই যখন কেউ আমাকে বই পড়তে দেয় আমার কাছে এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার মনে হয় । আমার প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠার এটা সব থেকে ভাল পদ্ধতি ।

সব শেষে এই বলি বই পড়ুন । নিজে পড়ুন মানুষকেও পড়তে দিন । আমাকেও পড়তে দিন ।
যারা বই পড়ে না তাদের থেকে দুরে থাকুন ।

হ্যাপি রিডিং ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা সাতজন - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে প্রধান অন্তরায় !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৬


সংকট ঘনীভূত; ড. ইউনূস কে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয়-শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকা একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছে। ড.ইউনূস কে ব্যবহার করে ইন্টেরিম সরকারের ভিতরে চারজন ও বাইরে তিনজন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৩ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০১



ডক্টর ইউনুস এই দেশের ক্ষমতায় আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে এর দায় ভারতের নয়, পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগেরও নয়। এই দায় সম্পুর্নভাবে এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপির। অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×