প্রথম পর্ব লিখেছিলাম সেই ফেব্রুয়ারিতে । ভেবেছিলাম যে পরের দিনই বাকিটা লিখে শেষ করবো কিন্তু কোন এক অলসতার কারণে বাকি গল্প বলা হয় নি । এর মাঝে আমি আরও দুটো ভ্রমন ব্লগ লিখে ফেলেছি । এই গল্পের শেষ টুকু না লিখে শেষ করা যাক ।
আগের পর্বের বলেছিলাম আমরা কিভাবে খেমচং পাড়াতে এসে হাজির হয়েছিলাম । রাতে খাওয়া করে ঘুম দিয়েছিলাম । পরদিন সকালে নাস্তা করেই আমরা আবার রওয়ানা দিলাম আমাদের কির্সতংয়ের চুড়ার উদ্দেশ্যে । আগের দিনের ট্রেকিংয়ের একটা হেকটিক ব্যাপার ছিল যে আমাদের কাধে বেশ ভারী ব্যাগ ছিল । যদিও আমি সব সময় হালকা ব্যাগ নিয়েই পাহাড়ে আসি তবে গতদিনের ব্যাগের ভেতরে আমাদের রান্না করার মাল পত্র ছিল । এই খেমচং পাড়াটা আসলে এতোই প্রতিকূল অবস্থায় আর দুরে যে এখানে রান্নার জন্য কোন জিনিস পত্র পাওয়া যায় না । ট্রেকারদের তা নিজে বহন করে নিয়ে আসতে হয় । এই কারণে ব্যাগ ছিল ভারী । তবে আজকের আমরা পাড়াতেই ব্যাগ রেখে এসেছিলাম । ট্রেকিং শেষ করে আমরা দুপুরে পাড়াতে গিয়েই খাওয়া দাওয়া করবো ।
আবার আমাদের ট্রেকিং শুরু হল । সাথে করে কেবল একটা পানির বোতল নিয়েছি আর কিছু না । সকালর মিষ্টি রোদে আমার যাত্রা শুরু হল ।
আমরা আসলে সবাই মনের আনন্দে হাটছিলাম আর গল্প করছিলাম ছবি তুলছিলাম । পাহাড়ের আমার সব সময় এই হাটাটা পছন্দ ছিল বেশি । এই যে আমাকে দেখা যায়
এই জায়গাটাতে প্রচুর বাতাস ছিল ।
পথের মাঝের রাস্তা
পথের মাঝে কলাবাগান
চুড়ায় পৌছে গেলাম আমরা বারোটা সাড়ে বারোটার দিকেই সম্ভবত । সময়টা এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে না ।
সেখানে আমরা অনেকটা সময় পার করলাম । গল্প খাওয়া দাওয়া ছবি তোলা । তারপর আবার ফেরার পথ ধরা । এই ফেরার পথ আমার বেশ চমৎকার মনে আছে । পুরো পথটা আমি একদম একা এসেছি । সব সময় আমি পাহাড়ে একটু দ্রুতই হাটি আর সবাই রেখে এগিয়ে যাই । এটা আমার পুরানো অভ্যাস । এই পথেই যেহেতু সকালে গিয়েছি আর পথ কেবল একটাই ছিল । পাহাড়ের এই ব্যাপারটা ভাল । বেশির ভাগ ট্রেকিং পথ গুলো একটাই । তাই পথ হারানোর সম্ভবনা কম থাকে । তাই আমি আপন মনেই হাটছিলাম । একটা সময়ে অনুভব করলাম যে পুরো এলাকাতে আসলে আমি একদম একা । কারো কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । পাহাড়ের একটা নিজেস্ব ভাষা আছে । সেই ভাষা যেন আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম ।
আমি সামনের দিকে চলতেই থাকলাম । আপন মনে কত কিছু ভাবনা এল । কয়েকটা গল্পের থিমও মাথায় এল ।
আমি যখন আবার খেমচং পাড়াতে পৌছালাম তখন দেখলাম একটা দল তখন রওয়ানা দিচ্ছি কির্সতংয়ের দিকে । আমিও ওদের পথ দেখিয়ে দিলাম যে কোন কোন দিক দিয়ে ওদের যেতে হবে ।
আমি অন্য সবার থেকে প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই পাড়াতে পৌছেছিলাম । ঘরে পৌছে দেখি আমার গাইড রান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে । আজকে সে আমাদের সাথে যায় নি । কারণ এই পথে যাওয়ার জন্য গাইডের খুব একটা দরকার পড়ে না । সবাই এলে আমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়া শুরু হল । তারপর একটা ছোট্ট ঘুম দিল সবাই । বিকেলের কিছু আগে আমরা আবার হাটা দিলাম । এবার আমাদের যেতে হবে রুংরাং সামিটে ।
রুংরাংয়ের চুড়াতে পৌয়ে আমার কেন জানি জোতলংয়ের কথা মনে পড়লো । গতবছর একই সময়ে গিয়েছিলাম জোটলংয়ে । বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া সেটা !
ফেরার পথে আমাদের একটা তাড়াহুড়া ছিল । কারণ আমাদের আগে একটা গ্রুপ শুনলাম যে রুংরাংয়ের চুড়াতে না গিয়েই পাড়ার দিকে হাটা দিয়েছে । আর আমরা যে পাড়াতে যাচ্ছি সেই পাড়াতে থাকার অবস্থার সংকট । বেশি গ্রুপ সেখানে গেলে থাকার জায়গা হবে না । তবে আমরা গিয়ে ঠিকই জায়গা পেলাম !
পাহাড়ে সন্ধ্যা নামছে
এই পাড়ার নামটা আসলে ভুলে গিয়েছি । এই পাড়াতে একটা ভাল দিক ছিল । পানির জন্য ট্যাপ ছিল । সরকার থেকে এই রকম অনেক পাড়াতেই পানির জন্য ট্যাপ স্থাপন করে দেওয়া হয় । এই পাড়াতে ছিল । কিন্তু আগের পাড়াতে পানির খুব অবাক ছিল । আমি বান্দরবানের অনেক পাড়াতে থেকেছি কিন্তু খেমচংয়ের মত পানির অভাব আমি আগে কোন দিন দেখি নি । তীব্র পানির কষ্ট নিয়ে এরা কিভাবে টিকে থাকে আমি সেটা বুঝতে পারি না ।
তবে এই পাড়াতে টয়লেটের অবস্থা ছিল খেমচং থেকেও জঘন্য । খেমচং পাড়াতে তো প্লাস্টিকের একটা প্যান ছিল এখানে এসবের কোন বালাই নেই । টয়লেট বলতে এখানে ছিল একটা মাঁচা । পাহাড়ের দিকে মুখ করে একটা মাঁচা স্থাপন করা । একটা পাড়ার দিকে একটা দেওয়াল দেওয়া । বাকি তিন দিক ফাঁকা । নিচে ছিল শুকরের দল । এরাই সব কিছু খেয়ে দেয়ে পরিস্কার করে ফেলে ।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম দিলাম আবার । কাল আবার হাটতে হবে । আমাদের ট্যুর মুলত এখানেই শেষ । দুইটা পাহাড় আমাদের সামিট করার কথা ছিল । সেই দুটো আজকে আমরা শেষ করে ফেলেছি । কাল কেবল ফেরিয়ে যাওয়ার পথ । তবে কালকের হাটা আমাদের জন্য তুলনা মুলক সোজা হবে কারণ কারণ পথে আমরা পানি পাবো আর আমাদের কাধে কোন খাবারের মাল পত্র থাকবে না । পানির ভেতরে দিয়ে অনেকটা পথ আমাদের হাটতে হবে । পাহাড়ে ঝিরি পথ দিয়ে যারা হেটেছেন তারা জানেন কী চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা সেটা !
পরদিনটা ছিল রৌদে ভরা ।
যাওয়ার পথেই ঝর্ণা ছিল একটা । এটার একদম মাথায় উঠেছিলাম ।
ঐটা কিন্তু আমি না
এইটা আমি
ঝিরি দিয়ে হাটার ছবি ।
প্রাকৃতিক সুইমিং পুল
এই খানে আমাদের হাটা শেষ হয়েছিলো ।
আমরা আবারও হাটতে শুরু করলাম । এক টানা হেটেই চললাম । বিকেলের কিছু আগে আমরা পৌছে গেলাম আলীকদম ১৩ কিলো মিটার ! তারপর সেখান থেকে চাঁদএর গাড়িতে করে আলীকদম । সন্ধ্যা ছয়টার সময় আমাদের বাস ছাড়লো । আমাদের নিয়ে গেল চকরিয়াতে । সেখানে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আড্ডা চলল প্রায় রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত । তারপর বাসে করে সোজা ঢাকাতে ।
কালকে আবারও আমাদের বান্দরবান যাওয়ার কথা ছিল । একেবারে সব কিছু ঠিক ছিল কিন্তু মাঝ দিয়ে একটা ঝামেলা এসে হাজির হল । ট্যুর ক্যান্সেল । যদিও এই মাসে দুইবার যাওয়া হয়েছে তবুও কেন জানি খানিকটা মন খারাপই হল । দেখা যাক সামনের মাসে একটা ট্যুর দেওয়া যায় কিনা !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০