somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ কির্সতং - রুংরাং সামিটের গল্প

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব লিখেছিলাম সেই ফেব্রুয়ারিতে । ভেবেছিলাম যে পরের দিনই বাকিটা লিখে শেষ করবো কিন্তু কোন এক অলসতার কারণে বাকি গল্প বলা হয় নি । এর মাঝে আমি আরও দুটো ভ্রমন ব্লগ লিখে ফেলেছি । এই গল্পের শেষ টুকু না লিখে শেষ করা যাক ।

আগের পর্বের বলেছিলাম আমরা কিভাবে খেমচং পাড়াতে এসে হাজির হয়েছিলাম । রাতে খাওয়া করে ঘুম দিয়েছিলাম । পরদিন সকালে নাস্তা করেই আমরা আবার রওয়ানা দিলাম আমাদের কির্সতংয়ের চুড়ার উদ্দেশ্যে । আগের দিনের ট্রেকিংয়ের একটা হেকটিক ব্যাপার ছিল যে আমাদের কাধে বেশ ভারী ব্যাগ ছিল । যদিও আমি সব সময় হালকা ব্যাগ নিয়েই পাহাড়ে আসি তবে গতদিনের ব্যাগের ভেতরে আমাদের রান্না করার মাল পত্র ছিল । এই খেমচং পাড়াটা আসলে এতোই প্রতিকূল অবস্থায় আর দুরে যে এখানে রান্নার জন্য কোন জিনিস পত্র পাওয়া যায় না । ট্রেকারদের তা নিজে বহন করে নিয়ে আসতে হয় । এই কারণে ব্যাগ ছিল ভারী । তবে আজকের আমরা পাড়াতেই ব্যাগ রেখে এসেছিলাম । ট্রেকিং শেষ করে আমরা দুপুরে পাড়াতে গিয়েই খাওয়া দাওয়া করবো ।


আবার আমাদের ট্রেকিং শুরু হল । সাথে করে কেবল একটা পানির বোতল নিয়েছি আর কিছু না । সকালর মিষ্টি রোদে আমার যাত্রা শুরু হল ।



আমরা আসলে সবাই মনের আনন্দে হাটছিলাম আর গল্প করছিলাম ছবি তুলছিলাম । পাহাড়ের আমার সব সময় এই হাটাটা পছন্দ ছিল বেশি । এই যে আমাকে দেখা যায়



এই জায়গাটাতে প্রচুর বাতাস ছিল ।


পথের মাঝের রাস্তা


পথের মাঝে কলাবাগান



চুড়ায় পৌছে গেলাম আমরা বারোটা সাড়ে বারোটার দিকেই সম্ভবত । সময়টা এখন স্পষ্ট মনে পড়ছে না ।



সেখানে আমরা অনেকটা সময় পার করলাম । গল্প খাওয়া দাওয়া ছবি তোলা । তারপর আবার ফেরার পথ ধরা । এই ফেরার পথ আমার বেশ চমৎকার মনে আছে । পুরো পথটা আমি একদম একা এসেছি । সব সময় আমি পাহাড়ে একটু দ্রুতই হাটি আর সবাই রেখে এগিয়ে যাই । এটা আমার পুরানো অভ্যাস । এই পথেই যেহেতু সকালে গিয়েছি আর পথ কেবল একটাই ছিল । পাহাড়ের এই ব্যাপারটা ভাল । বেশির ভাগ ট্রেকিং পথ গুলো একটাই । তাই পথ হারানোর সম্ভবনা কম থাকে । তাই আমি আপন মনেই হাটছিলাম । একটা সময়ে অনুভব করলাম যে পুরো এলাকাতে আসলে আমি একদম একা । কারো কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । পাহাড়ের একটা নিজেস্ব ভাষা আছে । সেই ভাষা যেন আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম ।

আমি সামনের দিকে চলতেই থাকলাম । আপন মনে কত কিছু ভাবনা এল । কয়েকটা গল্পের থিমও মাথায় এল ।
আমি যখন আবার খেমচং পাড়াতে পৌছালাম তখন দেখলাম একটা দল তখন রওয়ানা দিচ্ছি কির্সতংয়ের দিকে । আমিও ওদের পথ দেখিয়ে দিলাম যে কোন কোন দিক দিয়ে ওদের যেতে হবে ।

আমি অন্য সবার থেকে প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই পাড়াতে পৌছেছিলাম । ঘরে পৌছে দেখি আমার গাইড রান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে । আজকে সে আমাদের সাথে যায় নি । কারণ এই পথে যাওয়ার জন্য গাইডের খুব একটা দরকার পড়ে না । সবাই এলে আমাদের দুপুরের খাওয়া দাওয়া শুরু হল । তারপর একটা ছোট্ট ঘুম দিল সবাই । বিকেলের কিছু আগে আমরা আবার হাটা দিলাম । এবার আমাদের যেতে হবে রুংরাং সামিটে ।



রুংরাংয়ের চুড়াতে পৌয়ে আমার কেন জানি জোতলংয়ের কথা মনে পড়লো । গতবছর একই সময়ে গিয়েছিলাম জোটলংয়ে । বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া সেটা !

ফেরার পথে আমাদের একটা তাড়াহুড়া ছিল । কারণ আমাদের আগে একটা গ্রুপ শুনলাম যে রুংরাংয়ের চুড়াতে না গিয়েই পাড়ার দিকে হাটা দিয়েছে । আর আমরা যে পাড়াতে যাচ্ছি সেই পাড়াতে থাকার অবস্থার সংকট । বেশি গ্রুপ সেখানে গেলে থাকার জায়গা হবে না । তবে আমরা গিয়ে ঠিকই জায়গা পেলাম !


পাহাড়ে সন্ধ্যা নামছে



এই পাড়ার নামটা আসলে ভুলে গিয়েছি । এই পাড়াতে একটা ভাল দিক ছিল । পানির জন্য ট্যাপ ছিল । সরকার থেকে এই রকম অনেক পাড়াতেই পানির জন্য ট্যাপ স্থাপন করে দেওয়া হয় । এই পাড়াতে ছিল । কিন্তু আগের পাড়াতে পানির খুব অবাক ছিল । আমি বান্দরবানের অনেক পাড়াতে থেকেছি কিন্তু খেমচংয়ের মত পানির অভাব আমি আগে কোন দিন দেখি নি । তীব্র পানির কষ্ট নিয়ে এরা কিভাবে টিকে থাকে আমি সেটা বুঝতে পারি না ।

তবে এই পাড়াতে টয়লেটের অবস্থা ছিল খেমচং থেকেও জঘন্য । খেমচং পাড়াতে তো প্লাস্টিকের একটা প্যান ছিল এখানে এসবের কোন বালাই নেই । টয়লেট বলতে এখানে ছিল একটা মাঁচা । পাহাড়ের দিকে মুখ করে একটা মাঁচা স্থাপন করা । একটা পাড়ার দিকে একটা দেওয়াল দেওয়া । বাকি তিন দিক ফাঁকা । নিচে ছিল শুকরের দল । এরাই সব কিছু খেয়ে দেয়ে পরিস্কার করে ফেলে ।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম দিলাম আবার । কাল আবার হাটতে হবে । আমাদের ট্যুর মুলত এখানেই শেষ । দুইটা পাহাড় আমাদের সামিট করার কথা ছিল । সেই দুটো আজকে আমরা শেষ করে ফেলেছি । কাল কেবল ফেরিয়ে যাওয়ার পথ । তবে কালকের হাটা আমাদের জন্য তুলনা মুলক সোজা হবে কারণ কারণ পথে আমরা পানি পাবো আর আমাদের কাধে কোন খাবারের মাল পত্র থাকবে না । পানির ভেতরে দিয়ে অনেকটা পথ আমাদের হাটতে হবে । পাহাড়ে ঝিরি পথ দিয়ে যারা হেটেছেন তারা জানেন কী চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা সেটা !

পরদিনটা ছিল রৌদে ভরা ।



যাওয়ার পথেই ঝর্ণা ছিল একটা । এটার একদম মাথায় উঠেছিলাম ।



ঐটা কিন্তু আমি না



এইটা আমি



ঝিরি দিয়ে হাটার ছবি ।



প্রাকৃতিক সুইমিং পুল



এই খানে আমাদের হাটা শেষ হয়েছিলো ।




আমরা আবারও হাটতে শুরু করলাম । এক টানা হেটেই চললাম । বিকেলের কিছু আগে আমরা পৌছে গেলাম আলীকদম ১৩ কিলো মিটার ! তারপর সেখান থেকে চাঁদএর গাড়িতে করে আলীকদম । সন্ধ্যা ছয়টার সময় আমাদের বাস ছাড়লো । আমাদের নিয়ে গেল চকরিয়াতে । সেখানে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আড্ডা চলল প্রায় রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত । তারপর বাসে করে সোজা ঢাকাতে ।

কালকে আবারও আমাদের বান্দরবান যাওয়ার কথা ছিল । একেবারে সব কিছু ঠিক ছিল কিন্তু মাঝ দিয়ে একটা ঝামেলা এসে হাজির হল । ট্যুর ক্যান্সেল । যদিও এই মাসে দুইবার যাওয়া হয়েছে তবুও কেন জানি খানিকটা মন খারাপই হল । দেখা যাক সামনের মাসে একটা ট্যুর দেওয়া যায় কিনা !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১০
৪৫৬ বার পঠিত
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×