মাথার ভেতরে হঠাৎ কিছু মনে হলে সেটা না করা পর্যন্ত আমার শান্তি লাগে না । গত মাসের শেষের দিকে কী মনে হল যে একটা ট্যুর দেওয়া লাগবে বান্দরবানে । সেই মোতাবেক ট্যুর বুকিং করলাম । একেবারে শে মুহুর্তে সেটা ক্যান্সেল হয়ে গেল । সেইদিনই অন্য জায়গাতে যাওয়ার চেষ্টা করলাম বটে তবে কোন কাজ হল না । সেই থেকে মাথার ভেতরে বান্দরবান যাওয়ার জন্য মন আকুপাকু করতে লাগলো । শেষ পর্যন্ত গতকাল গিয়ে হাজির হলাম । একদিনের ঝটিকা ট্যুর । রাত রওয়ানা দিবো । সারা দিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ঢাকার বাসে ফিরে আসবো ।
রাতে ফকিরাপুল যাত্রা শুরু । তবে বাসের ড্রাইভার যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো যে জীবনে এই শেষ বাস জার্নি । একবার একদম সামনের হানিফের সাথে ধাক্কা লেগেই গিয়েছিলো । কোন মতে রক্ষা পেয়েছে । মনের ভেতরে ভয় ঢুকে গিয়েছিলো বেশ । তবে শেষ পর্যন্ত আলীকদম পৌছালাম । সকালের নাস্তা শেষ করেই রওয়ানা দিলাম আমাদের নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে । চাঁদের গাড়িতে করে আলীকদম থানচি সংযোগ সড়কের ১২ কিলো নামক স্থানে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হল । স্থানীয় গাইড নিয়ে আমরা রওয়ানা দিলাম দামতুয়া ঝর্নার দিকে !
এই ট্যুরের একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে বৃষ্টি, রোদ আর শীতের আমেজ আমি সব গুলোই পেয়েছি । ১২ কিলো থেকে হাটা শুরুর সময়ই বৃষ্টি শুরু । সাথে রেইণকোট ছিল । সেটা পরে হাটা দিলাম টুকটুক করে । যাত্রা পথে কয়েকটা ছবি দেখা যাক !
এটাই হচ্ছে সেই ১২ কিলো নামক স্থান । এখান থেকে হন্টন শুরু ।
পাহাড়ের রাস্তা
ঐতো আমাদের টিমের লোকজন আসতেছে
চলতি পথে পাশের পাহাড়
আরেকটা দৃশ্য
মাঝে কে জানি এই পুকুরটা কেটে রেখেছে । এই দেখেন শাপলা ফুল ।
দামতুয়ার ঠিক আগে এই ঝর্ণাটা আছে । নাম আমার এখন মনে পড়ছে না ।
এই সেই দামতুয়া ঝর্ণা যা দেখার জন্য প্রায় চার ঘন্টা হেটে এসেছি । পাশে আরও একটা রয়েছে । সেটা বেশি উচু । নিচে ছবি দেওয়া হল ।
যাওয়ার সময় এই ছবিটা তুলতে মনে ছিল না । এটা ফেরার সময়কার ছবি !
এইবার ট্যুরে বেশ কষ্টই হয়েছে বলা চলে । সেই শীতের শেষের দিকে ক্রিসতং গিয়েছিলাম । ব্লগে সেই গল্প অর্ধেক লিখে আর লেখা হয় নি । বাকিটা লিখবো জলদিই । যাই হোক সেই ট্রেকিংয়ের পর আর হাটাহাটি হয় নি । এই কারণে উঠতে একটু কষ্ট হয়ে গেছে এবার । মোট তিনট বেশ উচু পাহাড় আমরা টপকিয়েছি । সাথে ছোট ছোট আরও ছয় সাতটা হবে । মাঝের বেশ কিছুটা সমতল ছিল । সেখানে হাটতে কষ্ট হয় নি ।
সব চেয়ে সুবিধা হয়েছে যাত্রা শুরুটা হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে । এই কারণে আরামে হেটেছিল । অবশ্য মাঝে বৃষ্টি শেষ হয়ে রোদ উঠেছিলো । তখন একটু হাসফাস লাগছিল বটে ।
পাহাড়ে যখন প্রতিবার আমি যাই আমার ঠিক কোনটা দেখতে যাচ্ছি সেটা নিয়ে কখনই মাথা ব্যাথা থাকে না । পাহাড় হোক কিংবা ঝর্না আমার সব সময় আকর্ষন করে পাহাড়ি নির্জন পথে হেটে বেড়ানোটা । বেশির সময়ে এমন হয় যে টিম ছেড়ে হয় আমি সামনে কিংবা একদম পেছনে থাকি । একা একা চারিদিকে দেখি নির্জন গল্প শুনি । কত অদ্ভুত ডাক যে তখন কানে আসে । মাঝে মাঝে এমন হয় যে খুব সামনে চলে গেছে তখন কোন মানুষের আওয়াজ শোনা যায় না । কারো আওয়াজ নেই । তখন মনে হয় যেন পুরো এলাকাতে মানুষ বলতে আমি একাই । এই অনুভূতিটা বারবার আমাকে বিমহিত করে ।
ব্লগারদের নিয়ে একবার একটা ট্রেকিং ট্যুরের আয়োজন করা যেতে পারে ! আজকের ট্যুরের গল্প এখানেই শেষ । এবার বেশি ছবি তুলি নি । চারিদিকে প্রকৃতি দেখাতেই ব্যস্ত ছিলাম বেশি । আর আমার কম দামী ক্যামেরাতে ছবি যে খুব বেশি ভাল আসে না সেটা তো আপনারা জানেনই ।
আমাদের ১২ কিলো থেকে হেটে যেতে প্রায় চার ঘন্টা সময় লেগেছিলো । আমরা সাড়ে দশটায় হাটা শুরু করেছিলাম । ওখানে পৌছেছিলাম দেড়টার দিকে । আমি বেশ আগেই পৌগিয়েছিলাম । আমাদের পুরো টিম আসতে আরও একটু দেরি করেছিল । ঝর্ণাতে সময় কাটিয়ে আবারও পনে তিনটার দিকে ফেরার পথ ধরলাম । আমাদের সবার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো । সকালে আমাদের বাস পৌছিয়েছিলো একটু দেরি করে । যদি নয়টার দিকে রওয়ানা দিতে পারতাম তাহলে সন্ধ্যা হত না । তবে সব মিলিয়ে চমৎকার ট্রেকিং ট্যুর ছিল । তবে যাদের হাটার অভ্যাস নেই, তাদের এই ট্যুরে প্রথমবার না যাওয়াই ভাল । আগে অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমের ট্যুর গুলো দিয়ে অভ্যাস করে নিয়ে তারপর এদিকে যাওয়া ভাল !