একটা ব্যাপার কল্পনা করার চেষ্টা করুন । আপনার সামনে একটা কাগজ রয়েছে । কাগজের উপরে লেখা আছে যে নিচের কবিতাটা জোরে জোরে পড়বেন না । পড়লে আপনার মৃত্যু হবে । বর্তমান সময়ে এমন কিছু মানুষের মনে ভয়ের বদলে বিরক্তি কিংবা কৌতুকের খোরাক হয় বড় জোর । আসলেই কি কোন কবিতা জোরে জোরে উচ্চারন করে পড়লে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে ? আমাদের পুরো দুনিয়াতে এমন অনেক মিথ বা আরবান লেজেন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । এই টমিনোর হেল সেই রকমই একটা আরবান লেজেন্ড ! এটা এমন একটা কবিতা যা উচ্চারন করে জোরে জোরে পড়লেই পাঠকের মৃত্যু হয় !
১৯১৯ সালে জাপানের কবি সাইজো ইয়াসো একটা কবিতার বই প্রকাশ করেন । বইটির নাম সাকিন যার ইংরেজি অনুবাদ করলে দাড়ায় গোল্ড ডাস্ট । এই বইয়ের একটা টমিনোস হেল নামের একটা কবিতা ছিল । প্রকাশের পরপরই জাপানে এই কবিতাটা খুবই বিখ্যাত হয়ে যায় । সবার কাছেই এই ব্যাপারটা চাউর হয়ে যায় যে এই কবিতাটা যেই না জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়বে তার সাথেই খারাপ কিছু হবে এমনি কি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে !
আসলে এমন টা মনে হওয়ার পেছনে কারণটা আসলে কি ! কবিতা প্রকাশের পরপরই জাপানের মানুষের মনে আসলে এই বিশ্বাস স্থাপন হতে শুরু করে যে যেই এই কবিতাটা পড়বে তার সাথে খারাপ কিছু হবে । জাপানে সেই সময়ে ঘটা নানান ঘটনার সাথে এই কবিতাটার একটা সংযোগ স্থাপন করতে শুরু করে । কবিতা পাঠের পরপরই পাঠকেরা অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখিন হতে শুরু করে । তাদের সথে নানান রকম দুর্ঘটনা ঘটতে শুরু করে ।
এই কবিতা পড়ার পর নানান ধরনের দুর্ঘটনা শিকার মানুষজন হয়েছে । এদের ভেতরে সব থেকে বিখ্যাতটা হচ্ছে একজন ফিল্ম ডিরেক্টর সুজি তারাইয়ামার মৃত্যু । সুজি একটা মুভি তৈরি করেন যার নাম Den-en ni shisu । এবং এই মুভিটা টমিনোস হেল কবিতা থেকেই অনুপ্রাণীত ছিল । মুভি প্রকাশের পর সুজির সাথে খারাপ কিছু ঘটে । সে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হোন এবং মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান । যদিও তিনি শারীরিক রোগে মারা যান তবে অনেকেই মনে করেন যে কবিতাই আসলে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী । এরপর একজন কলেজ স্টুডেন্ট মারা যায় এই কবিতা পড়ার এক সপ্তাহের ভেতরে । এছাড়া জাপানে বেশ কিছু সুইসাইডকারীদের সাথেও কবিতাটার একটা সম্পর্ক খুজে পাওয়া যায় । যারাই কিনা সুইসাইড করেছে তাদের অনেকের ঘরেই এই কবিতার বইটি খুজে পাওয়া গেছে । কবিতায় আসলে কি আছে ! নিচে কবিতার একটা ছবি দিলাম । আপনারা অবশ্য ভয় পাবেন না । কবিতা টি কেবল জাপানি ভাষায় পড়লেই পাঠকের উপরে বিপদ নেমে আসে বলে কথিত আছে । অন্য ভাষায় পড়লে কিছু হবে না !
এই কবিতার জাপানি আবৃতি
টমিনোস হেল কবিতার লাইণ নিয়ে নানান রকম গল্প প্রচলিত আছে । যদিও কবিতায় টিমিনোর জেন্ডার ঠিক নির্ধারণ করা যায় নি । কেউ কেউ আসলে বলছে টমিনো হচ্ছে একজন ছেলে আবার কারো কারো মতে টমিনো হচ্ছে একজন মেয়ে । কবিতা নিয়ে সব চেয়ে প্রচলিত গল্প হচ্ছে টমিনো একটা এবিউসিভ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছে । সে তার সকল রাগ ভৎসনা কবিতায় লেখে এবং সেটা পড়ার পরে তার বাবা মা তাকে একটা সেলে বন্ধ করে রাখে । তাকে কোন প্রকার খাদ্য কিংবা পানীয় দেওয়া হয় না এবং এক সময়ে সে মারা যায় । তখনই থেকেই টমিনোস হেল মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ।
অন্য আরেকটা গল্প বলা হয় যে টমিনোর বড় দুই বোন তাকে সব সময় নানান রকম ভাবে যন্ত্রনা কষ্ট দিত । তার মতে এই বোনদের সাথে বসবাস করাই তার জন্য ছিল একটা হেল কিংবা দোযখের মত ! সেই দোযখের বর্ণনাই সে কবিতা দিয়ে প্রকাশ করেছে ।
অন্য আরেকটা গল্প বলা হয় যে টমিনো তার বাবা মাকে হত্যা করে এবং এই কারণে তাকে দোজখের সব থেকে নিচের স্তরে নিয়ে যাওয়া হয় । এই জার্নিটা বর্ণনাই কবিতায় মেটাফোরিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
অনেকের বিশ্বাস যে কবিতায় টমিনো আসলে স্বয়ং কবি নিজে । যদিও সাইজো ইয়াসো সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না । বলা হয়ে থাকে যে সাইজো প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তার বাবা আর বোনকে হারান । ছোট বেলাটার এই কষ্টের কথাই সে নিজের কবিতায় বর্ণনা করা হয়েছে প্রিয় জনকে হারিয়ে বেচে থাকাটা হচ্ছে অনেকটা জীবিত ভাবে দোযখে বসবাস করার মতই ।
Saijo Yaso (Credits: Wikimedia Commons)
তো পড়বেন নাকি কবিতাটা ?
রেফারেন্সঃ
Tomino’s Hell — The Poem That Curses and Kills People
Tomino's Hell - The Cursed Japanese Poem
Tomino’s Hell…The Cursed Japanese Poem You Shouldn’t Read Out Loud