somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টমিনোস হেলঃ যে কবিতা পড়লেই মৃত্যু ...

২৯ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

source

একটা ব্যাপার কল্পনা করার চেষ্টা করুন । আপনার সামনে একটা কাগজ রয়েছে । কাগজের উপরে লেখা আছে যে নিচের কবিতাটা জোরে জোরে পড়বেন না । পড়লে আপনার মৃত্যু হবে । বর্তমান সময়ে এমন কিছু মানুষের মনে ভয়ের বদলে বিরক্তি কিংবা কৌতুকের খোরাক হয় বড় জোর । আসলেই কি কোন কবিতা জোরে জোরে উচ্চারন করে পড়লে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে ? আমাদের পুরো দুনিয়াতে এমন অনেক মিথ বা আরবান লেজেন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । এই টমিনোর হেল সেই রকমই একটা আরবান লেজেন্ড ! এটা এমন একটা কবিতা যা উচ্চারন করে জোরে জোরে পড়লেই পাঠকের মৃত্যু হয় !

১৯১৯ সালে জাপানের কবি সাইজো ইয়াসো একটা কবিতার বই প্রকাশ করেন । বইটির নাম সাকিন যার ইংরেজি অনুবাদ করলে দাড়ায় গোল্ড ডাস্ট । এই বইয়ের একটা টমিনোস হেল নামের একটা কবিতা ছিল । প্রকাশের পরপরই জাপানে এই কবিতাটা খুবই বিখ্যাত হয়ে যায় । সবার কাছেই এই ব্যাপারটা চাউর হয়ে যায় যে এই কবিতাটা যেই না জোরে জোরে উচ্চারণ করে পড়বে তার সাথেই খারাপ কিছু হবে এমনি কি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে !
আসলে এমন টা মনে হওয়ার পেছনে কারণটা আসলে কি ! কবিতা প্রকাশের পরপরই জাপানের মানুষের মনে আসলে এই বিশ্বাস স্থাপন হতে শুরু করে যে যেই এই কবিতাটা পড়বে তার সাথে খারাপ কিছু হবে । জাপানে সেই সময়ে ঘটা নানান ঘটনার সাথে এই কবিতাটার একটা সংযোগ স্থাপন করতে শুরু করে । কবিতা পাঠের পরপরই পাঠকেরা অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখিন হতে শুরু করে । তাদের সথে নানান রকম দুর্ঘটনা ঘটতে শুরু করে ।

এই কবিতা পড়ার পর নানান ধরনের দুর্ঘটনা শিকার মানুষজন হয়েছে । এদের ভেতরে সব থেকে বিখ্যাতটা হচ্ছে একজন ফিল্ম ডিরেক্টর সুজি তারাইয়ামার মৃত্যু । সুজি একটা মুভি তৈরি করেন যার নাম Den-en ni shisu । এবং এই মুভিটা টমিনোস হেল কবিতা থেকেই অনুপ্রাণীত ছিল । মুভি প্রকাশের পর সুজির সাথে খারাপ কিছু ঘটে । সে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হোন এবং মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান । যদিও তিনি শারীরিক রোগে মারা যান তবে অনেকেই মনে করেন যে কবিতাই আসলে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী । এরপর একজন কলেজ স্টুডেন্ট মারা যায় এই কবিতা পড়ার এক সপ্তাহের ভেতরে । এছাড়া জাপানে বেশ কিছু সুইসাইডকারীদের সাথেও কবিতাটার একটা সম্পর্ক খুজে পাওয়া যায় । যারাই কিনা সুইসাইড করেছে তাদের অনেকের ঘরেই এই কবিতার বইটি খুজে পাওয়া গেছে । কবিতায় আসলে কি আছে ! নিচে কবিতার একটা ছবি দিলাম । আপনারা অবশ্য ভয় পাবেন না । কবিতা টি কেবল জাপানি ভাষায় পড়লেই পাঠকের উপরে বিপদ নেমে আসে বলে কথিত আছে । অন্য ভাষায় পড়লে কিছু হবে না !



এই কবিতার জাপানি আবৃতি


টমিনোস হেল কবিতার লাইণ নিয়ে নানান রকম গল্প প্রচলিত আছে । যদিও কবিতায় টিমিনোর জেন্ডার ঠিক নির্ধারণ করা যায় নি । কেউ কেউ আসলে বলছে টমিনো হচ্ছে একজন ছেলে আবার কারো কারো মতে টমিনো হচ্ছে একজন মেয়ে । কবিতা নিয়ে সব চেয়ে প্রচলিত গল্প হচ্ছে টমিনো একটা এবিউসিভ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছে । সে তার সকল রাগ ভৎসনা কবিতায় লেখে এবং সেটা পড়ার পরে তার বাবা মা তাকে একটা সেলে বন্ধ করে রাখে । তাকে কোন প্রকার খাদ্য কিংবা পানীয় দেওয়া হয় না এবং এক সময়ে সে মারা যায় । তখনই থেকেই টমিনোস হেল মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ।

অন্য আরেকটা গল্প বলা হয় যে টমিনোর বড় দুই বোন তাকে সব সময় নানান রকম ভাবে যন্ত্রনা কষ্ট দিত । তার মতে এই বোনদের সাথে বসবাস করাই তার জন্য ছিল একটা হেল কিংবা দোযখের মত ! সেই দোযখের বর্ণনাই সে কবিতা দিয়ে প্রকাশ করেছে ।

অন্য আরেকটা গল্প বলা হয় যে টমিনো তার বাবা মাকে হত্যা করে এবং এই কারণে তাকে দোজখের সব থেকে নিচের স্তরে নিয়ে যাওয়া হয় । এই জার্নিটা বর্ণনাই কবিতায় মেটাফোরিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।

অনেকের বিশ্বাস যে কবিতায় টমিনো আসলে স্বয়ং কবি নিজে । যদিও সাইজো ইয়াসো সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না । বলা হয়ে থাকে যে সাইজো প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তার বাবা আর বোনকে হারান । ছোট বেলাটার এই কষ্টের কথাই সে নিজের কবিতায় বর্ণনা করা হয়েছে প্রিয় জনকে হারিয়ে বেচে থাকাটা হচ্ছে অনেকটা জীবিত ভাবে দোযখে বসবাস করার মতই ।

Saijo Yaso (Credits: Wikimedia Commons)

তো পড়বেন নাকি কবিতাটা ?




রেফারেন্সঃ
Tomino’s Hell — The Poem That Curses and Kills People
Tomino's Hell - The Cursed Japanese Poem
Tomino’s Hell…The Cursed Japanese Poem You Shouldn’t Read Out Loud














সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:১০
৪৫৬ বার পঠিত
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দৃষ্টি আকর্ষণঃ সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্লগ কমিউনিটি গঠনের আহ্বান।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৫

সম্মানিত ব্লগারগণ,

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সামহোয়্যারইন ব্লগ টিমের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা আমাদের এই কমিউনিটির পরিবেশকে আরও সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধ’ তাহলে আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তি আবারো প্রমাণ হলো!

লিখেছেন এ আর ১৫, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:৪১

মুক্তিযুদ্ধ’ তাহলে আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তি আবারো প্রমাণ হলো!
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যবসা করেছে মিথ্যা নয়। ডান/বামদের দাবী মুক্তিযুদ্ধের ‘আওয়ামী ন্যারিটিভ’ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের দলীয় ইতিহাস বানিয়ে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরাট ব্যাপার-স্যাপার | রম্য =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নিজের মোবাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×