কদিন থেকে অবসরের অন্য সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে কেবল ড্রামা দেখায় মন দিয়েছি । আমার একবার যে কোন কাজে মন বসলে কেবল সেই কাজই করে চলি । এখন মন বসেছে কেবল ড্রামা আর মুভির দিকে । তাই এখন বাসায় ফেরার পরে অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে মনযোগ কেবল মুভি ড্রামা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে । কয়েকদিনে বেশ কয়েকটা ড্রামা আর মুভি দেখে ফেলেছি । এর আগে এই দেখাদেখি নিয়ে কয়েকটা পোস্ট দিয়েছি । তবে সেগুলো সবই বাংলা ওয়েব সিরিজ ছিল। আজকে নিয়ে এসেছি কোরিয়ান ড্রামা । কোরিয়ান ড্রামা অনেকেই দেখতে চান না । আমিও কোরিয়ান ড্রামার ঠিক ভক্ত না । আমার কাছে কোরিয়ান ড্রামা ভাল লাগে না কেবল মাত্র ভাষার কারণে । সাবটাইটেল দিয়ে কোন কিছু দেখতে ভাল লাগে না । তাই কোরিয়ান কম কিছু দেখা হয় । ২০২১ এর লকডাউনে প্রথম আমি কোরিয়ান ড্রামা দেখা শুরু করি । এই পর্যন্ত ৮ কি ৯ টা দেখেছি । আগে একটা পোস্ট লিখেছিলাম কয়েকটা নিয়ে । আজকে আরও কয়েকটা ড্রামা নিয়ে লিখতে বসলাম । তবে এটাকে ঠিক রিভিউ বলা চলবে না । মূলত আপনাদের এই সম্পর্কে একটা ক্ষুদ্র ধারণা দেওয়ার চেষ্টা যাতে আপনাদের মনে সেগুলো দেখার আগ্রহ জন্মে !
প্রথম ড্রামার নাম ''My Name''
এই ড্রামাটা পছন্দ হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে এর ভাষা ইংরেজিতে ডাব করা । তাই দেখে আরাম পেয়েছি । বারবার সাবটাইটেলের দিকে তাকাতে হয় নি । দুর্দান্ত একটা ক্রাইম থ্রিলার ড্রাম হচ্ছে এই মাই নেম ! ড্রামার মূল চরিত্র হচ্ছে জিহু আর মোজিন । মোজিন হচ্ছে শহরের ড্রাগ লর্ড আর জিহু হচ্ছে মোজিনের বন্ধুর মেয়ে । পুলিশ জিহুর বাবার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বের করে । তাই সে মেয়ের কাছ থেকে সব সময় দুরে থাকে । এই নিয়ে জিহুর অভিযোগের শেষ নেই । জিহুর জন্মদিনে জিহু বাবার কাছে আবদার করে এসে দেখা করার জন্য । তার বাবা যখন মানা করে তখন কান্না কাটি শুরু করে, বলে যে সে তাকে ভালোবাসে না । শেষে জিহুর বাবা মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য মেয়ের বাসায় আসে কিন্তু বাসার গেটের সামনেই জিহুর বাবাকে খুন হতে হয় । কে তাকে খুন করেছে কেউ জানে না ।
জিহু পুলিশের কাছে যায় কিন্তু কোন লাভ হয়না । পুলিশ কোন আগ্রহ দেখায় না । কার জিহুর বাবা ছিল একজন অপরাধী । শেষে জিহু যায় মোজিনের কাছে । মোজিন প্রথমে রাজি না হলেও এক সময়ে রাজি হয় । এবং জিহুকে তার ট্রেনিং সেন্টারে পাঠায় । সেখানে জিহু মোজিনের সন্তুষ্টি অর্জন করে । পরে মোজিন তার পাওয়ার খাটিয়ে জিহুর নাম পরিচয় বদলে তাকে পুলিশে ভর্তি করিয়ে দেয়ে । জিহুর কাজ হচ্ছে পুলিশের ভেতরে থেকে মোজিনের জন্য কাজ করা । সেই সাথে তার বাবার খুনিকেও খোজ করা । মোজিন তাকে সেই পিস্তলটা দেয় যেটা দিয়ে জিহুর বাবাকে খুন করা হয়েছিলো এবং তাকে বলে যে এটা একটা পুলিশের পিস্তল । তার বাবার খুনি একজন পুলিশ ।
এভাবেই জিহু মোজিনের হয়ে কাজ করে পুলিশের ভেতরে থেকে । বেশ কয়েকবার মোজিনকে বাঁচিয়ে দেয় নিজে রিস্ক নিয়ে । এবং আস্তে আস্তে তার বাবা ব্যাপারে, তার বাবার খুনীর ব্যাপার আসল তথ্য জোগার করতে থাকে । আট পর্বের একটা সিরিজ । প্রতিটিটা পর্বই দারুন টানা টান উত্তেজনায় ভরা ! একটা পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকে । কাহিনী এগিয়ে চলে খুব দ্রুত ।
দ্বিতীয় ড্রামার নাম Business Proposal
এটা একটা রোমান্টিক কমেডি ধরনের ড্রামা । ড্রামার মুল নায়িকা চরিত্র তার বান্ধবীর হয়ে একটা ব্লাইন্ড ডেটে যায় । বান্ধবীর বাবা তার মেয়ের জন্য ছেলে ঠিক করে । কিন্তু বান্ধবী কিছুতেই এখন বিয়ে করে করবে না । অন্তত তার যাকে পছন্দ না তাকে তো নয়ই । যাই হোক মূল লক্ষ্য থাকে যে নায়িকা ব্লাইন্ড ডেটে যাবে এবং রিজেক্ট করে দিবে । ব্যাস ঝামেলা শেষ । নায়িকা রাজি হয় । কিন্তু সমস্যা হয় যখন নায়িকা গিয়ে হাজির হয় ছেলের সামনে, ছেলে যখন নিজের কার্ড দেয় তখন নায়িকা জানতে পারে যে সে যে কোম্পানীতে চাকরি করে সেই কোম্পানীর নতুন সিইও হচ্ছে এই ব্লাইন্ড ডেটের ছেলেটা । এতোদিন আমেরিকায় ছিল । এখন দেশে ফিরে দাদার কোম্পানীর দায়িত্ব নিয়েছে । নায়িকা ঠিকই বুঝতে পারে যে কত বড় ঝামেলাতে সে পড়েছে ।
কয়েকদিন পরেই নায়ক মানে সিইও টের পায় যে নায়িকা এবং নায়িকার বান্ধবী তার সাথে এই রকম খেল খেলেছে । তখন নায়িকাকে বলে যে এই খেলাটাই চালিয়ে যেতে । এটার জন্য তাদের ভেতরে একটা ডিল হয় । তবে তখনও নায়ক জানে না যে নায়িকা তার কোম্পানিতে চাকরি করে ! সে আসলে বিয়ে করতে আগ্রহী নয় । বিয়ে মানে তার কাছে সময় নষ্ট । কিন্তু তার দাদা তাকে বিয়ে না করিয়ে ছাড়বে না । তাই সে নায়িকার সাথে ডিল করে যাতে সে এই প্রেমের খেলা চালিয়ে যায় এবং একটা সময়ে ব্রাক আপ করে চলে যায় !
এভাবেই কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে । তারপর কিভাবে নায়িকার আসল পরিচয় নায়ক জানতে পারলো কিভাবে তার প্রেম হল কিভাবে সব মিটে গেল নাকি আদৌও মিটলো কিনা সেটা জানতে পুরো সিরিজটা দেখতে হবে । মোট ১২ পর্বের সিরিজ । কমেডি, অফিস আর ফ্যামিলির কাহিনী নিয়ে চমৎকার একটা ড্রামা ।
তিন নম্বর ড্রামার নাম হচ্ছে Happiness
এই ড্রামাটা হচ্ছে জম্বি রিলেটেড । ইদানীং কোরিয়ানটা জম্বি নিয়ে অনেক ড্রামা বানাচ্ছে । শহরে একটা অদ্ভুত রোগ দেখা দিয়েছে । একটা পিল খেলে এই রোগ হচ্ছে । রোগটা হচ্ছে ভিক্টিমের প্রচুর পানির পিপাসা পাচ্ছে এবং সে সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই আক্রমন করে তার শরীর থেকে রক্ত খাচ্ছে । ড্রামার মুল মেয়ে ও ছেলে চরিত্র দুজনই পুলিশ অফিসার । একজন ডিটেকটিভ অন্য জন কাউনন্টার টেরোরিস্ট ইউনিটের অফিসার । ট্রেনিংয়ের সময়ই এই কাউনন্টার টেরোরিস্ট ইউনিটের একজনের এই পিল খেয়ে রোগে আক্রান্ত হয় এবং অন্য আরেকজনকে আক্রমন করে । নায়িকাকেও আক্রমন করে এবং আচড় দিয়ে দেয় । সাথে সাথেই একজন বড় আর্মি অফিশিয়াল এসে হাজির হয় সেখানে । নায়িকাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশেষ একটা স্থানে পরীক্ষার জন্য । পরীক্ষা শেষে তাকে ছেড়ে ছেড়েও দেওয়া হয় । অন্যদের বেলাতে আচড় কিংবা কামড়ের ফলেই অন্যজন আক্রান্ত হয়ে যায় কিন্তু নায়িকার শরীরে কোন সংক্রামন হয় নি। কেন হয় নি সেটাই পরীক্ষা করা হয় ! এবং ধারণা করা হয় যে নায়িকার রক্তে হয়তো রয়েছে এই রোগের এন্টিডোট !
কাহিনী তখনও মূলপর্বে ঢোকে নি । নতুন নিয়ম জারি করা হয় যে সরকারি অফিসারদের ভাল কাজের জন্য পয়েন্টের ভিত্তিতে ফ্লাট দেওয়া হবে । নায়িকার অনেক দিনের শখ হচ্ছে নিজের একটা ফ্লাটের । তখন সে নায়কের সাথে বিয়ে করতে প্রস্তাব তাহলে তাদের সেই ফ্লাট পেতে সহজ হবে । এছাড়া সেই বড় আর্মি অফিশিয়ালের সুপারিশ ক্রমে তারা একটা ফ্লাট পেয়ে যায় । মুল কাহিনী শুরু হয় এই ফ্লাট এপার্টমেন্ট থেকে । এই ফ্লাট এপার্মেন্টের জিমে সেই পিল সরবারহ করা হয়েছিলো । ফলে এখানেও সেই রোগ দেখা হয় । পুরো এপার্টমে্ট বিল্ডিংকে সীল করে বন্ধ করে দেওয়া হয় । কেউ ভেতর থেকে বাইরে যেতে পারবে না আর বাইরে থেকে ভেতরে আসতে পারবে না । এরপর এই বিল্ডিংয়ের ভেতরে গল্প শুরু হয় । কিভাবে এক ডাক্তার তার স্ত্রীকে মেরে ফেলে কিভাবে একজন উকিল তার বউয়ের সাথে চিট করে । বিল্ডিং রিপ্রেজেন্টেটিভ হওয়ার জন্য এক মহিলা কিনা করে , কি তাদের প্লান ছিল । পনের তলার ফ্লাটে রহস্যময় ছেলেটা আর রং করতে আসা কার্পেন্টার ছেলেটা সব সময় মুখে মাস্ক লাগিয়ে রাখে কেন ! মানুষ কঠিন মুহুর্তে কিভাবে আচরন করে কিভাবে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কিংবা নিজে বাঁচার জন্য কিভাবে অন্যকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা বোধ করে না সেসব এই ড্রামাতে দেখানো হয়েছে ! আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে ড্রামাটা । আপনারাও দেখতে পারেন ।
এবার কোন ড্রামা নয় । একটা মুভির গল্প বলি । মুভির নাম Yaksha: Ruthless Operations
এটা একটা স্পাই থ্রিলার মুভি । মুভির শুরুতে দেখা যায় একজন সরকারি প্রোসিকিউটর জি হুম একজন বড় করাপ্ট বিজনেস ম্যানের অফিসে রেড করে কিন্তু সেখানে কিছুই পায় না । ফলে তাকে ডিমোশন দিয়ে সরকারি সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয় । কিন্তু সেখানে জি হুমের মাথা খারাপ হওয়ার জোগার হয় । বিশেষ করে নিজের ব্যর্থতার গ্লানি তাকে শান্তি দেয় না । একটা সুযোগের জন্য সে অপেক্ষা করে, নিজেকে প্রমাণের জন্য পথ খুজতে থাকে । পরে অবশ্য সেই সুযোগ চলেও আসে । তাকে স্যাংইয়াংয়ের পাঠানো হয় একটা টিমের কাজ কর্ম পরিদর্শনের জন্য। সেখানে তাদের ব্রাঞ্চে আসলে কি চলছে সেসব খবরের জন্য । অনেক দিন থেকে সেখানকার কোন খোজ খবর অথোরিটির কাছে নেই। সেখানে তাদের একটা ব্লাক টিম কাজ করছে যার লিডার হচ্ছে জিকাং যে কিনা কোন নিয়মের ধার ধারে না । কাজ হাসিলের জন্য যে কোন পথ সে অবলম্বন করতে পারে । জিহুম সেখানে যায় । তাদের কাজ কর্ম সে কিছুই বুঝতে পারে । তাদের কাজ কর্মের পদ্ধতি জিহুমের পছন্দ হয় না । পদে পদে সে বাঁধা দিতে চায় । এমন কি তাদের আটক করা একটা মেয়েকেও জিহুম ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় । এই মেয়েটিই হচ্ছে মুনের মেয়ে যাকে জাপানিজরাও খুজছে । মুন মৃত্যুর আগে একটা বিশেষ লিস্ট নিজের মেয়ের কাছে দিয়ে গেছে ! এই মেয়েটির কাছে এমন সেই লিস্ট আছে যেটা জিকাংয়ের খুব বেশি দরকার । অন্য দিকে জাপানি ইন্টেলিজেন্সও সেই লিস্ট হাসিল করতে খুব বেশি তৎপর । যে কোন ভাবেই সবার আগে তারা সেই লিস্টটা নিজেদের কব্জায় আনতে চায় । এটা করার জন্য তারাও যে কোন পথ অবলম্বন করতে প্রস্তুত । এক সময়ে মেয়েটিকে জাপানিজ ইনন্টেলিজেন্স তাদের ডেরায় নিয়ে যায় । এখন জিকাং এবং তার দল মেয়েটিকে উদ্ধার করতে প্রস্তুতি নেয় । জিহুমও তাদের সঙ্গী হয় । এই মেয়েকে তারা কিভাবে রক্ষা করে তারপর সেই লিস্ট কিভাবে উদ্ধার করা হয়, কেনই বা এতো জরূরী এই লিস্ট সেটা নিয়েই সব আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে !
অনেক দিন পরে একটা চমৎকার একশন মুভি দেখে মন ভরলো । ইউএস আইপি ব্যবহার করে দেখেছিলাম বলে ভাষা ইংরেজি ছিল। তাই আরও একটু ভাল করে উপভোগ্য ছিল মুভিটা । এই রিজিওন দিলে সম্ভবত ইংরেজি ভাষা পাওয়া যাবে না । সাবটাইটেল দিয়েই দেখতে হবে !
তিনটা ড্রামা আর মুভিটা নেটফ্লিক্সেই পাবেন । হাতে অবসর থাকলে দেখে ফেলতে পারেন সব গুলো । সময় ভাল কাটবে আশা করি ।
হ্যাপি ওয়াচিং
ওয়াচলিস্টে আরও যা যা দেখতে পারেনঃ
দুটো বাংলা অরিজিনাল ওয়েব সিরিজঃ ''আইজ্যাক লিটন'' ও ''নিখোজ''
চরকি অরিজিনাল ফিল্মঃ রেডরাম
ঈদে দেখা দুটি বাংলা ওয়েব সিরিজ ও একটি বোনাস নাটক
নুহাশ হুমায়ূনের হরর ওয়েব সিরিজ ''ষ''
ছবিসুত্র একঃ লিংক, দুইঃ লিংক , তিন লিংক, চার লিংক