ইদানীং সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল মাত্র মুভি আর টিভি সিরিজ দেখায় মন দিয়েছি । আগে ছুটির দিন কাটতো বই পড়ে নয়তো বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে । ঈদের আগে থেকে সেই অভ্যাসটা কেবল টিভি সিরিজ মুভি দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে । আগে যদিও ইংরেজি ওয়েব সিরিজের দিকেই ঝোক বেশি ছিল কিন্তু এখন আমাদের দেশীও নির্মাতারাও বেশ ভাল মানের কিছু ওয়েব সিরিজ তৈরি করছেন । বেশ কয়েকটা বাংলা কন্টেন্ট দেখা হয়েছে এই কয়দিনে । আজও একটা দেখে শেষ করেছি। যখন দেখছিই, তখন এগুলো নিয়ে কয়েক লাইন লেখা যাক ।
আজকের প্রথম ওয়েব সিরিজের নামটা হচ্ছে ''আইজ্যাক লিটন'' । মোশাররফ করিম এবং স্পর্শিয়া মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই সিরিজে । কমেডি ঘরোয়ানার ওয়েব সিরিজ এটা । এখানে মোশাররক করিম আইজ্যাক লিটন চরিত্রে অভিনয় করেছেন । তার কাজ হচ্ছে সারা দিন আপেল গাছের নিচে বসে থাকা । এবং আশা করা যে কখন গাছ থেকে একটা আপেল পড়বে এবং তার মাথায় নতুন কোন আইডিয়া আসবে । ঠিক যেমন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মাথায় এসেছিল । কিন্তু গাছে আপেল ধরার পাঁচ বছরের ভেতরে একবারও কোন আপেল পড়ে না । কিন্তু যখনই স্পর্শিয়া তার সাথে দেখা করতে আসে তখনই গাছ থেকে একটা আপেল পড়ে । স্পর্শিয়া বিভিন্ন অনলাইণ পোর্টাল থেকে আইজ্যাক লিটনের ব্যাপারে জানতে পারে । স্পর্শিয়ার নাম থাকে চন্দ্রাবতী । চন্দ্রবতী শহরের নানান পাগলদের নিয়ে গবেষণা করতে আসে । তার ধারণা যে বিখ্যাত সব ব্যক্তিরা জীবনের কোন না কোন সময়ে খানিকটা পাগল ছিল । চন্দ্রবতীর মতে লিটন সাহেব সামনে কোন দিন হয়তো বিখ্যাত হয়ে যাবে ।
কিন্তু পরে জানা যায় যে চন্দ্রবতী একটা ভাল গল্পের জন্য লিটন সাহেবের কাছে এসেছে । সে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া নিয়ে পড়াশোনা করেছে । এবং তার ইচ্ছে একটা চমৎকার মুভি বানাবে । আইজ্যাক লিটনের জীবনের গল্পটা তার পছন্দ হয়েছে । বিশেষ করে তার নাম কিভাবে আইজ্যাক লিটন হল, কে আর কেই বা তার এই নাম রাখলো । তার পারিবারিক জীবন কেমন ছিল সব কিছুর খোজ বের করতে থাকে চন্দ্রবতী । এসবের ভেতরে ইন্সপেক্টর শওকত নামের একজন পুলিশ অফিসারের সাথে চন্দ্রাবতীর পরিচয় হয় । সে চন্দ্রবতীকে জানায় যে আইজ্যাক নিউটন একজন সাইকোপ্যাথ । সে তার মামাকে খুন করেছে । এছাড়া তার বাসায় একজন সাপুড়ে ঢুকে নিখোজ হয়েছে । পুলিশের ধারণা আইজ্যাক নিউটন তাকে খুন করে গায়েব করে দিয়েছে । কিন্তু পুলিশের কাছে যথাযত প্রমাণ না থাকায় তারা কিছু করতে পারছে না !
সত্যিই কি আইজ্যাক লিটন তার মামাকে খুন করে তার সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে ? সত্যিই কি সে খুনী? খুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে এমন ভং ধরে আছে ? এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সিরিজের একেবারে শেষে । সাত পর্বের সিরিজ । দেখতে খুব বেশি সময় লাগবে না । খুব বেশি বড় নয় পর্ব গুলো !
সিরিজের আইজ্যাক লিটনের একটা ডায়ালগ আমার বেশ চমৎকার মনে ধরেছে । এক পর্যায়ে লিটন চন্দ্রাবতীকে বলে যে, ''কিছু কিছু মেয়ে আছে যাদের দেখে মনে হয় যে ভালোবাসি টালোবাসি না বলে সরাসরি বলে ফেলি যে চল বিয়ে করে ফেলি । আমার চোখে আপনি তেমনই একজন মেয়ে''
মোশাররফ করিমের অভিনয় নিয়ে আসলে কিছু বলার নেই । যে কোন চরিত্রকে মোশাররফ করিমের থেকে ভাল আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারে না । এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস । এখানেই আইজ্যাক লিটনের চরিত্র মোশাররফ করিমের থেকে ভাল আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতো না ! স্পর্শিয়া আমার পছন্দের একজন অভিনেত্রী । তাই তার অভিনয় নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই । তবে অনেকের থাকতে পারে ।
সিরিজটা যে একদম ১০০তে ১০০ এটা আমি বলবো না । মোটামুটি চমৎকার মনে হয়েছে আমার কাছে । বিশেষ করে কমেডির ঘরোয়ানার সাথে সাথে শেষের দিকে যখন কাহিনী অন্য দিকে টার্ন নেয় সেই ব্যাপারটা । তবে গল্পে কিছুটা ফাঁক রয়েছে । সব থেকে বড় ফাঁকটা আমার মনে হয়েছে যে স্পর্শিয়া আসল পরিচয় যখন বের হয় তখন আমার মনে হল যে আইজ্যাক সাহেবের তো তাকে চেনার কথা । কেন চিনলো না ?
যাইহোক আপনারা হালকা মেজাজের কিছু দেখার কথা চিন্তা করলে এই সিরিজটা দেখতে পারেন । সিরিজটা পাবেন Binge ওটিটি প্লাটফর্মে । Binge তে সাবস্কিপশন কিনতে পারবেন মোবাইল থেকেই । এখানে একদিন, এক সপ্তাহ কিংবা এক মাসের প্যাকেজ আছে । খুবই সামান্য অর্থের বিনিময়ে !
দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজের যাওয়ার আগে এই Bingeর আরেকটা টেলিফিল্মের কথা বলি । এটার নাম হচ্ছে জুজু আসছে ... ট্রেইলার আগে দেখুন !
গল্প সম্পর্কে বলি একটু । আমরা ছোট বেলাতে যখন কিছু খেতে না চাইতাম কিংবা কোন কাজ করতে চাইলে বড়রা আমাদের বলতো এটা খাও নয়তো জুজু আসবে । জুজু ছিল আমাদের কাছে একটা ভয়ের নাম । যারা ভুত এফএম কিংবা ভুত ডটকমের শ্রোতা তারা এই গল্প গুলোর সাথে পরিচিত । এই টেলিফিল্মটা মূলত সেই গল্পেরই ভিডিও উপস্থাপন । এবং এটা বেশ চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । বিশেষ করে আসাম থেকে সিলেট এবং সিলেট থেকে ঢাকার সাথে সংযোগগের ব্যাপার বেশ চমকপ্রদ । ছোট একটা ফিল্ম । দেখতে বেশি সময় লাগবে না !
দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজটার নাম হচ্ছে ''নিখোজ'' । নিখোজ ওয়েব সিরিজের গল্প টা শুরু টা খুবই সাধারণ ভাবে । একটা সাধারণ সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার । ফারুক সাহেব ব্যাংকে চাকরি করেন । তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে । দুপুর বেলা সে তার স্ত্রী ছেলে মেয়েদের নিয়ে খেতে বসেছেন । স্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন যে রান্না কেমন হয়েছে । মেয়ে বলল যে রান্না খুব ভাল হয়েছে । ফারুক সাহেব বললেন যে স্ত্রীর রান্না তো সব সময়ই ভাল হয় । ঠিক তখনই কলিংবের বেজে উঠলো । মেয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দুজন লোক ঘরে ঢুকলো এবং ফারুক সাহেব কে নিয়ে চলে গেলো একটা মাইক্রোতে করে ! তারপর থেকে সে নিখোজ । তার আর কোন খোজ নেই । ফারুক সাহেবের পরিবার পুলিশের কাছে গেল কিন্তু পুলিশ কিছু করতে পারলো না । কোন খোজ বের করতে পারলো না। উল্টো কদিন পরে পুলিশ তার বাসায় এসে হাজির হল সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে ।
পরিবারের প্রধানকে দিনে দুপুরে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং পরে তার আর কোন খোজ না পাওয়া এই ব্যাপারটা পরিবারের মানুষজনের উপর তার কী প্রভাব ফেলতে পারে, পুরো পরিবারকে কিভাবে ধ্বংশ করে দিতে পারে, সেটা এই সিরিজে বেশ ভাল ভাবে দেখানো হয়েছে ।
পুরো সিরিজটা মূলত তিনটা ফরমেটে দেখানো হয়েছে । একটা ফরমেট শুরু হয়েছে ফারুক সাহেব নিখোজ হওয়ার সময় থেকে । একটা ফরমেট শুরু হয়েছে নিখোজের আগের সময় । এবং আরেকটা ফরমেট শুরু হয়েছে বর্তমান সময় মানে নিখোজের প্রায় বিশ বছর পরের সময় ! তিন ফরমেটের কাহিনী চলতে থাকে এক সাথে । তাই প্রথমে একটু বুঝতে সমস্যা হতে পারে । তবে সেটা ঠিক হয়ে যাবে ।
গল্পের কাহিনী একটু স্লো । আমি অবশ্য দ্রুত কাহিনী পছন্দ করি । প্রথম দুই পর্ব একটু বোরিং মনে হয়েছে আমার কাছে । তবে আস্তে আস্তে কাহিনী যখন এগিয়ে গেছে, কাহিনীর ভেতরে ঢুকে গেলে এই বোরিংনেস কেটে যাবে । বিশেষ করে যখন পুলো গল্পটা আপনি বুঝতে শুরু করবেন তখন । আজকে এক বসায় এটা শেষ করে ফেলেছি । আপনারাও কোন এক ছুটির দিনে সিরিজটা দেখে শেষ করে ফেলতে পারেন ।
সিরিজটা পাবেন চরকি ওটিটি প্লাটফর্মে ।
শেষ করার আগে একটা মুভির ট্রেইলার নিয়ে একটু কথা বলি । গতকালকে আমাদের দেশের একটু বিশেষ মুভির ট্রেইলার রিলিজ দেওয়া হয়েছে । পত্রিকা যারা পড়েন কিংবা ফেসবুকে নিয়মিত চোখ রাখেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে আমি কোন মুভি আর কোন ট্রেইলারের কথা বলছি । যাদের সামান্যতম মুভি বিষয়ক জ্ঞান আছে তাদের এই ট্রেইলারটা কেমন মনে হয়েছে ? শুনেছিলাম এই মুভির বাজেট নাকি বিশাল বড় । যদি এই ট্রেইলার মত মুভিটি হয় তাহলে এই মুভিটা কেমন হবে সেটা আপনাদের ধারণা করতে কষ্ট হবে না আশা করি । আমার প্রশ্ন সেটা না । এখন কেউ যদি এই মুভি দেখে মুভির সমালোচনা করে তাহলে কি কেস খাওয়ার সম্ভবনা আছে !
আপাতত আজকের ব্লগ পর্যন্তই । ইংরেজি হিন্দী কন্টেন্টের সাথে সাথে আমাদের দেশীও কন্টেন্টও দেখুন নিয়মিত । বিশেষ করে অনুরোধ থাকবে যে যদি মুভি সিরিজ দেখার অভ্যাস থাকে তাহলে নেটফ্লিক্স এমাজান সাবস্কিপশনের সাথে সাথে দেশীয় যে ওটিটি প্লাটফর্ম গুলো আছে সেগুলোতে কিছু সাবস্কিপশন করুন । এতে আমাদের দেশীয় নাটক ফিল্ম সিরিজগুলোর উন্নতি হবে । যত সাবস্কিপশন বাড়তে তত এই কন্টেন্ট গুলোর চাহিদা বাড়বে তত এসবের মান বাড়বে ।
হ্যাপি ওয়াচিং !
ছবি উৎসঃ Binge ও Chorki