ঈদে বাড়ি যাওয়ার পর থেকে ঢাকায় ফেরা পর্যন্ত সময় টুকুতে এবার বেশ কিছু টিভি সিরিজ আর মুভি দেখেছি । চরকিতে সাবস্কক্রিপশন কেনার পর থেকে বাংলা বেশ কয়েকটা টেলিফিল্ম আর সিরিজ দেখা হয়েছে । রেডরাম তাদের একটা ।
আমার কাছে একটা ডিটেক্টিভ/রহস্য গল্প কিংবা মুভিকে আমি তখনই ভাল বলবো যখন একেবারে শেষ রহস্য উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারবো না যে আসল খুনি টা কে । রেডরুম মুভিটার বেলাতেও সেই একই কথা বলতে হয় । আমি একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বুঝতে পারি নি যে আসলে খুনটা কে করেছে আর কিভাবে করেছে ।
মুভির প্লট হচ্ছে বিখ্যাত গায়ক সোহেলকে তার নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । তার বাবা সকাল বেলা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখে তার ছেলে মেঝেতে মরে পড়ে আছে । খুব ছোট আর সার্প কিছু দিয়ে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করা হয়েছে । কিন্তু এদিকে তার স্ত্রী নীলা বিছানাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে । শ্বশুরের আওয়াজে সে ঘুম থেকে জেগে ওঠে । এবং দেখতে পায় যে তার স্বামী মরে পড়ে আছে ।
যথারীতি পুলিশ আসে । এই পুলিশ হচ্ছে রাশেদ । সে আবার নীলা আর সোহেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু । রাশেদ হচ্ছে চৌকশ পুলিশ অফিসার । তাকে হিউম্যান লাই ডিটেকটার হিসাবে জানে সবাই । রাশেদ তার বন্ধুর খুনি কে খুজতে থাকে । আস্তে আস্তে পরিবারের অনেক সত্য বের হয়ে আসে । রাশেদ বুঝতে পারে যে সোহেলের পরিবারের সবাই মিথ্যা বলছে । সোহেলের পরিবারের সবাই কিছু লুকাচ্ছে । সোহেলের বাবা মা আর সৎ ভাইয়ের সাথে সোহেলের সম্পর্ক ভাল ছিল না । টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা ছিল । অন্য দিকে সোহেলের সৎ ভাই খানিকটা মানসিক ভাবে সাইকো ধরনের ।
রাশেদ জানতে পারে যে খুন হওয়ার রাতে কিছু সময়ের জন্য সিসিটিভি বন্ধ ছিল । অন্য দিকে ঘরের দুইটা চাবির ভেতরে একটা সোহেলের বাবার কাছে থাকলেও অন্য হারিয়ে গেছে । সেটা তার সৎ ভাইয়ের কাছে পাওয়া যায় । তাহলে সোহেলকে খুন করলো আসলে কে?
তার স্ত্রী নীলা?
তার বাবা ?
নাকী তার সৎভাই ?
ফরেনসিক রিপোর্টে এটা জানা যায় যে ঐদিন খাবারের সাথে সোহেলকে ঘুমের ঔষদ জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিলো । এরপর সোহেল হয়তো কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নি । এদিকে পুরো দেশের মানুষ নীলাকে খুনি ভেবে বসে আছে । টক শোতে সবাই নীলাকে দোষী ভেবে বসে । সবাই নীলার শাস্তি দাবী করে । এইভাবে কাহিনী আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সামনের দিকে ।
কাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সোহেল রাশেদ নীলার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু ঘটনা দেখানো হয় । সোহেল আর রাশেদ কিভাবে দিন কাটিয়েছে । নীলার আগে একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল । তবুও সোহেল তাকে কিাভবে দুর থেকে ভাল বাসতো । রাশেদ এটা দেখে তাকে শান্তনা দিতো । কিন্তু একটা সময়ে নীলার আগের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়ে যায় এবং সোহেলের সাথে প্রেমে শুরু হয় । তবে নীলার বাবা কোন ভাবেই নীলার সাথে সোহেলের বিয়েটা মেনে নেয় নি । সে মেয়ের উপর অভিমান করে দুরে থাকে । তবে সোহেল মারা যাওয়ার পরে নীলাকে বাসায় নিয়ে যায় । নীলাকে যখন সবাই দোষ দিতে থাকে তখন নীলার বাবা ঠিক করে যে তাকে বাইরে পাঠিয়ে দিবে । পুলিশ যখন বাঁধা দিতে যায় তখনই একজন চোর এসে বলে যে সোহেলকে সেই খুন করেছে । যে সময়টা সিসি টিভি বন্ধ ছিল সেই সময়ে সে ঘরে ঢুকে চুরি করতে কিন্তু সোহেল দেখে ফেলার পর তাকে ভয়ে মেরে ফেলে । কিন্তু স্পষ্টই বোঝা যায় যে খুন সে করে নি । তাহলে কে খুন করেছে? কিভাবে করেছে !
শেষ পর্যন্ত তাহলে সোহেলকে কে খুন করে আর কিভাবে খুন করে ? এই খুনের সাথে জড়িতো থাকে অতীতের কোন একটা অন্যায় । আজকে সেই অন্যায়টা যদি না হত তাহলে কারো জীবন এই ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যেত না ।
আমার মুভিটা বেশ চমৎকার লেগেছে । আপনাদেরও ভাল লাগবে আশা করি । খুব বেশি লম্বা সময়ের না মুভিটা । দুই ঘন্টার একটু বেশি । দেখতে দেখতে আমার বোরিং লাগে নি । আপনাদেরও লাগবে না আশা করি ।
মুভিটির ট্রেইলার টা দেখে নিতে পারেন ।
মুভিটা দেখতে পাবেন চরকি ওটিটি প্লাটফর্মে ।
হ্যাপি ওয়াচিং
pic source