নওরিনের শরীরটা জ্বলে উঠলো রাগে । ইচ্ছে করলো বেটাকে ফোনের ভেতরে ঢুকে একটা চড় মেড়ে আছে । রাগ আটকে কোন মতে বলল, আপনি তো আচ্ছা বদমাইশ ! ছেলে হয়ে মেয়ে রুমমেট খুজছেন ?
ওপাশ থেকে যে ফোন ধরেছিল সে খানিকটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর শান্ত কন্ঠে বলল, টু লেটে কি কোথাও লেখা যে যে টুলেট দাতা মেয়ে ? আছে কি?
স্কিনের দিকে তাকিয়েই আছে নওরিন । সেখানে সত্যিই কোথাও এমন কিছু লেখা নেই । কেবল লেখা যে এক রুম ভাড়া হবে । চাকুরীজীবী মেয়ে ! নিচে একটা ঠিকানা আর ফোন নম্বর !
ওপাশ থেকে আবারও ছেলেটার কন্ঠসৃ শোনা গেল । সে বলল, শুনুন, ইচ্ছে হলে থাকবেন নয়তো থাকবেন না । এতো কথা বলার দরকার কি ! আর আমি আপনার সাথে রুমে থাকবো না । পুরো ফ্ল্যাটে চারটা রুম ! আপনাকে আলাদা একটা রুম দেওয়া হবে । আপনি থাকবেন আপনার মত ! অন্য রুমে কে থাকলো সেটা আপনার দেখা কি দরকার !
ফোনের লাইন টা কেটে গেল । নওরিন ফোন রেখে কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । কদিন থেকে সময়টা ওর ভাল যাচ্ছে না মোটেও । সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে একটা নতুন বাসা ঠিক করতেই হবে ওকে । কোন ভাবেই আর টেকা যাচ্ছে না । বাড়িওয়ালা একেবারে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে এই মাসের ভেতরেই ঘর ছেড়ে দিতে হবে । নয়তো তিনি নিজে তাকে বাসা থেকে বের করে দিবে । অবশ্য নওরিন জানে যে বাড়িওয়ালাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । প্রতিদিন একই ঝামেলা কে সহ্য করে । নওরিনই যেখানে সব ঝামেলার মুল তাই নওরিনকেই বিদায় করে দিবে । এটাই সহজ সমাধান ।
নওরিন টুলেট গ্রুপে আরও ভাড়ার জন্য দেখতে শুরু করলো । কিন্তু একটাও মনের মত কিছু পেল না । কয়েকটা পেল সে গুলো ওর অফিস থেকে অনেক দুরে । অনেক বেশি কষ্ট হয়ে যাবে । আরও দুইদিন এভাবে কেটে গেল । দুই তিন টা সাবলেট দেখতেও গেল কিন্তু কোনটাই মন ভরলো না । ঐ সব স্থানে নওরিন থাকতে পারবে না । কোন ভাবেই সে হোস্টেলে উঠতে চাচ্ছে না । হোস্টেলের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না সে । এখন কী করবে ? তখন আবারও সেই আগের রুমটার কথা মনে হল ।
আচ্ছা একবার কি দেখে আসবে রুমটা ! ঠিকানা টা তো একদম কাছেই অফিসের । একবার দেখে আসতে তো কোন দোষ নেই । যে এলাকার ঠিকানা দেওয়া সেটা সম্ভ্রান্ত এলাকা । এই অফিসের কাছে যার ফ্লাট রয়েছে সে নিশ্চিত ভাবে যেন তেন মানুষ হবে না । একবার ঘরটা দেখে আসতে তো দোষ নেই ।
-হ্যালো !
-জ্বী বলুন !
শান্ত কন্ঠ শুনে নওরিন একটু স্বস্তি পেল । ভেবেছিলো যে আবারও ফোন পেয়ে হয়তো ছেলেটা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে । অথবা এমনও হতে পারে যে ওর নম্বার মনেই নেই ছেলেটার ! এই জন্য হয়তো শান্ত কন্ঠে কথা বলছে । নওরিন বলল, জ্বী আমি ঘরের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম !
-একবার না বললেন ! আবারও !
নম্বরটা চিনতে পেরেছে সে । নওরিন একটু বিষম খেল । কী বলবে খুজে পেল না । ওপাশ থেকে বলল, বলুন এখন কী বলার আছে ?
-আসলে গতদিনের ব্যবহারের জন্য সরি ! বুঝতেই পারছেন আমাদের কালচার ! আসলে মানুষ কি ভাববে ! আমি আসলে রিএক্ট করে ফেলেছি !
-ঠিক আছে ! সমস্যা নেই । বলুন !
-ঘরটা কি এখনও আছে?
-জ্বী এখনও আছে !
-আমি কি আসতে পারি দেখতে একটু ?
-হ্যা । চলে আসুন । আমি বাসাতেই আছি ! ঠিকানা তো দেওয়াই আছে । বাসার নিচে কেয়ারটেকার আছে । আমার নাম নাম বললেন ইফতি । আমি বলে দিচ্ছি ।
-জ্বী আচ্ছা ! আমি অফিস শেষ করে আসবো ।
-ওকে সমস্যা নেই ।
অফিস শেষ করে যখন বাসাটার সামনে এসে হাজির হল তখন প্রথম দর্শনেই পছন্দ হয়ে গেল । ওদের অফিস থেকে মিনিট দশেকের হাটার পথ । চমৎকার একটা বিল্ডিং । ছেলেটার একেবারে টপ ফ্লোরে । গেটের কাছে গিয়ে নাম বলতেই নওরিন দেখলো কেয়ারটেকার একদম দৌড়ে এল । তারপর নিজে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এল । এমন কি লিফ্টের বোতামটাও সেই চেপে দিল ।
যখন বাসার কলিংবেল চাপলো তখনো নওরিন ঠিক মত নিশ্চিত না যে সে এই বাসায় থাকবে কিনা ! একটা ফ্ল্যাটে একটা অচেনা ছেলের সাথে থাকাটা জানা জানি হলে কি হবে কে জানে ! অবশ্য ঢাকা শহরে কে কোথায় থাকে এটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই । আর ওর বাসায় এক বাবা মা আর ভাই ছাড়া আর কেউ নেইও । তারা যদি তারা যদি জানে তখন কী হবে ?
আপাতত নওরিন সব চিন্তা ভাবনা দুর করে দিল । কেবলই মনে মনে বলল যে এখন কেবল ঘর দেখতে এসেছে । আর কিছু না । ঘর দেখা মানেই কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া নয়
একটা ভদ্র চেহারার ছেলেকে দরজা খুলতে দেখলো । নওরিন একটু হেসে বলল, ইফতি !
-জ্বী ! আসুন ।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নওরিন চারিদিকে তাকালো । এবং একটা ব্যাপার নওরিনের কাছে পরিস্কার হল যে টাকা পয়সার জন্য এই ঘরটা মোটেই ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না । ড্রয়িং রুমটা বেশ বড় । সাথেই ডাইনিং রুম । রান্না ঘর একদিকে । তার পাশে একটা রুমের দরজা ।
ইফতি সেই দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো । দরজাটা খুলতে খুলতে বলল, এটাই আপনার রুম । দেখুন !
নওরিন রুমটার ভেতরে ঢুকলো । প্রথমে ঢুকেই ঘরটা ওর পছন্দ হল । ঘরটা বেশ বড় । লাগোয়া বারান্দা আছে । সাথে বাথরুম ! ওর একার জন্য একেবারে পার্ফেক্ট একটা ঘর ! কিন্তু ওর মনের ভেতরে সেই দ্বিধাটা ঠিকই কাজ করতে লাগলো । একটা ছেলের সাথে এক ফ্লাটে থাকবে , এটা মানুষ কিভাবে নেবে?
আচ্ছা ছেলেটা যে ওকে বাসা ভাড়া দিবে এই ফ্লাটের অন্যান্যরা কী মনে করবে ?
তারা কোন অভিযোগ করবে না
নওরিন যখন ঘর দেখা শেষ করে আবার ড্রয়িং রুমে বের হয়ে তখন দেখতে পেল টি টেবিলের উপরে এক কাপ কফি অপেক্ষা করছে । কফির চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে যে জিনিসটা খেতে ভাল হয়েছে । নওরিন কফি খুব পছন্দ করে । দিনের ভেতরে কয়েক কাপ কফি তাকে খেতেই হয় ! কফিটা তার জন্যই রাখা হয়েছে কোন সন্দেহ নেই । কারণ সোফার উপরে বসা মানুষটার হাতেও একটা কফির কাপ ।
নওরিন সোফার উপর বসে কফির কাপটা হাতে নিল । তারপর ইফতির দিকে তাকিয়ে বলল, কফির জন্য ধন্যবাদ !
-আগে চুমুক দিয়ে দেখুন খেতে ভাল হয়েছে কিনা !
নওরিন চুমুক দিল এবং সাথে সাথেই অনুভব করলো যে অনেক দিন এমন চমৎকার কফি সে খায় নি । তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল যে এখানে সে থাকবে । যত ঝামেলা হোক আর ভাড়াটা একটু বেশি হলেও থাকবে !
-তো ঘর পছন্দ হয়েছে ?
নওরিন একটু হেসে বলল, পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই । আসলে আমি ঘরটা নিতে আগ্রহী ! তবে ....
-তবে?
-তবে আমার কিছু জানার ছিল ?
-হ্যা বলুন !
নওরিন একটু দ্বিধান্বিত হল । মনে মনে আরেকবার ভাবলো । তারপর বলল, মানে আমি একটা মেয়ে । আপনার সাথে যদি একই ফ্ল্যাটে থাকি তাহলে সমস্যা হবে না ?
-আপনার সমস্যা হবে কি?
ইফতি প্রায় সাথে সাথেই জানতে চাইলো ।
-আসলে আমি এখানে একা থাকি । কাজ করি খাই দাই ঘুরে বেড়ায় । মানুষ কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না । আামর কাছে আমি ঠিক তো সব ঠিক !
ইফতি বলল, আমার বেলাতেও তাই ।
-না মানে আমি শুনেছি যে প্রতিটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং কমিটি থাকে । তারা কিছু বলবে না?
ইফতি হাসলো। তারপর বলল, ভয় নেই । কেউ কিছু বলবে না । এটা আমার বিল্ডিং ! এখানে অন্য সবাই ভাড়াটিয়া !
-ও আচ্ছা !
নওরিন এটা আশা করে নি । এখন তো তাহলে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে ঘর ভাড়াটা মোটেই টাকার জন্য দেওয়া হচ্ছে না !
-আসলে আপনি কেন ঘর ভাড়া দিচ্ছেন ! একটা রুম ভাড়া দিয়ে আপনার কী লাভ !
ইফতি আবারও হাসলো । তারপর বলল, আসলে টাকার জন্য আমি ঘর ভাড়া দিচ্ছি না । এতো বড় বাসায় আমি একদম একা থাকি । এই জন্য আর কি ! এছাড়া ...।
নওরিন দেখলো যে ইফতি কেমন উদাস হয়ে গেল । নওরিন বলল, এছাড়া ?
নওরিন খেয়াল করলো যে ইফতি কেমন যেন একটু দ্বিধাবোধ করছে কথাটা বলতে । নওরিন সাথে সাথে বলল, যদি না বলতে চান দরকার নেই । আমি যেটা জানতে চাইছি সেটা হচ্ছে মেয়েদেরকেই কেন ভাড়া দিতে চাচ্ছেন !
ইফতি সামনে নিলো সাথে সাথে । আবার আগের চেহারায় ফিরে এল । তারপর বলল, আর বলবেন না । আগে ছেলেদেরই ভাড়া দিয়েছিলাম । একবার না দুইবার ! ছেলে গুলো এমন বদমাইশ । ঘর পরিস্কার রাখে না। গাজা খায় । আরও কত কিছু ! এই জন্য আর ছেলেদের থাকতে দিবো না ঠিক করেছি ।
নওরিন আরও একটু চিন্তা করতে লাগলো । তাকে বাসা বদলাতে হবেই । হাতে আর দুটি দিন সময় আছে কেবল । এর ভেতরে বাসা না পেলে সামনের মাসে ঠিক কোথায় থাকবে সেটা সে জানে না । অন্য দিকে প্রতিদিন বাসার সামনে ঐ ঝামেলা আর সহ্য হচ্ছে না । এখানে আসলে অন্তত বাসার উপরে পর্যন্ত আসতে পারবে না ।
নওরিন ঠিক করে নিল যে এখানই সে উঠবে। যদি পরে সমস্যা হয় তাহলে বাসা ছেড়ে দিবে । নওরিন কফি শেষ করে বলল, আমি আসলে নিতে চাই ।
ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ওকে তাহলে কয়েকটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে !
-জ্বী বলুন !
-এক হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড কিংবা কোন ছেলে ফ্রেন্ড আসবে না বাসায় । কোন অবস্থাতেই না ।
-ওকে !
-আপনার গেস্ট আসতে পারে, লাইক আপনার বাবা মা কিংবা বান্ধবি কিন্তু সেটা যেন রেগুলার বেসিসে না হয় ! আমি শান্তি প্রিয় মানুষ ।
-জ্বী ওকে !
-কোন প্রকার মাদক গ্রহন করা যাবে না । আপনি সিগেরেট খেতে পারেন তবে অবশ্যই বাসার বাইরে । নিজের ঘরেও খেতে পারেন তবে সেই গন্ধ কোন ভাবেই যেন ঘরের বাইরে বের না হয় ! যদি আমার নাকে সেটা আসে তাহলে আপনাকে আমি ঘর ছেড়ে দিতে বলবো ! ঠিক আছে কী !
-আমি সিগরেট খাই না ।
-তাহলে তো কোন সমস্যা নেই । এছাড়া পুরো ঘরের সব জিনিস পত্র আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে । টিভি ফ্রিজ ওভেন সব কিছু। বুয়া আসে আমার রান্নার জন্য । আপনি চাইলে তাকে নিয়োগ দিতে পারেন অথবা নিজের জন্য বুয়া আনতে পারেন অথবা আপনি চাইলে এক সাথে রান্নাও করতে পারেন । মাস শেষে একটা হিসাব করলেই চলবে !
নওরিন এবার বলল, বাসা ভাড়া কত দিতে হবে?
নওরিন একটু ভয়েই ছিল কিন্তু ইফতি যখন এমাউন্টটা বলল তখন যেন আকাশ থেকে পড়লো । সত্যিই এতো কম সে মোটেও আশা করে নি । আর কোন চিন্তা না করেই এডভান্স দিয়ে দিল । ইফতি তাকে জানালো যে চাইলে সে কালই উঠে পড়তে পারে । কোন সমস্যা নেই । এই কদিনের জন্য কোন আলাদা চার্যও দিতে হবে না ! নওরিন আর দেরি করলো না । সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল যে আগামীকাল পরশুর ভেতরেই সে এই বাসায় উঠে পড়বে !
দুই
নওরিনের জীবনটা হঠাৎ করেই একেবারে বদলে গেল । আগের প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথেই ওর চিন্তা আরাম্ভ হত । মনে হত এই বুঝি পথে তার সাথে দেখা হয়ে যাবে । এখন সেই ভয়টা আর নেই । কোন মতে বাসায় পৌছানোর পরেও বারবার মনে হত যে এখনই বুঝি দরজায় টোকা পড়বে । যতবার বাসার কলিংবেল বেজে উঠতো ততবার ভয় হত ওর যে এখনই বুঝি ওর ডাক পড়বে ! এখানে আসার পর থেকে সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে সেই ভয়টা আর নেই । প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি যে লাগে নি সেটা নওরিন বলবে না । বিশেষ করে ইফতির মত একজন অপরিচিত ছেলের সাথে একই ফ্ল্যাটে থাকাটা আমাদের এই সমাজে ঠিক স্বাভাবিক ভাবে দেখা হয় না । প্রথমদিন একটু ভয়ই করছিলো এই ভেবে যে হয়তো ইফতি তার ঘরের দরজায় হামলে পড়বে । তবে একটা সপ্তাহ যাওয়ার পরে খেয়াল করলো যে ইফতিকে তার জন্য নিরাপদ । মেয়েদের মাঝে এই একটা সেন্স কাজ করে যে কোন ছেলেটা তার জন্য নিরাপদ আর কোন ছেলেটা নয় ! ইফতির বেলাতেও এই অনুভূতিটা এসে জমা হল । দুইদিনের ভেতরেই একদম সহজ হয়ে উঠলো ও । ঘরের ভেতরেই নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করতে শুরু করলো ।
আস্তে আস্তে সব কিছু নিজের মত করে ব্যবহার শুরু করে দিল । সপ্তাহ দুয়েক পরের কথা !
নওরিন রাত দুইটার দিকে নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখলো ইফতি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে । একটু ইতস্তর করলো । নওরিনের পরনে তখন রয়েছে একটা নীল টিশার্ট আর সাদা লেগিংস । নিজের ঘরে সে এই ধরণের হালকা ড্রেস পরেই থাকে । নওরিন ভেবেছিলো যে রান্না ঘরে গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে খাবে ।
ইফিতিকে ড্রয়িং রুমে আশা করে নি । দরজা খোলার একটু পরে ইফতি ওর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, কফি বানানো আছে ফ্লাক্সে । চাইলে খেতে পারেন !
তারপর আবারও টিভির দিকে মনযোগ দিল ।
নওরিনের মন হল যে ইফতির ওর পোশাকের দিকে যেন তাকায়ই নি । অন্য কেউ হলে ওর দিকে আরেকবার ফিরে তাকাতো । এইভাবনাটা কেন জানি নওরিনের ভাল লাগলো বেশ । কফির কাপ হাতে নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ড্রয়িং রুমে । তারপর খব স্বাভাবিক ভাবে বসলো অন্য সোফাতে । ইফতির চোখ তখনও টিভির দিকে । খুব মনযোগ দিয়ে একটা মুভি দেখছে ।
নওরিন কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল, এতো রাতে জেগে আছেন?
ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকালো । টি টেবিল থেকে কাপ টা তুলে নিয়ে একটা চুমুক দিলো তাতে । তারপর বলল, আসলে ভয় লাগছে !
নওরিন একটু অবাক হল । তারপর বলল, ভয় লাগছে মানে?
নওরিন এমন উত্তর আশা করে নি ইফতির কাছ থেকে । ইফতির চেহারায় একটা ইতস্তঃ ভাব দেখতে পেল নওরিন । যেন ঠিক বুঝতে পারছে না যে কথাটা নওরিনকে বলা ঠিক হবে কিনা !
কফিতে আরও একটা চুমুক দিয়ে ইফতি বলল, আসলে এই কারণেই আপনাকে ঘর ভাড়া দেওয়া ! আমার মাঝে মাঝে ভয় করে । আমি কিছু দেখি !
নওরিন খানিকটা কৌতুহলী হয়ে তাকালো ইফতির দিকে । তারপর বলল, খুলে বলা যায়?
-কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না । হয়তো হাসবেন ।
-তবুও বলুন শুনি !
একটা লম্বা দম নিয়ে বলল, বাবা মা মারা যাওয়ার পরে আমি আসলে বেশ একাই হয়ে যাই । সব সময় একা একাই থাকি । অবশ্যও ছোট বেলা থেকেই একা থাকার অভ্যাস । মানুষ জনের সাথে কম মিশি । আপু কয়েকবার ওর ওখানে গিয়ে থাকতে বলেছে আমাকে কিন্তু আপুর তিন ছেলে মেয়ে । এমন না যে আমি ওদের পছন্দ করি না কিন্তু সব সময় ওদের উপস্থিতি আমার পছন্দ না ! আসলে সব সময় কারো উপস্থিতিই আামর পছন্দ না ! যখন পুরোপুরি একা হয়ে গেলাম প্রথম প্রথম বেশ ভালই ছিলাম তারপরই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম । সব সময় না তবে মাসের ভেতরে কয়েকরাতে হঠাৎ আমার ঘরটা হঠাৎ খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে যেত । আমি ঘর অন্ধকার করেই ঘুমাই । তবে পুরোপুরি অন্ধকার হয় না । সেই অন্ধকারের ভেতরে অনুভব করতাম যে আরও একটা অন্ধকার অয়োবয় রয়েছে ঘরের দিকে । একটু নড়ছে যেন । আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
-তারপর?
-আর কিছু না । এইটাই ।
-এই জন্য আপনি রুম মেট নিয়েছেন ।
-হুম । এমন হলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে এখানে চলে আসতাম । এই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখি । পাশে একজন রয়েছে এটা ভাবতে ভাল লাগে । তখন কম ভয় লাগে !
নওরিন হঠাৎ উঠে দাড়ালো । তারপর ইফতিকে বলল, আসুন আামর সাথে !
-কোথায়?
-আসুন তো !
-না থাকুক ! ঐ ঘরে এখন যাবো না !
নওরিন এবার নিজ থেকে ইফতির হাত ধরলো । তারপর বলল, আসুন । কোন কথা না !
এক প্রকার টেনে নিয়ে গেল ইফতির ঘরে । আলো জ্বালিয়ে দেখালো পুরো ঘরটা । তারপর বলল, কিছু আছে?
-নাহ !
-তাহলে ? এমন বাচ্চামী করলে চলে !
ড্রয়িং রুমে ফিরে আসার পরেও নওরিন অনুভব করতে পারলো যে ইফতির ভয়টা তখনই কাটে নি । ড্রয়িংরুমে বসেই ওর বাকি রাতটা কাটিয়ে দিল গল্প করে ! সকালে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নওরিন বলল এরপর থেকে যদি এমন ভাবে ভয় করে তাহলে আমার দরজায় নক দিবেন । কেমন ! গল্প করা যাবে !
-আচ্ছা !
নওরিন কেবল বুঝতে পারলো যে ইফতির সাথে ওর সম্পর্কটা আরও একটু ভাল হয়ে গেছে । কিন্তু সেই সম্পর্কটা কয়েকদিন পরে যে আরও গাঢ় হয়ে যাবে সেটা নওরিনের জানা ছিল না । অন্তত যেভাবে হল সেটা তো ও কোন ভাবেই আশা করে নি !
তিন
অফিস থেকে বিকেল বেলা বাসায় ঢুকার সময়ই ওর বুকটা কেঁটে উঠলো । রমিজ দাড়িয়ে রয়েছে ঠিক গেটের সামনে ! যার কারণে আগের এলাকাটা ওকে ছাড়তে হয়েছি সেই আপদ আবার এখানে এসে হাজির হয়েছে । নওরিন রমিজকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না । রমিজ ওর পথ রোধ করে দাড়ালো । তারপর বলল, কি ভাবছিলে? এলাকা বদলাতে সব সমাধান হয়ে যাবে?
-আমাকে যেতে দাও । এখানে আমি কোন সিন ক্রিয়েট করতে চাই না ।
-সিন ক্রিয়েট ! আমার সাথে তুমি যা করেছো ভেবেছো ছেড়ে দিবো !
-তোমার সাথে বলার মত আমার কিছু করি নি । বুঝেছো কি?
-তাই না ? তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি এখানে তোমার কিছু করতে পারবো না তাহলে ভুল করছো । এই দেখ...
এই বলে রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা দুইটা ছেলেকে দেখালো । তারপর বলল, ওরা এই এলাকার লোক । আজ থেকে ওরা তোমার খোজ খবর রাখবে !
রমিজ এবার খপ করে নওরিনের হাত চেপে ধরলো । তারপর বলল, আমাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারবে না ! আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই নওরিন দেখতে পেল ইফতি এসে দাড়িয়েছে পেছনে । রমিজের হাত থেকে নওরিনকে চাড়িয়ে নিল । তারপর বলল, কী সমস্যা ব্রাদার?
রমিজ ইফতিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, আপনি রাস্তা মাপেন । আপনার এসবের ভেতরে পড়ার দরকার নেই ।
ইফতি একটু হাসলো । তারপর, আমার বাসার সামনে আমার স্ত্রীর হাত আপনি ধরে আছেন আর আমাকে বলছেন রাস্তা মাপতে !
রমিজ তো বটেই নওরিনও অবাক হয়ে তাকালো ইফতির দিকে । ইফতি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, এটাই সেইজন যার কথা বলেছিলে?
নওরিন তখনও খানিকটা ফ্রিজ হয়ে আছে । কোন কথা বলল না । কেবল মাথা নাড়ালো । ইফতি এবার রমিজের দিকে তাকালো । তারপর বলল, দেখুন আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাই না । আপনার সাথে নওরিনের আগে কি ছিল না ছিল সে সব নিয়ে আমার কথা মাথা ব্যাথা নেই । এখন ও আমার স্ত্রী । এখন ওর উপরে কোন ঝামেলা আমি পছন্দ করবো । ঠিক আছে কি ! এরপর যদি ওকে ডিস্টার্ব করতে দেখি তাহলে পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব !
নওরিন দেখলো রমিজ কেবল অবাক হয়ে গেছে । কোন কথাই যেন বের হচ্ছে না ।
ইফতি আবার বলল, আপনি ঐ চ্যালাদের জোরে এখানে এসেছেন, রাইট ?
নওরিন দেখলো ইফতি রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা দুজনকে হাতের ইশারায় ডাকলো । ওরা একটু ইতস্তর করে এগিয়ে এল ওদের সামনে । ইফতি ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, অন্য এলাকার লোক আমাদের এলাকায় এসে এই এলাকার বউ মেয়েদের ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে তোমরা আবার তাদের সায় দিচ্ছো ! আকিব ভাইকে জানাবো ব্যাপারটা ?
দুইজনের একজন সাথে সাথে বলল, ইফতি ভাই আপনি কী বলছেন এসব ! আমরা তো কিছুই জানি না !
-তাহলে এই লোক তোমাদের সামনে আমার স্ত্রীর সাথে বেয়াদবী করছে আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছো ?
-এটা আপনার বউ ভাই ! ভাই আমরা এসব জানিই না কিছু ! জানলে আসতামই না !
-এখন তো জানলে !
-জ্বী ভাই । আর এমন হবে না !
ইফতি বলল, হ্যা দেখো । আমি আকিব ভাইয়ের কাছে যেতে চাই না !
ইফতি এবার নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, চল ঘরে ।
নওরিন গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় রমিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখছিলো । কেন জানি মনে হল যে রমিজের সমস্যাটার সমাধান হয়ে গেছে ! এতোদিন যে ভয়টা ও পাচ্ছিলো সেটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে । কিন্তু এভাবে শেষ হয়ে যাবে সেটা তো ভাবে নি !
লিফটে উঠতে ইফতি নওরিনের হাত ছেড়ে দিল । লিফটের দরজা বন্ধ হতেই নওরিন হেসে উঠলো । তারপর বলল, আপনার মাথায় তো দারুন বুদ্ধি !
-এখানে দারুন বুদ্ধির কিছু নেই । স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলেই হত !
-উহু ! যদি সে আমার স্বামী হত তখন ?
-আমার গেসে স্বামী হওয়ার সম্ভবনা ছিল না । কারণ স্বামী হলে আপনি কোন ভাবেই এখানে থাকতেন না। তাই না ?
-তা অবশ্য ঠিক ।
ফ্রেশ হয়ে আবারও দুজন কফির হাতে বসলো ড্রয়িং রুমে । নওরিন বলল, আসলে আমি কোন দিন ভাবিও নি, ঐ বেটা আমার পিছে এমন ভাবে লাগবে ! আমি কেবল একটা সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম তার কাছে । কিন্তু এরপর এমন ভাবে আমার পেছনে লেগেছিলো যে বলার অপেক্ষা রাখে না ।
ইফতি বলল, এরপর আর লাগবে বলে মনে হয় না । তবে যদি সত্যিই আবার পেছনে লাগে তখন দেখা যাবে !
নওরিনের সত্যিই মনে হচ্ছিলো যে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না ওকে !
কিন্তু নওরিনের জীবনে যে অন্য আরেক দিকে ঝামেলা শুরু হবে সেটা নওরিন কি কখনও বুঝেছিল?
চার
ঠিক দুদিন পরের ঘটনা । রাতে নওরিন শুয়ে ছিল । তখনও ওর ঘুম আসে নি । এমন সময় একটা ভয়ার্থ চিৎকার কানে এল । সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বসলো সে । বুঝতে পারলো চিৎকারটা ঠিক কোথা থেকে এসেছে । উফতির ঘর থেকে ।
নওরিন খুব দ্রুত ওর ঘরের দিকে দৌড় দিল । দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল না । দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো নওরিন ।
ভেতরে অন্ধকার আবহাওয়া । তবে একটা ব্যাপার ঠিকই খেয়াল করতে পারলো যে ঘরের আবহাওয়া একটু ঠান্ডা !
এসি চলছে কি?
তারপরেই মনে হল যে ইফতির এসিতে এলার্জি আছে । পুরো বাসায় কেবল ড্রয়িং রুমে এসি লাগানো আছে । আর পাশের ঘরটাতে আছে । ইফতির রুমে কোন এসি নেই । তাহলে ঘর এতো ঠান্ডা কেন ?
আলো জ্বেলে দিল ঘরের । দেখলো ইফতি খাটের এক কোনে কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে । তাকিয়ে রয়েছে বারান্দার কোনার দিকে !
আপনা আপনি সেদিকে চোখ গেল নওরিনের । তবে সেখানে সে কিছু দেখলো না । নওরিন আস্তে ধীরে এগিয়ে গেল এবার ইফতির দিকে । ছেলেটার চোখ মুখ দেখে আসলেই মনে হচ্ছে যে ভয় পেয়েছে বেশ । একেবারে ইফতির কাছে গিয়ে বসলো । তারপর নিজ থেকে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল, কোন ভয় নেই । এই তো আমি আছি !
তখনই নওরিন অনুভব করলো ইফতি বেশ ভালই কাঁপছে । নওরিনকে কাছে পেয়ে হঠাৎ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । যেমন ছোট বাচ্চা ছেলে তার মাকে জড়িয়ে ধরে ভয় পেয়ে ঠিক তেমন ভাবে !
নওরিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিল না । এমন কি ওর কোন অস্বস্তিও হল না । মনে হল যেন এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ! আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।
সকালে নওরিনের যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখলো ও ইফতির ঘরেই শুয়ে আছে । গতরাতে এখানেই শুয়ে ছিল !
ইফতির সাথেই !
এবার একটু অস্বস্তি জন্মনিল মনে । তবে ইফতি ওর পাশে নেই । সকাল হয়েছে আগেই । উঠে গেছে সম্ভবত !
ঘর ছেড়ে বের হয়ে যখন ডাইনিং রুমের দিকে এল তখন ইফতিকে দেখতে পেল । রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছে । হাতে নাস্তার প্লেট ! ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, নাস্তা করবেন না ? আজকে অফিস নেই !
-আছে !
-ফ্রেশ হয়ে আসুন !
নওরিনের একবার মনে হল যে বলে কোন দরকার নেই । ও নাস্তা করবে অফিসের ক্যান্টিনে গিয়ে । প্রায় সব দিনই এমনটা করে । কিন্তু কেন যেন বলতে ইচ্ছে হল না । মনে হল সকালে এখান থেকে আজকে নাস্তা করে যাওয়াই যায় ।
নাস্তা করার সময় নওরিনের যে একটু অস্বস্তি লাগছিল না সেটা সে বলবে না । বারবার কেবল গতরাতের কথা মনে হচ্ছিলো । বিশেষ করে ওভাবে একসাথে ঘুমিয়ে পড়াটা । আচ্ছা কেমন করে ঘুমিয়েছিল ও !
খানিকটা জড়িয়েই ধরেছিলো ইফতিতে । সেই হিসাবে রাতে যদি ঘুমিয়ে পড়ে থাকে তাহলে কোন অবস্থায় যাওয়া হয়েছে কে জানে !
খাওয়া শেষ করে যখন নওরিন উঠতে যাবে তখনই ইফতি বলল, কাল রাতের জন্য ধন্যবাদ !
নওরিন একটু হাসলো । তারপর বলল, আরে এটা কোন ব্যাপার না !
-আমি অনেক দিন পর খুব শান্তি আর নির্ভয়ে ঘুমিয়েছি কালকে ! তুমি যখন আমাকে জড়িয়ে ছিলে তখন এতো নিরাপদ মনে হচ্ছিলো আমি বলে বোঝাতে পারবো না !
নওরিন তখনও বুঝতে পারলো যে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । ইফতির কথায় । ইফতি কেবল আপনি থেকে তুমিতেই নামে নি, ওর কন্ঠেও অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে । একটা মেয়ে এই পরিবর্তন ঠিক ঠিক ধরতে পারে !
অফিসের পুরো সময়টা নওরিন কেবল ইফতির কথাই চিন্তা করলো । ওর মনে কেবল দ্বিধা করতে শুরু করলো !
ওর কী খুব জলদিই বাসা বদলানো দরকার?
কিন্তু এতো চমৎকার একটা বাসা থেকে ছেড়ে চলে যাবে ?
একদিনেই এই আরামের সাথে খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে । নতুন জায়গাতে লেগে সেটা মানিয়ে নিতে পারবে তো ?
কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো অন্য খানে ! দুইদিন পরের ছুটির দিন । নওরিন একটু বেলা করেই ঘুমায় ছুটির দিন গুলোতে । আজও ঘুমাচ্ছিলো । ঘুম ভাঙ্গলো তার কলিংবেলের আওয়াজে । বার কয়েক বেজেই চলেছে ।
নওরিন একটু অবাক হল । চোখ মেলে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে । এই সময়ে সাধারনত বুয়া আসে কিন্তু বুয়ার কাছে আলাদা একটা চাবি থাকে । যদি বাসায় কেউ নাও থাকে তাহলে যাতে সে দরজা খুজে ঢুকতে পারে । দরজা কেউ খুলছে না, মানে হচ্ছে ইফতি বাসায় নেই । কোথাও গেছে হয়তো !
নওরিন নিজেই উঠলো ।ধাই তুলতে তুলতে দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠে গেল ওর । জীবনে এতো বিস্মিত সে কোন দিন হয়েছে কিনা জানে না । দরজার ওপাশে তার বাবা দাড়িয়ে রয়েছে ! ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে অগ্নি দৃষ্টিতে ! নওরিন যে কী বলবে সেটা সে বুঝতেই পারলো না ।
নওরিনের বাবা আরও কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, তাহলে আমি যা শুনেছি সত্যই ! মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে যে একা একা বিয়ে করে ফেলেছে !
নওরিন কোন কথা বলল না । আসলে ওর মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হল না ! কী বলবে কিভাবে বলবে ?
এবং তখনই দেখতে পেল যে লিফট থেকে ইফতি বের হচ্ছে । হাতে বাজারের ব্যাগ ।
নওরিনের চোখ বড় হয়ে গেল । সেটা দেখে নওরিনের বাবাও পেছন ফিরে তাকালো ।
নওরিনের নিজেকে এতো অসহায় আর কোন দিন মনে হয় নি ! এখন কী হবে ? কী হবে এখন?
পাঁচ
নওরিন চোখ মেলে দেখলো নিজের বিছানায় শুয়ে আছে । ওর পাশে সবে রয়েছে ইফতি । ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।
নওরিন কি তাহলে দুঃস্বপ্ন দেখছিলো? ওর বাবা কি তাহলে আসে নি?
মনের ভেতরে একটা ভয় সব সময় কাজ করতো যে যদি বাসায় জেনে যায় ও একটা ছেলের সাথে একলা একটা ফ্লাটে থাকছে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে ! সেই ভয় থেকেই হয়তো দুঃস্বপ্নটা দেখেছে ও !
ইফতিকে বিছানার পাশে বসে থাকতে দেখে একটু নিশ্চিন্ত হল মনে মনে ।
ইফতি বলল, তোমার বাবা তো চিন্তিত হয়ে গেছিলো বেশ । এখন অবশ্য একটু শান্ত হয়েছেন !
তড়াক করে নওরিন বিছানায় উঠে বসলো । তারপর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, আব্বু সত্যিই এসেছে?
ইফতি বলল, হ্যা। ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছেন ।
নওরিনের এখন গলা ছেড়ে কান্না এলো । তারপর ইফতির দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কী করবো?
ইফতিকে দেখে খুব শান্ত মনে হল । সে নওরিনের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কী বলবে তুমি নিজেই ভেবে নাও । সত্যিই বলতে পারো । বলতে পারো যে তুমি আসলে বিয়ে কর নি । এখানে ভাড়া থাকো কেবল । তোমার আব্বু । তোমাকে বিশ্বাস করবে আমার যতদুর বিশ্বাস ! কিন্তু....
-কিন্তু কী ...
ইফতি একটু যেন অস্বস্তিতে পড়লো । তারপর বলল, আসলে তুমি যখন বেহুশ হয়ে ছিলে তখন আমি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলছিলাম । তাকে বসিয়ে শান্ত করে চা খেতে দিলাম । তার কথা শুনে যা মনে হল তা হচ্ছে তুমি এখানে আমাকে বিয়ে করেছো সেটা তোমার এলাকার কিছু লোকজন জেনে গিয়েছে কোন ভাবে । কেউ হয়তো তাদেরকে বলেছে । সেটা শুনেই তোমার আব্বু এসেছে তোমার এখানে তোমাকে জানিয়ে ! এখন তুমি তোমার আব্বুকে না হয় সত্যটা বিশ্বাস করাতে পারবে কিন্তু এলাকার লোকজনকে!!
নওরিন করুণ চোখে তাকালো ইফতির দিকে । আরও কিছু বলতে যাবে তখনই দরজায় টোকা পড়লো । দরজাটা যদিও ভেজানো ছিল না । ইফতি গিয়ে দরজা খুলে দিল । নওরিন দেখলো ওর বাবা দরজা দিয়ে ঢুকছে । নওরিনের সামনে এসে দাড়ালো । তারপর বলল, আমাকে বলল কী এমন ক্ষতি হত শুনি? আমি কি মানা করতাম? আজ পর্যন্ত কোন কিছুতে কি আমি তোকে মানা করেছি? এই ঢাকা শহরে একা একা থাকিস ! কোন দিন কিছু বলেছি?
নওরিন কী বলবে খুজে পেল না । মাথা নিচু করে রইলো !
নওরিনের বাবা আবারও বললেন, শুনো যা হওয়ার হয়ে গেছে । তুমি যা করেছো তাতে তোমার উপরে রাগ করি নি তবে কষ্ট পেয়েছি ।
ইফতি বলল, আঙ্কেল আসলে ও...
নওরিনের বাবা ইফতিকে ধমকে বললেন, তুমি আমাকে আঙ্কেল কেন বলছো? আমি তোমার আঙ্কেল হই? আর বউয়ের পক্ষ নেবে না সব সময় !
নওরিন কেবল অনুভব করলো যে ওর কান দুটো গরম হয়ে গেছে লজ্জায় ! নওরিনের বাবা আরও কিছু বলছিলো ইফতিকে তবে সেসব নওরিনের কানে ঢুকলো না মোটেও । ওর চোখের সামনে কী সব দৃশ্য ভাশতে লাগলো !
নওরিন দেখলো কিছু সময়ে ওর বাবা আবারও ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালো । ইফতি গেল তার সাথে সাথে । নওরিন একটু পরে উঠে দরজার কাছে এসে দেখলো ওর বাবা ইফতি হাত নেড়ে নেড়ে কিছু যেন বলছে । ওর বাবার মুখ হাসিহাসি । একথা পরিস্কার যে ও যত সময় বেহুশ হয়ে পড়ে ছিল তত সময়ে ইফতির সাথে ওর বাবার কথা হয়েছে এবং কোন ভাবে ওর বাবা ইফতিকে পছন্দ করে ফেলেছে । নওরিন এটা অন্তত বুঝতে পারছে যে ইফতি অবশ্যই পছন্দ করার মত একজন মানুষ ।
নওরিন আবারও বিছানার কাছে চলে এল । বসে পড়লো । মনের ভেতরে তখন ঝড় চলছে । কী হবে এখন ?
ও কেন বলতে পারলো না ওর বাবাকে ?
রাতে খাওয়ার সময়ও নওরিন কোন কথা না বলে চুপ করে খেতে শুরু করলো । নওরিনের বাবা আলতাফ মাহমুদ বললেন, তোর আজার আঙ্কেলের মুখে কথাটা শুনি আমি । কে জানি তাকে বলেছে যে তুই এখানে অন্য কোন এক ছেলের সাথে থাকছিস ! আমার এটা বিশ্বাসই হয় নি । আমার মেয়ে কোন অন্যায় করতেই পারে না । তোর মাকেও জানাই নি ! পরে জানতে পারি যে তুই নাকি বিয়ে করেছিস ! এটা শুনে কষ্ট আমি পেয়েছি তবে আমার নিজেকেই দোষী মনে হয়েছে !
নওরিন মুখ তুলে তাকালো । তারপর বলল, তুমি কেন নিজেকে দোষী ভাবছো?
-বাহ রে ভাববো না? আমার মেয়ে তার পছন্দের কথা আমাকে মুখ ফুটে বলতে পারছে না । তাহলে মেয়ের ঠিক মত বন্ধু হতে পারলাম না আমি ।
নওরিন নিজের বাবার দিকে তাকালো । এখন যদি সে তার বাবা কে বলে যে সে আসলেই ইফতিকে বিয়ে করে নি । এখানে সে ভাড়া থাকে তাহলে তার বাবার মনভাবটা কেমন হবে? একটা ছেলে একটা মেয়ে একই বাসায় থাকছে এই ব্যাপারটা এই দেশে কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হয় না ।
নওরিন আবারও মাথা নিচু করে বলল, সরি আব্বু !
ইফতি তখন বলে উঠলো, আসলে আঙ্কেল....
আলতাফ সাহেব বললেন, আবার আঙ্কেল....
ইফতি হেসে ফেলল । তারপর বলল
-সরি বাবা । আসলে নওরিনের দোষ নেই । আসলেই নেই । আমিই ওকে বলেছিলাম । ওকে আপনাকে জানাতে চেয়েছিলো । তবে চাচ্ছিলাম যে আরও কয়েকদিন পরে অনুষ্ঠান হোক আপু আসুক তারপর !
-হ্যা বুঝতে পেরেছি । এখন আর এসব ভেবে লাভ কি! যা হওয়ার হয়েছে । আফতি তুমি তোমার আপুর নম্বর আমাকে দেবে । ঠিক আছে ! আমি তাদের কথা বলতে চাই এবং দ্রুত !
-জ্বী আ.....বাবা ..
এমন ভাবে আঙ্কেল বলতে গিয়ে আটকে গেল তারপর বাবা বলল যে নওরিন নিজেও হেসে ফেলল । ইফতির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু টা সময় !
রাতে ঘুমানোর সময় শুরু হল আরেক ঝামেলা ! আলতাফ সাহেবকে ইফতির বাবা মায়ের রুমটা দেওয়া হল । তারপর ইফতির সাথে ইফতির ঘরে ঢুকতে হল নওরিনকে ! বিছানায় বসতে বসতে বলল, তুমি কি বুঝতে পারছো ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছো?
ইফতি বলল, আচ্ছা এখন আপাতত এতো চিন্তা করে কোন লাভ নেই । আজকের দিনের মত অনেক হয়েছে । এখন একটু ঘুমাও । কাল সকালে আবার অফিস আছে তোমার !
নওরিন তাকালো বিছানার দিকে । বিছানা একটা কিন্তু ওরা মানুষ দুটো । ব্যাপারটা ধরতে পেরে ইফতি বলল, তুমি উপরে ঘুমাও আমি নিচে ঘুমাচ্ছি ।
নওরিন কিছু বলতে গিয়েও বলল ন। চুপচাপ বিছানাতে শুয়ে পড়লো । মাথার ভেতরে কত কিছু যে চিন্তা করছে তার কোন ঠিক নেই । আলো বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে চিন্তা গুলো আরও ফিরে এল । কাল সকালে কী হতে পারে ! এখনও সময় আছে তার হাতে! এখনও যদি নওরিন ওর বাবাকে বলে সব সত্য কথা তাহলে হয়তো সব কিছু সামলে নেওয়া যাবে । ওর ব্যাপারটা বুঝবে । নওরিনের উপর তার বাবার বিশ্বাস এখনও চলে যায় নি । বুঝিয়ে বললে এখনও সব কিছু ঠিকঠাক মিটিয়ে ফেলা যাবে !
এসব ভাবতে ভাবতে নওরিন কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সেটা টের পেল না । ওর ঘুম ভাঙ্গলো মাঝরাতে ।
ছয়
হঠাৎ অনুভব করতে পারলো যে ঘরের ভেতরটা হঠাৎ ই খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে । ইফতির ঘরে ও এসিই নেই । এতো ঠান্ডা কিভাবে হল !
বিছানায় উঠে বসতেই ওর চোখ গেল বিছানার পাশে মেঝেতে শুয়ে থাকা ইফতির দিকে । পুরো শরীর যেন জমে গেল একেবারে !
ইফতির শরীরের উপরে ওটা কী বসে আছে ?
রাতের বেলা হলেও ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার হয় নি । তাই কালো অন্ধকারের মত অয়বয়টা পুরোপুরি পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে । সেটা ইফতির বুকের উপরে বসে আছে । নওরিনের মনে যেন কালো অয়বয়টা হাত দিয়ে ইফতির গলা চেয়ে ধরেছে । ইফতি ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারছে না !
নওরিনের হঠাৎ কি হল সেটা সে নিজেও জানে না । বিছানার উপর থেকে সরাসরি সেই কালো অয়বয়টার উপরে ঝাপিয়ে পড়লো। সাথে সাথে একটা ঠান্ডা ধাক্কার মত খেল সে । আবারও ছিটকে খাটের পাশে এসে পড়লো । তবে আশার কথা যে সেই অয়বয়টাও ইফতির শরীর থেকে ছিটকে পড়েছে পরলো। সাথে সাথেই ইফতি জেগে উঠলো । তাকালো নওরিনের দিকে । তাররপ ওর চোখ গেল সেই কালো অয়বয়টার দিকে । সে তখনও মেঝেতেই পরে আছে ।
ইফতির দিকে তাকিয়ে নওরিন বলল, ওটা কী ?
-তুমি দেখতে পাচ্ছো?
-হ্যা পাচ্ছি পাচ্ছি !
কালো অয়বয়টা মনে হল উঠে বসলো । তাকালো ওদের দিকে । তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো ওদের দিকে । এগিয়ে আসা দেখে নওরিন বেশ ভয় পেয়ে গেল । ইফতিকে সাথে সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ।
তখনই ইফতি খেয়াল করে দেখলো অয়বয়টা কেমন যেন টলে উঠলো । থেমে গেল এক স্থানে । কিছু সময় সেখানই স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো । তারপরই সেটা যেন হায়েব হয়ে গেল । গায়েব হওয়াটা ওরা দুজনেই দেখতে পেল ।
তবে তারপরেও ইফতি কিংবা নওরিন কেউ কাউকে ছাড়লো না । খানিকটা জড়িয়েই ধরে রইলো । কত সময় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ছিল ওরা কেউ বলতে পারবে না । তবে এক সময় মনে হল যে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ।
নওরিন বলল, ওটা ওভাবে চলে গেল কেন? আমি ভয় পেয়ে ছিলাম খুব !
-দোয়া পড়েছিলেন নাকি?
-নাহ । ভুলে গিয়েছিলাম ।
-তুমি যখন আমাকে জড়িয়ে ধরলে তখন ওটা থেমে গিয়েছিলো । আমি এটা খেয়াল করেছি ।
আরও কিছু সময় জড়িয়ে ধরে রাখলো একে অন্যকে । তারপর নওরিন বলল, আসো নিচে ঘুমাতে হবে না আর ! উপরেই শোবে !
-শিওর ! তোমার কোন সমস্যা হবে না ?
-না !
দুটো বালিশে কিছু সময় শুয়ে থাকলো ওরা । তারপরই একটা সময় অনুভব করলো ওরা আর কেউই একে অন্যের কাছে থেকে দুরে নেই । প্রবল আবেগ নিয়ে একে অন্যকে চুমু খাচ্ছে ...
পরিশিষ্টঃ
ইফতি আর নওরিন এখন দাড়িয়ে রয়েছে মগবাজার কাজী অফিসের সামনে । নওরিনের বাবা তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে বের হয়েছে । সেই সুযোগে দুজন বের হয়েছে । আজকে অফিসেও যায় নি নওরিন ।
ইফতি বলল, আজই বিয়ে করতে হবে? মানে এই ভাবে !
নওরিন বলল, এই ভাবে ! বাবাকে আর মিথ্যা কথা আমি বলতে পারবো না । এটলিস্ট বিয়ে করলে তাকে আর মিথ্যা বলতে হবে না ! আর রাতে তুমি কী করেছো মনে আছো তো?
ইফতি বলল, আমি একা করেছি ! তুমি করো নি । আমার তো মনে হচ্ছিলো যে তুমি ...।
ইফতিকে কথা শেষ করতে দিলো না নওরিন । বলল, চুপ ! কোন কথা না ! আমি জানি তুমি আজ রাতেও একই কাজ করবে । তাই আগে বিয়ে পরে অন্য কিছু ...।
ইফতি হেসে ফেলল । তারপর হঠাৎ গম্ভীর মুখে বলল, তবে আমার একটা কথা বলার আছে তোমার ! আমি চাই যে আমাদের বিয়ে হওয়ার আগে এই সত্য কথাটা জেনে নাও তুমি !
নওরিন বলল, এটাই তো যে আমার এলাকা আমার বিয়ের খবর তুমি জানিয়েছো !
ইফতি যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল, তুমি জানো ?
নওরিন হাসলো ! তারপর বলল, ব্যাপারটা আমি কাল ঘুমানোর সময় টের পেয়েছি । তোমার ঘরে যখন ঢুকি তখন তোমার টবিলের উপরে একটা কাগজে একটা মোবাইল নম্বর আমার চোখে পড়েছিল । নম্বরটা আমার বাবার ! প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ঐ বদটা হয়তো জানিয়েছে । কিন্তু রাতে টের পেলাম যে কাজটা করেছো তুমি ! আমার আসলে আরও আগেই বুঝা দরকার ছিল । বিশেষ করে আমার বাবা যখন একেবারে বাসায় চলে আসলো !
ইফতি মাথা নিচু করে বলল, আসলে ঐ দিন যখন ভয়ে পেয়েছিলাম, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে, এতো নিরাপদ মনে হচ্ছিলো নিজেকে .... মনে হয়েছিলো যে তোমাকে কোন ভাবেই আমি হারাতে চাই না !
নওরিন হাসলো । তারপর বলল, বিয়ে আগে হোক তারপর সব মজা টের পাবে ! ঐ ভুত থেকে এখন থেকে আমি সব সময় তোমার ঘাড়ে চেপে বসে থাকবো ! বুঝেছো !
দুজনেই হেসে উঠলো । তারপর এক সাথে কাজী অফিসের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ! দুজনেই তখন নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ।
গল্পটি আগে নিজস্ব ব্লগে প্রকাশিত
ছবিটি ক্যানভা টেমপ্লেট দিয়ে বানানো !