আমি নিজেকে ভালো মানুষ মনে করি । অনেকেই নিজেকে করে । আমি নিজেকে ভাল মানুষ মনে করি কারণ আজ পর্যন্ত আমি স্ব ইচ্ছেতে মানুষের একটা ক্ষতিও করি নি । কারো একটা টাকা মেরে খাই নি । কারো সাথে বিন্দু মাত্র প্রতারণা করি নি কোন দিন । কথার বরখেলাপ করি নি । তবে মিথ্যা কথা বলেছি । এই অন্যায় আমি করেছি । যদি বলি যে মিথ্যা বলি নি তাহলে সেটা সব থেকে বড় মিথ্যা হবে । তবে শেষ কবে মিথ্যা বলেছি সেটা আমার স্পষ্ট করে মনে নেই । তবে কী মিথ্যা বলেছিলাম সেটা মনে আছে । আমার পরিচিত একজন বন্ধু তার বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলো । আমি তাকে বলেছিলাম যে আমার ঐদিন দুপুরে একটা চাকরির পরীক্ষা আছে । কথাটা মিথ্যা ছিল । আমি কেবল দাওয়াত এড়ানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলাম ।
যাই হোক এই নিজেকে ভাল মানুষ মনে করার পরেও আমার মনের মাঝে দুটো অপরাধবোধ আছে । একটা অপরাধবোধ হচ্ছে একটা মেয়েকে নিয়ে । আমার প্রেমিকা সিরিজের লেখা গুলো অনেকে পড়ে থাকবেন । তার ভেতরে একটা লেখা ছিল প্রথম চিঠি পাওয়ার গল্প । এই পোস্টটা আরও ভাল করে বুঝতে হলে চিঠি পাওয়ার পোস্টটা পুরো পড়ে আসলে ভাল হবে । সেই পোস্টেই একটু বলা হয়েছিলো যে কোন কাজটা আমার করা মোটেও ঠিক হয় নি ।
জারা (ছদ্মনাম) মেয়েটি আমাকে নিজের মনের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলো । চিনএজ বয়সের সেই প্রেম । জগতে এই প্রেম থেকে শুদ্ধতম অনুভূতি আর কিছু থাকতে পারে না । এই সময়ে যার প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মে সেটার ভেতরে ভেজাল থাকে না । তবে জারাকে আমার প্রেমিকা হিসাবে পছ্দ ছিল না । আমার তখন আরেকজনের সাথে প্রেম চলছে । আমি জারাকে কোন জবাব দেই নি । তবে তার চিঠিটা আমি নিজের কাছে ঠিকই রেখে দিয়েছিলাম । নিজের কাছে চিঠিটা রাখার বুদ্ধিটা যদিও আমার ছিল না । সেই ছিল আমার তৎকালীন প্রেমিকার । এবং সেই চিঠির কয়েকটা ফটোকপি করে আমার প্রেমিকার কাছে দিলাম । এই কাজটা করা মোটেও ঠিক হয় নি । এটা একটা অপরাধ হয়েছে । চিঠি খুব ব্যক্তিগত একটা জিনিস । প্রেরক এবং প্রাপক ছাড়া আর কারো সেটা দেখা উচিৎ না । অনুমূতি ছাড়া কোন ভাবেই অন্য কাউকে দেখানো উচিৎ না । তখন ছোট ছিলাম । তখন মনে হয় নি এটা কোন অন্যায় হচ্ছে । আর প্রেমিকার কথা অমান্য করার উপায় ছিল না ।
এভাবে কেটে গেছে কিছু দিন । একদিন আমার প্রেমিকা আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল যে আমার কাছে জারার সেই আসল চিঠিটা আছে কিনা । আমি বললাম যে আছে। তখন সে সেটা রেখে দিতে বলল । এবং এরপর যা বলল তাতে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো । আমার ক্লাস টিচার ছিলেন জারার বাবা । জারার বাবা একটা স্বভাব ছিল যে সবার ব্যাপারে খুব নাক গলাতো । কে কি করে না করে এই বিষয়ে সে মাথা ঘামাতো বেশ ।
আমার আর আমার প্রেমিকার প্রেমের কথাটা তখন আস্তে আস্তে মানুষজন জেনে যাচ্ছে । তখন সময় ছিল অন্য রকম । প্রেম করাটা তখন খুব অন্যায় হিসাবে ধরা হত । জারার বাবা ঠিক করেছিলেন যে তিনি এই প্রেমের রিপোর্ট নিয়ে আমার বাসায় এবং আমার প্রেমিকার বাসায় যাবেন । এই কথা কোন ভাবে আমার প্রেমিকার কানে গিয়েছিলো । তার তখন মাথা গরম । সে তখন স্যারকে ডেকে জারার সেই চিঠি দেখিয়েছিল আর বলেছিলো আপনার মেয়ে অন্যকে প্রেমের চিঠি লিখছে আর আপনি অন্য মানুষের প্রেমের ব্যাপারে রিপোর্ট করে বেড়াচ্ছেন ! ভাবা যায় ব্যাপারটা ! ক্লাস টেনে পড়া একটা মেয়ে তার স্যারকে এমন কথা বলছে !
ঠিক পরদিন ভোর বেলা আমারই এক বন্ধু এসে হাজির হল আমার বাসায় । আমাকে ডেকে নিয়ে গেল স্যারের বাসায় । স্যার তাকে পাঠিয়েছেন আমাকে নিয়ে যেতে । স্যার তখন আমাকে অনুরোধ করলেন যে আমার কাছে যে আসল চিঠিটা আছে সেটা যেন আমি তাকে দিয়ে দিই । সাথে এও জানালেন তার মেয়ে মানে জারাকে সে এবং তার স্ত্রী রাত্রে খুব মারধোর করেছে । এমন কাজ যেন আর না হয় সেটা সে নিশ্চিত করেছে ।
প্রেমিকার কাছ থেকে শোনার পর থেকেই মনের ভেতরে কেমন আকুপাকু আমার করছিলো । সকাল বেলা স্যারের সামনে এসে আমার মনে হল যে কী একা অন্যায় আমি করেছি ! যদি চিঠিটা পড়েই আমি ছিড়ে ফেলতাম কিংবা কোন দিন যদি ফটোকপি না করে তাকে দিতাম তাহলে হয়তো সেদিন ওমন কিছু হত না ।
আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারি নি যে আমার প্রেমিকা কাজটা কেন করেছিলো ! তার বাসায় আমার ব্যাপারটা ততদিনে জেনে গেছে । এমন কি তার বাসায় দাওয়াত পর্যন্ত আমি খেয়ে এসেছি । আমার বাসায়ও জানে ব্যাপারটা । স্যার যদি রিপোর্ট নিয়ে যেতেনও তবুও খুব একটা বড় কিছু হত না । তাহলে সে এমন একটা কাজ কেন করলো কেন । মূলত সেদিনের পর থেকেই প্রেমিকার সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হয় । ব্রেকাপের শুরু সেখান থেকেই । যাই হোক সেটা অন্য গল্প ।
জীবনে আমার কৃত কর্মের অপরাধবোধ খুব কম । আমি খারাপ কাজ করিই না যাতে আমাকে পরে অনুতপ্ত হতে হয় কিংবা পস্তাতে হয় । কিন্তু এই কাজটার জন্য আমার মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় । আমার জারার জন্য মন খারাপ লাগে । মেয়েটি অন্যায় নিশ্চয় কিছু করে নি । কাউকে ভালো লাগা কোন অন্যায় নয়। সেটা তাকে জানানোও ভাবে অন্যায় নয় । কিন্তু আমি যে কাজটা করেছি সেটা অন্যায় ! এই অপরাধবোধ থেকে আমার কবে মুক্তি মিলবে কে জানে ।
এই ঘটনা ঘটার সময় আমার পরিচিত অনেকেই ছিল। অনেকেই জানতো । তবে আমি নিশ্চিত এই ঘটনা তাদের মনে নেই । সম্ভবত স্যারেরও মনে নেই । আমার প্রেমিকার মনে আছে কিনা সেটাও জানি না । তবে জারার মনে আছে নিশ্চিত । যেমনটা আমার মনে আছে । এই অপরাধবোধের কারণে আমি জারার সামনে যেতে পারি নি । কোন জারার সামনে গিয়ে যদি এই অন্যায়টার জন্য ক্ষমা চাইতে পারি সেদিন হয়তো মুক্তি মিলবে এই অপরাধবোধ থেকে ।
আরেকটা অপরাধের কাহিনী আছে । সেটাও একই সময়ে করা । সেটা নিয়ে লিখবো অন্য আরেক দিন ।
স্কুল জীবনের সেই সময়কার ঘটনা নিয়ে লেখা আরও কিছু লেখা
প্রেমিকার বাসায় প্রথম দাওয়াতের গল্প
আমার প্রথম ডেটিং এর গল্প
কোন মেয়ের কাছ থেকে প্রথম প্রেমপত্র পাওয়ার গল্প
জন্মদিনের স্মৃতিঃ প্রেমিকার দেওয়া প্রথম উপহার
স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো
ভ্যালেন্টাইনসঃ আমার দুঃখ ভর্তি প্রেমের সত্যি গল্প