somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম ডেটিং এর গল্প :D

১০ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লকডাউনের কারণে অনেক দিন গ্রামে থাকা হল এবার। শেষ কবে এতোদিন এখানে এতো দিন কাটিয়েছি সেটা আমার মনেও নেই । আজকে রাতে ঢাকা ফেরার কথা । এবার ঠিক করেছিলাম যে সেই স্কুল জীবনে কাটানো কিছু স্থানের ছবি তুলে স্মৃতির কথা পোস্ট করবো । কিন্তু লকডাউনের কারণে বাইরে বের হওয়াই হয় নি । সারাটা সময় ঘরের ভেতরেই থেকেছি । আজকেও বাসার ভেতরেই । তবে যাওয়ার আগে এখান থাকা একটা স্মৃতির কথা লিখে যাই । ইতি মধ্যে আমার প্রথম প্রেম, প্রেমিকার সাথে জন্মদিন আর প্রথম প্রেম পাওয়ার গল্প আপনারা পড়েছেন । আজকে পড়বেন আমার জীবনে প্রথম ডেট এ যাওয়ার গল্প ।

এখনকার প্রেম ভালোবাসাতে ডেটে যাওয়া টা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । অনেকে তো প্রেমের আগেই ডেটে চলে যায় । তবে তখন এই ব্যাপারটা এতো সহজ ছিল না । বলা যায় তখন ডেটের জন্য আমাদের রীতিমত পরিকল্পনা স্বলাপরামর্শ করে বের হতে হত । সব থেকে বড় সমস্যা ছিল কারো চোখে না পড়া । ছোট মফস্বল শহরে পরিচিত মুখের অভাব নেই । যে কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে সেই কথা বাসায় পৌছাতে খুব বেশি সময় লাগতো না । আর একবার বাসায় পৌছানো মানে সব শেষ ।

আমার প্রেম তখন চলছে পুরো দমে । প্রেম বলতে প্রতিদিন প্রাইভেট টিউশনে, স্কুলে ক্লাস রুমে আমাদের চোখে চোখী । সুযোগে দুএকটা কথা বলা আর চিঠি আদান প্রদান । আমাদের কথা তখন চিঠিতেই হত বেশি । এখানে বলে রাখা ভাল যে আমার লেখালেখির শুরুটা সম্ভবত এই প্রেম পত্র লেখার হাত ধরেই । তখন কত যে চিঠি তাকে লিখেছি তার কোন ঠিক নেই ।

আমাদের ব্যাপারটা স্কুলে খুব বেশি মানুষ জানে না । আমার কাছের কয়েকজন বন্ধু আর তার কয়েকজন বন্ধু। ব্যাস আর নেই । আমরা তখন সদা সচেষ্ট যে ব্যাপারটা যথা সম্ভবত লুকিয়ে রাখা । মানুষ যেন না জানে । দুজনেই এমন একটা উৎকন্ঠার ভেতরে কাটাই এই বুঝি কেউ জেনে ফেলল আর এই বুঝি বাসায় অভিযোগ চলে এল । আমার বাসায় অবশ্য খুব একটা ভয়ের কারণ ছিল না । যত ভয় ছিল তার বাসায় । তার মা খুব বেশি কড়া ছিল এই ব্যাপারে । যদিও এক সময় সেই ঠিক লাইনে চলে এসেছিলো । সে গল্প অন্য কোন দিন ।

আমাদের সকালে প্রাইভেট পড়া ছিল । আমাদের সকালের প্রথম দেখা সেখানেই হত । আমি একটু আগে আগে বের হতাম । সেদিনও বের হয়েছিলাম । সকাল বেলা যাওয়ার পথে এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল । সেও আমার সাথেই পড়তো । দুইজন সাইকেল চালাতে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি । এমন সময়ে এক বোরখা পরা মেয়ে হঠাৎ রাস্তার ওপাশ থেকে আমার নাম ধরে ডাক ছিল যা ছিল একেবারে অস্বাভাবিক । কারণ সে ডাক দিয়েছে আমার ফরমাল নাম ধরে, ডাক নাম ধরে নয় । তবে আমি তার কন্ঠস্বর শুনেই চিনে ফেলেছি যে কে ডাক দিয়েছে । বোরখা পরে থাকার কারণে আমার সেই বন্ধুটি সম্ভবত তাকে চিনতে পারে নি । আমি তাকে বিদায় দিয়ে বললাম, যাও আমি আসছি । আমি আমার সাইকেল ঘুরিয়ে রাস্তার ওপাশে চলে গেলাম তার কাছে । আমার বুকের ভেতরে তখন ধকধকা করছে । এটা আমার সব সময় হত । সে সামনে এলেই এই অনুভূতিটা হত । আমি কাছে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার ?
তার চোখ ছিল অন্য রকম । অন্য রকম এক মাদকতা ।
সে বলল, চল । আজকে পড়তে যেতে হবে না ।

এই বলে সে আমার সাইকেলের পেছনর ক্যারিয়ারে উঠে বসলো । আমি তাকে নিয়ে পেছনে ঘুরলাম । সাইকেল নিয়ে যখন রওয়ানা দিলাম তখনই বুকের ভেতরে সেই ভয়টা ফিরে এল আবার । যদি কেউ দেখে ফেলে । আমার মাথায় তখন চিন্তা চলছে যে এই মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় যাবো ? কোথায় গেলে কারো চোখে পড়বে না । আমার তখন সাইকেল চালানোর খুব বেশি শখ ছিল । আমি সাইকেল নিয়ে পুরো শহর গ্রামে চষে বেড়াতাম । কোথায় কি আছে সব আমার চেনা । আমাদের থানা শহরের এমন একটা রাস্তা ছিল যেখানে আমার সাইকেলের টায়ারের ছাপ পড়ে নি । আমি এমনই একটা স্থানে নিয়ে গেলাম তাকে । জায়গা টা ছিল একটা জেলা হোমিওপ্যাথিক কলেজের পাশে । একটা ইট ভাটা ছিল । সেইটার কাছে বসলাম দুজন । তবে সেখানে খুব বেশি সময় বসা গেল না । আমরা বসে গল্প করছিলাম তখনই পাশ থেকে দুজন মানুষের ঝগড়া কানে এল ।
গ্রামের মানুষ যেভাবে ঝগড়া করে এবং তাদের মুখে তখন কেমন ভাষা শোনা যায় সেটা বিস্তারিত নাই বললাম । তবে আমাদের দুজনের কানেই যে সব শব্দ ঢুকতে লাগলো যে সেখানে বেশি সময় বসে থাকা সম্ভব হল না । পাশ থেকে আরও একলোক আমাদের সামনে এসে বলল যেন আমরা এখানে না বসি । তিনিই বললেন যেন আমরা পাশের কলেজের মাঠে গিয়ে বসি ।

সেখান থেকে উঠে চলে এলাম কলেজের উঠোনে । কলেজটা তখন সবে মাত্র হচ্ছে । আমরা সেখানে বসেই গল্প করতে লাগলাম । বলা যায় এই প্রথম আমি ডেটে এসে হাজির হলাম । সে পাশে বসে গল্প করছে । আমি তার পাশে বসে গল্প করছি । সেই সময়ের অনুভূতিটা বুঝি আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না । সেটা কোন ভাবেই ভোলার নয় ।

কিছু সময় পরে দেখলাম কলেজের ছা্ত্র ছাত্রীরা আসতে শুরু করলো । তারাা দুর থেকে আমাদের খেয়াল করতে লাগলো । আগেই বলেছি কলেজটা তখন সবে মাত্র শুরু হচ্ছে । তাই ওখানকার ছাত্রছাত্রীরা সবাই সবাইকে চেনে । আমাদেরকে তাদের চেনার কথা না । তবে তারা কাছে আর এল না । দুর থেকে আমাদের খেয়াল করতে লাগলো । ওদের কাছে আমরা অপরিচিত ছিলাম তাই আমাদের খুব একটা ভয় ছিল না ।

আমাদের টিউশনের পুরো সময়টা আমরা সেখানে বসে গল্প করলাম । কী যে গল্প করেছিলাম সেটা আজকে আর কিছুই মনে নেই । এমন কি কী কারণে সেদিন হঠাৎ করে সে রাস্তায় ওভাবে আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সেই ব্যাপারটাও এখন পরিস্কার মনে নেই । তবে যতদুর মনে পড়ে আমার একবন্ধুর বাড়ি ছিল ঠিক তার বাসার পাশেই । সে সম্ভবত তাকে কিছু বলেছিলো আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে । মানে বন্ধুটি জানে এই ব্যাপারটা । অথচ সে জানতো না যে আমার বন্ধুটি জানে । তাই সে খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । সেটা নিয়েই সম্ভবত আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো । তবে এমনই যে হয়েছিলো সেটার ব্যাপার আজকে আর নিশ্চিত করে কিছু বলার নেই । আমাদের গল্প চলতে লাগলো । এক সময়ে শেষ হল । এবার ফিরতে হবে ।

তারপর আবারও তাকে ক্যারিয়ানে তুলে রওয়ানা দিলাম । তবে খুব বেশি দুর পর্যন্ত যাওয়া হল না । কারণ মানুষজন সব বের হতে শুরু করেছে । যে কারো চোখে পড়ে যেতে পারি । এরপর একই স্থানে আমরা কয়েকবার এসেছি । গল্প করে চলে এসেছি । কলেজের সেই ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে মজা পেত । আমরা অবশ্য সেদিকে খুব একটা খেয়াল দিতাম না । আমরা ভেসে পড়াতাম অন্য কোন জগতে ।

আরও একটা জায়গা ছিল আমাদের গল্প করার জন্য । ঐ কলেজে থেকে আরও খানিকটা দুরে একটা বড় বটগাছ ছিল । সেখানে বসার জায়গা ছিল । সেখানেও বসে গল্প করতাম আমরা ।

প্রেম সব সময় চমৎকার । তবে প্রেম সব সময় প্যারাময়ও বটে ।


প্রথম প্রেম সিরিজের অন্য আরও পোস্ট গুলো
কোন মেয়ের কাছ থেকে প্রথম প্রেমপত্র পাওয়ার গল্প
জন্মদিনের স্মৃতিঃ প্রেমিকার দেওয়া প্রথম উপহার
স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো
ভ্যালেন্টাইনসঃ আমার দুঃখ ভর্তি প্রেমের সত্যি গল্প


Photo by photo nic on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৩
৪৫৬ বার পঠিত
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×