লকডাউনের কারণে অনেক দিন গ্রামে থাকা হল এবার। শেষ কবে এতোদিন এখানে এতো দিন কাটিয়েছি সেটা আমার মনেও নেই । আজকে রাতে ঢাকা ফেরার কথা । এবার ঠিক করেছিলাম যে সেই স্কুল জীবনে কাটানো কিছু স্থানের ছবি তুলে স্মৃতির কথা পোস্ট করবো । কিন্তু লকডাউনের কারণে বাইরে বের হওয়াই হয় নি । সারাটা সময় ঘরের ভেতরেই থেকেছি । আজকেও বাসার ভেতরেই । তবে যাওয়ার আগে এখান থাকা একটা স্মৃতির কথা লিখে যাই । ইতি মধ্যে আমার প্রথম প্রেম, প্রেমিকার সাথে জন্মদিন আর প্রথম প্রেম পাওয়ার গল্প আপনারা পড়েছেন । আজকে পড়বেন আমার জীবনে প্রথম ডেট এ যাওয়ার গল্প ।
এখনকার প্রেম ভালোবাসাতে ডেটে যাওয়া টা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । অনেকে তো প্রেমের আগেই ডেটে চলে যায় । তবে তখন এই ব্যাপারটা এতো সহজ ছিল না । বলা যায় তখন ডেটের জন্য আমাদের রীতিমত পরিকল্পনা স্বলাপরামর্শ করে বের হতে হত । সব থেকে বড় সমস্যা ছিল কারো চোখে না পড়া । ছোট মফস্বল শহরে পরিচিত মুখের অভাব নেই । যে কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে সেই কথা বাসায় পৌছাতে খুব বেশি সময় লাগতো না । আর একবার বাসায় পৌছানো মানে সব শেষ ।
আমার প্রেম তখন চলছে পুরো দমে । প্রেম বলতে প্রতিদিন প্রাইভেট টিউশনে, স্কুলে ক্লাস রুমে আমাদের চোখে চোখী । সুযোগে দুএকটা কথা বলা আর চিঠি আদান প্রদান । আমাদের কথা তখন চিঠিতেই হত বেশি । এখানে বলে রাখা ভাল যে আমার লেখালেখির শুরুটা সম্ভবত এই প্রেম পত্র লেখার হাত ধরেই । তখন কত যে চিঠি তাকে লিখেছি তার কোন ঠিক নেই ।
আমাদের ব্যাপারটা স্কুলে খুব বেশি মানুষ জানে না । আমার কাছের কয়েকজন বন্ধু আর তার কয়েকজন বন্ধু। ব্যাস আর নেই । আমরা তখন সদা সচেষ্ট যে ব্যাপারটা যথা সম্ভবত লুকিয়ে রাখা । মানুষ যেন না জানে । দুজনেই এমন একটা উৎকন্ঠার ভেতরে কাটাই এই বুঝি কেউ জেনে ফেলল আর এই বুঝি বাসায় অভিযোগ চলে এল । আমার বাসায় অবশ্য খুব একটা ভয়ের কারণ ছিল না । যত ভয় ছিল তার বাসায় । তার মা খুব বেশি কড়া ছিল এই ব্যাপারে । যদিও এক সময় সেই ঠিক লাইনে চলে এসেছিলো । সে গল্প অন্য কোন দিন ।
আমাদের সকালে প্রাইভেট পড়া ছিল । আমাদের সকালের প্রথম দেখা সেখানেই হত । আমি একটু আগে আগে বের হতাম । সেদিনও বের হয়েছিলাম । সকাল বেলা যাওয়ার পথে এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল । সেও আমার সাথেই পড়তো । দুইজন সাইকেল চালাতে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি । এমন সময়ে এক বোরখা পরা মেয়ে হঠাৎ রাস্তার ওপাশ থেকে আমার নাম ধরে ডাক ছিল যা ছিল একেবারে অস্বাভাবিক । কারণ সে ডাক দিয়েছে আমার ফরমাল নাম ধরে, ডাক নাম ধরে নয় । তবে আমি তার কন্ঠস্বর শুনেই চিনে ফেলেছি যে কে ডাক দিয়েছে । বোরখা পরে থাকার কারণে আমার সেই বন্ধুটি সম্ভবত তাকে চিনতে পারে নি । আমি তাকে বিদায় দিয়ে বললাম, যাও আমি আসছি । আমি আমার সাইকেল ঘুরিয়ে রাস্তার ওপাশে চলে গেলাম তার কাছে । আমার বুকের ভেতরে তখন ধকধকা করছে । এটা আমার সব সময় হত । সে সামনে এলেই এই অনুভূতিটা হত । আমি কাছে গিয়ে বললাম, কী ব্যাপার ?
তার চোখ ছিল অন্য রকম । অন্য রকম এক মাদকতা ।
সে বলল, চল । আজকে পড়তে যেতে হবে না ।
এই বলে সে আমার সাইকেলের পেছনর ক্যারিয়ারে উঠে বসলো । আমি তাকে নিয়ে পেছনে ঘুরলাম । সাইকেল নিয়ে যখন রওয়ানা দিলাম তখনই বুকের ভেতরে সেই ভয়টা ফিরে এল আবার । যদি কেউ দেখে ফেলে । আমার মাথায় তখন চিন্তা চলছে যে এই মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় যাবো ? কোথায় গেলে কারো চোখে পড়বে না । আমার তখন সাইকেল চালানোর খুব বেশি শখ ছিল । আমি সাইকেল নিয়ে পুরো শহর গ্রামে চষে বেড়াতাম । কোথায় কি আছে সব আমার চেনা । আমাদের থানা শহরের এমন একটা রাস্তা ছিল যেখানে আমার সাইকেলের টায়ারের ছাপ পড়ে নি । আমি এমনই একটা স্থানে নিয়ে গেলাম তাকে । জায়গা টা ছিল একটা জেলা হোমিওপ্যাথিক কলেজের পাশে । একটা ইট ভাটা ছিল । সেইটার কাছে বসলাম দুজন । তবে সেখানে খুব বেশি সময় বসা গেল না । আমরা বসে গল্প করছিলাম তখনই পাশ থেকে দুজন মানুষের ঝগড়া কানে এল ।
গ্রামের মানুষ যেভাবে ঝগড়া করে এবং তাদের মুখে তখন কেমন ভাষা শোনা যায় সেটা বিস্তারিত নাই বললাম । তবে আমাদের দুজনের কানেই যে সব শব্দ ঢুকতে লাগলো যে সেখানে বেশি সময় বসে থাকা সম্ভব হল না । পাশ থেকে আরও একলোক আমাদের সামনে এসে বলল যেন আমরা এখানে না বসি । তিনিই বললেন যেন আমরা পাশের কলেজের মাঠে গিয়ে বসি ।
সেখান থেকে উঠে চলে এলাম কলেজের উঠোনে । কলেজটা তখন সবে মাত্র হচ্ছে । আমরা সেখানে বসেই গল্প করতে লাগলাম । বলা যায় এই প্রথম আমি ডেটে এসে হাজির হলাম । সে পাশে বসে গল্প করছে । আমি তার পাশে বসে গল্প করছি । সেই সময়ের অনুভূতিটা বুঝি আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না । সেটা কোন ভাবেই ভোলার নয় ।
কিছু সময় পরে দেখলাম কলেজের ছা্ত্র ছাত্রীরা আসতে শুরু করলো । তারাা দুর থেকে আমাদের খেয়াল করতে লাগলো । আগেই বলেছি কলেজটা তখন সবে মাত্র শুরু হচ্ছে । তাই ওখানকার ছাত্রছাত্রীরা সবাই সবাইকে চেনে । আমাদেরকে তাদের চেনার কথা না । তবে তারা কাছে আর এল না । দুর থেকে আমাদের খেয়াল করতে লাগলো । ওদের কাছে আমরা অপরিচিত ছিলাম তাই আমাদের খুব একটা ভয় ছিল না ।
আমাদের টিউশনের পুরো সময়টা আমরা সেখানে বসে গল্প করলাম । কী যে গল্প করেছিলাম সেটা আজকে আর কিছুই মনে নেই । এমন কি কী কারণে সেদিন হঠাৎ করে সে রাস্তায় ওভাবে আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সেই ব্যাপারটাও এখন পরিস্কার মনে নেই । তবে যতদুর মনে পড়ে আমার একবন্ধুর বাড়ি ছিল ঠিক তার বাসার পাশেই । সে সম্ভবত তাকে কিছু বলেছিলো আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে । মানে বন্ধুটি জানে এই ব্যাপারটা । অথচ সে জানতো না যে আমার বন্ধুটি জানে । তাই সে খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । সেটা নিয়েই সম্ভবত আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো । তবে এমনই যে হয়েছিলো সেটার ব্যাপার আজকে আর নিশ্চিত করে কিছু বলার নেই । আমাদের গল্প চলতে লাগলো । এক সময়ে শেষ হল । এবার ফিরতে হবে ।
তারপর আবারও তাকে ক্যারিয়ানে তুলে রওয়ানা দিলাম । তবে খুব বেশি দুর পর্যন্ত যাওয়া হল না । কারণ মানুষজন সব বের হতে শুরু করেছে । যে কারো চোখে পড়ে যেতে পারি । এরপর একই স্থানে আমরা কয়েকবার এসেছি । গল্প করে চলে এসেছি । কলেজের সেই ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে মজা পেত । আমরা অবশ্য সেদিকে খুব একটা খেয়াল দিতাম না । আমরা ভেসে পড়াতাম অন্য কোন জগতে ।
আরও একটা জায়গা ছিল আমাদের গল্প করার জন্য । ঐ কলেজে থেকে আরও খানিকটা দুরে একটা বড় বটগাছ ছিল । সেখানে বসার জায়গা ছিল । সেখানেও বসে গল্প করতাম আমরা ।
প্রেম সব সময় চমৎকার । তবে প্রেম সব সময় প্যারাময়ও বটে ।
প্রথম প্রেম সিরিজের অন্য আরও পোস্ট গুলো
কোন মেয়ের কাছ থেকে প্রথম প্রেমপত্র পাওয়ার গল্প
জন্মদিনের স্মৃতিঃ প্রেমিকার দেওয়া প্রথম উপহার
স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো
ভ্যালেন্টাইনসঃ আমার দুঃখ ভর্তি প্রেমের সত্যি গল্প
Photo by photo nic on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৩৩