প্রথম প্রেমপত্র কিংবা ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে ধরা খাওয়ার গল্প আগে লিখেছি । আজকে অবশ্য চিঠি দেওয়া নয়, চিঠি পাওয়ার গল্প লিখবো । আমি আমার জীবনের প্রথম চিঠি পেয়েছিলাম প্রথম প্রেমিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার আগে এবং অন্য একজন মেয়ের কাছ থেকে । আজকের গল্প সেটা নিয়ে !
এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত । আমরা যে কাজ গুলো করেছি কিংবা আমাদের সাথে যে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে জীবনে এখনকার ছেলেমেয়েদের জীবনে সেই ঘটনা গুলো সেই ভাবে ঘটে না । এমন একটা ঘটনার কথা যদি বলি সেটা হচ্ছে প্রেম পত্র প্রেমের চিঠি পাওয়ার ব্যাপারটা । এখনও ছেলে মেয়েরা প্রেম ভালোবাসা করছে । ইন্টারনেটের যুগে ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসএপে টুক করে একটা মেসেজ জানিয়ে দিচ্ছে । সীন করে রিপ্লাই পেয়েও যাচ্ছে । তাই তারা কোন ভাবেই জানতে বুঝতে পারবে না আমাদের সময়কার সেই অনুভুতি ! চিঠি দিয়ে সেই চিঠির জন্য অপেক্ষা, চিঠির পাওয়ার অনুভূতি, চিঠি ধরা পরে যাওয়ার ভয় আরও কত সে অনুভূতি যা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না ।
নিচে কয়েকটা লিংক যুক্ত করেছি । এগুলো পড়লে আশা করি এই ঘটনার সাথে একটা সমঞ্জস্য খুজে পাবেন । এটার জন্য বোধ করি জন্মদিনের স্মৃতি অংশটুকু পড়লে ভাল বুঝতে পারবেন ! সেখানেই আমি লিখেছিলাম যে আমার ক্লাস টিচারের মেয়ের কাছ থেকেই আমি জীবনের প্রথম প্রেম পত্র পেয়েছিলাম । সময়টা তখন ফেব্রুয়ারি মাস । ভালোবাসার আমেজ চলছে চারিদিকে । তখন পড়ি ক্লাস টেনে । আমাদের স্কুলটা কোম্বাইন হলেই ক্লাস সিক্স থেকে নাইণ পর্যন্ত ছেলে আর মেয়েদের ক্লাস রুম ছিল আলাদা । কিন্তু ক্লাস টেনে ওঠার পরই একই রুমে আমাদের ক্লাস শুরু হল । বুঝতেই পারছেন তখন তখন সদ্য মন একটু একটু উড়তে শুরু করে ফেলেছে । আর পাশেই সব সময় মেয়েদের অবস্থান । মনের ভেতরে তো একটু একদিক ওদিক করবেই । এরই মাঝে আমার এক বন্ধু ক্লাসেরই অন্য এক মেয়ের সাথে প্রেম করে ফেলল । আমরা কয়েকজন জানতাম সে ব্যাপার । তখনই থেকেই মনের ভেতরে সেই প্রেমটা জেগে উঠলো আবার । এখানে উল্লেখ্য যে আমার প্রথম প্রেমিকাকে আমার প্রথম ভালোলাগে সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে । এখনকার ভাষার যেটাকে ক্রাশ বলে । আমাদের সময় এই শব্দের উদ্ভব হয় নি । সেই যে তাকে ভাল লেগেছিলো সেটা মনের গভীরে থেকেই সুপ্তই ছিলো । সেই ব্যাপারটা বন্ধুর প্রেম দেখে আবার জেগে উঠলো । এই ব্যাপার আগেও লিখেছি । তাই বিস্তারিত আর লিখছি না ।
এই যে ভালোলাগার ব্যাপারটা, এটা আসলে গোপন রইলো না । তখনও আমি প্রথম প্রেমিকাকে অফিশিয়ালী প্রোপোজ করে ছ্যাকা খাইনি । কেবল আবহওয়া তৈরি হয়েছে । ঐপক্ষও জানে আমার কিছু বন্ধু বান্ধবও জানে । হয়না এমন ক্লাসে একজন যদি আরেকজনকে পছন্দ করে তাহলে ব্যাপারটা ছড়িয়ে যায় তেমন !
বোধ করি এই ঘটনা আরও একজনের কানেও চলে গেল । এখানে তার বর্ণনা একটু দেই । ধরি তার নাম জারা ! জারার ব্যাপারটা ছিল এমন যে পৃথিবীর সব মেয়ে যদি আমাকে পচন্দ করতো আমি মোটেও অবাক হতাম না । আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে এই মেয়ে কোন দিন আমাকে পছন্দ করতেই পারে না । সম্ভব না । এটা ছিল আমার কাছে প্বথিবীর অস্টম আশ্চর্যের ব্যাপার । আসলে জারার ব্যক্তিত্বই ছিল এমন । আমাদের ক্লাস টিচারের মেয়ে ছিল । সব সময় গম্ভীর । পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু বোঝে না । আমার দিকে যতবার তাকিয়েছে আমার কেবল মনে হয়েছে সে আমাকে দেখছে বিরক্ত চোখে ।
ঘটনার দিন আমি আর আমার বন্ধু টিউশনের সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছি । আমাদের পড়ার সময় তখনও হয় নি । এখানে জারাও পড়তে আসতো। এমন সময় দেখলাম যে সে আসছে । তার ব্যাপারটাই এমন ছিল যে তাকে আসতে দেখলে আমরা সবাই সোজা হয়ে যেতাম । সে যেন আর্মির কমান্ডিং অফিসার আর আমরা ছিলাম সাধারন সৈনিক । প্রতিদিন এমনই হত । আমরা দাড়িয়ে গল্প করতাম সে সামনে নিয়ে স্যারের বাড়িতে ঢুকে পড়তো । কিন্তু সেদিন তেমন কিছু হল না । সে গেট দিয়ে না ঢুকে সোজা আমার সামনে এসে দাড়ালো । কোন কথা বলল না । সেই গম্ভীর মুখেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহুর্ত । তারপর একটা বই আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমার কোন বই তার কাছে ছিল না । থাকার তো প্রশ্নই আসে না । আমার বন্ধু তখন এই বইয়ের মাধ্যমে চিঠি পত্র আদান প্রদান করতো । তাই ব্যাপারটা আমার জানা । আমার বুকটা ধক করে উঠলো । সত্যিই বলছি জীবনে সেদিন আমি যতখানি অবাক হয়েছিলাম আজ পর্যন্ত এতো অবাক আমি হয় নি । এতো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার আমার জীবন আজ পর্যন্ত ঘটে নি । জারা ছিল পৃথিবীর শেষ মানবী যার কাছ থেকে প্রেম পত্র আশা করেছিলাম ।
পুরো টিউশন সে আমার সামনেই বসে ছিল । আমরা একই ঘরে বসতাম । আমার পড়ায় মন বসলো না মোটেই । ঘুরে ফিরে তার দিকে চোখ যাচ্ছিলো । পড়া শেষ করে দ্রুত ছুটলাম বাসায় । আমার তখন তর সইছিল না চিঠি পড়ার জন্য ।
সেই চিঠিতে আসলে কি লেখা ছিল সেটা আমার সেটা হুবাহু আমার এখন আর মনে নেই । তবে চিঠির শুরুর দিকে লেখা ছিল যে আমি যে আমার প্রথম প্রেমিকাকে প্রোপোজ করতে যাচ্ছি সেটা যেন না করি । সে আমাকে সাবধান করতে চিঠি লিখেছে । তার কোন ছেলের সাথে কী কী চলছিল অতীতে কী কী চলছে এখন সব নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা । আর ছিল আমি যদি তাকে প্রোপোজ করি তাহলে সেটা হবে ভুল । আমার মত ভাল ছেলের সাথে তার মত মেয়ে মানায় না ।
একটুও বানিয়ে বলছি না । একদম এই ধরনের কথা বার্তাই লেখা ছিল । শেষে ইঙ্গিত ছিল যে আরও অনেক ভাল মেয়ে আছে যাদের সাথে আমার মেশা উচিৎ । সেই ভালো মেয়ে যে সেটা আর বলে দিতে হল না অবশ্য ।
যদিও এটা ঠিক প্রেমপত্র ছিল না সেই অর্থে তবে খানিকটা প্রেমর ইঙ্গিত সেখানে ছিল । আরও ভাল করে বললে এটা ছিল প্রথম কোন মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া চিঠি ।
এরপরের চিঠিটা ছিল আমার প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া । তখনও সে আমার প্রেমিকা হয় নি । আমি তাকে প্রোপোজ করেছি । এবং সেটা সে রিজেক্ট করে দিয়েছে । সেই গল্প আগেই বলেছি । পহেলা বৈশাখ স্পেশাল পোস্টে । যাই হোক এই চিঠিটা ছিল প্রোপোজের পরের দিন । স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় সে আমাকে দিল সেটা । বাসায় এসে পড়ে দেখলাম সেখানেও সে আমাকে উপদেশ বানী লিখেছে । এই রকম করা ঠিক না, এখন সে সম্পর্কে যাবে না, এটা কারোর জন্যই ভাল হবে না । সে এখন থেকে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে । চিঠি পড়ে আমার মনে হচ্ছিলো, তোর বন্ধুত্বের আমি খ্যাঁতা পুড়ি । বন্ধু হইতে চাইছি তোর !
এই দ্বিতীয় চিঠিও ছিল না প্রেম পত্র । তৃতীয় চিঠিটা ছিল প্রেমপত্রের । সেটা এসে হাজির হয়েছিলো আমার প্রেমিকার কাছ থেকেই । যেদিন সে আমার প্রস্তাব গ্রহন করে । পহেলা বৈশাখের দিন । আমাদের বাসাতেই । এটা নিয়ে পোস্ট রয়েছে ।
এরপর আমাদের মাঝে অসংখ্য চিঠি আদান প্রদান হয়েছে । কত চিঠি যে তাকে লিখেছি তার কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না । আরেকটা চিঠির গল্প বলি স্পেশাল ভাবে । এটা এসেছে সেই জারার কাছ থেকেই । সেই চিঠিতে জারা আমাকে প্রোপোজ করেছিলো । সেই চিঠি নিয়েও অনেক গল্প আছে । মজার ব্যাপার হচ্ছে জারা এই চিঠি আমার কাছে পাঠিয়েছিলো আমারই প্রেমিকার হাত দিয়ে । জন্মদিনের পোস্টটা পড়লে সেটা বুঝতে পারবেন ।
চিঠিটা আমার প্রেমিকা যখন আমার হাতে নিয়ে দিল তখন একটা নির্দেশনাও দিল । আমাকে বলল যে এখন বাসায় যাওয়ার আগে এই চিঠির কয়েকটা ফটোকপি করবে । এক কপি আমার কাছে দিবে । বাধ্য প্রেমিকের মতই আমি সেই প্রেম পত্রের কয়েকটা কপি করে তার হাতে দিয়ে দিলাম । সে সেটা নিজের কাছে জমা করে রেখে দিল । এই জমা করে রাখার পেছনে একটা কারণ অবশ্য ছিল । যদিও কাজটা মোটেও ঠিক হয় নি । এখন বুঝতে পারি । চিঠি পত্র আর মেসেজ কেবল যাকে লেখা সে ছাড়া অন্য কাউকে দেখানো ঠিক না । একদমই ঠিক না । কিন্তু তখন এতো বোঝার বয়স ছিল না । আর প্রেমিকার কথা অবাধ্য করার উপায়ও ছিল না ।
এই হল আমার প্রেম পত্র পাওয়ার গল্প । সেই সময় টা কতই না চমৎকার ছিল । প্রতিটা দিন ছিল রঙিন । কত কিছু মনে হত । এখন জীবন কেমন যেন এক রকমই হয়ে গেছে ।
সবার জীবনে প্রেম আসুক । ভালোবাসার মানুষের পাশে জীবন পার করতে পারার মত সৌভাগ্য আর একটাও নেই ।
যে পোস্ট গুলো পড়তে পারেন
ভ্যালেন্টাইনসঃ আমার দুঃখ ভর্তি প্রেমের সত্যি গল্প
স্পেশাল পহেলা বৈশাখ, আমার প্রথম প্রেম যেভাবে শুরু হয়েছিলো
জন্মদিনের স্মৃতিঃ প্রেমিকার দেওয়া প্রথম উপহার
Photo by cottonbro from Pexels
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৪৯