কয়েকদিন আগে যে ছবি ব্লগ প্রতিযোগিতা গেল সেখানে আমার কম দামী মোবাইল ক্যামেরাতে তোলা কয়েকটা ছবি পোস্ট করেছিলাম । কেবলই সেটা অংশ গ্রহন ছিল । আর কিছুই নয় । কয়েকটা ছবি পোস্ট মনে হল আরও কিছু ছবি তো পোস্ট করাই যায় । সাথে সাথে সেই ছবির পেছনের গল্প গুলো টুকটাক লেখা যায় । আজকে কয়েকটা ছবি আর ছবির পেছনের গল্প নিয়ে আবার হাজির হলাম ।
প্রথম ছবিটা যতদুর মনে হচ্ছে আমার ক্যামেরাতে তোলা না । আবার আমার তোলাও হতে পারে । আসলে ট্যুরে গেলে যা হয় । সবার ছবি একটা হোয়াটসগ্রুপে শেয়ার করা হয় । সেটা গিয়ে জমা হয় গ্যালারিতে । সেখান থেকেই এই ছবি এসে হাজির হয়েছে । আমার মনে আছে একই লোকেশন থেকে আমিও ছবি তুলেছিলাম বেশ কয়েকটা । এখন এটাই সেই ছবি কিনা কে জানে ।
এই ছবিটা তোলা হয়েছে নৌকা থেকে । আমরা তখন যাচ্ছিলাম রেমাক্রির দিকে । বিকেল পার হতে শুরু করেছে । আমাদের চিন্তা তখন সন্ধ্যা নামার আগেই রেমাক্রিতে পৌছাতে হবে। সেখান থেকে আরও তিন ঘন্টা হাটাস পথ । এমন সময় এই তিনটা পাহাড় দেখতে পেলাম । দুই পাশে দুইটা সেই সাথে সামনের দিকে আরও একটা ।
নিচের এই গাছটার নাম আসলে যে কি সেটা জানি না । কোন এক অচেনা পাহাড়ের অচেনা পথের পাশে দাড়িয়ে ছিল সে । মনে হল সাথে করে এই স্মৃতি টুকু নিয়ে যাওয়া যাক । কোন দিন মনে হবে এখানে আমি এসেছিলাম ।
লম্বা এই রাস্তাটা আমার স্কুল আর কলেজ জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ন স্থান । এটা আমার বাসা এবং স্কুল থেকে অনেকটাই দুরে । রাস্তার শেষ মাথায় জেলা আবহাওয়া অফিস । এখানে আমি আর আমার কাছের কয়েকজন বন্ধুরা আসতাম প্রায়ই সাইকেল চালিয়ে । বিকেল থেকে সন্ধ্যা পার হত এখানে বসে গল্প করে । অনেক স্বপ্ন ছিল যে একদিন আমার প্রেমিকাকে নিয়ে এখানে আসবো । তবে সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠে নি । বিয়ের পর বউ নিয়ে যাওয়া যায় কিনা দেখা যাক !
এটা জেলা বিএডিসি ফার্ম । নতুন ভাবে বিল্ডিং তোলার পরে দেখতে অনেকটা বিদেশ বিদেশ ভাব চলে এসেছে । বিকেলে এখানে অনেক মানুষ আসে । আমরাও বন্ধুদের নিয়ে আসতাম মাঝে মধ্যে । তবে এখানে ভীড় বেশি হয় ।
আমার হাই স্কুল । এখানে ৫টা বছর কেমন করে কেটে গেছে তা এখনও ভাবি । কী চমৎকার সময় কেটেছে । এখানকার কিছূ কিছু স্মৃতি কোন ভাবেই ভোলার নয় !
গতবছর যখন প্রথম লক ডাউন দিল এটা সেই সময়ে তোলা ছবি । তখন এলাকা একেবারে ভুতুড়ে হয়ে থাকতো । মানুষজন একদম বের হত না । এখন অবশ্য সে সবের বালাই নেই ।
ঢাকা মেডিকেলের নতুন বিল্ডিং থেকে তোলা ঢাকা শহরের ছবি । আব্বা তখন এখানে ভর্তি ছিল । তখন সারাদিন হাসপাতালে কাটতো । বুঝতে পেরেছিলাম যে হাসপাতাল থেকে কোন দৃশ্যই মনমুদ্ধকর হয় না ।
এই ভাবে পাহাড়ের দিকের তাকিয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা । কোন ক্লান্তি আসে না । প্রতি পলক ফেলতেই মনে হয় যেন নতুন কোন দৃশ্য দেখছি । ছবিটা যদিও আমার তোলার না । আমার বান্ধবী তুলে দিয়েছে।
গাছটা প্রথম দেখেছিলাম রাতের বেলা । একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো তাই অন্ধকার নেমে এসেছিলো পাহাড়ে । দুর থেকে দেখে মনে হয়েছিলো বুঝি কোন দৈত দাড়িয়ে রয়েছে । পরে ফেরার পথে ভাল করে ছবিটা তোলা হয়েছে ।
এতো বড় ঘাসফড়িং আমি এর আগে দেখি নি । তবে এটা মোটেই ফালাচ্ছিলো না । অতি ধীর গতিতে হেটে যাচ্ছিলো । কেউক্রাডংয়ের চুড়ায় ইনার সাথে দেখা হয়েছিলো !
কত মানুষ এই পথ দিয়ে হেটে গেল প্রতিনিয়ত অথচ পথের আপন হল না কেউ । অনেকটা আমার নিজের জীবনের মত । কত মানুষের সাথে পরিচয় । দরকার কিংবা অদরকারে, অথচ নিজের বলার মত কেউ পাশে রইলো না কখনো ।
সেই একই পাহাড় অথচ প্রতিবারই কত আলাদা কত সুন্দর !
আকাশ নদী আর মেঘের মাঝে এই নৌকাটাকে কতই না ছোট আর একলা অসহায় মনে হচ্ছে । আমার অবস্থাও কেন জানি এই একা পড়ে থাকা নৌকার মতই । অসহায় !
এটা আমার কমদামী মোবাইল ক্যামেরাতে তোলা এখনও পর্যন্ত সব থেকে সুন্দর ছবি । এর থেকে সুন্দর ছবি আমি তুলতে পারি নি । বগালেক সেদিন যেন আপন মহিমাতে ফুটে উঠেছিলো !
আজকের ছবি আর ছবির পেছনের গল্প এখানেই সমাপ্ট । সামনে আবারও হাজির হবে আরও ছবি নিয়ে !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৪৭