একটা সময়ে জন্মদিন নিয়ে খুব উন্মাদনা ছিল । জন্মদিন আসবে সবাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবে । বিশেষ করে আমার জন্মদিনের কথা মনে রাখবে এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার ছিল আমার কাছে । প্রতি বছরই কিছু মানুষ আমার জন্ম দিনের কথা মনে রেখেছে । আবার অনেক কাছের মানুষ মনে রাখে নি । এই মনে না রাখার ব্যাপার টা আগে আমার মনে পীড়া দিত । এখন কেন জানি আর দেয় না । যার মনে রাখার রাখবে আর যার রাখার দরকার নেই রাখবে না । এছাড়া এখন আর জন্মদিন সেই আবেগটা কাজ করে না । বরং মনে হয় একটা বছর বেড়ে গেল । বয়সটা আরও একটু বেড়ে গেল আর আরও একটু বুড়ো হয়ে গেলাম যেন ।
তবে অন্তত একটা জন্মদিন আমার জীবনে খুব চমৎকার কেটেছে । বলা যায় এমন একটা দিন বুঝি আমার জীবনে আর আসে নি, সামনে হয়তো আর আসবেও না কোন দিন । সেই সময়ে দশম শ্রেনীর ছাত্র । আমার প্রথম প্রেমের দুইটা ঘটনা ইতিমধ্যে সামুতে লিখেছি । এটাও তেমনই একটা ঘটনা বলা যায় । তখন সবে মাত্র আমার প্রেম শুরু হয়েছে । প্রেম কিভাবে শুরু হয়েছিলো সেটা নিয়ে পহেলা বৈশাখে একটা পোস্ট লিখেছিলাম।
জন্মদিনের আগের দিনই আমার কাছে খবর চলে এসেছে যে আমি যেন কোন ভাবেই সেদিন সকালে স্যারের কাছে কামাই না করি । এবং সময়ের আগেই যেন এসে হাজির হই । আমার আমার মাঝে মাঝে সকালে ঘুমের কারণে স্যারের কাছে পড়তে যাওয়া হত না । এটা নিয়ে তার রাগের শেষ ছিল না । বলা যায় যে এই একটা সময়েই আমরা একেবারে সামনা সামনি বসার সুযোগ পেতাম । একটা ঘরের ভেতরে পাটি পেতে দেওয়ালের দিকে পিঠ করে আমরা বসতাম । সে বসতো আমার মুখোমুখি কখনও পাশে । সেই সময় গুলো অন্য রকম ছিল ।
যাই হোক কথা মত আমি পড়া শুরু হওয়ার ঘন্টা খানেক আগেই এসে হাজির হলাম । সে এসে হাজির হল একটু পরেই । হাতে ফুলের তোড়া । সত্যি বলতে কী সেটাই ছিল আমার জীবনে পাওয়া প্রথম ফুলের তোড়া এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র । চট জলদি আমাকে সেটা দিল, উইস করলো । এরপর একটা ইয়া বড় র্যাপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্স আমাকে দিয়ে বলল যে এখনই ব্যাগের ভেতরে ভরে ফেলো । আমরা বেশ কিছু সময় গল্প করেই কাটিয়ে দিলাম ! আমার মনে হল এখনই বুঝি জন্মদিনের আনন্দ বুঝি শেষ । একটু পরেই ব্যাচের অন্যান্য ছেলে মেয়েরা চলে আসবে ! কিন্তু ঘটনা আরও বাকি ছিল ।
আমার ক্লাসের ক্লাস টিচারের মেয়ে আমাকে পছন্দ করতো । ব্যাপারটা মেয়েদের ভেতরে অনেকেই জানতো । আমার জীবনের পাওয়া প্রথম প্রেম পত্র এই ক্লাস টিচারের মেয়েই আমাকে দিয়েছিলো । সেই গল্প অন্য আরেক দিন ।
এই ক্লাস টিচারের মেয়ে আবার তার কথা জানতো না । তার সাথে ক্লাস টিচারের মেয়ের ভাব ছিল বেশ । একটু পরেই ক্লাস টিচারের মেয়ে এসে হাজির । সেও আমাদের সাথেই পড়তো । সেও হাতে করে আমার জন্য ফুল নিয়ে এসেছে । এবং সেই ফুল আমার কাছে এল তারই মাধ্যমে । ব্যাপারটা একবার ভবুন । আমার প্রেমিকার কাছে অন্য এক মেয়ে ফুল দিচ্ছে আমাকে দেওয়ার জন্য । এই কথা মনে হলে আমার এখনও এতো হাসি আসে !
ক্লাস টিচারের মেয়ের দেওয়া দেওয়া ফুল যখন সে আমার হাতে দিল তখন তার চোখে এমন একটা কৌতুকপূর্ন হাসি ছিল সেটা বলে প্রকাশ করা যাবে না । এইবার দুজন মিলে প্লান করতে লাগলো আর কী করা যায় । দেখলাম ক্লাস টিচারের মেয়ে আর সে মিলে দোকানে গিয়ে হাজির হল । ব্যাচের সবার জন্য কেক আর চকলেট কিনে নিয়ে এল । স্যার পড়িয়ে যাওয়ার পরে আরও একটু সময় বসলাম সবাই । আমার জন্য জন্মদিনের গানও গাওয়াল হল । বলাই বাহুল্য যে গানটা সে নিজেই গেয়েছিলো । আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম তার দিকে । বিশেষ করে তার হাস্যজ্জল মুখের দিকে । আমার জন্ম দিনের কথা এর আগে মানুষজন ঠিক মত মনেই রাখে নি আর এই মেয়ে এমন আচরন করছে যেন এর থেকে আনন্দের ঘটনা যেন তার জীবনে ঘটেই নি । মনের ভেতরে সেই আনন্দ অনুভূতির কোন তুলনা ছিল না সেদিন ।
পড়া শেষ করে যখন বাড়ির দিকে রওয়ানা দিবো তখন এক বন্ধু আমাকে নিয়ে হাজির হল স্থানীয় বিএডিসির ভেতরে । এটা আমাদের স্কুলের কাছেই ছিল । বন্ধুরা মিলে সময় পেলে এখানে আড্ডা দিতাম প্রায় । বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে আমি যে গিফট দেখবো সেটার আর তর সইছিলো না । বিএডিসির ভেতরে গিয়েই গিফট বক্স খুলে ফেললাম ।
কী কী দিয়েছিলো সেটা আমার মনে নেই পুরোটুকু । তবে তার ভেতরে ছিল একটা ঘড়ি, একটা ফতুয়া, জিলেটের একটা ভাল মানের রেজার। একটা জন্মদিনের কার্ড ! আরও কিছু ছিল । সেই সাথে ছিল মেয়েদের সাজার জিনিস । যে চিঠিটা সে দিয়েছিলো সেখানে লেখা ছিল একদিন যেন এই মেকাপের জিনিস পত্র দিয়ে সেজে একটা ছবি তুলে তাকে পাঠাই । অবশ্য সেই কাজ আর করা হয় নি ।
প্রথম প্রেমের মত প্রথম পাওয়া জন্মদিনের গিফটটার মাহত্ব্য ছিল অনেক । ঘড়িটা সম্ভবত এখনও আমার কাছে আছে । সেই মেকাপের জিনিস পত্র গুলোও রয়েছে ।
এই ব্যাপারে একটা মজার কথা শেয়ার না করে পারছি না । বাসার আসার পরে আমার বাড়ির লোকজন জানতে পারে এই জন্মদিনের উপহারের কথা । আমি অবশ্য এমনিতেও লুকোছাপা কিছু করি নি বাসায় । তারা শুরু থেকেই জানতো । দুদিন পরে আমার মা খাওয়ার সময় আমাকে বলছে যে আমার বাবা আমার ঘরে ঢুকে এই সব জিনিস পত্র দেখেছে আর মায়ের কাছে বলেছে যে আমার পোলার জন্মদিন আমি জানি না আর অন্যের মেয়ে উপহার দিয়ে বসে আছে !
এরপর আরও কত জন্মদিন এসেছে । কত মানুষ উইস করে, কত মানুষ উপহার দিয়েছে কিন্তু সেই প্রথম উইস প্রথম ফুল আর প্রথম পাওয়ার উপহারের সাথে তার কোন তুলনা হয় নি ।
আগে সামুতে একটা সিস্টেম ছিল যে ব্লগারদের ব্লগে ঢুকলে জন্মদিনের একটা সাইন আসতো তাদের জন্মদিনে । এখন আর সেটা আসে না ।
আজকে আবারও বছর ঘুরে ২৫শে মে এসে হাজির হয়েছে । এখন জন্মদিন নিয়ে আর কোন ফ্যান্টাসী আসে না । কেবল মনে হয় আরও একটা বছর বেড়ে গেল । আরও একটু বয়স্ক হয়ে গেলাম । আরও একটু বুড়ো হয়ে গেলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২১ রাত ১১:৩০