প্রথম পর্ব
শুনেছি বিয়ের দিন বাসর ঘরের দিকে যাওয়ার সময় ছেলেদের মনে একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করে । আমার মনেও যে একটা উত্তেজনা কাজ করছিলো সেটা আমি অস্বীকার করবো না । তবে আমার উত্তেজনাটা হচ্ছে ভয়ের । আমি রাতের বেলা দেখা সেই অন্ধকার চেহারা গুলোর কথা বারবার মন থেকে দুর করার চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু আমার চোখের সামনে যেন সেগুলোই ফিরে ফিরে আসতে লাগলো । আমি কিছুতেই মন থেকে ভয়টা বের করতে পারলাম না ।
যখন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম তখনও বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধুকধুক করতে লাগলো । আমি দরজা ঠেলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলাম । ভয়ংকর কিছু দেখতে পাবো ভেবেছিলাম তবে তার বদলে অনেকটা অবাক হয়েই দেখলাম যে বিরাট বড় একটা খাটের মাঝে একজন মানুষ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । পুরো দৃশ্যটা খুবই স্বাভাবিক মনে হওয়ার কথা কিন্তু আমার মন থেকে সেই ভয়টা কোন ভাবেই গেল না । আমি জানি ঘোমটা সরালে আমি সেই ভয়ংকর মুখটাই দেখবো । আমি দরজার কাছেই দাড়িয়ে রইলাম ।
হঠাৎই আমার মাথার ভেতরে কেউ বলে উঠলো, ভয় পাচ্ছো ?
আমাকে উত্তর দিতে হল না । মেয়েটা একটু হেসে উঠলো । তারপর বলল, এতোই যখন ভয় তাহলে যখন খাল পার হতে মানা করলাম তখন এপাড়ে এলে কেন শুনি?
তখনই আমার মনে পড়লো সেই কথা । সত্যিই যখন খালটা পাড় হতে গিয়েছিলাম তখন একটা কন্ঠস্বর আমি ঠিকই শুনতে পেয়েছিলাম । কেউ যেন আমাকে যেতে মান করছিলো । কিন্তু তখন আমি নিজের কৌতুহলের ব্যাপারে এতোই মশগুল ছিলাম যে অন্য কিছু মাথায়ই আসে নি । আমি পার হয়ে এসেছিলাম । তারপর বিপদে পড়েছি ।
-তুমি ভয় পাচ্ছো ?
আবারও আমার মাথার ভেতরে সেই আওয়াজটা হল । আমি কোন কথা বললাম না । কেবল সামনের ঘোমটা দেওয়া আমার বিবাহিত বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
-ভয় পেও না । আমি যা করেছি তা তোমার ভালর জন্য করেছি । যদি তোমাকে আমি বিয়ে করতে না চাইতাম তাহলে হয়তো তোমার মাথা খারাপ হয়ে যেত নয়তো তোমাকে মেরে ফেলা হত ! বুঝেছো ?
আমি তখন বললাম, ঐ উপজাতি ছেলেটাকে তোমরা মেরেছো?
-হ্যা । আমাদের এখানে প্রতি পূর্নিমাতে একটা রিচুয়্যাল হয় । সেটার সময় সে ওখানে হাজির হয়েছিল । আমাদের হাতে অন্য কোন উপায় ছিল না ।
-আমিও কি ঠিক সেই সময়ে হাজির হয়েছিলাম ?
-ঠিক সেই সময়ে না । একটু আগে ।
আমি কী বলবো খুজে পেলাম না । সে বলল, ভয় পেও না । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । বিছানাতে এসে বস ।
আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম দ্বিধা নিয়ে । নরম বিছানার উপর বসে পড়লাম । সে বলল, আমার নাম তো তুমি জানো ?
-হ্যা । আরিয়া !
-আমার বাবা আমাদের গোত্রের সর্দার । রাজাও বলতে পারো । সেই হিসাবে আমি কিন্তু প্রিন্সেস ! তুমি জানো আমাকে বিয়ে করার জন্য আমাদের গোত্রের কত গুলো জ্বীণ লাইণ ধরে আছে ? আর আমি তোমাকে বিয়ে করেছি !
আমি বললাম, মানুষের সাথে তোমাদের বিয়ে হয় ?
-হ্যা মাঝে মধ্যে হয় ! আমাদের যখন কোন ছেলে কিংবা মেয়েকে পছন্দ হয় খুব তখন আমরা তাকে ধরে নিয়ে আসি । তাদেরকে রেখে দেই নিজেদের কাছে ।
কী ভয়ংকর অবস্থা ! আমি বললাম, আমাকেও রেখে দিবে এখানে?
আরিয়া বলল নিয়ম মত তোমাকে আর বাইরে যেতে দেওয়ার নিয়ম নেই । তবে তুমি ভয় পেও না । সুযোগ পেলে আমি তোমাকে রেখে আসবো । ঠিক আছে ! দেখি এবার কাছে এসো দেখি, আমার ঘোমটা তুলো !
এই কথাটা শুনে আমার বুকের মাঝে আবারও একটা ভয়ের অনুভূতি খেলে গেল । আমি কোন ভাবেই সেই চেহারা আর দেখতে চাই না । কোন ভাবেই না । তবে আমি আরিয়াকে রাগিয়ে দিতেও চাই না । সে যখন বলেছে যে আমাকে সময় সুযোগ মত বাইরে রেখে আসবে তখন নিশ্চয়ই আবার ফিরে যাওয়ার একটা সুযোগ রয়েছে । কিন্তু যদি ওক রাগিয়ে দিই তাহলে হয়তো সেই সুযোগ আর আমার আসবে না ।
আমি আস্তে আস্তে আরিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম । তারপর আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে ওর ঘোমটা তুললাম । ভয়ে ভয়ে ওর চেহারার দিকে তাকাতঈ খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । যে চেহারা দেখবো বলে ভেবেছিলাম সেটা দেখতে পেলাম না । তার বদলে সেখানে খুব স্নিগ্ধ আর চমৎকার একটা চেহারা দেখতে পেলাম । খাড়া নাক, পাতলা ঠোঁট। টানা চোখ কালো ঘন চোখ । তবে অন্য সাধারন মেয়েদের থেকে আরিয়ার চোখের পার্থক্য হচ্ছে ওর চোখের মনি খানিকটা লাল । তবে সেটা মোটেই ভয়ংকর না। আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটি !
আরিয়া বলল, অবাক হচ্ছো?
-হুম !
আরিয়া হেসে ফেলল । তারপর বলল, এটা আমার মানুষ্য রূপ । আমার আসলে রূপ তুমি দেখলে সহ্য করতে পারবে না । হয়তো মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটবে তোমার ।
আমি আরিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । আরিয়া আবার বলল, তবে ভেবো না যে আমি অন্য কোন মেয়ের রূপ ধরেছি । এটা কিন্তু আমারই চেহারা । মানুষ্য চেহারা ! বুঝেছো !
-বুঝেছি !
আরিয়ার সাথে আরও অনেক কথা হল । ওদের ওখানে থাকতে হল আরও কয়েকটা দিন । তারপর একদিন হঠাৎ আরিয়া বলল, চল তোমাকে রেখে আসি !
-আজই ?
-বাবা একটু বাইরে গেছে। এই সুযোগ আর পাওয়া যাবে না ।
-আমি চলে গেছি এটা তোমার বাবা যখন জানতে পারবে তখন?
-আমাকে একটু বকবে হয়তো তবে চিন্তা কর না । আমি সামলে নিবো । এখন একটা কাজ কর । আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধর তো !
আমি খানিকটা সংকোচের সাথেই আরিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । আরিয়া বলল, চোখ খুলবে না । যখন খুলতে বলবো তখন খুলবে ! ঠিক আছে?
-আচ্ছা!
কয়েক সেকেন্ড সম্ভবত চোখ বন্ধ করে ছিলাম । আরিয়া বলল, এবার চোখ খুলো !
আমি চোখ খুলে দেখি আমি সেই হোটেলের ভেতরে দাড়িয়ে রয়েছে । আরিয়া আমার পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে । এখন রাত। আমাকে পূর্নিমা !
আরিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল, আমি আসি কেমন?
-আচ্ছা!
-তুমি ভাল থেকো!
আমার মনে হল যেন আরিয়া আমার চোখের সামনেই গায়েব হয়ে গেল । আমি কিছু সময় দাড়িয়ে রইলাম সেখানে দাড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎ আমার কেন জানি মনটা খারাপ । তবে সেটা খুব বেশি সময় স্থায়ী হল না । আবার যে আগের জায়গাতে ফিরে এসেছি এটাই সব থেকে বড় কথা ।
-স্যার আপনি বাইরে কেন?
আমি ফিরে তাকালাম ! তাকিয়ে দেখি সেই বেয়ারাটা । আমার দিকে এগিয়ে আসছে । আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । তার চোখে কোন উদ্বেগ নেই । বরং খানিকটা বিরক্তি রয়েছে । আমার কাছে ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক মনে হল না । কারণ হিসাব মত আমি বেশ কিছুদিন ধরেই আরিয়াদের সাথে রয়েছি । কম করে হলেও সাত আট দিন । এই সাত দিনে হোটেলের লোকজন কি আমাকে খুজে নি?
আমি বললাম, না মানে ....
-স্যার দয়া করে ঘরে যান । প্লিজ !
তখনই আমার মনে একটা সন্দেহ জাগলো । আমি বেয়ারাকে বলল, তোমার সাথে আমার শেষ কবে দেখা হয়েছিলো?
আমার এই প্রশ্ন শুনে বেয়ারা একটু থমকালো । তারপর তার মুখে আবারও সেই বিরক্তি ভাবটা দেখতে পেলাম । সে বলল, আজই তো হল । মনে নেই আপনার?
আমি তারপর বললাম, আজকে কয় তারিখ?
-স্যার আজকে ১৭ তারিখ ।
আমি এটাই সন্দেহ করেছিলাম ! অর্থ্যাৎ আমি যে আরিয়াদের সাথে সাত দিন ছিলাম সেটা গায়েব হয়ে গেছে । আমি ঠিক সেই দিনেই পৌছে গেছি যেদিন আমি এখানে এসেছিলাম এবং যেদিন আমি কৌতুহলবসত লেবু বনে ঢুকেছিলাম । ওদের ওখানে সাত আট দিন পার হয়ে গেলেও এখানে মাত্র কয়েক ঘন্টা পার হয়েছে । কিভাব সম্ভব হল এটা ? আমি কিছুতেই ব্যাপারটা হজম করতে পারলাম না । কোথা থেকে যেন একটা ভয় এসে আমাকে পেয়ে বসলো । আমার মনে হল যে আমার শ্রদ্ধেহ শ্বশুর মশাই যেকোন সময়ে এখানে চলে আসতে পারে । এবং আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে । পরদিন সকালেই আমি ঢাকাতে চলে এলাম ।
ঢাকাতে এসেও আমার মনের ভেতর থেকে ভয় গেল না । আমি এক ওঝার কাছে গিয়ে হাজির হলাম । ওঝা আমার বক্তব্য সম্পর্ন শুনে বলল, বিয়ে যখন হয়েছে তখন সে তোমার পিছু ছাড়বে বলে মনে হয় না ।
-তাহলে ? এখন আমার কী করনীয়?
-চিন্তা কর না । আমি তোমাকে কিছু জিনিস পত্র দিচ্ছি । এগুলো নিয়ে তোমার ঘরের চারিপাশে ছিটিয়ে দিবে । তাহলে কেউই আর তোমার বাসায় ঢুকতে পারবে না । আর এই তাবিজটা সব সময় তোমার কাছে রাখবে । তাহলে সে তোমার কাছে আসবে না ।
তারই করলাম । ঘরের চারিদিকে সেই পানি ছিটিয়ে দিলাম । তাবিজটাও সাথে সাথে রাখলাম । প্রথম কিছুদিন আমার মনে ভয় যেত না কিছুতেই । বারবাই মনে হত যেন এই এখনই আরিয়া কিংবা তার বাবা চলে আসবে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য । তবে একটা সময় সে ভয়টা কেটে গেল । দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে গেল । তারপরই ভয়টা আস্তে আস্তে কেটে গেল ।
আমি কেবিনে এসে ঢুকলাম । বুকের ভেতরে সেই ভয়টা আবারও ফিরে এসেছে । বারবার মনে হচ্ছে আমি এখন কী করবো? কী রা উচিৎ আমার?
তখনই দেখলাম আরিয়া আমার কেবিনে ঢুকলো । আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে । চোখে কোন রাগ নেই বরং সেখানে একটা অন্য রকম দৃষ্টি রয়েছে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে এসে আমি জড়িয়ে ধরলো । আমি কিছু বলতে পারলাম না । কারণ কিছু পরে আমি কেবল অনুভব করলাম যে মেয়েটা কাঁদছে ।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম আরিয়ার এই আচরনে ।
আমার বুকে মাথা রেখেই আরিয়া বলল, আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করতে পারি বল? কখনও না । তুমি আমাকে কেন ভয় পাও আমি জানি না কিন্তু আমি তোমার ক্ষতি করবো না । তবুও তুমি চাও না দেখে এতোদিন তোমার কাছে আমি আসি নি । কিন্তু ইদানীং তোমাকে এতো মনে পড়ে আমার যে আমি কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি ।
দেখলাম আরিয়া আমাকে ছেড়ে দিল । তারপর নিজের চোখ মুছলো । ওর চোখের রং ফিরে এসেছে । সবার সামনে যত সময়ে ছিল আরিয়ার চোখ কালো ছিল । দেখলাম আস্তে আস্তে সেটা আবার কালো হয়ে গেল । নিজেকে একটু সামলে নিতেই দরজাটা টোকা পড়লো । আযাদের ডাক শুনতে পেলাম । আমাকে ডাকছে । আমি আরিয়াকে রেখেই বের হয়ে গেলাম ।
তবে মন থেকে কিছুতেই আরিয়ার কথা গুলো বের করতে পারলাম না । সত্যিই তো আরিয়া তো আমার কোন ক্ষতি করে নি । বরং ও আমাকে রক্ষা করেছে । ও যদি না চাইতো তাহলে আমি হয়তো আজকে বেঁচে থাকতাম না । কিংবা আমার মাথা খারাপ হয়ে যেত । ঐ পর্যটকের মত । ও না চাইলে আমি হয়তো কোন দিন এই স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে আসতে পারতাম না । এই মেয়েটাকে আমি কেন ভয় পাচ্ছি ! আমি নিজের কাছেই খানিকটা লজ্জিতবোধ করলাম । অন্তত আরিকাকে ভয় পাওয়ার কি কোন দরকার ছিল আমার !
অফিস থেকে একাই বের হলাম । যদিও মনের ভেতরে একটা ইচ্ছে ছিল যে আরিয়াকে নিয়ে বের হব এক সাথে । কিন্তু প্রথমদিনই পরিচিত হয়ে যদি একসাথে অফিস থেকে বের হই তাহলে অনেকের চোখে সেটা স্বাভাবিক মনে হবে না । আরিয়া আরও কিছু সময় রয়ে গেল তার অফিসের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে। তবে আরিয়া ঠিকই আমার ধরে ফেলল । অফিস থেকে বেরিয়ে রিক্সা করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম, মাঝে এক সিগনালে অপেক্ষা করছি আর আরিয়ার কথা ভাবছি তখনই সে কোথা থেকে রিক্সায় উঠে এল । আমি খানিকটা চমকে উঠলেও সামলে নিলাম ।
-মিস মি?
আমি কোন জবাব দিলাম না । আরিয়া রিক্সাওয়ালাকে ঠিকানা বলে দিল । বাসার দিকে আমার আর যাওয়া হল না ।
আমার বাসার থেকে আরও কিছুটা দুরে আরিয়ার বাসা । বাসা বলতে একটা সুউচ্চ এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে ওর ফ্ল্যাট ! আমি ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হলাম । আরিয়া আমাকে একটা ঘর দেখিয়ে বলল, ঐ রুমে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও । আমি খাবার দিচ্ছি ।
কথা গুলো এতো স্বাভাবিক ভাবে বলল যেন আমি এখানে নিয়মিত আসি । ওর আচরনে কোন সংকোচ নেই, কোন ভনিতা নেই । আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি সেখানে আমার জন্য একটা আলাদা পোশাক রাখা রয়েছে । আরিয়ার সব কিছুর দিকে খেয়াল রয়েছে । অবশ্য খেয়াল থাকবে না কেন ! সে তো স্বাধারন কেউ না । আমি একটু সময় নিয়েই গোসল সারলাম ।
ফ্রেশ হয়ে ডাইয়িং এ আসতে আসতে দেখলাম টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে । আরিয়াকে দেখলাম না আশে পাশে । সম্ভবত এখনও গোসলে । তবে সে বের হয়ে এল একটু পরেই । ওকে দেখে খানিকটা খাবি খেলাম । ওর পরনে একটা লম্বা টিশার্ট দেখতে পেলাম কেবল । আর কিছুই সে পরে নি । ওর ফর্সা পরিস্কার পা আমি আগেও দেখেছি, আমাদের বিয়ের দিন ।
আরিয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, এই টিশার্ট টা চিনতে পারছো কি?
একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম । তারপর চিনতে পারলাম । এটা আমারই টিশার্ট !
-এটা তো আমার !
-হ্যা ।
-হারিয়ে গিয়েছিলো ।
-কেবল এটা না, এই ৭ মাসে তোমার মোট ১১টা টিশার্ট আর শার্ট হারিয়েছে । সব আমার কাছে !
আমি কেবল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
আরিয়া বলল, তোমার কাছে তো যাওয়ার উপায় তুমি বন্ধ করে রেখেছো, তাই এই শার্ট টিশার্ট গুলো নিয়ে এসেছি যখন সুযোগ পেয়েছি ।
আমি এবার সত্যিই একেবারে নির্বাক হয়ে গেলাম । কী বলবো কিছু খুলে পেলাম না । আমার মধ্যে এই মেয়ে কী এমন দেখলো ? এই ভাবে কেন একজন আমাকে ভালোবাসবে ? নিজেকে আমি যতটুকু চিনি বলতে পারি যে আই অলমোস্ট গুড ফর নাথিং । তাহলে...
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে আরিয়ার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে আমি রাতে বাসায় ফিরে যাবো তবে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আজকে রাতে বাসায় যাবো না । এখানে থাকি আরিয়ার সাথেই । বাসায় ফোন করে বলে দিলাম । মা যদিও নানা রকম প্রশ্ন করছিলো তবে শেষ পর্যন্ত মেনে নিলো । রাতের বেলা আমি আরিয়ার সাথেই ঘুমাতে গেলাম । ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম আরিয়া সেই আমাদের বাসর রাতের মত করে বিছানাতে বসে রয়েছে । ঘরের পরিবেশটাও আমার কাছে ঠিক তেমনই মনে হল । একই রকম তাপমাত্রা, সেই সাথে আলোর পরিমানও একই রকম । কেবল পার্থক্য আজকে ওর শরীর আমার টিশার্ট পরে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে সেই আগুন লাল চোখে । তবে আজকে আমার মোটেই এই চোখ দেখে ভয় লাগলো না । আমি ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম ।
তিন
আমি আমার হাত থেকে সেই তাবিজটা সরিয়ে ফেলেছি । আরিয়া যদিও বলছিলো সে এই তাবিজে সাধারন জ্বীনদের আটকানো যায় কিন্তু হিসাব মত সে হচ্ছে প্রিন্সেস । এই তাবিজ তার খুব একটা ক্ষতি করতে পারে না । তবে যে পানিটা আমি বাসায় ছিটিয়েছিলাম সেটা সবাইকে আটকাতে পারে । তারপরেও আমি তাবিজটা খুলে ফেললাম । আমার মনের ভেতর থেকে সব ভয় দুরে চলে গিয়েছিলো ।
তবে কদিনের ভেতরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি লক্ষ্য করা শুরু করলাম । আমি দিনে রাতে যেখানেই যাই না কেন সব সময় খেয়াল করতাম যে একটা কালো চিল আমার মাথার উপরে উড়লো । যেন আমার উপর সব সময় লক্ষ্য রাখছে । আমার মনে হল আরিয়াই সম্ভবত এমনটা করছে । সে আমাকে বলেছিলো আমি কোথায় যাই না যাই সব কিছুর উপর সে লক্ষ্য রাখে । আমাকে একদম চোখের আড়াল করে না ।
কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে আরিয়া আমার কাছে এসে খানিকটা রাগান্বিত কন্ঠে বলল, তুমি আবারও ঐ তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছো?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তারপর বললাম, কী বল এই সব ? আমি কেন যাবো?
আরিয়া আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে রইলো । একভাবে আমার চোখের দিকে । তারপর দেখলাম ওর চোখ শান্ত হয়ে এল । আমার কাছে এসে বলল, তুমি যাও নি । কিন্তু ....
এবার আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম । বললাম, কিন্তু কি?
-না মানে কদিন থেকেই দেখতে পাচ্ছি সময়ে সময়ে তুমি যেন কোথায় হারিয়ে যাও ।
-মানে?
-মানে হচ্ছে আমাদের যখন কারো সাথে সম্পর্ক তৈরি হয় তখন তাদের একটা প্রেজেন্স সব সময় আমরা অনুভব করি । সম্পর্ক বলতে যখন আমরা অন্য কারো সাথে মিলিত হই সেই কথা বলছি। জ্বীন সাথে জ্বীনের এই সম্পর্কটা বেশ শক্ত । মানে সব সময় আমরা বুঝতে পারি সে আছে । লাইক যখন তুমি সিমের ডাটা অন রাখো তখন নেটওয়ার্ক সব সময় জানে তুমি কোথাও আছে । এখন হঠাৎ করে যদি ডাটা অফ করে দিলে, কিংবা মোবাইল বন্ধ করে দিলে তখন সিস্টেম হঠাৎ করে তোমাকে হারিয়ে ফেলবে । মানুষের সাথেও আমাদের এই বন্ডটা তৈরি হয় । যদিও জ্বীনের যতটা শক্ত মানুষের সাথে এতোটা শক্ত হয় না তবে হয় ।
-তাহলে?
-গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছি তুমি যেন আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছো, ক্ষনে ক্ষনে হারিয়ে যাচ্ছো।
-কিন্তু আমি তো কিছু করি নি।
-বুঝতে পারছি।
-তাহলে?
আমি এই প্রথম আরিয়ার চোখে কেমন যেন একটা দুষ্চিন্তার ছাপ দেখতে পেলাম । আমার হঠাৎ কী যেন মনে হল বললাম, আচ্ছা আমি কদিন থেকেই লক্ষ্য করছি যে আমার দিকে কেউ যেন নজর রাখে। একটা পাখি ওড়ে সব সময় । রাতেরও বেলাও।
আরিয়া ঝট করে ঘুরে তাকালো আমার দিকে । তারপর বলল, তাই নাকি?
আমি খানিকটা শঙ্কিত কন্ঠে বললাম, হ্যা ।
-চিল?
-হ্যা ।
এবার দেখলাম আরিয়া একটু চিন্তিত হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, যাই হোক তুমি চিন্তা করো না । সব সময় হাতের কাছে মোবাইল রাখবে । সব সময় । আমি যেন একবার কল করেই তোমাকে পাই । মনে থাকবে তো ...
আরিয়া যেভাবে কথাটা বলল আমার সত্যিই একটু ভয় লাগলো । এমন কন্ঠে সে তো কোন দিন কথা বলে নি সে । আমি কি কোন বিপদে আছি? আমার মনের কথা যেন ও বুঝে ফেলল । তারপর বলল, ভয় পেও না । আমি থাকতে তোমার কোন ক্ষতি হতে আমি দেব না । বুঝতে পেরেছো ? এখন এদিকে এসো তো একটু । আদর করে দেই তোমাকে ।
আরও কয়েকটা দিন কেটে গেল কোন ঝামেলা ছাড়াই । তবে সেই চিলটা ঠিকই আমার সাথে সাথেই থাকতো সব সময় । তবে একদিন ঠিক ঠিকই বিপদ এসে হাজির হল । অফিসের কাজে আমি মুন্সিগঞ্জ এসেছিলাম । কাজ শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে দিতে রাত আটটা বেজে গেল । এই পর্যন্তও সব কিছু ঠিক ছিল কিন্তু যখন গাড়িটা একেবারে মঝপথে থেমে গেল । আমার মাথায় তখনও অন্য কিছু আসে নি । আমি গাড়ি থেকে বুঝার চেষ্টা করলাম যে কী হয়েছে ।
তখনই দেখলাম ফোন বেজে উঠলো । আমি ফোনের দিকে তাকাতেই দেখি আরিয়া ফোন করেছে । আমি রিসিভ করতেই ওর কন্ঠে কেমন যেন একটা উৎকন্ঠা শুনতে পেলাম । ও বলল, তুমি কোথায় ?
-এই তো ঢাকার দিকে আসছি ।
-সব কিছু ঠিক আছে?
-না মানে গাড়িটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল ।
-কী !
আরিয়া যেন চিৎকার করে উঠলো । কোথায় আছো তুমি ? একদম সঠিক লোকেশন বল আমাকে .... এখনই আমাকে জিপিএস লোকেশন পাঠাও এখনই....
-আরে বাবা পাঠাচ্ছি .....
কিন্তু এখনই দেখলাম সব রকম আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল । ফোনটা হাতে নিয়ে বেশ কয়েকবার নাড়াচাড়া দিলাম কিন্তু কোন লা হল না । সেটা কিছুতেই আর কাজ করলো না । আমি তখনই চারিপাশে লক্ষ্য করে দেখলাম যে চারিদিকে পরিবেশ কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে । একদম শান্ত । কোথাও কোন আওয়াজ নেই । আমার কাছে মনে হল আমি যেন অন্য কোন জগতে চলে এসেছি। অন্য কোথায়!
আমি সেই অন্ধকারের ভেতরে হঠাৎ তিনটা আলোর বিন্দু দেখতে পেলাম । দুইটা বিন্দু দেখলে ভাবতাম হয়তো কোন গাড়ি আসছে কিন্তু তিনটা লাল বিন্দু দেখে মনে হল অন্য কিছু । তিনটা বাইক কি?
কিন্তু না । আমার ধারনা ভুল ছিল । তিনটা আলোর বিন্দু আরও একটু কাছে আসতেই খেয়াল করলাম সেগুলো তিনটা থেকে ছয়টা হয়ে গেছে । তিনজোড়া চোখ ।
আমার দিকে এগিয়ে আসছে !
আমার মন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই ভয়টা আবার ফিরে এল সাথে সাথে । আরও একটু কাছে আসতে আমি ওদের দেখতে পেলাম । সেই প্রথম দিনের ভয়টা আমার মাঝে ফিরে এল সাথে । এরা আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে যে আসে নি সেটা আমার বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না । কিন্তু আমি সেই আরিয়ার স্বামী এটা জানার পরেও এরা আমার ক্ষতি করবে ?
আমার মনের কথা যেন ওরা বুঝতে পেরে একজন আমার মাথার ভেতরেই বলে উঠলো, তুমি আরিয়ার স্বামী এটা জেনেই তোকে আমরা মেরে ফেলবো।
-কিন্তু কেন?
-এসব জেনে তোর কী লাভ ?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না । দেখলাম একজন আমার সামনে চলে এল চোখের পলকে . তারপর এক হাত দিয়ে আমার গলা চেপে ধরলো । আমি নিজের দুই হাত দিয়ে সেই হাতটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু কোন কাজ হল না । বিন্দু মাত্র লাভ হল না । কেবল অনুভব করলাম যে আস্তে আস্তে আমার গলায় সেই শক্ত হাতটা বসে যাচ্ছে । আর খুব বেশি হলে কয়েক সেকেন্ড । তারপরেই আমার মৃত্যু হবে ।
আমি শেষ বারের মত কারো চেহারা মনে করার চেষ্টা করলাম । কারো চেহারা মনে এল না । কেবল আরিয়ার হাস্যজ্জ্বল মুখটা চোখের সামনে এল । কেবল মনে হল শেষ বারের মত যদি আরিয়াকে আর একবার দেখা যেত । মেয়েটা যখন জানবে আমি মারা গেছে তখন কী করবে কে জানে !
যখন মনে হল আর কোন লাভ নেই তখনই মনে হল সামনে দাড়ানো জ্বীনটা নড়ে উঠলো । তারপরেই আমি আমার গলায় চাপ থেকে মুক্তি পেলাম । সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে । মাটিতে পড়ে গেলাম । কিছু সময় সেখানেই পড়ে রইলাম । তবে আমার নাকে আর্তনাদ ভেসে আসছিলো ঠিকই ! মনে হচ্ছিলো যেন কেউ প্রবল মৃত্যু যন্ত্রনায় কাঁতরাচ্ছে ।
আমি যখন খানিকটা সামলে নিয়ে উঠে বসেছি তখন দেখতে পেলাম দুইটা জায়গাতে আগুন জ্বলছে । সেগুলো আর কিছু নয়, তিন জনের ভেতরে দুইজনের দেহ । অন্য জন মাটিতে পড়ে আছে । তার গলার উপর পা রেখে দাড়িয়ে আছে আরেকজন । সেও কালো আলখেল্লা পরা । আমাকে বলে দিতে হল না যে এই উপরে দাড়িয়ে থাকা জ্বীনটা কে !
-আরিয়া !
আমি কোন মতে ডাক দিলাম । দেখলাম সেই কালো অন্ধকার চেহারাটা আমার দিকে ফিরে তাকালো । চোখ দুটো আগুনের মত লাল । আমার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে । আমি আরেকটু এগিয়ে যেতেই আরিয়ার কন্ঠটা আমার মাথার ভেতরে ঢুকে বলে উঠছো, অন্য দিকে মুখ ফেরাও অপু ! ভয় পাবে।
আমি বললাম, পাবো না । ওকে ছেড়ে দাও...
-না । এর কোন ক্ষমা নেই । এতো বড় সাহস এ তোমার গায়ে হাত দিয়েছে ...
-প্লিজ ছেড়ে দাও .... আমি বলছি ছেড়ে দাও ...
কিছু সময় কেটে গেল কোন রকম আওয়াজ না করেই । তারপর দেখলাম পা টা সরিয়ে নিল । ছাড়া পেয়েও নিচে পড়ে থাকা শরীরটা উঠতে পারলো না । আরিয়া যখন আবার আমার দিকে তাকালো দেখতে পেলাম ওর মানুষ্য চেহারা ফিরে এসেছে । আমার কাছে এসে আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করলো । আমি বললাম, তুমি ঠিক আছো ?
-আমি ঠিক আছি । তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যা ।
আমার হাত ধরে সেই পরে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে বলল, তোকে কে পাঠিয়েছে আমি জানি । কেবল তাকে গিয়ে বলবি যে যতদুর পালিয়ে যাওয়ার যেন চলে যায় ।
তারপর আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে হাটা দিল ।
গাড়িতে চাবি মোচড় দিতেই গাড়ি চালু হয়ে গেল । আমি খুব বেশি অবাক হলাম না । সম্ভবত ওরাই কিছু করেছিলো । আরিয়া গম্ভীর মুখে বসে ছিল আমার পাশে । সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল । আমি ওর চেহারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম যে ও নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
আমি বললাম কী হল বল তো ?
-কী হল মানে?
-মানে তুমি আমাকে খুজে পাচ্ছিলে না কেন ?
-ওরা সম্ভব তোমার লোকেশন ট্রেসলেস করে দিয়েছিলো ।
-কী করম?
-তোমাদের মধ্যে তো জ্বীনে ধরা অনেক রোগী খবর শুনতে পাও, তাই না ?
-হ্যা ।
-তখন কোন হুজুর কিংবা ওঝা কী করে জানো? ওরা এমন একটা বেস্টনী সেই মানুষটার চারিদিকে দিয়ে দেয় যেটা করে সেই জ্বীনটা আর সেই মানুষটাকে খুজে পায় না । ওরাও ঠিক একই কাজ করেছিলো । তোমার চারিদিকে একটা বেস্টনী দিয়ে রেখেছিলো।
-তারপর ? আমাকে খুজে পেলে কীভাবে?
এই কথা বলার পরই দেখলাম আরিয়া আমার দিকে তাকালো । গভীর চোখে । দেখলাম ওর চোখের মনিটা আরও লাল হয়ে গেছে । তবে আমার কেন জানি মনে হল ও কাঁদছে । আরিয়া বলল, তুমি যখন মারা যাচ্ছিলাম তখন শেষ বারের মত আমাকে দেখতে চেয়েছিলে । সেটা এতোই তীব্র ছিল যে ঐ বেস্টনী ভেত করে বের হয়েছে । এটা হয়েছে কেবল মাত্র তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে । জানো আমার মনে একটু ভয় ছিল যে হয়তো কেবল ভয়ের কারণেই তুমি আমাকে ছেড়ে যাচ্ছো না । কিন্তু আজকের পরে সেটা ভয়টা দুর হয়ে গেছে ।
আমি গাড় দাড় করালাম । আরিয়া খুব গভীর ভাবে আমাকে চুমু খেল । তারপর বলল, আজকের পর থেকে তোমার উপর কোন বিপদ আমি আসতে দিবো না । আই প্রমিস !
আমি কথাটা বিশ্বাস করে নিলাম । সত্যিই আরিয়া এই কথাটা ঠিকই রাখবে ।
পরিশিষ্টঃ
কেটে গেছে আরও মাস খানেক । এই সময়ের মাঝে সপ্তাহ খানেক আরিয়া যেন কোথায় চলে গিয়েছে । তার কোন খোজ খবর নেই। অবশ্য বলে গিয়েছিলো আমাকে । আজকে অফিসে কাজ করছি এমন সময় পিয়ন এসে বলে গেল যে আমার সাথে এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছে । সে নাকি আসফিমা ম্যাডামের পরিচিত !
আসফিমা মানে আরিয়া ! সর্বনাশ ! আবার কেন ?
আমি প্রায় দৌড়ে হাজির হলাম ওয়েটিং রুমে । গিয়ে দেখি মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক বসে আছে । এই লোকটা কে ?
আমি কাছে যেতেই বলল, বস ।
কন্ঠে কর্তৃত্বের সুর স্পষ্ট । তবে সে মুখ খুলে কথাটা বলে নি । তার মানে স্পষ্ট । আমার সামনে বসা মানুষটা আরিয়ার পরিচিত ।
আমি বসলাম ।
-আমাকে চিনতে পারো নি?
মুখ না খুলেই ভদ্রলোক আবারও আমাকে প্রশ্ন করলো । এবং সাথে সাথেই আমি তাকে চিনতে পারলাম সাথে সাথেই ।
ইনি আরিয়ার বাবা । আমার শ্বশুর মশাই।
মানুষ হোক জ্বীন হোক সে তো আমার শশুর হোন । আমি উঠে গিয়ে সালাম করতে গেলাম । সে বলল, থাক থাক ।
আমি আবার বসলাম । তারপর বলল, এখানে যদি মুখ ফুটে কথা বলেন তাহলে ভাল হয় । বুঝতেই তো পারছেন ।
-হ্যা । বুঝতে পারছি । যাই হোক যে কারণে এসেছি । তুমি ঠিক আছো তো ? তোমার শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিয়েছি কি?
-দেওয়ার কি কথা !
-হ্যা সাধারনত দিয়ে থাকে । যাক নেই যখন ভাল । আমি এটাই দেখতে এসেছিলাম।
-আরিয়া কোথায়?
-আছে । তোমার কাছে চলে আসবে ।
-আপনি রাগ করেন নি এই যে আমি আর আরিয়া চলে এসেছি এখানে...
-প্রথমে একটু রাগ করেছিলাম । তবে এখন ওকে । নিজের মেয়েই তো । আর আরিয়া যা করেছে তাতে ওর উপর রাগ করে থাকা যায় না ।
-কী করেছে ও ?
তারপর আমার শ্বশুর মশাই যা বলল তাতে আমার চোখ কপালে উঠলো । আমাদের যেমন দেশ নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারটা বদল হয় আরিয়াদের নাকি বদল হয় । যদি কেউ বর্তমান শাসককে চ্যালেঞ্জ করে এবং পরাজিত করে তাহলে নাকি ক্ষমতা বদল হতে পারে । এমনই একটা দল নাকি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিলো । এবং সেই দল প্রধানের ছেলেই নাকি আমার উপর হামলা করেছিলো ।
এক জ্বীন নাকি অন্য দিনের উপরে আক্রমন করে না স্বাধারনত যদি না কোন অপরাধ করে । আমার উপর হামলার কারণেই আরিয়া একটা ইস্যু পেয়েছে । এবং বলা চলে সেই দল প্রধানের ছেলে সহ পুরো দলকেই সাফ করে দিয়েছে ।
আমি বললাম, কিন্তু ওরা আমার উপর হামলাই কেন করলো?
আমার শ্বশুর মশাই হাসলো । তারপর বলল, আসলে ঐ দল প্রধানের ছেলের সাথে আরিয়ার একটা বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো । কিন্তু আরিয়া মাঝখান থেকে তোমাকে বিয়ে করে । তাই তার রাগ ছিল । আজকাল আমাদের মাঝেও অনেকে এই বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করেছে বুঝেছো !
শ্বশুর মশাই আর বসলেন না । চলে গেলেন । আমি চুপচাপ বসেই রইলাম । আমার জীবনটা কি ছিল আর আর কি হয়ে গেল । তবে যা হয়েছে খারাপ হয় নি মোটেও !
-
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৫৪