somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ওয়ালপেপার

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিমুর সারা জীবনের ইচ্ছে ছিল এই রকম একটা বাগান বাড়ি হবে । বেশি বড় না, ছোট একটা । দুই তিনটা রুম থাকবে । একটা কিচেন থাকবে । আর থাকবে একটা বারান্দা । বর্ষা কালে প্রবল বৃষ্টির মাঝে বারান্দায় বসে বসে বৃষ্টি দেখবে । অথবা যখন প্রবল তুষার পাত হবে তখন ফারার প্লেসের পাশে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিবে আর কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে থাকিয়ে থাকবে । সেই রকমই একটা ইচ্ছে পূরন হয়ে গেল ওর । অপু যে ওর জন্য এই রকম একটা বাড়ি কিনে ফেলবে সেটা ও একদম ভাবতেই পারে নি ।

বাড়িটা শহর থেকে বেশ খানিকটা দুরে । আশে পাশে রিজার্ভ ফরেস্ট থাকলেও ওদের মত আরও বেশ কয়েকটা বাড়ি আছে আশে পাশে । ওদের বাড়িটা একেবারে সবার শেষে । বাড়িটা যে কেবল ওদের অবকাশ যাপনের জন্য তাও নয় । অপুর পরিকল্পনা আছে বাড়িটা সে ভাড়া দিবে । সব সপ্তাহে হয়তো এখানে আসা হবে না । তখন বাড়িটা ভাড়া দেওয়া হবে । মিমুর তাতে কোন আপত্তি নেই । ওর আসার সময় কাউকে ভাড়া না দিলেই চলবে !

আপাতত ওরা দুজন মিলে বাড়িটা গোছগাছ করে চলেছে । অপু পুরো আসবার পত্রের ভেতরে যেগুলো বাতিল সেগুলো বাইরে বের করার চেষ্টা করছে অন্য দিকে মিমু ঘর থেকে সব ওয়ালপেপার খুলে ফেলছে । পুরো বাড়িরটার দেওয়াল ওয়ালপেপার দিয়ে ঢাকা । ওরা ঠিক করেছে ওয়াপপেপার গুলো খুলে ফেলে নতুন করে দেওয়ালে রং করবে । হয়তো কিছু স্থানে প্লাস্টার করতে হতে পারে । সেটাও করবে ।

মিমুর দেওয়াল থেকে কাগজ গুলো ছাড়াতে বেশ মজাই লাগছে । কাগজ গুলো ঠিক কেমন যেন ! তবে দেওয়াল থেকে উঠাতে বেশ মজাই লাগছে । টান দিলেই উঠে আসছে আস্তে আস্তে । ওয়ালপেপার গুলো ছাড়িয়ে এক পাশে জড় করে রাখছে সে ।

মিমু কয়েকটা ওয়াল পেপার উঠিয়ে ফেলল খুব সহজেই । তারপরই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো সে । প্রতিটা ওয়ালপেপারের এক কোনায় একটা নাম লেখা আর একটা তারিখ লেখা । যেমন মাত্রই যে ওয়ালপেপারটা মিমু ওঠালো সেটার নাম এনি বেক্স । তারিখ লেখা ২২/০২/২০১১ । মিমু কিছু সময় তারিখ আর নামের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর কি মনে হল যে ফোন বের করে ওর নাম আর তারিখটা টাইপ করলো । একটু অবাক হয়েও লক্ষ্য করলো যে এনি বেক্স নামে কয়েকটা লিংক এসে হাজির হল গুগলে । এবং আরও অবাক করা ব্যাপার যেটা ধরা পড়লো সেটা হচ্ছে এনি বেক্স নামের একটা মেয়ে ঐ তারিখেই গায়েব হয়ে গিয়েছিলো ।

মিমু এবার একটু নড়ে চড়ে বসলো । সে ধীরে ধীরে সব গুলো ওঠানো ওয়ালপেপারে লেখা নাম আর তারিখ গুলো একটা কাগজে আলাদা ভাবে লিখলো । এবং একে একে সব গুলো গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলো । দেখতে পেল যে সব গুলো নামের মানুষেরাই মিসিং হয়েছে এবং তারা নির্ধারিত তারিখেই মিসিং হয়েছে । এবার মিমুর একটু ভয় পেয়ে গেল । এটা কি কোন কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে? একটা হয়তো মিলে যেতে পারে কিন্তু সব গুলো নাম আর তারিখ কিভাবে মিলে গেল !

অপু দেখাতেও সেও খানিকটা ভুরু কুচকে তাকালো । এবং সাথে সাথেই পুলিশকে খবর দেওয়া হল ।
এই বাড়িটা ওরা কিনেছিলো একজন এজেন্টের কাছ থেকে । বাড়ির আগের মালিক নাকি মারা গাছে বেশ কিছুদিন । তার কোন উত্তরসূরি না থাকায় সরকার সেই এজেন্টকে বাড়ি বিক্রির দায়িত্ব দেয় । সেখান থেকে বাড়িটা কিনে নিয়েছিলো ওরা ।

পুলিশ এল কিছু সময় পরে । তারপর পুলিশের টিম পুরো বাড়িটা পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো । দেওয়াল গুলো পরীক্ষা করছে । মিমু দেখলো তারা কেমন গম্ভীর হয়ে কি যেন আলোচনা করছে । এরপরই মাঝে একজন বলল, হ্যা এটা মানুষেরই !
মিমু ঠিক বুঝতে পারলো না । মানুষের বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছে । একজন অফিসার এসে মিমুর দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাম, আপনি যে ওয়ালপেপার গুলো খুলেছেন সেগুলো কোথায় ?
মিমু হাত দিয়ে বাইরের বারান্দা দেখিয়ে দিল । সব ওয়ালপেপার গুলো ওখানেই রাখা । অফিসারটি বলল, আপনি যেগুলো ওয়াপপেপার ভাবছেন আসলে সেগুলো ওয়ালপেপার না ! কাগজের তৈরি না ।
বিস্ফারিত চোখে মিমু বলল, তাহলে?
অফিস একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, ওগুলো মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি !

মিমুর মাথাটা ঘুরে উঠলো । আরেকটু হলে হয়তো মাথা ঘুরে পড়েই যেত তবে অপু ওকে এসে ধরে ফেলল। মিমু অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এখনই এখান থেকে চল । আমি এখানে একদমই থাকতে চাই না । একদম না । আমার দরকার নেই এই বাগান বাড়ির !



(গল্প উৎস ইউটিউব, একটি অডিও স্টোরী থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×