পিয়ন লোকটি আমাকে এসে বলল, ম্যাডাম তো একটু কাজে আটকে গেছে । আপনাকে একটু বসতে বলেছে ।
আমি বললাম, আচ্ছা । কত সময় বসতে হবে ? বেশি দেরি হবে কি ?
-না না । এই আধা ঘন্টা । ম্যাডামের ডিউটির সময় শেষ হয়ে এল বলে ।
আমি বললাম, আচ্ছা আমি অপেক্ষা করছি ।
আমি মোবাইল বের করলাম । সুদৃশ্য প্রাইভেট হাসপাতালের ওয়েটিং রুমটা বেশ চমৎকার । আমি ছাড়া আপাতত এখন আর কেউ নেই এখানে । মনটা খানিকটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে । ঠিক বুঝতে পারছি না ডাক্তার মীরাকে আমি কি বলবো ! হয়তো আমার কথা শুনে উনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে যাবে । বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু একবার উনার সাথে কথ বলাটা আমার জরূরি মনে হল ।
ডাক্তার মীরা অবশ্য আমাকে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করালো না । পনেরো মিনিটের মাথায় এসে হাজির হলো । আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, বেশি অপেক্ষা করিয়েছি কি ?
-না না । সমস্যা নেই । আমিই কাজের সময়ে এসেছি ।
মীরা বলল, এখানে বলবেন নাকি অন্য কোথাও ?
-আপনার যেখানে সুবিধা হয় ।
-তাহলে আসুন আমার কেবিনে ।
এই বলে তিনি হাসপাতালের ভেতরে হাটা দিল । আমি খানিকটা ইতস্তত করে মীরার পেছনে হাটা ধরলাম ।
কেবিনে বসতে বসতেই মীরা বলল, বলুন কি সমস্যা । আপনার মায়ের শরীর কি ভাল আছে ?
-হ্যা হ্যা ভাল ।
-পেশারটা এখন কি স্টেবল ?
-হ্যা । সব ঠিক আছে ।
-তাহলে ? অন্য কোন ব্যাপার ?
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । কথাটা কিভাবে তুলবো সেটাও বুঝতে পারছি না । তারপরেও বললাম, আপনি গত সপ্তাহে আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন ।
মীরা হাসলো । বলল, জি গিয়েছিলাম ।
-আসলে আমার মা বেশ হাসিখুশি আর চঞ্চল ধরনের মানুষ । সব সময় কথা বার্তা বলে । কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সে একদম চুপ মেরে গেছে । তার এই আচরণে আমি বাবা আর আমার ছোট বোন সবার কাছেই খানিকটা অস্বাভাবিক । বুঝতে পারছি না কি করবো ! রিমি বলল যে আপনি মায়ের সাথে কথা বলে যাওয়ার পর থেকেই সে একদম চুপ হয়ে গেছে । আসলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে আপনাদের মাঝে এমন কোন কথা কি হয়েছিলো ? মানে আপনি কি মাকে তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এমন কোন কথা বলেছেন যেটা নিয়ে সে এমন আচরন করতে পারে । প্লিজ আমাকে বলুন !
একবারে অনেক কথা বলে আমি চুপ করলাম । একটু দম নিলাম । মীরা আমার কথা শুনে কি বলবে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। মীরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমি জানতাম আপনি আসবেন ।
-তারমানে আপনি আচ করতে পারেন যে সে কেন এমন আচরন করছে?
-খানিকটা।
-আমাকে বলুন প্লিজ !
মীরা একটু হাসলো । তারপর বলল, আমি বরং আপনাকে দেখাই । ঠিক আছে? আপনার হাতে কি এখন কাজ আছে কোন ? না থাকলে চলুন আমার সাথে ।
ঘড়িতে সময় দেখলাম বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে । অফিস থেকে আজকে আমি একটু আগে আগেই বের হয়েছিলাম এখানে আসার জন্য । আপাতত এটা ছাড়া আর কোন কাজ নেই । বললাম, কোথায় যেতে হবে ?
-ভয় পাবেন না । আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি না ।
গাড়িটা যখন বাসার ভেতরে ঢুকলো আমি তখনও বুঝতে পারলাম না যে কার বাসায় আমি এসেছি । সময়টা সন্ধ্যা । এই সময়ে কার বাড়ি নিয়ে এল কে জানে ! আর কেনই বা নিয়ে এল । লিফটে উঠতে উঠতে আমি জানতে চাইলাম, কার বাসা এটা ? মানে কার বাসায় যাচ্ছি ?
মীরা বলল, আমার বাসা ?
-আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না ।
-বুঝবেন । বাসায় চলুন । তাহলেই বুঝবেন !
কলিং বাজার একটু পরে একজন দরজা খুলে দিল । কাজের মেয়ে সম্ভবত । মীরা আমাকে সোফাতে বসার ইঙ্গিত করে বলল, বসুন !
আমি বসলাম । মীরা কাজের মেয়েটিকে বলল, আম্মু কোথায় ?
-রান্না ঘরে ।
মীরা ঘরের ভেতরে না গিয়ে আমার সাথেই দাড়িয়ে রইলো । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে কি হচ্ছে ? মীরা আমাকে এখানে কেন ডেকে আনলো !
মীরা একটু গড়া উচু করেই বলল, আম্মু এদিকে এসো তো ! একজন তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে ! তোমাকে বলেছিলাম !
একটু দুর থেকেই আমি শুনতে পেলাম কণ্ঠস্বরটা । আসছি !
মীরা আমার দিকে একবার তাকালো । তার চোখ যেন কিছু বলতে চাইছে । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারছি না কিছু ।
ভেতরের ঘর থেকে কারো গলার আওয়াজ পেলাম আমিম । এগিয়ে আসছে সে । যখন বসার ঘরে সে ঢুকলো আমি চমকে উঠলাম ! আপনা আপনিই আমি উঠে দাড়ালাম । আমার চোখের পলক পড়া বন্ধ হয়ে গেল । মীরা আম্মু দেখতে হুবাহু আমার নিজের মায়ের মত । মাথার চুলে একটু মেহেদী রং করা কেবল । পাকা চুল ঢাকার জন্য রং মেহেদী দেওয়া হয়েছে । আমার মায়ের এই দিকে অল্প একটু সাদা চুল । এই যা পার্থক্য ! আমি কেবল অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েই রইলাম ।
মীরার আম্মু বলল, কে এটা ?
মীরা বলল, আমার বন্ধু । ভাবলাম যে আজকে বাসায় নিয়ে আসি । ঐদিন ওদের বাসায় গিয়ে চা খেয়ে এসেছি । ঐ বললাম না !
-ও হ্যা হ্যা মনে পরেছে ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো বাবা তুমি ?
আমি কোন মতে বললাম, জি ভাল আছি । আপনার শরীর ভাল ?
-এই ভাল । এই বয়সে আর ভাল থাকা !
এই বলে মীরা আম্মু হাসলো । একদম অবিকল আমার মায়ের মত হাসি । আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । মীরা বলল, আম্মু একটু চা করে নিয়ে আসো প্লিজ
-আচ্ছা আচ্ছা নিয়ে আসছি । তোরা বসে গল্প কর ।
মীরার আম্মু চলে যাওয়ার পরে মীরা আমার তাকিয়ে বলল, আপনার প্রশ্নর উত্তর পেয়েছেন কি ?
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
মীরা আমার দিকে তাকিয়ে আবারও হাসলো । বলল, একটু বসুন আপনি । আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি । তারপর আমাকে আর কিছু কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘরের ভেতরের দিকে হাটা দিল । আমি চুপ করে বসে রইলাম কেবল । আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । শুনেছি পৃথিবীতে একজন মানুষের মত দেখতে সাতজন মানুষ থাকে । তাই বলে এমন ভাবে একই রকম হুবাহু দেখতে হবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি !
রাতে ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল বটে । যখন মীরাদের বাসা থেকে বের হচ্ছি তখন প্রায় এগারোটা বাজে । মীরা মা কোন ভাবেই আমাকে রাতে না খাইয়ে আসতে দিবে না । সিএনজিতে করে যখন বাসার দিকে আসছিলাম তখন আমার পুরো মনে কেবল মীরার বাড়ির ঘটনা গুলো ভাসতে লাগলো । সত্যিই ই এমন হতে পারে ? এমন ঘটনা কেবল গল্প উপন্যাসেই হয় জানি কিন্তু আমাদের জীবনেও এমন কিছু হবে আমি কোন দিন ভাবতে পারি নি ।
সন্ধ্যার কিছু পরেই মীরার বাবাও এসে হাজির হয়েছিলেন। আমি মীরার বন্ধু শুনে বিপুল উৎসাহে আমার সাথে গল্প শুরু করে দিলেন । খুবই স্বাভাবিক ভাবে আচরন করলেন । এমন কি আমাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলেন না যে আমরা কেমন বন্ধু । বোঝাই যাচ্ছে যে মেয়ের উপর তাদের ভাল ভরশা আছে । যাকে তাকে তার মেয়ে বাসায় নিয়ে আসবে না ।
একটা সময় পরে মীরা আমাকে নিয়ে ওর ঘরে গিয়ে বসালো । আমার কাছে খানিকটা অস্বাস্তিই লাগছি বটে ! মীরার সাথে আমার পরিচয় সব মিলিয়ে দুই কি তিন দিন হবে । আমি মাকে নিয়ে মীরার চেম্পারে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম । সেখানে একদিন দেখেছি । একদিন মীরা আমার বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলো । আর আজকে আমি আবার ওর সাথে দেখা করতে এলাম । এর পরিচয়ে ও খুব স্বাভাবিক ভাবে আমাকে ওর ঘরে নিয়ে বসালো এটা দেখে একটু অবাক লাগলো । তবে সেই কারণটা আমি বুঝতে পারলাম একটু পরেই । মেয়েরা কেবল তাদেরকেই নিজেদের ঘরে নিয়ে বসায় যাদেরকে তারা নিরাপদ মনে করে । মেয়েদের ঘর মেয়েদের নিজেদের জায়গা । এখানে সবাই ঢুকতে পারে না । আমাকে সে কেন নিরাপদ মনে করছিলো সেটা একটু পরেই আমি বুঝতে পারলাম । মীরা নিজের গল্প শুরু করলো ।
করিম গঞ্জের আছিয়া বেগমের ৫ মেয়ে হয়েছিলো পরপর । আছিয়া বেগমের স্বামীর অবশ্য এনিয়ে খুব একটা রাগ কিংবা অসন্তুষ্টি ছিল না । তবে তার একটা ছেলের শখ ছিল বটে । তিনি ছিলেন পুলিশের বড় দারোগা । এছাড়াও তার বাবার ছিল জমিদারি। টাকা পয়সার অভাব ছিল না কোন কালে । সন্তান মানুষ করতে তার সমস্যা ছিল না । পরপর পাঁচটা মেয়ে হওয়ার পরেও সে চেয়েছিলো তার একটা ছেলে হোক ।
ছয়বারের বারের বারও তার মেয়েই হল । তবে যে কথাটা কেউ জানলো সেটা হচ্ছে ষষ্ঠবার তার জমজ মেয়ে হল । হাসপাতালে আছিয়া বেগমের পাশের বেডের পেসেন্ট তখন মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে । বাইরে তখন প্রবল ঝড় হচ্ছে । হাসপাতালে তখন আছিয়া বেগমের কাছের মানুষ বলে কেউ নেই । ডাক্তার বলেছিলো সন্তান আসতে আরও কয়েক দিন বাকি আছে । তাই চিন্তা নেই কোন । বাড়ির লোকজন তাই খুব বেশি চিন্তা করে নি । হাসপাতালের কাছেই তাদের বাড়ি ছিল । হাসপাতালের লোকজনের বলা ছিল যে দরকার হলেই যেন তাদের ডাক দেয় । তারা চলে আসবে । আর এতোবার মা হওয়ার ফলে সন্তান প্রসব করাটা আছিয়া বেগমের কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছিলো । এটা নিয়ে কারো মনেই কোন ভয় কিংবা দুষ্চিন্তা ছিল না । আর আছিয়া বেগমও খুব একটা চিন্তা করে নি ! কিন্তু যখন নিজে জমন কন্যা জন্ম দিলেন তখন একটু মন খারাপ হল বটেই । তার স্বামীর একটা ছেলের সখ । কিন্তু এইবারও তার মেয়েই হল । তাও আবার দুইটা ।
তখনই পাশের বেডের মহিলা তার কাছে এসে হাজির হলেন । সাথে এক বৃদ্ধ আর হাসপাতালের নার্সটি । হাসপাতালের বাইরে তখন ঝড় বয়ে চলছে । মহিলাটি তার কাছে হাত জোর করে বললেন যে এই নিয়ে পরপর তিনবার সে মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে ! স্বামীর বাসা থেকে তাকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে যে এইবারও যদি মৃত সন্তান হয় তাহলে সে তাকে তালাক দিয়ে দিবে । আছিয়া বেগমের তো ৫ মেয়ে আছেই । এখনও আরও দুইটা । একটা তাকে দিয়ে দিক । তারপর খুব ব্যকুল হয়ে কাঁদতে থাকলো ! বৃদ্ধ মহিলাটি সম্ভবত মেয়েটির মা । তার চোখেও পানি এমনি নার্স মেয়েটিও কাঁদছে । আছিয়া বেগম তখন রাজি হবেন না কোন ভাবেই । শত হোক নিজের সন্তান বলে কথা । কিন্তু ভোরের আজানের সময় আছিয়া বেগমের কি মনে হল সে রাজি হয়ে গেল । একটা সন্তান মেয়েটিকে দিয়ে দিল । তারপর তাকে বলল যে যে যেন এই আশা পাশের এলাকা থেকে ছেড়ে চলে যায় । কারন যদি কোন দিন তার সাথে আছিয়া বেগমের দেখা হয়ে যায় সেদিন হয়তো নিজেকে সে ধরে রাখতে পারবে না । আবার নিজের মেয়েকে ফেরৎ নিয়ে নিবে ! আছিয়া বেগমের সাথে সেই মহিলার আর কোন দিন দেখা হয় নি ।
আমি গল্প শুনে কিছু সমট চুপ করে রইলাম । আমি জীবনে কত গল্প পড়েছি । পাশাপাশি হাসপাতালের বেড । একজনের দুটো সন্তান হল অন্য জনের মৃত বাচ্চা তারপর মহান মহিলা তার একটা বাচ্চা দিয়ে দিল ! বাংলাসিনেমাতে এই দৃশ্য খুবই পরিচিত । ৫টা মুভি দেখলে তার ভেতরে একটার কাহিনী এমন হয় ! এই ঘটনা দেখি আমার নিজের সাথেই হচ্ছে । ঠিক আমার সাথে না তবে চোখের সামনে তো হচ্ছে ! এটা কি বিশ্বাস করার মত? কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি সেটা বিশ্বাস না করে উপায় কি ?
মীরা বলল, এই আছিয়া বেগম হচ্ছেন আমার নানী । বছর দুয়েক আগে তিনি মারা গেছেন । আমাদের সাথেই থাকতেন । আমাকে কেন জানি আমার সব কাজিনদের ভেতরে বেশি আদর করতেন । রাতের বেলা মাঝে মাঝে আমার বিছানায় এসে ঘুমাতেন আমার সাথে কুটুর কুটুর করে গল্প করতেন ! শেষ সময়ে এসে তিনি আমাকে এই গোপন কথাটা বলে যান । আমি কাউকে বলি নি এতোদিন । কিন্তু ঐদিন আপনাকে যখন আপনার মায়ের সাথে আমার চেম্বারে ঢুকতে দেখলাম, অবাক না হয়ে পারলাম না । আপনার মাকে না বলে পারলাম না ঘটনা টা ! জানি না কাজটা ঠিক হল কি না ! হয়তো এতো দিন পরে এই সত্যটা খালামনি সম্ভবত স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে নি !
মীরা আমার আম্মুকে খালামনি ডাকলো । সে নিশ্চয়ই তার মায়ের অন্য সব বোনদেরও এমন ভাবেই খালামনি বলে ডাকে । আর আমি তার কাজিন ব্রাদার হই । আমাদের বয়সটা প্রায় কাছাকাছিই হবে । শুনেচি যমজ সন্তানদের ছেলে মেয়েদের মাঝেও মিলটা স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশিই থাকে । এই কারনেই সম্ভবত মীরা আমার উপর বিশ্বাস খুব জলদি স্থাপন করতে পেরেছে ।
মীরা একটু থামলো । তারপর আবার বলল, অথবা খালামনি হয়তো নানীর উপর খুব রাগ করেছে । তার কারণেই সে তার বোনের আদল ভালবাসা থেকে বঞ্চিত থেকেছে ! কিন্তু আমি বলবো সেদিন এক মা আরেক মায়ের জীবন রক্ষা করেছিলো । সেই সময়ে স্বামী যদি কোন মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দিতো তখন তার বুঝি মরন ছাড়া আর কোন উপায় থাকতো না !
আমি বললাম, নাহ ! মায়ের অভিযোগ থাকার কথা না ।
মীরা আমার দিকে ফিরে তাকালো । আমি বললাম, আমার এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত আমার নানীকে আমি দেখেছি । ঐ বৃদ্ধ বয়সেও নানী যে আমার মাকে কি পরিমান আদর করতেন সেটা চোখে পড়ার মত । আমি আর আমার বোন প্রায়ই আমার মাকে এই অভিযগো করতাম যে সে তার মায়ের গুণ মোটেই পায় নি । আমাদের কে বেশি আদর করে না ! হা হা হা !
মীরা হাসলো ।
আমি বললাম তবে সময় এখনও চলে যায় নি । মাকে একদিন নিয়ে আসি এই বাসায় ?
-উহু ! আনতে হবে । বরং আমি একদিন আপনাদের বাসায় নিয়ে যাই সবাইকে । দেখার মত একটা দৃশ্য হবে বটে ! সামনের মা দিবসেই একটা সারপ্রাইজ গিফট দেওয়া যাবে !
পরিশিষ্টঃ
মীরা আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে । আমাদের ঘরের ড্রয়িং রুমটা একটা আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
পরিকল্পনা মত মীরা তার মা আর ৫ খালামনি সহ আমাদের বাসায় এসে হাজির হল । প্রথম কিছু সময় তারা কেবল আমার মায়ের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো । তারপর সবাই এসে মাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না জুড়ে দিল । এই দিনের মায়েদের জন্য এর থেকে বড় উপহার সম্ভবত আর কিছুই হতে পারে না !
মীরা সাথে সাথে আমিও দৃশ্যটার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলাম । কোনদিনই কান্নাকাটি আমার একদমই পছন্দ ছিল না । কেন জানি আমার কাছে দৃশ্যটা বড় মধুর মনে হল !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪