বিল্টুর শরীরটা সকাল থেকে কেমন যে ম্যাজ ম্যাজ করছে । সে নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখলো । তার মনে হল যেন একটু শরীরটা গরম গরম ঠেকছে । করোনা হল না তো আবার ?
অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত হল না সে । দেশ আজ অনেক উন্নত । ১৯০৯ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় । আমাদের আছে সাবমেরিন আর আছে স্যাটেলাইট । এতো এতো উন্নয়ন হয়েছে যে দেশে করোনা নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই । আর সরকার থেকে তো বলাই হয়েছে যে তারা প্রস্তুত রয়েছে । তাদের কাছে সব সময় প্রস্তুতি সামগ্রি উপস্থিত । তাদের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই সম্পন্ন হয়েছে বলেই রিলাক্স মুডে তারা সেদিন আতশবাজির উৎসব করতে পেরেছিলো । পরীক্ষার সব পড়া রিভাইস দেওয়া শেষ হয়ে গেল যেমন মাথাটা একটু হালকা করার জন্য মানুষ মুভি দেখে, গান শুনে, ঠিক সেই রকম । পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল সেদিন !
যাই হোক, বিল্টু ফোনটা হাতে তুলে নিল । হেল্প লাইনে ফোন দিল । একবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হয়ে গেল ।
-শুভ সকাল । আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
বিল্টু বলল, শুভ সকাল । আজকে সকাল থেকেই আমার শরীরটা কেমন যেন একটু গরম গরম মনে হচ্ছে ।
-আচ্ছা, আপনার কি ঠান্ডা আছে ?
-একটু আছে ।
-কাশি ?
-সেটাও অল্প অল্প আছে ।
-আপনার ঠিকানাটা বলুন প্লিজ । আমাদের এজেন্ট আপনার বাসায় গিয়ে হাজির হবে । আপনার নমুনা সংগ্রহ করবে । এই সময়ে আপনি নিজেকে ঘরের ভেতরে সেল্ফ কোয়ারেন্টানে রাখুন !
-জি অবশ্যই ।
বিল্টু ফোন রেখে দিল । নিজেকে ঘরের ভেতরে সে অনেক আগে থেকেই আলাদা করে রেখেছে । এটা নিয়ে চিন্তা নেই ।
ঘড়ির দিকে তাকালো । সকাল এরারোটা । এখনই ওর অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে সবাই ঘর থেকে কাজ করা শুরু হয়েছে । দেশটা অনেক আগেই ডিজিটাল হয়ে উঠেছে । দক্ষ আইটি সেক্টর গড়ে উঠেছে । দেশ ডিজিটাল হয়ে ওঠার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে । দেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তরের মানুষ গুলো এখন ঘর থেকে তাদের দপ্তর সামলাচ্ছে । অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও পারতপক্ষে দেশ পরিচালনা বন্ধ হয় নি । সব কাজ চলছে আগের মতই । বিল্টুর ক্লাসে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও অনলাইনে ক্লাস চলছে নিয়মিত । স্কুল কলেজ বন্ধ তবে পাঠ্যদান বন্ধ নেই । ডিজিটাইজেশনের এই এক খেল । মানুষ যেখানে খুশি যেমন খুশি সেবা নিতে পারে । সকলের বাসায় বাসায় পৌছে যাচ্ছে শিক্ষা । ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার কোন ক্ষতি হচ্ছে না ।
বিল্টুর অনলাইন ক্লাস শেষ হতেই এজেন্ট এসে হাজির হল । প্রটেক্টিভ স্যুট পরা এজেন্ট দেখতে অনেকটাই এপোলো এগারোর এস্ট্রোনটের মত মনে হল বিল্টুর কাছে । তারা এসে বিল্টুর শরীর বেশ কিছু সময় পরীক্ষা করলো । তারপর নমুনা সংগ্রহ করে চলে গেল । যাওয়ার আগে তাকে জানালো যে তাকে আরও কিছু সময় সাবধানে থাকতে হবে । বাইরে বের হওয়া যাবে না ।
করোনা হামলা করলেও সব কিছু এখনও সরকারের নিয়ন্ত্রনেই আছে । নিন্ম আয়ের মানুষ গুলোর যদিও এখন কোন কাজ নেই তারপরেও সময় মত তাদের বাসায় খাবার সরবারহ নিশ্চিত করেছে সরকার । সময় মত সকলের হাতে হাতে পৌছে যাচ্ছে ত্রান সরবারহ । যদিও কারো কাছে পৌছাচ্ছে না, তারা ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই সরকারী এবং সরকার দলীয় জন প্রতিনিধির দল সেখানে পৌছে যাচ্ছে । নির্বাচনের মধ্যমে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা সবার আগে মানুষের সাহায্য এগিয়ে আসছে । দেশের মানুষ বুঝতে পারছে যে ২০১৯ সালের সুষ্ঠ এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনীধিরা সত্যিই জনগনের জন্য নিজেদের প্রাণকে উৎসর্গ করে দিচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও, তারা সব সময় মাঠে রয়েছে । দেশের জনগনের কখন কি দরকার সেটা তাদেরকে সময় মত পৌছে দেওয়া হচ্ছে ।
বিল্টু গতদিন দেখতে পেল যে এলাকার কমিশনার তাদের এলাকার প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোজ নিচ্ছে তাদের কিছু দরকার কি না । গত কাল এসেছিলো এই এলাকার এমপি । বিল্টুর মন খুব ভাল হয়ে গিয়েছিলো । এতো জনদরদী মানুষ জনের হাতে দেশের দায়িত্ব দেখে । বিল্টু ঠিক করেছে বড় হয়ে সেও এই দলের একজন কর্মী হবে ।
বিকেল বেলাতেই রিপোর্ট এসে হাজির হল জানা গেল বিল্টুর করোনা পজেটিভ । বিল্টু অবশ্য খুব বেশি চিন্তিত হল না । সারা দেশের ৬৪টা জেলাতে ১০০টার বেশি করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে । স্কুল কলেজ আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । প্রতিটি জেলার সরকারি কলেজ গুলির ক্লাস রুম গুলো বানানো হয়েছে করোনা ইউনিট । সেখানে পর্যাপ্ত করোনা বেড, ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । ডাক্তারদের পিপিই এবং জীবন রক্ষাকারী সকল সরঞ্জাম অনেক আগে থেকেই পৌছে দেওয়া হয়েছে । দেশের সকল চাহিদা পূরন করে বাইরের দেশেও সাহায্য পাঠানো হচ্ছে ।
বিল্টুকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল । তাকে নিয়ে যাওয়ার আগে পুরো বাড়ি লক ডাউন ঘোষণা করা হলে । বাড়ির সবার টেস্ট জরুরী এখনই । সেটা আগে করা হবে । তারপর যারা যারা পজেটিভ আসবে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে । এবং পুরো বাড়িটাকে জীবানু মুক্ত করা হবে ।
এদিকে হাসপাতালে ডাক্তারেরা তার দেখাশুনা করতে শুরু করলো । মাত্র ৫ দিনেই বিল্টু সুস্থ হয়ে ফিরে এল বাসায় । গাড়িটা বিল্টুকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল । বিল্টু এতোই আনন্দিত ছিল যে সে একটু দ্রুত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গেল । তখনই পা ফসকে গেল তার । মুখ থুবড়ে সে উল্টে পড়লো সিড়ির উপরে । তারপর.... তারপর বিল্টুর ঘুম ভেঙ্গে গেল । বিল্টু এতো সময় স্বপ্ন দেখতেছিলো !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৪