আগের পর্ব
পাঁচ
রিসিপশনের মেয়েটা নোরার দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখ করে বলল,ম্যাম আপনার কি কোন এপোয়েন্টমেন্ট করা আছে ?
নোরা আছে মাথা ঝাকিয়ে জানালো যে ওর কোন এপয়েন্টমেন্ট করা নেই । সাথে সাথেই নোরার মনে হল মেয়েটা বিরক্ত হল খুব । এতো অফিসের মানুষ আসছে যাচ্ছে, তাদের দম ফেলার সময় নেই । তার ভেতরে একজন উটকো ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে ।
আদনান চৌধুরীর সাথে দেখা করতে চাই । আরে আদনান চৌধুরী কি যেনতেন মানুষ নাকি ! যে এসে বললাম আর দেখা হয়ে গেল !
নোরার এই ব্যাপারটা আগেই ভাবা দরকার ছিল । এমন হুট করে চলে আসাটা মোটেই উচিৎ হয় নি । অবশ্য আজকে ওর এখানে আসার পেছনে একটা কারন রয়েছে । নিজের জন্য ও এখানে আসে নি । এসেছে অন্য একজনের জন্য । তার পরেও এভাবে আসাটা উচিৎ হয় নি । আদনান চৌধুরীকে সে চেনে কিংবা আদনান তাকে চিনে সেটা এই মানুষ গুলোর কোন ভাবেই জানার কথা না । নোরা বললেও তারা বিশ্বাস কেন করবে ?
মেয়েটা বলল, দেখুন ম্যাম এই ভাবে তো এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া আদনান স্যার কারো সাথে দেখা করেন না ! আর এই ভাবে ফোন করা যাবে না । উনি খুব রাগ করবেন !
নোরা কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো চুপ করে । সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে মেয়েটা খানিকটা বিরক্ত হচ্ছে ওর এভাবে দাড়িয়ে থাকা নিয়ে । তবে সেই মেকি হাসি হাসি ভাবটা এখনও লেগে আছে । এটা সব সময় থাকবেই ।
নোরা বলল, আচ্ছা আদনানের সেক্রেচারি কামালকে কি একটা ফোন দেওয়া যায় ? ওকে কেবল বলুন যে নোরা এসেছে । আমার নাম বললেই হবে !
রিসিপশন মেয়েটা এবার নোরার দিকে একটু ভাল করে তাকালো । কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করছে । তাদের বসকে এভাবে নাম ধরে ডাকাছে এটা খুব একটা স্বাভাবিক মনে হল না মেয়েটার কাছে । নোরা সেটা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো । তবে মেয়েটা ঠিকই ফোনটা হাতে নিলো ।
নোরা শুনতে পেল মেয়েটা বলছে, জি স্যার ! নাম বলছে নোরা !
কিছু সময় নিরবতা ! তারপর মেয়েটা বলল, জি স্যার জি..... জি ! জি আচ্ছা !
মেয়েটা ফোন রেখে নোরার দিকে তাকালো । ততক্ষণে মেয়েটার মুখের ভাবটা বেশ বদলে গেছে । নোরার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ ! আপনাকে নিতে লোক আসছে ! আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে আপনি আদনান স্যারের বন্ধু ! দয়া করে কিছু মনে করবেন না !
নোরা হাসলো একটু । তারপর ফিরে গিয়ে বসলো সোফার উপর !
তবে কিছু সময় পরে নোরা সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেল যখন দেখতে পেল স্বয়ং আদনান চৌধুরী নিচে নেমে এসেছে ওকে রিসিভ করার জন্য । নোরা অবশ্য এটা আশা করে নি । আদনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আরে আপনি আসবেন আমাকে বলবেন না ?
নোরা একটু হেসে বলল, ফোন নাম্বার নেই তো আমার কাছে ?
-কি বলেন ! দেই নি আপনাকে ?
-জি না !
-খুব ভুল হয়ে গেছে দেখছি । যাক সমস্যা আসুন প্লিজ !
রুমের ভেতরে নোরা আর আদনান ছাড়াও আরও কয়েকজন মানুষ রয়েছে । কামালও ছুটে এসেছিলো আদনানের পেছন পেছন । রিসিপশনের মেয়েটা আর গার্ডদের দুইজন অবাক হয়ে দেখছিলো তাদের আদনান স্যারকে । এতো নমনীয় কন্ঠে সে কোন মেয়ের সাথে কথা বলছে এটা ভাবতেই ওরা অবাক হয়ে যাচ্ছে ।
আদনানের পেছন পেছনে যখন মুল অফিস বিল্ডিংএ প্রবেশ করলো ওরা নোরা দেখতে পেল সবাই কেমন যেন ফ্রিজ হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । এমন দৃশ্য ওরা দেখে ঠিক অভ্যস্ত নয় বুঝা যাচ্ছে পরিস্কার !
আদনান নোরাকে নিয়ে বেশ ব্যস্তই হয়ে গেল । ওকে ভিআইপি গেস্টু রুমে নিয়ে আপ্যায়ন করতে শুরু করলো । নোরার এবার সত্যিই সত্যিই অস্বস্তি লাগা শুরু করলো । এই মানুষ ওকে দেখে এমন কেন করছে সেটা বুঝতে পারছে না । এটা তার সাথে ঠিক যাচ্ছে না !
আদানান এক সময় বলল, এখন বলুন আপনি এখানে হঠাৎ কি মনে করে !
নোরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমি আসলে এসেছি দুইটা কারনে !
-বলুন !
-আমাদের ডিপার্টমেন্ট আগামিমাসে একটা সেমিনার করতে যাচ্ছে এসএমই নিয়ে ! আসলে আমরা আশা করছিলাম যে আপনি যদি সেখানে আসতেন মানে যদি আপনার কোন ফাঁকা সিডিউল থাকতো আর কি ! আসলে ম্যাম আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে শহরের বড় কোন ব্যবসায়ীকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য । আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে চিনি না ! অবশ্য আপনাকেও খুব ভাল করে চিনি না । দুইবার আমাদের দেখা হয়েছে । আপনার কি সময় হবে ?
আদনান হেসে ফেলল । তারপর বলল, আপনি এত সংকোচ নিয়ে কেন বলছেন ? আমাকে টাইম সিডিউলটা দিয়ে দিন আমি ঠিক ঠিক চলে আসবো !
নোরা বলল, অনেক ধন্যবাদ । কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না !
আদনান বলল, আরেকটা কাজ ?
নোরা এবার একটু দম নিলো । এই কথাটা সে ঠিক কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না । আদৌও বলা ঠিক হবে কি না সেটাও বুঝতে পারছে না ।
আদনান আবার বলল, কই বলুন !
-আমি আসলে আপনাকে ফাতেমা নার্সের ব্যাপারে অনুরোধ করতে এসেছিলাম !
নামটা শুনতেই আদনানের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল ! সে খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল । তারপর নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, তার আপনার সাথে কিভাবে পরিচয় ?
-গত সোমবার সে আমার হলে এসেছিলো ? কিভাবে এসেছিলো আমি জানি না । আমার খোজ পেয়েছে কিভাবে সেটাও জানি না ।
-তারপর ?
-খুব কান্নাকাটি করতে শুরু করলো । তার দুইটা মেয়ে কলেজে পড়ে । একেবারে বেকার হয়ে গেছে সে । আপনার রিপোর্টের কারনে তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেছে ।
আদনান বলল, সে কি করেছে নিশ্চয়ই জানেন ?
-জি জানি !
-তারপরেও রিকোয়েস্ট করতে এসেছেন ?
নোরা একটা লম্বা দম নিল । তারপর বলল, দেখুন আমি জানি ঐদিন ফাতেমা নার্সের অসতর্কতার কারনেই আপনার মা বের হয়ে গিয়েছিলো । সেটা তার ভুল । এখন ভুল মানুষ করবেই । কিন্তু সেই ভুল থেকে বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই সেটা ঠিক করে নেওয়া হয়েছে । তাই না ? এখন আপনি যদি প্রতিশোধ নেন তাহলে বেচারি কোথায় যাবে ? আপনার প্রতিশোধ সইবার মত ক্ষমতা শক্তি কি তার আছে ? বলুন আছে ?
আদনান কিছু চুপ করে রইলো । তারপর বলল, ওকে আমি দেখবো ব্যাপারটা !
-অনেক ধন্যবাদ !
নোরা দেখতে পেল আদনানের মুখে আবার হাসি দেখা দিয়েছে । একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে ।
নোরা চলে যাওয়ার পর আদনান কামালকে ডেকে পাঠালো নিজের কেবিনে ! কামাল খানিকটা ভীত মুখে কেবিনে এসে হাজির হল ।
আদানান প্রথমে কিছু কাজের কথা বলার পরপরই বলল, নোরার খবর ফাতেমা কিভবে পেল ?
কামাল কি বলবে ঠিক বুঝলো না । বলল, তাই নাকি স্যার ? কি জানি কিভাবে পেল ? আমি তো জানি না !
-সত্যিই জানো না ?
-খোদার কসম স্যার আমি জানি না !
-ওকে খোজ লাগাও কিভাবে পৌছালো !
-জি স্যার ! আমি খোজ নিচ্ছি !
আদনান আবারও নিজের কাছে মনযোগী হয়ে গেলেও দেখতে পেল কামাল তখনও দাড়িয়ে আছে । আদনান বলল, কি বলবা ?
-স্যার একটা প্রশ্ন ছিল মনে । যদি অভয় দিতেন তো বলি !
-বল !
-আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি যতদিন ধরে আপনাকে চিনি আর মিস নোরার প্রতি আপনার আচরন যেরকম ..... আমি আসলে কিছু মেলাতে পারছি না !
আদনান প্রশ্নটা শুনে কিছু যেন নিজেই অবাক হয়ে বসে রইলো । তারপর বলল, আমি নিজেও জানি না আসলে ! সত্যিই জানি না ।
কামাল আর কিছু জানতে চাইলো না । চলে গেল ।
কামাল চলে যাওয়ার পরেও আদানান বেশ কিছুটা সময় চুপ করে বসে রইলো কেবল । নোরার প্রতি ওর আচরনটা এমন কেন হচ্ছে ! সে তার মাকে খুজে পেয়েছে । তাকে ভাল ভাবে ট্রিট করেছে । নোরাকে দেখে ওর মা এতো দিন পরে কথা বলেছে !এটা কি একটা কারন হতে পারে ? অথবা ঐদিন আদনানের মা যেভাবে নোরার হাতে শান্ত ভাবে ঔষধ খেলো এটা দেখে কি এমন আচরন আসছে !! আদানন বুঝতে পারছে না । নাকি নোরাকে দেখে ওর কারো কথা মনে পড়ছে !
আদনান জোর করে চিন্তাটা দুর করে দেওয়ার চেষ্টা করলো । সেই কথা সে কিছুতেই মনে করতে চায় না । সেই কথা মনে হলেই কেবল কষ্ট পেতে হবে ওকে । কত রাত আবার নির্ঘুম কাটাতে হবে কে জানে !
ছয়
সোবাহান চৌধুরীর এখন খুব বেশি কাজ কর্ম নেই । দিনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি কাটান বই পড়ে আর গান শুনে । যদিও কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদে এখনও তিনি অধিষ্ঠিত, তবে কবে শেষ অফিসে গিয়েছেন সেটা সে মনে করতে পারেন না । সব কিছু তার ছেলে আদনান খুব ভাল ভাবেই সামাল দিচ্ছে । তার হাতে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে একেবারে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি । যদিও একেবারে পরিপূর্ন নিশ্চিত জীবন তার আসে নি । বিশেষ করে ১১ বছরের আগের ঐ দুর্ঘটনার পর জীবন কিছুটা অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিলো ।
সেই ঘটনার পর থেকে তিনি এক প্রকার তার স্ত্রীকে হারিয়েই ফেলেছিলেন । তারা হাসিখুশি আর চঞ্চল ছেলে একেবারে বদলে গেল । সে কিছুটা সময় দুজনের মধ্যে যোগসুত্র ছিলেন । বাসার ভেতরে কেবল সেই একমাত্র স্বাভাবিক ছিল সেই সময়ে । আদনান তারপর থেকেই অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল অফিসের কাজে মনযোগ দিয়েছিলো । মাত্র ওর তখন ২০ বছর বয়স । নিজের পড়াশুনাও সে শেষ করে নি । নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য সব কাজ সে করেছিলো কেবল মাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য !
আজকে অনেক দিন পরে সোবাহান চৌধুরী আবারও খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে । অন্তত তার মনে হচ্ছে যে এমন একজন কে পাওয়া গেছে যাকে দিয়ে সম্ভবত তার ছেলে আদনান এবং স্ত্রী রেবেকাকে আবার স্বাভাবিক করা যাবে ! নোরা নামের মেয়েটার উপর এই দুইজনেরই একটা আলাদা প্রভাব আছে ।
নোরাকে দেখেই রেবেকা গত ১০ বছরের মাঝে প্রথম কথা বলেছে । গতদিন আদনান নার্স ফাতেমাকে আবার কাজে নিয়োগ দিয়েছে কেবল এই নোরার অনুরোধে । আদনানের উপর নোরার প্রভাবটা কেমন সেটা দেখার জন্যই সোবাহান চৌূধুরী নিজে ফাতেমাকে ডেকে নোরার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো । তাকে বলেছিলো সে নোরা যদি তার হয়ে কোন ভাবে আদনানের কাছে অনুরোধ করে তাহলে হয়তো সে আবার তার চাকরি ফিরে পেলেও পেতে পারে । যদিও সোবাহান চৌধুরী নিজে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না । তবে তার ধারনা সঠিক হয়েছে । ব্যাপারটা সোবাহান চৌধুরীকে খুবই আশান্বিত করে তুলেছে । এই ব্যাপারেই সে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা থেকে এতো দুর চলে এসেছে ।
আতিকুল ইসলাম কেবল কিছু সময় সোবাহান চৌধুরীর দিকে কিছু সময় অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলো । তার যেন এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে সোবাহান চৌধুরীর মত শিল্পপতির তার সরকারী কোয়াটারের ড্রয়িং রুমে বসে আছে । এখানে আসার কারনটাও সে একটু আগে তাকে ব্যাখ্যা করে করেছে । সোবাহান চৌধুরী তার ছেলের আদনানের সাথে নোরার বিয়ে দিতে চান । এবং সেটা যতদ্রুত সম্ভব !
এতো ভাল প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার আসলে কোন কারন নেই । তারপরেও আতিকুল ইসলামের সংশয় ঠিক যাচ্ছে না। তার কেবল মনে হচ্ছে এতো এতো যোগ্য মেয়ে থাকলে কেন তার মেয়ে নোরা ! এমন কি এখনও নিজের পড়াশুনাও শেষ করে নি।
সোবাহান চৌধুরী অবশ্য নোরার সাথে তার পরিবারের পরিচয় হওয়ার ঘটনাটা সবিস্তারেই বর্ণনা করেছে । তার বক্তব্য হচ্ছে টাকা পয়সার অভাব তার নেই । টাকাওয়ালা মেয়ে তার চাই ও না । তার দরকার একজন মায়াময়ী মেয়ে । আর এই হিসাবে নোরার থেকে ভাল আর কেউ হতেই পারে না ।
আতিকুল ইসলাম আরও কিছু সময় শংসয় প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েই গেলেন । তবে একটাই শর্তই দিলেন যে তার মেয়ে পড়াশুনা শেষ করতে চায় । এই সময়ে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে । কোন ভাবে যদি বিয়েটা ওর পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত আটকানো যায় । সোবাহান চৌধুরী বললেন, বিয়ের পরে সে হয়ে যাবে আমার মেয়ে । আর আমার মেয়েকে কি আমি পড়াশুনা করাবো না । তার কিছু করতে হবে না । তার জীবন যেমন ছিল তেমনই থাকবে । কেবল তার বিয়ে হবে । আর কিছু না ! আপনি প্লিজ মানা করবেন না ।
-তারপরেও । আসলে বিয়ের পর আসলে এসব এক থাকে না ।
সোবাহান চৌধুরী কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন, আচ্ছা আপনি মেয়ের বাবা । আপনার কথা আমাকে শুনতেই হবে । তবে আমার কথাটাও শুনুন একটু । দুজনের কথাই থাকুক !
-যেমন ?
-আপাতত ওদের বিয়েটা হয়ে যাক ! ঘরোয়া ভাবে ! কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই। নোরার পড়াশুনা শেষ হলে আমরা তখন ওকে আনুষ্ঠানিক ভাবেই আমাদের ঘরে তুলে নিবো । কেমন হবে ? আসলে বুঝতেই পারছেন যে এখনকার যুগে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না । আমি কোন ভাবেই নোরাকে হাতছাড়া করতে চাই না । কোন ভাবেই না ।
আতিকুল ইসলাম এবার আর না করতে পারলেন না । সোবাহান চৌধুরী যে নোরাকে পুত্রবধু করেই তবে এই বাড়ি ছাড়বেন সেটা বুঝতে তার কষ্ট হয় নি ।
ঠিক এক সপ্তাহের মাঝে নোরার সাথে আদনানের বিয়ে হয়ে গেল পারিবারিক ভাবে । নোরার বাবা আর মায়ে ঢাকাতে গিয়ে হাজির হলেন । নোরাকে নিয়ে হাজির হলেন আদনানদের বাসায় । নোরা তখন কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । ও এতোটাই অবাক হয়েছিলো যে কোন কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিলো না ।
সারা জীবন নোরা বাবার আদরের মেয়ে ছিল । বাবা কোন দিন তার উপর কোন কথা চাপিয়ে দেন নি । আজকে যখন ওকে জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করলেন নোরা কিছুতেই না করতে পারলো না ।
এদিকে আদনানও একটা কথা বলল না । পুরোটা সময় কেবল গম্ভীর হয়ে বসে ছিল । কাজী সাহেব যখন কবুল বলতে বলল সে শান্ত ভাবেই কবুল বলল । রেজিস্ট্রি খাতায় সই করে দিল । ওর মাথার ভেতরে তখন ঝড় চলছে ।
কাজটা সে কেন করছে ?
কেন অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে ?
ও নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছিলো জীবনে আর অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না । তাহলে কেন আজকে সই করার সময় ওর হাত একবারও কাঁপলো না ! নোরা নামের এই মেয়ের মাঝে এই অদ্ভুত ব্যাপার আছে । কিন্তু সেটা কি আদনান বলতে পারে না ।
রাতের বেলা যখন বাসর ঘরে ঢুকলো আদনানের মনে হচ্ছিলো যেন স্বপ্ন দেখছে । বিছানার ঠিক মাঝখানে নোরা বসে ছিল মাথায় ঘোমটা দিয়ে । দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথেই আদনানের মাথাটা একটু ঘুরে উঠলো । খুব পরিচিত এই দৃশ্য । প্রতিরাতে এই দৃশ্যটাই তার চোখের সামনে এসে হাজির হয় । এই দৃশ্যটা তাকে ঘুমাতে দেয় না রাতের পর রাত ! তখন মাথার উপর খুব বেশি জোর পরে !
হঠাৎই পুরো জগতটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে এল । মাটিতে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার আগ দিয়ে ঝাপসা ভাবে আদনান কেবল দেখতে পেল বউ সাজে নোরা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । তারপর আর কিছু মনে নেই ওর !
ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:২৬