ছুটির দিন গুলোতে বুক স্টোরে ভীড়টা একটু বেশি থাকে । এই দিনে তাই নোরাকে একটু বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় । বই চেক করে দেখা, সেগুলো দাম মিলিয়ে মূল্য রাখা । তাছাড়াও মাঝে অনেক গ্রাহকদের বই খুজেও দিতে হয় মাঝে মাঝে । নোরার অবশ্য কাজ গুলো করতে বেশ মজাই লাগে । সব সময় বইয়ের ভেতরে থাকাটা ওর মন্দ লাগে না । তবে অন্যান্য দিন গুলোতে ভীড় থাকে কম । তখন একটু অবসর সময় কাটানো যায় ।
তবে আজকের ব্যাপারটা সম্পূর্ন অন্য রকম । নোরা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । তারপর সেখান থেকে মুখ সরিয়ে ঠিক ডান দিকে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো । তারপর আবারও স্ক্রিনের দিকে তাকালো । স্ক্রিনে আদনান চৌধুরীর একটা ছবি বের করা রয়েছে । ডিপ ব্লু রংয়ের সুট পরা । স্যুটের ভেতরে পরেছে হাকলা গোলাপী রংয়ের একটা শার্ট সেই সাথে ডিল ব্লু টাই। কালার কম্বিনেশনটা অন্য কারো ক্ষেত্রে হলে বড় হাস্যকর লাগতো কিন্তু আদনান চৌধুরীকে রাজপুত্রের মত লাগছে । সেই দিকেই নোরা কিছু সময় কেবল তাকিয়ে রইলো । ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এই ছেলেটাই এখন এই বুক স্টোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
ভাবা যায় ?
গতকালকেই সে জানতে পেরেছে এই ছেলেটা ওদের বুকশপে এসে হাজির হয় । ও হয়তো চিনতেও পারতো না যদি না অরিন ওকে বলতো ! নোরার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা । নোরার পরিবার থাকে বগুড়াতে । নোরা ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। মাস শেষে বাবা ওকে বেশ ভাল পরিমান টাকায় দেয় তবুও নোরা একেবারে পায়ের উপর পা তুলে, সম্পর্ন খচরটা বাবার উপরে চাপিয়ে দিতে চায় না । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরু থেকেই কিছু করার চেষ্টা করেছিলো । প্রথম কিছু দিন টিউশনী করিয়েছিলো । তবে বুঝতে পেরেছিলো যে টিউশনি ব্যাপারটা তার সাথে ঠিক যাচ্ছে না । অন্য কিছু করার চেষ্টা করছিলো তখনই এই অনিন্দ্য বুক স্টোরে চাকরিটা পেয়ে যায় । নোরার দায়িত্ব হচ্ছে বিকেলের দিককার কাস্টমার সামাল দেওয়া । বিশেষ করে কাউন্টার সামলানোর দায়িত্ব ওর । ছোট বেলা থেকেই বই পড়ার একটা অভ্যাস আছে তার । এতো বড় একটা বইয়ের দোকানে ঘন্টা ৬ থাকাটা মোটেও মন্দ হবে না ।
প্রথমে ওর বাবা অবশ্য একটু আপত্তি করেছিলো তবে ওর বাবা যখন নিজে বুক স্টোরে এসে হাজির হয় তখন খানিকটা মন গলে যায় তার । অভিজাত এক বইয়ের দোকান । এখানে আসা যাওয়া মানুষ গুলোও সব অভিজাত শ্রেণীর । তারপর আর সে আপত্তি করে নি ।
এরপর থেকে এই বুকস্টোরেই কাজ করছে সে । ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীরাও মাঝে মাঝে এখানে এসে হাজির হয় । কাজের ফাকে গল্প চলে । গতদিন অরিন এসেছিলো । কাজের ফাঁকে গল্প চলছিলো দুজনের মধ্যে সেই সময়েই অরিন বুকস্টোরে আসা একজন ছেলের দিকে নির্দেশ করে বলে, এই এটা আদনান চৌধুরী না ?
নোরা অরিনের দেখানো মানুষটার দিকে তাকালো । আদনান চৌধুরীকে কে জানে চেনে । বিশেষ করে ওর বয়সী সব মেয়েদের ক্রাশ হচ্ছে এই আদনান চৌধুরী । দেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী । সব চেয়ে ইয়াং এন্ট্রাপ্রেনার ! কত ধরনের ব্যবসা যে তার আছে তার কোন হিসাব নেই । মাত্র ৩১ বছর বয়স কিন্তু এরই মধ্য সাফল্যের চুড়ান্ত শিখড়ে পৌছে গেছে ।
তাকে চেনার আরেকটা কারন হচ্ছে, মাঝে মধ্যেই তাকে পত্রিকার পাতায় দেখা যায় । সুদর্শন হওয়ার কারনে প্রায়ই মডেলিং করে । দেশের বিখ্যার প্রায় গুলো ক্লডিং ব্রান্ডের এম্বাসেডর সে । যদিও মডেলিং করে কেবল শখ থেকে । মাঝে মাঝে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার এটেন করে । বিশেষ করে বিজনেস সেমিনার গুলোতে তাকে ডাকা হয় । সেখানে সে বক্তব্য দেয় । সব মিলিয়ে একটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হওয়ার জন্য যা যা দরকার সবই তার ভেতরে আছে ।
তবে আদনান চৌধুরীর বদনামও আছে অবশ্য । বাজারে গুজব আছে যে মানুষ হিসাবে সে খুবই রাগী, প্রচুর বদমেজাজী আর একগুয়ে ! তার আশে পাশের মানুষ গুলো তাকে জমের মত ভয় পায় । এই বদনাম শুনে অবশ্য মেয়েরা তার উপর ক্রাশ খাওয়া বন্ধ করে নি ।
নোরা কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে অরিনকে বলেছিলো যে মোটেই না । এই লোকের বই পড়ার মত সময় নেই । কত ব্যস্ত সে ! নোরা ভেবেছিলো কাউন্টারে এসে পেমেন্ট করার সময় তাকে জিজ্ঞেস করবে । কিন্তু ওদের দুজনকেই অবাক করে দিয়ে ছেলেটা কোন বই না কিনেই চলে গেল । অনেকেই এই বুকস্টোরে আসে কেবল বই পড়ার জন্য কিংবা ছবি তোলার জন্য ।
নোরা অরিনকে বলেছিলো, এই ছেলে কোন ভাবেই আদনান চৌধুরী হতে পারে না । একটু চেহারার অবশ্য মিল আছে এই যা ! আদনানা চৌধুরী চশমা পরে না এই চোখের চোখে একটা চশমাও দেখা যাচ্ছে ।
কিন্তু আজকে আবার যখন ছেলেটাকে বুকস্টোরে আসতে দেখলো নোরা তখন খানিকটা কৌতুহলী হয়েই তার চেহারার দিকে তাকাতে লাগলো । এবং সত্যিই সত্যিই মনে হতে লাগলো ছেলেটার চেহারা আসলেই আদনান চৌধুরীর মত । একেবারে সেই রকম । চেলাকা কেবল ফরমাল ড্রেস না পরে ক্যাজুয়াল ড্রেস পরেছে বলেই হয়তো এমন মনে হচ্ছে । সামনের এই ছেলেটাকে ফরমাল ড্রেস পরিয়ে দিয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলেই সবাই তাকে আদনান চৌধুরী বলেই ধরে নিবে ।
আজকে অবশ্য ছেলেটা বেশ কিছু বই কিনলো । কাউন্টারে এসে বিল পেমেন্টের সময় নোরা হঠাৎ বলল, আপনার বিলটা ৫ হাজার ক্রস করেছে । আপনার কাছে কি মেমবার শীপ কার্ড আছে ?
যদিও নোরা খুব ভাল করেই জানে এই ছেলে এই প্রথম এই বুক স্টোরে এসেছে ।
ছেলেটা হাসলো । তারপর বলল, মেমবারশীপ কার্ড তো নেই । এটা থাকলে কি সুবিধা ?
-এটা থাকলে আপনি পুরো বিলের উপর আলাদা ৫% ডিসকাউন্ট পাবেন !
-আচ্ছা । আমাকে একটা কার্ড দেওয়া যাবে ?
-এই জন্যই জানতেই চাইলাম । একবারে বিল ৫ হাজারের বেশি হলে আমরা তাকে এই মেম্বারশীপ কার্ড দেই ।
-আচ্ছা তাহলে তো ভালই ।
নোরা ছেলেটার দিকে একটা ফর্ম এগিয়ে বলল, এই টা একটু ফিলআপ করে দিন প্লিজ !
ছেলেটা ফর্মটা ফিলাপ করে দিল । নামটা দেখেই নোরা চমকে উঠলো । সেখানে আদনান চৌধুরীই লেখা ! নোরার মনে হল ও একটা হার্ট বিট মিস করলো ! ওর সামনে সত্যিই সত্যিই আদনান চৌধুরি দাড়িয়ে আছে ।
বিলে নেওয়া শেষ করে যখন যাওয়ার সময় হল তখনই আদনান বলল, মিস নোরা আজকে আসি কেমন !
নোরা এসে বিদায় জানালো !
আদনানের চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তখনই ওর মনে ব্যাপারটা ধরা পড়লো । আদনান চৌধুরী ওর নাম জানলো কিভাবে ? ও নিজের নাম বলে নি । আর ওর যত দুর মনে পরে অন্য কোন কর্মচারিও ওর নাম ধরে ডাকে নি । তাহলে ?
ওর নামটা কিভাবে জানলো ?
পর্ব দুই
সব কাজ শেষ করে বুকস্টোর থেকে বের হতে হতে রাত আট টা বেজে গেল । ছুটির দিন গুলোতে আরও একটু দেরি হয় । গল প্রভোস্টের সাথে আগে থেকেই নোরা কথা বলে নিয়েছে । এই জন্য ওর খুব একটা সমস্যা হয় না । নোরা বরাবরই পড়াশুনাতে বেশ ভাল । তাই স্যার ম্যাডামদের সুনজরে পড়তে খুব একটা সময় লাগে না । এই অনুরোধ টুকু তারা ঠিকই রাখে ।
বুক স্টোরের সামনে এসে দাড়ালো । ওর হলটা এখান থেকে খুব বেশি দুরে নয় । চাইলে হেটেই যাওয়া যায় । পুরো রাস্তা যখন জ্যাম হয়ে থাকে তখন রিক্সা না নিয়ে ও বরং হেটেই চলে যায় । কিন্তু নোরার আজকে হাটতে ইচ্ছে করছে না । কয়েক কদম হেটে গেলেই রিক্সা পেয়ে যাবে । নোরা সেদিকেই হাটতে শুরু করলো । তবে ওকে থামতে হল কয়েক কদম হাটার পরেই । একজন মানুষ ওর ঠিক সামনে এসে দাড়িয়ে । সুট টাই পরা একটা ছেলে । ছেলেটার বয়স কত হবে এই অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারলো না । চোখে মুখে একটা কনফিউজড ভাব রয়েছে ।
-গুড ইভিনিং মিস নোরা ! আপনি কেমন আছেন ?
নোরা একটু না অবাক হয়ে পারলো না । এই লোকটা ওর নাম জানলো কিভাবে ? একটু আগে ঐ আদনান চৌধুরীও ওর নাম ধরেছিলো ! এখন আবার এই লোকটাও ওর নাম ধরে ডাকছে । এই শহরের সবাই ওর নাম জেনে বসে আছে নাকি ? নাকি হঠাৎ করেই ও খুব বিখ্যাত কেউ হয়ে গেছে !
নোরা নিজেকে সামলে নিল মুহুর্তেই । তারপর বলল, আমি ভাল আছি । কিন্তু আপনি কে ?
ছেলেটা এবার একটু হাসলো । তবে মুখ থেকে সেই কনফিউজড ভাবটা গেল না । বলল, আমার নাম কামাল । আমি আদনান স্যারের সেক্রেটারি !
আবারও সেই আদনান !
ব্যাপারটা কি হচ্ছে নোরা আসলে কিছুই বুঝতে পারছে না । কি হচ্ছে ওর সাথে !
কামাল নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, আসলে আমাদের স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলতে চান ? উনি ঐ যে ঐ গাড়িতে বসে আছেন ! আপনি প্লিজ চলুন আমার সাথে ?
নোরা কিছু সময় কামাল নামের এই মানুষটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আপনার স্যার কথা বলতে চায় তাকে আসতে বলুন আমার কাছে ? আমি কেন যাবো ?
নোরা কেন যে এই কথাটা বলল সেটা ও নিজেই জানে না । অন্য কেউ হলে এক কথাতেই গাড়ির দিকে দৌড়ে যেত । আদনান চৌধুরী তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে এটা তো একেবারে স্বপ্নের মত একটা ব্যাপার । আর ও কিনা ভাব নিয়ে বলল যে আদনান চৌধুরীকেই ওর কাছে আসতে । কামালও সম্ভবত নোরার কাছ থেকে এমন কথা ঠিক আশা করে নি । কিছু সময় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । তারপর ঘুরে পেছনে দৌড় দিলো ।
নোরা কামালের এই দৌড় দেওয়াটা আশা করে নি । ছেলেটা কোন কারনে কনফিউজড হয়ে আছে । এবং নোরা তাকে আরও বেশি কনফিউজড করে দিয়েছে । নোরার এখন কি করা দরকার ?
এখানেই অপেক্ষা করবে নাকি রিক্সার জন্য হাটা দিবে ? নাকি গাড়িটার দিকে একটু এগিয়ে যাবে ! শেষে যেখানে দাড়িয়ে ছিল সেখানেই দাড়িয়ে রইলো । অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । ঠিক দুই মিনিটের মাথায় আদনান চৌধুরী ওর সামনে এসে হাজির হল । পেছনে কামাল সেই পাংসু মুখে দাড়িয়ে আছে । সম্ভবত এখনও এইটা মেনে নিতে পারছে না যে নোরা তার বসকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে ।
নোরা নিজেও খানিকটা অবাকই হল । ও ভেবেছিলো ওর এই কথা শুনে হয়তো আদনান চৌধুরী চলে যাবে নয়তো আবারও কামালকে পাঠাবে । এভাবে নিজেই নেমে আসবে সেটা সে ভাবে নি । আদনান চৌধুরী ওর সামনে এসে দাড়ালো । এইবার অবশ্য নোরা নিজের ভেতরে একটু দ্বিধ দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করলো । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না ।
আদনান চৌধুরী বলল, আপনার হলের গেট সম্ভবত নয়টায় বন্ধ হয় ! তাই না ?
নোরা কেবল মাথা ঝাকালো ।
-চলুন আপনাকে পৌছে দেই । নয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে !
নোরা মৃদুর স্বরে বলল, সমস্যা নেই । আপনি বলুন আপনার কি কথা ।
-যেতে যেতেই বলি ! খুব বেশি সময় লাগবে না । নাকি আমার গাড়িতে উঠতে সমস্যা আছে । ভয় পাবেন না । আপনার কোন ক্ষতি আমি করবো না !
নোরা কিছু সময় কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ওর সাথে আদনান চৌধুরীর কি এমন কথা থাকতে পারে সেটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না । ওর হলের গেট কয়টায় বন্ধ হয় সেটাও এই লোক জানে । এর মানে হচ্ছে লোকটা ওর নারী নক্ষত্র সব কিছু জেনে বসে আছে । কিন্তু কেন ? এই এতো বড়লোক মানুষটা ওর প্রতি কেন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে ? এতো আগ্রহ দেখানোর কি কারন ?
নোরা অবশ্য আর প্রশ্ন করলো না । আদনান চৌধুরীর সাথে সাথে তার গাড়িতে গিয়ে উঠলো । আদনান চৌধুরী ঠিক তার পাশেই বসলো । কামাল উঠতে যাচ্ছিলো গাড়িতে আদনান বলল, কামাল তুমি এখানেই থাকো । আমি যাওয়ার সময় তোমাকে তুলে নিবো !
গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই নোরার মনে হল যে ও অন্য জগতে চলে এসেছে । বাইরে থেকে একটু আওয়াজও আসছে না । ওর সিটের সামনেই একটা ছোট টিভি রয়েছে । সেখানে খবর ছাড়া রয়েছে । তবে কোন আওয়াজ হচ্ছেনা । গাড়িতে চলতে শুরু করেছে নোরা সেটা বুঝতেও পারলো না ।
আদনান চৌধুরী বলল, দুঃখিত এই ভাবে চলে আসার জন্য !
-না ঠিক আছে । আসলে আমি ....
-কিছু বুঝতে পারছেন না ?
-জি ! আপনি আমার সাথে কি কথা বলতে পারেন সেটাই মাথাতে আসছে না আমার !
-আসলে আমি আপনাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই !
নোরার মনে হল ও যেন কানে একটু ভুল শুনলো । নিশ্চিত ভাবেই এটা কোন ভাবেই সম্ভব না ।এমনটা হওয়ার কোন কারন সে দেখতে পাচ্ছে না । আদনান চৌধুরী যে কিনা কম করেও কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক সেই লোক ওকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাচ্ছে !
নোরার মুখের ভাবটাই এমন ছিল যে কেউ ওকে দেখলে ঠিকই বুঝে যাবে যে ও অবাক হয়েছে । নিজের বিস্ময় ও লুকানোর চেষ্টাও করলো না । আদনান বলল, আমি বুঝতে পারছি আসলে আপনি অবাক হয়েছেন । এবং আপনার পূর্ণ অধিকার আছে আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার । আমার সেখানে কিছুই করার থাকবে না । তবে আমি সত্যিই আপনাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই ।
নোরা বলল, কেন ?
-সেটার পেছনে কারন আছে । সেটা আপনি গেলেই বুঝবেন । বেশি সময় চাইবো না আপনার কাছে । মাত্র ঘন্টা দুয়েক । এটা হলেই হবে । আপনাকে আমি হলের গেট থেকে কিংবা আপনার বুকস্টোর থেকে পিক করে নিয়ে যাবে । তারপর আবার এখানেই ড্রপ করে দিয়ে যাবো ।
-আমি আসলে কারনটা জানতে চাইছি !
-আপনি আমার একটা খুব বড় উপকার করেছেন । সেটার প্রতিদান কোন ভাবেই দেওয়া সম্ভব না আমি জানি । কিন্তু একেবারেও কিছু যদি না করি তাহলে আসলে আমি মনে শান্তি পাচ্ছি না !
নোরা আবারও অবাক হয়ে গেল । ও আদনান চৌধুরীর কি উপকার করেছে সেটা ও বুঝতেই পারলো না । বলল, আমি আপনার উপকার করেছি ? আপনার নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথাও ! আমি আপনাকে সরাসরি এই প্রথম দেখলাম । না ঠিক এই প্রথম না । গতদিন আপনি বুকস্টোরে এসেছিলেন । সেদিন দেখেছিলাম । আর কোন দিন দেখাই হয় নি আমাদের ।
নোরার তারপর কি যেন মনে পড়লো । তারপর বলল, আমি ঐ বুকস্টোরের মেম্বারশীপ কার্ডটা দিয়েছিলাম । এটা কি আপনি উপকার হিসাবে ধরছেন ?
আদনান খুব শব্দ করে হেসে উঠলো । নোরা খানিকটা অবাক হয়েই আদনানে মুখের দিকে তাকালো । মানুষটা এর আগেও সে দেখেছে পত্রিকার ছবিতে । ইউটিউবে তার কিছু ভিডিও আছে । সব সময় তাকে কেবল গম্ভীরম রাগী আর বদমেজাজী হিসাবেই বিশ্বাস করে এসেছে । কিন্তু এখন আদনানের হাসি দেখে নোরার সব কিছু কেমন ভুল মনে হল । আদানন বলল, ঠিক বলেছেন । ঐটাই কারন !
তারপর আবারও হাসতে লাগলো ।
নোরা বলল, সত্যিই বিশ্বাস করেন আমি কোন ভাবেই আপনার কোন উপকার করি নি । করতেই পারি না !
আদনান এবার নিজের হাসি থামালো । তারপর বলল, আমার সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন ! আপনার নিশ্চয়ই মনে হয় না যে আমি ভুল মানুষের পেছনে এতো সময় ব্যয় করবো ? আপনার হয়তো ধারনা নেই আমি আপনার জন্ম তারিখ স্থান থেকে শুরু করে এই আজকের দিনের একটু আগের ঘটনা পর্যন্ত সব কিছু জানি !
-সিরিয়াসলি ?
-জি !
-আমি সত্যিই খুব খুশি হব যদি আপনি আমার সাথে একটা দিন ডিনার করেন !
নোরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আচ্ছা । কবে বলুন ?
-সামনের শুক্রবারে হলে আপনার সুবিধা হবে ?
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
-ধন্যবাদ ! আপনার হলের সামনেই আমি গাড়ি পাঠাবো । ঠিক আছে ?
নোরা তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে ওর সাথে এমন কিছু হতে যাচ্ছে । কেন এমন কিছু হচ্ছে ! এমন কিছু তো হওয়ার কথা না । কোন ভাবেই না । আদনান বলল, আপনার হল চলে এসেছে !
-চলে এসেছে ?
কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো আসলেই গাড়িটা হলের সামনেই দাড়িয়ে আছে ।
গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটা চলে যেতে দেখলো ও । মনের ভেতরে একটু দ্বিধা কাজ করছে । ও আদনান চৌধুরীর কি উপকার করতে পারে?
চলবে ....
ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:২৭