ঢাকা শহরের এক এলাকাতে বাস করতো এক খরগোশ আর এক কচ্ছপ ।
দুজনের বসবাস পাশপাশি এলাকাতেই ছিল । খরগোশ যেমন দৌড়াতে পারতো খুব দ্রুত ঠিক তেমনি সে সব কিছুতেই ছিল ওয়েল আপডেটেড । আধুনিক সব যন্ত্রপাতির উপর তার দখল ছিল বেশ ভাল । ইন্টারনেট ফেসবুকে সে ছিল বেশ একটিভ । সব সময় সব কিছু আপডেট দেওয়া রেস্টুরেন্টে চেক ইন দেওয়া, আরও নানান কাজে সে ছিল সিদ্ধ হস্ত । ইনবক্সে নানান মেয়েদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সে চ্যাটিং চালিয়ে যেত । সব ইস্যু নিয়ে তার একটা স্টাটাস থাকা চাই ই চাই ।
অন্য দিকে কচ্ছপ ছিল একেবারে উল্টো । নিজের কাজ ছাড়া সে অন্য কিছুতেই ছিল না । এমনি তার একটা এন্ড্রোয়েড ফোন পর্যন্ত ছিল না । নিজের একটা নোকিয়া জাভা ফোন ছিল । সেটা দিয়ে মাঝে মধ্য ফেসবুকে ঢুকতো সে । কয়েক লাইনের স্টাটাস দিতো । ব্যস এই ছিল তার অনলাইন জীবন ।
একদিন কচ্ছপ ফেসবুকে ঢুকেই দেখতে পেল তার কাছে বেশ কিছু নোটিফিকেশন এসে হাজির হয়েছে । সে বেশ অবাকই হল । তার বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নেই । নোটিফিকেশন অন করেই অবাক হয়ে গেল । দেখলো খরগোশ তাকে ট্যাগ করে একটা ভিডিও আপলোড করেছে । অনেক কষ্টে নিজের জাভা ফোন আর টু জি নেট দিয়ে সে ভিডিওটা দেখতে পেল । ভিডিওতে তার নিজের পথ চলার কিছু অংশ ধারন করা হয়েছে । খরগোশ সব সময় তার চলাচল নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে । সে এসবে কিছু মনে করে নি । কিন্তু আজকে সে সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে । ভিডিওর নিচে খরগোশ লিখেছে, হেই মিস্টার কচ্ছপ এই ভাবে পথ চললে তো তোমার বউ অন্যের সাথে পালিয়ে যাবে । একটু দ্রুত হাটো !
নিচে শয়ে শয়ে কমেন্ট এসে হাজির ! সবাই হা হা রিএকশনের বন্যা বইয়ে দিয়েছে । কেউ কেউ কমেন্ট সেকশনে লিখেছে বউ সামনে দিয়ে পালিয়ে গেলেও সে তাকে ধরতে পারবে না !
কচ্ছপের রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করলো । কি করবে বুঝতে পারলো না । একবার মনে হল সে মামলা করে দেয় খরগোশের নামে । মানুষকে এই ভাবে সবার সামনে অপদস্ত করার অধিকার তার নেই । কিন্তু তাতে তো এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না । বরং লোকজন আরও বেশি কথা বলবে ।
খরগোশ তো তার গতি নিয়ে সব সময় গর্ব করে । তাকে এই গতি দিয়েই হারাতে হবে । হারুক জিতুক একটা চেষ্টা তাকে করতেই হবে।
তখনই সে খরগোশ কে ট্যাগ করে একটা পোস্ট দিয়ে ফেলল । তাতে লিখলো যে "গতি নিয়ে এতো গর্ব তোমার । তাহলে এসো হয়ে যাক একটা রেস"
খরগোশ নিচে কমেন্ট করলো, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ?
কচ্ছপ লিখলো, কেন ভয় পাচ্ছ নাকি? হেরে যাবে এই ভয়ে ?
আর যায় কোথায় । খরগোশকে তার গতি নিয়ে খোটা দেওয়া হচ্ছে । সে রাজি হয়ে গেল । ইভেন্ট তৈরি হয়ে গেল । শত শত মানুষ সেখানে গোয়িং দিল । শেয়ার হল হাজারে হাজার ।
নির্দিষ্ট দিনে যথা সময়েই দুজনে হাজির হল নির্ধারিত স্থানে । তারপর দৌড় শুরু হল । দৌড় শুরু হতেই খরগোশ তো এক দৌড়েই চলে গেল অনেক খানি দুর । এদিকে কচ্ছপ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো । খরগোশ পেছনে তাকিয়ে দেখে কচ্ছপের দুর দুরান্তে কোন দেখা নেই । রেস শুরু হয়েছিলো ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে । শেষ হওয়ার কথা ছিল শাহবাগে গিয়ে । মাঝে বসুন্ধরা সিটি পড়ে । খরগোশ ভাবলো কচ্ছপের তো আসা দেরি আছে । এরই ফাঁকে একটু বসুন্ধরার ভেতরে একটু ঢু মারা যাক । যেই ভাবা সেই কাজ ।
সে বসুন্ধরার ভেতরে ঢুকে পড়লো । তারপর টুকটুক করতে গিয়ে হাজির হল লেভেল এইটের ফুড কোর্টে। সেখানে গিয়ে হাজির হতেই চারিদিক থেকে তার ভক্তরা তাকে ঘিরে ধরলো । সবাই তার সাথে কথা বলতে চায় তার সাথে একটা সেলফি তুলতে চায় । খরগোশও নিশ্চিন্তে সবার সাথে আড্ডা দিতে শুরু করলো । সেলফি তুলে পোস্ট করতে শুরু করলো । ইনবক্সে চ্যাটিং করতে শুরু করলো । এরই ফাঁকে যে কত সময় পার হয়ে গেছে সেটা খরগোশের কোন খেয়াল রইলো না ।
তারপর যখন খেয়াল হল তখন সে দ্রুত বের হয়ে এল বসুন্ধরা থেকে । আবারও দৌড় শুরু করতে যাবে তখনই মোবাইলে একটা নোটিফিকেশ এসে হাজির হল । এমনিতেই তার মোবাইলে নোটিফিকেশন সব সময় আসেই । অভ্যাসবশত সেটা অন করতেই তার চোখ চড়কগাছ ! এক মিনিট আগে একটা ছবি পোস্ট করা হয়েছে । সেখানে দেখা যাচ্ছে কচ্ছপ প্রায় ফিনিসিং লাইনের কাছে পৌছে গেছে ।
খরগোশ আর দেরি করলো না । সর্ব শক্তি দিয়ে দৌড় শুরু করলো । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । শেষষ সীমানাতে গিয়ে দেখে কচ্ছপ লাইনের শেষ মাথায় পৌছে গেছে । সে হেরে গেছে কচ্ছপের কাছে । বিজয়ীর বেশে সে খরগোসের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ।
মোরাল অব দ্য স্টোরিঃ কাজের সময় ফেসবুকিং আড্ডা আর চ্যাটিং থেকে দুরে থাকলেই সফলতা আসবে ।
(রূপকথা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৬