এক ছিল রাখাল বালক । রাখাল বালকের সারাদিন বনের পাশের মাঠে বসে গরুদের ঘাস খাওয়াতো আর তার স্মার্ট ফোন থেকে ফেসবুক চালাতো । এমনই এক অলস বিকেলে রাখাল বালকের মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি এসে হাজির । সে তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে স্টাটাস দিল, বাঘ এসেছে ! আমাকে বাঁচাও !
রাখাল বালকের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে গ্রামের অনেকেই এড ছিল । বিশেষ করে গ্রামের সকল মেয়ে তার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল । এই স্টাটাস দেওয়ার সাথে সাথে এঞ্জেল পরি নামের এক মেয়ে সেটা শেয়ার দিল নিজের ওয়ালে । শেয়ার দিয়ে লিখলো, এই রাখাল বালক আমার বন্ধু । আজকে ওকে যে রক্ষা করবে তাকে আমি আমার ইমু নাম্বার দিবো ।
আরও অনেকে নানান কাতুতি মিনতি করে সেই পোস্ট শেয়ার দিল ।
এদিকে কয়েকজন কৃষক নিজেদের মাঠে কাজ করছিলো আর মাঝে মাঝে তার ফেসবুকটা চেক করছিলো । এঞ্জেল পরির পোস্ট শেয়ারের সাথে সাথে তাদের কাছে নটিফিকেশন গিয়ে হাজির । এঞ্জেল পরিকে তারা সি ফার্স্ট করে রেখেছিলো । আর যায় কোথায় তারা তখনই রাখাল বালককে রক্ষা করতে বনের পাশের মাঠের দিকে দৌড় দিল ।
কিন্তু গিয়ে দেখলো রাখাল বালক দিব্যি সুস্থ সবল ভাবে বসে আছে । আর ফেসবুকিং করছে ।
ওরা তো রেখে গেল খুব । রাখাল বালক দাঁত বের করে হাসলো খুব । তারা আসতেই তাদের কে নিয়ে একটা সেলফি তুলে ফেলল চট করে । তারপর সেটা সেটা পোস্ট করে দিল । সেই পোস্টে অনেক হাহা পড়লো । কৃষকদের নাক কাটা পড়লো ।
কৃষক কয়জন ফিরে এসে নিজেদের ফেসবুকে খুব জ্বালাময়ী এক স্টাটাস দিল । বর্তমান যুবক সমাজের যে কি পরিমান অবক্ষয় ঘটেছে সেই ব্যাপারে বিস্তার আলোচনা হল ।
ফেসবুকে অনেকে রাখাল বালকের উপর খুব নাখোশ হল । কেউ কেউ তাকে ট্যাগ করে আনফ্রেন্ড করে দিল । তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে ছেলে এমন গুজব ছড়াতে পারে তার সাথে বন্ধুত্ব মানায় না ।
তবে এঞ্জেল পরি কিন্তু ঠিকই রাখাল বালকের পক্ষ নিল । যখন অনেকে রাখাল বালকের বিপক্ষে দাড়িয়ে স্টাটাস দিচ্ছিলো তখন এঞ্জেল পরি স্ট্যান্ড ফর রাখাল হ্যাস ট্যাগ ক্যাম্পেইন চালু করলো ।
এই ভাবে কদিন চলে গেল । কিছু দিন পরে আবারও রাখাল বালকের মনে আবারও দুষ্ট বুদ্ধি উদোয় হল । সে এইবার কেবল স্টাটাসই দিল । সেই সাথে একটা ছবি যুক্ত করে দিল । রাখাল বালক আবার ফটোশপে খুব পারদর্শী ছিল । সেই ইন্টারনেট থেকে একটা বাঘের ছবি ডাউনলোড করে সেটা এমন চমৎকার ভাবে সেটা ফটোশপড করে পোস্ট করলো দেখে মনে হচ্ছিলো যেন সত্যিস সত্যিই যেন বাঘ আসছে ।
আবারও যায় কোথায় ! ইন্টারনেটে আবার বন্যা বয়ে গেল । আগের বার স্টাটাস দেখে যারা এসে ধরা খেয়েছিলো তারা পর্যন্ত বিশ্বাস করলো যে বাঘ আক্রমন করেছে । আবারও একই ভাবে এঞ্জেল পরি রাখালের পক্ষ স্টাটাস দিল । আবারও গ্রামবাসী ছুটে এল রাখালকে বাঁচানোর জন্য । কিন্তু এসে দেখে আগের মতই অবস্থা । রাখাল আপন মনে ফেসবুকে করছে ।
এবার তারা খুবই বিরক্ত হল । পারলে রাখালকে ধরে মাইর দেয় । কেউ কেউ আবার রাখালের নামে ৫৮ ধারায় মামলা করতে চাইলো । নিশ্চিত ভাবে এটা একটা সাইবার ক্রাইমের ভেতরে পরে ।
তবে সেটা করলে আবার বেশি বেশি হয়ে যাবে এই ভেবে তারা কেবল রাখালকে ব্লক মেরে দিল । কদিন এভাবে চলল । এরপর একদিন সত্যিই সত্যিই বাঘ এল । রাখাল বাঁচাও বলে প্রথমে স্টাটাস দিল । কিন্তু কোন কাজ হল না । তারপর ছবি তুলে পোস্ট করলো তবুও কাজ হল না । সবার শেষে সে লাইভে চলে গেল । লাইভে দেখা গেল বাঘ এগিয়ে আসছে । তবুও মানুষজন এগিয়ে এল না । কারন সবাই তো তাকে ব্লক করে রেখেছে । যারা পোস্ট দেখলো তারা কেবল হাহাই দিয়ে গেল । কেউ বিশ্বাস করলো না তাকে ! কেউ কেউ নিচে লিখলো জোস মামা জোস ! আমরা এই রকম ভিডিও এডিটিং শিখতে চাই
এদিকে বনের বাঘ মামা নিজের ফেসবুকে স্টাটাস দিল অনেক দিন পর রাখাল বালক দিয়ে লাঞ্চ ! ফিলিং হ্যাপি !
বাঘকে আবার অনেক কৃষক ফলো করতো । তার এই স্টাটাস দেখে তারা সেই বনের দিকে ছুটে গেল কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে । সব শেষ হয়ে গেছে । কেবল রাখাল বালকের ফোনটা মাটিতে পড়ে আছে । একজন কৃষক সেটা হাতে নিয়ে কিছু সময় টেপাটেপি করতেই নতুন আরেকটা সত্য আবিষ্কার করলো । এঞ্জেল পরি আসলে রাখাল বালকের ফেইক আইডি ছিল ।
রূপকথার গল্প অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১১