somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক রূপকথার গল্পঃ মিথ্যাবাদী রাখাল

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক ছিল রাখাল বালক । রাখাল বালকের সারাদিন বনের পাশের মাঠে বসে গরুদের ঘাস খাওয়াতো আর তার স্মার্ট ফোন থেকে ফেসবুক চালাতো । এমনই এক অলস বিকেলে রাখাল বালকের মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি এসে হাজির । সে তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে স্টাটাস দিল, বাঘ এসেছে ! আমাকে বাঁচাও !

রাখাল বালকের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে গ্রামের অনেকেই এড ছিল । বিশেষ করে গ্রামের সকল মেয়ে তার ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল । এই স্টাটাস দেওয়ার সাথে সাথে এঞ্জেল পরি নামের এক মেয়ে সেটা শেয়ার দিল নিজের ওয়ালে । শেয়ার দিয়ে লিখলো, এই রাখাল বালক আমার বন্ধু । আজকে ওকে যে রক্ষা করবে তাকে আমি আমার ইমু নাম্বার দিবো ।
আরও অনেকে নানান কাতুতি মিনতি করে সেই পোস্ট শেয়ার দিল ।

এদিকে কয়েকজন কৃষক নিজেদের মাঠে কাজ করছিলো আর মাঝে মাঝে তার ফেসবুকটা চেক করছিলো । এঞ্জেল পরির পোস্ট শেয়ারের সাথে সাথে তাদের কাছে নটিফিকেশন গিয়ে হাজির । এঞ্জেল পরিকে তারা সি ফার্স্ট করে রেখেছিলো । আর যায় কোথায় তারা তখনই রাখাল বালককে রক্ষা করতে বনের পাশের মাঠের দিকে দৌড় দিল ।

কিন্তু গিয়ে দেখলো রাখাল বালক দিব্যি সুস্থ সবল ভাবে বসে আছে । আর ফেসবুকিং করছে ।
ওরা তো রেখে গেল খুব । রাখাল বালক দাঁত বের করে হাসলো খুব । তারা আসতেই তাদের কে নিয়ে একটা সেলফি তুলে ফেলল চট করে । তারপর সেটা সেটা পোস্ট করে দিল । সেই পোস্টে অনেক হাহা পড়লো । কৃষকদের নাক কাটা পড়লো ।

কৃষক কয়জন ফিরে এসে নিজেদের ফেসবুকে খুব জ্বালাময়ী এক স্টাটাস দিল । বর্তমান যুবক সমাজের যে কি পরিমান অবক্ষয় ঘটেছে সেই ব্যাপারে বিস্তার আলোচনা হল ।
ফেসবুকে অনেকে রাখাল বালকের উপর খুব নাখোশ হল । কেউ কেউ তাকে ট্যাগ করে আনফ্রেন্ড করে দিল । তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে ছেলে এমন গুজব ছড়াতে পারে তার সাথে বন্ধুত্ব মানায় না ।

তবে এঞ্জেল পরি কিন্তু ঠিকই রাখাল বালকের পক্ষ নিল । যখন অনেকে রাখাল বালকের বিপক্ষে দাড়িয়ে স্টাটাস দিচ্ছিলো তখন এঞ্জেল পরি স্ট্যান্ড ফর রাখাল হ্যাস ট্যাগ ক্যাম্পেইন চালু করলো ।

এই ভাবে কদিন চলে গেল । কিছু দিন পরে আবারও রাখাল বালকের মনে আবারও দুষ্ট বুদ্ধি উদোয় হল । সে এইবার কেবল স্টাটাসই দিল । সেই সাথে একটা ছবি যুক্ত করে দিল । রাখাল বালক আবার ফটোশপে খুব পারদর্শী ছিল । সেই ইন্টারনেট থেকে একটা বাঘের ছবি ডাউনলোড করে সেটা এমন চমৎকার ভাবে সেটা ফটোশপড করে পোস্ট করলো দেখে মনে হচ্ছিলো যেন সত্যিস সত্যিই যেন বাঘ আসছে ।
আবারও যায় কোথায় ! ইন্টারনেটে আবার বন্যা বয়ে গেল । আগের বার স্টাটাস দেখে যারা এসে ধরা খেয়েছিলো তারা পর্যন্ত বিশ্বাস করলো যে বাঘ আক্রমন করেছে । আবারও একই ভাবে এঞ্জেল পরি রাখালের পক্ষ স্টাটাস দিল । আবারও গ্রামবাসী ছুটে এল রাখালকে বাঁচানোর জন্য । কিন্তু এসে দেখে আগের মতই অবস্থা । রাখাল আপন মনে ফেসবুকে করছে ।
এবার তারা খুবই বিরক্ত হল । পারলে রাখালকে ধরে মাইর দেয় । কেউ কেউ আবার রাখালের নামে ৫৮ ধারায় মামলা করতে চাইলো । নিশ্চিত ভাবে এটা একটা সাইবার ক্রাইমের ভেতরে পরে ।

তবে সেটা করলে আবার বেশি বেশি হয়ে যাবে এই ভেবে তারা কেবল রাখালকে ব্লক মেরে দিল । কদিন এভাবে চলল । এরপর একদিন সত্যিই সত্যিই বাঘ এল । রাখাল বাঁচাও বলে প্রথমে স্টাটাস দিল । কিন্তু কোন কাজ হল না । তারপর ছবি তুলে পোস্ট করলো তবুও কাজ হল না । সবার শেষে সে লাইভে চলে গেল । লাইভে দেখা গেল বাঘ এগিয়ে আসছে । তবুও মানুষজন এগিয়ে এল না । কারন সবাই তো তাকে ব্লক করে রেখেছে । যারা পোস্ট দেখলো তারা কেবল হাহাই দিয়ে গেল । কেউ বিশ্বাস করলো না তাকে ! কেউ কেউ নিচে লিখলো জোস মামা জোস ! আমরা এই রকম ভিডিও এডিটিং শিখতে চাই

এদিকে বনের বাঘ মামা নিজের ফেসবুকে স্টাটাস দিল অনেক দিন পর রাখাল বালক দিয়ে লাঞ্চ ! ফিলিং হ্যাপি !

বাঘকে আবার অনেক কৃষক ফলো করতো । তার এই স্টাটাস দেখে তারা সেই বনের দিকে ছুটে গেল কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে । সব শেষ হয়ে গেছে । কেবল রাখাল বালকের ফোনটা মাটিতে পড়ে আছে । একজন কৃষক সেটা হাতে নিয়ে কিছু সময় টেপাটেপি করতেই নতুন আরেকটা সত্য আবিষ্কার করলো । এঞ্জেল পরি আসলে রাখাল বালকের ফেইক আইডি ছিল ।



রূপকথার গল্প অবলম্বনে


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। তোমরা সংযত হও, নাহলে আমি পদত্যাগ করবো।

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:০৬




প্রফেসর ইউনূস এখন কী করবেন? তার সামনে বিকল্প খুবই কম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার নেতৃত্ব অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে । হয় তিনি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, না হয় পদত্যাগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পুতুল নাচের মাঝের গল্প : ওয়াকার বনাম ইউনূস !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:০৯


বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা দেখে একজন সাধারণ নাগরিক কি ভাবছেন? তাদের ভাবনার আদৌতে গুরুত্ব আছে কোনো ? দেশে ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় থেকে টেনেটুনে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে নির্বাচন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে...

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪


পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরি এলাকায় তাওহীদ মডেল মাদরাসার এক শিক্ষার্থী (সুমনা)’র রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

নিহতের বড় বোন আমেনা খাতুন জানান, কিছুদিন আগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বসন্তের মত ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের জুলাই বিপ্লব

লিখেছেন ইশতিয়াক ফাহাদ, ২৩ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৫১

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের স্বৈরশাসনের একটি নিদারুণ চক্র যেন ক্রমাগত ফিরে এসেছে। প্রতিটি স্বৈরশাসকের শাসনকাল যেন পূর্বসূরির তুলনায় দ্বিগুণ সময় ছিল ।
শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৩ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০১



ডক্টর ইউনুস আর এই দেশের ক্ষমতায় আর থাকতে চাচ্ছেন না। তবে এর দায় ভারতের নয়, পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগের নয়। এই দায় সম্পুর্নভাবে এই দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপির।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×