প্রথম পর্ব
তিন
সন্ধ্যাবেলাটা কবীর চৌধুরীর সব সময় একা একাই কাটে । যখন তার স্ত্রী বেঁচে ছিল তখন এই সময়টা সে তার স্ত্রীর সাথেই কাটাতো সব সময় । হাজার কাজ থাকুক সব সময় সন্ধ্যার সময় টুকু সে নিলুফার সামনে গিয়ে হাজির হত । মাঝে মধ্যে যদি এমন হত যে সে কোন ভাবেই তার সামনে গিয়ে হাজির হতে পারছে না তখন আগে থেকেই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তাকে অফিসের লাগোয়া গেস্ট রুমে নিয়ে আসা হত । এই সময় টুকু সে তার সাথে গল্প গুজব হাসি ঠট্টা করেই কাটাতেন । এটা নিয়ে অবশ্য তাকে মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের সামনে খানিকটা লজ্জায় পড়তে হত । ছেলে মেয়েরা তখন প্রায়ই তার কাছে অভিযোগ করতো যে বাবা তাদের থেকে তার মাকেই বেশি সময় দেন । তার আচরন নাকি নতুন বিয়ে করা জামাইয়ের মত ।
তখন ছেলে মেয়েরা ছোট ছিল । জীবন টা অনেক সহজ আর সুন্দর ছিল । কিন্তু সময় যাওয়ার সাথে সাথে সেই সময় গুলো কঠিন হয়ে এসেছে । চার বছর আগে নিলুফার ইয়াসমিন তাকে ছেলে চলে গেছে । তারও বছর খানেক আগে তার ছোট ছেলে বাসা ছেলে চলে গেছে রাগ করে । নিলুফার বেঁচে থাকার সময় অপু মাঝে মাঝে মায়ের সাথে দেখা করতে আসতো কিন্তু গত চার বছরে একটা বারের জন্য সে বাসায় আসে নি । বড় ভাই আর বোন তার দিকে আছে বলে তাদের সাথেও সে ঠিক মত কথা বলে না । অথচ এই ছোট ছেলে একটা সময় বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতো না !
-স্যার !
কবির চৌধুরী ফিরে তাকালেন । তার সেক্রেটারি হাসান দাড়িয়ে আছে । মুখ খানিকটা শঙ্কিত । ছেলেটা কাজ কর্মে এমনিতে বেশ চটপটে তবে তার সামনে আসলেই ছেলেটার নার্ভাস হয়ে যায় । তাকে কোন এক অদ্ভুদ কারনে সে ভয় পায় অথচ হাসানের সাথে সে কোন দিন কড়া কন্ঠে একটা কথাও বলে নি । কবীর চৌধুরী বলল
-বল হাসান !
-স্যার আপনি রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন !
-অপুর ব্যাপারে ?
-জি স্যার !
-বল কি খবর শুনি ?
-স্যার খবর আসলে বেশ জটিল ।
-জটিল বলতে ?
-মানে আমরা আসলে যেমন করে পরিকল্পনা করেছিলাম তেমন কিছুই হচ্ছে না ।
কবীর চৌধুরী এবার একটু নড়ে চড়ে বসলো । হাসানের দিকে তাকিয়ে তার মনে হচ্ছে যা ঘটেছে এটা আসলে তার ভুলের জন্য হয়েছে । এখন সে সব কিছুর দায় নিতে তার সামনে এসে হাজির হয়েছে । হাসান বলল
-স্যার আমরা যে শফিক নামের ছেলেটাকে ঠিক করেছিলো সে তার কথা বরখেলার করেছে ।
কবীর চৌধুরী খানিকটা ভুরু কুচকে তাকালো হাসানের দিকে । কথাটা তার পছন্দ হয় নি । কেউ তাকে কথা দিয়ে কথা না রাখলে তার খুব রাগ হয় । তখন তার পেছনে সে উঠে পড়ে লাগে । আর ঘটনা যখন তার ছোট ছেলে সম্পর্কে তখন তো শফিকে একটা শক্ত শাস্তি দিতে হবে ।
তার ছোট ছেলের প্রেমিকা সম্পর্কে সে খুব ভাল খোজ খবোর রাখে । এও খবর রাখে যে কদিন আগেই মেয়েটা অপুর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে । তার খুব ইচ্ছে হল মেয়েটাকে ধরে আচ্ছা মত একটা বকা দেয় । কিংবা নাদিয়ার বাসায় গিয়ে অপুর আসল পরিচয় দিলেই সুরসুর করেই মেয়েটা আবার অপুর কাছে ফেরৎ যাবে । তবে এই কথা যদি অপু জানতে পারে তাহলে ফলাফল উল্টো হতে পারে । তাই সেদিকে যায় নি । বরং উল্টো পথ বেঁছে নিয়েছে । নিজের কোম্পানীর এক ছেলেটাক লাগিয়েছে নাদিয়ার পেছনে । তাকে বলা হয়েছে পারিবারিক ভাবে নাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য । তারপর যখন সব কিছু একদম পাঁকাপাকি হয়ে যাবে তখন বিয়ে ভেঙ্গে দিতে ।
হাসান বলল
-শফিক আমার কাছে ফোন করে জানিয়েছে যে তার পক্ষে কোন ভাবেই বিয়ে ভাঙ্গা সম্ভব না । তার বাবা মা নাদিয়াকে এবং তার পরিবারকে খুবই পছন্দ করেছে এবং সে নিজেও নাদিয়াকে পছন্দ করে ফেলেছে ।
-তুমি বলেছো যে এই কাজটা করলে তার চাকরি থাকবে না ।
-স্যার সে গতকালই চাকরি ছেড়ে দিয়েছে ।
-আই সি !
কবীর চৌধুরী এবার খানিকটা চিন্তিত হলেন । তার ছোট ছেলেটা কতদিন ধরে একা একা থাকে । নাদিয়া চলে যাওয়াতে সে খুব কষ্ট পাবে । ছেলের ভাল করতে গিয়ে শেষে আরও বড় ক্ষতি করে ফেললেন । হাসান বলল
-তবে স্যার সমস্যাটা এটা না ।
-মানে ? এটা তোমার কাছে সমস্যা মনে হচ্ছে না ?
-আসলে স্যার আজকে নাদিয়া ম্যাডাম নিজেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে ।
-মানে ?
-জি মানে সে শফিকের সাথে কোন ভাবেই বিয়ে করবে না এটা তার বাবা মাকে জানিয়ে দিয়েছে সে । দরকার হলে সে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মারা যাবে তবুও অন্য কাউকে বিয়ে করবে না । আজকে যতদুর জানতে পেরেছি সে তার ক্যাম্পাসের ক্যামিস্ট্রি ল্যাবের দারোয়ানকে টাকা খাইয়ে খানিকটা পটাশিয়াম সায়ানাইড যোগার করেছে ।
-সেকি !
-জি স্যার । সে আবারও ছোট স্যারের জীবনে ফেরৎ যেতে ইচ্ছুক !
-দ্যাটস গ্রেইট ! তো তুমি কেন বলছো যে খবর আসলে বেশ জটিল ?
হাসানকে কিছুটা সময় দ্বিধা গ্রস্ত দেখা গেল । কাবীর চৌধুরী বলল
-আরও ঘটনা আছে ?
-জি স্যার !
-কি ?
হাসান আরও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-আসলে ছোট স্যার এখন আর নাদিয়ার দিকে তাকাচ্ছে না । ঐ লেডি ডিবি অফিসারের সাথে মনে হয় তার কিছু চলছে !
কাবীর চৌধুরী কিছু সময় কোন কথা বলতে পারলেন না । হাসানের কথা ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না । তার পরেও আরেকবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলল
-ডিবি অফিসার মানে ঐ নিকিতা আহমেদ ?
-জি স্যার !
পুরো দেশে কম করেও কোটি খানেক মেয়ে আছে যার সাথে তার ছোট ছেলে সম্পর্কে জড়াতে পারতো । আর সে কি না খুজে খুজে এই মেয়ের পেছন ঘুরছে ! হাসান বলল
-গত সপ্তাহে তাকে নিয়ে প্রথম মুভি দেখতে গিয়েছিলো । গত পরশু দিন বৃষ্টির মধ্যে ছোট স্যার হঠাৎ করে তার অফিসের সামনে গিয়ে হাজির হয় । তারপর তাকে বাইরে ডেকে আনে । দুজন অনেকটা সময় বৃষ্টির ভেতরেই মিন্টু রোডের এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে । তারপর ....
-তারপর ?
-তারপর একটা সময় ছোট স্যার ......
হাসান কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল । ঠিক যেমন মুখ দিয়ে বলতে পারছে না । স্যার সামনে বলতে দ্বিধা বোধ করছে । কবীর চৌধুরী হাসানের না বলা কথাটা বুঝে গেলেন সহজেই । তারপর বললেন
-আচ্ছা ঠিক আছে । আর কোন নতুন নিউজ ?
-ঐ ডিবি অফিসার আজ দুদিন ধরে বাসা থেকে বের হয় নি । এদিকে ছোট স্যারও বাসা থেকে বের হচ্ছে না ।
-আচ্ছা চোখ রাখো । এর পরে কি করতে হবে সেটা আমি বলে দিবো !
হাসান বলতে গেলে একেবারে দৌড়ে চলে গেল অফিস থেকে । কবীর চৌধুরী আবারও নিজের চিন্তার মাঝে হারিয়ে গেলে । তাকে আবারও নতুন কিছু ভাবতে হবে । যেভাবে ভেবেছিলেন নিকিতা আহমেকে এড়িয়ে যাবে ভেবেছিলো সেভাবে কাজটা আর করা যাবে না ।নতুন করে কিছু করতে হবে । এমন কিছু যাতে নিকিতা মেয়েটা কিছু না করতে পারে আবার তার ছোট ছেলেরও যেন কোন ক্ষতি না হয় । তার ছেলে যদি নিকিতাকে পছন্দ করেই থাকে তাহলে মেয়েটার কোন ক্ষতি করা যাবে না । অন্য ভাবে সামাল দিতে হবে !
চার
নিকিতা চোখ মেলে কিছু সময় সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর একটু কাত হয়ে জানালার দিকে তাকালো । সন্ধ্যা থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । কিন্তু এখন আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আলো এসে পরেছে ঘরের ভেতরে । চারিদিকটা অন্য রকম লাগছে ।
নিকিতার নিজের কাছে কেবল যেন অদ্ভুদ লাগছে । ইদানিং এই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে । কাজ কর্ম থেকে ফোকাস সরে যাচ্ছে । এমনটা তার সাথে এর আগে কোন দিন হয় নি । এই ছেলের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে । মানুষের জীবন কেন এমন হবে ? সে নিজের জীবনটা তো নষ্ট করছে সেই সাথে আশে পাশের মানুষ গুলোতে প্রভাবিত করে ফেলছে । খুব দ্রুতই অপুর কাছ থেকে দুরে চলে যাওয়া উচিৎ কিন্তু নিকিতা দুরে যেতে তো পারছেই না বরং আরও কাছে চলে আসছে ।
নিকিতা কি কোন দিন ভেবে ছিলো যে এমন ভাবে একজনের সাথে পরিচয় হবে । দুনিয়ার এতো ছেলে থাকতে সে কি না এমন একজনের সাথে তার ভাব হচ্ছে যার বাবা এদেশের সব বড় অর্গানাইজড ক্রাইমের হেড । দেশে যত রকমের অর্গানাইজদ ক্রাইম হয় সেটার নিয়ন্ত্রক অপুর বাবা কবীর চৌধুরী । যতই অপু তার বাবার সাথে না থাকুক বা তার সাথে কোন সম্পর্ক না রাখুক অপু যে তার ছেলে এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই ।
নিকিতা পাশ ফিরে শুলো । অপু ঠিক ওর পাশেই শুয়ে আছে । ঘুমন্ত চোখের উপর চাঁদের আলো এসে পরেছে । অদ্ভুদ মায়ময় লাগছে মুখটা । নিকিতার মুখে আপনা আপনি একটা হাসি দেখা দিল । ছেলেটার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছে ওর !
কি অদ্ভুদ এই মানুষের মন ! কদিন আগেও এই ছেলেটাকে চিনতো না । কোন দিন এই ছেলের সাথে তার ভাব হওয়ার কথাও ছিল না । কিন্তু হয়ে গেছে ।
পার্কিংয়ের ঐ ঘটনার পর থেকে অপুর প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়েছিলো । কেন হয়েছিলো সেটা নিকিতার জানা নেই । ছোট বেলা থেকে সে কখনই অন্যের সাহায্য নিতে অভ্যস্ত নয় । যা করেছে জীবনে সব নিজে নিজেই । কারো সাহায্য নিলে সেটা সাথে সাথেই ফেরৎ দেওয়ার চেষ্টা করতো সব সময় । কিন্তু অপুর সাহায্যের ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম । কোন ভাবেই সেটা ফেরৎ দিতে পারার কথা না ! মনের ভেতরে তাই একটা অস্বস্তিবোধ করছিলোই ।
তারপরই সবুন্ধরা ছেলেটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল । অপু যখন বলল যে কিছু সময়ের জন্য তার প্রেমিকার ভূমিকাতে অভিনয় করতে তখন প্রথমে একটু মেজাজ গরম হয়েছিলো । তবে সেটা সামলে নিয়ে রাজি হয়ে গেল । ওর প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । নিকিতার সত্যিই মজা লাগতে শুরু করলো তখন । এই মেয়েটা কেবল একটা ভাল চাকরিওয়ালা ছেলে দেখে অপুকে ছেড়ে গেছে !
নিকিতা এই ব্যাপারটা একদম সহ্য করতে পারে না । নিকিতার এই রকম মেয়েদেরকে কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করে । যদি ভাল চাকরি আর ভবিষ্যৎই তোদের প্রধান লক্ষ্য থাকে তাহলে বাপু তোমরা কেন প্রেম পিরিতের ভেতরে যাবা । একেবারে ভাল চাকরিওয়ালাকেই ধর ! না তা না ! তোমরা নিজেদের পছন্দমত ছেলেকে পছন্দ করবে, প্রেম করবে, তাকে স্বপ্ন দেখাবে তারপর নিজেও ভাল চাকরির বোঝা চাপিয়ে দিবে ! কেন ?
নিকিতা এই জন্যই রাজি হয়েছিলো । এবং নাদিয়ার নামের মেয়েটার মুখের ভাব দেখে নিকিতার সত্যিই ভাল লাগছিলো । অপু যে ওকে ছেড়ে নিকিতার সাথে নতুন সম্পর্ক করেছে এটা নাদিয়া কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না । মেনে নিতে পারছিলো না । নিকিতা এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানে । ব্রেক আপের পরেও মেয়েটা আগের প্রেমিকার সাথে অন্য মেয়েকে ঠিক সহ্য করতে পারে না ।
সেদিন অপুর সাথে মজা করে মুভি দেখেছিলো । সময় তার ভাল কেটেছিলো !
নিকিতা ভেবেছিলো ওখানেই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সেটা হল না । ঠিক তার পর দিনই অপুর সাথে আবার দেখা হল । এবার অবশ্য অপু নিজেই দেখা করতে এসেছিলো । ওর অফিসের গেস্ট রুমেই বসে ছিলো । অপুকে দেখে কিছু যে অবাক হয়েছিলো সেটা সে লুকানোর চেষ্টা করে নি ।
-আপনি এখানে ?
-দেখা করতে এলাম !
অপু হাসলো ।
কিছু সময় টুকটাক কথা বলার পরেই অপু বলল, আপনি কি সত্যিই কবীর চৌধুরীর পেছনে লেগেছেন ?
নিকিতা খানিকটা অবাক হয়েই দেখলো যে অপু নিজের বাবাকে নাম ধরে ডাকছে !
নিকিতা তীক্ষ্ণ চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো অপুর দিকে । তারপর বলল, হ্যা । তার শেষ আমি দেখে ছাড়বো !
অপু বলল, তাহলে আপনাকে বলে রাখি আপনার এই লড়াইয়ে কিন্তু একা ! আপনি কারো সাহায্য পাবেন না । এমন কি আপনার ডিপার্টমেন্ট থেকেও না । আপনার উপর আবারও হামলা হবে । ঐদিন ওরা ৫ জন যখন আমাকে দেখে দৌড় দেয় প্রথমে আমি খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম । ওরা চাইলেই আমাকেও মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু তার বিপরীতে পালিয়েছে । প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । পরে আপনার মুখে কবীর চৌধুরীর নাম শুনে কারন টা বুঝতে পারলাম । আমাকে ওরা চিনতে পেরেছে । এই জন্য পালিয়েছে ।
নিকিতা বলল, আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন ?
-আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনার উপর আবারও হামলা হবে । আমার যদি তাকে চিনতে ভুল না হয় তাহলে আপনার ২৪ ঘন্টার খবর তার কাছে আছে । হয়তো এর পরের বার যখন হামলা হবে তখন আমি থাকবো না । তখন ?
নিকিতা এবার সরু চোখ তাকালো অপুর দিকে । ছেলেটা কি ওকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে । বাবার হয়ে নিজে এসেছে ওকে হুমকি দিতে । ওর মুখটা একটু শক্ত হয়ে এল । অপু সেদিকে না তাকিয়ে বলল, কেবল যে আপনার নিজের উপরে বিপদ আসবে সেটা না । আপনার ফ্যামিলর উপরেও আসবে । বিশ্বাস করুন তার মত ভয়ংকর মানুষ নেই !
-আপনি কেন এসেছেন আমাকে তাই বলুন ? আমার কাছে কি চান ?
-আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই ।
-সাহায্য ? কিভাবে ?
-আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যান ?
-মানে !!
নিকিতা সত্যিই অবাক হয়ে গেল । কি বলবে বুঝতে পারলো না ।
অপু বলল, আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যান । তাহলে আপনার কিংবা আপনার ফ্যামিলির উপর কোন বিপদ আসবে না । আপনি আপনার কাজে ঝামেলা ছাড়া চালিয়ে যেতে পারবেন ।
-আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে আপনার গার্লফ্রেন্ড হলেই আমার উপর আর হামলা হবে না ?
অপু এবার একটু হাসলো । তারপর বলল, আমি তাকে চিনি তাই বললাম । যাক সেটা আপনার নিজের ব্যাপার । আমি আমার কথা বললাম ! বাকিটা আপনার ব্যাপার ! আজকে আসি । আপনার উত্তরটা জানাবেন !
এই বলে অপু উঠে দাড়ালো । তারপর দরজার দিকে পা বাড়ালো । নিকিতা হঠাৎ পেছন থেকে বলল, আপনি কেন আমাকে সাহায্য করতে চাইছেন ?
অপু দাড়ালো একটু । তারপর পেছন ফিরে তাকালো । বলল, কারন আমি ঐ মানুষটার কারনে আমার মা মারা গেছে ।
নিকিতা অপুর কন্ঠের তীব্রতা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গেল । আর কিছু জানতে চাইলো না ।
তারপর থেকেই তাদের দেখা হতে থাকলো । কিন্তু ঝামেলা পেঁকে গেল অন্য খানে । সপ্তাহখানেক পড়ে এক বৃষ্টির সময় অপু হাজির হল ওর অফিসের সামনে । ওকে ডেকে নিয়ে গেল বৃষ্টির ভেতরে । বৃষ্টির মাঝেই ওরা মিন্টুরোডের ভেতরে হাটাহাটি করলো দৌড় ঝাপ করলো । নিকিতা খানিকটা অবাকই হচ্ছিলো এটা দেখে এতো বড় হয়েও অপুর মাঝে কি পরিমান ছেলেমানুষী রয়ে গেছে । তীব্র বৃষ্টির মাঝে নিকিতার ভিজেও চমৎকার লাগছিলো অবশ্য । এই রকম ভাবে কবে শেস বৃষ্টিতে ভিজেছে সেটা নিকিতার মনেও নেই ।
হাটতে হাটতেই একটা রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তীব্র গতিতে চলে গেল । রাস্তার পানিটা তখন ছিটকে আসছিলো নিকিতার দিকে । অপু তখনই ওর সামনে চলে এল । একেবারে ওর কাছাকাছি । নিজের শরীর দিয়েই ময়লা পানিটা আটকালো । নিকিতার এতো কাছে চলে এসেছিলো যে দুজন কেবল দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো । তারপর কিভাবে দুজন দুজনকে চুমু খেলো সেটা ওরা কেউই বলতে পারবে না ।
পাতানো প্রেম কিভাবে সত্যিই হয়ে গেল সেটাও দুজনের কেউ বলতে পারলো না । এখন দিনের একটা বস নিকিতা অপুর কথা ভাবে । ওর ভাবতে ভাল লাগে । এই বয়সে এসেও যে ও এভাবে প্রেমে পড়বে সেটা নিকিতা ভাবতেও পারে নি ।
নিকিতা অপুর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ঈ রইলো কিছুটা সময় । এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো ।
সকালে কারো চিৎকার চেঁচামিচিতে ঘুম ভাঙ্গলো । চোখ মেলে কিছু সময় বুঝতে পারলো না কোথায় আছে । তারপরই সব মনে পরে গেল । অপুর চিলেকোঠায় রয়েছে । অপুর এই চিলেকোঠাটা আট তলা বিল্ডিংয়ের উপরে । ছাদের এক পাশে দুইটা রুম । একটা একটু বড় আরেকটা একদম ছোট । একটা খাট আর টেবিল ধরে কোন মতে । নিকিতা বিছানা ছেড়ে উঠে পাশে ঘরে যেতে কিছু সময় ফ্রিজ হয়ে হয়ে গেল । অপুর এক পাশে দাড়িয়ে আছে । দরজারটা খোলা । তার ঠিক সামনেই ওর প্রাক্তন প্রেমিকা দাড়িয়ে আছে । ও ঘরে ঢুকতেই নাদিয়া বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকালো । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে নিকিতা এখানে থাকতে পারে !
নিকিতা এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পরে নি এর আগে । কি বলবে আর কি বলা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারলো না ।
নাদিয়া হাত তালি দিক একটা । তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, এতো দুর ?
-বাহ ! আমার হাতও ঠিক মত ধরতে পারতে না আর এই মেয়ের সাথে .... এই মেয়ে দেখছি খুবই ফার্স্ট...
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭