somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড়গল্পঃ মাই হোমমিনিস্টারঃ চ্যাপ্টার টু

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি গুগল
প্রত্থম অংশ

পর্ব ছয়

এর আগেও আমি গুলির খেয়েছি ! তবে সেই গুলি খাওয়ার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতির ভেতরে একটা পার্থক্য আছে । সেই সময়ে আমি জানতাম না যে কখন গুলিটা আমার শরীরে এসে লাগবে । আমি জানতামই না যে কোন গুলি আসবে । আমি তখন অন্য কিছু করছিলাম । বলা যায় আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর একটা সময়ের ভেতরে দিয়ে যাচ্ছিলাম । সেই সময়ে হঠাৎ করে এসে গুলিটা আমার শরীরে লাগে । কিন্তু এখন আমি জানি । আমি ঠিক ঠিক জানি যে আর কয়েক সেকেন্ড পরেই গুলিটা এসে আমার পেছনে লাগবে ।
আচ্ছা কোথায় লাগবে ?
আমি যেহেতু পেছন দিক করে আছি ওরা আমার পিঠেই গুলিটা মারবে । ঠিক স্থানে যদি লাগে তাহলে হয়তো সাথে সাথেই মারা যাবো । কিন্তু যদি এদিক ওদিক লাগে তখন কষ্ট পেয়ে মরবো ।

আমার মাঝে কি হল ঠিক জানে না । আমি আর নিজেকে স্থির ভাবে দাড় করিয়ে রাখতে পারলাম না । গুলি চালানোর ঠিক আগ মুহর্তে আমি দৌড় দিলাম ! এটা সম্ভবত ওরা আশা করে নি । আমি যেভাবে নিশ্চল হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম, ওরা ভেবেছিলো যে আমি হয়তো এভাবেই দাড়িয়ে থাকবো । নিশ্চিত মৃত্যুকে সামনে দেখে অনেকের শরীর অবস হয়ে যায় । ওরা ভেবেই নিয়েছিল যে আমি এক স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবো ।
আমি দৌড়ানোর সময় প্রথমেই একটু ডান দিকে বেঁকে গিয়েছি তারপর বাঁ দিকে চলে এসেছি । এটাই সম্ভবত বুদ্ধুমানের কাজ ছিল । প্রথম গুলিটা ঠিক আমার কানের পাশ দিয়ে বাতাস কেটে চলে গেল । আমি আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম ।
আরও একটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম । তবে এটাও আমার শরীরে লাগলো না ।

আর একটু দুরে । যদি কোন মতে আমি সামনে গাছ পালার ভেতরে ঢুকে যেতে পারি তাহলে হয়তো এই যাত্রায় আমি বেঁচে যেতে পারি ! এই তো চলে এসেছি । আর হয়তো কয়েক কদম !
যখন ভেবেই নিয়েছি আমি যে আমি এইবার বেঁচে গিয়েছি ঠিক সেই সময়েই গুলিটা আমার কাধে লাগলো । আমার আবারও সেই অনুভূতিটা হল । মনে হল যেন আমার শরীর দিয়ে একটা আগুন ঢুকে যাচ্ছে । আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম সামনে ।

কিছু সময় যেন মাথার ভেতরে সম্পূর্ক খালি হয়ে গেল । আমার মাথার ভেতরের সমস্ত নিউরন কেবল আমার ডান কাধের কাছে ব্যাথাটার কথা চিন্তা করতে লাগলো । অন্য কিছু যেন নেই পৃথিবীতে ।

কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য । আবারও সব চিন্তা ফেরৎ এল । পেছনের লোক গুলো এখনই এগিয়ে আসবে ।
নাহ ! তার আগেই আমাকে উঠতে হবে ! এভাবে মরে যাবো ?
না এর আগেও দুইবার আমি মৃত্যুর মখ থেকে ফেরৎ এসেছি !
মনের শক্তিটুকু এক সাথে করলাম । তারপর উঠে দাড়ালাম চট করে !

পেছন থেকে আবারও হই হই শুনতে পেলাম ! তবে আমি সেদিকে লক্ষ্য দিলাম না । আমি একেবারে গাছগাছির কাছে চলে এসেছি । আর চিন্তা না করেই আমি গাছগাছির ভেতরে ঢুকে পড়লাম । তারপর দৌড়াতে শুরু করলাম । পেছন থেকে আবারও গুলির আওয়াজ আসতে লাগলাম তবে এইবার আর খুব একটা কাজ হল না ।
আমাকে এতো সময়ে ওরা দেখতে পাচ্ছিলো কারন গাড়ির হেড লাইট জ্বালানো ছিলো । কিন্তু এই গাছগাছালির ভেতরে ঢুকে পড়াতে আমাকে ওরা দেখতে পাচ্ছে না । আমি কোন দিকে যাচ্ছি সেই সম্পর্কে ওদের কোন ধারনা নেই । আমি খানিকটা বেঁকে দৌড়াতে শুরু করলাম । সামনে কি আছে সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি না তবে সেটা আমার এখন চিন্তার কোন বিষয় নয় । আমি প্রাণ ভয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম । কেবল মনে হতে লাগলো যে এখন আমি থামলেই আমাকে মরতে হবে !
সম্ভবত এই চিন্তার কারনে আমি এবারের মত বেঁচে গেলাম । শুনেছি মানুষ যখন মৃত্যুর সামনে পরে তখন সে অসাধ্য সাধন করতে পারে । আমি যখন প্রাণ ভয়ে অন্ধকার বনের ভেতরে দৌড়াচ্ছিলাম তখন আমি কিভাবে যেন সামনের গাছ গাছালি কিছুর অবস্থান বুঝতে পারছিলাম । দ্রুত সরে যাচ্ছিলাম । তাই মোটামুটি বন ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারছিলাম কিন্তু পেছনের মানুষ গুলোর ভেতরে এই অনুভূতিটা কাজ করছিলো না যে ওদের কেউ মারতে আসছে । সম্ভবত এই কারনেই ওরা আমাকে ধরতে পারলো না আর । কত সময় আমি দৌড়েছি সেটা আমি বলতে পারবো না তবে আমার বুঝতে অসুবিধা হল না যে আমি ওদের কাছ থেকে অনেক দুরে চলে এসেচি । ওরা আর আমাকে খুজে পাবে না ।

যখনই আমার মন বিশ্বাস করে নিল যে ওরা আর আমাকে খুজে পাবে না তখনই আমার শরীর পুরোপুরি ছেড়ে দিলো । কাধের ব্যাথাটা আবার ফিরে এল সাথে সাথে । আমার পুরো পৃথিবী যেন আবারও নড়ে উঠলো একেবারে ! আর কয়েক কদমও যেতে পারলাম না। আমার কাছে মনে হল আমার শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই । মাটিতে পড়ে গেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার ।

অল্প অল্প চেতনা ফিরে ফিরে এসেছিল মাঝে মাঝে । আমার ভাসা ভাসা কিছু মনে আছে । একবার মনে হল কেউ আমাকে কাধে তুলে নিয়েছে । আমাকে বয়ে নিয়ে চলছে । আমার শরীরে কাছ পালার মৃদু আঘাত লাগছে । তারপর একবার মনে হল আমি যেন কারো কাধে ভর দিয়ে এগিয়ে চলছি । আবার একবার মনে হল একজন নয়, দুজনের কাধে ভর দিয়ে এগিয়ে চলছি !
বিলাপের মত কি যেন বলছি । পুর সময় জুড়ে আমার কাধের ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছিলাম পুরোপুরি । একবার মনে হল আমি যেন নিকিতাকে দেখলাম । আমাকে মাটিতে শুইয়ে রেখেছে । আমার চোখের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে !
আচ্ছা নিকিতা কি কাঁদছে ?
ওর চোখে আমি যেন কান্না দেখতে পেলাম । আমার কষ্টে ও নিজেও যেন কাঁদছে ।
এই ঘোরের ভেতরেও আমার মনে একটা শান্তি লাগলো । যাক মেয়েটা আমাকে ভালবাসে তো !
এই পৃথিবীতে একজন ভালবাসার মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ! সবাই ভালবাসা পায় না । আমি তো পেয়েছি ।
এই রকম ভাসা ভাসা অনেক দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।

যখন পুরো পুরি চেতনা ফিরে এল অনুভব করলাম আমি একটা কুড়ে ঘর জাতীয় কোথাও শুয়ে আছি । ঘরটা একটু অন্ধকার মত । কোন আলো জ্বলছে না ঘরের ভেতরে । দরজা জানলা থেকে যা আলো আসছে তাতেই ঘর টাকে আলোকিত করে রেখেছে । তবে বাইরের আলো সম্ভবত কমে আসছে । এখন সম্ভব বিকাল কিংবা সন্ধ্যার সময় । একটু পরেই রাত নামবে ।

আমি কোথায় আছি ?
আমাকে যে বনের ভেতরে নিয়ে এসছিল সেটা যে কোথায় সেটা আমি জানি না । তবে কেন জানি মনে হল আমি সেই বনের কাছাকাছি কোথাও আছি ।
আমি একটু উঠে বসার চেষ্টা করলাম । তখনই ঘরে দুজন মানুষকে ঢুকতে দেখলাম । একজন বৃদ্ধ মহিলা অন্য জন তরুণী । মেয়েটার বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম । ২৮/২৯ হবে । বৃদ্ধ মহিলা আদিবাসীদের মত পোশাক পরে আছে । চেহারাতেও তার একটা উপজাতী ছাপ রয়েছে । তবে মেয়েটিকে দেখে মনে হল সে উপজাতীদের কেউ নয় । মেয়েটি একটা কালো জিন্স পরে আছে । সাথে একটা কালো টিশার্ট । মেয়েটির মুখটা কঠিন । চোখ শান্ত । আমি জেগে উঠেছি দেখেও তার চোখে কোন পরিবর্তন আসে নি । আমার দিকে শান্ত চোখেই তাকিয়ে আছে । তবে বৃদ্ধ এগিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আরে উঠো না !
বৃদ্ধার কন্ঠে খানিকটা উপজাতীয় টান ।
তবে মেয়েটি কোন কথা বলল না । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো শান্ত চোখে । বৃদ্ধ আমার কাধের ক্ষত পরীক্ষা করলেন । তার মুখে কেমন যেন উদ্ধিগ্নের একটা ছাপ ফুটে উঠেছে ।
মেয়েটি এবার বলল, কি মনে হচ্ছে ?
বৃদ্ধ বলল, ভাল না । গুলিটা এখনও ভেতরেই রয়ে গেছে । যত সময় না আমরা সেতা বের করতে পারছি তত সময় বিপদ কাটবে না ।
মেয়েটি বলল, কোন ভাবেই বের করা যায় না ?
-এখানে সেই ব্যবস্থা নাই । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই হবে !
আমার ব্যাথা আবারও শুরু হল । আমি বুঝতে পারছিলাম আবারও আমি চেতনা হারাবো । কাধের এই দিকটাতে হঠাৎ করে আবার তীব্র ব্যাথা হতে শুরু করলো ।
আমার মুখের ভাব পরিবর্তন হতে দেখে বৃদ্ধ মহিলা বলল, ঔষধের প্রভাব কাটতে শুরু করেছে । আবারও ব্যাথা শুরু হবে । ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই হবে ।
মেয়েটি আবারও শান্ত কন্ঠে বলল, সেটা সম্ভব না কোন ভাবেই ।
-সম্ভব !
দেখলাম বৃদ্ধ মহিলা আর মেয়েটি পেছনে ঘুরে দাড়িয়েছে । অন্য আরেকজন ঘরের ভেতরে ঢুকেছে ।

ক্ষণে ক্ষণে আমার ব্যাথার পরিমানটা বাড়ছেই । আমি নতুন আসা মেয়েটির দিকে তাকালাম । মেয়েটিকে দেখে প্রথম যার কথা আমার মনে হল সে নিকিতা !
ও এসেছে ?
সাথে সাথেই সিদ্ধান্তটা বাতিল করে দিলাম ।

মেয়েটির মুখ স্কার্ফ দিয়ে আটকানো । কেবল চোখে দেখা যাচ্ছে । এই অল্প আলোর মাঝেও আমি মেয়েটার চোখের দৃষ্টিতে একটা বেদনার ছাপ দেখতে পেলাম !
এই মেয়েটা কি নিকিতা হতে পারে ?
মন খানিকটা দ্বিধায় পরে গেল ।

নিকিতা এখনে কিভাবে আসবে ?
সে তো রয়েছে আমেরিকাতে । তার এখানে আসার কথা না । মেয়েটার চাহনীটা নিকিতার মত ঠিক আছে তবে অন্য কিছুই নিকিতার মত না । বিশেষ করে নিকিতার চোখের মনির রঙ কালো । আমি এই অল্প আলোতেও দেখতে পাচ্ছি সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির চোখে খানিকটা বিড়ালচোখী । বিড়ালের মত । আর মেয়েটার শরীর যেন একটু মোটা ! নিকিতার শরীরে একটুও মেদ নেই । একেবারে স্লীম সে !
এই মেয়েটা কে?
স্কার্ফ পরা মেয়েটি বলল, আমার এক পরিচিত ডাক্তার আছে । ওকে ডাকা যেতে পারে ?
অন্য মেয়েটি বলল, আমরা কারো উপর বিশ্বাস করতে পারি না ম্যাম ! আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন !
-পারছি । কিন্তু আর কি কোন উপায় আছে ?
মেয়েটি কোন জবাব দিলো না ।
স্কার্ফ পরা মেয়েটি বলল, ওকে আগে সেফ হাউজে নিয়ে যেতে হবে । ওখানে ডাক্তার নিয়ে আসা যাবে !
তারপর বৃদ্ধ মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, মিলনাছড়া পর্যন্ত ওকে নিয়ে যেতে হবে । তারপর ওখান থেকে একটা জিপ ব্যবস্থা করা যাবে । এখন আমাদের আরেকটা উপকার করেন প্লিজ ।
বৃদ্ধ মহিলা মাথা নাড়ালো ।
মেয়েটি আবার বলল, ওকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিন । আমি আপনার এই উপকার কোন দিন ভুলব না ।
আমাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাই ওরা বলছে । আমাকে কাধে করে কেউ নিয়ে যাবে ব্যাপারটা আমার মোটেই পছন্দ হল না । আমি একা একাই যেতে পারবো । আমি প্রতিবাদ করে উঠতে যাবো তখনই আমার মাথা আবারও ঘুরে উঠলো । আমার মনে হল আমার পুরো শরীর যেন অবস হয়ে গেছে । মাথার ভেতর টা কে যেন ছুড়ি দিয়ে ছিড়ে দিচ্ছে !

আবার সামনে থেকে সব কিছু হারিয়ে গেল মুহুর্তেই । আমি আবারও জ্ঞান হারালাম !


পর্ব সাত

তো এখন কেমন লাগছে অপু সাহেব ?
আমি প্রশ্ন কর্তার দিকে ভাল করে তাকানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু পরিস্কার ভাবে দেখতে পেলাম না যে সামনের মানুষটাকে ? চেহারাটা কেমন যেন পরিচিত মনে হল । এই মানুষটার সাথে আমার আগেও পরিচয় হয়েছে হয়েছে কিন্তু পরিস্কার ভাবে তাকে আমি চিনতে পারছি না !

আবার কি স্বপ্ন দেখছি !

আমি যে স্বপ্ন দেখছি সেটা সত্য করার জন্যই আমি নিকিতা দেখতে পেলাম । নিকিতার লোকটার পাশে এসে বসলো । নিকিতা বসতেই লোকটা বলল, ভয়ের কোন কারন নেই । আজকের ভেতরে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবে । গতকালে গুলিটা বের করার পর অনেকটা ভাল হয়ে গেছে ক্ষত স্থান !
নিকিতার আওয়াজ শুনতে পেলাম । সে বলল, তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না ।
-আরে কি বল ! ধন্যবাদ কিসের ! বন্ধুই তো বন্ধুর কাজে লাগে ! যাক সেই সব কথা বাদ দাও । আমি এখন আসি । কাল আরেকবার আসবো ! ঠিক আছে ?

আমি দুজনকে উঠে যেতে দেখলাম । তারপর ঘরটা কিছু সময় একেবারে নিশ্চুপ হয়ে রইলো । আমি এক ভাবে সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বারবার মনে হতে লাগলো এখনই কেউ চলে এাসবে দরজা দিে । নিকিতা নিশ্চয়ই আসবে এখন ! তারপর আমার পাশে এসে বসবে !
কিন্তু কেউ এল না । তাহলে আবারও আমি স্বপ্নই দেখেছি ! চোখটা আবারও আস্তে আস্তে বুঝে এল । ঘুমিয়ে গেলাম !

কত সময় আমি ঘুমিয়েছি সেটা আমার মনে নেই তবে কারো ধাক্কাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । আমি চোখ মেলেই দেখতে পেলাম নিকিতা আমার মুখের উপর ঝুকে আছে ।
আমার আবারও মনে হল আমি স্বপ্ন দেখছি ।
নিকিতা এখানে কিভাবে আসবে ?
কিন্তু যখন আমাকে এক প্রকার জোর করে উঠে বসালো তখন মনে হল আমি স্বপ্ন দেখছি না !
তার মানে সত্যিই সত্যিই নিকিতা আমার সামনে ?
ও কোথা থেকে এল ?
কিভাবে এল ?

আমি মুখ খুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আরেকজন ঘরের ভেতরে ঢুকলো ।
গতদিনের সেই মেয়েটা !
নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল,ম্যাম খবর সত্যি !
নিকিতা সেদিকে না তাকিয়ে বলল, কত সময় লাগবে ?
-ঘন্টা দুয়েক ! ফোর্স রওয়ানা দিয়েছে ।
-জায়েদ আছে ওদের সাথে !
-জি ম্যাম ! উনি কাউকে জানান নি । ওনার বিশ্বত্ব দলটা নিয়ে আসছে ।
-হ্যা এইবার আর ভুল করবে না ! গাড়ি রেডি কর ! আর কোন সেফ হাউজে আর সেফ না আমাদের জন্য । খবর পৌছে যাবে !
-তাহলে কোন দিকে যাবো ?

নিকিতাকে চিন্তিত দেখলাম । আমার মাথায় তখন হাজারটা প্রশ্ন খেলা করছে । নিকিতা কিভাবে এখানে এল সেটা আমার মাথার ভেতরে ঢুকছে না । তবে সামনের ঐ মেয়েটা যে নিকিতার জন্য কাজ করে সেটা বুঝতে পারলাম । আর এও বুঝতে পারলাম যে আমরা এখন যেখানে আছি সেটার কথা জায়েদ আমান জেনে গেছে । সে এদিকেই আসছে । আর এইটা যদি সে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে অন্য ওদের অন্য সেফ হাউজের কথাও জেনে যাওয়াটা জায়েদ আমানের কাছে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না ! তাহলে আমরা কোথায় যাবো ?

তখনই আমার মাথায় হৃদির কথা এলো । ও আমাদের সাহায্য করতে পারে ! আমি নিকিতার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি এক জায়গাতে নিয়ে যেতে পারি !
নিকিতা আমার দিকে ফিরে তাকালো । সেই মেয়েটাও তাকালো । নিকিতা বলল,
-কোথায় ?
-একজন কে চিনি যে ব্যাবস্থা করতে পারবে আশা করি !
-নিশ্চিত ?
-হ্যা !
-আচ্ছা ।

আমার দিক থেকে সে এবার মেয়েটার দিকে তাকালো । তারপর বলল, নীতু তুমি তাহলে এখানকার সব এলিমেন্ট মুছে ফেল । আমাদের সাথে আসার দরজার নেই তোমার । তবে তুমি জানো আমাদের কোথায় খুজে পাবা, রাইট ?
-ইয়েস ম্যাম !
-গুড! আমরা এখনই বের হচ্ছি !
তারপর আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি হাটতে পারবে ?
আমি বললাম, পারবো ! এখন অনেকটাই সুস্থ মনে হচ্ছে !
তখনই আমার চোখ গেল নিকিতার চোখের দিকে । আমি বিস্মিত চোখে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।
নিকিতার চোখ তো কালো ছিল ! তাহলে এমন বিড়ালী নয়না কিভাবে হয়ে গেল ?
সেই কুড়ে ঘরের মাঝে যখন ছিলাম সেই সময় স্কার্ফ পরা মেয়েটার চোখটাও এমন বিড়াল নয়না ছিল । তার মানে কি ....

আমার চিন্তা মাঝ পথেই আটকে গেল । দেখতে পেলাম নিকিতা একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে গেল । ফিরে এল মিনিট পনের পরে ! আমি কেবল চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! সেই স্কার্প পরা মেয়েটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে ।
একটু আগেও নিকিতা একেবারে স্লিম ছিল । এখন আবারও সেই একটু মোটা লাগছে ওকে !

পনের মিনিটের ভেতরেই আমরা রওয়ানা দিলাম । নিকিতা গাড়ি চালাচ্ছিলো ।

আমার মনে হাজারটা প্রশ্ন খেলা করলেও আমি কোনটা রেখে কোনটা করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । নিকিতা পেছনের ব্যাগ থেকে একটা পাসপোর্ট বের করে আমার হাতে দিল । আমি পাসপোর্ট টা খুলে দেখলাম সেখানে লেখা "জোয়া সাইদ" ছবিটার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম । নিকিতার কাছাকাছি চেহারা । এই মেয়েটার চোখের রং বাদামী । বিড়াল নয়না !

নিকিতা বলল, তুমি নিশ্চয়ই আশা কর না যে আমি আমার নিজের পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ঢুকবো ?
-তার মানে কেউ জানে না যে তুমি দেশে ?
-সবাই জানে আমি আমেরিকাতে ছুটি কাটাচ্ছি । গতকাল আমি রোয়ান মাউন্টেনে গিয়েছি । সেখানেই ক্যাম্প করে থাকবো কয়েক দিন ।
এই বলে নিকিতা ওর মোবাইলটা এবার আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি নিকিতার ফেসবুক প্রোফাইল দেখতে পেলাম । সেখানে ওর চেকইন টাও লক্ষ্য করলাম !
আমি বললাম, চোখে না হয় লেন্স পরেছো কিন্তু তুমি এমন মোটা হয়ে গেলে কিভাবে আর কন্ঠটা এমন কিভাবে শোনাচ্ছে ?
নিকিতা হাসলো । তারপর মুখে যে স্কার্ফ পরে ছিলো সেটা খুলে ফেলল । কাপড়ের কারনে ওর গলাটাও ঢেকে ছিল । সেখানে দেখতে পেলাম একটা কালো বেল্ট টাইপের জিনিস নিকিতার গলার সাথে পেঁচিয়ে আছে । নিকিতা বলল, প্রতিবার কথা বলার সময় এটা ভোকাল কর্ডে একটা কম্পন সৃষ্টি করে । যার কারনে কন্ঠ খানিকটা ভিন্ন শোনায় । আর দেখছোই তো আমি সব স্কার্ফ পরে আছি । সো চিন্তা একটু আলাদা শোবাবেই । আর মোটা ? এটা তো একদমই সোজা ! মুভিতে দেখো নায়িকারা কেমন মোটা হয় ! মারভ্যাল এন্ড গেইমে "থর" কে দেখো নি কিভাবে পেট মোটা করেছে । আমিও ঠিক সেটাই করেছি !
আমি কিছু সময় নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়ে আমার জন্য কি করছে ! যদি এখন কেউ জানে যে ও এখানে আছে তাহলে কি হবে সেটা আমি ভাবতেও পারলাম না । ওর ক্যারিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যাবে ! সবাই বলবে খুনী স্বামীকে বাঁচানোর জন্য ও এই সব করছে !


নিকিতা বলল, আমি জানি টিভিতে আমার বক্তব্য তোমাকে কষ্ট দিয়েছে । কিন্তু তুমি বারবার ভুলে যাও যে তোমার বউ সাধারন কেউ নয় !
আমি মিথ্যা বললাম । বললাম
-না কষ্ট দেয় নি । আমি তোমার স্থানে হলে আমিও একই কাজ করতাম !
-নাহ করতে না । তুমি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে আসতে এবং আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে !
-তুমিও কি তাই করছো না ?
নিকিতা কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, হ্যা করছি । তবে খানিকটা উল্টো ভাবে !
আমি বললাম, তুমি আমাকে খুজে পেলে কিভাবে ? মানে ঐ বনের ভেতরে ? এমন কি আমি নিজেও জানি না আমি কোথায় ছিলাম !

নিকিতার চোখে আমি খানিকটা হাসির ঝকল দেখতে পেলাম । সে বলল, তুমি মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন কর না ! তোমাকে একবার আমি বলেছিলাম যে তুমি কোথায় যাও আর কি কর সেটা আমি সব জানি ! মনে আছে ?

আমি মনে করার চেষ্টা করলাম । যখন নিকিতার সাথে প্রথম পরিচয় হয় তখন একবার আমি হৃদির সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম । সিনেমার ভেতরে নায়ক কি করছিলো সেটাও ও আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলো । আরেকবার নিকিতার সাথে আমার খুব ঝগড়া হল রাতের বেলা । আমি বাসা ছেড়ে বের হয়ে গেলাম । দুচোখ যেদিকে যায় বলে যে কথাটা আছে ঠিক সেই ভাবেই গাড়ি চালাতে শুরু করলাম । একটা সময়ে এসে আমার গাড়ি থেমে গেল । তাকিয়ে দেখি গাড়িতে গ্যাস শেষ । রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা । রাগ করে বের হওয়ার সময় মোবাইল মানিব্যাগ কিছুই আনতে মনে ছিলো না । কিছু সময় পরেই আমার রাগ পরে গেল । কিন্তু এমন এক বিপদে পড়লাম যে কাউকে ডাকতেও পারছিলাম না । চারিদিকে কোন লোকালয়ও দেখতে পাচ্ছিলাম না !

রাস্তার পাশেই বসে রইলাম চুপচাপ কিছু সময় । দিনের আলো ফুটলে সামনে দিকে হেটে কোন লোকালয়ে পেলে সেখান থেকে কারো সাথে যোগাযোগ করা যাবে । কিন্তু ঘন্টা খানেক পরে দেখলাম আমার গাড়ির ঠিক সামনেই একটা গাড়ি এসে থামলো । সেখান থেকে নিকিতা নেমে এল । ওর হাতে একটা হটপট টাইপের বাটি । কোন কথা বার্তা হল না আমাদের মাঝে । ও আমার পাশে এসে বসলো । তারপর যত্ন করে হটপটের ঢাকনা টা খুলে আমাকে খাইতে দিতে শুরু করলো ।

সেদিন ও কিভাবে আমার কাছে এসেছিলো আমি জানতে চাই নি । মনে হয়েছিলো যে ওর যা ক্ষমতা আছে সেটা দিয়ে ও অনেক কিছু করতে পারে ! তবে আজকে আমার খানিকটা কৌতুহল হলই । আমি জানতে চাইলাম, তুমি আমাকে কিভাবে খুজে পেলে ?
নিকিতা বলল, আমি কখনই তোমাকে নিজের চোখের আড়াল করি নি । নীতুকে দেখলে না ? ও সব সময় তোমার পেছনে থাকে । এমন কি তুমি যখন ঐ রিসোর্টে গিয়েছিলে সেই সময়ও ওর পেছনেই ছিল । তবে ঐদিন নীতু একটা ভুল করে ফেলে । ও ভেবেছিলো এই রিসোর্টে আছো তুমি দুইদিন কোথাও যাবে না হয়তো সেই হিসাবেই প্লান করে গিয়েছিলো । ও জানতো যে তুমি লেখালেখি কর । ও ভেবেছিল এই দুইদিন আর তোমার উপর চোখ রাখার দরকার নেই । ও তাই তোমাকে রিসোর্টে রেখে ওর বাড়ির দিকে গিয়েছিলো । মুন্সিগঞ্জেই ওর বাসা !
আমি বললাম, তারপর ?
-তাপরর যা হওয়ার হল । তুমি যে পালিয়ে গেলে তারপর দুইদিন ও আসলে জানতোই না । যখন জানলো তখন তোমাকে হারিয়ে ফেলল । তুমি ধরা পড়লে ! তারপর ...

নিকিতার মুখটা শক্ত হয়ে উঠলো মুহুর্তের ভেতরেই । নিকিতা শান্ত কন্ঠে বলল, আই উইল মেক হিম পে, আই প্রোমিজ ! আমি ব্যক্তিগত কারনে কখনও কাউকে শত্রু মনে করি নি কিন্তু জায়েদ এবার যা করেছে ওকে আমি শেষ করে ফেলবো !

আমি সত্যিই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । নিকিতার এমন ভয়ংকর শান্ত কন্ঠ আমি কোন দিন শুনি নি । এরপরই নিকিতার কন্ঠ সিক্ত হয়ে উঠলো । ও বলল, এর আগের বারও আমি সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি নি বলে তোমাকে আঘাত পেতে হয়েছে এইবারও আমি ঠিক সময়ে পৌছাতে পারি নি বলে তুমি আঘাত পেয়েছো !

আমি নিকিতার কাধে হাত দিলাম । তারপর বললাম , নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ কর ! ঠিক আছে ! যা হবার হয়েছে ! এখন বলল ঐ বনের ভেতরে আমাকে কিভাবে খুজে পেল ?

নিজেকে খানিকটা সমলে নিয়ে নিকিতা বলল, তুমি কোথায় কখন যাও তার প্রতিটা মুহুর্তের খবর আছে কাছে আছে । আমি কেবল দেশে ছিলাম না বলেই একটু দেরি হয়েছে এইবার !
আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারপর বলল, কিভাবে ?
ব্যাপারটা বুঝতে আমার আরও কিছু সময় লাগলো । আমি তখন খানিকটা চিৎকার করে বললাম, তুমি আমার শরীরে ট্র‌াকার লাগিয়েছো? রিয়্যালি ?

নিকিতা আমার দিকে তাকালো না । সামনের দিকে একভাবে গাড়ি চালাতে লাগলো । আমার দিকে না তাকিয়ে নিকিতা বলল, তোমার প্রাইভেসি আছে আমি জানি । সেটা আমি সম্মান করি । কিন্তু আমি জানতে চাই যে তুমি কোথায় আছো কি করছো ! আমি প্রজেসিভ না
প্রোটেক্টিভ ! তুমি কার সাথে কথা বল আমি জানি, কার কাছে যাও সেটাও আমি জানি । আমি সেটা মানা করি না । আমি কেবল জানতে চাই তুমি কোথায় আর কিছু না । আমি কেবল জানতে চাই যে তুমি নিরাপদ আছো । আমি তোমার প্রাইভেসীকে সম্মন করি ! কাকে কি মেসেজ আদান প্রদান কর সেটা আমি চাইলেই আমি দেখতে পারি কিন্তু কোন দিন সেগুলো চেক করি নি ।
আমি বললাম, আমি কাউকে এমন কোন ম্যাসেজ পাঠাই নি !
নিকিতা আমার দিকে তাকালো । তারপর ও নিজের মোবাইল বের করে একটা ছবি আমার দিকে বাড়িয়ে দিল !
ছবিটা দেখে আমার কান গরম হয়ে গেল !
ছবিটা নওরিনের । নওরিনের একটা সেলফি !
আমি কোন মতে বললাম, আমি ওকে এমন ছবি পাঠাতে বলি নি কোন দিন!
নিকিতা বলল, ওকে মানাও করো নি । করেছো কি ?
আমি মাথা নিচু করলাম । সত্যিই মানা করি নি । তবে এই ছবি পাঠানোর পরে আর ওর সাথে আমি যোগাযোগ করি নি । ওকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি ।
আমি বললাম , আই এম সরি ! আমার ওকে মানা করার দরকার ছিল । তবে আমি আর ....
-পুরানো কথা বাদ দাও । আমি তোমাকে চিনি অপু । আমার যদি এই পাওয়ার নাও থাকতো তবুও আমি তোমাকে বিশ্বাস করি । তুমি আমাকে চিট করে অন্য মেয়ের সাথে এমন কিছু কোন দিন করবে না । এই ক্ষমতা তোমার নেই !
-তার মানে তুমি বিশ্বাস কর যে আমি খুন করি নি ?
-তুমি অন্য কারো সাথে কিছু করবে না এটা বিশ্বাস করি !
-আর আমি খুন করেছি, এটা ?
নিকিতা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, নয়তো আমি এখানে আসতাম না !

আমি বললাম, যদি ধর আমিই নওরীন কে খুন করেছি এবং এটা তুমি জানো । তারপরেও কি আসতে আমাকে বাঁচাতে ?

নিকিতা হঠাৎ গাড়িটা থামালো । তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । এবার আস্তে করে আমার ঠোঁটে চুমু খেল । তারপর বলল, তোমার কি মনে হয় ? আসতাম ?
আমি বললাম, আসতে !
নিকিতা হাসলো । আবারও গাড়ি চলতে শুরু করলো । তারপর বলল, ঘোড়ার ডিম আসতাম !
-তা আমার শরীরে ট্রাকার কোথায় আছে?
-তুমি নিজেই খুজে বের কর কোথায় আছে ?

আমি হৃদিকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিলাম সেফ কোন স্থান বের করার জন্য । হৃদি আমাকে একটা ঠিকানা মেসেজ করে পাঠিয়েছে । আপাতত হৃদি ছাড়া আর কাউকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না । নিকিতা কারো সাথে আপাতত যোগাযোগ করতে চাচ্ছে না । ওর ফেইফ হাউজের খবর যখন জায়েদ আমানের কাছে পৌছে গেছে তখন অন্য গুলোও পৌছে যেতে পারে !

নির্দিষ্ট ঠিকানায় এসে পৌছাতেই হৃদিকে দেখলাম গেট খুলে বের হয়ে আসছে । ও আমার জন্য সত্যিই চিন্তিত ছিল । আমি বের হতেই একবারে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি তীব্র অস্বস্তির ভেতরে পরে গেলাম । হৃদি আমাকে জড়িয়ে ধরেই বলল, কি যে ভয় পেয়েছিলাম । কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে ওরা তোমার খবর কিভাবে পেয়ে গেল ?

তখনই নিকিতার আওয়াজ শুনতে পেলাম পেছন থেকে ! "হতে পারে তুমি নিজেই বলেছো" ।

আমি হৃদিকে নিজের থেকে মুক্ত করে নিকিতার দিকে তাকালম । হৃদির কাছেই যে আসছি এটা আমি নিকিতাকে বলি নি । আর হৃদি যে এভাবে আমাকে নায়িকার মত এসে জড়িয়ে ধরবে সেটাও জানতাম না । আমি নিকিতার দিকে তাকালাম । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল যেন সেখান থেকে আগুন জ্বলছে ।

এখানে এসে আবার কোন বিপদে পড়ালাম ! ইয়া খোদা রক্ষা কর !



পর্ব আট

হৃদি আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিকিতার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । নিকিতাকে সে ঠিক চিনতে পারছে না । এভাবে নিকিতা কারো চিনতে পারার কথাও না । বের হওয়ার আগে সে সেই আগের ছদ্মবেশ নিয়েই বের হয়েছে । এমন কি ওর কন্ঠস্বরও খানিকটা অন্য রকম শোনাচ্ছে !

হৃদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়েটি কে ..... ইজ দ্যাট ইয়োর ওয়াইফ?
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম । এখানে আসলে কিছু বলার নেই আমার । নিকিতা খুব স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে এল । তারপর নিকিতার সামনে দাড়িয়ে বলল, অপু যে বর্ডার পার করছিলো এটা আর কার জানার কথা ? তুমি ছাড়া আর কারো সাথে ও যোগাযোগ ছিল না । আমাকে বল তাহলে পুলিশ কিভাবে জানলো ?
হৃদির মুখের বিশ্ময় ভাবটা এখনও ঠিক কাটছে না । নিকিতা এখানে যে আমার সাথে থাকতে পারে সেটা কারো জানার কথা না । হৃদিরও জানার কথা না । ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । নিকিতা আবার বলল, ব্যাপারটা কিন্তু এমন না যে অপুকে দেখেছে পুলিশে খবর দিয়েছে । ওর জন্য ওরা অপেক্ষা করছিলো । তার মানে কেউ তাদের জানিয়েছে অপুকে কোথায় পাওয়া যাবে । সব চেয়ে বড় কথা খবর টা লোলাক পুলিশের কাছে যায় নি । গিয়েছে জায়েদ আমানের কাছে ।
হৃদি ততক্ষনে সামলে নিয়েছে । সে বলল, তার মানে আপনি বলতে চান যে আমি ওকে ধরিয়ে দিয়েছি ? আমার লাভ কি এতে ? আমি যদিওকে ধরিয়েই দিতে চাইতাম তাহলে ওকে আমি ঢাকা থেকেই ধরিয়ে দিতে পারতাম ? তাই নয় কি ? বর্ডার ক্রস করতে যাওয়ার আগে আরও দুইদিন ছিল ও আমার সাথে !

নিকিতাকে দেখলাম আমার দিকে একটা বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাতে । তবে মুখ দিয়ে কিছু বলল না । আবারও হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এখনও সেটা জানি না, তবে আই উইল ফাইন্ড আউট ! তখন কাউকে আমি ছাড়বো না । আমার অপুর শরীরে যারা আঘাত করেছে তাদর একজনকেও ছাড়বো না !

আমার অপু শব্দ দুটো এতো জোর দিয়ে নিকিতা বলল যে আমি নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । সাথে সাথেই আমার মন থেকে দুষ্চিন্তা সব দুর হয়ে গেল । মনে হল যে এই মেয়ে যত সময় আমার সাথে আছে তত সময় আমার কোন ভয় নেই । আমি ভেবেছিলাম হৃদি এতে চুপ হয়ে যাবে । কিন্তু দেখলাম হৃদি থামলো না । নিজেকে সে সামলে নিয়েছে । তারপর বলল, কাজটা তো আপনিও করতে পারেন !
নিকিতা বাড়ির ভেতরের দিকে যাচ্ছিলো । থেমে গেল । আমিও থেমে গেলাম ।
নিকিতা বলল, কি বললে তুমি ?
-আপনি ঠিকই শুনেছেন ? আপনি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট চালান ! কোন কিছু আপনার চোখ এড়িয়ে যায় না তাই না ?
নিকিতা কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল, ঠিক আমার চোখ এড়িয়ে কিছু যায় না । তুমি কোথায় কাজ কর কি কাজ কর সে সব আমার চোখ এড়িয়ে যায় না । তোমার প্রতি আমি একবার একটা অন্যায় আচরন করেছিলাম বলেই আমি সেসব দেখেও না দেখার ভান করি । কিন্তু সেই অপরাধবোধ আমার খুব বেশি দিন থাকবে না ।
-ম্যাম আপনি আমাকে আর সেই নিরিহ মেয়ে ভাববেন না দয়া করে । কারো চোখ রাঙানী আমি ভয় পাই না !

দুজন দুইজনের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় !

আমি পড়লাম বিপদে । এই দুই মেয়ে যে এভাবে পরস্পর বিরোধী আচরন শুরু করবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি । হৃদি বলল, পলেটিশিয়ানরা নিজেদের রেপুটেশন আর ভোটের জন্য যে কোন কিছু করত পারে । কে জানে এই সব আপনার করা কাজ কি না ! আগের মতই !

নিকিতার চোখ আমি জ্বলে উঠতে দেখলাম । বুঝতেই পারছিলাম যে এখনই একটা ফাইট শুরু হয়ে যাবে । আমি সামনে এসে বললাম,
-আচ্ছা এসব কথা পরে ভাবলেও চলবে । আগের টা আগে । বাইরে দাড়িয়ে থাকলে যে কারো চোখে পড়ে যাবে । প্লিজ ...
দুজনেই কিছু সময় নিশ্চল হয়ে তাকিয়ে রইলো । তারপর নিকিতা সামনে হাটা শুরু করলো । আমি হৃদির দিকে নিকিতার পেছন পেছন হাটা শুরু করলাম । দেখলাম হৃদিও আসছে একটু পরে । ওর মুখ খানিকটা অন্ধকার হয়ে আছে । নিকিতাকে সে এখানে আশা করে নি মোটেই ।

দিনের বাকিটা সময় কেউ কারো সাথে কোন কথা বলল না । নিকিতাকে বেশ চিন্তিত মনে হল । ও কিছু একটা নিয়ে ভাবছে । হৃদিও একই ভাবে নিশ্চপ ভাবে কিছু একটা ভাবছে যেন । রাতে খাওয়ার সময় নিকিতা হৃদিকে বলল, এখানে ল্যাপটপ পাওয়া যাবে ?
হৃদি বলল, হ্যা যাবে । কেন ?
-ও যেই হোটেলে ছিল সেটার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে । ভাল কিছু আছে সেখানে !
আমি বললাম, রিয়্যালি ?
-নীতু তো তাই বলল । ও আমাকে পাঠিয়েছে । এখন একটা ল্যাপটপ পেলে ওটা এখনই পরীক্ষা করা যেত !

হৃদি একটা ল্যাপটপ নিয়ে এসে দিল । ল্যাপটপে কিছু টেপাটেপি করতে করতে নিকিতা বলল, এখনও পর্যন্ত যে যে জিনিস পুলিশের হাতে এসেছে সেটা দিয়েও তোমাকে নির্দোষ প্রমান করতে পারবো আশা করি । সব চেয়ে বড় ব্যাপারটা হচ্ছে নওরিনের অটোপসি রিপোর্ট। ওখান থেকে জানা যায় যে মরার আগে নওরিন কারো সাথে মিলিত হয়েছিলো । স্বাভাবিক ভাবেই সবাই ধরে নিয়েছে যে অপুর সাথেই সে কাজটা করেছে । রিসোর্ট থেকে কিছুটা দুরে পুলিশ একটা ব্যবহৃত কন্ডম পেয়েছে । সেখান থেকেই ডিএনএ স্যাম্পল পাওয়া গেছে । পুলিশ ভেবেছেছে যে এটা একটা শক্ত প্রমান হবে । সেই রিপোর্ট আমার কাছে এসেছে । পুলিশের কাছে অপুর ডিএনএ স্যাম্পল নেই কিন্তু আমার কাছে আছে ।
হৃদি বলল, তারপর?
নিকিতা বলল, ওটা অপুর সাথে মেলে না । তার মানে নওরিনকে মেরে ফেলার আগে খুনি নওরিনের সাথে সেক্স করেছে এবং সেই খুনি অপু নয় ! এটা ডিএনএ পরীক্ষা না করেও আমি জানতাম !
হৃদি বলল, তাহলে এমন লুকিয়ে থাকার কি মানে ? সরাসরি পুলিশের কাছে গেলেই তো হয় !
নিকিতা বলল সমস্যা এখানেই । জায়েদ আমাদের পেছনে লেগেছে । আর পরিস্থিতি এমন যে এখানে আমি সামনে আসতেই পারবো না । প্রাইম মিনিস্টার থেকে আমাকে পরিস্কার ভাবে জানানো হয়েছে যেন আমি পনের দিনের আগে দেশে না আসি । জায়েদের কাছে সব কিছু রয়েছে আপাতত । ও নিজেও এতো সময়ে জেনে গেছে যে প্রমান পাওয়া গেছে তাতে অপু ঠিকই বেঁচে যাবে । এটাই ও হতে দিবে না । এখন যদি ও ধরা দেয় তাহলে ওকে আবারও ক্রস ফায়ারে দিয়ে দিবে হয়তো লাশই গুম করে ফেলবে । ও সব সময় আমাকে আঘাত করার সুযোগ ও ছাড়বেই না ।

হৃদি বলল, আবারও সেই রেপুটেশন ! আপনার কাছে অপুর থেকে আপনার ক্যারিয়ার বড় ! আজব !
নিকিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বললাম, এখন আবার শুরু হয়ে যেও না । প্লিজ !
তারপর নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি জানতে পেরেছো ?
নিকিতার চোখ তখনও ল্যাপটপের দিকে । ও কি যেন করছে । তারপর আমাদের দিকে চোখ তুলে বলল, এখন জায়েদ কাছে সব কিছু থাকলেও আমার বিশ্বস্ত কিছু মানুষ আছেই । তারা আমার প্রতি অনুগত ।
কিছু সময় চুপ করে থেকে নিকিতা বলল, যেদিন অপু ঐ রিসোর্টে গিয়েছিলো সেদিন মোট ৬ জন মানুষ চেক ইন করেছিল । তার ভেতরে একটা ছিল কাপল । স্বামী স্ত্রী । আর অপু ছাড়া বাকি তিন গেস্ট । আর কেউ এন্ট্রি নেয় নি ।
আমি বললাম, তাহলে নওরিন কোথা থেকে এল ?
-এটাই হচ্ছে প্রশ্ন ? নওরিন এন্ট্রি নেয় নি । তাহলে তার লাশ কিভাবে এল ?
আমি বললাম, তাহলে কি ওকে অন্য কোথায় খুন তারপর এখানে আনা হয়েছে ।
-না সেটাও সম্ভব না । অটোপসী অনুযায়ী ওকে খুন করা হয়েছে রাত একটা থেকে তিনটার ভেতরে । সকল দুইজন গেস্ট আরও দুই দিন থেকে ওখানে ছিল । কাপল টা এসেছে একদিন আগে । অন্য এসেছে ঐদিন সকাল বেলা । এবং কারও কাছেই এতো বড় ব্যাগ ছিল না । তাহলে ?

তাই তো ?
তাহলে নওরিন কিভাবে এল ?
খুন যদি রাত একটার থেকে তিনটার ভেতরে হয় তাহলে নওরিন রিসোর্টের ভেতরেই ছিল ।
এক মাত্র উপায় হচ্ছে কাপলটার মেয়েটাই হচ্ছে নওরিন । নওরিন কেন এল এভাবে ?

আমি বললাম কি তাহলে ঐ কাপলের মেয়েটাই নওরিন ছিল ?
নিকিতা বলল, আমিও তাই ভেবেছিলাম কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঐদিন ঐ কাপল চেক আউট করেছে !
-দুইজন এক সাথে ?
-হ্যা । একজন যদি নওরিন হত তাহলে তার সেখানে থাকার কথা ছিল না । তাই না ?
তাও ঠিক ।

নিকিতা বলল সিসিটিভি ডাউনলোড হয়ে গেছে । আমার দিকে ল্যাপটপের স্ক্রিনটা খানিকটা সরিয়ে দিল । হৃদিও আমার পেছনে এসে দাড়ালো । ফুটেজ চালু হল !
দেখলাম ফুটেজ খুব বেশি নেই অংশ কাভার করে নি । কেবল এন্ট্রি আর করিডোরের অংশটা ! আর ফুটেজও খুব বেশি ক্লিয়ার না ! কেবল থাকতে হয় তাই রয়েছে ।

ঘটনাটার দিনের ফুটেজ চালু হল । করিডোরের ফুটেজ দেখতে শুরু করলাম । আমাকে দেখা গেল করিডোর দিয়ে রাত বারটার দিকে ঢুকতে । দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম । তারপর আরও একজন এল । সোজা চলে গেল । তারপর অনেকটা সময় কিছু হল না । তারপর ঠিক দুইটার দিকে হঠাৎ স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে গেল । তাকিয়ে দেখলাম ঠিকই ভিডিও চলছে । তার মানে কেবল করিডোরের আলো অফ হয়ে গেছে । ঠিক পনের মিনিট পরে আবারও আলো ফিরে এল । আবারও সব আগের মতই ! তারপর আর কিছু হয় নি । কেউ বের হল না । একবার একজন স্টাফকে দেখা গেল করিডোর দিয়ে হেটে যেতে ।
সকাল বেলা তারপর আমাকে বের হয়ে যেতে দেখা গেল ।

নিকিতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ঐ পনেরো মিনিটের ভেতরেই যা হওয়ার হয়েছে । এটা খুব সহজেই প্রমান করা যাবে যে তুমি কিছু করি নি । তোমার রুমে যখন তুমি ঢুকেছো তখন একাই ছিলে ।
হৃদি বলল, এখন তাহলে এই কটা দিন তোমাকে লুকিয়ে থাকতে হবে । কোন ভাবেই জায়েদ আমানের হাতে পরা যাবে না !

নিকিতাকে খানিকটা চিন্তিত মনে হল । সে বলল, আমাদের ঐ সেফ হাউজের কথাটা জায়েদ ....

নিকিতার চোখে তখনও স্ক্রিনের দিকে । কথা বলতে বলতে থেমে গেল ও । আমি বলল, কি হল ?
নিকিতা কোন কথা বলল না । আরেকবার তাকালো স্ক্রিনের দিকে । আমি ওর পেছনে গিয়ে দাড়ালাম । গিয়ে দেখি ও একটা দৃশ্য পজ করেছে । লোকটাকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে !
আরে এই লোকটাই তো আমাকে লিফট দিয়েছিল !
আমি বললাম, তুমি চেন নাকি ওকে ?
-একে আমি সেফ হাউজে ডেকেছিলাম তোমার গুলি বের করতে !
-কি ! ইনি ডাক্তার ?
-হ্যা ! আমি যখন প্রথম বিসিএসে জয়েন করি আমার জেলাতেই পোস্টিং ছিল তার ! আমাদের মধ্যে বেশ ভাব হয়েছিল তখন ! সেই যোগাযোগ এখনও আছে ! আবিদ ওখানে কি করছে ?

কিছু যেন ভাবলো ও ! তারপর নিজের ফোন বের হয়ে একটা না্ম্বারে ডায়েল করলো !
-হ্যা শুনতে গেস্টদের নাম গুলো কি কি বললে ?
কিছু সময় নিরবতা !
নিকিতা আবার বলল, কাপল দের নাম ?
আবার নিরবতা !
-নিশ্চিত তুমি ?
-আচ্ছা !

ফোন রাখার পরে নিকিতা আমার দিকে তাকালো ! তারপর বলল, আবিদ রায়হান নামে কেউ সেদিন সেখানে এ্ট্রি নেয় নি । তার মানে আবিদও তোমার মত কোন ফেইক নামে ওখানে এন্ট্রি নিয়েছিলো ।
আমি বলল, এমন তো হতেই পারে । উনি একজন রেপুটেড ডাক্তার ! হয়তো এই কারনেই আসল পরিচয় দিতে চান নি ।
নিকিতা বলল, সে এখনও বিয়ে করে নি । তাহলে বউ আসলো কোথা থেকে ?
আমি খানিকটা চোখ বড় বড় করে তাকালাম । নিকিতা আামকে ভিডিওটার একটু টেনে দেখালে । এন্ট্রিতে তাকেই দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের সাথে । এবং মেয়েটা বোরকা পরা !

নিকিতা বলল, আবিদ ! আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে ? ও এই কাজটা কেন করবে ? ওর ওখানে থাকাটা আমার কেন জানি কাকতালীয় মনে হচ্ছে না। নো হতেই পারে না !
আমি বললাম, কিন্তু তুমি না বললে যে কাপল চেক আউট করেছে । তাহলে ...

নিকিতা কিছু ভিডিও টেনে টেনে দেখলো । তারপর ভিডিও দুইটা স্ক্রিন শট ছিল । একটা যখন আবিদ রায়হান তার বউসহ রিসোর্টে ঢুকছে অন্য যখন সে বের হচ্ছে । দুটো ছবি পাশাপাশি রেখে বলল,
-দেখো !
আমি ছবি দুটো দেখার চেষ্টা করলাম । দুটো ছবিতেই দেখা যাচ্ছে আবিদের সাথে একজন বোরকা পরা মেয়ে ! তখনই আমার চোখে পড়লো ব্যাপারটা ! এন্ট্রির ছবিটার মেয়েটা আবিদের সমান ! কিন্তু চেক আউটের সময় যে মেয়েটা ওর সাথে রয়েছে সে একটু খাটো ! নাক পর্যন্ত !
ও মাই গড ! দুইজন দুই মেয়ে !

নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এইবার সব কিছু পরিস্কার ভাবে বুঝা যাচ্ছে । আবিদ নাওরিনকে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকেছিলো । বউ সাজিয়ে । রাতে ওর সাথে ছিল । কিন্তু হয়তো একটা পর্যায়ে নওরিনকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারে নি । ওর সাথে মিলিত হয়েছে । তারপর তাকে মেরে ফেলেছে । লাশটা ঐ অন্ধকারের ভেতরেই অপুর ঘরে দিয়ে এসেছে । মাস্টার কি কিংবা হোটেলের কারো সাহায্য আরেকটা চাবি ম্যানেজ করে নিয়েছে ।

এই টুকু বলে নিকিতা থামলো । তারপর আমি বললাম এরপর ভোর বেলা হাটতে বের হয়েছে । কারো দেখার আগেই । এবং একটা সময় ফিরে এসেছে নতুন আরেকটা মেয়েকে নিয়ে । সকাল তখন যারাই ওকে দেখেছে ভেবেছে যে বউয়ের সাথেই হাটতে বেরিয়েছিলো ।

নিকিতা বলল, আমি নিশ্চিত ডিএনএ আবিদের সাথে মিলে যাবে । কিন্তু এই কাজটা ও কেন করলো ? তোমাকে ফাঁসিে ওর কি লাভ ? তোমার শরীর থেকে গুলিটাও ও নিজের বের ক....

আবারও থেমে গেল ও । মুখটা চিন্তিত দেখালো । তারপর বলল, যখন আমরা ওর জেলাতে ছিলাম তখন ওর ভাব ভঙ্গি দেখে আমার মনে হত যে ও আমাকে পছন্দ করে ! কিন্তু কোন দিন ও কিছু বলে নি ! সেফ হাউজের কথা কেবল ও জানতো । তাহলে কি ঐ বলেছে !

আমি আরও কিছু বলতে যাবো তখন আমাদের সামনের জানলাটার কাঁচ ভেঙ্গে পড়লো ।
কেউ গুলি করেছে !
আমরা তিনজনেই মাথা নিচু করে বসে পড়লাম !

জায়েদ আমান কি এখানেও পৌছে গেছে ?
এখন ?


পর্ব নয়

আমরা তিনজনই মাথা নিচু করে বেশ কিছুটা সময় বসে রইলাম । তারপর আর কোন গুলির আওয়াজ আসে নি । পাঁচটা মিনিট কেটে গেল এভাবেই ।

হৃদির বাসাটা শহর থেকে অনেকটাই দুরে । বসিলা ব্রিজ থেকে অনেকটা সময় ড্রাইভ করে তারপর আসতে হয় । এর ঠিক পাশ দিয়েই বুড়িগঙ্গার একটা শাখা চলে গেছে । একটু দুরে কিছু দোকানপাঠ আছে তবে রাত হলেই সেসব বন্ধ হয়ে যায় । জায়গাটা বেশ নির্জন হয়ে যায় । গুলির আওয়াজ শুনে কেউ চলে এাসবে এমন ভয় নেই ।

জায়েদ আমান সেটা জানে ভাল করেই । আর নিশ্চয়ই আসার সময় সে এমন ব্যবস্থা করেই এসেছে যেন কোন থার্ড পার্টি না চলে আসে । কিন্তু জায়েদ আমান আমাদের এই অবস্থান জেনে যাচ্ছে কিভাবে ? এটাই আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ।

আমি এমনটা ভাবছি ঠিক এমন সময় গুলি শুরু হল । জানলার কাঁচ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলো । আমি নিকিতাকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে কিছু সময় মেঝের সাথে মিসে থাকার চেষ্টা করলাম । ঠিক সেই সময় হৃদির ছোঁয়া পেলাম । আমরা দুজনেই ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম ।

হৃদির হাতে একটা শটগান দেখতে পেলাম । অন্য হাতে আরও দুইটা রিভালবার !

এই মেয়ে এই সব পেলে কোথায় ? আমি খানিকটা অবাক হয়েই বললাম, তুমি এসব পেলে কোথায় ?
নিকিতা বলল, তুমি ওকে যতখানি নিরীহ মেয়ে ভেবে এসেছো সে ততটা নিরীহ নয় । বুঝতে পেরেছো ?

হৃদির সেই কথার জবাব দিল না । শটগানটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । তারপর পিস্তলের একটা দিল নিকিতার দিকে । তারপর বলল, ওদেরকে বাসার ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না । এই বাসায় সামনে একটা দরজা আছে । আর পেছনে একটা । এই দরজা ছাড়া ওরা কোন ভাবেই ঢুকতে পারবে না ।
নিকিতা বলল, পেছনের দিক দিয়ে বের হওয়ার উপায় নেই ?
-ওরা দুইদিকেই কাভার করবে নিশ্চিত ! আপাতত দরজা বাঁচাই । ওরা ভেতরে ঢুকতে না পারলে কিছু করতে পারবে না । সাহায্যের জন্য করতে হবে !

গোলাগুলি একটু কমলেই আমরা হামা গুড়িয়ে দিয়ে জানালার কাছে চলে গেলাম । একটু মাথা তুলে দেখার চেষ্টা করলাম সামনের দিকে দেখার চেষ্টা করলাম । অন্ধকারের মধ্যে কাউকেই দেখতে পেলাম না । ঠিক তখনই আমার মাথার উপর দিয়ে একটা গুলি চলে গেল । আমি সাথে সাথেই মাথা নিচু করে ফেললাম । তারপর শটগানের নলটা জানালার দিকে ট্রিগার চেপে দিলাম ।
আমার দেখা দেখি নিকিতা আর হৃদিও ঠিক একই কাজ করলো । আমরা কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না কেবল যেদিক থেকে গুলি এসেছে সেদিক লক্ষ্য করে গুলি করে দিচ্ছিলাম ।

জানি এতে প্রতিপক্ষের কোন ক্ষতি হবে না । ওদের শরীরে কোন গুলি লাগবে না । তবে একটা কাজ হল যে ওপাশ থেকে গুলি আশা বন্ধ হয়ে গেল । আমরাও গুলি করা বন্ধ করলাম কিছু সময়ের জন্য ! তারপর আর গুলির আওয়াজ শোনা গেল না । সম্ভবত ওরা আশা করে নি যে আমরাও গুলি চালাবো । এই জন্য ওরাও খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে গেছে ।

তারপরই আমরা জায়েদ আমানের কন্ঠ শুনতে পেলাম !

"নিকিতা আমি জানি তুমি ভেতরে আছো !"

আমি এবার খানিকটা অবাক হলাম । নিকিতার দিকে তাকিয়ে মনে হল ও নিজেও অবাক হয়েছে । নিকিতা যে এখন দেশে আছে সেটা সত্যই মানুষের জানার কথা না । তাহলে জায়েদ আমান কিভাবে জানলো ?

জায়েদ আমানের কন্ঠস্বর শোনা গেল আবার !

আমি এই বাড়ির চারিদিকে পেট্রল ঢেলে দিচ্ছি । যদি আগামী ১০ মিনিটের মধ্যে যদি বাইরে না আসো তাহলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যাবো । যাওয়ার আগে নিশ্চিত করে যাবো যেন তোমরা বের হতে না পারো !

নিকিতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও খানিকটা চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । জায়েদ আমান কি সত্যই এই কাজটা করতে যাচ্ছে ? নিকিতা যে এই দেশে আছে তা কেউ জানে না । যদি এখন নিকিতাকে সে মেরে ফেলে তাহলে জায়েদ আমানের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে । তার সকল প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে । এবং কেউ সেটা জানতেও পারবে না ।
কিন্তু ও কি সাহস করবে ?

আমি আর কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না । এতোটা সময় আমি কেবল আমাকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম । ভাবছিলাম সব বুঝি আমার পেছনেই লেগে আছে । কিন্তু এখন আমি নিজেরটা সহ নিকিতার জীবনটাও বিপদে ফেলে দিয়েছে । নিজের উপর রাগ লাগতে শুরু করলো আমার ! কি দরকার ছিল এমন টা করার ?
যদি নওরিনের সাথে আমি কোন না কথা বলতাম তাহলে এতো কিছুর শুরু হত না ।
আমি বললাম, সব আমার দোষ ! সব ! তুমি এখানে থাকো ! আমি বের হই । আমার সাথে যা করার করবে ওরা ! আমাকে মেরে ফেলুক !

নিকিতা বলল, তোমার কোন দোষ নেই । ওরা তোমাকে ফাঁসিয়েছে ! তুমি কোন অন্যায় কর নি !
-কিন্তু সব তো আমার কারনেই হচ্ছে ।
-উহু ! তোমার কারনে নয়, আমার কারনে !

পেছনে থেকে হৃদি বলল, আপনাদের রোমান্টিক কথোপকথন শেষ হলে ঠিক করে নিন কি করবেন ?

নিকিতা বলল, আমি বাইরে যাচ্ছি । তুমি এখানে থাকো !
আমি সাথে সাথে বলল মোটেই না । বাইরে গেলে আমরা দুইজনই যাবো !
হৃদি আবারও পেছন থেকে বলল, তোমার যাওয়ার কারন দেখছি না । কেবল উনাকেই তো যেতে বলেছে !

আমি কঠিন কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । নিকিতার হাত ধরে উঠে দাড়ালাম । তারপরঝাটা দিলাম বাইরের দিকে ।

আমরা বাইরে এসে দাড়াতেই আবারও জায়েদ আমানের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম । "হাতের অস্ত্র গুলো ফেলে দাও"
তাই করলাম । তারপর দেখলাম জায়েদ আমান অন্ধকার থেকে বের হয়ে এল । তার পেছনে আরও তিনজন বের হয়ে এল । এর ভেতরে দুইজনকে আমি চিনতে পারলাম । আমাকে প্রথমবার যখন ধরে নিয়ে যায় তাদের ভেতরে এরা ছিল ।

জায়েদ আমান মুখে একটা হাসি নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এল । নিকিতার সামনে এসে দাড়ালো । বলল, দেখেছো ভালবাসা আজকে তোমাকে কোথায় নিয়ে এসে দার করিয়েছে ? সেদিন যদি আমার প্রস্তাবে রাজি হতে তাহলে আজকে তোমার থেকে ক্ষমতাবান আর কেউ হত না ।
নিকিতা বলল, আমার থেকে ক্ষমতাবান এখনও কেউ নেই !

খুব যেন মজা পেয়েছে এমন একটা ভাব করে জায়েদ আমান হোহো করে হেসে উঠলো । আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না জায়েদ আমান কোন প্রস্তাবের কথা বলছে । আমি নিকিতাকে বলল, কোন প্রস্তাবের কথা বলছে ও ?
নিকিতা বলল, আর বল না । তোমার আগে এই পাবলিক আমার পেছনে পাগল কুকুরের মত ঘুরে বেরিয়েছিলো । মাঠে আমার সাথে টিকতে না পেরে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো ! কিছু বাঙালী পুরুষকে তো চেনোই ! তারা ভাবে যে মেয়েদের স্থান কেবল ঘরে, রান্না ঘরে । রাজনীতিতে ওরা কি করবে !

দেখলম জায়েদ আমানের মুখ থেকে হাসি মুছে গেল । সে এবার খানিকটা ঠান্ডা কন্ঠে বলল, তোমাকে এবার আমি হাতের মুঠোই পেয়েছি । তোমাকে এখানে আমি খুন করবো । তারপর তোমার লাশ চলে যাবে আমেরিকাতে । সেখানে তুমি যে মাউনটেইন ট্রিপে গিয়েছো বলে প্রিটেন্ড করছো সেখানেই তোমার লাশ ফেলে আসবো । সবাই ভাবতে ওখানেই মরেছো তুমি ! সবাই শোক পালন করবে ! মজার হবে না ব্যাপার টা !

নিকিতা বলল, তোমার কি মনে হল আমি এখানে আছি কেউ জানে না ? এতোটা বোকা আমি না ! আসার আগে স্বয়ং প্রাইম মিনিস্টারকে আমি জানিয়ে এসেছি ।
জায়েদ আমান বলল, মিথ্যা কথা । ইউ আর ব্লাফিং !
-ইউ উইস ! তুমি আমাকে এতো দিন ধরে চেন অথচ আমার কাজ কর্ম সম্পর্কে তোমার কোন ধারনাই নেই । এই জন্যই তুমি কখনও আমার আগে যেতে পারবে না !

আমি নিকিতার খুব কাছেই ছিলাম দাড়িয়ে । তখনই অনুভব করলাম ওর পকেটে ওর ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো । একবার দুইবার তারপর একটু বিরতি দিয়ে আবার !

নিকিতার অঙ্গভঙ্গি সাথে সাথেই বদলে গেল । সে জায়েদ আমানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমাকে একটা ডিল অফার করি ! আমি জানি তুমি এসবের পেছনে নেই । অপুকে ঝামেলাতে তুমি ফেলেনি । তুমি কেবল সিনের মাঝে চলে এসেছো কিংবা তোমাকে নিয়ে আসা হয়েছে । আমি তোমাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার একটা সুযোগ দিচ্ছি । তবে ....
-তবে ?
-তুমি আমাকে বল যে অপুকে পেছন থেকে কে গুলি করেছিলো ?
জায়েদ আমান আবারও খানিকটা হাসলো । তারপর বলল, তোমার কি সত্যিই মনে হচ্ছে যে তুমি কোন নেগোসিয়েশনের অবস্থায় আছো ?
নিকিতা ঠান্ডা গলাতে বলল, জায়েদ বিলিভ মি দিস ইজ ইরোর লাস্ট চান্স !

নিকিতার কন্ঠে কিছু একটা ছিল যা আমি টের পেলাম । এই মেয়ে এমন পরিস্থিতিতেও এতো শান্ত কিভাবে থাকতে পারে !
কিভাবে ! দেখলাম জায়েদ আমানের পেছনের একজন লোক সামনে এগিয়ে এল কিছুটা ! বলল, আমি চালিয়েছি !

নিকিতা নিজের খালি হাতটা ঐ লোকটার দিকে তুলল । অনেকটা পিস্তল ধরার মত করে ! তারপর, ইউ !!

তারপর কিছু সময় কেটে গেল এক ভাবেই । নিকিতা তারপর মুখ দিয়ে উচ্চারন করলো, রেডি ! ওয়ান , টু ...। থ্রি ! ঠুস !

তারপরেই সব থেকে অবাক করা ঘটনা ঘটলো । নিকিতা ঠুস বলার সাথে সাথেই বাতাস কেটে কিছু আসার আওয়াজ পেলাম আমি । কেবল আমি নই সবাই পেয়েছে । দেখলাম জায়েদ আমানের দুই পাশে দুই পিস্তল ধারী সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেল । কেউ ওদের গুলি করেছে !
স্নাইপার দিয়ে !
জায়েদ আমান কেবল বিস্ফারিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুতেই যেন ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । মুহুর্তের মাঝে কি হয়ে গেল সেটা ও বুঝতেই পারছে না ।

নিকিতা এখনই নিজের হাতটা পিস্তল ধরার মত করে ধরে রেখেছে লোকটার দিকে । তাকে উদ্দেশ্য করেই বলল, নড়ার চেষ্টা করো না একদম । পরের গুলিটা তোমার শরীরেই লাগবে ! পিস্তল ফেলে দিল । লোকটা আর কোন কথা না বলে পিস্তলটা সমানে ফেলেদ দিল ।

তারপরই আমি দেখতে পেলাম আমাদের বাড়ির পেছন থেকে নীতু বের হয়ে আসছে । মেয়েটার হাতে একটা স্নাইপার রাইফেল ! মেয়েটা ঠিক সময়ে এসে হাজির হয়েছে । বুঝতে পারলাম নিকিতার ফোন ভাইব্রেট হওয়াটা একটা সংকেত ছিল । জায়েদের দিক থকেে চোখ না সরিয়ে নিকিতা নীতুকে বলল, গুড জব নীতু !
নীতু হাসলো । তারপর বলল, মাই প্লেজার !
-রবি কোথায় ?
-এখানে ম্যাম !

আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি বাড়ির ছাদের উপর একটা ছেলে স্নাইপার রাইফেল তাক করে রয়েছে এদিকে !
নিকিতা এবার জায়েদ আমানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি যদি ভেবে থাকো বাড়ির পেছনে থাকা তোমার লোক তোমাকে রক্ষা করতে আসবে তাহলে তোমাকে বলি যে ওরা আগেই উপরে চলে গেছে । যাই হোক তোমাকে একটা শেষ সুযোগ দেই !

নিকিতা কিছু সময় চুপ থেকে বলল, পিস্তলটা হাতে নাও !

মাটিতে পড়ে থাকা পিস্তলের দিকে ইঙ্গিত করে বলল । জায়েদ আমানকে খানিকটা দ্বিধান্বিত দেখালো । নিকিতা বলল, এই পিস্তলটা নাও । তারপর তোমার এই লোকটাকে গুলি কর ! এখান থেকে তোমাদের কেবল একজন জীবিত ফেরৎ যাবে ! হয় তুমি নয়তো সে ! এখন ওকে আমি মারবো না । তবে ও যদি পালিয়ে যায় তাহলে রবি তোমাকে স্যুট করে দিবে । এবং বিলিভ মি আমি তোমার অনাকাঙ্খিত মৃত্যুকে ঠিক ঠিক সামলে নিবো । আর আমি তো দেশে নেই ই । আমার এই কাজে হাত থাকবে না ! তাই !

কয়েক মুহুর্ত কেউ কোন কথা বলল না । লোকটা যখন বুঝতে পারলো যে ওর বিপদ আসন্ন তখন ঘরে দৌড় দিতে লাগলো । তখনই জায়েদ আমান মাটিতে থাকা পিস্তলটা হাতে নিলো এবং লোকটাকে গুলি করে দিলো ।

নিকিতা এবার সামনে এগিয়ে গেল । জায়েদকে দেখে মনে হচ্ছে যেন পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে । এভাবে মানুষকে গুলি করা চারটিখানিক করা নয় । তার উপর যদি এভাবে কাউকে যদি বাধ্য করা হয় !
নিকিতা ওর হাত থেকে পিস্তলটা নিতে নিতে বলল, ঐ দেখো নীতুর দিকে তাকিয়ে !
আমিও তাকিয়ে দেখলাম । নীতুর হাতে একটা একশান ক্যামেরা । সেটা দিয়ে সে সম্পূর্নটা ভিডিও করে নিয়েছে ।
নিকিতা বলল, ভয় পেও না । আমি এই ভিডিও কোন দিন সামনে আনবো না যতদিন তুমি তোমার লাইন ক্রস না করবে ! রাজনীতির মাঠে তুমি আমাকে শক্ত ফাইট দিতে পারো আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু এরপরে যদি এই রকম কোন কাজ কর তাহলে ঐদিনই তোমার শেষ দিন ।

জায়েদ আমানের চেহারা দেখার মত হল । বেচারার দিকে তাকিয়ে আমার নিজেরই মায়া লাগতে শুরু করলো । সে কি ভেবে এখানে এসেছিল আর কি থেকে কি হল ! নিকিতা এবার জায়েদের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন এইখানের পরিস্থিতি তুমি সামলাও । আমি চলে যাচ্ছি । আর আমাকে বল আমি যে দেশে এসেছি, এখানে আছি, এটা তোমাকে কে বলেছে ?

জায়েদের দিকে তাকিয়ে মনে হল ও যেন শকের মধ্যে আছে । কথা যেন ঠিক মত বুঝতে পারছে না ।
নিকিতা এবার খানিকটা ধমকের সুরে বলল, কি হল ? জবাব দিচ্ছো না কেন ?
-জানি না । একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে দুইবার !
-নাম্বার খোজার চেষ্টার করনি ?
-এই দেশের না । নয়তো প্রোক্সি ব্যবহার করে পাঠানো ! বের করতে পারি নি ।


আর কোন কথা হল না । জায়েদকে ওভাবে দার করিয়ে রেখেই আমরা বের হয়ে এলাম । মনে পড়লো এখনও আবিদ রায়হানকে খুজে বের করতে হবে ! আসল কাহিনী তার কাছেই রয়েছে !


পর্ব দশ

আমি নিকিতার দিকে যত তাকাই ততই অবাক হতে থাকি । মাঝে মাঝে সত্যিই বিশ্বাস হয় না যে এই মেয়ে আমার বউ । সব কিছুর উপর তার কতখানি নিয়ন্ত্রন সেটা ওর সাথে না থাকলে বুঝতে পারবে না কেউ । সব কিছু সে আগে থেকেই জানে । কেবল এই একটু দুরে ছুটে গেছে । তবুও এখন সবটা সামলে নিয়েছে ।

কালো পাজেরো গাড়িটার মাঝের সিটে আমি আর নিকিতা বসে আছি । নীতু গাড়ি চালাচ্ছে শান্ত মুখে । সামনে সিটে হৃদি বসে আছে । তার চোখ সামনের দিকে । সে কিছু নিয়ে ভাবছে । আমি নিকিতার হাতটা ধরলাম । নিকিতা তখনও জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । সবাই কিছু না কিছু ভাবছে কেবল আমিই চুপচাপ বসে আছি । তিন নারীর মাঝে নিজেকে কেমন যেন বেমানান লাগছে ।

আমি বললাম, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?
-আসল খুনিকে ধরতে!
আমি বললাম, ওটা পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে হত না ?
নিকিতা আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, হ্যা হত ! কিন্তু আমি আবিদের কাচ থেকে সরাসরি ব্যাপারটা জানতে চাই । সে কাজটা কেন করলো সেটা জানতে চাই । তারপর বাকিটা সামলানো যাবে !

আমি আর কোন কথা বললাম না । আবিদের সাহেবের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই । তার সাথে আমার একবারও দেখা হয় নি আগে । তারপরেও সে আমাকে এই ঝামেলার ভেতরে ফেলেছে ।

আবিদ সাহেবের বাসাতে আমরা একেবারে ভোর বেলা পৌছালাম । সরকারী হাসপাতালের কোয়াটারেই থাকে সে । সকাল বেলাতে ভেবেছিলাম দরজার কলিংবেল চাপতে হবে । সকাল বেলা দরজা খুলে আমাদের দেখে সে খানিকটা অবাকই হবে কিন্তু লক্ষ্য করলাম যে দরজা আগে থেকেই খোলা ।

দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম সাবধানে । নিতু সাবধানে বাড়ির পেছনে চলে গেল । নিকিতাকে পেছনে রেখে আমি ভেতরে ঢুকলাম । আমাদের কারো হাতে কোন অস্ত্র নেই । কেবল নিকিতার কাছে একটা পিস্তল রয়েছে । সেটা সে হাতে নিয়ে রেখেছে । হৃদির কাছের পিস্তলটা নিয়ে নেওয়া হয়েছে ।

আমার মনে হচ্ছিলো এখনই বুঝি আবিদ সাহেব পিস্তল নিয়ে বের হয়ে আসবে । কিন্তু তেমন কিছুই হল না । দেখলাম ড্রয়িং রুমের সোফাতে সে শান্ত ভাবে বসে আছে । সামনেই একটা একটা কফির মগ দেখা যাচ্ছে । হাতে একটা সিগারেট । আমাদের আসতে দেখে মোটেই অবাক হয় নি । সে যেন জানতো আমরা আসছি ।

নিকিতা কিছু না বলে সোফার সামনে বসলো । আবিদের মুখোমুখি । তারপর হাতের পিস্তলটা রাখলো সামনে !
নিকিতা কিছু সময় নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো আবিদের দিকে । তারপর বলল, হোয়াই ?
আবিদ রায়হান একটু হাসলো । হোয়াই ! লাইক, ইউ ডোন্ট নো !
-তাই বলে অপুকে এই ভাবে বিপদে ফেলবে ?
-তোমাকে পাওয়ার পথে এটাই তো সব থেকে বড় বাঁধা । ও তোমার জীবনে না আসলে আমি আজকে তোমাকে পেয়ে যেতাম !
নিকিতা এবার হাসলো । তারপর বলল, না । কোন দিনই না । আমি কোন দিন তোমাকে ভালবাসি নি । তোমাকে বন্ধুর চোখে দেখেছি আর কিছু না ।

আমি বললাম, এটার জন্য একটা মেয়েকে এইভাবে মেরে ফেললেন ?
আবিদ আমার দিকে তাকালো ! কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিকিতা বলল, ওকে মেরে ফেলার প্লান তোমাদের ছিল না তাই না ?
আবিদ হাসলো ! তারপর বলল, হ্যা আমাদের প্লান ওকে প্রথমে মেরে ফেলার ছিল না !
আমি বললাম, আমাদের ! এর পেছনে আরও কেউ আছে নাকি !

নিকিতা হাসলো । তারপর বলল, হ্যা । এটা একা ওর কাজ না । ও একজন সাধারন সরকারী ডাক্তার । এতো কিছু করার ক্ষমতা ওর নেই । তাই না হৃদি !

আমি অবাক হয়ে হৃদির দিকে তাকালাম । আমি এতো সময় হৃদির দিকে খেয়াল দেই নি । সে কখন যে টেবিলের কাছে চলে এসেছে সেটাও লক্ষ্য করি নি । নিকিতার দিকে হৃদির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো একভাবে । তারপর বিদ্যুতের বেগে সামনে রাখা পিস্তলটা হাতে নিয়ে নিল । সেটা তাক করলো নিকিতার দিকে ।

আমি তীব্র বিশ্ময়ে অবাক হয়ে গেলাম । এমন কিছু যে হবে আমি ভাবতেও পারি নি । নিকিতাকে শান্তই দেখলাম ।
আমি হৃদির দিকে তাকিয়ে কোন মনে বললাম, তুমি ?
হৃদি কোন কথা বলল না । নিকিতা পেছন থেকে বলল, হ্যা ! সব কিছুর মাস্টার মাইন্ড তোমার এই এক্স প্রেমিকা !
আমি বললাম, ও আমার প্রেমিকা নয় !
-কিন্তু ও তো তোমাকে মনে প্রানে ভালবাসে ! তাই না হৃদি ?

হৃদি এবার মুখ খুলল, হ্যা বাসি ! এবং আপনি আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে গেছে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে । এই মন্ত্রীত্বের ক্ষমতা না প্রয়োগ না করতেন কোন দিন আপনি আমার কাছ থেকে জিততে পারতেন না !
নিকিতার দিকে হৃদি পিস্তল তাক করে রেখেছে কিন্তু নিকিতা কি শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ! এই মেয়ের নার্ভ দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ! আমার নিজের বুকের ভেতরে কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে অথচ এই মেয়ে কতই না শান্ত ভাবে বসে আছে !

নিকিতা বলল, তোমার প্লান কি ছিল বল দেখি ? আচ্ছা আমি বলি । তোমরা প্লান করেছি যে নওরিনকে ঐ কটেজে নিয়ে যাবে । অপুর ড্রিং করার খুব একটা অভ্যাস নেই । তাই ড্রিং করলে ও নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না । সেই সুযোগে ওর সাথে নওরিনকে পাঠাবে । তারপর ছবি কিংবা ভিডিও কিছু করবে ! তারপর সেটা দিয়ে আমাদের মাঝে ফ্রাকশন সৃষ্টি করবে ! তাই তো ?

হৃদি বলল, হ্যা । কিন্তু এই ইডিয়েটটার জন্য সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল ।
আবিদ বলল, হ্যা তোমাদের মাঝে ঝামেলা হলে সেটা মিটে যেতে পারতো ! তাই ভাবলাম যে এমন কিছু করার দরকার যেন অপুই তোমার জীবন থেকে গায়েব হয়ে যায় !

নিকিতা বলল, প্রথমে হৃদি রাগ করলেও পরে ভেবেছিলো যে অপুকে নিয়ে বর্ডার ক্রস করবে । আর ফিরে আসা হবে না । অপুর সাথেই থাকবে । এই জন্য সব স্থানে সঠিক সময়ে সে হাজির হয়ে যেত । কিন্তু আবিদের মনে অন্য কিছু ছিল । সেই পুলিশকে অপুর অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয় । তারপর সেইফ ওকে আবার দেখে অবাক হয়ে যায় ! সেটার খোজও জায়েদের কাছে পৌছে যায় ।
নিকিতা চুপ করে থাকলো কিছু সময় । তারপর বলল, কিন্তু গত রাতে জায়েদকে খবর দিয়েছে হৃদি নিজে । আমাকে ওখানে দেখে হৃদির মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো । তাই না ?

আমি এবার হৃদির দিকে তাকালাম । ও এখনও পিস্তলটা নিকিতার দিকে তাক করে আছে । আমি ওকে বললাম, ওকে হৃদি পিস্তলটা নামিয়ে রাখো । আমরা কথা বলি !
হৃদি আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম, তুমি এখান থেকে কোন ভাবেই যেতে পারবে না যদি নিকিতার কিছু হয় !
হৃদি বলল, আমি চাইও না । আমি তো শেষ হই তবে ওকে নিয়েই যাবো ! একটা খুনের শাস্তি ফাঁসি দুইটা খুনের ফাঁসিও ফাসিই !

আমার তখনই মনে হল হৃদি গুলিয়ে চালিয়ে দেব । পিস্তলের লক খুলে ফেলল । তারপর ট্রিগার চাপ দিতে দেখলাম !

আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল । আমার কেবল মনে হল যে নিকিতার দিকে গুলি চলে যাচ্ছে । আমি কোন কিছু আর চিন্তা না করে নিকিতার দিকে ঝাঁপ দিলাম !


শেষ পর্ব

আমি নিজেকে শূন্য আবিস্কার করলাম । উড়ে চলেছি নিকিতাকে লক্ষ্য করে । মাত্র কয়েক মুহুর্ত ! তারপর মাটিতে পড়ে গেলাম । তবে আমার মাথার কিছুটা অংশ টি টেবিলের সাথে লাগলও । বেশ ব্যাথা পেলাম !

সাথে সাথেই মনে হল আরে গুলি চলল কই ?
হৃদির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আবারও ট্রিগার চাপ দিল তবে কোন কিছুই হল না । পিস্তল ফাঁকা ! গুলি নেই । নিকিতার আমার পেছনে । সে আমার কাছে এসে হাটু গেড়ে বসলো । তারপর খানিকটা রাগত স্বরে বলল, ইডিয়েট, ঝাপ দিয়েছো কেন ?
আমি কাঁচুমচু হয়ে বললাম, তোমার দিকে না গুলি করতে যাচ্ছিলো !
নিকিতা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল । আমি দেখতে পেলাম ওর চোখে মুহুর্তের মাঝে সিক্ত হয়ে গেছে । তবে সেটা ও সামলে নিল সাথে সাথেই । বলল, আমি এই রকম শান্ত হয়ে বসে আছি তোমার মাথায় এটা আসে নি যে কেন বসে আছি ! আমি কি এতো গাধা যে গুলি ভর্তি পিস্তল দুজন খুনির সামনে ফেলে রাখবো ! কোথায় ব্যাথা পেয়েছো দেখি ? মাথায় কোথায় লেগেছে ?

তারপর নিকিতা জোড়ে ডাক দিল ।
"নীতু নীতু !"

দরজা খুলে নীতু ঘরে ঢুকলো সাথে সাথেই । ওর হাতে খোলা পিস্তল ! নীতুর দিকে তাকিয়ে নিকিতা বলল, এই দুজনের দিকে লক্ষ্য রাখো । যদি পালাতে চেষ্টা করে সোজাসুজি গুলি করে দিবে । এই মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সরাসরি গুলি করেছে ।

নিকিতা আমাকে উঠতে সাহায্য করলো । আমাকে সোফাতে বসিয়ে রেখে ডাইনিং রুমের ফ্রিজের দিকে গেল । আমি তাকিয়ে রইলাম হৃদির দিকে । আমি কোন হৃদিকে চিনতাম আর এই কোন হৃদি !
নিকিতা জানতো যে পিস্তলে গুলি নেই কিন্তু হৃদি তো জানতো না । সে কিভাবে সরাসরি গুলি চালিয়ে দিল !
হৃদির জন্য যে সফট কর্নার ছিল সেটা মুহুর্তের ভেতরে শেষ হয়ে গেল আমার ! নিকিতা ফিরে এল কিছু সময় পরেই । ওর হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখতে পেলাম । বুঝতে কষ্ট হল না যে ওটা একটা আইস ব্যাগ ! সেটা আমার মাথায় চেপে ধরলো ।
তারপর বলল, এরপর যদি আর কোন দিন এমন হিরো গিরি দেখাতে গেছো তো তোমার খবর আছে !

কিছু সময় পার হয়ে গেল । তখনও দাড়িয়েই আছে ! নিকিতা হঠাৎ হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার প্রতি আমার একটা অপরাধবোধ ছিল । অপুকে আমি সত্যিই তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ! তবে আজকে সেই অপরাধবোধ শেষ হয়ে গেল । আমাকে তুমি গুলি করেছো এটা আমি মনে রাখবো না তবে এরপর তোমার উপর আমার নজর থাকবে ! কোন অপরাধ করে তুমি আর পার পাবে না ! তুমি চলে যাও !
নীতু বলল, আর ইউ শিওর ম্যাম !
নিকিতা বলল, হ্যা ওকে যেতে দাও নওরিনের খুনের পেছনে ও দায়ী না । ওটা কেবল আবিদ করেছে ।

হৃদি খানিকটা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো । নিকিতা আবার বলল, তুমি কোন দিন আমার সাথে জিততে পারতে না । কোন দিন না ! দেখলে আমাকে বাঁচানোর জন্য ও কিভাবে ঝাপ দিল ! তুমি যে পরাজিত হয়েছো এই ঘটনা তোমাকে সারা জীবন শান্তি দিবে না । এটাই আমি চাই । নাও গেট লস্ট !



পরিশিষ্টঃ

সাত দিন পর । নিকিতা আজকে দেশে ফিরে আসছে । ঐদিনই আবারও সে ইন্ডিয়া হয়ে আমেরিকা ফিরে গিয়েছে । যাওয়ার আগে সব ব্যবস্থা করেই গেছে । জায়েদ আমান এই সাট দিনের ভেতরেই আসল খুনিকে বের করে ফেলেছে । মানে করতে বাধ্য হয়েছে । আমি পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছিলাম । তবে এখন আসল খুনি ধরা পরার কারনে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । কিভাবে খুন টা করা হয়েছে সেটা পুলিশ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়েছে ।
তবে আশ্চর্য জনক ভাবে হৃদিকে কেসে জড়ানো হয় নি । নিকিতা তার কথা রেখেছে ।

এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে আমি নিকিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐদিন তো আর কিছু না বলেই চলে গেলে । এখন কি দয়াকরে সব কিছু বলবে ? কিভাবে সব বুঝলে
নিকিতা হাসলো । খুবই সহজ ! নওরিন যে প্রতিষ্ঠানের গুড উইল ব্রান্ড এম্বাসেডর সেটাতে হৃদি চাকরি করে । আবিদের পক্ষে কোন ভাবেই নওরিনের সাথে মিলে এই কাজ করা সম্ভব না । পয়েন্ট এক । তারপর হৃদি ঠিকই জানে তোমাকে কোথায় পাওয়া যাবে ! কিভাবে ? সব থেকে বড় পয়েন্ট জায়েদ যখন আমাকে বের হয়ে আসতে বলল । কিভাবে বলল ? আমি দেশে আছি এটা আবির জানে না । আমি ওকে ফোন করে আসতে বলেছিলাম । সেফহাউকে ও যখন তোমার চিকিৎসা করছিলো তখন আমি ওর সামনে আসি নি । তাহলে জেয়দ কিভাবে জানলো ? হৃদি !

আমি খানিকটা বোকার মত বসে রইলাম । এতো স হজ ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে নি । এতো বিপদের মাঝে নিকিতার মাথা একেবারে ঠান্ডা ছিল । সে কত কিছু ভেবেছে । আমি বললাম
-আচ্ছা শেষ একটা প্রশ্ন ?
-তোমার শরীরে ট্রেকার কোথায় আছে এটাই তো ?
-হুম ! কোথায় আছে ?
নিকিতা হাসলো । বলল, এটা আমি কোন দিন বলবো না । তোমাকে খুজে বের করতে হবে ।

নিকিতাকে হাসতে দেখে ভাল লাগলো । সেদিন যখন প্রথম নওরিনের লাশ পাওয়া গেল তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তো এই বিপদের হাত থেকে আর উদ্ধার পাবো না । নাহ, বউয়ের থেকে আর ভরশা হারানো যাবে না । এমন বউ থাকতে আমার কোন ভয় নাই !
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×