ছবি গুগল
গল্পের শুরু
চোখ মেলে কিছু সময় ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম । সিলিংটা কেমন অপরিচিত মনে হল । আমার নিজের ঘরের সিলিংটা আকাশি রংয়ের । কেবল আকাশিই নয় সেখানে আবার মাঝে মাঝে সাদার ছোয়া দেওয়া আছে । হঠাৎ করে সিলিংয়ের দিকে তাকালেই মনে হয় যেন আমি খোলা আকাশের নিচেই ঘুমিয়ে আছি ।
বুদ্ধিটা নিকিতার । তার মত মানুষের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোটা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার । তার জন্যই এই ব্যবস্থা ।
আমি কোথায় আছি !
তারপর পরেই সব মনে পড়ে গেল ।
আমি মুন্সিগঞ্জের একটা রিসোর্টে এসেছি গতকালকে । নিকিতার গতকালকে দেশের বাইরে গিয়েছে । সার্ক ভুক্ত দেশ গুলোর হোম মিনিস্টারদের নিয়ে একটা কনফারেন্স শুরু হয়েছে দিল্লীতে । কিভাবে নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা এবং কিছু চুক্তি হতে চলেছে । আমাকেও সাথে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমি যাই নি । ও সারাদিন থাকবে কাজে । আমি সেখানে গিয়ে কি করবো । অবশ্য দিল্লীর বদলে অন্য কোন জায়গা হলে যাওয়া যেত । যদি শিমলা কিংবা দার্জিলিং এ হল এই কনফারেন্স তাহলে চোখে বুঝে গিয়ে হাজির হতাম । কিন্তু দিল্লীতে গিয়ে কি করবো !
এর থেকে নির্জন কোন স্থানে গিয়ে হাজির হই । সেখানে নিজের মত দুটো দিন থাকি ।
নিকিতার সাথে বিয়ে হওয়ার পর আমার পুরো জীবনটা একেবারে পাল্টে গেছে । পুরো দেশের মানুষ আমাকে এখন চেনে । আগে আমি যেমন শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম এখন এই ব্যাপারটা আমি আর কোথায় খুজে পাই না । যেখানেই যাই মানুষজন কেমন করে জানি আমাকে ঠিকই চিনে ফলে । কেউ হয় প্রসংশা করে নয়তো টিটকারি মারে ।
আমাদের দেশে বউ যডি স্বামীর থেকে বেশি সফল হয় তাহলে তাহলে লোকজন সেই মানুষকে খুব ভাল চোখে দেখে না । কোন সন্দেহ নেই নিকিতা আমার থেকে খুব বেশি সফল একজন মানুষ । আমি কেবল মাত্র একটা বিশ্ববুদ্যালয়ে পড়াই ।
না এই ব্যাপারটা একটু ভুল বলা হল । আমাকে এখন কেবল মানুষ নিকিতার স্বামী বলেই চিনে না । বাজারে আমার লেখা বেশ কয়েকটা বই আছে । এবং সেগুলো খানিকটা পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে । তবে এই কথাটা বলতে আসলে আমার দ্বিধা নেই যে আমার এই বই প্রকাশ এবং সেটা সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতার পেছনে নিকিতার সরাসরি হাত না থাকলেও তার প্রভাব অবশ্যই আছে । যদি আমি নিকিতার স্বামী না হতাম তাহলে হয়তো আমার বই কোন দিন মানুষের হাতে হাতে পৌছাতো না । এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে ।
আমি কিছুটা সময় সাদা সিলিংয়ের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলাম । আমি খাটের বাম দিকে শুয়ে আছে । খাটের বাম দিকে একটা বড় জানালা রয়েছে । সেটার পর্দা একটু সরানো । বাইরে বেশ আলো ফুটে গেছে এরই মাঝে । একটু পরেই সূর্য উঠবে । আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । এরপর শরীরের উপর থেকে কম্বলটা সরাতে যাবো তখনই খানিকটা টান পড়লো মনে হল ।
এই ব্যাপারটা সাথে আমি খানিকটা অভ্যস্ত । কারন নিকিতাকে রেখে যখন বিছানা ছাড়তে যাই প্রতিবারই আমার কম্বলে এই রকম টান পরে । আমার বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো । সাথে সাথে ডান দিকে তাকালাম ।
বুকের ভেতরে একটা জোটে ধাক্কা অনুভব করলাম । একটা মেয়ের চুল দেখা যাচ্ছে । মেয়েটা ঐ দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে ।
এই মেয়ে কোথা থেকে এল ?
এখানে কি করছে ?
কাল রাতে আমি খানিকটা ড্রিংক করেছিলাম । এটা সত্য কথা । আসলে নিকিতার সাথে বিয়ের পর থেকে মানসিক ভাবে কিছুটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি । কিছু ব্যক্তিগত কারন আছে । কিছু সমস্যা আমার নিজের কিছুটা নিকিতার । আমি চাই আমাদের সংসার এখন আরও একটু এগিয়ে যাক কিন্তু নিকিতা আরও একটু সময় নিটে চায় । সামনের নির্বাচনের আগে কিছুই করতে চায় না ।
তাই মাঝে মাঝে আমি ড্রিংক করি ! কিন্তু এতো ড্রিংক কখনই করি না যে যে কাউকে নিজের ঘরে নিয়ে আসবো !
আমি শুয়ে থাকা মেয়েটাকে ডাকার চেষ্টা করলাম ! কয়েকবার ডাকার পরেও মেয়েটা একটুও নড়লো না । এরপর আমি তার মাথায় মৃদুভাবে ধাক্কা দিলাম । কিন্তু কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পরেওও মেয়েটা উঠলো না ।
কি মরার ঘুম রে বাবা !
এমন ভাবে কেউ ঘুমায় !
আমি আর কিছু না চিন্তা করে কম্বলটা টান দিয়ে সরিয়ে ফেললাম । তখনই সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম !
ও মাই গড !
আমি সত্যিই বাক্য হারা হয়ে গেলাম !
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম কেবল !
আমার জীবনে আমি এমন কিছু দেখতে পাবো কোন দিন ভাবি নি !
সাদা বিছানার চাদরের অনেকটা অংশ রক্তে ভেসে গেছে । রক্ত জমে কালো হয়ে এসেছে ! মেয়েটার অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে । তবুও আমার মোটেই বুঝতে কষ্ট হল না যে মেয়েটা মারা গেছে ।
এই মৃত মানুষটা সারা রাত আমার পাশেই ছিল ! এই মেয়ে এখানে কিভাবে এল ?
কে মারলো মেয়েটাকে !!
আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল !
এখন কি হবে !
পর্ব এক
আমি বিছানা থেকে এক লাফে উঠে দাড়ালাম । আমার বিস্মিত দৃষ্টিটা এখনও বিছানার উপরে পড়ে থাকা দেহটার উপর নিবদ্ধ ! আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না । আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি । হয়তো এসবের কোন কিছুই সত্য না । একটু পরে আমি আবার ঘুম থেকে জেগে উঠবো এবং দেখবো যে সব আগের মত স্বাভাবিক আছে ।
কিছু সময় আমি মৃত দেহটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । সাদা বিছানায় জমে থাকা শক্তের দিকেও তাকিয়ে রইলাম । রক্ত দেখলে আমার সারাজীবন শরীরে খানিকটা কাঁপন ধরে যায় । তাজা রক্ত দেখতে পারি না বলেই আমি ডাক্তারি পড়ার সাহস করতে পারি নি । বাবার খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও । এমন কি সামান্য গরু ছাগলের জবাইয়ের দৃশ্যও আমার সহ্য হয় না ঠিক ।
আর সেই আমি কি না একটা রক্তাক্ত মানুষের সাথে রাত ভয় ঘুমিয়ে ছিলাম । আমার এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ।
কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম আসলে আমি স্বপ্ন দেখছি না, যা চোখের সামনে দেখছি তা আসলেই বাস্তব তখন মাথার ভেতরে একটা বোমা ফাঁটতে শুরু করলো ! এখন আমি কি করবো ?
আমার ঘরে একটা নগ্ন মেয়ে পড়ে আছে মৃত অবস্থায় !
দুনিয়ার কোন মানুষ এটা কখনই বিশ্বাস করবে না যে এই খুনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ।
এমন কি নিকিতা নিজেও এই কথা বিশ্বাস করবে না । এই পরিস্থিতিতে আমি থাকলেও হয়তো ওকে বিশ্বাস করতাম না । সে আমাকে নিশ্চিত ভাবে দোষী ভাববে ! সে আমাকে ভাববে আমি রাতে মেয়েটিকে এখানে নিয়ে এসেছি এবং মেয়েটিকে মেরে ফেলেছি !
আমি মেয়েটির দিকে আরও ভাল করে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । মেয়েটির যে আকর্ষনীয় শরীর সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । পেছন দিকে ওর পুরো শরীরটা দেখা যাচ্ছে । শরীরে এক ফোটা মেড আমি দেখতে পেলাম না । হাত দুটো কেউ পেছন দিকে দিয়ে শক্ত একটা সাথে বেঁধে রেখেছে । তারপরই মেয়েটাকে খুন করেছে । মেয়েটার শরীরের ঠিক কোথায় আঘাত করা হয়েছে সেটা জানতে হলে আমার মেয়েটিকে এক পাশে সরাতে হবে । কিন্তু আমার সেটা করতে ইচ্ছে হল না । আমি এমন কি মেয়েটার চেহারা পর্যন্ত এখনও দেখি নি । এসব দেখে আমার মোটেও লাভ নেই !
আমি এখন কি করবো ?
কিছুটা সময় পরে আমার মাথাটা একটু শান্ত হয়ে এল । আমি এখন চিন্তা করতে লাগলাম এই ঝামেলা থেকে আমি কিভাবে মুক্তি পাবো ?
কোন উপায় কি আছে ?
একটু চিন্তা করতে লাগলাম ।
কয়েকটা আশার ব্যাপার আছে ! কয়েকটা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি !
প্রথম সম্ভবনা হচ্ছে আমাকে এখন এখান থেকে সবার আগে বেরিয়ে যেতে হবে । কেউ কিছু টের পেয়ে যাওয়ার আগেই । এর থেকে সহজ আর ভাল বুদ্ধি আর হয় না । আমাকে এখন কেউ যদি এখানে এই লাশের সাথে দেখে এক ঘরে তাহলে আমার আসলে কোন আশাই নেই । যদিও এভাবে পালিয়ে যাওয়াটাও আমার কাছে ভাল লাগছে না । এভাবে পালিয়ে যাওয়া মানেই হচ্ছে নিজেকে অপরাধী প্রমান করা । কিন্তু আমি এখানে থাকলেও সেটা হবে ।
দ্বিতীয় আশার কথা হচ্ছে আমাকে এখানে কেউ চিনে না । গতদিনই আমি সেটা টের পেয়েছিলাম । মানষের চোখের দিকে তাকালেই সেটা আমি বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারি । এই রিসোর্টটার মানুষ খুব একটা আসে না । ঢাকার পাশের শহর হলেও এটা বেশ অখ্যাত একটা রিসোর্ট ! এই জন্যই আমি এইটা বেছে নিয়েছিলাম । এখন কোন ভাবে এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে !
তৃতীয় আশার কথা হচ্ছে, এখানে এন্ট্রি নেওয়ার সময় আমি আমার আসল পরিচয় দেই নি । আমার একটা ফেইক আইডি আছে । নিকিতাকে আইডিটা বানিয়ে দিতে বলেছিলাম । কি কারনে বলেছিলাম সেটা অবশ্য আমার নিজেরও ঠিক জানা নেই । একটা কারন হতে পারে যে সব স্থানে আমার পরিচিত পরিচয়টা দিতে ইচ্ছে করে না । আমার কেবল মনে হয় এই পরিচয়টা আমার নিজের অর্জিত নয়, নিকিতার কারনে পাওয়া । তাই মাঝে মাঝে এমন নির্জন স্থানে যখন আসি তখন আমি এই ফেইক আইডিটা ব্যবহার করি । আইডি অনুযায়ী আমার নাম সাইদ মাহমুদ এবং আমি ইন্টারনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা !
আমি দ্রুত আমার ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম । অবশ্য খুব বেশি কিছু আমি সাথে করে আনিও নি । আর ব্যাগ থেকে সব কিছু বেরও করি নি ।দরকারি জিনিস গুলো ব্যাগে ভরে নিলাম । তারপর তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগলো না । দরজা দিয়ে বের হতে যাবো তখন নিজের কৌতুহলকে আমি দমন করতে পারলাম না । আবার ফিরে এলাম । তারপর মেয়েটিকে চেহারাটা হাত দিয়ে আমার দিকে ফেরালাম !
সাথে সাথেই আমার মুখ দিয়ে একটা অস্ফুটো আওয়াজ বের হয়ে এল ! আমি এই সকালবেলা তৃতীয়বারের মত ধাক্কাটা খেলাম !
মেয়েটিকে আমি খুব ভাল করেই চিনি !
নওরিন আফরোজ !
এই সময়কার জনপ্রিয় মডেল এবং অভিনেত্রী !
আই মাই গড !
আমি এ কোন বিপদে পড়লাম !
আমি এতো সময় ধরে নিজেকে যতখানিক শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম সেটা এবার একেবারে উবে গেল । আমার বুকের মাঝে এবার তীব্র একটা আতংকের সৃষ্টি হল । এই কাজটা যেই করে থাকুক না কেন সে করেছে খুব প্লান করেই । আমাকে সব দিক দিয়ে আটকাতেই কাজটা করেছে !
কাজটা কে করতে পারে ?
আমার মাথায় কেবল একজনের নামই এল !
নিকিতার বাবা !
এই মানুষটাই আমাকে সব থেকে বেশি অপছন্দ করে ! সে চায় নি আমি নিকিতার সাথে থাকি । আমাকে হত্যা করার সে উঠে পড়ে লেগেছিলো । তারপরেও আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম । নিকিতাকে অনুরোধ করেছিলাম যা হয়েছে সব ভুলে গিয়ে তাকে যেন ফিরিয়ে আনা হয় । আমার মনে হয়েছে যে যা করেছে সব নিকিতার জন্য । আমার সাথে তার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ ছিল না । ভেবেছিলাম সব বুঝি মিটে গেছে ।
কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সব কিছু মিটে যায় নি !
আমি দরজা বন্ধ করে বের হয়ে এলাম । সকাল এখনও ভাল ভাল ভাবে হয় নি । নির্জন রিসোর্ট টা এখন আরও বেশি নির্জন মনে হচ্ছে । আমার লক্ষ্য যে কারো চোখে পড়ার আগেই এখান থেকে বের হয়ে যাও । তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হওয়া গেল না । দরজার কাছে রিসিপশনে একজন ঠিকই বসে আছে । আমাকে দেখেই হাসি মুখে উঠে দাড়ালো ।
-স্যার কি চেক আউট করবেন ?
আমি নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রান চেষ্টা করালম । তারপর বলল, আসলে আমার এখনই ঢাকাতে যাওয়ার দরকার !
-কিন্তু স্যার আমাদের এখানে আসলে আট টার আগে চেক আউট করার নিয়ম নেই ! আমাদের রুম সার্ভিস সাড়ে সাতটার পর থেকে চালু হয় !
-দেখুন দরকার না পড়লে আমি যেতাম না । আমি অগ্রিম দুইদিনের পেমেন্ট করেই রেখেছি । আর আপনার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে না যে আমি আপনাদের ওয়াশ থেকে সাবান স্যাম্পু নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি যে সব চেক করে দেখতে হবে !
-না না স্যার কি বলছেন এসব !
-তাহলে কি মনে হচ্ছে ? আমি আমার ঘরে কাউকে খুন করে রেখে এসেছি । সেটা আপনাদের চেক করতে হবে ?
এবার ছেলেটি হেসে ফেলল । তারপর বলল, স্যার আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে সাড়ে সাতটার আগে এখান থেকে কোন যানবাহন পাবেন না আপনি । এটা শহর থেকে একটু দুরে । তাই আমাদের নিজেদের গাড়ি আছে যেটা দিয়ে আমরা গেস্ট দের শহরে পৌছে দেই । বিশেষ করে যারা গাড়ি ছাড়া আসে । আপনার সাথে তো গাড়ি নেই । তাই বলছিলাম ....
আমি খানিকটা বিরক্ত কন্ঠে বললাম, আপনাদের গাড়ির জন্য আমার অপেক্ষা করলে চলবে না । আমার জন্য গাড়ি আসছে !
একটা মিথ্যা কথা বলে দিলাম । তারপর বললাম, আমাকে এখনই যেতে হবে । এই নিন রুমের চাবি !
ছেলেটা আর কিছু বললাম না । আমি দ্রুত পায়ে গেট দিয়ে বের হয়ে এলাম ।
রাস্তাটা পাকা হলেও বেশ সরু । এক সাথে দুটো মাইক্রবাস পার হতে কষ্ট হয়ে যাবে । এদিক দিয়ে কোন বাস চলে না । আমাকে সামনের এগিয়ে যেতে হবে । কোন বেবিট্যাক্সি কিংবা ভ্যান রিক্সা যাই পাই না কেন সেটা নিয়ে শহরের দিকে যেতে হবে । কেউ কিছু বোঝার আগেই আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে !
আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে থাকি সামনের দিকে । মাথার ভেতরে তখনও কেবল নওরিন আফরিজের কথা ঘুর পাক খাচ্ছে ! মেয়েটা এখানে কিভাবে এল ! মেয়েটার এখানে আশার কোন কারন নেই ! আমার এবার সত্যিই ভয় করতে শুরু করলো । বুঝতে বাকি রইলো না যে এবার হয়তো আমার আর রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে না ।
পর্ব দুই
নিকিতার সাথে আমার যে বছর বিয়ে হয়েছিলো তার পরের বছর বই মেলাতে আমার দুইটা বই বের হয় । একটা উপন্যাস আরেকটা ছোট গল্প সংকলন । বই দুটো আমি নিজের টাকা দিয়েই আসলে প্রকাশ করেছিলাম প্রথমে । খানিকটা নিরবে । কাউকে কিছু না বলে । টুকটাক যে লেখালিখি করতাম সেটা একান্তই নিজের জন্য । একটা দুটো বই বের করার শখ ছিল । সেই শখ থেকেই বই বের করা । আমি ভেবেছিলাম যে বড় জোর একশ কপি বের হবে । আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্টুডেন্ট কিনবে, কিছু পরিচিত মানুষ কিনবে- ব্যস এখানেই আমার শখ পূরন শেষ হবে !
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দুটো বই ই বেস্ট সেলার হয়ে গেল । প্রথম সংস্করন টা আমি নিজের টাকা দিয়ে করলেও পরের মোট দশটা সংস্করন টা প্রকাশন নিজের টাকা দিয়ে বের করলেন । তারপর আমার অপেক্ষা করতে হয় নি । কেবল মেলাতেই নই সারা বছরই আমার বই বের হতে লাগলো এবং সেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলো । যদিও আমি জানি যে প্রত্যেক্ষ না হলেও নিকিতার এর পেছনে একটা পরক্ষ প্রভাব ঠিকই ছিল । হয়তো নিকিতার সাথে আমার বিয়ে না হলে আমাকে মানুষজন এভাবে চিনতো না, আমার বই এভাবে বিক্রিও হতো না । জীবন হয়তো তখন অন্য রকম হত ।
নওরিনের সাথে আমার পরিচয় হয় মাস ছয়েক আগে । নিকিতার রাজনৈতিক পার্টির এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমি ওর সাথে । স্বাধারনত এই সব পার্টিতে আমি যাই না । আমার বিরক্ত লাগে । ওরা নানান বিষয় নিয়ে কথা বলে আড্ডা দেয়, আমার কিছু করার থাকে না । আমি এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই । আমি তাই করছিলাম । এমন সময় একজন হঠাৎ আমার পেছনে একজন এসে হাজির হল । একটা নোট বুক বের করে দিয়ে বলল, অটোগ্রাফ, প্লিজ ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম । এখনকার দিনে আলাদা নোটবুকে লেখকদের অটোগ্রাফ কেউ নেয় না । আগে একটা সময় পাঠকদের একটা আলাদা খাতা কিংবা নোট বুক থাকতো । সেখানে তারা তাদের পছন্দের লেখকদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করতেন । এখন যাও বা অটোগ্রাফ নেয় সেটা কেবল বইয়ের সামনের পাতায় । এখন সবাই সেলফি তোলে । তারপর সেটা ফেসবুকে পোস্ট করে ।
সেখানে আমার অটোগ্রাফ নিচ্ছে ! আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম ।
কিছু সময় লাগলো আমার নওরিনকে চিনতে । এই রকম পার্টিতে নাট্য ফিল্ম জগতের অনেকেই হাজির থাকে । এর আগেও দেখেছি আমি । নওরিন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল, কি লেখক সাহেব কি অটোগ্রাফ দিবে না ?
আমি হাসলাম । তারপর নোটবুকটা হাতে নিলাম ।
তারপর থেকেই নওরিনের সাথে আমার মাঝে মাঝেই দেখা হতে লাগলো । তারপর এক সময় সে আমার ফেসবুকে এড হয়ে গেল । মাঝে মাঝেই সে আমাকে নক দিও । নানান বিষয়ে আমার কাছে জানতে চাইতো ! আমি বেশ অবাকই হয়ে ছিলাম যে ওর মত এতো ব্যস্ত একজন মডেল আমার বই পড়ে । এবং কেবল পড়েই না রীতিমত গবেষণা করে । মাঝে মাঝে কথা বলার সময় আমার মনে হয় আমার লেখার ব্যাপারে আমার থেকে নওরিনই যেন বেশি ভাল জানে । অন্তত কথা বলতে গেলে আমার তো তাই মনে হয় !
মেয়েটা মাঝে মাঝেই আমার সাথে দেখা করতে চাইতো । আমি সেটা এড়িয়ে যেতাম । একজন পাঠক আর লেখকের মাঝে যতটুকু সম্পর্ক হওয়ার দরকার আমি সেটার বেশি দুর এগিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলাম না ।
আর আজকে এই মেয়ে আমার পাশে মরে পড়ে আছে । পুলিশের খুব বেশি সময় লাগবে এটা বের করতে যে নওরিনের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল । ফোন রেকর্ড আর ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জার বের করলেই সেটা বের হয়ে যাবে ।
যখন আমি রিসোর্টের রুম থেকে বের হচ্ছিলাম তখন মনের ভেতরে একটা আশা ছিল যে এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই একটা উপায় থাকবে যে এই ঝামেলা থেকে আমি নিজেকে বের করতে পারবো । আমার তখন এই আশা ছিল যে মেয়েটাকে আমি চিনবো না । আর যে মেয়েটাকে আমি চিনি না তাকে হত্যা করার কোন কারন আমার কাছে থাকবে না । কিন্তু এখন ব্যাপারটা একেবারেই উল্টো ! আমি মেয়েটাকে খুব ভাল করে চিনি !
আমি রিসোর্ট থেকে বের হয়ে সোজা হাটা দিলাম শহরের দিকে । একমনে হল নিজের গাড়িটা না এনে হয়তো ভালই করেছি । গাড়ি আসলে আমাকে খুজে বের করতে আরও শহজ হত ওদের জন্য । এখনও হয়তো একটা ক্ষণ সম্ভবনা আছে যে ওরা আমাকে খুজে পাবে । টের পাবে না যে রাতে এই রুমে কে ছিল । সে আইডি দেওয়া আছে সেখানে গিয়ে দেখবে সেখানে অন্য কেউ বসে আছে ।
এখন আমাকে আর কেউ না দেখলেই হয় ! এমন একটা ভাবনা আসতেই আমাকে পেছন থেকে কেউ ডাক দিল । আমি প্রথমে ডাকটা ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমার মাথা একটু গরম ছিল বিধায় নিজের নিজের ফেইক নামটা আমি ঠিক চিনতে পারি নি । যখন গাড়িটা আমার পাশে এসে থামলো তখন চেহারাটা চিনতে পারলাম ।
গতকাল রাতে এই লোকটাই আমার পাশে বসে ড্রিংক করছিলো । আমার সাথে টুকটাক কথা বলছিলো । আমিও কিছু কথা বলছিলাম ।
লোকটা একটু হেসে বলল, কোথায় যাচ্ছেন এতো সকালে ?
আমি ততক্ষনে নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়েছি । বললাম, আসলে আমার এখনই একটু ঢাকা যাওয়া দরকার । জরুরী কল এসেছে !
-ও আচ্ছা ! আমি ভাবছিলাম গতকালকের মত আজকেও আপনার সাথে গল্প করা যাবে । বুঝেনই তো একা একা ড্রিংক করে মজা নেই।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমার মনযোগ আসলে তখনও পেছনের দিকে । যদিও হাটতে হাটতে আমি বেশ দুরেই চলে এসেছি রিসোর্ট থেকে । তবুও আমার মনে এই ভয়টা রয়েই গেছে যে এখনই বুঝি আমি কোন চিৎকার শুনতে পাবো ! কেউ হয়তো এখনই দৌড়ে আসবে আমাকে ধরার জন্য !
লোকটা বলল, তো আমি কি হেটেই যাবেন ? এখান দিয়ে তো পাবলিক বাস যায় না !
-তাই ভাবছি ।
-এক কাজ করতে পারি !
-বলুন !
-আপনাকে আমি শহর পর্যন্ত পৌছে দিতে পারি । কাল রাতে আপনি আমাকে যথেষ্ট পরিমান সঙ্গ দিয়েছেন । এই টুকু তো করতেই পারি।
আমি খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে গেলাম । এই কথা সত্য যে গতকাল রাতে তার সাথে একটু ড্রিংক করেছি তবে সেটা খুব বেশি সঙ্গ দিয়েছি বলে মনে পড়লো না । তবুও এখন এর থেকে ভাল অপশন আমি দেখতে পাচ্ছি না । আমি আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়লাম ।
শহরের পৌছাতে আরও আধা ঘন্টা লাগলো । এই অবস্থায় ভদ্রলোক অনেক কথা বললেন । সে একজন সরকারি অফিসার । মাঝে মাঝে এখানে আসেন । জায়গাটা বেশ নির্জন আর এখানকার ওয়ানেই সংগ্রহটা বেশ ভাল । লোকটার নাম আবরার ইসলাম । আমি নিজের ফেেইক আইডির নাম বললাম । আমি কি করি সেটা বললাম । আমার চেষ্টা রইলো যাতে আমার আচরন কম অস্বাভাবিক মন হয় । কিন্তু নিজের ভেতরে কি চলছে সেটা কেবল আমি নিজে জানি ।
বিকেল বেলার ভেতরে সারা দেশের সব পত্রিকায় এটা শীর্ষ নিউজ হয়ে গেল যে মুন্সিগঞ্জের এক অখ্যাত রিসোর্টে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী নওরিন আফরোজের মৃতদেহ পাওয়া গেছে । তাকে হত্যা করা হয়েছে । তাকে যার ঘর থেকে পাওয়া গেছে তার নাম সাইদ মাহমুদ । ইণ্টারনাল ব্যাংকের একজন কর্মকতা । সে সকাল বেলাতেই রিসোর্ট ছেড়ে পালিয়ে গেছে । পুলিশ সাইদ মাহমুদকে খুজছে ।
আমি দম বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম । আমার কেন জানি মনে হল পুলিশ আমাকে খুব জলদিই খুজে বের করবে । আমার আসল বেরিয়ে যাবে খুব জলদি ! আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । নিকিতার কাছে সত্যটা বলবো কি না বুঝতে পারছিলাম না । ও কি আমাকে বিশ্বাস করবে ?
নিকিতা আমাকে ভালবাসে আমি জানি । আমাকে সে বিশ্বাস করে ! কিন্তু এই ব্যাপারে কি সে বিশ্বাস করবে ?
আমি যদি নিকিতার জায়গাতে থাকতাম তাহলে কি আমি নিকিতাকে বিশ্বাস করতে পারতাম ?
আমি জানি না !
কিন্তু আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই নিকিতা কতখানিক ক্ষমতাবান মানুষ । তার কাছ থেকে সব কিছু লুকিয়ে রাখা মুশকিল ! যদিও সে দেশের বাইরে রয়েছে তবুও তার কাছে সব খবর পৌছে গেছে । আমার সব খবর তার কাছে পৌছে গেছে ।
রাতের বেলা আমার কাছে নিকিতার ফোন চলে এল ! কোন প্রকার ভূমিকা না করেই নিকিতা বলল, অপু !
আমি নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রেখে বললাম, বল ! কি খবর তোমার ? তোমার কনফারেন্স ....
-আর ইউ ওকে ?
-হ্যা !
-অপু আমাকে কি কিছু বলতে চাও ?
-আই লাভ ইউ !
-এটা না ! অন্য কিছু ? এমন কিছু যে আমার জানা দরকার ?
-আমার জানা মতে তুমি আমার ব্যাপারে সব জানো !
-আমিও তাই জানতাম ! তবে একজন মানুষের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব না । বিশেষ করে মানুষের মনে কি চলে । যাই হোক আমি তোমার উপর সব সময় চোখ রাখি কারন আমি চাইনা তুমি আমার বিপদে পড় । তুমি জানো আমি তোমার ব্যাপারে চিন্তিত । তবে আমি এটাও আশা করি যে তুমি আমার কাছে সব সত্য বল ।
-আমি তোমার কাছে কিছু লুকাই না । তুমি জানো এটা !
-ওকে । আপাতত আমি রাখছি ।
আমি ফোন রেখে ছিলাম । মনের ভেতরে একটা তীব্র ইচ্ছে করছিলো যে নিকিতাকে সব সত্য বলে দেই । কিন্তু কেন জানি বলতে পারলাম না । কারন জানতাম যে বললে সেটা হাস্যকর শোনাবে ।
রাত ঠিক ১২টার দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোন এসে হাজির হল । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ শুনতে পেলাম । কেবল একটা লাইন শুনতে পেলাম ! "পুলিশ আপনার ঘরে পৌছে যাবে আধা ঘন্টার ভেতরে .।"
লাইন কেটে গেল । আমি জানি কয়েকটা মুহুর্ত চুপ করে বসে রইলাম কেবল । আমার ভেতরে থেকে কেবল একটা আওয়াজই বের হয়ে এল ।
"পালাও অপু ! তোমাকে পালাতে হবে"
পর্ব তিন
আজকে সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে আবারও আমার সিলিংয়ের দিকে চোখ গেল । ভাল করে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় সেদিকে । এই সিলিংটার রং হালকা গোলাপী । সিীংয়ের দিকে তাকিয়েই আমি ভাবতে লাগলাম আসলে আমার জীবনে এই মাত্র এক দিনের ভ্যভধানে কি হয়ে গেল । গত পরশু দিন সকালটাও ছিল চমৎকার । নিজের ঘরের সিলিংয়ের আকাশ দেখেই আমার ঘুম ভেঙ্গেছিলো। তারপর পাশ ফিরে তাকাতেই নিকিতার ঘুমন্ত চেহারাটা আমার চোখের সামনে এসে হাজির হয়েছিলো ।
আর গতকালকের সকালে আমার ঘুম ভেঙ্গে কি দেখলাম ! কেবল এক রাতের ব্যবধানে জীবনটা এমন ভাবে বদলে যাবে আমি ভাবতেও পারি নি । সত্যিই পারি নি । সামনে আমার জীবনে কি হবে আমি জানি না ।
আমি কিছু ভাবতে পারছি না । কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবো আমি জানি না । আমি সত্যই জানি না । আমি পাশ ফিরে শুলাম । এখন কয়টা বাজে কে জানে ! তবে বেশ সকাল হয়ে গেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই । জানালাতে ভারী পর্দা টেনে দেওয়া আছে । তবুও বাইরে থেকে আলো চলে আসছে ভেতরে ।
গতকাল রাতে মেসেজটা আসার পরপরই আমি আর কোন কিছু না ভেবে বাসা থেকে বের হয়ে যাই । সাথে ছিল কেবল মোবাইল ফোন আর কিছু টাকা । আর কিছু নেওয়ার কথা মাথাতে আসে নি । গেট দিয়ে যখন বের হয়ে এলাম তখনই আমার কানে সইরেনের শব্দ এল । বুকের ভেতরটা কেমন লাফাতে শুরু করলো । বারবার মনে হতে লাগলো যে আমাকে কেবল পালাতে হবে । যে দিকে চোখ যায় কেবল সেদিকে পালাতে হবে । আমি কোন কিছু না ভেবে দৌড়াতে থাকি কেবল ।
কতদুর দৌড়েছি আমি জানি না । আমার মাথায় ভেতরে কেবল এই কথাই কাজ করছিলো যে আমার পেছনে পুলিশ গেলে আছে । আমাকে ধরতে আসছে । আমাকে এখন এদের হাত থেকে পালাতে হবে। যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ি তাহলে আমার আর রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই ।
দৌড়াতে দৌড়াতে যখন হাপিয়ে গেছে তখন দম নেওয়ার জন্য আমি একটু থামলাম । ঠিক সেই সময়ে আমার ঠিক সামনেই একটা কালো রংয়ের গাড়ি এসে থামলো । গাড়িটা থামার সাথেই বুকের ভেতরে একটা ধাক্কা অনুভব করলাম । মনে হল এইবার বুঝি আমি ধরাই পরে গেলাম । কিন্তু যখন দরজা খুলে গেল আমি ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে একটা বিস্ময় অনুভব করলাম !
আগেই বলেছি যে আমার স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে গেছে । আমি কিছুই ভাবতে পারছি না । আমার কাছে কেবল মনে হচ্ছে আমাকে পালিয়ে যেতে হবে । যতদুরে সম্ভব আমাকে পালিয়ে যেতে হবে !
তাই হৃদিকে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম ।
হৃদি এখানে কিভাবে এল ?
হৃদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, উঠে এসো ! জলদি !
আমি কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে এলাম । গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করলো । আমি তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি হৃদির দিকে । ওকে কতদিন পরে দেখলাম আমি ঠিক বলতে পারবো না । একবার কেবল কানে এসেছিলো যে ও দেশে ফিরে এসেছে । তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর জয়েন করে নি । আর দেখা হয় নি আমার সাথে ।
আমি বললাম, তুমি এখানে ?
-কেন ? এর আগেও আমি তোমার বিপদে এসেছি, রিমেম্বার ?
তখনই মনে পড়লো আমার । আসলে হৃদির এক বন্ধু আছে ডিবিতে । ও নিশ্চয়ই খবর দিয়েছে হৃদিকে । আমি বললাম
-থ্যাঙ্কিউ ।
-আমাকে থ্যাঙ্কিউ দিতে হবে না । সবার আগে নিজের মোবাইলটা বন্ধ করে । তোমার মোবাইল ট্রাক করে তোমাকে খুজে পেতে সময় লাগবে না ওদের ।
আরে তাই তো এই ব্যাপারটা তো একদম ভাবি নি । আমি দ্রুত মোবাইল অফ করে দিতে ফোনটা হাতে নিলাম । তখনই আমার সেই নাম্বারের কথা মনে পড়লো । মেয়েটা আমাকে সাবধান করেছিলো । নাম্বারটা আরেকবার দেখলাম ভাল করে । মনের ভেতরে গেধে নিলাম । তারপর মোবাইলটা বন্ধ করে দিলাম ।
গাড়িটা বেশ দ্রুতই চলছে । আমি হৃদির দিকে তাকিয়ে আছে । মেয়েটাকে কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে । সেই বছর পাঁচেক আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকার মত মনে হচ্ছে না । মনে হচ্ছে কোন একশান মুভির হিরোইন । অন্তত ওর পোশাকে দেখেই তাই মনে হচ্ছে । আগে আমি ওকে শাড়ি ছাড়া কিছু পরতে দেখি নি । আজকে ও একটা কালো জিন্সের আর কালো টিশার্ট পরে আছে । তার উপর একটা কালো জ্যাকেট ! আমি সত্যিই ওকে এখানে আশা করি নি ।
প্রায় ঘন্টা তিনেক পরে আমরা একটা বাড়ির সামনে সামলাম । বাড়িটা শহর থেকে অনেক দুরে । সম্ভবত ঢাকার বাইরের কোন এলাকা । আমি এতোই উত্তেজিত ছিলাম যে গাড়ি কোন দিকে যাচ্ছে সেটা খেয়াল করি নি । গাড়ি থেকে বের হয়েই আমি আসে পাশে তাকাতে লাগলাম । চারিদিকে এই এক তলা বাড়িটা ছাড়া আর কিছু নেই ।
-আমরা কোথায় ?
হৃদি আমার সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, সামহোয়ার সেফ ! আপাতত এখানেই থাকো । সামনে দেখা যাক কি করা যায় !
আমি জানালার পর্দার দিকে তাকিয়েই ভাবতে লাগলাম আমার সাথে এই সব কি হচ্ছে আর কেন হচ্ছে ! নিকিতার বাবাই কি এই সবের পেছনে নাকি অন্য কেউ আছে ? অন্য কেউ থাকলে কেন থাকবে ? আমি কারো কি ক্ষতি করেছি ?
আমি দরজা খুলে হৃদিকে ভেতরে ঢুকতে দেখলাম । জানালার পর্দা সরিয়ে দিল । সাথে সাথেই ঘরে রোদ এসে ঢুকলো । আমি বেশ অবাক হলাম । ভেবেছিলাম সকাল হয়েছে কিন্তু রোদের ধরন দেখে মনে হল সকাল পার হয়ে গেছে অনেক আগেই ।
আমি বললাম, কয়টা বাজে ?
হৃদি হাসলো, এতো ঝামেলার ভেতরে মানুষ এতো ঘুমাতে পারে আমার জানা ছিলো না । দুপুরের আযান দিয়েছে আরও অন্তত আধা ঘন্টা আগে !
-কি ?
আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । আমি প্রায় ১০ ঘন্টা ঘুমিয়েছি ! এই ঝামেলার ভেতরে আমি এতো শান্তিমত ঘুমালাম কিভাবে ? তারপর মনে হল আগের দিক সকাল থেকে আমি প্রচন্ড মানসিক স্ট্রেসের ভেতরে ছিলাম । ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে ছিলাম সারাটা সময় । কারো কাছে যেতে সাহস করি নি । কারো কাছে বলতেও পারি নি । বারবার মনে হয়েছে কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না । হৃদির সাথে দেখা হওয়ার পর মনে হয়েছে যে একজনের উপর ভরশা করা যায় অন্তত । তাই সেই স্ট্রেসটা কমে এসেছে । এএই জন্যই হয়তো ঘুমাতে পেরেছি এতো নিশ্চি্ন্তে ! আমি হৃদির দিকে তাকালাম ভাল করে !এ কটা সাদা রঙয়ের সেলোয়ার কামিজ পরে আছে। গতকাল রাতে ওর দিকে ভাল করে তাকাতে পারি নি । এখন আবার ওকে সেই পরিচিত হৃদি মনে হচ্ছে ।
হৃদি আমার দিকে ওর মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হোম ক্রিন একটু স্ক্রল করে দেখো !
আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে স্ক্রল করতে শুরু করলাম । পুরো হোম পেইজ জুড়ে কেবল নওরিন আফরোজের মৃত্যুর খবর আর খুনীর খবর । খুনী মানে আমার খবর । কয়েক স্থানে দেখলাম আমার কিছু বই পোড়ানো হচ্ছে । যাদের কে আমি চিনি সবাই আমার বিরুদ্ধে স্টাটাস দিচ্ছে । এটাই স্বাভাবিক । বিশেষ করে আমার রাতের বেলা পালিয়ে যাওয়াটা সবাই কে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে আমিই নওরিন আফরোজকে খুন করেছি । যদি আমি খুন নাই করতাম তাহলে আমি পালাতাম কিভাবে ?
সবার শেষে আমি নিকিতার একটা ভিডিও দেখতে পেলাম । বিদেশে ওর হোটেলে এক সাংবাদিক পৌছে গেছে । সেখানে তাকে আমার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে ।
নিকিতার মুখটা আমি খানিকটা বিষন্নই মনে হল । সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আমার জীবনে কোন দিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করি নি এইবারও করবো না । অপুকে আমি অবশ্যই ভালবাসি এবং সেটা হয়তো পরিবর্তন হবে না কিন্তু ও যদি অপরাধী হয় তাহলে ওকে শাস্তি পেতেই হবে । সুষ্ঠ তদন্ত হবে !
সাংবাদিক তখন প্রশ্ন করলো কিন্তু যা আপনার মত একজন শাক্তিশালী স্ত্রী আছে তার বেলাতে কি তদন্তটা কি সুষ্ঠ হবে বলে মনে করেন ? নাকি এটা সম্ভব ?
নিকিতা কিছু সময় চুপ করে রইলাম । তারপর বলল, আমি জানতাম এই রকমটাই ভাবা হবে । আমার সাথে প্রাইম মিনিস্টারের কথা হয়েছে । আমার অনেক দিনের ছুটি পাওনা ছিল । এই কনফারেন্স টা শেষ হবে আজকে । আমি এখান থেকে আপাতত দেশে ফিরছি না । আমেরিকাতে আমার বড় মামার বাসাতে যাবো । পুরো মন্ত্রনালয়ের তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবে । আমার কোন হাত থাকবে না এখানে । এটা সরাসরি প্রাইম মিনিস্টার থেকে অর্ডার এসেছে ।
সাংবাদিক আর কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাহেদ আমানকে আমি খুব ভালা করে চিনি । আমার মনে যে আশা টুকু ছিল সেটাও ধপ করে নিভে গেল । এটা আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে আমার আর বাঁচার কোন আশা নেই । স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাহেদ আমান আমাকে নিশ্চিত ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিবে । এই লোক সম্ভবত আমাকে দুনিয়ার সব থেকে বেশি অপছন্দ করে । সেটার পেছনে অবশ্য কারনও আছে ।
আমি হৃদির দিকে তাকালাম । হৃদি বলল, বাহ ! তোমার বউ যে এতো ঈমানদার হবে ভাবি নি !
আমি কিছুই বলতে পারলাম না । সামনে কি করবো সেটাও মাথায় আসছে না । এভাবে নিকিতা আমার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে ভাবতে পারি নি । আমার সামনে এখন একটা পুলিশ ধরবে তারপর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিবে । দুনিয়ার সব প্রমান হয়তো আমার বিপক্ষে । আমি ঐ রিসোর্টে ছিলাম সেটা প্রমান করতে পুলিশের মোটেই কষ্ট হবে না । আমি ফেইক আইডি ব্যব হার করেছি সেটা একটা শক্ত প্রমান হবে । আমি পালিয়ে গেছি সেটাও একটা বড় প্রমান ! আমার সামনে কেবল একটা পথ খোলা আছে । দেশ ছেড়ে পালানো !
কিভাবে পালাবো আমি !
হৃদি যেন আমার মনের কথা বুঝতে পারলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপাতত দেশ পালানোই তোমার পক্ষে সব থেকে ভাল সিদ্ধান্ত হবে !
-কিন্তু কিভাবে ?
-আমার এক পরিচিত মানুষ আছে । সে আমাদের সাহায্য করতে পারবে !
-সত্যিই
-হ্যা !
আমি হৃদির দিকে তাকালাম । তারপর উঠে গিয়ে হৃদিকে জড়িয়ে ধরলাম । মেয়েটার সাথে নিকিতা বেশ খারাপ আচরন করেছিলো ওকে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করে । আমার এতো কোন হাত না থাকলেও এর জন্য আমাকে খানিকটা দায়ভার আছেই । তবুও মেয়েটা আমার জন্য এতো কিছু করছে ।
তাহলে কি জীবনে আমি ভুলই করেছি !
আজকে হৃদি যদি আমার জীবনে থাকতো তাহলে আমার জীবন সত্যিই অন্য রকম হত !
পর্ব চার
আমাদের দেশের পুরুষেরা একজন পুরুষের কাছে পরাজিত হয়ে নিজের হারটা স্বীকার করে নিতে পারে । ধীরে ধীরে সেই পরাজয়ের কষ্টটা মেনে নিতে পারে কিন্তু যখন একজন পুরুষ একজন নারীর কাছে পরাজিত হয় তখন সেটা সে একদম মেনে নিতে পারে না । সময়ের সাথে সেই ক্ষত শুকায় না বরং দিন দিন আরও বৃদ্ধি পায় !
জায়েদ আমানের ব্যাপারটাও ঠিক একই রকম । নিকিতার বাবা আর জায়েদ আমানের বাবা একই সাথে রাজনীতিতে এসেছিলো । জায়েদ যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে তার উদ্দেশ্য ছিল সে একদিন বাবার স্থান নেব । হয়তো সে নিয়েই নিত । তবে মাঝখান দিয়ে নিকিতা ঝামেলা পাকিয়ে দিল । ও সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু করে সেই রাজনীতির সাথে যুক্ত । স্কুল কলেজ এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ছাত্ররাজনীতি করে এসেছে । দলের জন্য তার আন্তরিকতার অন্ত ছিল না ।
সেদিক দিয়ে নিকিতা এসবের মাঝে ছিল না । সে মন দিয়ে পড়াশুনা করেছে । তারপর সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছে । কিন্তু তারপর নিকিতা এসেছে রাজনীতিতে ।
কিন্তু পুরো দেশের মানুষ নিকিতার উপর এমন ভাবে ফোকাস করা শুরু করেছে যে জায়েদ আমানের কথা যেন সবাই ভুলেই গেল । এমন কি ওদের রাজনৈতিক দলের নেতারাও নিকিতাকে বেশি যোগ্য মনে করলো । যে পদটা জায়েদের পাওয়ার কথা ছিল নিকিতা সেটা দখল করে ফেলল । এবং কোন সন্দেহ নেই যে নিকিতা নিজের দায়িত্ব খুব ভাল ভাবেই পালন করছে । তারপরেও জায়েদ এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না ।
প্রতিটা ক্ষেত্রেই জায়েদ নিকিতার কাছে হেরে যেতে লাগলো । যেখানে ও একজন পূর্ন মন্ত্রী জায়েদ কেবল একজন প্রতিমন্ত্রী । জায়েদ সরাসরি কিছু বলতে না পারলেও সে যে নিকিতাকে ঘৃণা করে সেটা কারো অজানা নয় । এখন সে নিকিতাকে বাগে আনার একটা সুযোগ পেয়েছে । সেটা সে কোন ভাবেই হাত ছাড়া করবে না । নিকিতা মাঝে মাঝেই আমাকে এই জায়েদ আমানের কথা বলতো । অন্য দলের মানুষ হলে নিকিতা তাকে ঠিকই দেখে নিতো । কিন্তু ওরা একই দলের হয়ে কাজ করছে । এমন কি স্বয়ং প্রাইম মিনিস্টার ওদের দুজনকে বলে দিয়েছে যেন ওরা কোন ভাবেই যেন একে অন্যের পেছনে না লাগে ।
কিন্তু এখন এই জায়েদ আমানের হাতে একটা সুযোগ এসেছে নিকিতাকে কঠিন ভাবে আঘাত করাার । আমাকে ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে তার জন্য ।
দুইটা দিন আমি এই বাসাতেই বসে রইলাম । এর মাঝে একটা বারের জন্যও আমি মোবাইল চালু করি নি । আমার মোবাইল খোলার অপেক্ষা করছে ওরা । হৃদি যে মোবাইলটা দিয়ে গেছে সেটা নিয়েই কাজ করছি । ফেসবুক আর ফ্যান পেইজটা বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগেই । এখন একটা অন্য আইডি খুলে মানুষের মন্তব্য পড়ার চেষ্টা করছি ।
মোটামুটি সবাই ভেবে নিয়েছে যে আমি খুনটা করেছি । তাদের থিউরি হচ্ছে আমার সাথে নওরিন আফরোজের একটা পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল । গোপনে সেটা চলছিলো বেশ ভাল ভাবেই । আমরা মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই এরমন রিসোর্টে গিয়ে হাজির হতাম । এইবারও তেমন ভাবেই গিয়ে হাাজির হয়েছিলাম । তারপর কোন একটা ঝামেলার কারনে আমি তাকে খুন করে চলে আসি । কারন হিসাবে তারা ধরে নিয়েছে নওরিন হয়তো আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো । আমী তাতে রাজি হয়ই । আপাতত এটাই সব থেকে উল্লেখযোগ্য কারন ।
আবার আরেকদল আছে তারা কারন হিসাবে মদ খাওয়াকে দেখছে । তাদের ভাস্যমতে মি অতিরিক্ত মদ খেয়ে ফেলেছিলাম । তাই আমার মাথা ঠিক ছিল না । কি করতে কি করে ফেলেছি কে জানে ।
অতি অল্প কয়েক জনকে দেখলাম তারা আসলে এখনও বিশ্বাস করে যে আমি কি করি নি । আমি কাউকে খুন করতে পারি না । আমাকে ফাঁসানো হয়েছে । মনে হল যাক অন্তত কিছু মানুষ এখনও অন্তত আমার উপর বিশ্বাস রাখে । নিকিতা কি আমাকে বিশ্বাস করে?
কই একবারও তো ও বলল না যে আমি কোন ভাবেই খুন করতে পারি না । আচ্ছা ও কি একবারও আমাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে । আমি আমার কৌতুহল আর ধরে রাখতে পারলাম না । গত দুইদিনে মোবাইলটা সব সময় বন্ধ রেখেছলাম । এবার ঠিক করলাম যে মোবাইলটা চালু করবো । একটু পরেই এখান থেকে চলে যাবো । হৃদি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে । মেয়েটা এতো কিছু কিভাবে করলো কে জানে । ঠিক হয়েছে এখান থেকে সোজা আমরা বাঙ্গলাবান্ধা যাবো । সেখান থেকে আমরা ভারতে ঢুকবো । আমার চোহারা একটু পরিবর্তন করতে হবে । সেটার জন্য আমাকে পথের মাঝে এক স্থানে থামতে হবে ।
আমি মোবাইলটা চালু করলাম । মোবাইলে মিসকল এলার্ট সেট করা ছিল । সেটার কয়েকটা মেসেজ এল । এই দুইদিনে আমাকে যারা ফোন দিয়েছে তাদের একটা লিস্ট । এর ভেতরে মায়ের নাম্বারটাই বেশ কয়েকবার দেখতে পেলাম । আরও পরিচিত কয়েকজন বন্ধুবান্ধকেও দেখতে পেলাম যারা ফোন দিয়েছে । কিন্তু নিকিতার নাম্বার দেখতে পেলাম না একবারও ।
ওর কয়েকটা গোপন নাম্বার আছে । সেগুলো সবই আমি জানি । কিন্তু সেগুলোর একটা থেকেও আমার নাম্বারে একটা ফোনও আসে নি ।
তাহলে কি নিকিতা সত্যিই সত্যিই ধরে নিয়েছে যে আমি খুন করেছি ! নয়তো একবারও আমার খোজ নিবে না ?
মনটা খারাপ হল । মাকে ফোন দেওয়া মোটেও উচিৎ হবে না জেনেও ফোন দিয়ে ফেললাম । আমি জানি মায়ের মোবাইল ট্যাপ করা হচ্ছে । কিংবা এমনও হতে পারে যে এখন আমাদের ফ্ল্যাটেই পুলিশ অবস্থান করছে ।
ফোন করার সাথে সাথেই মা ফোন রিসিভ করলো । আমার কাছে মনে হল মা যেন ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিল । প্রথমে কিছু সময় কথাই বলতে পারলো না । কান্না কাটি করতে লাগলো । মায়ের কান্না একটু থামতেই আমি বললাম, আমি সত্যিই কাউকে খুন করি নি মা ।
মা বলল, আমি জানি আমার ছেলে কেমন । তুই কাউকে মারতে পারিস না ! যেদিন থেকে তোর সাথে ঐ মেয়ের বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে তোর জীবনে ঝামেলার শেষ নেই ।
নিকিতার সাথে বিয়েটা মা আসলে কোন দিনই মেনে নিতে পারে নি ঠিক মত । তার কাছে দেশের রাজনীতিটা একটা বিষাক্ত জিনিস ছাড়া আর কিছুই নয় । তবে আমার পছন্দের কাছে মা আর কিছু বলেন নি । বাইরে প্রকাশ না করলেও মনে মনে সে যে নিকিতাকে ঠিক পছন্দ করেন না সেটা বুঝতে আমার আসলে অসুবিধা হয় না । আমি বললাম, মা এখন আমাকে ফোন রাখতে হবে । আমি ভাল আছি । চিন্তা কর না ।
আর কিছু বলার আগেই আমি ফোন কেটে দিলাম । আমি জানি আমার ফোন ট্রাক করার চেষ্টা করা হয়েছে । জানিন সফল হয়ে গেছে কি না ।
একটু পরেই হৃদিকে ঘরে ঢুকতে দেখলাম । ও বলল, চল যাওয়ার সময় হয়েছে । আমার হাতে আমার পাসপোর্ট টা ধরিয়ে দিল । আমি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেখলাম সেখানে লেখা আবির চট্টোবাধ্যায় নাম ঠিক করা হয়েছে আমার জন্য । সেই সাথে একটা কাগজ হাতে দিল । সেখানে আবির সম্পর্কে কিছু তথ্য । আমি সেগুলো মনে গেধে নেওয়ার চেষ্টা করলাম ! আধা ঘন্টা পরেই আমরা রওনা দিয়ে দিলাম ।
হৃদিকে যতই দেখছি আমি ততই অবাক হচ্ছি । মেয়েটা সত্যি অনেক বদলে গেছে ! এমন তো ও ছিল না কোন কালেই । তাহলে এই পরিবর্তনটা কেন হল ? অবশ্য বাইরে থাকলে মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসবেই । হৃদির তাই হয়েছে ।
আমরা আবারও ঢাকার দিকে ছুটে গেলাম । আলাদা করে গাড়িতে করে কিংবা বাসে যাওয়ার সাহস হল না । কারন রাস্তার মাঝে বাস আর গাড়ি প্রায়ই চেক হয় । ট্রেনে করে যাওয়া সব থেকে বেশি নিরাপদ ।
পথের মাঝে আমরা একটা বাসায় থামলাম । সেখান থেকে যখন বের হলাম তখন আমি নিজেকে নিজেই ঠিক মত চিনতে পারছি না । মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরাতে বেশ কিছু সময় নিজেকে চেনার চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু সত্যি বলছি ঠিক চিনতে পারছিলাম না ।
হৃদির দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমাকে কেমন যেন মনে হচ্ছে ? এসব কিছু কিভাবে জানো ?
হৃদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আর আগের সেই মানুষটা নেই অপু । অনেক বদলে গেছি । বলতে পারো তোমার বউ আমার জীবনটা বদলে দিয়েছে । তোমার কাছ থেকে আমি লুকাবো না । আমি একটা আন্তর্জাতিক রিসার্স সেন্টারের সাথে যুক্ত হয়েছি । এবং ....
এই লাইন টুকু বলে হৃদি একটু থামলো । কিছু যেন ভাবছে । আমাকে সবটা বলবে কি না সেটা আরেকবার ভেবে নিচ্ছে । আমি বললাম
-এবং ?
-এবং সেই সেন্টারটা কেবল এই রিসার্সই করে না আরও অনেক কিছু করে ।
-আরও অনেক কিছু বলতে ?
-আছে অনেক কিছু । আমাদের ফান্ডিংয়ের একটা ব্যাপার আছে । নানান স্থান থেকে ফান্ডিং আসে । সেই ডোনারদের জন্য আমাদের কিছু করতে হয় । আমাদের নানান দিকে লিংক থাকে । এই জন্য আমি এতো কিছু জানি । এতো কিছু করতে পারছি ।
আমি আর কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না । আমি আর কিছু জানতেও চাইলাম না । ঢাকায় এসেই আমরা আলাদা হয়ে গেলাম । হৃদি আমার সাথে আপাতত যাবে না । ও প্লেনে করে যাবে এবং ইন্ডিয়াতে গিয়ে আমাকে সে রিসিভ করবে ।
সব কিছু ঠিক থাকলে কাল সকাল দশটার ভেতরে আমি এই দেশ থেকে বেরিয়ে যাবো ।
নতুন মোবাইলটা নিয়ে আমি নিকিতার কথা ভাবতে লাগলাম । মেয়েটা এখন কি ছুটিতে চলে গেছে । দেশে আসে নি সে । দেশে আসলে খবরে বের হত । আচ্ছা শান্তিমত ঘুমাতে পারছে তো ! নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটা কি আমার থেকে বড় ?
হ্যা বড় ! এটা আমি আগে থেকেই জানি । নিকিতার কাছে সত্যিই সবার আগে ওর রাজনীতি তারপর অন্য কিছু ।
মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । আমার এই ফেরারী জীবন কতদিন চলবে কে জানে ! হয়তো আর কোন দিন দেশেই আসতে পারবো না । কাল সকালেই দেশের বাইরে চলে যাবো । এমন একটা অপরাধের জন্য আমাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হচ্ছে যেটা আমি করি নি । এবং আমার সব থেকে ভরশার মানুষটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । আমাকে একা রেখে চলে গেছে ।
কিন্তু সব কিছু প্লান মত হল না । যখন আমি পঞ্চগড় রেলস্টেশনে নামলাম তখনই ধরা পড়ে গেলাম । আমার জন্য ওরা অপেক্ষা করছিলো স্টেশনে !
স্টেশন থেকে বের হতেই চারজন আমাকে ঘিরে ধরলো । ওরা সাদা পোশাকে ছিল । সাথে সাথেই একটা সাদা গাড়ি এসে হাজির হল সামনে । আমি কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল । তারপর একটা রুমাল চেপে ধরলো আমার নাকের মধ্যে !
ক্লোরোফর্ম !
জ্ঞান হারানোর আগে আমার হৃদির কথা মনে পড়লো । মেয়েটা আমার জন্য বর্ডারের অপাশে অপেক্ষা করে থাকবে !
পর্ব পাঁচ
আমি কত সময় অজ্ঞান ছিলাম আমি জানি না । চোখ খোলার কিছু সময় পর্যন্ত আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না যে আমি আসলে কোথায় আছি । কয়েক মুহুর্ত লাগলো আমার সব কিছু মনে করতে । সব মনে করার সাথে সাথেই আমি সোজা হয়ে বসলাম । ঘরের চারদিকে তাকাতে শুরু করলাম । ভাল করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম চারিদিকে ।
ঘরটা অন্ধকার নয় । আবার একেবারে উজ্জল আলোতে আলোকিতও নয় । তবে সব কিছু একেবারে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । আমি একটা একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে উপর বসে আছি । আমাকে বেঁধে রাখা হয় নি । ঘরে কোন জানালা নেই । একটা মাত্র দরজা আছে । সেই দরজা দিয়ে কিছু মানুষের কথা বলার আওয়াজ ভেসে আসছে । তারা পাশের ঘরে বসে গল্প করছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।
আমি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবতে শুরু করলাম ।
সকালবেলা আমাকে যখন ওরা ধরেছিলো একজন আমাকে বলেছিলো তারা পুলিশের লোক । যদি তারা পুলিশের লোক হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ওভাবে অজ্ঞান করার দরকার ছিল কেন তাদের ! তার উপর আমাকে তো কোন থানাতে নিয়ে যাওয়ার কথা । কিংবা ডিবির কার্যালয়ে ! কিন্তু আসে পাশে তাকিয়ে আমার তো মনে হচ্ছে না যে এটা কোন পুলিশ স্টেশন !
তাহলে আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে ?
ঘরের চারিদিকে আমি দেখতে শুরু করলাম ! কোন ভাবেই পালানোর কোন পথ নেই । একটা মাত্র দরজা দেখা যাচ্ছে । আচ্ছা কোন ভাবে যদি দৌড় দেই দরজা দিয়ে বের হয়েই তাহলে কি কাজ হবে ?
কোন দিকে তাকানো যাবে না । সামনে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে যাবো !
তবে চিন্তাটা বেশি ধরে রাখতে পারলাম না । কারন আমি জানি তাতে কাজ হবে না । দেখা যাবে যে ঘরে যে দরজা আছে সেটা আগে থেকেই বন্ধ করা আছে । আমার বের হওয়ার কোন উপায় নেই ।
আমি ঘরের চারিদিকে আরও ভাল করে তাকালাম । নাহ এমন কিছু এখনও চোখে পড়ছে না যেটা আমার কাজে আমাকে সাহায্য করতে পারবে ! আচ্ছা এখন কয়টা বাজে ?
কথাটা মনে হতেই আমি পকেটে হাত দিলাম !
নাহ ! মোবাইলটা নেই । কোন অনুষ্ঠান ছাড়া হাতে আমি খুব একটা ঘড়ি পরি না । ঘরের দেওয়ালে কোন ঘড়িও নেই ।
বাইরে কি এখন অন্ধকার ?
তখনই আমি বাইরে আওয়াজ পেলাম । কেউ একজন এসেছে ! বাইরের ঘরের লোক গুলো সব দাড়িয়ে গেছে । অন্তত চেয়ার টানার শব্দ শুনে আমার তাই মনে হল ! আমার ধারনা কে সঠিক প্রমানিত করতেই জায়েদ আমানকে আমি ঘরে ঢুকতে দেখলাম ! তার পেছনে আরও কয়েকজন ঘরে ঢুকলো !
জায়েদ আমান দেখবে বেশ সুপুরুষ ! বেশির ভাগ সময়ে সাদা পাঞ্জাবী পরে থাকে, সেই সাথে মুখে একটা হাসি লেগে থাকে সব সময়ে । এই জন্য দেখতে আরও বেশি চমৎকার লাগে তাকে । আমার দিকে চোখ পড়তেই তার মুখে একটা বিস্তৃত হাসি দেখতে পেলাম ।
আমার সামনে এসে দাড়ালো !
তারপর হাসি মুখেই বলল, লেখক সাহেবের দেখি ঘুম ভেঙ্গেছে !
আমি কিছু বললাম না । আমার কিছু বলার জন্য সে কথাটা বলে নি । একজন একটা চেয়ার এনে দিল । সে বসে পড়লো আমার মুখোমুখী । আমি কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এখনও পর্যন্ত আমার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করে নি । আমার গায়ে কেউ হাতও দেয় নি । তবে আমি যদি উল্টাপাল্টা কিছু করি তাহলে সেটা করতে তারা মোটেই দ্বিধা করবে না সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না ।
জায়েদ আমান বেশ কিছু সময় চুপ থেকে বলল, দয়া করে ব্যাপারটা পারসোনালী নিবেন না । আসলে আপনার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই । ইভেন ছোট বোন আপনার লেখা খুব পছন্দ করে । আমাকে অনেক দিন বলেছে আপনাকে যেন বাসায় দাওয়াত দেই । কিন্তু বুঝতেই পারছেন আপনার ওয়াইফের সাথে আমার একটা যুদ্ধ চলছে ।
আমি কোন কথা বললাম না ।
জায়েদ আমান আবার বলা শুরু করলো, আমি আপনার কেসটা দেখেছি । আপনাকে যদি এখন কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বাস করেন আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না । ফাঁসি না হলেও যাবজ্জীবন হবেই । আমি নিজে কেসটা ভাল করে দেখেছি ।
আমি বললাম, আমি নওরিনকে মারি নি ।
জায়েদ আমান বলল, আমি সেটা জানি । আপনার মত মানুষ কাউকে খুন করতে পারে এটা আসলে বিশ্বাস করা কঠিন । কিন্তু প্রমান সেটা বলে না । যে আপনাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলেছে সে নিশ্চিত ভাবেই বেশ বুদ্ধি করেই ফেলেছে । যাই সেটা আমার চিন্তার ব্যাপার না ।
আমি বললাম, তাহলে আপনার কি চিন্তার ব্যাপার ? আমার মনে হচ্ছে না যে আপনি আমাকে পুলিশে হ্যান্ডওভার করবেন !
জায়েদ আমান হাসলো । তারপর বলল, ঠিকই ধরেছেন । আসলে আপনি ফাঁসিতে ঝুলেন কিংবা জেলে যান তাতে আমার কিছু যায় আসে না । আগেই বলেছি আপনার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই । কিন্তু আপনার বউয়ের সাথে আছে । আপনাকে যদি আমি পুলশের কাছে হ্যান্ডওভার করে দেই, আমি খুব ভাল করেই জানি যে বিচার কার্যে আপনার বউ কোন দিন ইন্টারফিয়ার করবে না । আপনার ফাঁসি হয়ে গেলেও না । তাকে আমি খুব ভাল করে চিনি !
দুঃখের ব্যাপার এই ব্যাপারটা আমি নিজেও জানি । নিকিতা কোন বিচারক কিংবা আইনের উপর নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে নি । সে করবেও না । এমন কি আমার জন্যও না । আর সত্যিই যদি সে বিশ্বাস করে থাকে যে নওরিনকে আমি মেরেছি তাহলে তো আরও করবে না । জায়েদ আমান বলল, সি এটাই হবে । তখন কি হবে জানেন তখন আপনার বউকে মানুষ আরও বেশি পছন্দ করতে শুরু করবে ! সবাই বলবে দেখো আমাদের হোম মিনিস্টার কতখানি সৎ! নিজের অপরাধী স্বামীকেও ছাড় দেয় নি ! কিন্তু আমি এটা চাই না । প্রথমও আমি চাই আপনি কোন দিন ধরা না পড়েন । তাহলে সবার মনে একটা সন্দেহ জাগবে যে কেন খুনী ধরা পরছে না । এবং এক সময় সেটা সবার মনে বিশ্বাসে পরিনত হবে । সবাই ভাববে যে নিজের স্বামীকে সে সে রক্ষা করছে । দ্বিতীয় আমি আপনার বউ কঠিন ভাবে আঘাত করতে চাই । এতোদিন সে আমাকে যা যা দিয়েছে সেটা ফেরৎ দিতে চাই সুদ সমেত !
আমি জায়েদ আমানের কথাটা বুঝতে পারলাম না । সে আসলে কি করতে চাচ্ছে ।
জায়েদ আমান বলল, আর এই দেশে কাউকে খুনে না পাওয়ার সব থেকে সহজ উপায় হচ্ছে যে তাকে মেরে ফেলা !
লাইনটা জায়েদ আমান এতো সহজে বলল যেন সে দোকান থেকে চিপ্স কেনার কথা বলছে । আমি খানিকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম । তারপর কোন মতে বলার চেষ্টা করলাম, নিকিতা ঠিকই জানতে পারবে !
জায়েদ আমান হাসলো । তারপর বলল, আমি জানি । এবং আমি এটাই চাই । আমি চাই সে জানুক কাজটা আমি করেছি কিন্তু লিগ্যালি সে কিছু করতে পারবে না । সব সময় জানবে তার প্রিয় মানুষটার খুনী তার চোখের সামনেই আছে কিন্তু সে কিছু করতে পারছে না ! হা হা হা ! এর থেকে বড় প্রতিশোধ আর কি হতে পারে !
জায়েদ আমান আর বসলো না । ঘর থেকে বের হয়ে গেল । আমি মুর্তির মত বসে রইলাম । এর আগেও এই রকম পরিস্থির স্বীকার হয়েছি কিন্তু আজকে কেন জানি আমার খুব ভয় করতে লাগলো ।
এরপরেই কিছু সময় পরেই আমার ঘরে আবার ওরা ফিরে এল । আমাকে উঠতে ইশারা করলো । আমি কোন বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলাম না । জানি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই । আমি আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম । আমাকে আবারও গাড়িতে তোলা হল । আমি যখন বাইরে বের হয়ে এসেছি তখন বাইরে রাত হয়ে গেছে । কয়টা বাজে আমি ঠিক জানি না তবে বেশ রাতই মনে হল । কারন আসে পাশে মানুষজন নেই বললেই চলে । তার মানে আমি অনেকটা সময় অজ্ঞান ছিলাম ।
ওরা আমাকে একটা গাছ গাছালির মত স্থানে নিয়ে এল । এরপর আমাকে গাড়ি থেকে বের করে বাইরে দাড় করালো । ওরা দাড়ালো পেছনে । পেছন থেকে একজন বলল, যা বেটা একটা সুযোগ দিলাম । পালাতে পারলে পালা !
আমি জানি আমি পালাতে পারবো না । আমি দৌড়াতে শুরু করলেই ওরা আমাকে গুলি করবে । আমি আবারও মূর্তির মত দাড়িয়ে রইলাম ! আমি জানি দাড়িয়ে থাকলেও কোন লাভ হবে না । একটা সময় ওরা ঠিকই গুলি করে দিবে !
আমি চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম । কয়েক সেকেন্ডও যেন আমার কাছে মনে হল কয়েক বছর ! তখনই পিস্তলের সেফটি লক খোলার আওয়াজ পেলাম ! ভাবার জন্য হয়তো শেষ কয়েক সেকেন্ড পেলাম হাতে ! একেবারে শেষ মুহুর্তে আমার নিকিতার কথা মনে হল। মরে যাই মনে দুঃখ নেই যদি একটা বার নিকিতাকে বলতে পারতাম যে আমি কাউকে খুন করি নি, অন্য মেয়ের জন্য তোমাকে ধোকা দেই নি তাহলে হয়তো মনের ভেতরে শান্তি লাগতো । একটা আফসোস নিয়ে মরতে হত না !
তারপরই গুলির শব্দ হল !
(চলবে)
মাই হোমমিনিস্টারঃ চ্যাপ্টার ওয়ান
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৯