আমার বারবারই মনে হয় তানহা আমাকে পছন্দ করে । ওর তাকানোর ধরনটা দেখকেই আমার কেবল এই কথা মনে হয় । মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু এখানে আমার কিছুই করার নেই ।
অফিসে একটা কানাঘুষা চলছে যে এবার রায়হান সাহেবের চোখ পরেছে তানহার উপরে । রায়হান সাহেব আমাদের অফিসের এসিসট্যান্ট ম্যানেজার ! ঘটনা সত্য হোক আর মিথ্যা হোক আমি যদি তানহার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে চাই তাহলে সেটা ভাল হবে না আমার জন্য ।
মাঝে মাঝে এই রায়হান বদমাইশের উপর এমন রাগ হয় ! বেটা বিবাহিত । বাড়িতে বউ আছে, একটা মেয়েও আছে তবুও অফিসের মেয়েদের সাথে তার কিছু না করলে চলেই না । অফিসের সব মেয়ে কলিগদের উপরেই বেটার নজর । অনেকে তার এই আচরনের কারনে বিরক্ত তবে কেউ কিছু বলতে পারে না ।
আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় তার বউকে সব কিছু বলে দেই । তারপর ভয় হয় । রায়হান সাহেবের আবার বসের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক । কোন দিক দিয়ে যেন আত্মীয় হয় । তাই কিছু বলারও উপায় নেই সহ্য করে নেওয়া ছাড়া ! কিন্তু তানহা যখন আমার দিকে তাকায় আমার মনের ভেতরে কেমন যেন লাগে । মনে হয় মেয়েটার সাথে প্রেম না হোক অন্তত চমৎকার কিছু সময় কাটানো যেতেই পারে !
কিন্তু কয়েকদিন পরেই একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেল । যেটার জন্য আমরা কেউ তৈরি ছিলাম না
এমনিতে আমি খবরের কাগজ খুব একটা পড়তাম না । সেদিন অফিস আসার সময় একটা খবর আমার চোখ আটকে গেল । গাজিপুরের এক রিসোর্টে একজন গার্মেন্ট কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেছে । লাশের অবস্থা এতোই বিভৎস যে ঠিক মত চেনাও যাচ্ছে না । লাশ দেখলে মনে হয় কেউ যেন লাশটাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে । অনেক স্থানে খাওয়াও ছিল । তার পকেটে থাকা আইডি কার্ডের মাধ্যমে তাকে তার পরিচয় উদ্ধার করা গেছে । এবং সেই মানুষটা আর কেউ নয় আমাদের এজিএম রায়হান সাহেব । আমি নিজের চোখকে যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।
অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে দেখি সেখানে সবাই আগে থেকেই এই ব্যাপারে জানে । সবার মুখ বেশ গম্ভীর । তবে আমার কেন যেন মনে সবাই বিশেষ করে মেয়েরা যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে । যদিও তারা খানিকটা মুখটা দুঃখী দুঃখী করে রাখার চেষ্টা করছে তবে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখা ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম যে বেশ কিছু মেয়ে কলিগ বরং খুশিই হয়েছে । আমাদের বস আজকে অফিস ছুটি দিয়ে দিলেন । তবে চলে যেতে দিলেন না । পুলিশ নাকি আসবে আমাদের সাথে কথা বলার জন্য । যেহেতু আমাদের কলিগ খুন হয়েছে তা সম্পর্কে কিছু তথ্য তার নাকি লাগবে ।
পুলিশ এসে আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করলেন । রায়হান সাহেব কেমন ছিলেন, কারো সাথে কোন ঝামেলা চলছিলো কি না কিংবা অন্য কিছু যেটা স্বাভাবিক কি না এই সব । একবার মনে হল আমি আসল কথাটা বলে দেই । বলে দেই যে রায়হান সাহেব বিরাট নারীবাজ ছিলেন । অফিসের সব নারীরা তার উপর বিরক্ত ছিল । কিন্তু বলতে পারলাম না । ভাল ভাল কথাই কেবল বললাম ।
পুলিশের কাছ থেকেই জানতে পারলাম যে রায়হান নাকি রিসোর্টের রিপিসশনে বলে রেখেছিলেন একজন নারী তার সাথে দেখা করতে আসবে । তার নাম বললেই যেন তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু এমন কোন মেয়ে নাকি আসে নি ঐদিন । তাদের সন্দেহ যে নারী ঠিকই এসেছিলো । হয়তো তখন রিসিপশনে কেউ ছিল না । রিসোর্টে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না বলে পুলিশ কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না । এই ব্যাপারে আমরা কেউ কিছু জানি কি না । আমি বললাম যে আমি কিচুই জানি না ।
পুরো পৃথিবীতে ভারসাম্য বজায় থাকে সব সময় । তাই যখনই একজনের উপর কোন বিপদ নেমে আসে সেটা তখন সেটা অন্য জনের উপর নেমে আসে সৌভাগ্য । এটা আমার ছোট বেলার এক বন্ধু বলতো । পৃথিবীতে যেমন শক্তি ভারসাম্য রয়েছে ঠিক তেমন ভাবে সুখ আর দুঃখের ভারসাম্য রয়েছে । একজন দুঃখপেলে অন্য জন সুখ পাবে । এই কথাটা সত্য করতেই যেন পরের দিন ঘটনাটা ঘটলো ।
পরদিন অফিস যেতেই বসের রুমে আমার ডাক পড়লো । রায়হান সাহেব যে মারা গেলেন তার জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল । এখন সেখানে আজ থেকে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । রায়হান সাহেবের দুঃখ আমার সুখে পরিনত হতে সময় লাগলো না । সেই সাথে আরেকটা ঘটনা ঘটলো । তানহা আমার সাথে প্রথম কথা বলল । আমাকে আসলে ঐ সবার আগে অভিনন্দন জানালো । তারপর নিজ থেকেই আমার কাছে ট্রিট চাইলো ।
আমার কাছে সত্যিই খানিকটা অবাক লাগছিলো । সব সৌভাগ্য এক সাথে আমার কাছে ধরা দিবে সেটা আমি ভাবতেও পারছিলাম না ।
পরের শুক্রবারই তানহাকে নিয়ে এলাম ২৭ নাম্বারের একটা রেস্টুরেন্টে । সন্ধ্যা থেকে প্রায় রাত ১০ টা পর্যন্ত এক সাথে থাকলাম ওর সাথে । এতো কথা বলতে পারে ও আমি জানতামই না । তানহা যেন মন খুলে আমার সাথে কথা বলছিলো । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছিলাম যে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে । কোন সন্দেহ নেই ।
পরের সপ্তাহে অফিসের পর প্রতিদিননই আমরা দেখা করতে লাগলাম । তানহাকে যেন দিন দিন আমার আরও ভাল লাগতে শুরু করলো । আমি ওর কথাই ভাবতে থাকলাম সব সময় । তারপর ঘটলো আসল ঘটনা । অফিস শেষ করে উবার ডাকতে যাবো এমন সময় তানহা এসে বলল " চল আজকে রিক্সা নিই"
বললাম, " রিক্সা নিয়ে কোথায় যাবে?"
-কোন ঠিক নেই । যেদিকে দুচোখ যায় । আজকে মন ভাল লাগছে না ।
আজকে অফিসে বস তানহাকে একটু বকাবকি করেছে । সেটার জন্যই হয়তো ওর মন খারাপ । আমি বললাম, চল আজকে তাহলে তাই হোক ।
ঠিক করলাম । তারপর আমাদের রিক্সা ভ্রমন শুরু হল । আজকে তানহা খানিকটা মন খারাপ করেই ছিল । রাতের অন্ধকারে আমাদের রিক্সা এগিয়ে যেতে লাগলো এদিক ওদিক । তখনই আমি একটা কাজ করে ফেললাম । রিক্সা চলতে চলতে পুরান ঢাকার একটা গলীর ভেতরে ঢুকে পরলো আর তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল । চারিদিকে একেবারে অন্ধকার নেমে এল মুহুর্তের মাঝেই। আমার মাঝে কি হল আমি নিজেও বলতে পারবো না আমি হঠাৎ তানহার গালে চুমু খেয়ে ফেললাম । কিছু সময় পরে রিক্সা চলে এল আবার আলোময় জায়গাতে । আমি ততক্ষণে তানহার গাল থেকে মুখে সরিয়ে ফেলেছি । মনের ভেতরে একটু সুক্ষভয় ছিল যে তানহা হয়তো রেগে উঠবে কিন্তু রেগে উঠলো না । আমার পাশে চুপ করে বসেই রইলো । এক সময় দেখলাম ও আমার হাত ধরলো । ওর হাত টা একটু যেন গরম গরম মনে হল ।
আমি বললাম, তোমার কি জ্বর ?
তানহা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমার গাল ঠিক গরম না, হাতও না । সব থেকে উত্তপ্ত স্থান কোনটা জানো ?
আমি খানিকটা ঢোক গিলে বললাম, কোন টা ?
তানহা হাসলো কেবল । আমার বুঝতে কষ্ট হল না আসলে ও কোন অঙ্গের কথা বলছে । কিন্তু আমি আর সুযোগই পেলাম না । রিক্সা কোন অন্ধকার স্থানে এলোই না ।
আমাকে আমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে ও রিক্সা নিয়ে চলে গেল ।
এরপর থেকেই আমাদের প্রেম শুরু হল পুরো দমে । দিনে দিনে ওর প্রতি আমার আকর্ষন বাড়তে লাগলো । বুঝতে পারছিলাম ওর বেলাতে ঠিক একই ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল । বিশেষ করে যখন ওকে চুমু খেতাম ওর পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠতো । একদিন আমাকে ওকে চুমু খাওয়ার সময় আমার ঠোঁটে এতো জোড়ে কামড় দিয়ে বলসো যে রক্ত বের হয়ে গেল । রক্ত দেখে বারবার আমার কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো ।
আমি বললাম, আরে ঠিক আছে । কোন সমস্যা নেই ।
-না না । আসলে আমার মাঝে মাঝে কি যে হয়ে যায় ! তোমাকে চুমু খেতে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি । সরি আর হবে না ।
-আরে বাবা কোন সমস্যা নেই ।
তবে এর পর থেকে তানহা যেন একটু বদলে গেল । আমি ওকে চুমু খেতে চাইলেও ও খানিকটা এড়িয়ে যেত । এমনিতে আমার প্রতি এফেকশন ওর কমলো না কিন্তু চুমু খেতো না । এদিকে আমি ওকে চুমু খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম সব সময় । কিন্তু ও আমাকে কিছুতেই দিতো না । একদিন আমি হঠাৎ ওকে জিজ্ঙেস করলাম,
-তুমি আর আমাকে ভালবাসো না ?
-মানে কি বলছো এসব ?
-বলছি ভালবাসো না ?
-হ্যা বাসি ।
-তাহলে কেন এমন কর ? আগে তো কেবল চুমু খেতে দিতে দিতে না এখন তো হাতও ধরতে দাও না । যদি সমস্যা হয় যে বিয়ের আগে এসব করবে না, ওকে ফাইন তাহলে চল আজই বিয়ে করে ফেলি ।
-বিয়ে !
তানহা আমার মুখ থেকে এটা আশা করে নি সম্ভবত । আমিও ওর অবাক হওয়া দেখে খানিকটা অবাক হলাম । বললাম,
-কেন ? তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না ?
তানহা আমার প্রশ্ন শুনে খানিকটা সময় থামকে দাড়ালো । তারপর বলল,
-আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না ।
-কেন ?
-কারনটা আমি তোমাকে বলতে পারবো না ।
-না বলতে হবে ।
-প্লিজ আমাকে জোর করবে না । আমি বলতে পাারবো না ।
-অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে ?
-কি ! নাহ ! আমার অন্য কাউকে পছছন্দ হয় নি ।
-তাহলে সমস্যা কোথায় ? আমাকে তুমি ভালবাসো, পছন্দ কর অন্য কাউকে পছন্দ না তাহলে আমাকে বিয়ে করতে সমস্যআ কোথায় ?
তানহা খানিকটা সময় অধৈর্য্য হয়ে বলল, প্লিজ এমনটা করো না । যেমন চলছে তেমন চলুক না ।
-না এমন চলবে না । তুমি বলবে কেন আমাকে বিয়ে করবে না । নয়তো আজকের পর আর আমাদের কথা হবে না ।
আমি উঠে চলে গেলাম । আর কোন কথা হল না ।
পরের একটা সপ্তাহ সত্যিই আামদের মাঝে আর কোন কথা হল না । আমি কোন কথা বললাম না ওর সাথে । ও কয়েকবার এগিয়ে এল তবে আমি এড়িয়ে চললাম । আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম যে ও ঠিক থাকতে পারছে না । মনে মনে অপেক্ষা করতে লাগলাম যে কখন ও নিজ থেকেই এগিয়ে আসবে ।এলোই তাই ।
রাত তখন প্রায় বারোটা বাজে । হঠাৎ আমার ফোনে তানহার ফোন এসে হাজির । রিসিভ করতেই ও বলল, তোমাদের বাসার ছাদে এসেতো !
আমি তীব্র বিশ্ময় নিয়ে বললাম, কি আমাদের বাসার ছাদে ?
কিন্তু ততক্ষণে ফোনের লাইন কেটে গেছে । আরেকবার ফোন না করেই আমি ছাদে হাটা দিলাম । এবং সেখানে গিয়ে সত্যিই আবিস্কার কারলাম যে তানহা সেখানে দাড়িয়ে আছে । আমি বললাম, তুমি এখানে এলে কিভাবে !
তানহা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, তুমি সত্যিই জানতে চাও আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে চাই না ।
আমি বললাম, হ্যা ।
-যে কোন কিছুর বিনিময়ে ?
-হ্যা ।
-যদি তোমাকে সত্যি কথা বলি তাহলে আজকের পর আমাকে আর দেখতে পাবে না । চলবে ?
আমার মাথায় আসলে তখন অন্য কোন কিছু চলছিলো না । আমি তানহাকে বিয়ে করতে চাই কিন্তু ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না । এই লাইনটার বাইরে আমার আর কিছুতেই কাজ করছিলো না । আমি কেবল কারনটা জানতে চাই । আর কিছু না ।
তানহা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আমি মানুষ নই অপু !
আমি যেন ঠিক মত কথাটা ববুঝতে পারলাম না । বললাম, মানে ? কি বলছো মানুষ না ! মানুষ না তো কি ভুত ?
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু তানহা হাসলো না । তানহা গম্ভীর মুখে বলল, আমি জ্বীন । জ্বীন তো বিশ্বাস কর নাকি ? আমি সেটাই ।
-দেখো হাস্যকর কথা বল না ।
-তোমার মনে এই প্রশ্ন জানে নি যে আমি এখানে কিভাবে এলাম । এই ছাদে । যেখানে রাত এগারোটার পর তোমাদের বাড়ির মেইন গেট বন্ধ হয়ে যায় । তাই না?
আরে তাই তো ? রাত এগারোটার পরে আসলেই বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যায় । তানহা শান্ত চোখে বলল, আমার প্রজাতির নাম হচ্ছে ঘৌল । ঘৌল জ্বীনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছো ? তোমাদের নেটফ্লিক্সে এই নামে একটা মিনি সিরিজও আছে ।
আমি সেই সিরিজটা দেখেছি । আমি জানি ঘৌল জ্বীণ কি ! তাহলে তো ...
তানহা হাসলো । আমার মনের কথা যেন ধরতে পেরেই তানহা বলল, হ্যা তোমার ধারনা ঠিক । আমি মানুষের মাংস খাই । তোমাদের অফিসের যে তানহা ছিল, আসল তানহা তাকে দিয়েই এখানে ঢুকেছি । তুমি জানো ঘৌলরা যাদের মাংস খায় তাদের রূপ ধারণ করতে পারে । তানহা আর তোমার অফিসের বস রায়হান আমার পেটে গিয়েছে ।
আমি বললাম, দেখো ভাল হচ্ছে না এই সব বললাম ।
আমি আরও কিছু বলতে যাবো তার আগেই তানহার চেহারা বদলে রায়হান সাহেবের মত হয়ে গেল । আমি অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । আমি কি দেখলাম এটা !
না হতে পারে না এইটা !
তানহা নামের ঐ জ্বীণটা বলল, তোমাকেও খাওয়ার প্লানই ছিল আমার কিন্তু ঐদিন তোমার চুমুতে কি ছিল আমি বলতে পারবো না । আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম । আমরা জ্বীন হলেও আমাদের চিন্তা করার মন আছে । আমি কিছুতেই পারি নি তোমার ক্ষতি করতে । কিন্তু নিজের আদিম প্রবৃত্তিও নিবারন করতে পারতাম না মাঝে মাঝে । তুমি যখন আমার কাছে আসতে তখন তোমার তাজা মাংসের গন্ধে আমি পাগল হয়ে যেতাম । যেদিন রক্ত বেরুলো তোমাকে চুমু খেতে গিয়ে সেদিন সত্যিই আমি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলাম কিছু সময়ের জন্য । সেদিনই বুঝলাম যে তোমার কাছাকাছি থাকলে একদিন না একদিন দূর্ঘটনা ঘটবেই ।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । কিছুই আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে । এতোদিন আমি একটা জ্বীণের সাথে পরেম করেছি । তাও আবার ঘৌলার সাথে । ইয়া খোদা রক্ষা কর !
আমি বললাম, তোমার আসল রূপ কি নেই ?
-আছে । দেখতে চাও ?
-হ্যা ।
রায়হান সাহবের শরীর থেকে অন্য একটা রূপে রূপান্তর হল সে । স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু লম্বা ! শরীরে কোন পোশাক নেই ওর । তবে স্পষ্ট করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না । মনে হ্চ্ছে আলো দিয়ে তৈরি সে । ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল জীবনে এতো সুন্দর মুখ আমি কোন দিন দেখি নি । সত্যিই দেখি নি ।
বললাম, তোমার নাম কি ? আসল নাম?
তানহা বলল, আরিয়াত, আমার নাম আরিয়াত।
আমি বললাম, তানহা তোমাকে একটা বার স্পর্শ করতে চাই । একটা শেষ চুম্বন ।
তানহা বলল, উহু । না সেটা হবে না । তোমার কাছে গেলেই তোমার রক্তের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিবে । হয়তো ...
আমাকে আর কিছু বলার আগেই আমার চোখের সামনে তানহা অদৃশ্য হয়ে গেল । আমি কেবল বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম । তখনও যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ।
পরিশিষ্টঃ
মিতুল আহমেদ অপু নিজের লেখাটা শেষ করলেন । তারপর ট্যাবটা বন্ধ করে দিলেন । এখন তার শেষ সময় । যৌবন বসয়ের এই যৌলা জ্বীণের সাথে প্রেমের কথা তিনি কাউকে বলেন নি । নিজের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছেন । তবে সেই আরিয়াতকে অপু কোন দিন ভুলতে পারে নি । ওর নিজের কাছেও মনে হয়েছে আরিয়াতও ওকে কোন দিন ভুলতে পারে নি ।
তারপর অপুর জীবন থেমে থাকে নি । দুই বছর পরে সে বিয়ে করে । দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার কেটে খুব ভাল ভাবেই । মেয়েদের বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কাটিয়েছেন অনেক বছর । এখন তার বয়স আশি ছুইছুই করছে । তার স্ত্রী গত বছর মারা গেছেন । তারও যাওয়ার সময় চলে এসেছে । তিনি এটা বুঝতে পারছেন । তার জীবনে কোন আফসোস নেই। কেবল একটা আফসোস রয়েই গেছে । আরিয়াত কে সে শেষবার চুমু খেতে চেয়েছিলেন । সেটা পূরন হয় নি ।
-অপু !
মিতুল আহমেদ চমকে গেল । বা দিকে তাকিয়ে দেখলেন সেখানে একটা আয়োবয় ফুটে উঠেছে । এতো বছর পরেও তার সেই মুখটা চিনতে কষ্ট হল না ।
আরিয়াত এসেছে ।
মিতুল আহমেদের মুখ আনন্দে ভরে উঠলো । তাকে কিছু বলতে হল না । আরিয়াট ধীরে ধীরে এগিয়ে এল মিতুল আহমেদের দিকে । তাকে চুমু রত অবস্থায়ই মিতুল আহমেদের মৃত্যু হল । তার চেহারাতে একটা প্রশান্তির ছায়া ছিল । তার শেষ ইচ্ছে পূরন হয়েছে ।
গল্পের থিমটা পাঠিয়েছে "তানজিলা ইসলাম তানহা"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬