somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পাখিওয়ালা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঠের বারান্দাটাতে হাটাহাটি করলেই আওয়াজ হতে থাকে । এই নিশ্চুপ রাতে সেই আওয়াজটা কানে বড় বেশি আওয়াজ তুলে চলেছে । শেষে হাটাহাটি বাদ দিয়ে অবনী বারান্দাতে রাখা একটা সোফাতে বসে পড়লো । শূন্য চোখে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে । সামনের কোন কিছুই সে দেখছে না ।

আজকে আকাশে চাঁদ না থাকলেও চারিপাশটা বেশ ভাল করেই দেখা যাচ্ছে । হয়তো রিসোর্টের চারিদিকে আলো জ্বালানো রয়েছে বলেই এমনটা মনে হচ্ছে । অবনী এক ভাবে অন্ধকারের দিকে তাকিয়েই রইলো । মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । কিছুই ভাবতে পারছে না পরিস্কারভাবে । বারবার কেবল সাব্বিরের চেহারাটা মনে পড়ছে । ওর ভীত চোখটা সে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছে না । বারবার নিজের কাছেই প্রশ্ন করছে, কাকে কিংবা কি দেখে ও এতো ভয় পাচ্ছে ? এতো তীব্র ভাবে ভয় পেতে ও আর কাউকে দেখে নি ।

-আফা মনি !

অবনী তাকিয়ে দেখে বারান্দার নিচে কেয়ারটেকার গনি মিয়া দাঁঁড়িয়ে আছে । এতো রাতে গনি মিয়াকে জেগে থাকতে দেখে অবনী একটু অবাক হল । তাকিয়ে বলল,

-কি ব্যাপার চাচা এখনও ঘুমান নি ?

-আপনেও তো ঘুমান নাই !

-আমার ঘুম আসছে না ।

-ছোট সাহেবের কথা চিন্তা করতেছেন ?

অবনী কোন কথা বলল না । আবারও শূন্য অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । গনি মিয়া বলল,

-অনেক রাইত হইছে । আপনে এইবার ঘুমাইতে যান । এতো রাইত কইরা যাইগা থাইকেন না ।

অবনী জানে ঘুমাতে গেলেও ওর ঘুম ঠিক মত আসবে না । সাব্বিরের সাথে ঐ ঘটনা ঘটার পর থেকে ওর একটা রাতও ঘুম আসেনি শান্তিমত । বারবার কেবল সাব্বিরের সেই ভয়ে ভয়ে চিৎকার করে ওঠার আওয়াজটা ওর কানে ভাসতে থাকে । এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে? কেন ও এতো ভয় পাচ্ছে? এতো ভয় পাওয়ার কি আছে ?

কত ডাক্তারের কাছে গিয়েছে ওকে । মনোরোগ ডাক্তারের কাছ থেকে মস্তিস্কের ডাক্তার পর্যন্ত সবার কাছেই সাব্বিরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নি । ডাক্তারি চিকিৎসার পরে এবার হাজির হল অন্য চিকিৎসা । পীর ফকির থেকে শুরু করে যেখানে যে কবিরাজের কথা শোনা গেছে সাব্বিরের বাবা তাকেই এনে হাজির করেছে সাব্বিরের চিকিৎসার জন্য । কিন্তু কোন লাভ হয় নি । বরং দিন দিন সাব্বিরের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে ।

সাব্বিরের আব্বা যেখানে তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে তখন অবনী ভাবছে অন্য কথা । ঘুরে ফিরে কেবল মনে করার চেষ্টা করছে সাব্বিরের জীবনে এমন কি হয়েছে যার ফলে সাব্বির এমনভাবে ভয় পেতে শুরু করলো । কিছু একটা তো ওর জীবনে হয়েছেই কিংবা ও এমন কোন কাজ করেছে যার ফলে সাব্বিরের এই সমস্যাটা হচ্ছে । কিন্তু কি করেছে সে ? সাব্বিরের জীবনের প্রায় সব কিছুই অবনী জানে । স্বামী হিসাবে সাব্বির একজন চমৎকার মানুষ, মানুষ হিসাবেও । মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায় বটে তবে সেটাও নিয়ন্ত্রন করে নেয় অল্প সময়ের মধ্যেই ।

অবনী ধীরে ধীরে সব কথা মনে করতে লাগলো । এমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা যার ফলে অন্য কারো কোন ক্ষতি হয়েছে । সাব্বিরের এমন কোন কাজ যেটাতে কারো কোন ক্ষতি হয়েছে । কিন্তু কি ক্ষতি হয়েছে ? কার ক্ষতি করেছে ও ?

ঠিক তখনই ওর মাথায় সেদিনের ব্যাপারটা ফিরে এল ।

গার্মেন্টসের ব্যবসা বাদ দিয়েও গাজীপুরে সাব্বিরদের রিসোর্টের ব্যবসা আছে । বেশ কিছু স্থান নিয়ে রিসোর্টটা । রিসোর্টে বেশ বড় ধরনের একটা বিল আছে । ঋতুভেদে সেখানে ধানের চাষ থেকে শুরু করে মাছের চাষ পর্যন্ত হয় । তাছাড়া চারিপাশে গাছগাছালি তো আছেই । জায়গাটা একদম প্রাকৃতিক বনের মত হয়ে গেছে । কয়েকটা পুকুরও আছে আশে পাশে ।

সাব্বির সেখানে মাঝেই মাঝেই ঘুরতে যায় । অবনীও যায় সাব্বিরের সাথে । কেবল অবকাশযাপনই নয় সাব্বিরের সেখানে যাওয়ার পেছনে আরও একটা কারন আছে । ওদের রিসোর্ট থেকে খানিকটা দূরের ঐ বিল । সেখানেই সারাদিন রাতে অনেক পাখি এসে জড়ো হয় । তাছাড়াও ঘন গাছ গাছালি থাকার কারনে বেশ কিছু ছোটখাটো পশুও দেখা যায় আশে পাশে । কুকুর শিয়াল আর খরগোশ দেখা যায় সবচেয়ে বেশি । রাতের বেলা মাঝে মাঝেই রিসোর্ট থেকে শিয়ালের ডাক শোনা যায় । মনে হয় যেন একেবারে গ্রামে চলে এসেছে ।

সাব্বির সেখানে গিয়ে পাখি শিকার করতে খুব পছন্দ করে । অবনীর এই ব্যাপারটা মোটেই পছন্দ না কিন্তু সাব্বির এই কথাটা মোটেই শুনতে চায় না । মাস ছয়েক আগের ঘটনা অবনীর এখনও মনে আছে । সাব্বির সেবার ওকে ঢাকাতে রেখেই রিসোর্টে গিয়ে হাজির হয়েছিলো । সাত দিন থাকার কথা বলেই গিয়েছিলো ও । কিন্তু মাত্র তিন দিনের মাথায় ও এসে হাজির হয় । আসার পর থেকেই অবনী একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলো যে সাব্বির যেন কোন একটা ব্যাপার নিয়ে বেশ চিন্তিত । বেশ কয়েকবার জানতে চাওয়ার পরেও সাব্বিরের মুখ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায় নি । তবে সেই ভাবটা খুব বেশি সময় থাকে নি । দুই তিন দিনের মাথায় সব আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো বলে অবনী আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় নি । তার মাস খানেক পরেই সাব্বিরের এই ভয় পাওয়ার রোগটা শুরু হয় । প্রথমে অল্প অল্প হলেও দিন দিন সেটা বাড়তেই থাকে ।

তাহলে কি ঐ গাজীপুরেই ও কোন কাজ করে এসেছিলো ? যেখানে সাত দিন থাকার কথা সেখানে মাত্র তিন থেকেই ও চলে এসেছিলো কেন ? কেন ফিরে আসার পরে ওকে খানিকটা অস্থির লাগছিলো ? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর অবনীর জানা নেই । কিন্তু ওর কেন জানি মনে হল এই উত্তরগুলোর সাথেই সাব্বিরের এই ভয় পাওয়া রোগটা সম্পর্কিত । আগে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে । তখনই অবনী ঠিক করে ফেলল কাল সকালেই ও গাজীপুরের পথে রওনা দিবে । ওকে নিজেই জানতে হবে আসল কথা গুলো !

রেস্ট হাউজে ওর রুমটা একেবারে শেষের দিকে । একটু উঁঁচু কৃত্রিম টিলার উপরে । এটা ওদের ব্যবহারের জন্যই বানানো হয়েছে । ওরা যদি না থাকে তখন অন্য কাউকে ভাড়া দেওয়া হয় । অবনী হঠাৎ ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পেল । তাকিয়ে দেখে নিচ থেকে সেই আওয়াজটা আসছে । কোন গেস্টের কোন কিছু দরকার হয়েছে সম্ভবত । গনি মিয়া একবার নিচের দিকে তাকালো । তারপর অবনীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-রাবু কই গেল । বেল বাজতাছে শুনতাছে না ?

-আপনি গিয়ে দেখুন তো । রাবুর যা ঘুম !

গনি মিয়া আর দাঁড়ালো না । যাওয়ার আগে ওকে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে বলল । রাতের বেলা বেশিক্ষণ জেগে থাকা ঠিক না ।

গনি মিয়া চলে যাওয়ার পরেও আবনী নিজের রুমের ভেতরে গেল না । বরং কাঠের বারান্দা থেকে নিচে নেমে এল । এই বাংলোটার ঠিক পেছনেই এক চিলতে জায়গা আছে । সেখানে চাইলে বসে থাকা যায় । আবার অনেকটা দূর নিচেও নেমে যাওয়া যায় । সাব্বিরের সাথে যখনই এখানে আসতো রাতে প্রায়ই দুজনে এখানে এসে বসতো । আজেকেও সে এখানে এসে দাঁঁড়ালো ।

রাতটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে আছে । কোথাও একটু ঝিঁঝিঁঁ পোকাও ডাকছে না । অবনীর কাছে কেমন যেন পরিবেশটা একটু অস্বস্তিকর মনে হল । একটু আগেও চারিদিক থেকে বিভিন্ন পোকামাকড়ের গুঞ্জনের আওয়াজ ভেসে আসছিলো কিন্তু এখন আর সেসব আসছে না । সব কিছু যেন থেমে গেছে ।

গনি মিয়ার কথাটা আবার মনে হল ওর । তারপরই মনে হল ওর এখনই এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু কি একটা অদ্ভুত কারনে অবনী জায়গাটা ছেড়ে যেতে পারছে না । ওখানেই দাঁঁড়িয়ে থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপরই সে জিনিসটাকে দেখতে পেল । অন্ধকারের ভেতরেও একটা গাঢ় অন্ধকার ধীরে ধীরে সিঁঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে । একটু কুঁঁজো হয়ে হাটছে সে । হাতে একটা লাঠির অস্তিত্বও ঠিক টের পাচ্ছে অবনী ।

চিৎকার দিতে যাবে তখনই সামনের লোকটাকে সে চিনতে পারলো । লোকটার নাম নূর আলী । লোকটা এর আগেও বেশ কয়েকবার ওর কাছে এসেছে আবদার নিয়ে । অবনীকে খানিকটা বিভ্রান্ত দেখালো । কারন রিসোর্টের এই দিকে কারোর আসার কথা না । বেশ ভাল রকমের তারকাঁটা দিয়ে পুরো এলাকাটা আটকানো । একটা দরজা অবশ্য আছে কিন্তু সেটা সব সময় বন্ধ থাকে । সেই গেট টপকানো এই কুঁজো শরীরের কর্ম নয় ।

অবনীর মাথায় তখন আরেকটা ব্যাপার এল । হয়তো নূর আলী এই পথ দিয়েই নিচে নেমে গিয়েছিলো কোন সময় । এখন ফিরে আসছে । অবনী তাই আর কিছু চিন্তা করলো না । বলল,

-আপনি তো আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন !

লোকটা কেমন দাঁত বের করে হাসলো । তবে কোন কথা বলল না । অবনীর মনে হল লোকটা এখন হয়তো আবারও সেই একই কথা তুলবে । অন্তত ওর সাথে লোকটার যতবার দেখা হয়েছে লোকটা এই একই কথা তুলেছে । বারবার ও সাব্বিরের নামে বিচার দিয়েছে ওর কাছে ।

আসলে কাজটা অবনীর নিজেরও পছন্দ ছিল না । সাব্বিরের সব কিছুই অবনীর ভাল লাগতো কেবল এই একটা ব্যাপার ছাড়া । সাব্বির একদমই পশুপাখি পছন্দ করতো না । তবে পাখি শিকার করতে খুব পছন্দ করতো । এমন সুন্দর সুন্দর পাখি গুলো একজন মানুষ কিভাবে মেরে ফেলতে পারে সেটা অবনীর মাথায় আসে নি কখনো ।

সাব্বিরের এখানে আসার অন্যতম আরেকটা কারনই হচ্ছে এই পাখি শিকার করা । রিসোর্টের পাশের বিলটাতে প্রচুর পাখি আসে সব সময় । দিন আর রাতে যখন ইচ্ছে যাওয়া যায় । স্থানীয়ভাবে প্রশাসন এই পাখি শিকার করতে মানা করলেও সাব্বির এই নিষেধাজ্ঞাকে মোটেই পাত্তা দিত না । তার যে কিছু হবে না সেটা সে খুব ভাল করেই জানতো ।

এই নূর আলীই প্রথমে এই পাখি মারার কথাটা স্থানীয় থানায় জানায় কিন্তু সেখানে কোন লাভ হচ্ছে না দেখে সে অবনীকে এসে জানায় । তাকে বলে যেন সাব্বির এই কাজটা না করে । পাখিদের এই ভাবে মেরে ফেলা ঠিক না । অবনী যে মানা করে নি তা নয় কিন্তু সাব্বির সে কথায় কান দেয় নি । তারপর থেকে যতবাই নূর আলীর সাথে দেখা হয়েছে ততবারই সে একই অভিযোগ করেছে ।

অবনী আজকেও মনে করলো নূর আলী হয়তো সেই একই অভিযোগ করবে কিন্তু আজকে কোন কথা বলল না । কেবল অবনীর দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । তারপর বলল,

-ভালা আছেন আম্মাজান ?

-জি !

অবনীর জি বলা শুনে লোকটা এবার কেমন অদ্ভুতভাবে হেসে ফেলল । যেন অবনীর ভেতরের সব কথা সে জানে ।

অবনী অবাক হয়ে বলল,

-কি ব্যাপার আপনি হাসলেন কেন ? আমি হাসির কথা বলেছি ?

-না । তবুও হাসি পাইলো ।

-কেন ?

-কইতে পারি না ।

অবনী কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়ই পেছন থেকে কেউ ওর নাম ধর ডেকে উঠলো । তাকিয়ে দেখে গনি মিয়া দাঁঁড়িয়ে আছে । সেখান থেকেই ওর নাম ধরে ডাকছে । অবনী চলে যাওয়ার আগে আবার নূর আলীর দিকে তাকাতে যাবে ঠিক তখনই চমকে উঠলো । কারন ও যেখানে দাঁঁড়িয়ে আছে সেখানে ও ছাড়া আর কেউ নেই ।

অবনীর বুকের ভেতর এবার কেমন যেন করে উঠলো । ও পেছনে থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবারও সামনের দিকে তাকানোর মাঝে খুব বেশি হলে দশ পনের সেকেন্ডের মত গিয়েছে । এই সময়ের মাঝে একজনের গায়েব হয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব না । অন্তত নূর আলীর মত একজন কুঁজোর মানুষের ক্ষেত্রে তো নয়-ই । অবনী ভয় পেয়ে গেল । একটু আগে যার সাথে দেখা হল সে তাহলে কি ? আর কিছু না ভেবে সে দ্রুত গনি মিয়ার দিকে হেটে গেল । গনি মিয়ার সাথে সেখানে আরও একজন দাঁঁড়িয়ে ছিল । ও কাছে যেতেই গনি মিয়া বলল,

-আফা মনি আপনের চেহারা এমন ক্যান লাগতাছে ?

-নাহ কিছু না ।

-আর বাইরে থাইকেন না । ঘুমায়া পড়েন ।

আরেকবার পেছনের দিকে তাকিয়ে অবনী নিজের রুমের দিকে হাটা দিল । এখনও ওর মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না । নূর আলীর মত মানুষটা কিভাবে চোখের নিমিষে গায়েব হয়ে গেল ! আচ্ছা ঝোপের আড়ালে চলে গেছে যায় নি ? কিন্তু আশে পাশে এমন কোন ঝোপও ছিল না যে এই কুঁঁজো লোকটা এতো দ্রুত চলে যেতে পারবে। আর যদি যায়ও তাহলে তো আওয়াজ শোনা যাবে ?

অবনী কিছুতেই নিজের মনকে বুঝ দিতে পারলো না । একটা সুক্ষ্ণণ ভয় ওর ভেতরে কাজ করতে লাগলো । পেছনে আর না তাকিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল । তবে মনের ভেতরে শান্তি পেল না কিছুতেই । এই রুমে সে এর আগেও অনেক বার এসেছে । প্রতিবারই যে সাব্বিরের সাথেই এসেছে তাই না, মাঝে মাঝে একাও এসেছে সে । কিন্তু আজকের মত এমন অস্বস্তি কোনদিন লাগে নি ।

এই অনুভূতিটাকে সে কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারবে না । তবে বারবার মনে হচ্ছে কিছু যেন ঠিক নেই আশেপাশে । একবার মনে হল আজকে গানি মিয়াকে ডাক দিয়ে গেস্টদের আশে পাশেই একটা রুম ঠিক করে দিতে বলবে । সবার থেকে দূরে থাকতে একটু যেন ভয়ভয় করছে । লাইটটা বন্ধ করে মোবাইলে কিছু সময় ব্রাউজ করলো । কিন্তু কিছুতেই মন টেকাতে পারলো না । তারপর যখন মোবাইলের স্ক্রিনটা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো তখনই আওয়াজটা শুনতে পেল । কেউ যেন পা টেনে টেনে হাটছে ওর রুমের চারিপাশে । সাথে মাটিতে একটা লাঠির থপথপ আওয়াজ হচ্ছে । আওয়াজটা প্রথমে কিছু সময়ে ওর রুমের চারিপাশে ঘোরাফেরা করলো । একবার ডান থেকে বামে আরেকবার বাম থেকে ডানে ।

অবনীর বুকের ভেতরেটা একটু একটু কাঁপতে লাগলো ভয়ে । হাতের কাছের সুইচটা খুঁঁজে বের করে টিপ দিল । কিন্তু আলো জ্বললো না । তখন সেই ভয়টা আরেকটু বেশি করে জেঁকে বসলো ওর মাঝে । এমন তো হওয়ার কথা না ?

তাহলে কি বিদ্যুৎ চলে গেছে ?

নাহ সেটাও তো হওয়ার কথা না । কারণ বিদ্যুৎ যদি চলেও যায় তাহলে জেনারেটর চালু হওয়ার কথা সাথে সাথেই । তাহলে আলো জ্বলছে না কেন ?

অবনীর মনে হল সেই আওয়াজটা আরও কাছে চলে এসেছে । কাঠের বারান্দার উপর হাটাচলা করছে । অবনী মোবাইলটা খোঁঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু সেটাও পেল না । হাতড়ে হাতড়ে বিছানার পাশে রাখা দড়িটা খোঁঁজার চেষ্টা করলো । এটা মেইন ঘন্টার সাথে আটকানো । রিসোর্টের সব রুমের সাথেই এমন একটা দড়ি ঝুলানো আছে । কোন গেস্টের কিছু দরকার হলেই এরকম একটা দড়ি ধরে টান দেয় । তখন গনি মিয়া বুঝতে পারে কারোর কিছু দরকার পড়েছে ।

অবনী দড়িটা ধরে টান দিতেই বুঝতে পারলো কেউ যেন বাইরে থেকে দড়িটা ধরে রেখেছে । অবনীর টান দেওয়ার ফলেও কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না ঘন্টাটা থেকে । এবার সত্যি সত্যিই একটা তীব্র ভয়ের স্রোত বয়ে গেল ওর পুরো শরীর জুড়ে । ওর ঘরের দরজার বাইরেই কেউ দাঁড়িয়ে আছে । সে-ই দড়িটা ধরে আছে ।

এমন সময় দরজায় মৃদু স্বরে টোকা দেওয়ার আওয়াজ শুনতে পেল । কেউ যেন ওপাশ থেকে অবনীকে ডাকছে ।

-আম্মা ! দরজাডা খুলেন আম্মা !

আবারও দরজায় টোকা !

অবনীর কন্ঠস্বরটা চিনতে মোটেই কষ্ট হল না । কে ওকে ডাকছে সে বুঝতে পারছে কিন্তু ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ।

-আম্মা আমার পাখিগুলান মাইরেন না ! আম্মা গো ......

সেই সাথে দরজায় আঘাতের আওয়াজটা বাড়ছেই ।

এমনভাবেই আকুতি করতো নূর আলী । দরজার ওপাশে দাঁঁড়িয়ে এখন ঠিক তেমনভাবেই আকুতি করছে লোকটা । কিন্তু সেই আকুতির মাঝে একটা তীব্র অশুভ কিছু আছে । অবনীর মুখ থেকে আপনা আপনি একটা ভয়ের চিৎকার ভেসে এল । সে নিজের সব শক্তি দিয়ে দাড়িটা ধরে টানা টানি করতে লাগলো ।

কতটা সময় এমন করে ছিল অবনী বুঝতে পারবে না কিন্তু একটা সময় বুঝতে পারলো দরজাতে অন্য রকম একটা আওয়াজ আসছে ।

-আফা মনি । আফা মনি দরজা খুলেন !

সেই সাথে দরজা ঝাকানোর আওয়াজ । অবনী বাস্তবে ফিরে এল । হাতড়ে এবার সুইচটা খুঁঁজে বের করে টিপতেই আলো জ্বলে উঠলো । জলদি করে দরজা খুলে দিতেই দেখলো ওপাশে গনি মিয়া আর রাবু দাড়িয়ে আছে । গনি মিয়ার বুঝতে কষ্ট হল না যে অবনী ভয় পেয়েছে । টেবিল থেকে পানি ঢেলে খেতে দিলো অবনীকে ।

অবনী এক ঢোকেই খেয়ে ফেলল পুরোটা । একটু ধীর স্থির হতেই অবনী বলল,

-নূর আলী এসেছিলো !

-কে আসছিলো ?

গনি মিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অবনীর দিকে । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।

অবনী আবার বলল,

-একটু আগে যখন বাইরে ছিলাম তখনও সে এসেছিলো । তারপর আপনি ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই চলে গেল । আবার একটু আগে ...

গনি মিয়া রাবুর দিকে তাকিয়ে বলল,

-তুই চাইলা যা । আর দরকার নাই তোর ।

রাবু কিছুটা সময় ইতস্তত করে বাইরে বের হয়ে গেল । গনি মিয়া অবনীর পাশে বসতে বসতে বলল,

-আপনে ঠিক দেখছেন আফা মনি ?

-হ্যা । কেন আপনি দেখেন নি ?

গনি মিয়া কিছুটা সময় অবনীর দিকে তাকিয়ে তারপর বলল,

-আমি বলছিলাম বড় সাহেবরে ! সে শুনে নাই ।

-কি শুনে নি ?

-নূর আলী বাইচ্চা নাই । সে ছয় মাস আগেই মারা গেছে !

-কি !

অবনী ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । একটু আগে যার সাথে দেখা হয়েছিলো সে কি না মারা গেছে ছয় মাস আগে । গনি মিয়ার দিকে তাকিয়ে অবনীর মনে হল আরও কিছু কথা তার বলার আছে । গনি মিয়ার দিকে তাকিয়ে অবনী বলল,

-আপনি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন ?

গনি মিয়া আরও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল,

-নূর আলী মারা গেছে ছোট সাহেবের গুলিতে !

-কি বলছেন এসব ?

-সত্য বলতাছি আফামনি।

তারপর গনি মিয়া আস্তে আস্তে ঐদিনের সব ঘটনা বলতে শুরু করলো । অবনী কেবল চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো সেদিকে । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।

পাখি শিকারের নেশা সাব্বিরের অনেক আগে থেকেই ছিল । একটা সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সে ঘুরে বেড়িয়েছে এই পাখি শিকার করার জন্যই । এই কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে ঝামেলাতেও পড়েছে । ওর বাবার এই রিসোর্টটা বানানোর পেছনেও এই শিকারের নেশাটা ছিল একটা বড় কারন । এখানে রিসোর্ট তৈরি হওয়ার পরে সাব্বির আর অন্য কোথাও যেত না । মাঝে মাঝেই এখানে আসতো । স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে ওর বাবার একটা ভাল সম্পর্ক থাকায় আর কোন সমস্যা দেখা দিত না ।

কিন্তু নূর আলী নামের এই কুঁজো লোকটা বাঁধা হয়ে দাড়ালো । সে কিছুতেই পাখিগুলো মারতে দিবে না । মাঝে মাঝেই সাব্বিরের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে । লোকটা অনেক চেষ্টা করেছে সাব্বিরকে আটকানোর কিন্তু পারে নি । তারপরই সে এক নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করে । যখনই সাব্বির এসে পাখি মারতে হাজির হত নূর আলীও হাজির হত সেখানে । গুলি করার আগে সে বিস্তর শব্দ করতো । ফলে পাখিগুলো গুলি করার আগেই উড়ে যেত । এইভাবেই সে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায় ।

ঘটনার দিনও সে এই একই কাজই করেছিল । রাত ছিল আর সাব্বির একা ছিল বিধায় একটা সময় সাব্বিরের মেজাজ খুব বেশি খারাপ হয়ে যায় । কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন পাখি মারতে পারলো না নূর আলীর শব্দের জন্য, তখন এয়ারগানটা সে নূর আলীর দিকে তাক করে ট্রিগার টিপে দেয় । ধুপ করে একটা আওয়াজ হয় আর নূর আলী পড়ে যায় !

সাব্বির ভেবেছিলো এয়ারগানের গুলিতে নূর আলী খুব বেশি হলে ব্যথা পাবে । এর বেশি কিছু হবে না । কিন্তু কিছু সময় পরেও যখন লোকটা উঠছিল না কিংবা কোন আওয়াজ হচ্ছিল না তখন সে এগিয়ে গেল । দেখলো মুখ হা করে নূর আলী মাটিতে পড়ে আছে । বুকের কাছে একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়ে আছে । সাব্বিরের বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না কি হয়েছে । যে কোন ভাবেই হোক এয়ারগানের গুলিটা নূর আলীর শীর্ণ দেহের ভেতরে ঢুকে গেছে । ভীত চোখে সেদিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে সাব্বির পড়িমরি করে দৌড় দিল রিসোর্টের দিকে ।

গনি মিয়া সাব্বিরের এই অবস্থা দেখে বুঝতে পেরেছিলো কিছু একটা হয়েছে । কিন্তু প্রথমদিন সাব্বির কিছুই বলল না । নিজের ঘরের ভেতরেই আটকে রাখলো নিজেকে । তার পরদিন সে গনি মিয়াকে সব খুলে বলল । সেখান থেকে জানানো হল সাব্বিরের আব্বাকে । সাব্বিরের আব্বাই সব ব্যবস্থা করলেন । ঢাকা থেকে দুজন লোক পাঠালেন সব ব্যবস্থা করতে ।

এদিকে নূর আলীর লাশ সেইখানেই পড়ে ছিল । বন জঙ্গল বিধায় সেখানে মানুষজনের আনাগোনা ছিল না একদম । গনি মিয়া যখন সেই লাশ খুঁজে পায় তখন লাশের অবস্থা একেবারে বিভৎস হয়ে গেছে । আশে পাশে অনেক শিয়ালের বাস । তারা লাশের বেশ খাননিকটা অংশ খেয়ে ফেলেছে । কোটর থেকে চোখ খুবলে খেয়েছে শকুনের দল । কোন রকমে লাশটা তুলে নিয়ে এসে রিসোর্টের পেছনেই গর্ত খুড়ে সেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে ।

কি একটা ভয়ংকর কাজ তারা করেছে অবনী বুঝতে পারলো । যতই দুর্ঘটনা থেকে হোক, কাজটা যে অন্যায় হয়েছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । আর সাব্বিরের এই ভয় পাওয়া রোগটাও যে এই অপরাধ থেকেই হয়েছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । মানুষটা যে কাজটা জীবিত থাকতে করতে পারে নি, মৃত্যুর পরে সেই কাজটাই করছে । অবনী ঠিক করে নিল তার কি করতে হবে । এটা ছাড়া হয়তো আর কোন উপায় নেই । আগে বুঝতে পারলো হয়তো কাজটা আরও আগেই করে ফেলতো ।

পরদিন সন্ধ্যাবেলাতেই সব ব্যবস্থা করা হল । সাব্বিরের বাবাকে সব কিছু জানানো হল । তিনিই আবার কয়েকজন মানুষ পাঠালেন । কবর থেকে আবারও লাশটা তোলা হল । অবশ্য এখন আর লাশ বলে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না । কেবল কঙ্কাল । সেই কঙ্কালটাকেই ঠিক ভাবে গোসল করানো হল । জানাজা পড়ানো হল । তারপর সঠিক ভাবে কবর খুঁঁড়ে আবারও নূর আলীকে সমাহিত করা হল । অবনীর মনে হল এববার হয়তো সব কিছুর একটা হিল্লে হবে ।

সারা দিনের পরিশ্রমের পর অবনীর শরীরটা বেশ ক্লান্ত ছিল । বিছানাতে শোয়ার সাথে সাথেই প্রায় ঘুম চলে এল । কত সময় ঘুমিয়েছিলো সে বলতে পরবে না তবে একটা সময় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল । গত দিনের সেই আওয়াজটা শুনেই । ওর রুমের চারিপাশে কেউ যেন হাটছে । থপথপ করা সেই আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছে ও । একবার ডান থেকে বামে আবার বাম থেকে ডানে । অবনীর মনের ভেতরে সেই ভয়টা আবারও ফিরে এলো চট করেই । নিজের মনকে শক্ত করে সে বিছানা থেকে উঠে বসলো । তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল দরজার দিকে । বুকের ভেতরে সেই ভয়টা যেন আস্তে আস্তে বাড়ছেই । তবুও অবনীর মনে হচ্ছে তাকে দরজা খুলে বের হতেই হবে । সামনে হয়তো ভয়ংকর কিছু দেখতে পাবে তবুও সে বাইরে বের হবে ।

খুট করে আওয়াজ তুলে ঘরের সিটকানিটা খুলে গেল । দরজার পাল্লা টেনে খুলে ফেলল ও । বাইরে আবছা অন্ধকার । দূরের ঘরগুলোর সামনে কয়েকটা আলো জ্বালানো রয়েছে তবে ওর রুমের সামনে কোন আলো নেই । সব যেন বন্ধ হয়ে আছে । আবছা অন্ধকারটা চোখে সয়ে আসতেই অয়বয়টা দেখতে পেল সে । এক হাতে লাঠি নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁঁড়িয়ে আছে একজন । মুখ না দেখা গেলেও চিনতে কষ্ট হল না অবনীর । ওর বুক চিরে একটা চিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইলো তবে অনেক কষ্টে সেটা আটকে নিল । তাকিয়ে রইলো একভাবে । অনেকটা সময় সে অন্ধকারে সেই অয়বয়টার দিকে তাকিয়ে রইলো । যদিও চোখ দেখা যাচ্ছে না তবুও অবনীর মনে হল সেই অয়বয়টাও তার দিকেই তাকিয়ে আছে একভাবে ।

দুরুদুরু ভয়টা আস্তে আস্তে কমে এল অবনীর । হঠাৎ মনে হল ওর কিছু বলা উচিৎ । সামনে দাঁড়ানো মানুষটার কোন অস্তিত্ব নেই এই পৃথিবীতে । ছয় মাস আগেই সে মারা গেছে । তবুও সে এখন ওর সামনে দাঁঁড়িয়ে । আজকে দ্বিতীয়বারের মত তাকে সমাহিত করা হয়েছে । এই দুনিয়া থেকে তার সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু সে কোন কারনে যাচ্ছে না । হঠাৎ অবনী বলল,

-সাব্বিরকে মাফ করে দেওয়া যায় না ?

কেন বলল কথাটা ও নিজেই জানে না । কিন্তু কথাটা শুনেই সামনের অয়বয়টা কেঁপে উঠলো । তারপর পেছনে ঘুরে আস্তে আস্তে আরও অন্ধকারে মিলিয়ে গেল । অবনী কেবল তাকিয়ে রইলো সেদিকে । ততক্ষনে ওর ভয় কেটে গেছে পুরোপুরি । একটু যেন আলো ফুটে উঠেছে চারিদিকে । তারপরই আযানের আওয়াজ ভেসে এল দূর থেকে ।



পরিশিষ্টঃ

আরও মাস ছয়েক কেটে গেছে । আজকে আবারও অবনী আর সাব্বির এসেছে রিসোর্টে । সেই ঘটনার পর এই প্রথম সাব্বির এখানে এসেছে । সাব্বির অবস্থা সেই দিনের পর থেকেই ধীরে ধীরে ভাল হয়েছে । কদিন আগে একেবারে ভাল হয়ে গেছে ও । এখন আবারও স্বাভাবিক কাজ কর্ম শুরু করেছে ।

সেই সাথে ওর বন্দুক হাতে শিকারের নেশাটাও চলে গেছে একদম । অবশ্য না গেলেও অবনী তাকে আর এই কাজটা করতে দিতো না কোন দিন । সুস্থ হওয়ার পরে একদিনও ও বন্দুক হাতে নেওয়ার কথা মুখে আনে নি ।

রিসোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় সে পেছনের পথটার দিকে তাকিয়ে রইলো । ও ভুলতে চাইলেও ওর মনে নূর আলীর চেহারাটা ভেসে উঠছিলো বারবার । নিজেকে সে এখনও ঠিক মত ক্ষমা করতে পারে নি । যতই দুর্ঘটনা কিংবা রাগের মাথায় কাজটা হয়ে থাকুক না কেন এই অপরাধবোধ থেকে কিছুতেই নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না । নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না ।

অবনী পাশে দাঁড়াতেই সাব্বির ওর দিকে ফিরে তাকালো । দূরে তখন সুর্য অস্ত যাচ্ছে । অবনী সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল,

-এখনও ভাবছো সেই কথা ?

-হুম ।

-এতো ভেবো না । যা হয়ে গেছে সেটা তুমি বদলাতে পারবে না । তাই না ?

আরও কিছু বলতে যাবে তখনই অবনীর নাম ধরে কেউ ডাক দিল ।

পেছনে তাকিয়ে দেখলো গনি মিয়া এগিয়ে আসছে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল যে ওকে ম্যানেজার সাহেব ডাকছে । রিসোর্টের আরও কয়েকটা ঘর তৈরি হবে । সেটার ডিজাইন অবনী করেছে । সেটার ব্যাপারে কথা বলতে চায় একটু । অবনী সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো সে যেতে চায় কি না । সাব্বির বলল ও এখানেই কিছু সময় থাকতে চায় । ওকে আবারও বেশি চিন্তা না করতে বলে অবনী চলে গেল । সাব্বির দাঁঁড়িয়েই রইলো বারান্দাতে ।

হঠাৎ নিচের পথে একটু নড়াচড়া লক্ষ্য করলো সে । কৌতুহল থেকেই সামনে এগিয়ে গেল । এদিকটাতে কারোর আসার কথা না । পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল বেশ কিছুটা দূর । যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছে কেউ যেন সামনে রয়েছে ।

আরও কিছুটা দূরে যেতেই সাব্বিরের বুকের ভেতরটা লাফিয়ে উঠলো । সামনে দাঁঁড়ানো মানুষটাকে সে ঠিকই চিনতে পেরেছে ।

বছর খানেক আগে যাকে সে এয়ারগান দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছিল ।

সাব্বির নড়তে পারছে না । কেবল সন্ধ্যার আবছায়া অন্ধকারে সামনের কুঁঁজো মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে । মানুষটার চোখের কোটরে মনি বলে কিছু নেই । তবে সাব্বিরের মনে হল সেখানে তীব্র একটা রাগের আগুন জ্বলছে । সে আগুনে ও নিজে জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে । এতো দিন ধরে সে অপেক্ষা করেছে । আজকে তার প্রতিশোধের দিন এসেছে ।

কেবল একটাই চিৎকার দিতে পারলো সাব্বির ।

তারপর সব শান্ত !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×