প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব
পনের
আমি একভাবে তাকিয়ে রইলাম কম্পিউটারের মনিটের দিকে । প্রায় আপলোড হয়ে গেছে । আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই আপলোড কমপ্লিট হয়ে যাবে । তখন কেবল একটা টাইটেল লিখে ওকে বাটনে চাপ দিলেই সেটা নেটে চলে যাবে ।
কয়েক সেকেন্ড বাকি তখনই আমার পিসি হ্যাঙ করলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম পিসিটা একা একাই রিস্টার্ট নিয়ে নিল । সেই ক্লিপটা গায়েব । আপলোড হয় নি । আমি আবারও যখন আপলোড করতে যাবো তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো ।
নিকিতার ফোন !
আমার মনের ভেতরে কেমন কু ডেকে উঠলো ! এই মেয়ে এখন ফোন কেন দিল
তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম । এই সময়েই সে ফোন দেয় সাধারনত । আমার মাথা কাজ করছিলো না । আমি কি করবো বুঝতে পারছি না । আমার মাথাট ভেতরে কেবল ঐ অডিও ক্লিপটার কথা কাজ করছিলো । একটা মানুষ এমন কাজ কিভাবে করতে পারে !
আমি ফোন রিসিভ করলাম । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিকিতা বলল
-তুমি কি করছিলে ?
-মানে ?
একটু সময় নিয়ে নিকিতা বলল
-অপু তোমার কি মনে হয় না আমি সব জানতে পারবো ? দেশের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমি চালাই আমি জানবো না ? আমার ল্যাপটপ থেকে কেউ কিছু কপি করে নিবে আর আমি সেটা টের পাবো না ?
নিকিতার কন্ঠে একটা শান্তভাব আমি টের পেলাম । ওর এই দিকটা আমি খুব ভাল করে চিনি । বিশেষ করে ও যখন কোন ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি ডিটারমাইন হয় তখন এমন শান্ত কন্ঠে কথা বলে ! আমি চুপ করে রইলাম কিছুটা সময় ! কি বলবো খুজে পেলাম না । আসলে নিকিতার কাছ থেকে এমন কিছু আমি আশা করি নি । নিকিতা আবার বলল
-আমি না চাইলে তুমি তোমার পিসি থেকে একটা কিছুও আপলোড করতে পারবে না । এমন কি একটা ফেসবুক স্টাটাসও দিতে পারবে না । বুঝেছো !
নিকিতা চাইলেই এই কাজটা করতে পারে । একটু আগে সেটা করেও দেখিয়েছে । আমি ক্লিপটা আপলোড দিতে পারি নি । নিকিতা আবার বলল
-আমি জানি তুমি কি জেনেছো ! আমি সেবসের কিছু ছাফাই দেবো না । তুমি সেটা বিশ্বাস করবে না আমি জানি !
আমি বললাম
-কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম । আমার সব কিছু দিয়ে !
-হ্যা আমি জানি ! আমি সেটা ভঙ্গ করেছি । আমার স্বার্থেই । এই জন্য আমি সরি !
-কেবল সরি ! আর কিছু না ?
নিকিতা কোন কথা বলল না । নিকিতা এতো জখন্য একটা কাজ করেও কেবল একটা সরি দিয়েই কাজ শেষ করতে চাচ্ছে । ঠিক যেমনটা দেশের রাজনীতিবীদরা করে । আমি বললাম
-আসলে আমার মা ঠিকই বলেছিলো । একজন পলিটেশিয়ান সব সময়ই পলিটেশিয়ান । তারা সব কিছু করতে পারে । তাদের কোন দিন বিশ্বাস করা যায় না ।
নিকিতা যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । আমি সেটা শুনতে পেলাম ফোনে এপাশ থেকেও । নিকিতা বলল
-আমি জানি না তুমি কি করবে । তবে তোমার কাছে আমি অপরাধী । তুমি যদি এখন চাও অডিও ক্লিট টা আপলোড করতে পারো । আমি আর বাধা দিবো না তোমাকে !
এই বলে ও ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পরেও বেশ কিছুটা সময় আমি ফোনটা কানের কাছে ধরে রাখলাম । এখনও আবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিলো যে নিকিতা আমাকে বলবে যে সে সেটা করেছে সেটাতে তার কোন ইচ্ছে ছিল না । বাধ্য হয়ে করেছে কিন্তু সেটা সে বলল না । কেবল নিজের কৃত কর্ম গুলো স্বীকার করে নিল ।
আরেক বার ইচ্ছে হল অডিও ক্লিপটা আপলোড করে দেই কিন্তু করতে পারলাম না । নিজের মনের কাছে সাই দিল না । শেষে নিজেই ডিলিট করে দিলাম । এমন হয় । আমরা যখন কারো প্রেমে পড়ি তখন তার শত অপরাধও ক্ষমা করে দেই । কত অযৌক্তিক কাজ করি ! আমিও এমন একটা অযৌক্তিক কাজ করে ফেললাম ।
তারপর থেকে নিকিতার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল একেবারে । আমি ওকে ফোন দিতাম না, দেখা করতাম না । নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম । ভাবার চেষ্টার করলাম যে নিকিতা নামের কেউ আমার জীবনে ছিল । কিন্তু এই দেশের মিডিয়া সেটা হতে দিল না । মাস খানেক পরে একটা নিউজ আমার চোখে পড়লো । আমাকে আর নিকিতাকে নিয়ে করেছে । সেখানে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছে শিরোনাম করেছে যে তাহলে কি তাদের মাঝে বিরহ চলছে ?
আবারও সেই প্যারা শুরু হল । আমার পিছে সাংবাদিক ঘুরতে শুরু করলো । বারবার সেই একই প্রশ্ন করা শুরু করলো যে আমার আর নিকিতার মাঝে ঝামেলা কি ? কি হয়েছে? আমরা কি ব্রেক আপ করেছি কি না !
ব্যাপারটা আবারও একটু পালে হাওয়া পেল যখন নিকিতা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্টাটাসে লিখলো "প্রিয় মানুষটা যখন দুরে চলে যায় পৃথিবীর সব কিছু অর্থহীন মনে হয়" । মানুষ জনের আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে আমাদের মাঝে সত্যি ঝামেলা চলচে । এটা যেন নিকিতার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিল । তাদের মতই একজন মানুষ নিকিতা যে প্রেম করছে প্রেমিকার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার প্রেমিকার সাথে মান অভিমানও চলছে । বিরহে সেও কষ্ট পাচ্ছে । সব বাঙালী মেয়ের মাঝই এই জিনিস দেখা যায় ! নিকিতাকে যেন তারা আরও আপন করে নিতে থাকলো ।
আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল । বুঝতে বাকি রইলো না এটাও আসলে নিকিতারই একটা চাল ! নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর আরও একটা কৌশল । আমার ইচ্ছে হল মনের দুঃখে দেশ ছেড়ে চলে যাই । কারন এই দেশে যত সময় থাকবো এই ব্যাপারটা আমার চোখে সামনে ঘটতে থাকবেই । প্রতিনিয়ত ! যেখানেই আমি যাই আমাকে এই ব্যাপারটা আমার সামনে আসবেই ।
একদিন আমি আমার অফিস রুমে বসে ছিলাম । তখনই আামর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী আমার রুমে এসে হাজির হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-স্যার আসবো ?
-হ্যা আসো !
রুমের ভেতরে ঢুকেও তারা যেন কিছু বলতে পারছিলো না । একটু যেন অস্বস্থিবোধ করছিলো বলতে । আমি বললাম
-কি বলবে বল ? কোন কাজে এসেছিলে ?
-স্যার আপনি নাকি বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন ?
-হ্যা কাগজ পত্র তৈরি করা হয়ে গেছে প্রায় ।
-স্যার আমাদের ছেড়ে যাবেননা প্লিজ ! আর ম্যামকে একটা রেখে যাবেন না !
-ম্যাম ! মানে কোন ম্যাম !
ছাত্রছাত্রীরা এদিক ওদিক তাকালো । আমি যেন ওদের আরও বেশি অস্বস্থিতে ফেলে দিয়েছি । ম্যাম মানে ওরা নিকিতার কথা বলছে সেটা বুঝটে পারলাম সাথে সাথেই । এই ছেলে মেয়ে গুলো কি জানে তাদের প্রিয় নিকিতা ম্যাডাম কি করেছে আমার সাথে । খুব ইচ্ছে হল ওদের কে সব বলে দেই । কিন্তু কেন যে বলতে পারলাম না জানি না । আরেকজন বলল
-স্যার আমরা আপনাদের দুজেনর কাপলটাকে সব থেকে পার্ফেক্ট কাপল মনে করি । তাহসান মিথিলার যে কাপল ছিল এক সময় সেটার থেকেও বেশি পার্ফেক্ট মনে হয় ! কি চমৎকার একটা জটি আপনাদের । প্লিজ স্যার আমাদের কথা একটু ভাবেন !
আমি এবার সত্যিই রেগে গেলাম । এটাই হচ্ছে এই দেশের মানুষের সমস্যা । নিজেরা ঘটনার কিছু না জেনে না বুঝে এতো কিছু এমন ভাব করে বসে থাকবে যে তারা সব কিছু জানে ! আমি বললাম
-শোন এতো কিছু তোমাদের বুঝতে হবে না । তোমরা কাজে যাও । আমার জীবন নিয়ে আমি কি করবো সেটা আমি সিদ্ধান্ত নিবো !
আমি সত্যিই বুঝে গেলাম যে আমার আর এই দেশে থাকাটা চলবে না । এর চেয়ে বরং বাইরে চলে যাই । আরও সপ্তাহ খানেক এই ভাবেই কেটে গেল । আমার বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি খুব ভাল ভাবেই চলছে । বাসাতেও জানিয়েছি । মা আর বাবা বুঝতে পেরেছেন আমার আর নিকিতার মাঝে কোন ঝামেলা শুরু হয়েছে । কিন্তু সেটার ব্যাপারে তারা কিছু জানতে চান নি । এটা আমার জন্য ভালই হয়েছে এক দিক দিয়ে ! এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো । ধীরে ধীরে আমার নিকিতার ব্যাপারটা মিডিয়ার আড়ালে চলে এল ।
আমি খানিকটা স্বস্থিবোধ করতে লাগলাম । কিন্তু সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয় ।
ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম তখনই আমার এক ছাত্রের ফোন পেলাম । ফোন ধরার সাথে সাথেই ছেলেটা বলল
-স্যার আমরা খুব খুশি হয়েছি !
-মানে ? কেন ?
-এই যে স্যার আপনি আমাদের কথা ভেবেছেন !
-কি বলছো এই সব !
-স্যার আপনি এমন ভাব করছেন যেন কিছুই করেন নি । যাই হোক নিকিতা ম্যামের পেইজে গেলেই টের পাবেন । আর লুকানোর কিছু নেই !
আমি ফোন কেটে কিছু সময় বোকার মত তাকিয়ে রইলাম । কিছু বুঝতে পারছিলাম না । ফেসবুকে ঢুকে নিকিতার ব্যক্তগত ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকলাম । সেখানে কিছুই দেখতে পেলাম না । ওর একটা ভেরিফাইড পেইজও আছে সেটার ভেতরে ঢুকতেই চোখ কপালে উঠলো আমার !
সেখানে আমার আর নিকিতার একটা ছবি পোস্ট করা হয়েছে । মাস দুয়েক আগের ছবি । ঢাকার কাছেই একটা রিসোর্টে গিয়েছিলাম । দুজন এক সাথে বিকেলের চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম । এটাই সম্ভবত আমাদের এক সাথে তোলা শেষ ছবি । আমি ক্যাপশনে দিকে তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে । সেখানে লেখা "আপন মানুষ গুলোই আমার কাজ করার সব থেকে অনুপ্রেরণা । তুমি সাথে আছো বলেই আমি আরও নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাই সামনে"
আমি কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । এটা নিকিতার আবার নতুন কি খেলা শুরু করেছে ! আমার মাথায় কিছু আসছিলো না । তবে কিছু যে তার মাথায় চলছে সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না । মানুষজন কে দেখানোর আবার কি দরকার ছিল যে আমি আবারও ওর জীবনে ফিরে এসেছি !
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । দেখলাম আমার উবার গাড়িটা হঠাৎ করে থেমে গেল । আমি বাইরে তাকিয়ে ড্রাইভারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই দুপাশ থেকে কয়েকজন আমার মানুষ গাড়িটাকে ঘিরে ধরলো । আমি ওদের হাতে পিস্তল দেখতে পেলাম । কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থেকে বের করে একটা মাইক্রোতে তুলে নিল । আমি কিছু বলার আগেই একজন আমার নাকে একটা রুমাল চেপে ধরলো ।
মিষ্টি একটা গন্ধ টের পেলাম !
ক্লোরোফর্ম !
চেতনা হারানোর আগে আমার কেবল এটাই মনে হল যে আমি সম্ভবত এবার সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছি । এবার নিকিতা আমাকে সত্যি সত্যিই মেরে ফেলবে !
শেষ পর্ব
আমাকে ঠিক আটকে কিংবা বেঁধে রাখা হয় নি । আমাকে রাখা হয়েছে একটা পুরানো ফ্যাক্টরির ভেতরে । বিশাল বড় ছাদ । চারিপাশে পুরানো কিছু মেশিন পত্র পড়ে আছে । একটা চোরে বসে আছি আমি । ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে আমি নিজেকে এখানেই আবিস্কার করি । খানিকটা সময় লেগে যায় ধাতস্ত হতে । তারপর আস্তে আস্তে মনে পড়ে আমার সাথে কি হয়েছিলো । উবারের গাড়িটা থেকে আমাকে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে এসেছিলো । তারপর হয়তো আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে ।
আমার থেকে একটু দুরে দুইজন মানুষ দাড়িয়ে আছে দুইদিকে । আমি যখন প্রথমে উঠতে যাচ্ছিলাম একজন আমাকে হাতের ইশারাতে বসে থাকতে বলেছে । কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু খুব একটা লাভ হয় নি । তারা কোন কথা বলে নি । মাথার উপর একটা অল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে । আর কোন আলো নেই । আমি চুপচাপ বসে রয়েছি । কিছু বুঝতে পারছি না কি আমার সাথে আসলে কি হতে চলেছে ! সত্যিই কি আমি মারা যাবো ! এবার সত্যিই কি নিকিতা আমাকে গুম করে দিবে ?
আমি আবারও আমার দুই পাশের মানুষ দুজনের দিকে তাকালাম । একবার মনে হল আমি উঠে গিয়ে একজনের উপর হামলা করে পালিয়ে যাওর চেষ্টা করি । কিন্তু পরে সেই সম্ভাবনা বাদ দিয়ে দিলাম । এই দুজনের সাথে আমি কোন ভাবেই পেরে উঠবো না । আর নিশ্চয়ই বাইরে আরও অনেকেই আছে । এরা কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছে । নিকিতার নিশ্চয়ই । আমার সাথে হয়তো শেষ কয়েকটা কথা বলার দরজার !
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে অনেক আগেই । এখন বাইরে বেশ রাত । আমাকে ঠিক কোথায় নিয়ে এসেছে সেটা আমার জানা নেই । শহর থেকে দুরেই হবে । এমন কোন জায়গা যেখানে চিৎকারের আওয়াজ কারো কানে যাবে না । এমন কি গুলির আওয়াজও হয়তো কেউ শুনতে পাবে না ।
গাড়িতে যখন আমি চেতনা হারাতে শুরু করি তখনই আমার মাথায় সব কিছু পরিস্কার হয়ে গিয়েছিলো । বিশেষ করে ফেসবুকে আমাদের ঐ ছবি পোস্ট করার মাধ্যে নিকিতা সবাইকে বুঝিয়েছে যে আমাদের মাঝে যে ঝামেলা চলছিলো সেটা শেষ হয়ে গিয়েছে । এমন সময় যদি আমাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাহলে পুরো দেশের সিম্প্যাথি যাবে নিকিতার দিকে । আমি গোবেচারা সাধারণ মানুষ । আমাকে মেরে ফেলার কোন কারন নেই কারো । যদি আমাকে কেউ মারতে চায় সেটা হবে আমি নিকিতার আপন মানুষ বলেই । আমি মারা গেলে বিরোধী দলের উপর পুরো নেগেটিভ মনভাব সৃষ্টি হবে । আমজনতা কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এতো চিন্তা ভাবনা করবে না । যদি তখন আম জনতাকে ঠিক ভাবে বোঝানো যায় যে তাদের জন্য কাজ করতে গিয়েই নিকিতা আমাকে হারিয়েছে তাহলে নিকিতার প্রতি তাদের সমর্থন আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে ! কারোই কিছু যাবে আসবে না ঠিক, মাঝ খান দিয়ে আমি হব বলির পাঠা !
তবে আমার মনে একটা ক্ষণ আশা আছে যে হয়তো আজকেই আমাকে মেরে ফেলা হবে না । আমাকে এখানে আটকে রাখতে পারবে কিছু দিন । তারপর ...
আমি আর ভাবতে চাইলাম না । আমার সাথে আসলে কি হবে সেটা আর এখন আমার হাতে নেই । আমার কিছু করারও নেই ।
চেয়ারে একভাবে বসেই রইলাম । কখন যে চোখ লেগে এল আমি টেরও পায় নি । ঘুমটা ভেঙ্গে গেল গাড়ির শব্দে । আমি চোখ মেলে তাকাতেই টের পেলাম যে আমার পাশের দুইজন মানুষের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ।
আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! এখনই নিশ্চয়ই নিকিতা এসে হাজির হবে !
আচ্ছা মেয়েটা কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবে ?
পারবে সম্ভবত !
আমি অপেক্ষা করতে থাকি ! কয়েকটা মুহুর্ত কেটে যায় এমনি ভাবে !
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ফ্যাক্টরিতে ঢুকে নিকিতার বাবা আজাহার আহমেদ । বাবা মেয়ের মিলিত কাজা । কিন্তু আরও কয়েক মূহুর্ত যাওয়ার পরে আমি আবিস্কার করলাম যে নিকিতা তার পেছনে নেই । সে একাই এসেছে । আমাকে পেছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে আজাহার আহমেদ বলল, আর কেউ আসে নি । আমি একাই !
আমি কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলাম । আজাহার আহমেদ বলল
-তোমার মনে কৌতুহল হচ্ছে না যে কেন তোমাকে এখানে আনা হয়েছে ?
-কৌতুহল হয়ে লাভ কি ?
আজাহার আহমেদ হাসলো । তারপর বলল
-যে কারনটার জন্য মারা যাচ্ছো সেটা জানবে না ?
আমি কিছু সময় তার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । তারপর বললাম
-নিকিতা এসবের কিছুই জানে না । তাই না ?
-হ্যা সে জানে না ! প্রথমবার তোমার উপর হামলা হওয়ার পর সে উঠে পড়ে লেগেছিলো এটার পেছনে কে সেটা খুজে বের করার জন্য । এখনও চেষ্টা করে চলেছে । কি বোকাই না আমার মেয়েটা ! দেশের এতো বড় পদে আছে কিন্তু সে বুঝতেও পারছে না সব কিছু চাইলেই সে করতে পারে না ।
আমি কেমন অবিশ্বাসের চোখেই তাকিয়ে রইলাম আজাহার সাহেবের দিকে । আমি নিজে কানে নিকিতার আওয়াজ শুনেছি । এই ভদ্রলোক এখন কি বোঝাতে চাইছে । আমার চেহারাতে হয়তো এমন কিছু ছিল যেটা সে বুঝতে পারলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ ? কিছুক্ষণের মাঝেই তুমি মারা যাবে ।
তাও অবশ্য ঠিক । কিছু সময়ের মাঝেই আমি মারা যাবো । আমাকে মিথ্যা বলার কোন কারন নেই । আজাহার আহমেদ বলল
-হ্যা তোমার সাথে পরিচয় তোমার সাথে প্রেম মানুষজনকে জানানো এসব নিকিতার বুদ্ধি ছিল কিন্তু যখন ওর বুদ্ধিটা কাজে দিতে শুরু করলো তখনই আমার মাথায় আরও বড় কিছু এসে হাজির হল । আমি নিজের পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করলাম। যদি নিকিতার কাছ থেকে আড়াল করে এসব করা খুব সহজ ছিল না । তবে সম্ভব হয়েছে ।
আজাহার আহমেদ চোখের ইশারা করতেই আমার বাম পাশের লোকটা তার কাছে এগিয়ে গেল । নিজের কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে তার হাতে দিল । আমি তাকিয়েই রইলাম ।
আজাহার আহমেদ পিস্তলটা হাতে নিয়ে কিছু সময় নাড়াচাড়া করলো । তারপর বলল, মৃত্যর রাজনীতির মাঠে অনেক বড় একটা হাতিয়ার । এই এক হাতিয়ার ব্যাপার করে অনেক কিছু করা সম্ভব । শোক সেন্টিমেন্ট পাব্লিককে ম্যানুপুলেট করতে খুব সাহায্য করে ! জানোই তো ! অন্যেরা অনেক করেছে । কেবল এই এক কথা সেন্টিমেন্ট দিয়ে তারা নিজেদের কত অকাজকে জায়েজ করে নিয়েছে । পাব্লিক সেটা মেনেও নিয়েছে ।
আজাহার সাহেব আমার দিকে পিস্তল তাক করলো । আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম । আর কিছু সময় পরেই গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম । আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই । মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে হল । নিকিতারকেও দেখতে ইচ্ছে হল !
কিন্তু কয়েক মুহুর্ত কেটে যাওয়ার পরেও লক্ষ্য করলাম যে আমি কোন ব্যাথা অনুভব করছি না । এর আগেও আমি গুলি খেয়েছি । সেটার ব্যাথাটা কেমন সেই ব্যাপারে আমার পরিস্কার ধারনা আছে ।
চোখ মেলে তাকাতেই আমার চোখ গেল আজাহার আহমেদের দিকে । সে শান্ত চোখে পিস্তল তাক করে দাড়িয়ে আছে । তবে সেটা আমার দিকে নয় । যে লোকটা পিস্তল এগিয়ে দিয়েছিলো তার দিকে । লোকটার বিস্মিত চেহারা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম পরিস্কার । আর আমার ডান দিকে যে মানুষটা ছিল সেই লোকটা মাটিয়ে পড়ে আছে । গুলিটা তাকে করা হয়েছে ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে আজাহার আহমেদ দ্বিতীয় গুলি করলো । বিন্দুমাত্র শব্দ না করে লোকটা মাটিতে পড়ে গেল । আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম । আজাহার আহমেদ যেন আমার বিস্মিত হওয়াটা উপভোগ করলো কিছু সময় । তারপর বলল
-কি বুঝতে পারছো না কেন করলাম ?
আমি কিছু বললাম না । আসলে কিছু বলার মত ছিল না । আজাহার আহমেদ বলল
-আমি কোন কিছুরই সাক্ষি রাখি না । রাখা ঠিক না । তোমাকে যে গুলি করেছি তাকে বাঁচিয়ে রাখি নি । নয়তো নিকিতা আমার কাছে ঠিকই পৌছে যেত !
তখনই পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম ।
-আমি ঠিকই পৌছে গেছি !
আমি এবং আজাহার আহমেদ দুজনের চোখেই সাথে সাথে সেদিকে ঘুরে গেল । আমি অবাক হয়ে দেখলাম নিকিতা এসে হাজির হয়েছে । আজাহার আহমেদও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে । নিকিতা আস্তে আস্তে এগিয়ে এল আমাদের দিকে । ওর চোখের শান্ত ভাব দেখে আমার কেন জানি ভয়টা চলে গেল মুহুর্তেই । জানি না কেন তবে মনে হল নিকিতা ঠিক সব সমলে নেবে ! নিকিতা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-ওকে যেতে দাও বাবা ।
-বোকা মেয়ে আমি এটা তোর ভালর জন্য করছি । বুঝতে কেন পারছিস না ?
-আমার এতো ভালর দরকার নেই । যা হয়েছে যথেষ্ঠ !
-না । এটা যথেষ্ঠ না । দলের জন্য সেক্রিফাইস করতেই হয় !
নিকিতা তখন অনেকটাই কাছে চলে এসেছে । আজাহার আহমেদ বলল
-আর এগোবি না ।
-বাবা আবারও বলছি যা করেছো এখনই থামো ! আমি কাউকে নিয়ে আসি নি । একেবারে একা এসেছি । প্লিজ অপুকে যেতে দাও । আমি বাকিটা সামলে নিবো !
-আজাহার আহমেদ যেন খুব মজা পেল । বলল
-সামলে নিবি ! ভুলে যাস না যে আমি তোর বাবা । তোকে কিছু সামলাতে হবে না ।
এই বলে সে আমার দিকে পিস্তল তাক করতে গেল । আমি তখনই নিকিতার নড়াচড়া দেখতে পেলাম । ওর বাবার আগেই নিকিতা গুলি চালালো । নিকিতার গুলি লেগে মাথার উপর জ্বলতে থাকা বাল্বটা নিভে গেল । পুরো ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল মুহুর্তেই । তারপর আরেকটা গুলির আওয়াজ শুতে পেলাম । এটার সাথে সাথেই নিকিতার বাবার আত্মচিৎকার শুনতে পেলাম !
আমি বোকার মত কেবল দাড়িয়ে ছিলাম কিছু সময় । তারপরই আমি অনুভব করলাম কেউ এসে আমার উপর ঝাপিয়ে পরেছে । তারপরই কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম কেবল ।
নিকিতা বলল, ওঠো ওঠো জলদি ওঠো ! আরও লোকজন থাকতে পারে !
এই বলে আমার হাত ধরেই অন্ধকারের ভেতরে দৌড় দিল । কোন দিকে দৌড় দিল আমি জান না ।
যখন দরজা দিয়ে বের হয়ে এলাম তখন পেছন দিক দিয়ে নিকিতার বাবার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম । তিনি চিৎকার করে নিকিতাকে ডাকছেন । নিকিতা অবশ্য সেদিকে কান দিল না । আমার হাত ধরে দৌড় দিল । দরজা দিয়ে বের হতেই চোখে অন্ধকার খানিকটা সয়ে এল । চাঁদের আলো না থাকলেও আবছায়া আলোতে আমি দুটো গাড়ি দেখতে পেলাম । নিকিতা আমাকে নিয়েই সেদিকে দৌড় দিল ।
গাড়িটা যখন চলতে শুরু করলো তখন আমি একটু স্থির হতে পারলাম । নিকিতা যখন দেখি তখনই আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো এবার হয়তো বেঁচেই যাবো । তবুও খোলা পিস্তলের সামনে নিজের মনকে শান্ত রাখা খুব স হজ কোন কাজ না । কিন্তু এখন খানিকটা নিরাপদ লাগছে ।
কিন্তু নিকিতার দিকে তাকাতেই দেখি ওর শার্টের এক পাশ পাশে লাল রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে । আমি বললাম
-তোমার গুলি লেগেছে !
নিকিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও দাঁতের সাথে দাঁত চেঁপে নিজের ব্যাথা সহ্য করে আছে । কোন মতে বলল, আমি ঠিক আছি ! তুমি গাড়ি চালাও !
-আমাদের হাসপাতালে যাওয়া দরজার !
-না ! এখনও তুমি নিরাপদ নাও । আমার কিছু হবে না । পেছন পেছন আসতে পারে !
-জাহান্নামানে যাক সব !
আমি গাড়ির এক্সেলেরেটরে চাপ দিলাম । আমার সামনে আর কিছু মনে হচ্ছে না । কে আমার পিছু নিয়েছে কিংবা কে নিবে কিংবা সামনে কি হবে সেসব কিছুই আমার মাথায় এল না । আমার কেবল মনে হল আগে নিকিতাকে হাসপাতালে নিতে হবে ।
আমি বারবার নিকিতার দিকে তাকাচ্ছিলাম । ওকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম ।
নিকিতার কথা একটু একটু করে গুলিয়ে যাচ্ছিলো । একটা পর্যায়ে নিকিতা বলল,
-বাবার উপর রাগ রেখো না, কেমন ! আমার কথা ভেবে এই খারাপ কাজ গুলো করেছে । আর যদি আমার কিছু হয়ে যায় আমাকে ক্ষমা করে দিও । তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি !
আমি বললাম, চুপ ! এখন এসব কিছু ভাবতে হবে না ! একদম চুপ !
আমি কিভাবে আর কত দ্রুত গাড়ি চালিয়েছি আমি নিজেই বলতে পারি না । যখন জিএমসির ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে আমি এসে হাজির হলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমি আর এই পৃথিবীতে নেই । বারবার নিকিতার দিকে তাকাচ্ছিলাম । মনে মনে ভয় হচ্ছিলো হয়তো এখনই নিকিতার কিছু হয়ে যাবে !
গাড়ি থেকে নেমে নিকিতাকে বের করলাম । তারপর ওকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড় দিলাম ! নিকিতা ততক্ষনে ব্যাথার কারনে চেতনা হারিয়ে ফেলেছে !
রক্তাক্ত দেহ দেখে ডাক্তার প্রথমে ছুটে এল । নিকিতাকে পরীক্ষা করে বলল
-এখানে তো গুলি লেগেছে ! এটাতো পুলিশ কেস ! আগে পুলিশকে খবর দিতে হবে !
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশে দাড়িয়ে থাকা নার্স বলল, স্যার ইনি তো নিকিতা ম্যাডাম ! আামর হোম মিনিস্টার !
ডাক্তার সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময় ! তারপর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেন ডায়েল করলো ! কয়েক মুহুর্ত পরে ফোন কানে রেখে বলল জি স্যার । এখনই আসা লাগবে ! এখনই ....
আর কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিল সে । তারপর চিৎকার করে ওটি রেডি করতে বলল ।
মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে কিভাবে জানি সবাই জেনে গেল যে নিকিতা হাসপাতালে রয়েছে । তাকে কে বা কারা গুলি করেছে । পুরো হাসপাতালটা যেন জন সমুদ্রে পরিনত হল । পুলিশকে হিমসিম খেতে হচ্ছিলো ভীড় সামাল দিতে ।
আমি হাসপাতালের করিদরে বসে ছিলাম চুপচাপ । আমার মাথায় কেবল নিকিতার কথা ভাসছে । অন্ধকারের ভেতরে নিকিতা যদি আমার উপর ঝাপিয়ে না পড়তো তাহলে এই গুলিটা হয়তো আমার শরীরে লাগতো !
-স্যার !
আমি মাথা নিচু করে বসে ছিলাম । ডাক শুনে ফিরে তাকালাম । দেখি নিকিতার পিএ দাড়িয়ে আছে ।
-স্যার বাইরে ভিড়ের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে ।
-আমি কি করবো ?
-এখানে কেউ নেই । ভীড় ঠেকে কেউ আসতে পারছে না । ম্যামের বাবাকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ফোনে । এখন আপনি কিছু করুন প্লিজ !
-কি করবো আমি !
-আপনি কিছুটা বলুন যাতে শান্ত হয় মানুষ ।
-আমি !
-হ্যা ! পাবলিক আপনার কথা শুনবে ! তারা আপানকে চেনে । আর এখন ম্যাডামের সব থেকে কাছের মানুষও আপনিই ।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম । নিকিতার সাথে পরিচয় হওয়ার পর আমার জীবনটা আসলেই বদলে গেছে । আমি কি কোন দিন ভেবেছিলাম আমার জীবনে এসবের মুখোমুখি হতে হবে !
যাক অভ্যাস করে নিতে হবে ! সামনের জীবনে আরও কত কি করতে হবে কে জানে !
পরিশিষ্টঃ
নিকিতার জ্ঞান ফিরলো একদিন পরে । আমি তখন বাইরে ছিলাম । আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার নিজের মা এসে হাজির হয়েছে হাসপাতালে । নিকিতার মা আর আমার মা কেবিনে ওর কাছে ছিল । মা আমাকে বলল যে আমি বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে আসি । তাই গিয়েছিলাম । ফিরে এসে দেখি নিকিতা মায়ের সাথে কথা বলছে । ডাক্তার বলল যে আমি যাওয়ার পরপরই জ্ঞান ফিরেছে । অবস্থা উন্নতির দিকে !
ঘরে ঢুকতে নিকিতা আামর দিকে তাকালো । কিছু সময় পরে মা রুম ছেড়ে বাইরে চলে গেল । আমি নিকিতার বেডের পাশে গিয়ে বসলাম । নিকিতা আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, থ্যাঙ্কিউ !
-কেন ?
-সব কিছু সামাল দেওয়ার জন্য । তুমি চাইলেই সব সত্য বলতে পারতে !
আমি হাসলাম । তারপর বললাম
-আমাকে শেষ পর্যন্ত লেকচারার থেকে পলেটিশিয়ান বানিয়েই দিলে !
নিকিতা বলল
-সঙ্গদোষে লোহা ভাসে !
দুজনেই হাসলাম কথাটা শুনে !
সত্যি চাইলে আমি সত্যি কথাটাই হয়তো সবাইকে বলতে পারতাম । বলতে পারতাম যে আমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য নিকিতার বাবা দায়ী । রাতে তিনি আমাকে গুলি করেছিলেন । নিকিতা সেটা ঠেকিয়েছে নিজের শরীর দিয়ে । জানি না এসব বললে কি হত ! তবে নিকিতার জীবনটা আরও বেশি জটিল হয়ে যেত । এটা কেন জানি করতে ইচ্ছে হল না । তাই সাংবাদিকদের বলেছি যে আমরা ওদের ফার্ম হাউজে গিয়েছিলাম নিজেদের ভেতরে কিছু সময় কাটাতে । এই সময়ে খুব সিকিউরিটি নিয়ে যায় নি । কারন নিকিতা আমাকের মাঝে কেউ থাকুক এটা পছন্দ করতো না । এই সুযোগটা নিয়েছে সন্ত্রাসীরা । হামলা করেছে । এক পর্যায়ে নিকিতার শরীরে গুলি লাগে । আমি ওকে নিয়ে কোন মতে বের আসতে সক্ষম হই ! এই গল্প বানিয়েছি ! পাবলিক সেটা বিশ্বাসও করেছে ।
নিকিতার বাবা এখন কোথায় আছে সেটা এখনও জানা যায় নি । হয়তো আছে কোথায় । সময় মত বেরিয়ে আসবে । আগে বেরিয়ে আসুক তারপর কি করা যায় সেটা চিন্তা করা যাবে !
নিকিতা হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো চুপ করে । সেই দৃষ্টিতে আমি কোন মিথ্যা দেখতে পেলাম না । হয়তো শুরুতে সে নিজের স্বার্থের জন্যই আমাকে ব্যবহার করেছিল । কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই খেলাটাই সত্যিই হয়ে গেছে তার জন্য !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭