সিড়ি দিয়ে ছাদে যাওয়ার সময় বারবার নিশাতের আজকে একটু গা ছমছম করতে লাগলো । মীরুনের মুখে কথাটা শোনার পর থেকেই মনের ভেতরে একটা সুক্ষ অস্বস্তির অনুভূতি কাজ করছে । একবার মনে হল আজকে আর ছাদে ওঠার দরকার নেই । কেবল আজকে কেন আর ওঠারই দরকার নেই । কি দরকার ছাদে ওঠার ! ওর কাজ হচ্ছে প্রতিদিন এসে মীরুনকে পড়ানো, সেই পড়িয়ে চলে যাবে । এতো ছাদে উঠে কি হবে ! এখানে পড়ানোর আগে যে ছাদে উঠতো না, তাতে কি তার দিন যেত না !
কিন্তু নিশাত ছাদে ওঠা থামালো না । একটার পর একটা সিড়ির ধাপ পেরিয়ে ছাদের কার্নিশে পা দিল । সাথে সাথে একটা ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া এসে লাগলো ওর মুখে । নিশার মনটা মুহুর্তেই ভাল হয়ে গেল । মন থেকে অস্বস্তিটাও চলে গেল ।
মীরুনদের এই ছাদটা অন্য সব বাসার ছাদ থেকে একটু আলাদা । এই বাসাটাও বেশ পুরানো । ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারের সব উচু উচু আকাশ চুম্বি বিল্ডিংয়ের মাঝে এই ছোট্ট ৫ তলা বাসার ছাদটা বিশাল । ছাদের চারিদিকে কোমড় পর্যন্ত রেলিং দেওয়া । ঠিক ওদের নিজের বাসার মত । যতবার নিশাত এই ছাদে উঠেছে ততবারই ওর নিজের বাসার ছাদের কথা মনে হয়েছে । ছাদটাকে বড় আপন আপন মনে হয় । তাইতো যখনই মীরুনকে পড়াতে আসে, তখনই একবার চেষ্টা করে ছাদে এসে একবার ঘুরে যেতে ।
আজকে ছাদে উঠেই নিশাতের মনটা আরও একটু ভাল হয়ে গেল । একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । ছাদটা একটু ভেজা ভেজা রয়েছে । নিশাতের মনটা মুহুর্তের ভেতরেরই ভাল হয়ে গেল । সকল অস্বস্তি আর ভয় চলে গেল সাথে সাথে । কিছুটা সময় এদিক ওদিক মনের সুখে হাটাহাটি করলো । মাঝে মাঝে নিশাতের এই ছাদে উঠে দৌড়াদৌড়ি করতে ইচ্ছে করে । কিন্তু নিচে আওয়াজ যাবে বলে করতে পারে না । ছাদে বেশ কিছু ফুল আর ফলের গাছ লাগানো আছে । বৃষ্টি হওয়ার কারনে সেই গাছের পাতাতে এখনও পানি লেগে আছে । নিশাত একটা পেয়ারা গাছ ধরে একটু ঝাকি দিতেই সেখান থেকে একট পানি ঝরে পড়লো ওর শরীরে । মৃদু একটা আনন্দ চিৎকার ওর মুখ থেকে বের হয়ে এল ।
নিশাত নিজের পায়ের স্লিপার খুলে ফেলল । তারপর খালি পায়ে আরও বেশ কিছুটা সময় হাটতে লাগলো । আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থাকবে ঠিক করে রেখেছে । আজ আর কোন কাজ নেই । কাল শুক্রবার তাই কাল এখানে আর আসা হবে না । আজকেই বরং একটু বেশি সময় থাকা যাক ।
তবে মীরুন সাথে আসলে আরও ভাল হত । মীরুন ওর কিছু ছবি তুলে দিতে পারতো । মীরুনের আরও একজন স্যার আসবে তাই ও আজকে আসতে পারে নি ।
এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ওর ছবি গুলো বেশ আসতো । আজকে নিশাত লাল রংয়ের একটা ওড়না পরেছে । সাদা ধবধবে কামিজের সাথে সাদা লেগিংস । এমনিতেও ওকে সব কিছুতেই চমৎকার মানিয়ে যায় কিন্তু সাদা আর লালে মানায় সব থেকে বেশি । এই দুই রংয়ের পোশাক পরলেই, ওকে এমন ভাবে মানিয়ে যায় যে মনে হয় ওটা ওর জন্যই কেবল তৈরি হয়েছে ।
মোবাইলের সেলফি ক্যামেরা বের করে বেশ কয়েকটা ছবি তুলল ও । কিন্তু মন ভরলো না কিছুতেই । বারবার মনে হল কেউ ছবি তুলে দিলে সব থেকে ভাল হত । কিন্তু এই সময়ে কেউ ছাদে নেই । আর থাকলেও নিশাত তাকে নিশ্চয়ই বলতে ওর ছবি তুলে দেওয়ার কথা বলতে পারতো না । ওর একটু মন খারাপ হল ।
-আমি কটা ছবি তুলে দিব !
কথাটা কানে যেতেই নিশাতের চমকে উঠলো । আওয়াজটা এসেছে বাঁ দিক থেকে । সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেল সাদা টিশার্ট পরা একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে । এতো সময় তো ছেলেটা এখানে ছিল না । তাহলে কোথা থেকে এল ? আর কিভাবে জানলো যে ও কাউকে খুজছে ছবি তোলার জন্য ।
নিশাতের তখনই আবার মীরুনের কথাটা মনে পড়লো । আজকে পড়ানোর সময় মীরুন ওকে হঠাৎ বলল
-আপু আপনি একা একা ছাদে ওঠবেন না ।
নিশাত বলল
-কেন ? বাড়িওয়ালা কিছু বলেছে ?
-না সেটা না ।
-তাহলে ?
মীরুন যেন কিছু বলতে গিয়েও বলছে না । নিশাত আবার বলল
-কি হয়েছে বল !
আরও খানিকটা সময় ইতস্তত করে নিশাত বলল
-আসলে আপু আপনি শুনেন নি ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারে এমন একটা বাসা আছে যেখানে ভুত আছে !
নিশাত এমন গল্প অনেকই শুনেছে । তবে খুব একটা বিশ্বাস করে নি । করার অবশ্য কোন কারন নেই । নিশাত কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো । মীরুন বলল
-এটাই সেই বাসা !
-তাই নাকি ?
-হ্যা । মাঝে মাঝেই এই বাসার ছাদে কাউকে দেখা যায় । এই জন্য আমরা কেউ একা একা ছাদে যাই না । আপনিও যাবেন না । যদিও এখনও পর্যন্ত কারো কোন ক্ষতি হয় নি । যখন যাবেন আমাকে ডেকে নিয়ে যাবেন ।
মীরুনের কথাটাই নিশাতের মাথার ভেতরে ঘুরতে লাগলো । আপু আপনি একা একা ছাদে যাবেন না । নিশাতের মনে হল ওর বুকের ভেতরে একটা ভয় দলা পাকিয়ে আটকে আছে । বাঁ দিকে দাড়ানো ছেলেটা কিভাবে জানবে ওর ছবি তোলার ইচ্ছের কথা ! যদি না....
নিশাত আর কিছু ভাবতে পারলো না । বুকের ভেতরের ভয়ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়ছেই । মুখে সেই ভয়ের ছাপটা স্পষ্টই ফুটে ওঠেছে। এক পা দুপা করে পিছিয়েই দৌড় দিলো সিড়ি ঘরের দিকে । কিভাবে সিড়ির ধাপ নেমে এল ও বলতে পারবে না । সিড়ি দিয়ে নামার সময় ওর মনে হল কেউ কেউ খুব জোরে জোরে হাসছে আর বলছে, টুকটুকি আসো তোমার ছবি তুলে দেই । আসো .....
চার তলায় এসে একটু দম নিল । বারবার পেছনের সিড়ির দিকে তাকাতে লাগলো । এখনও যেন ছেলেটার হাসি সে শুনতে পাচ্ছে । ছেলেটা কিভাবে জানলো নাক টুকটুকি ! কোন ভাবেই জানার কথা না । তাহলে কি সত্যিই ছেলেটা অশরীরি কেউ ? নিশাত আর কিছু ভাবতে পারছে না । এখনই নিচে চলে যেতে হবে । আবারও পা বাড়ালো সিড়ির দিকে ।
তখনই একজন সুন্দর চেহারার মহিলাকে দেখতে পেল ওর থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে । মহিলার কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-এই মেয়ে কি হয়েছে ? এভাবে হাপাচ্ছো কেন ?
মহিলাকে দেখে নিশাতের যেন জানে পানি এল । তারপর বলল
-ভয় পেয়েছি আন্টি !
-একা একা ছাদে উঠেছিলে ?
-জি !
-তোমাকে কেউ বলে নি একা একা ছাদে না উঠছে ? দেখি এসো আমার ঘরে । একটু দম নাও ।
নিশাতের হাত ধরে এক প্রকার জোর করেই তার ঘরে নিয়ে গেল । সোফার উপর বসে নিশাত একটু সুস্থির হল । বার বার ঐ ছাদের কথাই মনে পড়তে লাগলো । ছেলেটা ওর মনের কথা কিভাবে জানলো ? আর ওর নামই বা কিভাবে জানলো ? তাহলে ও সত্যি সত্যিই অশরীরি কিছু দেখেছে ? মনে মনে ঠিক করেই নিল আর একা একা কেন যাবেই না কোন দিন ছাদে ।
মহিলা একটু পরেই ফেরৎ এলেন । হাতে একটা পানির গ্লাস ! ওর দিকে তাকিয়ে বললেন
-এই নাও । এই পানি টুকু খেয়ে নাও !
নিশাত এক ঢোকেই যেন সব টুকু পানি পানি খেয়ে নিল । তারপর মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনাকে ধন্যবাদ আন্টি ! আমি এখন আসি !
মহিলা একটু হাসলপ । তারপর বলল
-আরে তোমার পায়ের স্যান্ডেল কোথায় ?
নিশাত নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই ওর হুস হল । ভেজা ছাদে ও ওর স্লিপার খুলে হাটাহাটি করছিলো । তখনই ছেলেটাকে দেখে ভয় পায় । তখন আর স্লিপারটা পায়ে দেওয়ার কথা মনে ছিল না । এখনও সেটা সম্ভবত ছাদেই রয়ে গেছে ।
নিশাত বোকার মত কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-ওটা ছাদে ।
-এখন ? নিয়ে আসবে ?
-না না । আমি এখন আর ছাদে যেতে পারবো না । বাসার নিচে একটা বাটার শোরুম আছে । ওখান থেকে একটা কিনে নিবো !
মহিলা যেন খুব মজা পেল কথা শুনে । একটু হেসে বলল
-আরে বোকা মেয়ে বলে কি ! আমি ছাদ থেকে এক সময় নিয়ে এসে রাখবো নে । তুমি আমার কাছ থেকে নিয়ে যেও । এখন আর কিনতে হবে না । তুমি বরং আমার একটা স্যান্ডেল পায়ে দাও ।
তারপর নিজের পা টা নিশাতের পায়ের কাছে এনে মাপ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল
-আমার আর তোমার পা তো একই রকম । নাকি ? তুমি একটু বস । আমি নিয়ে আসছি ।
নিশাত বেশ খানিকটা খুশি হল । ঢাকা শহরে মানুষ জন নিজের টা ছাড়া অন্যেরটা একদমই ভাবে না । সেখানে এই অচেনা মহিলা ওকে কত যত্ন করে নিজের ঘরে নিয়ে এল । এই কাজটা কে করে !
নিশাত নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে গেল । ঘড়িতে বলতে ছয়টা বেজে গেছে । কিন্তু এতো সময় যাাওয়ার কথা না । আজকে মীরুনকে পড়ানো শেষ হয়েছে চারটার দিকে । তার পরপরই ও ছাদে উঠেছে । বড় জোর পনের মিনিট ছিল । সব মিলিয়ে চারটা পনের বাজার কথা । আর এখানে এসেছে ৫ মিনিটও হয় নি । তবুও খুব বেশি হলে সাড়ে চারটা বাজার কথা । কিন্তু এখন বাজে ছয়টা দশ । মানে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
নিশাত জলদি করে হাতের মোবাইলের স্ক্রিন চালু করলো । সেখানেও ছয়টা দশই দেখাচ্ছে ।
কি হচ্ছে ওর সাথে ! বুকের ভেতড়ে আবারও কু ডেকে উঠলো । এদিকে পেছনের ঐ মহিলাও আসছে না । যখন আরও ১০ মিনিট অপেক্ষা করেও মহিলা এল তখন নিশাতের আসলেই ভয় করতে শুরু করলো । একবার মনে হল ও এখনই ঘর থেকে বের হয়ে যায় । কিন্তু এভাবে চলে যাওয়া কেমন লাগে । কয়েকবার আন্টি বলে ডাক দিয়েও কোন কাজ হল না । তারপর নিশাত আর থাকতে পেরে নিজেই একটু ভেতরে গিয়ে দেখার কথা ভাবলো । তার আবার কোন বিপদ হল না ।
ড্রয়িং রুমের পাশেই একটা লম্বা প্যাসেজ । একেবারে মীরুনদের বাসার মতই ফ্ল্যাটের কাঠামো । নিশাত জানে এই প্যাজের শেষ মাথায় দুইটা শোবার ঘর । আর শুরুতেই ডান দিকে বাথরুম আর বা দিকে রান্না ঘর ।
নিশাত বাথরুমের সামনে এসে হাজির হল । বাথরুমটা হাট কোরে খোলা । বাইরে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার দরুন ঘরের ভেতরে হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে আসছে । নিশাত সামনে এগোতে যাবো তখনই ওর চোখ গেল বাথরুমের দিকে । মীরুনদের বাসার মতই এই ফ্ল্যাটের কমন বাথরুমটা বেশ বড় । ওখানে একটা বাধটাব দেখা যাচ্ছে । নিশাতের চোখ আটকে গেছে । বাথটাবে কিছু একটা ভাসছে ।
নিশাতের বুকের ভেতরটা লাফাতে লাগলো হঠাৎ করেই । ওর মনে হল ও এমন কিছু দেখে ফেলেছে যেটা ওর মোটেই দেখা উচিৎ হচ্ছে না । বারবার ওর মন বলছে এখনই এখান থেকে বের হয়ে যেতে । এখান থেকে চলে যেতে । কিন্তু বাথটাবের ভেতরে আসলে কি দেখা যাচ্ছে সেটা না দেখে থাকতে পারছে না । হাতের মোবাইলের ফ্ল্যাশটা জ্বালিয়ে নিশাত বাথরুমের ভেতরে ঢুকে পড়লো । তারপর পর বাথটাবের উপর আলোটা ফেলতেই ওর বুকটা লাফ দিয়ে উঠলো ।
বাথটাব ভর্তি পানি !
এখানে একট বাচ্চা ভাসছে । মৃত । চোখ দুটো ফ্ল্যাসের আলোতে জ্বলজ্বল করছে । ঐ মহিলার কোলে এই বাচ্চাটা ছিল । নিশাট কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । বাচ্চাটাকে সে কিছু সময় আগেও দেখেছে । কিন্তু এই মৃত্য বাচ্চাটার পেট ফুলে উঠেছে । অনেক সময় আগেই যে মারা গেছে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।
নিশাত আর কিছু ভাবতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে ও ভুল কোথাও চলে এসেছে । এখনই ওর এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ । বাথরুম থেকে বের হয়ে সোজা রান্না ঘরের দিকে চোখে যেতেই নিশাত আরও বড় একটা ধাক্কা খেল । রান্না ঘরের সিলিং থেকে একটা মহিলার ঝুলন্ত দেহ দেখা যাচ্ছে । আবছায়া অন্ধকারেও ভেতরে নিশাত মহিলার বেরিয়ে আসার জিহ্বটা পরিস্কার দেখতে পেল । ওর দিকেই যেন তাকিয়ে আছে । যেন একটু একটু হাসছে । নিশাত কিছুটা সময় কেবল চোখ বড় বড় করে সেদিকেই তাকিয়েই রইলো । চোখে তী্ব্র আর অবিশ্বাস !
কি হচ্ছে ওর সাথে ?
এই আন্টি কিভাবে এখানে ঝুলে আছে ? আর ওনার বাচ্চাটাই বা বাথটাবে ওভাবে পড়ে আছে কেন ?
নিশাতের পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হল না । একটা চিৎকার বেরিয়ে এল গলা থেকে আপনা আপনি । তারপর করিডরের মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল ।
নিশাত যখন আবার চোখ মেলে তাকালো তখন চোখের সামনে পরিচিত আবহাওয়া দেখতে পেল । মীরুন ওর দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে । ওকে চোখ মেলতে দেখেই মীরুন চিৎকার করে বলল
-আম্মু আপুর জ্ঞান ফিরেছে । নিশাত তাকিয়ে দেখলো মীরুনের আম্মু ওর দিকে এগিয়ে এল । তারপর বলল
-নিশাত ঠিক আছো তুমি ? এখন কেমন লাগছে ?
-এখন ভাল । আমি কোথায় ছিলাম ?
মীরুনের আম্মু বলল
-সেটাই তো প্রশ্ন ? তুমি চার তলাতে গিয়েছিলে । ওখানে কেউ থাকে না । আমি মীরুনকে এই জন্যই বলেছিলাম একা একা ছাদে না যেতে ।
আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে বলল না । মীরুন বলল
-আপু আপনি কি দেখে ভয় পেয়েছেন বলেন তো ?
নিশাত আবারও মনে করার চেষ্টা করলো । সেই মৃত বাচ্চাটার ছবি ভেসে উঠলো । তারপর আবার সেই মহিলার জিহ্বা বের করা ছবি । কি ভয়ংকর সেই ছবি !
মীরুন বলল
-আপনাকে বলেছিলাম, চার তলাতে সেই ফ্ল্যাট । ওখানে এক ভাড়াটিয়ার বউ আর বাচ্চা মারা পড়েছিলো । বাচ্চাটা বাধটাবে ডুবে মারা গিয়েছিল । আর বাচ্চার মা সম্ভবত এই কারনে আত্মহত্যা করেছিলো ।
নিশাত একটু উঠে বসতে চাইলো । মীরুনের আম্মু বলল
-এখন ওঠার দরকার নেই । শুয়ে থাকো !
-না আন্টি । হোস্টেলে ফিরতে হবে । নয়টার পরে গেলে গেট বন্ধ হয়ে যাবে !
-ও !
মীরুনের আম্মু কি যেন ভাবলো । তারপর মীরুনকে বলল
-এই যা তো অভিকে ডেকে নিয়াই । অভি ওকে পৌছে দিবে ।
নিশাট তাড়াতাড়ি বলল
-না না আন্টি কাউকে ডাকতে হবে না । আমি একা যেতে পারবো ।
-এই মেয়ে বেশি কথা বলবা । যা বলছি শোন । এখন আট টা বেজে গেছে । অভির বাইক আছে । ও তোমাকে পৌছে দিবে । আর ঐ তোমাকে চার তলা থেকে নিয়ে এসছে ।
মীরুন একটু পরে যে ছেলেটাকে সাথে নিয়ে ঘরের ভেতরের ঢুকলো তাকে দেখে নিশাত আবার চমকে উঠলো । ছাদের সেই ছেলেটা । তার মানে ছেলেটাকে দেখে সে এমনিতেই ভয় পেয়েছিলো । ছেলেটা তাহলে ভুত নয় । ভাবনা টা আসতেই নিজেকে গাধা মনে হল ওর । একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে আজকে এমন কিছুই হত না ।
বাইকটা যখন নিশাতেরট হোস্টেলের সামনে এসে থামলো তখন নয়টা বাজতে অল্প কিছু বাকি আছে । বাইকের এই পথ টুকুতে নিশাত টুকটাক কথা বলেছে অভির সাথে । ছেলেটাকে প্রথম দেখে ভয় পেয়েছে, এটা ভেবে নিজের কাছেই হাসি আসছে ।
বাইক থেকে নামতে নামতে নিশাত বলল
-আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে ? আর কিভাবে বুঝলেন যে আমি ছবি তোলার কথা ভাবছি ।
অভি হাসলো । তারপর বলল
-আসলে আমি আপনার ফেসবুকে ফলোয়ার ! আপনি ঐদিন একটা সেলফি তুলে ক্যাপসন দিয়েছিলেন যে ছবি তুলে দেওয়ার কেউ নেই । তাই মনে হল যে আজকে আমি ছবি তুলে দেই ।
নিশাতও হাসলো । হাসলে ওর গালে টোল পড়ে এটা নিশাত ভাল করেই জানে । সামনে দাড়ানো মানুষটা সেই হাসির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ।
নিশাত আসি বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল । গেটের কাছে গিয়ে ফিরে তাকালো আবার । অভি তখনও তাকিয়ে আছে । নিশাত কে উদ্দেশ্য করে বলল
-আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা গ্রহন করে নিয়েন ! অন্তত এই টুকু আমার চাইতেই পারি । নাকি ?
নিশাত কেবল হাসলো । তারপর আবারও হাতটা নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে গেটের ভেতরে ঢুকে পড়লো ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৭