জয়িতার সন্ধ্যার সময়টা কেমন যেন বিষণ্ণ মনে হয় । পুরো দিনের ভেতরে এই সময়টা এলেই ওর মন আপনা আপনিই উদাস হয়ে ওঠে। সারা দিনের সব কথা মনে পড়তে থাকে আস্তে । তারপর কোন কারন ছাড়াই মনটা খারাপ হতে থাকে । ওর কাছে এই রাতের শুরুটা মোটেই ভাল লাগে না । বারবার মনে হয় এই রাতই পুরো দিনের জন্য অশুভ কিছু বসে আনে ।
অবশ্য এমন একটা মনভাব গড়ে ওঠার পেছনে যুক্তিযুক্ত কারন আছে । জয়িতার জীবনের সব খারাপ ঘটনা গুলো এই বিকেল আর রাতের সংযোগ সময়ের মধ্যেই হয়েছে । এই সময়টার মধ্যে যখনই কিছু ঘটতে যায় জয়িতার মনে কু ডেকে ওঠে । ও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে খারাপ কিছু হতে চলেছে ।
আজ সন্ধ্যা বেলা যখন জায়েদের হাক ডাক শুনতে পেল তখনই মনে আবার খারাপ কিছু হতে চলেছে । কয়েক সেকেন্ড পরেই জায়েদকে ঘরে ঢুকতে দেখলো । ওর মুখের ভাব দেখেই মনে হল খারাপ কিছু একটা হয়েছে কিংবা হতে চলেছে ।
জায়েদ ঘরে ঢুকেই বলল
-আপু শুনেছিস ঐ ব্যাটার কথা । সলিমের কাছে বলে নাকি সে এখানে আসতে পারবে না । আমাদের নাকি ওখানে যেতে হবে । সাহস কত বড় একবার ভেবে দেখ ! ঐ ব্যাটাকে যদি আমি ....
জয়িতা নিজের ভেতরে একটু স্বস্তি অনুভব করলো । এমন কোন ঘটনা ঘটে নি । অন্তত এখনও পর্যন্ত তো ঘটে নি । জয়িতা বলল
-এভাবে চিৎকার করছিস কেন ?
-চিৎকার করবো না ? তাকে এখানে ডাকা হয়েছে আর সে আসবে না ?
-সে আমাদের বেতন ভুক্ত কর্মচারি না যে ডাকলেই তাকে ছুটে আসতে হবে !
জায়েদ খানিকটা সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো জয়িতার দিকে । নিজের আপন বড় বোনের কথা যেন ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । আরও কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে জায়েদ ঘর থেকে বের হয়ে গেল । ওর মুখের ভাব জয়িতার ভাল লাগলো না । জায়েদ ঠিক তার বাবার মতই বদ মেজাজী । অল্পতেই মাথা গরম হয়ে ওঠে । পদে পদে কেবলই ঝামেলা বাঁধায় । বাবার প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে অবশ্য সেই ঝামেলা থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে । কিন্তু যদি বাবা না থাকে !
জয়িতার এই কথাটা ভাবতেই মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো । ওর বাবার অনেক দোষ আছে, জয়িতা জানে তবে বাবাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব একটা মুহুর্ত ভাবতে পারে না । ওর বয়স যখন তিন বছর তখন জায়েদকে জন্ম দিতে গিয়ে জয়িতার মা মারা যায় । তারপর জয়িতা দেখেছে ওর বাবা কিভাবে ওদের দু ভাইবোন কে একা হাতে মানুষ করেছে । বাইরের মানুষজনের কাছে ওর বাবা জাফর আহমেদ একজন বদমেজাজী মানুষ হলেও জয়িতা আর জয়েদের কাছে পৃথিবীর সেটা মানুষ । জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত ওদের দুই ভাই বোনের সাথে কখনও কড়া কন্ঠে কথা বলেছে কি না জয়িতা বলতে পারবে না । আজ সেই বাবা মরতে বসেছে । ওদের কে ছেড়ে চলে যাবে । ডাক্তারেরা জবাব দিয়ে দিয়েছে । তারা বলেছে যে ক্যান্সারের এই পর্যায়ে এসে তাদের আসলে কিছুই করার নেই । কেমো থেরাপী হয়তো দেওয়া যাবে তবে সেটাতে খুব একটা কাজ হবে না । এর থেকে শেষ কটা দিন পরিবারেরর সাথেই থাকা ভাল ।
তাই শেষ কটা দিন শান্তিতে কাটানোর জন্য নিজের গ্রামে এসে হাজির হয়েছে । যদিও সাথে একটু ছোটখাটো হাসপাতাল বয়ে নিয়ে এসেছে । একজন ডাক্তার আর দুজন নার্সকে সাথে করে নিয়ে আসা হয়েছে সাথে করে । তারা সব সময় তার বাবার দেখা শুনা করছে । তবে এই গ্রামে আসার পেছনে আরও একটা কারণ আছে ।
জয়িতা নিজের ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল । সামনের উঠানে এখনও আলো জ্বালানো হয় নি । সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । দুপুর থেকেই ওর শরীরটা কেমন খারাপ লাগছে । কাল সন্ধ্যার পর থেকেই ও একেবারে নিশ্চিত হয়ে গেছে । এটা নিয়ে ওর চিন্তার শেষ নেই । বাবা কে কিভাবে বলবে ব্যাপারটা সেই চিন্তাও ঘুরপাক খাচ্ছে ।
খবর টা শোনার পর ওর বাবা মনের ভাবটা কেমন হবে সেটাও ভাবার চেষ্টা করছে । ছোট বেলা থেকেই ওর আর জায়েদের সকল অপরাধ জাফর আহমেদ ক্ষমা করে দিয়ে এসেছে । এমন একটা ভাব করেছে যেন কিছুই করে নি ওরা কিংবা যা করেছে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জয়িতার এই কাজটাকে তিনি কিভাবে নিবেন সেটা জয়িতা জানে না ।
এমন সময় জয়িতার ফোন বেজে উঠলো । নম্বরটা দেখার সাথে সাথেই ওর মেজাজ টা একটু খারাপ হয়ে উঠলো । একবার মনে হল ফোনটা রিসিভ করবে না । কিন্তু জানে যতক্ষন না ফোন রিসিভ হবে ততক্ষন ফোন আসতেই থাকবে । ফোন রিসিভ করেই জয়িতা বলল
-তোমাকে না বলেছি এখানে ফোন না দিতে !
ওপাশের মানুষটা কিছু সময় নিরবতা পালন করলো । জয়িতা বলল
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ?
সে বলল
-তুমি কি নিশ্চিত ব্যাপারটা নিয়ে ?
-নাহ ! আমি নিশ্চিত হব কেন ? আমি তো ঢং করছি ।
-আরে বাবা রেগে যাচ্ছো কেন ?
-না রাগবো না কেন ? আমার তো সুখের দিন !
ওপাশের মানুষটা আরও কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-আচ্ছা কি করবে ঠিক করেছো ?
জয়িতা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নিজের রাগটাকে দমন করে বলল
-জানি না । শোন এখন আমি কিছু ভাবতে পারছি না । বাবাকে নিয়ে গ্রামে এসেছি । এখানে সব সময় বাবার সাথেই থাকছি সব সময় । তুমি দয়া করে এখন ফোন দিও না । সুযোগ পেলে আমিই ফোন দেব ।
জয়িতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই বাবার কন্ঠস্বর শুনতে পেল । আর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিল । তারপর বাবার ঘরের দিকে রওনা দিল । মনের ভেতর থেকে দুঃচিন্তা কিছুতেই যাচ্ছে না । বাবাকে কিভাবে সব কিছু বলবে সেটা বুঝতে পারছে না । যদি ওর বাবা অন্য কোন ভাবে ব্যাপারটা জানতে পারে তাহলে ব্যাপারটা কোন ভাবেই ভাল হবে না ।
বাবার রুমে গিয়ে দেখলো জায়েদ আগে থেকেই সেখানে বসে আছে । বাবার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর মুখে থমথমে । জয়িতা গিয়ে বাবার পাশে বসলো । জাফর আহমেদ বলল
-কি হয়েছে তোর ? মুখ এমন কেন ?
-কিছু না বাবা । তোমার কেমন লাগছে ?
জাফর আহমেদ হঠাৎ করেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল । এই কদিনেই তার চেহারা কেমন যেন হয়ে গেছে । মাথার চুল গুলো অনেকটাই ঝড়ে পড়েছে কেমো দেওয়ার সময় । তার আগের সুস্থ সবল আর দাম্ভিক জাফর আহমেদকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না । জাফর আহমেদ বলল
-ঐ ছেলেটা নাকি আসবে না বলে দিয়েছে !
জয়িতা বাবার দিকে তাকালো । বাবার চোখে মৃত্যু ভয় সে দেখতে পাচ্ছে । বাবার হাতটা ধরে জয়িতা বলল
-বাবা তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস কর এসবে কিছু হবে ? মানে সত্যিই কিছু হয় ?
-জানি না রে মা । কিন্তু তোদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না রে । আর কটাদিন তোদের সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে ।
কথাটা শুনে জয়িতার বুকটা হুহু করে উঠলো । বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-বাবা তুমি চিন্তা করো না । আমি তাকে নিয়ে আসবো । যে কোন ভাবেই । তুমি মোটেই চিন্তা কর না ।
জয়িতা আর বসলো না বাবার পাশে । এখন বাবার পাশে বসলেই তার মন খারাপ হবে । উঠানে বেরিয়ে এসেই সে সলিমকে ডাক দিল । ততক্ষনে উঠানে আলো জ্বালানো হয়েছে । সলিম দৌড়ে এসেই তার সামনে দাড়ালো ।
-জে আফা !
-ঐ কবিরাজের বাসায় নিয়ে চল আমাকে !
-এক্ষন ?
-হ্যা । এখনই ।
পেছন থেকে জায়েদের কন্ঠস্বর শোনা গেল । জায়েদ বলল
-আপু আমি আসবো তোর সাথে ?
জয়িতা বলল
-না । তুই বাবার কাছে থাক । তাকে একা রেখে যেতে হবে না ।
জয়িতা একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে নিল শরীরে । তারপর হাটতে আরাম্ভ করলো । সলিম আসতে লাগলো তার পেছন পেছন ।
জাফর আহমেদ সব সময় নিজের কাজ কর্ম থেকে ওদের দুই ভাই বোন কে দুরে রেখেছে । তিনি যখন অফিস থেকে বাসায় আসতো তখন তিনি হয়ে যেতে একেবারে অন্য মানুষ । জয়িতা ওর নিজের জীবনে অফিসের কোন কাজ কিংবা কর্মচারিকে ওদের বাসাতে আসতে দেখেনি । ঠিক তেমন ভাবেনিজের রোগটাতেও ওদের কাছ থেকে লুকিয়েই রেখেছিলো । যখন সত্যিটা তারা জানতে পারলো তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে । কিছুই আর করার নেই । তবুও জয়িতা সব চেষ্টা করে দেখেছে । ছুটে গেছে দেশ বিদেশের সব জায়গাতে । কিন্তু আর কোন লাভ হয় নি । তখনই ওর কাছে এই কবিরাজের কথা কানে আসে । মানুষটা নাকি অদ্ভুদ ভাবে অন্যের রোগ সারিয়ে তোলে ।
কথাটা ও মোটেই পাত্তা দেয় নি কিন্তু জায়েদের কি মনে হয়েছে যে ওদের এই লোকের কাছেও গিয়ে দেখানো উচিৎ । এমন কি ওর বাবাও একই মনভাব । বিশেষ করে যখন লোকটা ওদের নিজেদের গ্রামেই থাকে । আর সবাই যখন আশা ছেড়েই দিয়েছে তখন আর কিছু করারও নেই । ডাক্তারেরা বলে দিয়েছে যে এখন পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটানো উচিৎ । তাই এখানে আসা । নিজের গ্রামে কিছু শান্তির সময় কাটানো যাবে সেই সাথে সেই লোকটার সাথেও দেখা করা যাবে !
-সলিম !
-জে আফা !
-আর কতদুর !
-মাস্টর সাব গ্রামের শ্যাষ মাথায় থাকে !
জয়িতা এখানে আসার পর থেকে এই লোকটা সম্পর্কে নানান কথা শুনছে । শেষ বার যখন গ্রামে আসে তখন ও অনেক ছোট । তখন এই গ্রামে এমন কেউ ছিল না । লোকটার নাম সাহিব আহসন । এই নামটাই শুনে এসেছে । স্থানীয় সরকারি স্কুলের শিক্ষক । একা মানুষ । গ্রামের শেষ মাথায় একটা এক তলা বাসা নিয়ে থাকেন । স্কুলের সময়টা বাদ দিয়ে সারা দিন নাকি বই পড়ে সময় কাটান । মাঝে মাঝে রাস্তায় হেটে বেড়ান । তবে সবার ধারনা উনি রাস্তায় বের হয় মানুষের খোজ খবর নেওয়ার । একটা নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হন। এবং নিশ্চিত ভাবেই সেই বাড়ির কেউ না কেউ সেদিন অসুস্থ থাকবে । সেই বাড়িতে কিছু সময় থেকে সে চলে আসে । সন্ধ্যা কিংবা রাতের বেলা দেখা যায় সেই বাড়ির লোকজন সেই অসুস্থ মানুষটাকে নিয়ে গ্রামের শেষ প্রান্তে যাচ্ছে ।
এই কথা যখন প্রচার হওয়ার পরপরই নাকি দুর দুরান্ত থেকে অনেকে আসে তার কাছে চিকিৎসার জন্য । কিন্তু তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না । তাদের এমন কি বাড়ির ভেতরেও ঢুকতে দেয় না । মানুষ দাড়িয়ে থাকতে থাকতে চলে যায় । কেউ কেউ অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে । কিন্তু দরজা আর খোলে না ।
জয়িতার যে ব্যাপারটা জানার পর থেকে কৌতুহল হচ্ছে না সেটা বলবে না । মানুষটাকে সে ভন্ড বলে ধরে নিত কিন্তু সেটাও পারছে না কারন এখানে টাকা পয়সার কোন ব্যাপার জড়িত নেই । সাহিব আহসান কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেন না । নিজে অতি সাধারন জীবন যাপন করে ।
একতলা বাসাটার সামনে এসে জয়িতা দাড়িয়ে রইলো কিছু সময় । বাড়ির গেটের কাছে একটা ৪০ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে । সেই আলোতে চারিদিকটা আরও বেশি অন্ধকার লাগছে । সলিম কয়েকবার ডাক দিল কিন্তু কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না । এমন কি দরজা খুললোও না । জয়িতার যখন মনে হল এখানে আসাটা একেবারে বৃথাই গেল তখনই দেখলো দরজা খুলে যেতে । দরজা খুলে যে মানুষটা বের হয়ে এল তাকে দেখে জয়িতা সত্যিই অবাক হয়ে গেল । ও ভেবেছিলো সাহিব আহসান একজন বয়স্ক লোক হবেন । অন্তত মধ্য বয়স্ক কেউ হবে । কিন্তু দেখা গেল সাহিব আহসান একেবারেই যুবক একজন মানুষ । ওর সমানই হবে কিংবা ওর থেকে দু এক বছরের বড় কিংবা ছোট হবে ।
সাহিব সরাসরি জয়িতার দিকে তাকিয়ে বলল
-আসুন ভেতরে ! এতো রাতে আসবেন ভাবি নি ।
জয়িতা বলল
-গরমের দিনে রাত আটটা এমন কোন রাত নয় ।
সাহিব আহসান হাসলো ।
-শহুরে মানুষের জন্য নয় কিন্তু গ্রামে অনেক রাত । আসুন ভেতরে আসুন ।
তার সলিমের দিকে তাকিয়ে বলল
-সলিম যাও তো রমিজের দোকানে গিয়ে আমার জন্য আধা কেজি চিনি নিয়ে এসো, আমার কথা বললেই হবে । আমার চিনি শেষ হয়ে গেছে ।
জয়িতা বলল
-আপনার ব্যস্ত হতে হবে না । আসলে ....
সলিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেতরে ঢুকতে হবে না দেখে সলিমের মুখে যেন একটা স্বস্তির ছাপ । এলাকার মানুষ জন নাকি এই বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ভয় পায় কোন কারনে । কেউ কেউ আবার মনে করে সাহিব আহসান নাকি কোন মানুষই না । সে হয়তো জ্বীন ।
-সমস্যা নেই । আসুন ভেতরে ।
জয়িতা মনের ভেতরে খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই ভেতরে ঢুকলো । কিন্তু ভেতরে ঢুকে খানিকটা অবাক হয়ে গেল । ড্রয়িং রুমের পুরো দেওয়াল জুড়েই কেবল বুক সেলফ আর তাতে বই ভর্তি । দেশী বিদেশী অনেক বই রয়েছে সেখানে । সাহিব যে অনেক বই পড়ে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । জয়িতাকে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতেই সাহিব বলল
-এখানে আসলে আর কিছু করার নেই । স্কুলের সময় বাদ দিয়ে আমি বই পড়ে কাটাই । বসুন !
জয়িতা একটা সোফাতে বসলো । কিভাবে কথাটা বলবে সেটা ও জানেও না । যখন এখানে আসছিলো তখন সাহিব আহসানের এক টা চিত্র মনের ভেতরে যে চিত্রটা ছিল এখানে এসে দেখে সাহিব আহসান একেবারেই অন্য রকম । জয়িতার এখন মনে হচ্ছে যা শুনে এসেছে তা সবই কেবল গল্প । আর কিছু নয় ।
সাহিব আহসান বলল
-আমি কি জানতে পারি আপনি হঠাৎ এখানে ?
জয়িতা কি বলবে খুজে পেল না । একবার বলল যে এমনি এসেছে কথা বলতে । তার ব্যাপারে অনেক শুনেছে তাই এসেছে কিন্তু চিন্তাটা নিজের কাছেই কেমন হাস্যকর শোনালো । তাই বাদ দিয়ে দিল । বই গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । তারপর বলল
-আপনি কি জানেন আমি এখানে কি জন্য এসেছি ? আই মিন এর আগে একবার আপনাকে ডাকা হয়েছে । বুঝতে পারার কথা !
সাহিব হাসলো । তারপর বলল
-হ্যা আমি কিছুটা তো অনুমান করতেই পারছি । ব্যাপারটা আসলেই আপনার কাছে সত্য মনে হয় বলুন ! এমন কি সম্ভব ?
জয়িতা মাথা নাড়ালো । তারপর বলল
-আমার আসলে নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে এখন ! কি জন্য যে এলাম আমি নিজেই বলতে পারবো না । আমি এখন আসি !
এই বলেই উঠে দাড়ালো । সাহিব তখনই বলল
-আরে আরে একা একা কেন যাবেন । সলিম আসুক তারপর যাবেন । যদি চিনি ছাড়া চা খান তাহলে চা হতে পারে !
জয়িতা বসে পড়লো আবার । সাহিব উঠে চলে গেল ঘরের ভেতরে । তারপর হাতে দুটো কাপ দিয়ে ফিরে এল সাথে সাথেই । চা যেন তৈরি করাই ছিল । জয়িতার মুখের ভাব দেখে সাহিব বলল
-আসলে আমি সব সময় চা খাই । ফ্ল্যাস্কে চা তৈরি থাকে সব সময় ।
-আচ্ছা ।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে জয়িতার হঠাৎ কি হল ওর মনে হল সামনে বসা মানুষটাকে কথা গুলো বলেই ফেলে । মানুষটা নিশ্চয়ই এসব সব শুনে অভ্যস্ত । ওর এই ধরনের কথা শুনে খুব একটা অবাক হবে না ।
-আসলে আমাদের জীবনে বাবা ছাড়া আর কেউ নেই । বাবাকে ছাড়া আমরা কিছু ভাবতেই পারি না দুভাই বোন । বুঝতেই পারছেন । এই অবস্থায় আমরা কি করতে পারি । ডুবন্ত মানুষ যেমন খড় কুটো যা পায় তাই ধরেই বেঁচে থাকতে চায় আমাদের অবস্থা । তাই এই শেষ পর্যায়ে এসে আমরা যা শুনছি তাই একবার চেষ্টা করছি ।
সাহিব চুপ করে রইলো । জয়িতা আবার বলল
-আমি জানি আপনার কাছে এই কথাটা বলা ঠিক হবে না, এমন কি অনুরোধ করাটাও না । তারপরেও আপনি কি একবার আমাদের বাসায় আসবেন ? আমার বাবার সাথে একটু কথা বলে যাবেন । আর কিছু না । প্লিজ !
সাহিব আহসান বলল
-এতে কি কাজ হবে ? কোন লাভ ? আপনার বাবার লিউকোমিয়া ঠিক হয়ে যাবে ?
-তা হয়তো ঠিক হবে না কিন্তু আমার বাবা আমার ভাই কিংব আমি নিজেও একটা শান্তি পাবো । আর কিছু না ।
সাহিব বেশ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । চুপচাপ চা শেষ করে উঠে দাড়ালো । বইয়ের শেলফের কাছে গিয়ে একটা বই বের করে হাতে নিয়ে আবার জয়িতার সামনে এসে বসলো । তারপর বলল
-জাফর আহমেদ একজন অসাধারন বাবা ! এটা আমাকে মানতেই হবে । কিন্তু মানুষ হিসাবে তিনি কেমন সেটা কি আপনি জানেন ?
জয়িতা জানে তার বাবা মানুষ হিসাবে কেমন ! খানিকটা চুপ করে থেকে বলল
-হ্যা জানি ।
-তারপরেও আপনি আপনার বাবাকে রক্ষা করতে চান ?
-হ্যা । চাই ।
-বিনিময়ে কি দিতে পারবেন ?
-মানে ?
জয়িতার এবার একটু অস্বস্থি লাগলো । সে সাহিব আহসানের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি কি বলতে চান ?
সাহিব কোন প্রকার ভনিতা না করে বলল
-বললাম আপনি বিনিময়ে কি দিতে পারবেন ?
-আপনি কত টাকা চান ?
খুব একটা মজার কথা শুনেছে এমন একটা ভাব করে সাহিব আহসান হেসে ফেলল । তারপর সে জয়িতার পেটের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । জয়িতা তীব্র বিস্ময় নিয়ে বলল
-হাউ ডু ইউ নো ? কিভাবে জানেন আপনি ?
জয়িতা তখনই সাহিব আহসানের চোখ দেখতে পেল । সাথে সাথে একটা তীব্র ভয় ওকে জেকে বসলো । সাহিব আহসানের চোখে কোন সাধারন মানুষের চোখের মত নেই আর । কালো মনির বদলে পুরো চোখ দুটো কেমন তীব্র হলুদ রং ধারন করতে শুরু করেছে । মুখে লেগে থাকা হাসিটাতে সেই চেহারা আরও যেন বেশি ভয়ংকর মনে হচ্ছে ।
জয়িতা বুকের ভেতরে একটা তীব্র আতংক কাজ করছে । বার বার মনে হচ্ছে মানুষের মুখে যা শুনে সেটা সব সত্যি । তার সামনে বসা এই মানুষটা কোন ভাবেই স্বাভাবিক কোন মানুষ হতে পারে না । কোন ভাবেই না ।
কিন্তু ও এখন কি করবে ? দৌড়ে পালাবে ?
পালাতে কি পারবে ? জয়িতা আর স হ্য করতে পারছে না । ওকে পালাতে হবে কেবল এই কথাটাই মনে হল । এখানে থাকা যাবে না ।
জয়িতা ঝট করে উঠে দাড়ালো । তারপর আর কিছু না ভেবেই দরজার দিকে দৌড়ে দিলো । ঘরের দরজা পেরিয়ে যখন বাইরের দেওয়ালের গেটটা চোখের সামনে আসলো তখন যেন আরও একটা তীব্র ধাক্কা খেল । সেখানে দেখতে পেল সাহিব আহসান দাড়িয়ে আছে । গেট খুলছে । সালিমকেও একটা প্যাকেট হাতে দেখা যাচ্ছে । সলিম যে চিনি কিনতে গিয়েছিলো, ফিরে এসেছে !
কিন্তু সাহিব আহসান কখন বের হত । জয়িতা যখন ভয় পেয়ে দৌড়ে বের হয়ে এল তখন সাহিব আহসান শোফাতেই বসে ছিল । যদি সে দ্রুত দৌড়ে যায়ও তবুও জয়িতাকে পাশ কাটিয়েই তাকে যেতে হবে ।
জয়িতা ভয়ে জড় হয়ে দাড়িয়ে রইলো দরজাতেি । ওর মাথার ভেতরে কিছুই ঢুকলো না । তারপর সলিমের আওয়াজ শুনতে পেল ।
-আফা মনি চলেন । যাইবেন না ?
সলিমের সাথে সাথে সাহিব আহসানও জয়িতার দিকে তাকালো । একেবারে স্বাভাবিকই লাগছে । কিন্তু তারপরেও জয়িতার পুরো শরীরে একটা শিরশিরে অনুভুতি হতে লাগলো । আর এক মুহুর্তও থাকতে প্রস্তুত নয় এখানে । সে এক প্রকার দৌড়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে এল । পুরো রাস্তা ধরে মাথার ভেতরে সাহিব আহসানের সেই চোখ দুটো মনে হচ্ছিলো । কিছুতেই সেটা মন থেকে দুর করতে পারছিলো না ।
দুই
জয়িতা অনুভর করলো ওর পেটের উপরে কেউ যেন আলতো করে হাত দিয়ে আদর করছে । চোখ মেলে বুঝতে পারলো না কোথায় আছে । ওর ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার । ওর যতদুর মনে আছে ওর ঘর কখনই পুরোপুরি অন্ধকার হয় না । ঘরে একটা ডিম লাইট জ্বলতে থাকে যখন ঘুমাতে যায় । জানালা খুলেই ও ঘুমায় । বাইরে জ্বলতে থাকা আলো এসে আলোকিত করে ঘরটা ।
তাহলে কি বিদ্যুৎ চলে গেছে ? এই জন্য ?
তাহলে জেনারেটরও চালু হওয়ার কথা !
কি হচ্ছে এসব ?
জয়িতা নড়ার চেষ্টা করলো । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো ও মোটেই নড়তে পারছে না । হাত পা গুলো যেন অবস হয়ে আছে । জয়িতা এবার চিৎকার দিতে গেল । কিন্তু গলা থেকে কেবল একটা গোঙানীর মত একটা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু বের হল না । জয়িতার অন্ধকারের ভেতরে অস হায় বোধ করতে লাগলো । একটু মাথাটা উচু করার চেষ্টা করলো । চারিদিকে অন্ধকার তবুও ওর দেখার ইচ্ছে যে ওর পেটের কাছে কি রয়েছে সেটা নড়াচড়া করছে । অনেক কষ্ট করে যখন ও মাথাটাটা একটু তুলে নিজের পেটের দিকে তাকাতে পারলো তখন সেখানে ঘন অন্ধকার ছাড়া কিছুই নেই । কিন্তু যখনই নিজের মাথাটা আবার নিচে নামাতে যাবো তখনই ঘন অন্ধকারের ভেতরে দুটো হলুদ চোখ দপ করে জ্বলে উঠলো ।
জয়িতার কিছু বলে দিতে হল না ।ওর বুঝতেো কষ্ট না কে এসেছে ওর ঘরে ! জয়িতা নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে মনে হল আর কোন উপায় নেই । এই অশরীরির কাছ থেকে ওর কোন মুক্তি নেই । ও হয়তো এখনই মারা যাবে ! কেউ দেখার নেই ওকে । কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না !
ঠিক সেই সময়ে কোথা থেকে একটা প্রবল শব্দ শুনতে পেল জয়িতা । তারপরই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল । ধড়ফড় করে জেগে উঠলো । চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো ও নিজের রুমের ঘুমিয়ে ছিল । ঘরে এখনও একটা ডিম লাইট জ্বলছে । সেটার আলো ছাড়াও বাইরে থেকে আলো । সব কিছু স্বাভাবিক মনে হলেও জয়িতার বুকের ভেতরে সেই ধুকধুকানি এখনও থামে নি !
একটু সুস্থির হতেই টের পেল দরজায় আঘাত করার শব্দটা এখনও আসছে ।
দ্রুত দরজা খুলে দিল । তাকিয়ে দেখি জায়েদ দাড়িয়ে । জায়েদের চেহারা দেখেই জয়িতার মনে হল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে !
-কি হয়েছে ?
-আব্বু যেন কেমন করছে ?
জয়িতা যখন বাবার ঘরে গিয়ে হাজির হল তখন জাগর আহমেদ অনেকটাই নেতিয়ে পড়েছে । অবস্থা খুব বেসি ভাল মনে হচ্ছে না । ডাক্তার নার্স সব ছোটাছুটি করছে কিন্তু জয়িতার মনে হল এসবে কোন লাভই হবে না ।
জয়িতা আগে থেকেই জানতো এমন একটা দিন আসবে । সে হিসাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলো কিন্তু এখন সেই প্রস্তুতি কোথায় হারিয়ে গেল নিমিষের । চোখে ফেটে কান্না বেরিয়ে এল । মানুষের জীবনে এসন সব পরিস্থিত আসে যেখানে মানুষের কোন কিছুই করার থাকে না !
কিন্তু এইখানে জয়িতার কিছু করার আছে । জয়িতা জায়েদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই এখনই সলিম কে নিয়ে ঐ সাহিব আহসানের বাসায় যাবি । তাকে কেবল বলবি যে সে চায় তাই দিবো তাকে । এখনই যাবি ! বুঝেছিস ?
জায়েদ খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-সে কি চায় ?
-সেটা তোর জানতে হবে না । যা বলছি শোন । দৌড়ে যা !
জায়েদ যখনই ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনই সলিম ঘরে এসে ঢুকলো । ওদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে বলল
-মাস্টার সাব আসছে ।
ওরা দুই ভাইবোন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহুর্ত । সলিম আবার বলল
-মাস্টার সাব বলছে ঘর থেকে সবাইকে বের করে দিতে । তবে আপনারা দুইজন থাকতে পারেন । আর মোমবাতির ব্যবস্থা করতে বলেছে ।
ডাক্তার আর নার্স কিছুতেই বের হতে চাচ্ছিলো না । ওরা বলছে এই অবস্থা মারাত্মক যখন তখন যে কোন কিছু হতে পারে ! জায়েদ বলতে গেলে একেবারে জোর করেই তাদের ঘর থেকে বের করে দিল । তারপর যখনই সাহিব আহসান ঘরের ঢুকলো তখনই ঢুপ করে ঘরে জ্বলতে থাকা বাল্ব দুটো ফেটে গেল । কয়েক মুহুর্তের জন্য পুরো ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেল ।
জয়িতার কেন জানি মনে কেবল এই ঘরের বাল্বই নয় পুরো বাসার বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে । তবে সেদিকে জয়িতা ভাবার সময় পেল না খুব একটা সময় । সলিম তার পরপরই মোমের আলো নিয়ে ঘরে ঢুকলো । জয়িতা তাকিয়ে দেখলো সাহিব আহসান ওর বাবার খাটের পাশে বসেছে । ওর বাবা শান্ত হয়ে গেছে । মোমের আলোতেই দেখা যাচ্ছে তার চোখ দুটো আস্তে আস্তে বুজে আসছে ।
সাহিদ আহসান বলল
-যাই কিছু দেখেন না কেন আপনারা কোন ভাবেই আমার কিংবা আপনার বাবার শরীরে হাত দিবেন না । কোন ভাবেই না । মনে রাখবেন !
জায়েদ যে কখন জয়িতার পাশে চলে এসেছে জয়িতা লক্ষ্য করে নি । ওর হাত ধরে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । জয়িতার বুঝতে কষ্ট হল না যে ওর ছোট ভাইটা ভয় পেয়েছে । একটু আগে বাবার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলো এখন সেখানে ভয় এসে জমা হচ্ছে । জয়িতার নিজেরও একটু একটু ভয় করতে লাগলো ।
জয়িতা দেখতে পেল সাহিদ আহসান ওর বাবার হাত দুটো চেপে ধরছে শক্ত ভাবে । তারপর চোখ বন্ধ করে কি যেন পড়তে শুরু করলো । মৃদু মৃদু কাঁপছে তার শরীর । একটা সময় সেই কাঁপনটা আস্তে আস্তে বাড়ছেই । দুজনেই অবাক হয়ে কেবল সেদিকে তাকিয়ে রইলো ।
তারপরই ওর বাবার শরীরটা আরও জোড়ে কাঁপতে লাগলো । ওর বাবা যেন সাহিদ আহসানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে । জয়িতা আর জায়েদ কেবল অবাক হয়ে দেখলো সাহিদ আহসানের হাতটার থেকে নানা শিকড় বেরিয়ে এসেছে ওর বাবার বাসার হাতের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে । এবং সেই শিকড় গুলো আস্তে আস্তে ওর বাবার পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে ।
জয়েদ ওর আপুর হাতটা যেন আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে । চাপ বাড়ছেই । নিজের চোখে যা দেখছে তা কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।
-আব্বু !
জয়িতা জায়েদকে শক্ত করে চেপে ধরলো । জায়েদ নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না । যে কোন ভাবেই ওর বাবাকে ধরতে চাচ্ছে ।
তারপরই ওর বাবার মুখ থেকে একটা তীব্র চিৎকার বেরিয়ে এল । সেই সাথে সাথে ওর মোম বাতি গুলোও নিভে গেল । পুরো ঘরটা আবারও অন্ধকারে ঢেকে গেল । তখনই জয়িতা আর জায়েদ দুজনই একটা অনুভব করলো ওদের ঘরের ভেতরে ভারী কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে । এই নিঃশ্বাসের আওয়াজ কোন মানুষের হতে পারে না । জয়িতা কিংবা জায়েদ কি করবে কিছু খুজে পেল না । নিজের চোখে সামনে তারা অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না কেবল সেই নিঃশ্বাসের আওয়াজটা ছাড়া । নিঃশ্বাসটা পুরো ঘোর জুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
এমন সময় জয়িতা অনুভব করলো জায়েদ ওর কাছ থেকে দুরে চলে গেল । কিংবা আরও ভাল করে বললে কেউ যেন ওকে ডুরে সরিয়ে নিয়ে গেল । জয়িতা কি করবে বুঝতে পারলো না । একবার মনে হল ও চিৎকরে কিন্তু সেটা করতে পারলো না ।
জয়িতা একটা সময় অনুভব করলো সেই নিঃশ্বাসের আওয়াজটা যেন খুব কাছে চলে এসেছে । তারপর নিঃশ্বাস যেন ওর শরীর উপরের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে । তারপর সেটা ওর তলপেটের কাছে এসে থামলো যেন ! কিছু সময় আগে স্বপ্নে জয়িতার যে অনুভুতিটা হচ্ছিলো এখনও ঠিক সেই অনুভুতি হতে লাগলো । কেউ যেন ওর তলপেটে আলতো করে আদর করছে ।
সময় যেন থেমে গেছে । জয়িটার মনে হল ওর তলপেটের আলতো আদরটা করাটা হঠাৎ করে তীব্র একটা ব্যাথার দিকে মোড় নিল । তারপর সেটা ধীরে ধীরে এতোই তীব্র হতে লাগলো যে জয়িতার সহ্যের বাইরে চলে এল । তারপরই সে জ্ঞান হারিয়ে পড়লো ।
পরিশিষ্টঃ
জয়িতা বিরক্ত নিয়ে আবার আবার
-তোমাকে না বলেছি এখানে ফোন না দিতে ।
ফোনের ওপাশ থেকে বলল
-এমন কেন করছো ? আমি তো চিন্তিত নাকি ? একটা কিছু তো করতে হবে ?
জয়িতা নিজের রাগটা দমন করে বলল
-তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না । আমি যা করার করবো !
-তোমার বাবা যদি জেনে যায় ! মানে আমি বলতে চাচ্ছি তার যা শরীরের অবস্থা এটা জানলে ?
জয়িতা খুব ভাল করেই জানে ওপাশের মানুষটা এই কথাটা কেন বলছেন । জাফর আহমেদ যদি এই কথাটা জানতে পারে তাহলে ওপাশের মানুষটার জন্য সেটা মোটেই কোন সুখের সংবাদ হবে না । জয়িতা বলল
-আমার বাবাকে নিয়ে তোমার এতো চিন্তার কিছু নেই ।
-না মানে ! তার শরীর .....
-তার শরীর এখন অনেকটা ভাল । মিথ্যা বলছি না সত্যিই অনেকটাই ভাল ।
-মানে !
-মানে হচ্ছে তিনি মরছেন না । এই টকু নিশ্চিত করেই বলতে পারি ।
ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না । এই নিরবতার কারন জয়িতা খুব ভাল করেই জানে । জয়িতা আবার বলল
-তবে তোমার ভয় পাওয়ার কারন নেই । যে ভয়টা তোমার ছিল সেটা কাল রাতেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ।
-মানে ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-তোমার কিছু বুঝতে হবে না ।
আর কিছু না বলেই জয়িতা ফোনটা কেটে দিল । তীব্র একটা মন খারাপ ওকে পেয়ে বসলো । যে প্রাণটা ছিল অনাকাঙ্খিত সেই প্রাণটার জন্য এতো মন খারাপ লাগবে জয়িতা কোন দিন ভাবতেও পারে নি । মানুষের মন কি অদ্ভুদ !
(সমাপ্ত)
আইডিয়া ফ্রম হরর স্টোরি প্রমটস
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৯ রাত ১১:২৮