মিতু ব্যাপারটা জানার পর থেকে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না । মনের ভেতরে একটা অস্বস্থি কাজ করছে । বারবার মনের ভেতরে কেবল একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে অপু ওকে কেন মিথ্যা বলবে ? তাও আবার এই ব্যাপারটা নিয়ে ! এমন একটা কথা যেখানে মানুষ লুকিয়ে থাকে সেখানে অপু কেন এমন কিছু হয়নি তবুও বলেছে । কারন টা কি ?
আজকে মিতু ঠিক করে রেখেছে যে অপু বাসায় আসলেই ওকে এই কথাটা সরাসরি জানতে চাইবে । জানতে চাইবে কেন ও এমন একটা মিথ্যা কথা ও কেন বলেছিলো ওকে সেদিন ?
সেদিনের কথা মিতুর এখনও পরিস্কার মনে আছে । বাসা থেকেই ওদের দেখা হওয়ার ব্যবস্থাটা করা হয়েছিলো । ঠিক হয়েছিলো দুজন আগে দুজনের সাথে কথা বলে নিক । যদি দুজনের মনে হয় তাহলে সামনে কথা বার্তা এগোনো যাবে !
অপুকে সেদিন মিতুর একটু নার্ভাস মনে হচ্ছিলো । ওর সাথে কথা বলতে যেন অপু একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে । ঠিক মত কথা বলতে পারছে না । এমন সময়ই মিতু কথাটা বলল ।
অপু কোকের গ্লাসটা মুখে নিয়েছে এমন সময় মিতু বলল,
-ইউনিভার্সিটিতে থাকতে আমার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল ।
অপুর চোখটা যেন একটু কেঁপে উঠেছিলো কথাটা শুনে । অপু বলল,
-তারপর ?
-আমার আসলে ইচ্ছে ছিল ওকেই বিয়ে করবো ।
-তাহলে ? কি সমস্যা ছিল ?
-আসলে ওর আরও একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল । আমার আড়ালে । ব্যাপারটা জানার পরেই আমি সরে আসি ! কিন্তু ...
অপু বলল
-কিন্তু ?
-আসলে সম্পর্কটা আমার দিক থেকে বেশ গাঢ় ছিল !
অপু বলল
-কতটা গাঢ় ?
অপুর কন্ঠ শুনে মিতুর আসলে বুঝতে কষ্ট হল না । অপু আসলে কি জানতে চাইছে সেটাও বুঝতে পারলো । মিতু বলল
-আমি বুঝতে পারছি আপনি কি জানতে চাইছেন ! মানে আমি ছেলেটার কত কাছে গিয়েছিলাম । মানে কোন ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল কি না, তাই না ?
অপুকে আবার খানিকটা বিব্রত মনে হল । মিতু বলল
-না । ঠিক আছে । আমার মতে বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে সব কিছু আগে থেকেই জানাই ভাল । তাই না । পরে অন্য কারো কাছ থেকে জানতে পারলে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে !
-জি !
মিতু বেশ কিছুটা সময় চুপ করে থাকলো । তারপর বলল
-হ্যা । আমাদের সম্পর্ক টা অতো গাঢ় ছিল ।
অপু কথাটা শুনে কিছু সময় কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-আসলে আমারও একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল কলেজ জীবনে । তারপর একটা সময় আমরা বেশ কাছে চলে আসি । আমারও ঠিক ঐ ব্যাপারটা হয়েছিল ।
তারপর আবারও কিছু সময় নিরাবতা । কেউ যেন কোন কথা খুজে পাচ্ছে না । তারপর অপু আবার বলল
-যাক, আমার কোন সমস্যা নেই । বিয়ের আগে যা হয়েছে, হয়েছে, এটা নিয়ে আমার কোন কথা নেই । জেনে নিলাম, সেটাই সেখানে শেষ । আমি চাইবো যে যদি আমাদের বিয়ে হয়, বিয়ের পর আমাদের মাঝে কোন গোপন কিছু থাকবে না ।
মিতুর কেন জানি তখন হঠাৎ মনে হল, এই ছেলেটার সাথে আরেকটা একটা চান্স নেওয়াই যায় ! সব ছেলে তো আর তার আগের প্রেমিকের মত হবে না ।
বাসায় এসে সে জানালো যে অপুকে তার পছন্দ হয়েছে । বিয়ের কথা বার্তা যেন আগে বাড়ানো হয় । তারপর মিতু আর অপুর বিয়ে হয়ে যায় বেশ দ্রুতই । তারপর তাদের বিবাহিত জীবন শুরু হয় । মিতু ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারে যে সেদিনের সেই পদক্ষেপটা মোটেই ভুল ছিল না । ওদের জীবনটা চমৎকার ভাবে কাটতে লাগছিলো । তবে মিতু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতে পারে যে অপু মেয়েদের ব্যাপার খুবই নাদাম একটা মানুষ । এমন কি বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেলেও অপু এখনও কেমন যেন একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে ওর সাথে কথা বলে ।
মিতু যখন অপুকে চুমু খায় কিংবা ওকে আদর করে ও খুব বেশি খুশি হয় কিন্তু নিজে থেকে কখনও কিছু বলতে পারে না । ব্যাপারটা মিতুর মজাই লাগে !
তারপরই সে একটা ব্যাপার জানতে পারে । অপু ওকে বলেছিলো যে বিয়ের আগে ওর একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল । কিন্তু মিতুর যতই ওর পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে লাগলো একটা ব্যাপার সে জানতে পারলো যে অপু ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের ব্যাপারে খুবই লাজুক । সে কোন ভাবেই মেয়েদের সাথে মিশতে পারতো না কিংবা কথা বলতে পারতো না । তাদের কাছ থেকে সব সময় দুরে দুরেই থাকতো ।
এবং একটা সময় সে সত্যি সত্যিই জানতে পারে যে অপুর কোন প্রেমিকা ছিল না কোন দিন । ওর মনে এও ধারনা হয়েছিলো হয়তো সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলো সেই সম্পর্কের কথা কিন্তু একটা সময় সেটাও বুঝতে পারে যে আসলেই অপুর আসলেই কোন প্রেমিকা ছিল না কোন দিন ।
এখন মিতুর মনের প্রশ্ন জেগেছে যে সেদিন তাহলে অপু কেন মিথ্যা বলেছিলো ! আজকে সেটা সে জিজ্ঞেস করবে ।
রাতের খাবার সময়ই অপুকে যখন প্রশ্নটা করা হল, মিতু দেখতে পারলো অপুর খাওয়া আটকে গেল । মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিকিকি বললে ? মানে কি বলছো ?
মিতু শান্ত ভাবে খেতে খেতে বলল
-যা শুনেছো ঠিকই শুনেছো ! আমি খোজ নিয়েছি, যে ছেলেটা কোন দিন ঠিক মত মেয়েদের সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারতো, এখনও ঠিক মত পারে না, নিজের বউয়ের হাত ধরতে গিয়ে লজ্জা পায় সেই ছেলে কলেজে থাকতে ....!
মিতু তাকিয়ে দেখলো অপুর মুখটা খুব বিব্রত দেখাচ্ছে । মিতু বলল
-আমাকে বল কেন মিথ্যা বলেছিলে ? কেন ? যেখানে এই ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চাওয়ার কথা তোমার । তাহলে এই মিথ্যা কথা কেন বলল ? প্লিজ বল !
অপু মাথা নিচ করে রইলো । প্লেটের খাবারে হাত দিয়ে নাড়তে লাগলো । মিতু বলল, আমি বলেছিলাম যে আমি আমার সাথে প্রেমিকের ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল তাই তুমিও এমন কিছু বলেছিলো ! তাই না ?
অপু কিছু বলল না । তবে মাথা ঝাকালো । কিছু সময় নিরবে কেটে গেল । তারপর অপু বলল, আমাদের সমাজে এই ব্যাপারটা জানো ভাল চোখে দেখা হয় না । আমার মনে হয়েছিলো যে তোমার সাথে এমন কিছু হয়েছিলো হয়তো এই ব্যাপারটা নিয়ে তুমি সামনের জীবনে তুমি আমার সামনে হীনমন্যতায় থাকবে !
মিতু বলল,
-তাই তুমিও এমন কিছু বলে দিলে !
-হুম ।
মিতু বলল
-তুমি বলেছিলো বিয়ের পরে আমাদের মাঝে কোন গোপন কিছু থাকবে না । কিন্তু তুমি ঠিকই গোপন করেছো এই কথাটা !
-সরি !
মিতু বলল
-আমিও সরি !
-কেন ? তুমি সরি কেন ?
-কারন আমিও কিছু লুকিয়েছি । সেদিন আমিও সব কিছু সঠিক ভাবে বলি নি । আমি আমার আসলে তোমার সাথে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিল না । একবার প্রতারিত হওয়ার পরে আমার কারো উপর ভরশা করতে মন চাইছিলো না । তাই ঠিক করেছিলাম যে এমন কিছু বলে তোমার সাথে বিয়ে টা ভেঙ্গে দিবো । এমন কিছু বলবো যাতে তুমি আমাকে অপছন্দ করো । আর ঐ ব্যাপারটা ... তুমিই তো বললে!
-তাই তুমি ঐ কথাটা বললে ?
-হুম ! আমি ওকে ভালবাসতাম কিন্তু ঐ ব্যাপারটা কোন দিন আমাদের মাঝে হয় নি । ও অনেক ভাবে চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারে নি ।
অপু খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । মিতুর বুঝতে কষ্ট হল না যে এই কথা শুনে অপু কতটা খুশি হয়েছে । অপু বলল
-আচ্ছা যা লুকানোর লুকিয়েছি । এখন আর আর না । আমি আর কোন দিন তোমার কাছ থেকে কিছু লুকাবো না ।
মিতু খানিকটা মুচকি হেসে বলল
-ছেলেদের বিশ্বাস নেই । আর যে ছেলে নিজের বউয়ের হাত ধরতে লজ্জা পায় সেই ছেলেকে তো বিশ্বাস করতেই নেই ।
-মানে ? কিসের সাথে কি ?
-এটাই ! বুঝছো এটাই !
অপু ঠিক বুঝতে পারলো না মিতু আসলে কি কথা বলছে । আর কেনই বা বলছে । মিতু এদিক দিয়ে অপুর বিব্রত মুখ দেখে মিতুর খুব মজা লাগছে । মনে মনে বলছে এই পাগল ছেলেটাকে সে ঠিক ঠিক লাইনে নিয়ে আসবে একদিন । আজকের রাতটা সেই নতুন সময়ের সূচনার প্রথম রাত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:২২