somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দুজনের গল্প (অনু গল্প)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ গুগল

রাতের বেলা আমার মনে হচ্ছিলো সুপ্তিকে ঐ মেসেজটা পাঠানো আমার মোটেই উচিৎ হয় নি । তবুও কেন যে আমি পাঠিয়ে ফেললাম আমি নিজেই জানি না । আমার কেবল মনে হয়েছে ওকে এই কথাটা না জানাতে পারলে হয়তো আমি দম বন্ঢ হয়ে মারা যাবো ।

প্রতিটা মানুষেরই কিছু নির্দিষ্ট পোশাকে তার স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগে । আবার অন্য ভাবে বললে কিছু কিছু মানুষের চোখে অন্য মানুষকে কিছু নির্দিষ্ট পোশাকেই সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে । যেমন আমার পাশের বাসার মেয়েটি আমাকে প্রায়ই বলতো যে আমাকে নীল শার্টে বেশ লাগে দেখতে । যদিও নীল শার্ট আমার কোন দিনই পছন্দের ছিল না । আমার চোখে নিজেকে নীল শার্টে ততটা আকর্ষনীয় মনে হয় নি কিন্তু ঐ মেয়েটির চোখে মনে হয়েছিলো নিশ্চয়ই ।

গত পরশুদিন ও ফেসবুকে নিজের একটা চমৎকার ছবি দিয়েছিলো । নীলচে ছাই রংয়ের জামা পরেছিলো । জামার ভেতরে লালা ফুলের কাজ করা । সেই সাথে লাল ওড়না আর লাল রংয়ের সেলোয়ার ! আমার কাছে কেবল জানি মনে হল সুপ্তি যদি এই জামাটার সাথে লাল চুড়িদার অথবা লাল লেগিংস পরতো তাহলে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগলো । আমার চোখে অন্তত ।

আমার কি মনে হল আমি কিছু না ভেবে ছবিটা ওর ইনবক্সে সেন্ড কারলাম তারপর ওকে বললাম কথাটা । কথাটা বলেই মনে হল মোটেই বলা ঠিকখয় নি । সুপ্তির সাথে আমার ক্লাসে সরাসরি মোটেই কথা হয় না । মাঝে মাঝে চোখাচোখি হয় আর টুকটাক কথা বার্তা । ফেসবুকে তার ছবি দেখি, লেখা পড়ি সেও আমার ছবি দেখে লেখা পড়ে । এছাড়া আমরা এক সাথে বসে কোন দিন গল্প করেছি কি না সেটাও আমার মনে পড়ে না আর আমি কি না ওকে এই কথা বলে ফেললাম ! মনে হতে লাগলো সুপ্তি চাইলেই এই ইনবক্স নিয়ে ওর বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করতে পারে, আমার সেখানে কিছুই করার থাকবে না ।

তবে আমাকে খানিকটা নিশ্চিন্ত করে দিয়ে সুপ্তি আমার ইনবক্সে উত্তর দিল । ও লিখলো যে টাইট ফিটিং কিছু ও ঠিক পরে না । আমি খানিকটা নিশ্চিত হলাম । মনে হল যে সুপ্তি আমার কথায় রাগ করে নি এটাই অনেক বড় কিছু ।


কিন্তু সব থেকে বড় সারপ্রাইজ টা পেলাম যখন দেখলাম সুপ্তি ঐ পোশাকটা পরেই ক্যাম্পাসে এসেছে । এবং তারপর ওর পরনে সেই লাল রংয়ের সেলোয়ারটা নয় বরং লাল রংয়ের একটা লেগিংস পরা !
আমি আমার নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না !
বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো এও কি সম্ভব নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি ! কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! তবে মনের ভেতরে একটা তীব্র আনন্দবোধ হচ্ছিলো !

আমি কেবল কিছু সময় ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না । সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে কেবল মৃদ্যু স্বরে হাসলো । ওর চোখ যেন আমাকে বলছে যে, কি ! জনাব কেমন লাগছে আমাকে !

আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো যে তোমাকে সব থেকে সুন্দর লাগছে ! আমার দেখা সব থেকে সুন্দর মেয়েটি হচ্ছো তুমি !
কিন্তু বলতে পারলাম না । তবে আমার মনে হল আমার চোখের চাহনী দেখে ও ঠিকই বুঝে গেল !
পুরো ক্লাসের সময়টা আমার সময় সুযোগ পেলেই কেবল ওর দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম । বারবারই ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু ওর সামনে যেতে লজ্জা লাগছিলো এমন কি ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলেও কেমন যেন একটা লজ্জা অনুভব হচ্ছিলো । আমি চোখ সরিয়ে নিচ্ছিলাম ।
ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরে খুব বেশি করে ইচ্ছে ওর সাথে গিয়ে কথা বলি । ওকে আজকে এক কাপ কফি খাওয়াতে নিয়ে যাই । সব থেকে ভাল হয় ওকে নিয়ে এখন বই মেলার দিকে রওনা দেই । ওখানে খানিকটা ঘোরাঘুরি করে তারপর কোন কফি শপে বসে ওর গল্প করি ।

কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না । চোখের সামনে দেখলাম যে সুপ্তি ওর বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে চলে গেল । আমি তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । খুব মন খারাপ হয়ে গেল । ওর সাথে একটু কথা বলতে পারলে এতো ভাল লাগতো !

তারপরই আমার মোবাইলে একটা টুং করে মেসেজ বেজে উঠলো । সেখানে একটা মাত্র শব্দ লেখা !

"গাধা"

আমি খানিকটা সময় বোকার মত তাকিয়ে রইলাম মেসেজটার দিকে । কারন মেসেজটা যে নাম্বার থেকে এসেছে সেটা মোবাইলে সেভ নেই । কিন্তু আমি জানি মেসেজটা কে পাঠিয়েছে । আমাকে গাধা কেন বলল ? কি গাধার কি কাজ করলাম ?

তারপর আবারও মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো । সেখানে একটা লাইন লেখা "বইমেলায় যাচ্ছি"

সুপ্তি বই মেলাতে যাচ্ছে । এটা সে আমাকে নিজে জানানোর মানে হচ্ছে ও চাচ্ছে আমি যেন বই মেলাতে যাই । এবার ওর গাধা বলার কারনটা আমি বুঝতে পারলাম । আমি আর দেরি না করে সোজা ক্যাম্পাসের গেটের দিকে রওয়ানা দিলাম ।

গেটের কাছে গিয়ে ভাবছি কিভাবে যাবো মেলাতে তখনই আমাকে অবাক করে আমার সামনে একটা রিক্সা এসে থামলো । রিক্সাতে সু্প্তি বসে ছিলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-উঠে আসো ! গাধা !

আমি কেবল হাসলাম তারপর সুপ্তির পাশে উঠে বসলাম !

রিক্সা যখন চলতে শুরু করলো আমার কাছে মনে হল এই পুরো শহরকে চিৎকার করে জানিয়ে দেই । একটা মাইক ভাড়া করে বলি "দেখো আমার দিকে তাকিয়ে । আমার পাশের পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী মেয়েটি বসে আছে"

রিক্সা চলতে থাকে বইমেলার দিকে । সেই সাথে চলতে থাকে আমার দুজনের গল্প !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:১১

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না : ড. ইউনূসের মনে কেন এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯


দৈনিক সমকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর বরাতে আমরা জানতে পারি —প্রশাসন, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই—নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক গভীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×