আমি এখন আর রাস্তায় বের হই না । কারো সাথে কথা ঠিক মত কথা বলি না । আরও ভাল করে বললে তারা আমার দিকে কেমন চোখে তাকায় । আমি তাদের কে কত ভাবে বলার চেষ্টা করেছি যে আমি কোন ভাবেই দোষী নই । আমার কোন দোষ নেই । আমার সাথে যা ঘটে গিয়েছে সেটার জন্য আমি কোন ভাবেই দায়ী নই । কিন্তু তাদেরকে আমি কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারি নি । তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি নিজে আমার মেয়েকে হত্যা করেছি । আমি যাদেরকে আমার জীবনের সব থেকে বেশি ভালবাসতাম তাদেরকে আমি হত্যা করেছি ।
আমার জীবনটা খুব স্বাভাবিক ছিল । ভালবাসাময় স্ত্রী আর আমাদের আদুরে মেয়েকে নিয়ে আমার জীবন কেটে যাচ্ছিলো খুব চমৎকার ভাবে । শহরের একেবারে শেষ মাথায় আমি বসবাস করতাম । একটা কাঠের দোতলা বাসাতে আমি তাদের কে নিয়ে বসবাস করতাম । জীবনের সব খুশি ছিল আমার কাছে । সকালে কাজে যাওয়ার আগে আমার বউয়ের ঠোঁটে চুমু খেতাম । তারপর মেয়েকে খুব করে আদর করে বেরিয়ে পড়তাম কাজে । আমার কাজের জায়গাটা নিজের বাসা থেকে একটু দুরে ছিল । এমন কি শহর থেকেও খানিকটা দুরেই আমি বসবাস করতাম । একটু শান্তিতে থাকতে চাইতাম সব সময় । এটা নিয়ে অবশ্য আমার পরিচিত মানুষ গুলোর মাঝে একটু কানা ঘুষা চলতো । আমি কেন এতো দুরে থাকি । আমি কেন সবার কাছ থেকে দুরে থাকতে চাই । তারা এই ব্যাপার নিয়ে অনেক কথা বলতো কিন্তু আসল কারনটা কোন দিন কেউ জানতে পারে নি । কোন দিন জানতে পারবেও না ।
আমার শহর থেকে এতো দুরে থাকার প্রধান কারনটাই ছিল আমার গোপন উপাসনা চালিয়ে যাওয়া । কাজটা চলতো আমার স্ত্রী সারজিনার ইচ্ছেতেই । সে ছিল শয়তানের উপাসক । তাকে ভালবেসে বিয়ে করার সময়ও আমি এসবের কিছুই জানতে পারি নি । কিন্তু যখন একবার যখন তাকে ভালবেসে ফেলেছি তখন আর আমার পক্ষে কোন ভাবেই তাকে ছেড়ে আসা সম্ভব ছিল না । আমি যেকোন মূল্যেই তার সাথে থাকতে সম্মত হলাম ।
তারপরই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল । আমরা এক সাথে বসবাস করতে শুরু করলাম । শহর থেকে অনেক দুরে আমি একটা বাসা নিলাম ।সারজিনা তখনও তার শয়তানের প্রতি উপাসনা চালিয়ে যেত । আমি তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে । আমার চোখে আর কিছুই ছিল না । কেবল আমার মনে হত আমি ওকে সব থেকে বেশি ভালবাসি । ওর জন্য সব কিছু করতে পারি । তাই করাও শুরু করলাম ।
প্রতি পূর্ণিমাতে সারজিনার দরকার ছিল একজন যুবতীর রক্ত যার বয়স তখনও ২০ পার হয় নি । এমন একজন মেয়ে আমাকেই খুজে আনতে হত । যদিও খুব একটা কষ্ট হত না কাজটা করতে । আমি যেখানে কাজ করতাম সেটার থেকে একটু দুরে একটা জায়গা ছিল যেখানে প্রায়ই কিছু মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম । তাদের মধ্যে একজন কে তুলে নিয়ে আসতাম । এমন মেয়ে যারা শহর থেকে হারিয়ে গেলেও কারো কিছু যেত আসতো না । কেউ তাদের খোজ নিত না । আমিও তাদেরকে নিয়ে আসতাম ।
বাকি কাজটা সারজিনাই করতো । আমাকে কিছু করতে হত না । মাঝে মাঝে কোন কোন মেয়ে আমাদের খাঁচা থেকে পালিয়ে যেত । কিন্টু শহর থেকে আমাদের বাসাটা এতোটাই দুরে যে সে বেশি দুর পালাতে পারতো না । সারজিনাই খুব দ্রুত তাকে খুজে নিয়ে আসতো । এবং তখন মেয়েটার অবস্থা বর্ণনা করার মত থাকতো না । তার ভেতরে কোন মতে প্রাণ থাকতো আটকে তবে খুব বেশি সময়ের জন্য না । কিন্তু একদিন একটা মেয়ের বেলাতে একটু ঝামেলা হয়ে গেল । আমাদের খাঁচা থেকে সে পালিয়ে গেল । এবং বনের ভেতরেই হারিয়ে গেল । সারজিনা তাকে সারা রাত ধরে খোজাখুজি করলো । আমিও বের হলাম কিন্তু মেয়েটাকে খুজে পেলাম না । তবে তাকে পাওয়া গেল ভোর রাতের দিকে । কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা মারা গেছে । বনের ভেতরে কোন হিংস্র জন্তুর আঘাতে মেয়েটা মারা গেছে । শরীরের বেশ কিছুটা অংশ কেউ খেয়ে ফেলেছে ।
মৃত দেহটা দেখে সারজিনা খুব বিমর্ষ হয়ে গেল । কারন এই মাসে তার উপাসনাটা ঠিক মত সমাপ্ত হয় নি । সে শয়তানকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি । সে মনে মনে খুব ভয়ে ছিল । আমি তাকে খুব করে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাতে কিছুই কাজ হল না । সে খুব ভয় পাচ্ছিলো ।
আমি ওকে শান্তনা দিয়ে শুইয়ে দিলাম বিছানাতে । সারা রাত ওর অনেক পরিশ্রম গিয়েছে । ওর একটু ঘুম দরকার ছিল । তারপর ড্রয়িং রুমে বসে বসে সিগারেট খেতে শুরু করলাম । যদিও আমার বাসাতে সিগারেট খাওয়া মানা ছিল বাসাতে । সারজিনার থেকেও আমাদের ৫ বছরের মেয়ে ইমু ব্যাপারটা একদম পছন্দ করতো না । তবুও নেশ বলে একটা ব্যাপার ছিল । আমি স্বাধারনত বাসার বাইরেই ধূমপান করতাম । কিন্তু আজকে বাসাতেই শুরু করে দিলাম । ঠিক এই সময়েই দেখতে পেলাম ইমু নিচে নেমে আসছে । আমি দ্রুতই সিগারেট টা লুকিয়ে ফেললাম । সিগারেটা নামিয়ে রাখলাম পর্দার পেছনে । তারপর ইমুকে কোলে নিয়ে আবারও আদর করতে করতে ওর রুমে নিয়ে গেলাম । ওকে আরও কিছুটা সময় ঘুমাতে বললাম । আরেকটু সকাল হলে আমি ওকে নাস্তা বানিয়ে দিবো বলে ওকে আবারও বিছানাতে শুইতে দিলাম ।
ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আবার ফিরে এলাম বসার ঘরে । তখনই আমার ফোনে ফোন এসে হাজির হল । আমাকে তখনই বাসা থেকে বের হতে হল । তখন কেবল ভোরের আলো ফুটতেছে । আমি বাইরে বের হয়ে এলাম । বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলাম । ওরা সবাই এখন ঘুমুচ্ছে । কেউ এসে দরজা আটকাতে পারবে না ।
আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম । সকালে কাজে যাওয়ার আমাকে আরেকটা কাজে যেতে হবে । একজন গুরুত্বপূর্ন মানুষের সাথে দেখা করতে হবে । মাঝে মাঝেই আমাকে এই লোকটার সাথে দেখা করতে যেতে হয় । দরকার হলে সে আমাকে ফোন করে । ঘন্টা দুয়েক পার হয়ে গেল সেখানেই । যখন আবার আমি বাসার ফিরতো পথ ধরলাম তখনই আবিস্কার করলাম আমার সামনে সামনে একটা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কারন এই রাস্তায় আমার বাসা ছাড়া আর কারো বাসা নেই । মনের ভেতরে একটা কু ডেকে উঠলো । আমি দ্রুত গাড়ি চালাতে শুরু করলাম ।
তারপরই আমি দেখতে পেলাম সেই অকল্পনীয় দৃশ্য । আমার বাসাটা তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে । আমি গাড়ি দাড় করিয়ে কেবল সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার মাথায় কিছু আসছিলো না । কিভাবে আগুন লাগলো আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না । তারপরেই মনে হল সারজিনা কি বলেছিলো । সে বলেছিলো শয়তানে উপাসনা ঠিক মত হয় নি । তাই তাকে শাস্তি পেতে হবে । কিন্তু আমি ঠিক গুরুত্ব দেই নি । তবে কেমন করে আগুন লাগলো সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারি । আমি সিগারেট টা রেখেছিলাম পর্দার আড়ালে ইমুর কাছ থেকে লুকানোর জন্য । সেটা আর নিতে আমার মনে নেই । সেই আগুনেই পুরো বাড়িতে লেগেছে ।
কিন্তু সামান্য ঐ সিগারেটের আগুন কি পুরো বাড়িটাকে জ্বালিয়ে দিতে পারে ?
সত্যিই কি শয়তান সারজিনাকে শাস্তি দিয়েছে !
তারপরই সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকাতে লাগলো ! আমি কেবল করে এই সকালবেলা বাইরে ছিলাম যখন আমার স্ত্রী আর মেয়ে ঘরের ভেতরে আগুনে পুড়ে মারা গেল । অনেকে বলতে লাগলো আমি শুরু থেকেই অন্য রকম ছিলাম । আমার ভেতরে অদ্ভুদ কিছু লক্ষ্য করেছে আগে থেকেই । আমিই হয়তো আমার স্ত্রী আর মেয়েকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলেছি ।
কিন্তু আমি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না । সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকাতে থাকে ! যেন আমিই ওদেরকে মেয়ে ফেলেছি । কিন্তু আসল সত্যটা কেউ জানে না । কেউ বিশ্বাস করতে চায় না । আমার কোন দোষ নেই । যদি শয়তানের ঐ ব্যাপারটা আমি বাদও দিয়ে দেই তবুও আমি নির্দোষ । যা ঘটেছে সেটা কেবলই দুর্ঘটনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৬