somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ অসমাপ্ত গল্পরা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি গুগল

-মিতু আপনি যাবেন নাকি ?

ক্যান্টিনে বসে লাঞ্চ করছিলো আর মোবাইলে ফেসবুকটা ব্রাউজ করছিলো মিতু । আওয়াজ শুনে মুখ তাকালো । ওর কলিগেরা বসে আছে ওর পাশেই । কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলো । মিতুর লক্ষ্য মোবাইলের দিকে থাকায় সেটা সে বুঝতে পারে নি । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
-হ্যা কি বলছিলেন ?
-বলছিলে যে আপনি কি অফিসের পর ফ্রি ?

মিতু একটু চিন্তা করলো । তারপর বলল
-হ্যা তেমন কোন কাজ নেই বাসায় যাওয়া ছাড়া ।
-তাহলে চলুন আমাদের সাথে !
-কোথায় ?
-আমরা যাচ্ছি । চলুন ভাল লাগবে ।

মিতু কিছু আগেই চাকরিতে জয়েন করেছে । এখনও কলিগদের সাথে তেমন ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে ওঠে নি । তাই রাজি হয়ে গেল বাইরে যাওয়ার জন্য । এক সাথে চাকরির বাইরেও যদি ঘোরাফেরা করে তাহলেই অফিসে একটা চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হবে সবার সাথে ।

অফিসের পরে ওরা কয়েক জায়গাতেই ঘুরে বেড়ালো এক সাথে । তারপর একটা সময়ে একটা আর্ট গ্যালারীর সামনে এসে হাজির হল । ওরা জানালো যে আজকে অনিক রায়হানের ছবি প্রদর্শনী চলছে এই আর্ট গ্যালারিতে । কথাটা শুনতেই মিতু যেন একদম জমে গেল । বারবার মনে হল এখানে এভাবে চলে আসাটা মোটেই উচিৎ হয় নি ওর । এখনই চলে যাওয়া উচিৎ !

কিন্তু যেতে পারলো না । যন্ত্রের মত এগিয়ে চলল আর্ট গ্যারালির দিকে । বুকের ভেতরে একটা ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো ও । ওর কেন জানি মনে হল আজকে অনিকের সাথে ওর ঠিকই দেখা হয়ে যাবে । এই কয়টা বছর ও অনিকের কাছ থেকে নিজেকে একদমই লুকিয়ে রেখেছে । ওর আর অনিকের মধ্যে যা শেষ হয়ে গেছে তারপরেও যদি আবার ও অনিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতো তাহলে নিজের কাছেই ও ছোট হয়ে যেত । বিশেষ করে ও নিজেই যখন অনিকের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলো ।


অনিকের ছবি তোলার হাত শুরু থেকেই খুব ভাল ছিল । মিতুর সাথে ওর প্রথম পরিচয়টাও এই ছবি তোলা নিয়েই হয়েছিলো । মিতু সেই বই মেলা চলছিলো । মিতু ঘুরে ঘুরে স্টলে বই দেখছিলো এমন হঠাৎ একটা অচেনা ছেলে ওর কাছে এসে বলল
-আচ্ছা দেখুন তো এই ছবিটা কেমন হয়েছে ?

মিতু খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে । ছেলেটার মাথায় সম্ভবত কোন সমস্যা আছে । কিন্তু ক্যামেরার দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠলো । কারন ক্যামেরার স্ক্রিনে ওর নিজের ছবি দেখা যাচ্ছে । মিতুর মেজাজটা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে গেল । ছেলেটা ওর অনুমতি না নিয়েই ছবি তুলেছে । মুখটা রাগান্বিত হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো । কিন্তু ছেলেটার সেদিকে কোন লক্ষ্য নেই । সে একের পর এক ছবি দেখিয়েই যাচ্ছে ।

মিতু বলল
-আপনার সাহস তো কম না ? আপনি আমার ছবি কেন তুলেছেন ?
-আরে আমি একজন ফটোগ্রাফার । যা দেখি, পছন্দ হলেই ছবি তুলি !
-তাই বলে আমার কাছে অনুমতি না নিয়ে ছবি তুলবেন ?
-আরে বাবা এখন অনুমূতি নিচ্ছি । যদি ছবি পছন্দ না হয় মুছে দেব । নো বিগ ডিল ! আগে আপনি দেখুন তো ! ঐ জায়গাতে বসে দেখুন ।

সামনে একটা বসার জায়গা দেখালো । মিতু কিছু বলতে গিয়েও বললো না । কারন ক্যামেরার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিজের ছবিটা দেখতে পেল । ছবিটা বেশ ভাল হয়েছে । এক বার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তারপর হাত থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে নিল । বেঞ্চটার উপর বসে ছবি গুলো দেখতে লাগলো ।
কম করে হলেও ছেলেটা ওর গোটা পঞ্চাশেক ছবি তুলেছে । এবং প্রায় সব গুলো ছবিই ওর পছন্দ হল । এতো চমৎকার ছবি ওর কেউ কোনদিন তুলে দেয় নি । যে রাগটা ছবি সেটা নিমিষের গায়েব হয়ে গেল । ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
-এভাবে বিনা অনুমতি কারো ছবি তোলা উচিৎ নয় তবে ছবি খারাপ তুলেন না আপনি ।
-আমি জানি তো !

বলেই ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিল । বলল
-আমার নাম অনিক রায়হান । আপনি ?
-মিতু । আমি ছবি গুলো কিভাবে পাবো ?
-আপনার ফেসবুক আইডি দেন । আমি পাঠিয়ে দেব ?


তারপর থেকেই মিতুর সাথে ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো । মিতু আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলো অনিক ওকে পছন্ড করতে শুরু করেছে । এবং ও নিজেও ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছে । এভাবেই আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্কটা চমৎকার ভাবে এগিয়ে চলছিলো । দেখতে দেখতে অনিকের গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গেল । মিতু তখন আশা করেছিলো এবার অনিক চাকরির জন্য চেষ্টা করবে । একটা চাকরি হয়ে গেলেই বাসায় ওর কথা বলতে পারবে ।

কিন্তু মিতু অবাক হয়ে জানতে পারলো যে অনিকের চাকরি বাকি করার কোন ইচ্ছে নেই । ও ফটোগ্রাফিকে নিজের পেশা হিসাবে নিতে আগ্রহী । এটা জানার পরে ও যেন আকাশ থেকে পড়লো । মিতু কেবল ভেবেছিলো যে অনিক কেবল শখ থেকে ছবি তোলে কিন্তু এমন একটা পাগলামো সে করতে পারে সেটা মিতুর মাথাতেই আসে নি ।
মিতুর সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা সময় লাগে নি । একটা সময় ও অনিককে বলেছিলো ও যদি নিজের সিদ্ধান্ত না বদলায় তাহলে ওর পক্ষে কিছুতেই আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না । কথাটা শোনার পরে অনিক খানিকটা আহত চোখে তাকিয়ে রইলো । মিতুর সেই চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খানিকটা ছোট মনে হয়েছিলো । ছবি তোলার পেছনে অনিকের আবেগটা কত সেটা সে জানে আর নিজের ভবিষ্যতের জন্য সে অনিকের স্বপ্নটাকে ও কত সহজেই না ছেড়ে দিতে বলল । তারপর আর অনিকের সাথে ওর দেখা হয় নি । কেবল জানতে পেরেছিলো অনিক বাইরে গিয়েছে ফটোগ্রাফির কোন একটা কোর্স করতে ।

কদিন একটু কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু তারপর মিতু ভুলে গিয়েছিলো । ভুলে যেতে হয়েছিলো । তারপর মিতু নিজের পড়াশুনা শেষ করলো । এভাবেই দিন কারছিলো । তারপর একদিন হঠাৎ জানতে পারলো অনিক রায়হান নামের একজন ফটোগ্রাফার শহরে খুব বিখ্যাত হয়েছে । কয়েকটা প্রদর্শনীও হয়েছে । প্রত্যেকবারই সব গুলো ছবি বিক্রি হয়ে যায় প্রথম দিনই । এই অনিক যে কোন অনিক সেটা চিনতে খুব একটা কষ্ট হয় নি ।

মিতু আর্ট গ্যালারির ভেতরে ঘুরতে লাগলো । ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো এমন সময় একটা ছবির দিকে ওর চোখে চলে গেল । ছবিটার দিকে তাকিয়ে ওর আবারও বুকের ভেতরে অন্য রকম একটা অনুভূতি হল হল । কারন ছবিটা ওর নিজের ছবি । কিন্তু এতো ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে ভাল করে না তাকালে চেনা যাচ্ছে না । ছবিটা অনেক দিন আগে তোলা । ছবিটার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো ও । মিতুর হঠাৎ কেন যেন কান্না এল খুব । কি করবে ঠিক মত বুঝতেও পারলো না । এখনই কি চলে যাবে এখান থেকে?

সেই সময়ই দেখতে পেল অনিককে । কি হাস্যোজ্জল চেহারা অনিকের । সবার দিকে তাকিয়ে আছে আত্মবিশ্বাস নিয়ে । ওকে ঘিরে ধরেছে ওর ভক্তরা । ভেতরে ওর কলিগরাও আছে ।

মিতু কেবল তাকিয়ে রইলো সেদিকে । সেদিন যদি অনিককে ওভাবে দুরে ঠেলে না দিত তাহলে আজকে হয়তো এই ভীড়ের দিকে নিশ্চিন্তে এগিয়ে যেতে পারতো ও । নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা নিয়ে এতোই যে চিন্তিত ছিল যে অন্য কিছু তার চোখেই পড়ে নি ।

ভালোবাসার গল্প গুলো এভাবেই অসমাপ্ত রয়ে যায় হয়তো !



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:২০
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×