ছবিঃ গুগল
প্রতিদিন আমি যখন বাসায় ফিরি তখন আমাকে চাবি দিয়েই দরজা খুলতে হয় । কারন তৃষার বাসায় আসতে আসতে আমার থেকেও বেশ খানিকটা দেরি হয় । ওর অফিসে সেই আশুলিয়ার দিকে । আমার কাজ থাকে মগবাজার । কতবার বলেছি ওকে বাসা আরেকটু সরিয়ে নিয়ে যাই । এমন জায়গাতে নিয়ে যাই যেন ওর আসা যাওয়ার সুবিধা হয় কিন্তু কে শোনে কার কথা !
আমি কাজ শেষ করে একটু আগে আগে আসতে পারলেও ওর কোন দিনই দশটার আগে বাসায় আসতে পারে না । কিন্তু আজকে চাবি ঢুকিয়ে দরজা খুলতে গিয়েই টের পেলাম দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । এর মাঝে হচ্ছে তৃষা আগেই চলে এসেছে বাসায় । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও নয়টাও ঠিক মত বাজে নি । একটু অবাক হলাম । সেই সাথে একটু ভয়ও জাগলো মনে । ওর কিছু সমস্যা হল না তো আবার ।
আমি দ্রুত কলিংবেল চাপলাম । একটু পরেই দরজা খুলে গল । তাকিয়ে দেখি তৃষা আমারই একটা টিশার্ট গায়ে দিয়েছে । এইকাজটা ও প্রায়ই করে । আমার টিশার্ট ও প্রায় সব সময়ই পরে । নিচে আর সাদা রংয়ের একটা লেগিংস পরা । ওর হাতের বড় কিচেন চামছ দেখেই বুঝতে পারলাম ও রান্না করছে ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-তুমি কখন এলে ?
-এসেছি অনেক আগেই । আমার দিকে তাকিয়ে বলল ক্ষুধা পায় নি তোমার ?
তৃষা খুব একটা রান্না করে না । ও খুব একটা খাওয়া দাওয়াও করে না । এক বেলা কোন মতে খাওয়াতে পারি ওকে জোর । বেশির ভাগ সময়ে ফল জুস খেয়ে কাটায় । ও হঠাৎ আজকে খাওয়ার কথা বলছে । ও নিশ্চয়ই রান্না ঘরে রান্না করছিলো । তার মানে কি আজকে কোন স্পেশাল দিন ?
আমি ভুলে গেছি ?
খাইছে আমারে ! আজকে আমার তাহলে খবরই আছে !
আমি চট করে মনে করার চেষ্টা করলাম । একবার মনে করলে অবশ্য বিপদ কারানো যাবো । কারন আমার স্টকে সব সময় গিফট হিসাবে চকলেট মজুত থাকে । তাই বিশেষ দিনটা কি সেটা মনে করতে পারলেই আমি বেঁচে যাবো !
আজকে কি ওর বার্ড ডে ?
নাহ । ওটা তো জানুয়ারিতে ।
আজকে আমাদের ম্যারেজ ডে ?
না তাও না !
আজকে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল কিংবা কথা ?
নাহ । তাও না ।
তাহলে ড্যাড কিংবা মমের জন্ম দিন ?
-নাহ । সেটা হলে তারা আসতো এখানে ?
তাহলে কি এমন বিশেষ দিন যে তৃষা এতো আয়োজন করছে । তৃষা ছুটির দিন গুলোতে আমার জন্য প্রায়ই রান্না করে । ও বাইরের খাবার একদমই খায় না । তাই ছুটির দিনে আমরা বাসাতেই বিশেষ রান্নার আয়োজন করি । তাহলে আজকে কি ?
আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না । আজকে আমার খবর আছে !
সত্যি সত্যিই খবর আছে !
ইয়া উপরওয়ালা আমাকে রক্ষা কর !
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তৃষা বলল
-কি হল দাড়িয়ে আছে কেন ? যাওয়া ফ্রেশ হয়ে এসো । আমি খাবার দিচ্ছি !
আমি ভিত মুখের ওয়াশরুমে গিয়ে হাজির হলাম । ওয়াশ রুমে থাকতে থাকতেই মাথায় একটা বুদ্ধি এল । কোন বিশেষ দিন সেটার কথা আমি মুখে আনবো না । এমন একটা ভাব করবো যে আমি সব জানি । তারপর ওকে চকলেট গিফট করবো । তৃষা চকলেট পছন্দ করে খুব । চকলেট পেয়ে ও খুশি হয়ে যাবে । আশা করা যায় আর কিছু জানতে চাইবে না । যে ভাবা সেই কাজ ।
ফ্রেশ হয়ে আমি চকলেট নিয়েই টেবিলে এলাম । ততক্ষণে খাবার দেওয়া হয়েছে । খাবারের মেনু দেখে আমি সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । আমার পছন্দের কাচ্চি রান্না হয়েছে । এর মানে হচ্ছে আজকে তৃষার মন খুব বেশি ভাল । এবং সে আমাকে খুশি করতে চাচ্ছে । এমনিতে আমার তেল জাতীয় খাবার খাওয়া একদম নিষেধ ।
একবার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আমি পুরান ঢাকাতে কাচ্চি খেয়েছিলাম । আর সেই কথা কিভাবে যেন ওর কানে পৌছে গেল । ব্যাস আর কোথায় যাবো । প্রথমে সে কি চিৎকার চেঁচামিচি । রাতে শুতে গিয়ে দেখি ও চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে । আমাকে জড়িয়ে ধরে তখন তার সে কি কান্না ! তার একই কথা যে আমি কেন আমার স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখি না । আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে কি নিয়ে থাকবে !
আমি কি বলবো খুজে পাই নি । আমার পুরো জীবনে আমাকে কেউ এতো তীব্র ভাবে কেউ ভালবাসে নি । আমি সেদিন থেকে প্রমিজ করেছি যে ওর পছন্দের বাইরে কোন খারাব খাবো না । অন্তত যে খাবার গুলো শরীরের জন্য ভাল নয় সেগুলো তো মতেই খাবো না । আজও সেই প্রমিজ রেখে চলেছি ।
আমি বসতে বসতে চকলেট টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম । ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় তারপর বলল
-তো তুমি ভাবছো আজকে কোন বিশেষ দিন তাই এতো আয়োজন ?
কি বলবো খুজে পেলাম না । তৃষা বলল
-এটা তোমার স্টকেই রেখে যায় । বলা যায় আবার কবে কোন বিশেষ দিনের কথা ভুলে যাও । তখন কি হবে !
আমি এতো স হজে ধরা পড়ে যাবো ভাবি নি । বললাম
-আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না । আজকে কি আসলেই কোন বিশেষ দিন ?
তৃষা হাসলো । তারপর বলল
-বিশেষ দিন তো অবশ্যই ।
-কি বিশেষ দিন ? আমি না সত্যিই মনে করতে পারছি না ।
তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমার মন ভাল খুব । কেন ভাল জানো ?
-কেন ?
-কারন তুমি ? তুমি আমার জীবনে এসেছো এই জন্য ভাল । এখন চুপচাপ খাওয়া শুরু করতো ।
-আহ বল না !
তৃষা কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-গত পরশুদিন কামাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল, তাই না ?
কামাল ভাই আমার কলিগ । কালকে তাদের ম্যারেজডে ছিল । তাই সবাইকে অফিসের পরে দাওয়াত দিয়েছিলো । তৃষাকে বলেছিলাম তবে ও আসতে পারে নি । আমাকে একাই যেতে হয়েছে ।
আমি বললাম
-হ্যা ছিল ।
-কামাল ভাইয়ের স্ত্রী আমার কলেজ ফ্রেন্ড । ও তোমাকে চেনে । ও ফোন দিয়েছিলো । তুমি যে এখনও আমাকে করা প্রমিজটা রেখেই চলেছো এটা জানালো ।
আমি কাচ্চি মুখে তুললাম । একদম পার্ফেক্ট স্বাধ । ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে ।
কামাল ভাইয়ের দাওয়াতে অনেক এই রকম খাবার ছিল । সবই বাইরে থেকে এসেছিলো । আমি সেগুলোর কিচ্ছু খাই নি । অল্প কিছু ফল ফ্রুট খেয়েছিলাম । কামাল ভাই আমাকে অনেক অনুরোধ করেছিলো কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত সেগুলো কিছুই খাই নি । তৃষা সেটা জানতে পেরেছে । সেটা জেনে সে খুশি হয়েছে খুব । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোমার সাথে আরও ১০০ বছর বেঁচে থাকতে হবে না !
-ইস ! ডং ! খাও তো চুপ করে !
আমাদের খুনশুটি গল্প এগিয়ে চলে খেতে খেতে । সেই শুরুর দিন গুলোর মতই ওর সাথে কথা এগিয়ে চলে । আরও এগিয়ে যাবো অনেক গুলো বছর ।
মাঝে মাঝে মনে হয় এই মেয়েটার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে । তৃষা ছাড়া সব কিছু একেবারে মূল্যহীন । আসলেই আমি ওর সাথে সর্বোচ্চ সময় ধরে, এক সাথে বেঁচে থাকতে চাই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৮