প্রাচীর খুব রাগ হচ্ছে । রীতিমত কষ্ট হচ্ছে ওর রাগ সামলাতে । চোখের সামনে যা আছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে । রাগ বেশি উঠলেই ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় । তখন দম বন্ধ হয়ে আসে । ও যখন বুঝতে পারলো যে রাগটা ঐদিকেই যাচ্ছে তখন নিজেকে শান্ত করার সর্বাত্ত্বক চেষ্টা চালিয়ে গেল । কিন্তু কোন লাভ হল না । ও জানে একটু পরেই ওকে ইনহেলার নিতে হবে ঠিক মত নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ।
প্রাচী চাচ্ছে না রাগটা সেদিকে যাক । কিন্তু চাইলেও সেটা নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে যখন সব কিছু ঠিক হতে যাচ্ছিলো তখন কেন তার আবার যোগাযোগ করতে হবে ?
কেন হ্যালো বলতে হবে ?
কেন ?
কিছুটা সময় যে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো । এটা হচ্ছে ওর রাগ নিয়ন্ত্রনের একটা উপায় । কোন কিছু না করা । সব কিছুর উপর থেকে নিজে চিন্তা দুরে টেনে নিয়ে গিয়ে কেবল যে কারনে রাগটা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবা । এবং রাগের পেছনের কারন গুলোর একটা যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দাড় কড়ানো । কিন্তু আজকে সেই কাজ করতে গিয়ে যেন হিতে বিপরীত হল । তার রাগ যেন আরও বাড়তে লাগলো ।
বারবার কেবল তার একটা কথাই মনে হচ্ছে । সে নিজে কেন তাকে নিয়ে এতো ভাবছে ? কেন ভাবছে ? রাগটা কি তার নিজের উপর নাকি ঐ মানুষটার উপর সেটাই ঠিক মত ধরতে পারছে না । একবার মনে হচ্ছে রাগটা ঐ মানুষটা উপর । এতোদিন পরে সে কেন আবার নক দিল আবার মনে হচ্ছে রাগটা হচ্ছে নিজের উপর । সে নিজেক কেন মানুষটা কে নিয়ে এতো ভাবছে । সে ভাবার মত কেউ না ।
তারপরই মনে হল আসলেই কি কেউ না ?
ফোন বাজছে অনেক সময় ধরে । প্রাচীর ধরতে ইচ্ছে করছে না । ও জানে ফোনটা কে করেছে । এই জন্যই ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছে না । কিন্তু এও জানে যে যত সময় ফোনটা ধরবে না তত সময়ে রাফান ফোন করেই যাবে । এই ছেলেটার মাঝে কেন এতো ধৈর্য্য কে জানে ? অবশ্য রাফানের ধৈর্য্য আছে বলেই ও এখনও প্রাচীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে । অন্য কেউ হলে কবেই অন্য রাস্তায় চলে যেত ।
শেষে ফোনটা রিসিভই করলো । একটু কঠিন কন্ঠে বলল
-কি হল ? এতো বারবার ফোন কেন দিচ্ছো ? একদিন না বলেছি ফোন ধরলে দুইবারের মধ্যেই ধরবো । নয়তো ধরবো না । এতো বারবার ফোন দেওয়ার কি হল ?
কথা গুলো বলতে গিয়েই প্রাচীর নিঃশ্বাস শেষ হয়ে এল । ইনহেলারটা টেবিলের উপর ছিল । একবার ইচ্ছে হল সেটা না নেয় । ওর রাগের কারনে মরে যেতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু বেশি সময় সেটা না করে পারলো না । ফোনটা এক পাশে রেখে টেবিলের উপর থেকে ইনহেলারটা হাতে নিল । তারপর কিছুটা সময় বসে রইলো এক ভাবে । ওর রাগ এখন কেন জানি কমতে শুরু করেছে । লম্বা করে একটা টান দিল ইনহেলারে । বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল ।
ফোনটা আবারও কানে নিয়ে বলল
-আছো ?
সাথে সাথেই উত্তর এল ।
-হুম । রাগ উঠেছে কোন কারনে ?
-হুম !
-কার উপর রাগ উঠলো শুনি ?
-জানি না ।
-বলতে চাও না ?
-এতো কথা বল না । বলতে ইচ্ছে করছে না । কেন ফোন দিয়েছো ? আমার মাথা ধরেছে ।
-কোন কারন নেই ।
প্রাচীর ও পাশ থেকে নিরবতার মাঝেও একটা ছোট্ট দির্ঘ্যশ্বাস লুকানোর শব্দ শুনতে পেল । প্রাচীর একটু মন খারাপ হল । কন্ঠটা একটু শান্ত করে বলল
-শুনো রাফান এখন কথা বলতে লাগছে না । পরে কথা বলি ?
-আচ্ছা ।
-মন খারাপ কর না । তুমি জানো আমি এমনই ।
-হ্যা জানি । আচ্ছা শুনো ....
-হুম
-কালকে আম্মু বলছিলো কার্ডের ব্যাপারে তোমার কোন মতামত আছে কি না ?
প্রাচী কয়েকটা ডিজানইণ ঠিক করে রেখেছিলো । কিন্তু এখন এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । বলল
-আমার কোন পছন্দ নেই । তুমি যেটা ভাল বোঝ ঠিক কর ।
-সিওর ?
-হ্যা । আমি রাখছি ।
রাফান কে আর দ্বিতীয় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই প্রাচী ফোন রেখে দিল । তারপর চিৎ হয়ে বিছানার উপর শুয়ে রইলো কিছু সময় । বার বার ঘুরে ফিরে সেই মেসেজটার দিকেই মন চলে যাচ্ছে । বারবার কেবল মনে হচ্ছে মানুষটা এতো দিন পরে কেন তাকে ফোন নক দিলো । কি এমন দরকার ছিল ? এই প্রশ্নটা থেকে কিছুতেই নিজেকে বের করতে পারছে না । এই জন্যই রাগটা হচ্ছে ওর । শেষে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । নিজের মোবাইলটা হাতে নিল ।
#####
-কি করছেন ?
-কিছু না ।
-শান্তিতে আছেন ?
-হুম । আমি সব সময় শান্তিতেই থাকি ।
-আর অন্যদেরকে অশান্তিতে রাখেন ?
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেল প্রাচী । তারপর অপু বলল
-তুমি দেখি আগের মতই আছো ? একদম একটুও বদলাও নি ।
-তো আপনি কি ভেবেছিলেন ? আপনার গল্পের প্রেমিকাদের মত ন্যাকা হয়ে যাবো । আপনি যা বলবেন সব শুনে যাবো চুপচাপ ।
প্রাচীর মনে ফোনের ওপাশ থেকে অপু হাসতে হাসতে নিচে পড়ে গেল । কিছু একটা পড়ার শব্দ সে শুনতে পেয়েছে । হাসতে হাসতেই অপু বলল
-তুমি আসলেই বদলাও নি ।
-কেন বদলাবো শুনি ? কার জন্য বদলাবো শুনি ? আপনার জন্য ?
-আরে আরে এর মাঝে আবার আমি এলাম কোথায় ?
-তাহলে আমাকে কেন ফোন দিলেন এতো দিন পরে ? কেন ? আমি আপনাকে ছাড়া খুব ভাল ছিলাম ।
-এখন ভাল নেই ?
প্রাচীর কথা হঠাৎ করেই আটকে গেল । কি বলবে ঠিক খুজে পেল না । নিজেই নিজের কাছে প্রশ্নটা করলো । একটা মেয়ের ভাল থাকার জন্য যা যা দরকার প্রাচীর সব আছে । রাফান নামের ছেলেটা ওকে সত্যিই ভালবাসে । সেটা কদিন বাদের তাদের বিয়ে হতে চলেছে । নিশ্চিন্তে রাফানের কাধে মাথা দিয়ে বাকি জীবনটা সুখে কেটে যাবে । অথচ সে চিন্তা করছে এমন একটা মানুষকে নিয়ে যার কাছ থেকে সারা জীবন সে কষ্টই পেয়েছে ।
হঠাৎ অপু বলল
-তোমার কাল ক্লাস আছে নাকি ?
-কেন ?
-না । আমি কাল তোমাদের ক্যাম্পাসের এলাকাতে যাবো একটু কাজে । ভাবছি তোমার সাথে অনেক দিন দেখা হয় নি । দেখা করা যাক ।
-আপনার সাথে আমি কেন দেখা করবো শুনি ?
-করবা না ?
-জি না । আপনি কাজে যাবেন । কাজ শেষ করে চলে যাবে ।
-আচ্ছা ! কাজ শেষ করে চলে আসবো । তোমার সাথে দেখা করবো না । ঠিক আছে ?
প্রাচীর মনে হল ওপাশ থেকে মানুষটা যেন ওর সাথে কথা বলে খুব মজা পাচ্ছে । প্রাচী রাগ করে আবারও ফোন কেটে দিল । তারপর সাথে সাথেই নাম্বার টা ব্লক লিস্টে দিয়ে দিল । আর এই মানুষটাকে সে ফোন দিবে না । কোন দিবে না ।
ছোট বেলা থেকে প্রাচী একটু রগচটা টাইমের মেয়ে । মেয়েদের স্বভাব সুলভ নমনীয়তা ওর ভেতর নেই । স্কুল থেকে কলেজ পুরোটা সময় ও কেবল সবার সাথে ঝগড়াই করে এসেছে । মুখের উপর সব কথা বলার জন্য ওর বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা অনেক কম ছিল । অবশ্য এতে প্রাচী নিজেই অনেক খুশি । ওর ভাষ্যমতে স্টুপিড আর ন্যাকা মানুষ গুলো আশে পাশে থাকার চেয়ে সে একা একা থাকতেই বেশি পছন্দ করবে ।
এভাবেই ওর জীবনটা চলে যাচ্ছিলো । সময়ই মানুষটার সাথে তার পরিচয় । ও তখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে । দিন গুলো এক ভাবেই কেটে যাচ্ছে । তখনই একদিন খোজ পেল ওর রুম মেট মোবাইল চোখের সামনে নিয়ে কাঁদছে । প্রথমে মনে হল হয়তো কোন দুঃখের মুভি দেখতে কিংবা ওর মন খারাপ এই জন্য কাঁদছে । কিন্তু কিছু সময় পরে ও আবিস্কার করলো যে ওর রুমমেট আসলে একটা গল্প পড়ে কাঁদছে । তাও আবার কোন বিখ্যাত লেখকের গল্প না । কোথাকার কোন ফেসবুকে গল্প লেখে এমন একজন । রুম মেটের উপর এমন মেজাজ খারাপ হল । ইচ্ছে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় ।
কিন্তু তারপরই মনে হল যে আগে সে গল্পটা পড়ে দেখবে যে কি এমন গল্প যে সেটা পড়ে এতো বড় একজন থাপিস মেয়ে কাঁদছে । সে মোবাইলটা নিয়ে গল্প পড়া শুরু করলো ।
পনের মিনিট পরে যখন প্রাচী গল্প শেষ করলো তখন ওর মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হল । বারবার মনে হল এই ঘোড়ার দিমের গল্প পড়ে কান্নার কি হল । গল্পে লেখক মেয়েটাকে এমন নমনীয় করে উপস্থাপন করেছে যে সেটা পড়েই প্রাচীর আরও বেশি রাগ হল । নিজের রুমমেটের উপর রাগতো হলই, তার থেকে বেশি রাগ হল ঐ লেখকের উপর । খুব ঝাড়ি দিতে ইচ্ছে করলো ।
আইডি খুজে পেতে খুব একটা সমস্যা হল না । তারপর সেই আইডিতে গিয়ে খুব কড়া করে কিছু কথা লিখলো । কথা গুলো লেখার পর ওর রাগ যেন একটু কমলো । এই ঝাড়ি টুকু না দিলে হয়তো প্রাচীর রাতে ঘুমই আসতো না ।
পরদিন সকালে প্রাচীর জীবনটাই অন্য রকম হয়ে গেল । এখনও মাঝে মাঝে মনে হয় ঐদিন রাতে যদি সে কড়া করে এই মেসেজ না পাঠাতো তাহলে কি ওর জীবনটা একম হত ? হয়তো হত না । তবে প্রাচী শুনেছে জীবনে যার সাথে তোমার পরিচয় হওয়ার কথা তার সাথে তোমার ঠিক ঠিক ভাবেই পরিচয় হয়েই যাবে । আর প্রাচী এখনও বিশ্বাস করে তার জীবনটা অপূর্ণ রয়ে যেত যদি এই মানুষটার সাথে তার পরিচয় না হত ।
পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই শুনতে পেল ওদের ডিপার্টমেন্টের এক পলিটিক্যাল বড় ভাই নাকি ওর খোজ করছিলো । ওকে দেখা করতে বলেছে । প্রাচীর কোন ধারনা ছিল না কেন ওকে দেখা করতে বলেছে । তবে একটু ভয় ভয় করছিলো । আর দেখা যে করবে না সেটারও উপায় নেই । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল বড় ভাইরা দেখা করতে বললে দেখা করতেই হয় ।
ভয়ে ভয়ে প্রাচী হাজির হল । ওদের ক্যাম্পাসের মধ্যে বেশ কয়েকটা পুকুর । সাঁন বাধানো পুকুর পাড় । অনেকেই সেখানে বসে আড্ডা দেয় । আজকে এখানে প্রাচী এসে হাজির হয়েছে । মোট দুইজন । একজনকে সে আগে থেকেই চেনে । সরকারী দলের বড় নেতা । আর তার পাশের জন্য ...
পাশের জনের দিকে চোখ যেতেই প্রাচী সব বুঝে ফেলল যে ওকে কেন এখানে ডেকে আনা হয়েছে । গত কাল রাতে সে যে লেখক কে ঝাড়ি দিয়েছিলো এই সেই লোক । আজকে তার খবর আছে বুঝতে বাকি রইলো না । ওর পলিটিক্যাল বড় ভাই ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে কেন এখানে ডেকে এনেছি জানো ?
প্রাচী কোন কথা বলল না । কেবল মাথা ঝাকালো ।
-এ হচ্ছে অপু । আমারই বন্ধু । ও তোমার সাথে কয়েকটা কথা বলতে চায় । কোন সমস্যা আছে ?
প্রাচীর খুব করে ইচ্ছে করলো বলতে যে খুব সমস্যা আছে । আমি যার তার সাথে কথা কেন বলব কিন্তু সেটা আর বলা হল না । সে পলিটিক্যাল কারো চোখে খারাপ হতে চায় না । এবারও সে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে কোন সমস্যা নেই ।
ওদের কে রেখে সেই পলিটিক্যাল ভাই চলে গেল । সামনে বসা মানুষটা বেশ কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-দাড়িয়েই থাকবে ? চাইলে বসতে পারো এখানে এসে ।
অপু সিমেন্টের বেঞ্চটা দেখালো । প্রাচী আবারও মাথা নেড়ে বলল যে সে ওখানেই ঠিক আছে ।
অপু বলল
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো কোন কারনে ?
প্রাচী কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । অপু আবার বলল
-তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমাকে ধমকানোর জন্য এখানে ডেকে এনেছি তাহলে ভুল হবে । আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি ।
প্রাচী এবার চোখ তুলে তাকালো অপুর দিকে । মোটা ফ্রেমের চশমার পেছনে চোখ দুটোর দিকে সরাসরি তাকালো । অপু বলল
-আমার কালকে তোমার ম্যাসেজটা পড়ে কেবল মনে হল তুমি কোন কারনে আমার উপর রেগে আছো ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন রেগে আছো । এই টুকু বলবে কি আমাকে ?
প্রাচী বলল
-রেগে নেই । তবে আপনার উপর মেজাজ খারাপ হয়েছে খুব ।
-কেন ? কি এমন করলাম আমি শুনি ?
-মেজাজ গরম হয়েছে গল্পে আপনার মেয়েদের চিত্রায়ন দেখে । কেন সব সময় মেয়েদের ওমন ন্যাকা ন্যাক হতে হবে আর নরম আর নমনীয়ই বা কেন দেখাতে হবে ? আপনার গল্প পড়লে মনে হচ্ছে পৃথিবী মেয়েরা আসলেই কেবল সব কিছু মুখ বুঝে স হ্য করার জন্য ? কেন একটা মেয়ে মুখ ফুটে বলতে পারবে না যে সে ভালবাসে ? কেন ?
অপু বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো প্রাচীর দিকে । কি বলবে ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারছে না ।
-আপনাদের ন্যাকা মেয়ে গুলো খুব পছন্দ তাই ?
-না তা হবে কেন ?
-তাই তো মনে হয় ! কেন আপনার কেন সব ছেলেদেরই এমন মেয়ে পছন্দ যে কোন দিন তার কথার উপর কথা বলবে না । যা সে বলবে মেয়েটি তাই মাথা পেতে নিবে !
অপু হেসে ফেলল । প্রাচী বলল
-হাসছেন কেন ? আমি হাসির কোন কথা বলেছি ?
-না । বল নি । আসলেই আমারই ভুল । এবার থেকে এটা মাথায় রাখবো ।
-আমি যেতে পারি এখন ?
-আরে ? অনুমুতি কেন নিচ্ছো ? তোমার যখন ইচ্ছে তখন চলে যেতে পারো । তবে তোমার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো ।
প্রাচী আর কোন কথা না বলে গেল । পরদিন রাতেই অপু ওকে মেসেজ করে জানালো যে এবারের গল্পটার মেয়েটি মোটেই নমনীয় নয় । ব্যাস এই টুকুই । প্রাচী ভেবেছিলো যে হয়তো এবার লিংক দেবে গল্পের কিন্তু সেই লিংক দিল না । এতে করেই প্রাচীর কৌতুহল বেড়ে গেল । নিজের মনকে শাসন করলো । প্রথমে মনে হল সে কিছুতেই ঐ গল্প পড়বে না । কিন্তু কৌতুহল মেটাতে না পেরে নিজেই খোজ করলো । খুব বেশি খুজতেও হল না ।
গল্পটা শেষ করে কিছুটা সময় কেবল থ হয়ে বসে রইলো । ও যখন গল্পটা পড়ছিলো তখন ওর কেবল মনে হচ্ছে যে সে নিজের কথা গুলো কেবল পড়ছে । অপু নামের মানুষটার সাথে তার কথা হয়েছে কয়েক মিনিট মাত্র এর ভেতরে মানুষটা যেন ওর ব্যাপারে সব কিছু বুঝে ফেলেছে । তার কেবলই মনে হয়েছে সে কিভাবে এতো কিছু জানে ?
তখনই মেজেস আসলো আবার । সেই একই আইডি থেকে । একটা কথাই লেখা "গল্প পছন্দ হয়েছে ?"
প্রাচী কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না । হঠাৎ করেই ওর মনে হল যেন কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে ওর ভেতরে ... কিন্তু সেই পরিবর্তনটা সে ঠিক ধরতে পারছে না ।
সেই থেকে শুরু । একটা সময় প্রাচী আবিস্কার করতে শুরু করলো যে অপুর প্রোফাইলেই বেশি বেশি ঘোরাঘুরি করছে । সে কি লিখছে কিংবা তার পছন্দ অপছন্দ সব প্রাচীর ভাল লাগছে । প্রতিদিন তার সাথে দেখা করা কথা বলা ছাড়া যেন তার ঘুমই আসতো না । নিজের মাঝেই এই পরিবর্তন দেখে সে অবাক হচ্ছিলো তবে নিজেজে পরিবর্তন করার কোন চেষ্টা সে করলো না বরং যেমনটা চলছিলো ওর মন যেমনটা চাইছিলো তেমন করেই এগিয়ে যাচ্ছিলো । নিজের অনুভুতি গুলো সে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলো না, রাখলেও না । বলে দিল তাকে । আর তখনই সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেল ।
প্রাচী যেন একবারে ছেলে মানুষ হয়ে গেল অপুর মানা করাতে । অপু ওকে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করলো ওর জীবনে অন্য কেউ আছে । এভাবে কি চাইলেই ওর সাথে সম্পর্কে জড়ানো যায় নাকি । কান্না কাটি করেই ওর দিন কাটতে লাগলো । কিন্তু আসল সত্যটা সে আরও কয়েকদিন পরে জানতে পারলো । অপু ওর ভালবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনের কারনটা ছিল মিথ্যা । অপু একটা মেয়েকে সত্যি ভালবাসতো তবে সেই মেয়েটা এখন আর ওর জীবনে নেই । অনেক আগেই মেয়েটা ওকে ছেড়ে চলে গেছে । এটা জানার পর প্রাচীর নিজের কাছে নিজেকে বড় ছোট মনে হল ।
প্রথম কারনটা হলেও নিজেকে কোন রকম সে বুঝ দিতে পারতো যে তার একজন আছে বলেই সে তার ভালবাসাটা ফিরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন কি বলে নিজেকে বুঝাবে ?
তারপর থেকে নিজেকে আবার গুটিয়ে নিলো । অপুর কাছ থেকে একেবারে আড়াল করে ফেলল নিজেকে । প্রথম কয়েকদিন অপু ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো । তবে যখন প্রাচীর কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিলো না তখন সেও আস্তে আস্তে আর যোগাযোগ বন্ধ করে দিল । ধীরে ধীরে তার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে হয়ে এল ঠিক তবে মনের একটা অংশে রয়ে গেল । আজকের এই যোগাযোগের পর আবারও যেন
পরিশিষ্টঃ
প্রাচী আজকে নীল রংয়ের শাড়ি পরেছে । সোজা হাটছে পূর্ব দিকের পুকুর পাড়ে । জানে অপু সেখানেই আছে । আজকে তার কোন কাজ নেই । সে ক্যাম্পাসে এসে কেবল ওর সাথেই দেখা করতে । কত গুলো দিন পরে আবারও প্রাচীর সেই অনুভূতি গুলো ফিরে আসছে ।
গতকাল রাতেই প্রাচী ফোন করে ওর মাকে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে বলেছে । তারপর রাফানকেও একটা ম্যাসেজ করে জানিয়েছে ।
রাফানের জন্য একটু খারাপ লাগছিলো কিন্তু প্রাচী খুব ভাল করেই জানে এই সিদ্ধান্তটা সবার জন্য ভাল হবে । এখনও জানে না অপুর সাথে ওর সামনে কি হতে চলেছে কিংবা কি হবে কিন্তু তারপরেও অন্য কাউকে বিয়ে করা কিংবা তার জীবন অতিবাহিত করা প্রাচীর পক্ষে সম্ভব না । সে জীবনের প্রথম কেবল অপুকে ভালবেসেছিলো আর বাকিটা সময় কেবল তাকেই ভালবাসবে । তার মনে অন্য কেউ কোন জায়গা করতে পারবে না ।
এই তো অপুকে দেখা যাচ্ছে । সাঁন বাঁধানো পুকুড় পাড়ে বসে আছে । এক ভাবে পানির দিকে তাকিয়ে আছে । প্রাচী লক্ষ্য করলো ওর বুকের ভেতরটা তোলপাড় শুরু হয়েছে । আর এখনই কান্না আসতে শুরু করেছে । কি অদ্ভুদ এই অনুভূতি ! যার কোন ব্যাখ্যা নেই । ভালবাসার অনুভূতি গুলোর কোন ব্যাখ্যা থাকে না !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:১০