somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিচ্ছিন্ন ভালবাসা

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার প্লেটে মুরগির মাংস তুলে দিতে দিতে মা বলল
-তোর বাবা মামলা করবে বলছে ! কালই মামলা করবে বলে দিয়েছে!

প্লেটে ভাত তুলে নিতে নিতে আমি মায়ের দিকে তাকালাম। শান্ত কন্ঠে বললাম
-মামলা করে কি লাভ?
-আমাদের সাথে এমন একটা অন্যায় কেন করলো ওরা ? ওদের শাস্তি পেতে হবে না ?
আমি আবারও শান্ত কন্ঠে বললাম
-মা মিতু আমার সাথে থাকতে চাচ্ছে না । এটার ভেতরে অন্যায়ের কি দেখলে ? মনে কর আমিও যদি ওর সাথে থাকতে না চাইতাম তাহলে? যে কারো ভেতরেই এমন হতে পারে !
মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ লাল হয়ে গেছে । সে আমার দিকে তাকিয়ে রাগত কন্ঠে বলল
-আমরা কি কিছু বুঝি না ? সব বুঝি ! সব কটা কে জেলের ভাত খাওয়াবো । আমার ছেলের জীবন এমন ভাবে নষ্ট করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে ? সব থেকে বদমাইশ হচ্ছে মিতু মা । আমি জানি এটা ওর মায়ের জন্যই হয়েছে ।

আমি কিছু বললাম না । শান্ত ভাবে ভাত খেতে শুরু করলাম । কিন্তু কেন জানি গলা দিয়ে ভাত নামছিল না ঠিক মত । প্রতিবার ভাত খাওয়ার সময় মিতু আমার পাশে চুপ করে বসে থাকতো । ওকে খেতে বললেও কেন জানি খেতে চাইতো না । বলতো যে ও পরে খাবে । এটা নিয়ে কতদিন ওকে বকেছি কিন্তু সে কানেই তুলে নি । তার বক্তব্য ছিল আমার খাওয়ার সময় কোন কখন লাগে যেটা যেন চাওয়ার আগেই আমি হাতের কাছে পাই । আমি কত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে ভাত খেতে খেতেও সব কিছু এগিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু কে শোনে কার কথা । অবশ্য মিতুর এই কেয়ার নেওয়ার ভাব দেখে মা খুব বেশি খুশি ছিল । প্রথমে তো তার ভয়ই ছিল যে এতুটুকু একটা মেয়ে ঘরে নিয়ে আসছে । সব সামলাতে পারবে তো ! কিন্তু কয়েক দিনের ভেতরে মিতুর আচরন দেখে মায়ের সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে । আর সেই মিতু আমাকে তালাক নোটিশ পাঠিয়েছে ! ভাবতে কষ্ট হচ্ছে ! আমি তবুও জোর করে ভাত খেতে লাগলাম । একটু পরেই আবার অফিসের দিকে দৌড়াতে হবে । বাবা মাকে বোঝাতে হবে যে মামলা করে কোন লাভ নেই । যে থাকতে চাইছে না তাকে জোর করে ধরে রাখার কোন উপায় নেই।

এখন মা বাবা দুজনের মাথায় গরম । আমার বাবা খুব একটা রাগ করেন না । ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি । তিনি একদমই রাগ করেন না । তার উচু কন্ঠে কথা বলা আমি শেষ হবে শুনেছি সেটাও আমি ঠিক মনে করতে পারছি না । সেই বাবা গতকাল রাতে খুব চেঁচামিচি করেছে । কেন করেছে আমি জানি তবে সেটা এখানে করে কি লাভ? যাদের জন্য করেছে তারা এসবের কিছুই জানতে পারবে না ।

তবে আমি এখনও ঠিক ব্যাপারটা হজম করতে পারছি না । মিতু যে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে, ও যে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারে এটা আমার মাথায় কোন দিন আসে নি । বিয়ের পরে কোন দিন আমার মনেও হয় নি যে এই মেয়েটা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে !


পড়া লেখাতে আমি কোন দিনই ভাল ছিলাম না । অনার্স করেছিলাম অনেক কষ্টে, তাও নাম না জানা এক অখ্যাত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে। ইন্টারের পর কোন পাব্লিক ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারি নি । অবশ্য খুব যে একটা চেষ্টাও করেছি তাও না । আমার মনেই হত যে এতো ধৈর্য্য আমার নেই । কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য যে এতো ভাল হবে আমি ভেবে পাই নি । অবশ্য এটার জন্য কেবল যে ভাগ্য কে সম্পূর্ন ক্রেডিট দিলে হবে না । আমার বাবাকেও দিতে হবে । একটা সেকেন্ড ক্লাসের সরকারি চাকরী আমার ঠিকই জুটে গেল ।

আর তারপরেই আমার জীবনে মিতু এসে হাজির । মিতুর সাথে আমার যখন বিয়ে হয় তখন ও সবে মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে । এতো জলদি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ ছিল । প্রথম কারণটা ছিল; মিতুর বাবার যে ব্যবসাটা ছিল সেটা হঠাৎ করেই বিরাট লোকসানের সম্মুখিন হল । ওদের গোদাম ঘরে আগুন ধরলো । সেই ধাক্কাটা মিতুর বাবা ঠিক ভাবে নিতে পারলো না । একটা ছোট খাটো স্ট্রোক করে বসলো সে ।

বাবার শরীর খারাপ হলে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের সবার আগে যে চিন্তাটা সেটা হল মেয়ের বিয়ে দিতে হবে । বাবা থাকতে থাকতেই । তার উপর মিতুর ইন্টার মিডিয়েটের রেজাল্ট খুব একটা ভালও ছিল না । কোথাও সে চান্সও পায় নি । সব শেষ কারণটা হল আমার সরকারি চাকরি । যদিও সেটা ফার্স্ট ক্লাস না তবে খুব একটা খারাপও না । দুই দুইয়ে চার মিলতে খুব বেশি সময় লাগলো না । মাস খানেকের ভেতরেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল ।

আমার থেকে মিতুর বছর পাঁচেকের ছোট ছিল তবে সেটা মানিয়ে নিতে ওর মোটেই সময় লাগলো না । কয়েক দিনের ভেতরে আমরা এমন ভাবে প্রেম শুরু করে দিলাম যে আমার পরিচিত সব বন্ধু বান্ধন রীতিমত আমাকে হিংসা করতে শুরু করলো । ওর আচরন ঠিক আমার বউয়ের মত নয় বরং আমার প্রেমিকার মত ছিল । সারাটা সময় ছটফটে করতো । পুরো সংসারকে মাতিয়ে রাখতো । মা তো সবাইকে বলে বেড়াতেন ছেলের বউ তিনি আনেন নি, নিজের মেয়ে নিয়ে এসেছেন ।

দেখতে দেখতে কিভাবে দিন চলে যেতে লাগলো আমি বুঝতেই পারলাম না । বারবার মনে হত কপালে এতো সুখ কিভাবে লেখা ছিলো! সামনে কি কোন বড় রকম দুঃখ আমার জন্য অপেক্ষা করছে ?

আমার সেই দিনের কথা মনে আছে খুব ভাল করেই । ছুটির দিন । ওকে নিয়ে বের হয়েছি, এমন সময় ও আমাকে বলল যে ও ঢাকা বেড়াতে যেতে চায় । কয়েকদিন সেখানে ঘুরবে । এটা সম্ভব কি না ! আমি খুশি মনে রাজি হয়ে গেলাম ।
কিন্তু মিতু কেমন যেন করতে লাগলো । বলল যে আমার বাবা মা যদি কিছু মনে করে । মানে কদিন আগেই আমরা কক্সবাজার থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম । আর ঢাকাতে থাকা খাওয়ার ব্যাপারটা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ একটা ব্যাপার । তারা কি মনে করবে কে জানে ! আমি ওকে যতই বুঝাতে চাইলাম যে কোন সমস্যা নেই ও মানা করতে লাগলো । বললে কদিন পরেও হলেও চলবে । এতো ঘনঘন বেড়াতে যাওয়াটা ভাল দেখায় না ।

তারপরই আমার মাথাতেই বুদ্ধিটা এল । তখন বছর ঘুরে এডমিশনের সময় চলে এসেছে। আমি ওর কাছ থেকে ওর এসএসি আর এইচএসসির মার্ক শীট চাইলাম । ও কারণ জানতে চাইলেও ওকে কিছুই বললাম না। বললাম যে পরে বলব ।

আমি নিজেই ওর মেডিক্যালের ফর্ম ফিলআপ করে দিলাম । তারপর ওকে বুদ্ধিটা বললাম । ওকে মেডিক্যালের পরীক্ষা দেওয়ার অযুহাত দেখিয়ে ঢাকা নিয়ে যাবো । তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না । ওকে কদিন পড়াশুনা করতেও বলে দিলাম ।


ঢাকা ভ্রমন আমাদের বেশ হল । তবে প্রথম ঘটনা ঘটলো যখন মিতু মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেল । মিতু নিজের রেজাল্ট দেখেও নি । আমি রেজাল্ট দেওয়ার সপ্তাহ খানেক পরে কি মনে করে একবার চেক করতে গিয়ে দেখি ওর আসলেই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে চান্স হয়ে গেছে। নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না ।
মিতুকে বলার পর ও কিছুতেই বিশ্বাস করলো না । শেষ নিজে যখন দেখলো তখন ওর আনন্দ আর কে দেখে । আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম কিন্তু বাবার চেহারাতে কেমন যে একটা শঙ্কার ছায়া দেখতে পেলাম । তবে চারিদিকে এতো আনন্দ ছিল যে সেই শঙ্কা কোথায় উড়ে গেল ।

দেখতে দেখতে মিতু মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে গেল । প্রথম প্রথম সব ঠিক চলছিলো । আমি ওকে নিয়ে যেতাম । আবার ওখান থেকে নিয়ে আসতাম কিন্তু বছর ঘরতে না ঘুরতেই মনে হল কি জানি একটা সমস্যা হয়েছে । মিতু যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে । হয়তো মেডিক্যালের খুব চাপ ছিল । এই ডাক্তারি পড়া তো আর এতো সহজ না ।

সব থেকে বেশি বদলে যাওয়া দেখলাম মিতুর বাসার লোকজনদের । শ্বশুর মশাই ততদিনে আবারও নিজের ব্যবসাটা দাড় করিয়ে ফেলেছে । আগে ওদের বাসায় গেলে যেমন আদর যত্ন পেতাম একটা সময় লক্ষ্য করলাম সেটা আমি আর পাচ্ছি না । আমাকে যেন ওখানে ঠিক কেউ চাচ্ছে না এমন একটা অনুভুতি আমার হতে লাগলো ।

তারপরেই সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম । সপ্তাহ খানেক মিতুর সাথে কোন যোগাযোগ হল না । তারপরই আমার বাসাতে মিতুর ডিভোর্স লেটার এসে হাজির । আমি নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এমনটা হতেই পারে না । নিশ্বয়ই কোথাও কোন ভুল হয়েছে ।

আমি মিতুদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । অনেকটা সময় বসে থাকার পরে মিতুর বাবা রুমে ঢুকলো । আমাকে সে অনেক কথাই বলল । তাদের আসলে ওভাবে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নি । মেয়ের একটা ভবিষ্যৎ আছে । তার একটা ইচ্ছে আছে । তারা আসলে ভুল করে ফেলেছে ।
আসলে আমি জানি এই কথা সবই ছিল অযুহাত।আমি একটা সাধারন ২য় শ্রেনীর চাকুরি করি আর মিতু সেখানে হয়ে যাচ্ছে ডাক্তার! এই সমাজে মেয়ের থেকে ছেলে বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন হলে কোন সমস্যা নেই কিন্তু মেয়ে যদি ছেলের থেকে বেশি যোগ্য হয়ে যায় তাহলে সমাজ সেটা মেনে নেবে না। কথা শেষ হলে আমি মিতুর বাবাকে বললাম
-মিতুরও কি এই ইচ্ছে?
-হ্যা ।
-আমি কি শেষ একটা বার মিতুর সাথে কথা বলতে পারি? একটা বার?

মিতুর বাবা ঘরের ভেতরে চলে গেল । অনেকটা সময় পরে মিতুর মা ঘরে এসে বলল
-মিতু বাসায় নেই । ও ওর এক বান্ধবীর বাসাতে গেছে ।

আমার আর কিছু বলা হল না । আমি মিতুর সাথে দেখা না করেই চলে এলাম । তারপর খুব জলদি আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল । মিতুর সাথে আমার আর দেখা হয় নি । আমি বদলি নিয়ে ঝিনাইদাহ চলে এলাম । সেখানেই একা একা থাকি । কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না ।

মা বাবা আবারও আমার বিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলো তবে আমার আর কিছুতেই মন টানলো না । তাদের বলে দিলাম যে এসব যেন আর না করে ।

আমি মিতুকে আস্তে আস্তে ভোলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু খুব যে লাভ হচ্ছিলো সেটা বলবো না । ওর কিশোরী সুলভ চঞ্চল ভাবটা আমাকে খুব পীড়া দিত । মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করতো ওর কলেজের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকি । আড়াল থেকে ওকে একটু দেখে আসি । কিন্তু সেটা আর করা হয়ে ওঠে নি । আসলে ও ঠিকই করেছে । সে হবে ডাক্তার আর তার স্বামী হবে একজন সাধারন কর্মচারি । ঠিকই তো আছে । একটা ভাল জীবনের আশাতেই তো মিতু এটা করেছে । তার আশা পূরন হোক!

তারপর আমিও মানিয়ে নিতে শুরু করলাম । জীবনে সব কিছু আমার ইচ্ছে মত কিংবা মন মত হবে সেটা আর হতে পারে না । মানুষের জীবনের কেবল সুখই আসতে থাকবে এটা তো হতে পারে না । দুঃখও আসবে । এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম ।

তারপর দিন মাস বছর কাটতে লাগলো। দেখতে দেখতে দুই আড়াই বছর পার করে ফেললাম একা একা। তখন আমার পোস্টিং আবার অন্য এক জেলাতে । প্রতিদিন অফিস যাই। বাসায় আসি। অবসরে বই পড়ি । মাঝে মাঝে মা বাবা আসেন আমার বাসায় । আবারও আমাকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলেন । আমি এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেই । এই হয়ে গেছে আমার জীবন। বলতে গেছে একেবারে কিন্তু খারাপ না । কেবল মিতু ছাড়া আর সব কিছুই আমার আছে ।

আমি জানতাম মিতুর শূন্যতা কোন দিনই পূর্ণ হবার নয়। তাই বুঝি আবারও মিতু আমার জীবনে এসে হাজির হল। প্রথমবার যেমন অপ্রতাশিত ভাবে এসেছিল এবারও।

আমার একটা সীম রিপ্লেস করার দরকার ছিল । নতুন জায়গাতে তাই কাস্টোমার কেয়ারটা খুজে পেতে একটু সময় লাগলো । একদিন লাঞ্চ আওয়ারে গিয়ে হাজির হলাম । প্রয়োজনী কাগজ পত্র নিয়ে গেছি । গিয়ে দেখি সেখানে কেউ বসে নেই । দারোয়ান টাইপের লোকটা বলল ম্যানেজার সাহেবের আসতে দেরি হবে । তবে আরেকজন জুনিয়র অফিসর আছেন । উনি চলে আসবেন একটু পরে ।

আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম । সত্যি সত্যিই কিছু সময়েই এসে হাজির হল সে ।

আমি কেবল অপলক চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার চোখে বিশ্ময়ের সীমা নেই । এমন তো হতেই পারে না । মিতু এখানে কি করছে? এখানে তো কোন ভাবেই চাকরি করতে পারে না । ওর না মেডিক্যাল কলেজে থাকার কথা! পড়া কি শেষ হয়ে গেছে?

আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । কেবল চেয়েই রইলাম মিতুর দিকে। মিতু হাত বাড়িয়ে আমার কাজ পত্র গুলো নিয়ে নিল । তারপর নিজ থেকে আমার সিমের কাজটাও করে দিল । এই পুরো সময়ে আমি ওর দিক থেকে একটা মুহুর্তের জন্যও চোখ সরাই নি ।

আগের থেকে একটু যেন মোটা হয়েছে তবে চেহারাতে আর সেইকিশোরী সুলভ ভাবটা নেই । সেখানে এসেছে নারীত্বে পরিপূর্নতা ।
বারবার সেই একই প্রশ্ন আমার মনে আসতে লাগলো ।

মিতু এখানে কেন?
ওর তো এখানে থাকার কথা না !

কাজ শেষ করেও আমি চলে যেতে পারলাম না । যদিও বাইরে বেরিয়ে এলাম তবে সেটার সামনেই অপেক্ষা করতে লাগলাম । খানিক সময় পরে সেই দারোয়ান এসে বলল মিতু আমাকে ভেতরে গিয়ে বসতে বলেছে । ও যেন জানতো আমি বাইরে দাড়িয়ে থাকবো ।

ভেতরে সোফার উপরে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম । পুরোটা সময় কেবল মিতুর দিকেই আমার চোখ ! মেয়েটা শান্ত চোখে নিজের কাজ করে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে । আমি ছটফট করছি জানার জন্য ।

অফিস আওয়ার করে ও বের এল । আসার সময় আমার দিকে একবার তাকালো আমার দিকে ।
অর্থাৎ আমার উঠার সময় হয়েছে ।

আমাদের মাঝে কোন কথা হল না অনেকটা সময় । ওর অফিস থেকে একটু দুরেই একটা খোলা মাঠ ছিল । টাউন ফুটবল মাঠ । বিকেলে সেখানে অনেকমানুষের সমাগম হয় । অনেকে খেলা ধুলা করে ।

আমরা সেই মাঠের এক কোনেই বসে রইলাম অনেকটা সময় । মিতু চুপ করে বসেই আছে । কোন কথা বলছে না । আমিও চুপ করে ওকে দেখছি ! কত দিন পরে ওকে দেখলাম !

হঠাৎ মিতু বলল
-আমাকে ঘৃণা কর না ?
-করা উচিৎ কি ?
-অবশ্যই উচিৎ ! আমি খুব বাজে একটা মেয়ে !
-বুঝলাম । এখন বলবা তুমি এখানে কেন ? তোমার কি মেডিক্যাল পড়া শেষ?

মিতু কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল
-আমি মেডিক্যাল পড়া ছেড়ে দিয়েছি !
-মানে ? কি বলছো ?
-হুম ।

কিছু সময় বিরতি । তারপর মিতু আবার বলল
-ঐদিন যখন তুমি শেষ বারের মত আমাদের বাসায় দেখা করতে এলে তখন আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমি ডাক্তার হতে চাই না আমি তোমার সাথে থাকতে চাই । কিন্তু বাবা আর মায়ের জন্য আমি সেটা পারি নি । কোন ভাবেই পারি নি । মা আমাকে তার গা ছুয়ে শপথ করালেন যে আমি যদি তোমাকে তালাক না দেই তাহলে তিনি মারা যাবেন ! আমি কিছু বলতে পারি নি । আমার মনটা তখন তোমার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিলো কিন্তু বাবা মায়ের জন্য আমি আটকে রইলাম।

একভাবে কথা বলে মিতু যেন হাফিয়ে উঠলো । আমি দেখলাম সন্ধ্যার মৃদ্যু আলোতে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । ও সেটা লুকানোর কোন চেষ্টা করছে না । মিতু আবার বলল
-তোমার সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে আমার সব কিছু থেকে মনে উঠে গেল । কদিন ক্লাস করে মনে হল যে ডাক্তারির জন্য আমি তোমাকে হারিয়েছি সেই ডাক্তারি আমি পড়বো না । বাসায় চলে এলাম । মা অনেক চিৎকার চেঁচামিচি করতে চাইলেন তখন তাকে কঠিন গলায় বললাম, যে তোমাকে ছাড়তে বলেছিলেন ছেড়েছি আর কি চাও ? কন্ঠটা এতোটাই কঠিন ছিল যে মা নির্বাক হয়ে গেল । আমার সেই রূপ মা এর আগে কোন দিন দেখে নি । কোন কথাই বলতে পারলো না ।
আমার কেবল মনে হল যে এই জোর গলায় কথা গুলো যদি আমি আরও কদিন আগে বলতে পারতাম তাহলে জীবনটা হয়তো অন্য রকম হত ।

মিতু অঝোরে কাঁদতে লাগলো । আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম এক ভাবে ! ফোঁপাফোঁপাতেই বলল
-আমি লজ্জা আর আপরাধবোধ নিয়ে তোমার সামনে যেতে পারি নি । যদি তোমার সাথে এভাবে দেখা না হত তাহলে কোন দিন পারতাম কি না জানি না !

সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেক আগেই । মাঠের মানুষ জন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছ । মিতু একভাবে কেঁদেই চলেছে । আমি ওর হাত টা শক্ত করে চেপে ধরলাম ! আমার থেকে এই মেয়েটা যে কত বেশি কষ্ট সহ্য করে আছে যদি আমি আগে জানতে পারতাম !


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×