তৃষা ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল
-ড্রাইভার চাচা ।
-জি মামনি !
-আপনি এখান থেকে বাসায় চলে যান । আমি আমার এক বন্ধুর কাছে যাবো ।
-কিন্তু মামনি .....
ড্রাইভার কি বলল তার পুরোটুকু শোনার আগেই তৃষা গাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লো । সোজা হাটা দিল ওদের থেকে দুই গাড়ি পাশে একটা কালো প্রাডোর দিকে । ওর বুকের ভেতরে কেমন একটা অচেনা অনুভুতি হতে শুরু করলো । এইটা আগেও ও অনুভব করেছে । তৃষা আরও দ্রুত পা চালালো । এখন যদি সিগনালটা ছেড়ে দেয় তাহলে আবার কবে দেখা হবে কে জানে !
তৃষার গাড়িটা এতোক্ষন কাটাবন সিগনালে বসে ছিল । তৃষাও চুপচাপ বসে ছিল কানে হেডফোন লাগিয়ে । ঠিক তখনই পাশের গাড়ির কাঁচ দিয়ে একেবারে শেষের গাড়ির দিকে নজর গেল । কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলো না । ড্রাইভিং সিটে অপু বসে আছে । চুপচাপ গম্ভীর মুখে । এতো দুর থেকেও ওর চেহারায় একটা দুশ্চিন্তার রেখা ঠিক ঠিক দেখা যাচ্ছে । এখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ।
তখনই তৃষার মনে হল ছেলেটার সাথে কথা বলা দরকার । ছেলেটা বলেছিল যোগাযোগ রাখবে কিন্তু একেবারে যেন কোন খোজ খবর নেই । যে নাম্বারটা ছিল সেটা সব সময় বন্ধ থাকে ।
বেশ রোদ উঠেছে । তৃষার চোখে অবশ্য কালো রোদ চশমা টা লাগানোই আছে । তৃষা সোজা গিয়ে কালো প্রাডোটার দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসলো । বসেই তাকালো অপুর দিকে ।
অপুর গাড়ির দরজা খুলতেই সতর্ক হয়ে উঠেছিলো কিন্তু সামলে নিলো নিজেকে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে একটু অবাক হয়ে । এখানে ওকে কোন ভাবেই আশা করে নি । তৃষা পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনের সিটে তিনজন বসে আছে । একজনে সে খুব ভাল করে চেনে । বাবুল নাম তার । অন্যজনে চেনে না । মাঝে একটা ৭/৮ বছরের ছেলে । চোখ বন্ধ করে আছে । এমন ভাব করে আছে যেম ঘুমাচ্ছে । কিন্তু তৃষা ভাল করেই জানে যে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে না । তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ।
তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল
-কেমন আছো বাবুল ?
বাবুল দাঁত বের করে হাসলো ।
-জে আফা মনি ভালা আছি ! আপনে ভালা ?
-আর ভাল কই ? তোমার ভাইয়ের খবর কি ?
এইকথা শুনে বাবুল যেন খুব মজা পেল দাঁত টা আরও বিস্তৃত হল । এপাশের জন্য এতোক্ষন খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিল কিন্তু তৃষা এদের পরিচিত দেখেই পেশিগুলো শিথিল হয়ে এল । ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অপুর দিকে তাকালো আবার ।
-কোথা থেকে তুললেন একে ?
-কেন ?
-জানতে চাইছি !
-আজিমপুর থেকে !
-কোথায় নিয়ে যাবেন ?
-গাজীপুর !
-আমাকে যেখানে নিয়ে গেছিলেন ?
-হুম !
-আমিও যাবো !
তৃষা কিছুটা সময় তৃষার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল
-না ! তুমি এখনই নেমে যাবে । সিগনাল ছেড়ে দিবে এখনই !
-জি না, আমি নামবো না । দেখি আপনি কিভাবে নামান !
অপু কোন কথা না বলে তাকিয়েই রইলো মেয়েটার দিকে । এখনও ঠিক আগের মতই জেদি রয়েছে মেয়েটা । নিজের কাছেই একটু যেন অসহায় বোধ করলো । এমনিতেও টেনশনে আছে । যাকে তুলে এনেছে সে খুব বড়লোকের ছেলে । খবর ছড়িয়ে পড়তো খুব বেশি সময় লাগবে না । এর আগে যদি সেফজোনে ঢুকতে না পারে তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে । তার উপরে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না । এখন এই মেয়ে এসে হাজির । কোথা থেকে খোজ পেল কে জানে !
অপু খুব ভাল করেই জানে একে কোন ভাবেই গাড়ি থেকে নামানো যাবে না । শেষে নামতে গেলেই উল্টো ঝামেলা পাকাবে ! আরও কিছু চিন্তা করছিলো কিন্তু আর আগেই সিগনাল ছেড়ে দিলো । অপু গাড়ি ছুটালো শাহবাগের দিকে । ওখান থেকে ফার্মগেট হয়ে সোজা গাজীপুরের দিকে যেতে হবে ।
যখন গাড়িটা কোল্ডপার্ক রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করলো তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে । তৃষা এতোটা সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো তখনই বাবার ফোন এসে হাজির ।
-কোথায় তুমি ? গাড়ি থেকে ওভাবে নেমে গেছ কেন ?
-আব্বু আমি এক বন্ধুর বাসায় আছি ।
-তুমি এখনই বাসায় আসবে ! বল কোথায় আছো ?
-না বলবো না !
-দেখ তুমি কিন্তু আর ছোট্ট মেয়ে নেই । এরকম ছেলেমানুষী করবে না ।
-এক্সজেক্টলী । আমি এখন আর ছোট্ট মেয়ে নেই । আমি নিজের দেখাশুনা নিজে করতে পারি । তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না । আমার বন্ধুর কাছে আছি । ফিরতে রাত হবে । নাও ফিরতে পারি !
-তৃষা .......
তৃষা তার বাবার চিৎকার শুনতে পেল কিন্তু আর শোনার দরকার বলে মনে করলো না । লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিল । তারপর গাড়ি থেকে নেমে পড়লো একা একাই । তৃষার এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার এখানে আসা । এর আগে অবশ্য যখন প্রথমে এসেছিলো তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল । ওর পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো ছিল তার মুখে মেডিক্যালে টেপ আটকানো ছিল যাতে কথা না বলতে পারে ।
এখানে নামিয়ে ওকে একটা সামনের বাংলোর বাড়ির একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিলো । আজকে এই ছেলেটার হাত যদিও বাঁধা নেই তবে তৃষা জানে ওকে ঐ ঘরেই আটকে রাখা হবে । তারপর তার বাবার কাছে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হবে । যেমন টা ওর বাবার কাছে চাওয়া হয়েছিল ।
তৃষা আর অপুর ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম । অপুর ঠিক ওকে প্রথমে ভাল করে দেখে নি । বাবুলই ওকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিল মুখে ক্লোফর্ম আর মুখে টেপ দেওয়ার কাজটাও বাবুলই করেছিলো । কিন্তু যখন তৃষাকে ঘরের ভেতরে আটকে রাখার পর অপু ওর মুখের টেপটা খুলে দিল তখনই খানিকটা ধাক্কার মত খেলো যেন ।
খুব পরিচিত একটা মুখ । কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো মেয়েটার মুখের দিকে । তানিয়ার চেহারার সাথে মেয়েটার চেহারার অদ্ভুদ একটা মিল আছে । তানিয়ার সামনে চুল চলে আসতো সব সময় এই মেয়েটারও ।
রাতে যখন তৃষা খেতে চাইলো না তখন অপু নিজে থেকে এগিয়ে এসে খাওয়াতে । তবুও কিছুতেই খাবে না সে । মুখ খুলে দিয়েছিলো তাই এক মুখ থুথু ছিটিয়ে দিলো অপুর মুখের দিকে ।
অপু একটু অবাক না হয়ে পারলো না । আগেও এরকম কাজ করেছে সে । এখানে ধরে আনার পরে সবাই কেমন ভয়ে সিটিয়ে থাকে । অথচ এই মেয়ে কেমন জেদ ধরে আছে । একটু ভয় পাওয়া তো দুরের থাকুক গায়ের জোর দেখাচ্ছে । কিন্তু অপু কিছু করতে পারছে না । শেষে অপু বলল যে খাওয়ার পর সে নিজে তাকে বাসায় দিয়ে আসবে । এখনই । কিন্তু আগে খেতে হবে ।
এতো সহজে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে সেটা তৃষা ভাবতেও পারে নি । খাওয়া শেষ করে ওর হাতকড়া খুলে দেওয়া হল । যখন গাড়িতে উঠতেছিলো তখনও তৃষার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না আসলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে । যাত্রা পথে জানতে চাইলো তাকে কেনই বা ধরা হল আর কেনই বা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে !
অপু কোন কথা বলে নি । কেবল চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিলো । রাতের বেলা গাড়ি, রাস্তা ছিল ফাঁকা তাই বাসায় পৌছাতে খুব একটা দেরি হল না । অপু কোন কথা বলছে না দেখে তৃষা নিজের চোখ বন্ধ করেছিলো কিছু সময়ের জন্য । কখন ঘুম চলে এসেছিলো ও নিজের বলতে পারবে না । যখন আবার চোখ খুলল তখন তৃষা দেখে ওদের বাসার সামনে চলে এসেছে । গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল
-আপনার কোন ফোন নাম্বার আছে ?
-কেন ?
-আচ্ছা থাক । আপনি বরং আমার নাম্বারটা নিন !
এই বলে তৃষা নিজের নাম্বারটা দিল ওকে । এমন কাজ কেন করলো সেটা ও নিজেই জানে না । অপু ওর সাথে সারাটা রাস্তায় একটা কথাও বলে নি । কেবল মাঝে মাঝে ওর দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো আর পুরানো কিছু কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো । বুকের ভেতরে কেমন একটা ব্যাথাও অনুভব করছিল বারেবার ।
নিজের অনুভুতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিলো । ভেবেছিলো তানিয়াকে ও ভুলেই গেছে । মন থেকে বের করে দিতে পেরে খুব ভাল ভাবেই । কিন্তু কোথায় কি ! এই মেয়েটা আবারও ওকে কষ্টের সাগরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ।
অপু নাম্বার নিতে নিতে বলল
-তুমি সাবধানে থেকো !
-কেন ?
-কারন তোমার উপর আবার হামলা হবে । আর এবার কিন্তু আমি থাকবো না । কন্ট্রাক্ট অন্য কাউকে দেওয়া হবে । সে কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিবে না ।
অপু কোন কথা বলে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল
-আপনি কেন ছেড়ে দিলেন ?
-জানি না !
-বলেন !
-বাসায় যাও । হয়তো সামনে কোন দিন আবার দেখা হবে । তবে সাবধানে থেকো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
তারপর নিজের বাসার দিকে দৌড় দিল । সেটা তাও বছর খানেক আগের কথা ।
তৃষা বাংলোর বারান্দায় বসতে বসতে অপুর দিকে তাকিয়ে বলল
-এই কাজ আর কতদিন ?
-যতদিন চলে !
-অন্য কিছু ভাবেন ?
-কি লাভ ?
-আছে । অনেক লাভ আছে ।
বাবুল ফিরে এল একটু পরেই ।
-ভাই । পুলাডা ঘুমায়া আছে । রাইতের আগে উঠবো না মনে হয় ।
-হুম !
-আমি চইলা যামু ?
অপু কোন কথা বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । রোদ একদম কমে গেছে । আর কিছু সময়ের পরেই আধার নেমে আসবে । কি করা যায় সেটা ভাবতে লাগলো । তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবুল !
-জে আফা !
-তোমার ভাই তো এই কাজ ছাড়বে না । ঠিক করেছি তোমার দলে যোগ দিবো ! কেমন হবে ?
-খুব ভালা হইবে আফা ! আপনে থাকলে ভাইয়ের মন ভালা থাকে !
এই বলতেই অপু বাবুলকে ধমক দিয়ে বলল
-যা তুই ভাগ । রাতের খাবার খেয়ে আবার আসবি । রনিকেও নিয়ে যা !
বাবুল ধকম খেয়ে বিন্দু মাত্র রাগ করলো না । বরং দাঁতটা যেন আরও একটু বিস্তৃত হল । বাবুল চলে যেতেই তৃষা তাকালো অপুর দিকে । কেমন একটা হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । ছেলেটা যদিও মনটা গম্ভীর করে রাখছে বাবুলের মত অপুও জানে যে ও আসে পাশে থাকলে অপুর মন ভাল থাকে ।
-আচ্ছা একটা কথা জানতে চাইবো ?
-আমার উপর আর কোন হুমকি নেই ?
-হঠাৎ এই কথা জানতে চাইছো কেন ?
-আহা বলেন না । আছে কি না !
-নাহ ! আপাতত নেই । পরে অবশ্য আবার আসতে পারে । কিছু বলা যায় না ।
-যদি আবার আসে ! তখন ? তখনই কি আমাকে আগের মত বাঁচাবেন ?
এই কথার জবার না অপু কেবল তৃষার দিকে তাকালো । অপুর কোন কিছু মুখ দিয়ে বলতে হল না । অপুর চোখই বলে দিচ্ছে সে কি করবে । তৃষা কোন কথা না বলে আরও একটু সরে এল অপুর দিকে । গাঁয়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলো । কাছাকাছি থাকলে যে অপুর কেবল যে ভাল লাগে সেটা নয়, তৃষারও ভাল লাগে ।
তৃষাকে ফেরৎ পাঠানোর পরেই আবার যে তৃষার উপর হামলা হবে সেটা অপু খুব ভাল করেই জানতো । অপু যার হয়ে কাজ করে সে যখন জানতে পারে অপু কাজটা করে নি তখন একটু চিৎকার চেঁচামিচি করেছিলো, পরে অবশ্য আর কিছু বলে নি । এরকম কিডন্যাপিং তারা প্রায়ই করে । একটা হাত থেকে ছুটে গেলে খুব একটা যায় আসে না । তবে অপুকে এই কথাও বলেছিলো যে আমরা করি নি কিন্তু অন্য গ্রুপ ঠিকই করবে ।
তৃষার উপর হামলা হওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে । তৃষার সাথে যদিও একজন বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে তবুও ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছে । আগের মত সতর্কতাও আর অবলম্বন করা হচ্ছে না । ঠিক তখনই আবারও তৃষার গাড়ির উপর হামলা হল ।
ক্লাস শেষ করে তৃষার ড্রাইভারকে ফোন দিল গেটের কাছে আসার জন্য । গেট কাছে গাড়িটা আসতেই কোন কিছু না দেখে গাড়িতে উঠে বসলো সে । উঠে বসেই অনুভব করলো কিছু একটা যেন অন্য রকম ।
তখনই মনে পড়লো তার গাড়ির সামনে একজন বডিগার্ড থাকার কথা । সে গাড়িতে ওঠার সময় বডিগার্ড বাইরে বের হয়ে আসে প্রত্যেকবার কিন্তু আজকে বের হয় নি । আর সামনের ড্রাইভারকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছে । তৃষা যখন পুরোপুরি বুঝতে পারলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । দুপাশ দিয়ে আরও দুজন চড়ে বসেছে ।
ঠিক আগের মতই ওর মুখে কিছু একটা দিয়ে চেপে ধরলো কেউ !
তৃষার আর কিছু মনে নেই । কেবল জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই ওর মনে মাত্র এক মাসের ভেতরে আবারও কেমন করে এতো বড় বোকামী করলো সে । অন্য কারো চেহারা মনে না আসলেও কেবল অপুর চেহারাটাই ওর চোখের সামনে ভেসে এল । ছেলেটা ওকে সাবধান করেছিলো । কোথায় এখন সে !
----
তৃষার এবারের কিডন্যাপের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলো কালা মজনুর দলের লোকজন । কিডন্যাপিংয়ে দেশের ভেতরে রীতিমত অপ্রতিদ্বন্দীই বলা চলে । যে কাজ হাতে নেয় কোন ভাবেই সেটা অসমাপ্ত করে রাখে না । বিভিন্ন গ্রুপের ভেতরে রেষারেষি থাকলেও কেউ মজনু গ্রুপের সাথে লাগতে আসে না । কারন খুব ভাল করেই জানে এর ফল মোটেই ভালখবে না । প্রায়ই দেখা যায় এক গ্রুপ এক পার্টিকে কিডন্যাপ করেছে অন্য গ্রুপ তাদের কাছ থেকে সেই ভিটটিম থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপন আদায় করছে । কোন নিয়মের ভেতরে এসে পরে না । তবে মজনু গ্রুপের থাক থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন বন্দিকে ছিনিয়ে নিতে পারে নি । দুয়েকবার চেষ্টা যে করে নি তা কিন্তু তারা কেউ সফল হয় নি বরং পরে তারা বেঘরে মারা পরেছে । তাই এদিকে আর কেউ সাহস করে পা দেয় না ।
কিন্তু আজকে সব কিছু হিসাবের বাইরে চলে গেল । মজনু গ্রুপের প্রধান মজনুর ছোট ভাই রাজু যখন তৃষাকে নিয়ে নারায়নগঞ্জের পঞ্চবটি পার হয়ে এল তখন একটা ট্রাক পাশ থেকে এসে সোজা ওদের ধাক্কা মারলো । রাস্তা থেকে প্রায় ছিটকেই পড়লো পাশে ধান ক্ষেতে । রাজুর মাথাটা ঝিম ঝিম করা অবস্থায় দেখলো কেউ একজন ওদের গাড়ির কাছে চলে এসেছে । কোমরে গোজা পিস্তলটা বের করার সময় পেল না । তার আগেই একটা ভোতা আওয়াজ হল, সেই সাথে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ । তারপর আরও কয়েকটা ভোতা আওয়াজ।
তৃষার মাথাও একটু ঝিমঝিম করছিলো ধাক্কার ফলে তবে সেটা বড় কিছু নয় । কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর পাশে যে দুজন ছিল দুই জনেই কেমন করে যেন পড়ে আছে । ওরা কেউ যে বেঁচে নেই সেটা বুঝতে তৃষার মোটেও কষ্ট হল না । সেই সাথে এও বুঝতে পারলো যে কেবল এক্সিডেন্টের ফলে এদের মৃত্যু হয় নি । রক্ত পাতের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কিভাবে মারা গেছে ।
তৃষার খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কেন জানি ওর খুব একটা ভয় লাগছিলো না । ডান পাশের দরজাটা খুলে গেল । তৃষা তাকিয়ে দেখে সেখানে অপু দাড়িয়ে । হাত দিয়ে সেদিকের ছেলেটার বডিকে টেনে বের করলো । তারপর অপু ওকেও বের করে আনলো । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঠিক আছো ?
তৃষা কোন কথা বলল না । কেবল মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো । ওর কপাল সম্ভব একটু কেটে গিয়েছিলো । সেখানটাতে একটু জ্বালছিল । তৃষা সেখানে হাত দিল । তারপর বলল
-তোমার অনেক লেগেছে তাই না ?
-আমি ঠিক আছি ! আপনি আমার খোজ পেলেন কোথা থেকে ?
ততক্ষনে একটা গাড়ি চলে এসেছে রাস্তার উপর । তৃষাকে হাটতে সাহায্য করলো অপু । তারপর দ্রুত ওকে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে চলে যায়।
অপু জানতো এর পর থেকে মজনু গ্রুপ ওর পেছনে লেগে যাবে । সেই সুযোগ আর তাদের দিল না সে । নিজেই আগে হামলা করে বসলো । একে একে যত গুলো মাথা আছে সব গুলো খুজে বের করে শেষ করে দিল । এখন এই ালইনে সবাই অপুর গ্রুপকে জমের মত ভয় পায় । কেউ ওদের পথে আসে না ।
অনেকটা সময় দুজন বসে রইলো । আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর তৃষাই একটা সময়ে বলল
-আপনি আপনার ঐ প্রেমিকাকে খুব ভালবাসতেন, তাই না ?
এই প্রশ্নের জবাব অপু দিল না । তৃষা বলল
-ঐ ভালবাসা থেকে একটু ভাল কি আমাকে বাসা যায় ?
অপু ওর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল
-আমি যে জীবন চলি সেখানে তুমি কিভাবে আসবে শুনি ? আমার সাথে থাকলে তুমিও যে বিপদে পড়বে !
-আই ক্যান লিভ উইথ দ্যান ।
-তাই ?
-হুম ! কারন আমি জানি এই পৃথিবীতে একটা মানুষ থাকতে আমার কোন ভয় নেই । কেউ আমার কিছু করতে পারবে না ।
-আর সেই মানুষটা মরে যায় তখন ?
এই কথা বলতেই তৃষা ওর মুখে হাত দিল ।
-খবরদার এই কথা বলবেন না । আপনি মরে গেলে আমিও মরে যাবো !
অপু কি বলবে খুজে পেল না । এই কথাটা আগেও ওকে একজন বলতো । সেই মানুষটা চলে গেছে ওকে ছেড়ে, না ফেরার দেশে । আর কারো সাথে অপু নিজের জীবনটাকে জড়াতে চায় না কিন্তু এই মেয়েটা ঠিকই ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে । সে চাইলেও মেয়েটাকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারবে না ।
রাত হতে থাকে । ওরা দুজন সেই একই জায়গাতে বসে থাকে চুপচাপ । কোন কথা বলে তবে নিরবতার মাঝেও দুজন অনেক কথা বলে ফেলে । এভাবে তাদের জীবন হয়তো এগিয়ে চলবে সামনের দিন গুলোতে ! এটাই তাদের জীবনের গল্প এভাবেই হয়তো এগিয়ে চলবে !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:২১