তৃষা আরেকবার ডোম লোকটার দিকে চাইলো । তাকাতেই পুরো শরীরে একটা অন্য রকম অনুভূতি হল । সেই অনুভুতিটা ঠিক কিসের অনুভূতি সেটা তৃষা কিছুতেই বলতে পারবে না, তবে ব্যাপারটা কিছুতেই স্বাভাবিক না ।
লোকটা একটা চোখ ফুলে গেছে । মানুষ জন এমন মাইর দিয়েছে যে আরেকটু হলেই মারাই পড়তো । এমনিতেই ডোম লোকটার একটা চোখ নষ্ট । অন্য চোখটাও মার খেয়ে ফুলে গেছে । তৃষা সেই চোখটাই পরীক্ষা করে দেখছে । লোকটা ব্যাথায় কুকু করছে ।
-ডাক্তার আফা , আমি কিছু করি নাই । বিশ্বাস লন !
তৃষা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । খুব বেশি দিন হয় নি এই হাসপাতালে ওর পোস্টিং হয়েছে । একেবারে গ্রাম না বললেও এটাকে যে শহর বলা চলে না সেটা তৃষা খুব ভাল করে জানে । কিন্তু ওর কিছুই করার নেই । নতুন পোস্টিং যে এখানে হয়েছে, এখানে কাজ করতেই হবে । তবে সুখের কথা হচ্ছে অপু চেষ্টা করে চলেছে ওকে নিজের কাছে নেওয়ার জন্য । সেটাও হতে হয়তো কিছু দিন সময় লাগবে । সেই কিছু দিন ওকে এখানে থাকতে হবে । অবশ্য খুব যে খারাপ ও আছে সেটা কোন ভাবেই বলা যাবে না । বরং বেশ ভাল সময় কাটছে ওর । ও যে হাসপাতালে আছে সেখানে সবাই খুব ভাল । ওকে নিয়ে মোট ৫ জন ডাক্তার আছে । একজন সিনিয়র সার্জন সহ ওরা মোট চার জন জুনিয়র রয়েছে । তবে ওই সব থেকে জুনিয়র । আর সবাই কয়েক বছর ধরেই এখানে কাজ করছে । সবাই খুব হাসি খুশি । একা ও মেয়ে ডাক্তার বলেই হয়তো অন্য সবাই ওকে বেশ একটু প্রশ্রয় দেয় । অনেকে অনেক রকম সাহায্য করে । তবে বিয়ে হয়ে গেছে বলেই হয়তো খুব বেশি এগোতে পারে না ।
তার কর্ম ক্ষেত্রের সবই ভাল কেবল একটা ব্যাপার ছাড়া । সেটা হচ্ছে হাসপাতালের মতি ডোম । লোকটা খুব বেশি লম্বা না । একটু বেটে ধরনের । ৪০/৫০ বয়স হবে । লোকটা একটা চোখ নষ্ট । সেখানে এক খন্ড মাংস পিন্ড ছাড়া আর কিছুই নেই । দেখলে কেমন যেন লাগে । সেটাও খুব একটা সমস্যার কথা ছিল না । মূল সমস্যা হচ্ছে লোকটার ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত আছে । লোকটা নাকি মানুষের অঙ্গ খায় । যে লাশ আসে হাসপাতালে তাদের অনেক কিছুই নাকি হারিয়ে যায় । ব্যাপারটা কেবলই শুনেছে । সত্য মিথ্যা প্রমান করার কোন উপায় নেই ।
আজকে সেটা নিয়েই সমস্যা বেঁধেছে । স্থানীয় এক প্রভাবশালী লোক মারা গিয়েছে গত পরশু দিন । স্বাভাবিক কোন মৃত্যু না । কে বা কারা তাকে মেরে ফেলেছে । নিয়ম অনুযায়ী পোস্টমোর্টাম হয়েছে । সেটা অবশ্য সাজ্জাদ সাহেবই করেছে । যদিও তৃষার সাথে থাকার কথা ছিল তবে ও খানিকটা ইচ্ছে করেই কাজটা করে নি । ওর হয়ে সাজ্জাদ সাহেব একাই কাজটা করে দিয়েছে । সেটাও সমস্যার কথা না । এখানে নিয়মের একটু হেরফের হলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না ।
কিন্তু সমস্যা বাঁধে অন্য খানে । লাশটা হস্তান্তার করার আগে বেশ কিছুটা সময় ছিল ওদের লাশ ঘরে । কাটাকাটুর কাজ থেকে দুরে থাকলেও দায়িত্বটা ওর ছিল বিধায় শেষ বারের মত একবার টেক করতে গিয়েছিলো ।
লাশটা দেখেই খানিকটা বিশ্মিত হয়ে হল । সেলাই গুলো কেমন যেন নড় বড়ে হয়ে গেছে । কেউ যেন সেগুলো টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করেছে । স্পষ্ট বুঝতে পারছে লাশটা যখন এখানে ছিল তখনই কেউ এখানে কিছু করেছে !
কে করেছে ?
আর কি করেছে ?
লাশের সাথে কি করতে পারে ?
তখনই কথাটা মাথায় এল !
মতি ডোম !
সে কি আসলেই কিছু নিয়ে গেছে এখান থেকে ?
খাওয়ার জন্য ।
অবিশ্ব্যাস ভরা চোখ নিয়ে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো সে লাশটার দিকে । তারপর একটা নাইফ নিয়ে এগিয়ে গেল । একটা একটা করে সেলাইয়ের সুটা কাটতে শুরু করলো ।
কিছু সময় পরীক্ষা করার পরেই প্রবল বিশ্ময়ে লক্ষ্য করলো লাশের শরীরের ভেতর থেকে কলিজা আর কিডনি সহ আরও কয়েকটা জিনিস গায়েব । কাজটা কে করলো ?
কেন জানি কথাটা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগলো না । স্থানীয় নেতার লোকজনের মাথা এমনিতেই গরম ছিল এখন এটা জানার পরে আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল । ওরা মতিডোম কে টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে বেদম মার লাগালো । তবে পুলিশ চলে আসাতে এ যাত্রায় সে রক্ষা পেল । আহত মতিডোম কে তৃষা চিকিৎসা দিচ্ছিলো । তখনই কথাটা বলল সে ।
তৃষা মতি ডোমের ভাল চোখটার দিকে আরেকবার তাকালো । চোখ অল্প অল্প কাঁপছে। তবে কেন জানি সেই চোখ টা দেখে তৃষার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল। মনে হল লোকটা আসলেই সত্য কথা বলছে।
তৃষা বলল
-আচ্ছা কথা বলতে হবে না। ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি।
-আফা মনি আমি সত্যিই কিছু করি নাই।
-আচ্ছা। সেটা পরে ভাবলে চলবে। আর আমি পুলিশের সাথে কথা বলব।
মতিডোমকে বেডে রেখে যখন বাইরে বের হল তখন ডাক্তার সাজ্জাদ ওর সামনে এসে দাড়ালো। ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-বদমাইশটা কোথায়?
সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে তৃষা বলল
-বেডে আছে ।
সাজ্জাদকে বেশ উত্তেজিত মনে হল । সে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাইরের লোকজন কত আছে তোমার ধারনা আছে ? এই বদ মাইশকে এখনই পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে !
তৃষা শান্ত কন্ঠে বলল
-দেখুন সাজ্জাদ সাহেব, এখন ও আহত হয়েছে । বেশ গুরুতর । ওকে এখন কোন ভাবেই ছাড়া যাবে না । পুলিশ যদি ওকে নিতে আসে তাহলে বলবেন যে নিজেদের রিক্সে যেন নিয়ে যায় । কারন যদি কাস্টেডিতে কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজে পুলিশের নামে মামলা করবো !
তৃষার কন্ঠে দৃঢ়তা দেখে সাজ্জাদ যেন একটু চুপছে গেল । তৃষার কাছ থেকে এমন আচরন সে আশা করে নি । সাজ্জাদ বলল
-না মানে সেটা তো ঠিকই । যদি ওর শরীর বেশ খারাপ থাকে তাহলে ওকে এখানে রাখতেই হবে ।
-হ্যা । তাই । আর আমি খুজে দেখছি কাল রাতে কে লাশ ঘরে ঢুকেছিলো । করিডোরে না একটা সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে । সেটা দেখতে হবে ।
-ও হ্যা তাই তো !
সাজ্জাদ আর দাড়ালো না । যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিক দিয়েই চলে গেল ।
তৃষার মাথায় এসবের কিছুই ঢুকছে না । এতো কিছু রেখে মানুষ কেন মরা লাশের অঙ্গ চুরি করবে । এমন না বাইরে বিক্রি করে টাকা পাবে । সেটাও সম্ভব না । এগুলোর কোন মূল্যই নেই । তবে মতি ডোমের চেহারা দেখে তৃষার কেবল মনে হয়েছে যে লোকটা অন্যায় করে নি । অনেক কথাই প্রচলিত আছে লোকটা গিয়ে । এমনটা অবশ্য স্বাভাবিক । যারা লাশ ঘরে লাশ কাটাকাটু করে লোকজন তাদের কে একটু ভয়ে ভয়ে দেখে । তাদের সম্পর্কে নানান কথা ছড়ায় । যার বেশির ভাগেরই কোন ভিত্তি নেই ।
বাইরে বের হয়ে তৃষা দেখলো সেখানে তেমন কেউ ই নেই । সাজ্জাদ সাহেব তো বলেছিলো লোকজন নাকি অনেক লোক জন আছে । এমন কি পুলিশও নাকি এসে বসে আছে । কিন্তু কই ? তারা তো কেউ এখানে নেই । পুলিশ এসেছে মতিডোম কে বাঁচিয়েছিলো । এখন সম্ভবত চলে গেছে ।
তৃষার তখনই মনে হল ওর সিকিউরিটি রুমে যাওয়া দরকার । একটা সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো আছে লাশ ঘরের করিডোরে । লাশ ঘরটা করিডোরের একদম শেষ মাথায় । কেউ যদি সেখানে যেতে হয় তাহলে তাকে ক্যামেরা ধরা পরতেই হবে ।
আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সেই রুমের দিকে । তখনই ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো ।
মোবাইলটা তুলতেই দেখলো অপুর ফোন । গত পরশু দিন অপু এখানে এসেছে ছুটি নিয়ে । কাল চলে যাবে । আজকে তাই ওর একটু জলদি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু মাঝ খানে এই ঝামেলা বেঁধে গেল । ফোনটা রিসিভ করলো ও ।
-হ্যালো ম্যাডাম । আপনার এই অসহায় পুলা যে আপনার জন্য কত সময় ধরে অপেক্ষা করছে সে হিসাব কি আছে ?
-এই ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক কর !
-এখনও এই ল্যাঙ্গুয়েজ !
-হ্যা ।
-আর কত সময় ? আমি কাল চলে যাবো হিসাব আছে ?
-আছে । এই তো হাতের কাজ শেষ । এখনই চলে আসবো । একটু অপেক্ষা কর আর !
-জলদি আসো । আজকে তোমার খবর আছে ? কালকের ম্যাচ টাই হয়ে আছে মনে আছে !
-যা দুষ্ট !
তৃষা ফোন রেখে দিল । একটু আগে মনে যে খানিকটা বিরক্তির ভাব ছিল সেটা কেটে গেছে । তাই হয়তো ও লক্ষ্য করলো না যে একজন ওর দিকে লক্ষ্য রাখছে । তৃষা সিকিউরির রুমে ঘুকে দেখে সেখানে কেউ নেই ।
তখনই মনে পড়লো এখানকার গার্ডটা কদিন থেকেই ছুটিতে আছে । হাসপাতালের কয়েকজন বয় মাঝে মাঝে এখানে এসে দেখে যায় সব কিছু ঠিক চলছে কি না ।
লাশ ঘরের সিসিটিভিটা খুজে পেতে খুব বেশি সময় লাগলো না । আরেকটু খোজ খবর করতেই গতদিনের ফুটেজও বের করে ফেলল । এরপর সেটা দেখতে লাগলো আস্তে আস্তে । কে কে এই রাস্তা দিয়ে এসেছে আবার গিয়েছে । এই দিকটা একেবারেই নির্জন । মানুষজন দরকার না পড়লে এদিকে আসে না ।
গতদিনের পোস্টমোর্টেম করার পরে মতিডোম আর সাজ্জাদ সাহেব এক সাথে বের হয়ে যায় । তারপর অনেক সময় কোন নড়াচড়া নেই । তৃষা দেখতে দেখতে যখন ক্লান্ত হয়ে গেল, মনে হল যে আর কাউকে হয়তো আসতে দেখবে না তখনই একজনকে করিডোরে দেখা গেল । একটু যেন পা টিপে টিপে আসছে । কয়েকবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে কেউ আছে কি না ।
তৃষা বিশ্মিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ।
ও চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই কেউ ওর পেছনে এসে হাজির হল । এতো সময় ও এতোই মনযোগ দিয়ে সিসিটিভি ফুটেজের দিকে তাকিয়ে ছিল যে পেছনে যে কেউ চলে আসতে পারে সেটা ওর মনেই হয় নি । কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা রুমাপ ওর মুখে চেপে ধরলো কেউ । মিষ্টি একটা গন্ধ লাগলো ওর নাকে !
ক্লোরোফর্ম ! চেতনা হারানোর আগে পরিচিত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় কেবল অবাক হয়ে । ভাবতেও পারছে না এই মানুষটা এই কাজটা করতে পারে !
দুই
তৃষার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ও দেখতে পেল ও একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে । ওর হাত আর পা দুটো বেডের সাথেই আটকে রাখা হয়েছে । বেড টা খানিকটা আধশোয়া অবস্থায় রাখা হয়েছে । নাকে একটা পচা গন্ধ আসছে। কোথাও যেন কিছু পঁচেছে ।
তৃষা বোঝার চেষ্টা করলো ওকে কোথায় রাখা হয়েছে । কিন্তু বুঝতে পারলো না । একটু পুরাতন ঘর মনে হচ্ছে । মনের ভেতরে খানিক সন্দেহ হল ওকে হয়তো পুরানো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে । পুরানো বেড, পুরানো রুম এটাই দিকের নির্দেশ করে । ওদের নতুন হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে আগের হাসপাতালটা অবস্থিত । কোন দিন সেখানে যাওয়া হয় নি তবে দূর থেকে দেখেছে সে ।
কিছু সময় অপেক্ষা করতেই একটা লোক এসে ঢুকলো । লোকটার দিকে তাকাতেই তৃষার মুখটা বিকৃত হয়ে এল ঘৃণাতে । লোকটা আর কেউ না ওদের সিনিয়র ডাক্তার আলী আহমেদ । তৃষার খুব কাছে এসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল
-তোমার এতো কৌতুহল দেখানোর কি দরকার ছিল শুনি ?
-স্যার আপনি ?
তৃষার কথা যেন শুনতেই পায় নি । বলল
-এতো কৌতুহল ভাল নয় ! মোটেই না। তুমি জানো তোমার জন্য আমি কত বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম । তবে এখন আর কোন সমস্যা হবে না । যে টুকু ভুল করেছিলাম সেটুকু আমি শুধরে নিব ।
তৃষা কি বলবে খুজে পেল না । এখনও তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তৃষা কেবল বলল
-কিন্তু কেন স্যার ?
আলী আহমেদ বলল
-লাশের ভেতরের কি আছে না আছে এটা নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হল শুনি ? কি দরকার ছিল ? আর বলছো কেন ? দরকার তো আছেই । তবে অনেক আমি তাজা কিছু পাই নি । একদিন দিয়ে ভালই হল । অনেক দিন পর তাজা কিছু পাওয়া যাবে ।
তৃষা দেখতে পেল আলী আহমেদের চোখটা চকচক করে উঠলো । সেটা দেখে তৃষার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো । ঐ মৃত লাশ গুলোর ভেতরে থেকে যেই অঙ্গ গুলো খোয়া যেত এখন সেগুলো ওর শরীর থেকেই যাবে । সেটা ভাবতেই একটা তীব্র ভয়ের স্রোত বয়ে গেল । অপুর মুখটা ভাবার চেষ্টা করলো । ও ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে । আর কোন দিন কি দেখা হবে না ওর সাথে । নিজেকে আরও একটু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবে কোন লাভ হল না । চিৎকার করলো কয়েকবার কিন্তু সেটাতে আলী আহমেদ খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করলো না । এর অর্থ হচ্ছে ওরা এমন কোথাও আছে যেখান থেকে শত চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পাবে না ।
আস্তে আস্তে আলী আহমেদকে এগিয়ে আসতে দেখলো সে । হাতের মেডিক্যাল নাইফটার দিকে তাকাতেই বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল । ওর মুখ দিয়ে আরেকটা চিৎকার বেরিয়ে গেল । আলী আহমেদ যেন বিরক্ত হল । তারপর ছুরিটা সরিয়ে টেবিল থেকে একটা সিরিঞ্জ নিয়ে এল । সেটা ওর ডান হাতে পুশ করে দিল ।
-আপনি কি করলেন এটা ?
-ভয় পেও না । আজকে তোমাকে কষ্ট দিয়ে মারছি না । ঘুমের ভেতরে তুমি মারা যাবে !
তখনই তৃষার মাথাটা ঘুরে উঠলো । বুঝতে পারলো ওর ঘুম আসছে খুব । ঘুমন্ত চোখে তৃষা দেখতে পেল আলী আহমেদ ওর দিকে ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে । একটা তৃষার আর কিছু ভাবতে পারছে না । অপুর চেহারাটা খুব বেশি মনে পড়ছে । ওকে ছাড়া অপু কি করবে কে জানে !
তিন
চোখ মেলে তৃষা বুঝতে পারলো না ও কোথায় আছে । আরও একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলো ও একটা হাসপাতালে শুয়ে আছে । একটু নড়তে গিয়েই টের বেল ওর পেট একটা ব্যাথা অনুভব করছে । আরেকটু নড়তে যাবে তখনই অপুর কন্ঠ শুনতে পেল ।
-খবরদার নড়বে না । একদম না ।
বাঁ দিকে মাথাটা নাড়ালো । দেখলো অপু এগিয়ে আসছে । প্রথমে মনে হল ও বুঝি স্বপ্ন দেখছে । কিন্তু তারপর মনে হল এটা স্বপ্ন হতে পারে না । আসলেই অপু ওর সাথে রয়েছে ।
-তুমি ? কিভাবে ?
অপু বলল
-কেন ? আমাকে দেখে খুশি হও নি ?
তৃষা একটু হাসার চেষ্টা করলো । তারপর বলল
-আমি কিভাবে এলাম এখানে ? আর আলী আহমেদ কোথায় ?
-সে আছে তার যেখানে থাকার !
-কিভাবে হল এসব !
-তোমার ঐ মতি সাহেব একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার । ও যদি তোমার খোজ বের করেছিলো । সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও যখন তুমি আসছিলেন না, ফোনেও পাচ্ছিলাম না তখন আমি তোমার হাসপাতালে এসে হাজির হলাম । কিন্তু তোমার কোন খোজ নেই । তোমাদের আরেকটা ডাক্তার আছে না কি যেন নাম, সাজ্জাদ সাহেব উনি বললেন নাকি তুমি সিসিটিভি রুমের দিকে গেছ । কিন্তু সেখানেও তোমার দেখা নেই । শেষে আমি যখন দিশেহারা অবস্থা তখনই মতি সাহেব এসে হাজির হল । সেই আমাকে বলল অনেক দিন থেকেই হাসপাতাল থেকে মৃত মানুষের ভেতরের জ কলিজা কিডনি নাকি হারিয়ে যাচ্ছে । কেউ সেগুলো নিয়ে যাচ্ছে । কে বা কারা নিতে পারে এই ব্যাপারে কেউ জানে না । তবে মতি সাহেব কিছু জানে । সে নাকি প্রায়ই তোমাদের স্যারকে এই মর্গে যেতে দেখেছে । প্রায়ই সময় তিনি সেখানে থাকতো । তাকে নাকি মাঝে মাঝে পুরাতন হাসপাতালেও যেতে দেখেছে । সেখানে সে কি করে কেউ জানে না । আমি তাকে এবং সাজ্জাদ সাহেব কে নিয়ে হাজির হলাম সেখানে । সেখানেই তোমাকে পাই । আরেকটু দেরি হলে হয়তো তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম !
তৃষা একটু হাসলো । তারপর বলল
-ভয় নেই আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি না ।
-তোমাকে যেতে দিলে তো !
তারপর কিছু সময় চুপ করে থেকে তৃষা বলল
-আলী আকবরের কি হল ?
-তাকে পুলিশ ধরেছে । তুমি ভাবতে পারো ঐ বস মানুষের ভেতরের কলিজা কিডনি দিয়ে লাঞ্চ করতো !
-আমি ভাবতে চা্চ্ছি না !
তৃষা আসলেই ভাবতে পারছিলো না । অবশ্য ওর খুব একটা ভাবনার কারনও নেই । অপু ওর সাথে আছে এখন আর কিছুতেই ওর কোন চিন্তা নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২২