-একটা কথা বলি?
সুমন চুপচাপ খাচ্ছিলো। মিতুর কথা শুনে ওর দিকে তাকালো। তারপর বলল
-বল।
মিতু বলল
-গ্যারেজে যে লাল রংয়ের সাইকেলটা আছে ওটা কি তোমার?
-হ্যা। আগে যখন টিউশনি করতাম তখন চালাতাম। এখন আর সময় হয় না।
-ও।
মিতু চুপ করে রইলো। যদিও এটাই ওর আসল কথা না। মিতু আগে থেকেই জানতো যে লাল রংয়ের সাইকেলটা সুমনের। দারোয়ানের কাছে থেকে জেনেছে। এখন আসল কথাটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু ঠিক ভরশা হচ্ছে না। আজকে কথাটা বলবে বলেই সুমনের পছন্দের বেগুনের ভর্তা বানিয়েছে। বেগুন ভর্তা দেখলেই সুমনের মন ভাল হয়ে যায়।
মিতুর চেহারা দেখে সুমন নিজেই বলল
-আরও কিছু বলবা?
-হু।
-কি?
মিতু আরও কিছুটা সময় চুপ করে তারপর বলল
-আমি যদি মাঝে মাঝে তোমার ঐ সাইকেলটা চালাই তাহলে কি তুমি রাগ করবে?
সুমন খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-তুমি সাইকেল চালাতে পারো?
-হুম।
-আরে তাই নাকি? বেশ। তা আমি রাগ কেন করবো?
-না মানে আব্বা খুব রাগ করতো। জানো কি হয়েছিল ভাইয়াকে সাইকেল কিনে দিয়েছিল আমি সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে চালানো শিখে ফেললাম। আব্বা যখন থাকতো না তখন চালাতাম। কিন্তু একদিন ঠিক ধরা পড়ে গেলাম। কি মাইর সেদিন খেলাম।
সুমন বলল
-কি? সত্যিই নাকি?
সুমনের মুখের ভাব দেখে মিতু হেসে ফেলল। তারপর বলল
-হ্যা। বাবা এইসব ব্যাপারে খুব কড়া।
-তারপর?
-তারপর আর কি? ভাইয়ার সাইকেল টা বাবা আর রাখলো না। বিক্রি করে দিল। আমারও আর সাইকেল চালানো হল না। তবে মাঝে মাঝে ঠিকই চালাতাম।
-তাহলে? যদি শ্বশুর মশাই দেখে ফেলে! তখন?
মিতু খানিকটা চিন্তার ভাব করে বলল
-এখন আর কিছু বলবে না। আর বকলে তোমাকে বকবে। একটু না হয় শুনলেই বকা!
-ইস! না বাবা দরকার নেই। আমি বকা টকা শুনতে পারবো না।
পরদিন থেকেই মিতুর সাইকেল চালানো শুরু হয়ে গেল। ঐদিন বিকেল বেলাতেই সুমন সাইকেলের সিট টা নিচে নামিয়ে দিয়ে ছিল আর সাইকেলের দোকান থেকেও ধুয়ে মুছে পরিস্কার করিয়ে নিয়ে এসেছিল।
মিতুদের বাসার সামনেই একটা খোলা মাঠ ছিল। মুলত সেখানেই সাইকেল চালাতো মিতু। কেউ কেউ অবশ্য মিতুর এই সাইকেল চালানো দেখে নানান কথা বলত তবে সুমন ওকে পরিস্কার বলে দিল যে যা বলুক ও যেন কানে না নেয় সেই সব কথা। নিজের পছন্দমত কাজ করে।
তারপর একদিন বিকেলের কথা। নিতু আপন মনেই সাইকেল চালাচ্ছিলো তখনই সুমনকে দেখতে পেল ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ওর চেহারাতেই একটু তাড়াহুড়া ছিল। কাছে আসতেই মিতু বলল
-কি হয়েছে?
-সাইকেল থেকে নামো। জলদি নামো।
-কি হয়েছে!
এক প্রকার জোর করেই নামিয়ে দিল মিতুকে। তারপর নিযে চড়ে বসলো। তারপর মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-ওঠো।
মিতু আসলেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না। এভাবে হঠাৎ করে এসে সাইকেলে চড়ে বসা। তারপর ওকে উঠতে বলা। মিতু কিছু না বলে সাইকেলের সামনে রডে উঠে বসলো। সুমন ওকে নিয়ে চালাতে শুরু করলো। যখন বাসার গেটের কাছে পৌছালো, দেখলো ওদের সাথেই আরেকটা রিক্সা থেমেছে সেখানে। মিতু সাইকেল থেকে নেমে যেই না সুমনকে জিজ্ঞেস করতে যাবে ব্যাপার কি তখন ওর চোখ গেল রিক্সার দিকে। মিতুর বাবা আর মা নামছে। সাথে সাথেই সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল।
সুমন নিশ্চয় কোন ভাবে টের পেয়েছে যে মিতুর বাবা আসছে। যদি ওর বাবা দেখতো ও সাইকেল চালাচ্ছে তখন কি হত কে জানে।
সুমন সাইকেল রেখেই মিতুর বাবা মা কে সালাম করলো। ওর বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-এখনো তুই ঠিক হলি না।
-আমি কি করলাম?
সাথে সাথেই সুমন বলল
-আসলে আমি সাইকেল চালাচ্ছিলাম তো, ভাবলাম যে ওকে নিয়ে চালাই একটু।
-এসব ঠিক না। বুঝেছো?
-জি বাবা! আপনারা বাসায় যান আমি সাইকেল রেখে আসতেছি। এই মিতু আব্বাদের নিয়ে যাও।
মিতু তখন সুমনের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে একটা আনন্দমিশ্রিত অনুভুতি। মিতুর বাবা আর মা আগে আগে হাটতে শুরু করলেই মিতু চট করে সুমনের কাছে এসে পড়লো। তারপর গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলল
-থেঙ্কিউ।
তারপর মৃদ্যু হেসে আবার দৌড় দিল বাবা মায়ের পেছন। কয়েকবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো সুমন খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রাস্তার মাঝেই যে ওকে চুমু খেয়ে ফেলবে সেটা সুমন হয়তো ভাবতে পারে নি।
এমন ছোট ছোট আনন্দঘন মুহুর্ত নিয়েই তো মানুষের জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৯