somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ বাঁকা পথ

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অপুকে আসতে দেখেই নিহিনের মনটা খারাপ হল । ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে । নিজেকে আরেকবার জিজ্ঞেস করলো আসলেই কি সত্যি কথাটা বলতে চায় অপুকে ? যদি কথাটা না বলে তবে হয়তো কোন দিন অপু সেটা জানতে পারবে না । ওকে যেভাবে ভালবেসে যায় সেখাবেই ভালবেসে যাবে । কিন্তু সেটা নিহিন চায় না । ও চায় না কোন মিথ্যা দিয়ে ওর ভালবাসা টিকে থাকুক । আর এখন তো ওকে সত্যিই সত্যিই ভালবাসে । সেই ভালবাসাতে কোন প্রকার খাঁদ নেই, কোন ভেজাল নেই, কোন মিথ্যা নেই ।


অপুর মুখে হাসিটা দেখে নিহিনের মনটা আরও একটু খারাপ হয়ে গেল । আজকে ছেলেটার মন নিশ্চয়ই খারাপ হবে খুব । কিন্তু মন খারাপ হলেও আজকে সত্যি কথাটা ওকে বলতেই হবে । নয়তো ও কিছুতেই শান্তি পাবে না । এই অপরাধের দায় টা নিয়ে নিহিন আর থাকতে পারছে না ।

কিন্তু সত্যি বলার পর ?
নিহিন জানে না কি হবে ?
নিশ্চয়ই অপু খুব রাগ করবে ? চিৎকার চেঁচামিচিও করবে । তারপর ও ওকে যা বলবে তা হয়তো বিশ্বাস করবে না তবুও বলবে । হয়তো ওকে ছেড়ে চলেও যাবে । নিহিন তবুও আজকে সত্যি কথাটা বলবেই ।

অপু ওর পাশে এসে বসতেই বলল
-কি ব্যাপারে মহারানী মন খারাপ কেন ?
নিহিন কোন কথা বলল না । অপুর দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । ছেলেটা ওর দিকে কেমন চোখে তাকায় । নিহিন যতবার এই দৃষ্টি দেখেছে ততবার আরও নিজেকে অপরাধি মনে হয়েছে । বারবার নিজেকে একটা প্রতারক মনে হয়েছে । অপু আবার বলল
-কি ব্যাপার এতো সিরিয়াস কেন ? আজকে আমার সাথে ব্রেক আপ করার ইচ্ছে আছে নাকি !

নিহিন কোন কথা না বলে বলল
-বসো । কথা আছে ! তবে কথা শুরুর আগে আমার দিকে তাকিয়ে বল আমাকে তুমি ভালবাসো ?
অপু হাসতে হাসতেই বলল
-এটা আবার কি ধরনের প্রশ্ন হল শুনি ? তুমি জানো না ?

এই বলে অপু ওর দিকে তাকালো । অপুর চোখ চিৎকারে বলছে যে সে নিহিনকে ভালবাসে ! অপু বলল
-তুমি বাসো তো ?

নিহিন কোন কথা বলতে পারলো না প্রথমে । প্রথমে আসলেই সে অপু কে ভালবাসতো না । কিন্তু এখন অপু ছাড়া সে অন্য কোন কিছু বুঝে না । চিন্তাই করতেই পারে না কিছু । নিহিন জানে আজকে সত্যি কথা বলার পরে অপু ওকে ছেড়ে যেতে পারে । কিন্তু তবুও সত্যিটা ওকে না জানিয়ে ও ঠিক থাকতে পারছে না ।

শুরুটা একদম খেলার জন্যই হয়েছিল । অপু হচ্ছে আদিবার কাজিন । আদিবার সাথে ও এক সাথে কলেজে পড়েছে । পরে আদিবা মেডিক্যালে চান্স পেয়ে যায় আর ও এখানে এসে ভর্তি হয় । এখানেই এসে দেখা হয় অপুর সাথে । ও যে ডিপার্টমেন্টে পড়ে সেখানের এক ব্যাচ সিনিয়র ব্যাচ । সেটাও নিহিনের ঠিক চেনার কথা না । কিন্তু একদিন আদিবা এসে ওকে অপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । তারপর আসল কথা বলল ।

আদিবার সাথে আগে নাকি অপুর একটা সম্পর্ক ছিল । ঠিক সম্পর্ক না, অপু নাকি আদিবাকে পাত্তা দেয় নি । তাই আদিবার একটা রাগ আছে অপুর উপর । সে অপুর উপর প্রতিশোধ নিতে চায় । এই জন্য নিহিনকে ঠিক করে । প্রথমে কাজ হবে অপুর সাথে নিহিন একটা সম্পর্ক তৈরি করবে । তারপর অপু যখন ফল করবে তখন তাকে একটা কঠিন ছ্যাকা দিতে হবে । প্রথমে নিহিন ঠিক রাজি হয় নি কিন্তু আদিবার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে গেল ।
স্কুলে থাকার সময় থেকেই নিহিনের পেছনে অনেক ছেলে ঘুরেছে । কিন্তু নিহিন কাউকে কোন দিন পাত্তা দেয় নি । তবে চাইলেই অনেক ছেলের সাথেই প্রেম করতে পারতো । ছেলেটা কেবল ওর জন্য পাগল ছিল । কত মানুষ যে ওর পেছনে ঘুরেছে । এমন কি কলেজের এক স্যারও নিহিনকে পছন্দ করতো । কিন্তু লজ্জার কারনে ঠিক বলতে পারে নি । নিহিন শুনেছে সেই স্যার নাকি ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কথা ভাবছে । আদিবা তাই নিহিনকে বেঁছে নিয়েছে । অপু ওকে মানা করতে পারবে না ! ঠিক ঠিক প্রেমে পড়ে যাবে !

তারপর থেকেই খেলা শুরু হয়ে গেল । নাম্বারটা আদিবার কাছ থেকেই নিয়ে নিল । তারপর ফোনে যোগাযোগ শুরু । এক কথা দুই কথা বলতে বলতে একটা সময় অপু সত্যিই নিহিনের প্রেমে পড়লো । কিন্তু সমস্যা বাঁধলো অন্য খানে । নিহিন নিজেও অপুর প্রেমে পড়ে গেল । বিশেষ করে ছেলেটার পাগলো গুলো ওকে অদ্ভুদ ভাবে আকর্ষন করতে শুরু করলো । কোন ভাবেই নিজেকে অপুর কাছ থেকে দুরে রাখতে পারলো না । শেষে যখন বুঝতে পারলো যে আর চেষ্টা করে লাভ নেই তখন সেটা বাদ দিল । কিন্তু তারপর থেকে এই অপরাধ বোধ ওকে পেয়ে বসলো । কিছুইতেই সেটা থেকে বের হতে পারছিলো না । শেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে আজকে সব সত্যি কথা বলেই দিবে । আগে হয়তো ওকে ভালবাসতো না কিন্তু ওকে এখন তো ভালবাসে । এবং সেই ভালবাসাতে কোন খাদ নেই ।


সব কিছু যখন অপুকে বলল অপু ওর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলো । মুখের সেই হাসিটা আর নেই আগের মত । নিহিন কথা শেষ করে নিজেই মাথা নিচ করে রইলো । কখন যে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে সেটা ও নিজেই জানে না । অপু কোন কথা না বলে উঠে চলে গেল । নিহিন কেবল একভাবে ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো । একবার ডাকও দিতে পারলো না ।

বাসায় ফিরে সারাটা বিকেল বালিসে মুখে গুজে কাঁদতে লাগলো । নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলো না । কোন ভাবেই না । সন্ধ্যার দিকে ওর দরজায় আওয়াজ এল । নিহিনের মা দরজার ওপাশ থেকেই জানালো যে আদিবা এসেছে ওর সাথে দেখা করতে ।

নিহিনের একবার মনে হল বলে যে আদিবাকে চলে যেতে কিন্তু বলল না । দরজা খুলে দিয়ে আবার নিজের বিছানাতে শুয়ে পড়লো । ভেবেছিলো হয়তো কেবল আদিবাই এসেছে কিন্তু দরজার পেছন দিয়ে যখন অপুকেও ঢুকতে দেখলো তখন নিজের কাছেই ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না । কোন কথা বলল না কেবল লাফ দিয়ে এসে অপুকে জড়িয়ে ধরলো । কোন ভাবেই ওকে আর ছাড়বে না । যেতে দিবে না কোন ভাবে । কাঁদতে কাঁদতে বলল
-আমি তোমাকে ছাড়া কোন ভাবেই থাকতে পারবো না । কোন ভাবেই না ।
-আরে বাবা আস্তে আস্তে ! তোমার আম্মু চলে আসবে ।
-আসুক । আই ডোন্ট কেয়ার ! আমি তোমাকে ছাড়বো না । তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না । কোন ভাবেই না । তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না ।
-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি না তো । যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে কি আসতাম ?
-গিয়েছিলে তো ! যাও নি ।
-আচ্ছা বাবা বুঝতে পারছি । এখন ছাড় । তোমার আম্মু চলে আসবে ।

আদিবা বলল
-নাটকের নাটক নায়িকার মিলন শেষ । এখন ঢং বন্ধ কর তো !

বলেই সে অপুর দিকে তাকালো । দুইজনের ভেতরে একটা আলাদা দৃষ্টি বিনিময় হল যা হয়তো নিহিন কোন দিন বুঝতে পারবে না ।



পরিশিষ্টঃ


কলেজে থাকতেই অপু নিহিনকে দেখেছিল কিন্তু সেটা কেবল নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো । তবে আবার যখন নিহিনকে নিজের ডিপার্টমেন্টে দেখলো তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । আদিবার কাছে গিয়ে হাজির হয়ে গেল । আদিবা পরিস্কার বলে দিল যে নাম্বার হয়তো ও দিতে পারবে তবে নিহিনকে সে রাজি করাতে পারবে না । আর নিহিন রাজি হবে কি না সেটাও নিশ্চিত না । কলেজে থাকা কালিন সময়ে অনেক ছেলেই ওর পেছনে ঘুরেছে কিন্তু নিহিন কাউকে পাত্তা দেয় নি । অপুকেও দিবে না ।

তখনই অপু ওকে বুদ্ধিটা দিল । যা যা শিখিয়ে দিল তাই বলতে বলল । আদিবা বলল
-তুই কি নিশ্চিত যে নিহিন তোর প্রেমে পড়বে ? যদি না পড়ে তখন ?
-না পড়লে না পড়ুক । কিন্তু আমার বিশ্বাস ও পড়বেই । আমি ওকে সত্যিই সত্যিই অনুভব করাতে পারবো যে আমি ওকে ভালবাসি । আর এই এটা যদি একবার ও বুঝতে পারে তখন ও দুরে থাকতে পারবে না ।

অপুর কথাই সত্যি হল । নিহিন আসলেই অপুর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো । সে নিজেকে অপরাধি মনে করছে কিন্তু আসল ঘটনা সে হয়তো কোন দিন জানতে পারবে না । অবশ্য সেটা জানার খুব একটা দরকারও নেই । অপু হয়তো একটা বাঁকা পথ বেছে নিয়েছে তবে সেটা তো নিহিনকে পাওয়ার জন্যই । যুদ্ধ আর ভালবাসা জয়ের জন্য সব কিছু করা যায় !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৩
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×