গল্প নম্বরঃ ০১
হাতে নিয়ে আরেকবার চিন্তা করলাম । মনে হল কাজটা করা ঠিক হবে না । আবার মনে হল হয়তো কিছুই হবে না । কিন্তু লোকটা যেভাবে বলল তাতে কাজ হলেও হতে পারে । আমি আস্তে করে তিনবার প্রদীপে ঘষা দিলাম ।
এক বার !
দুই বার !
তিনবার !
কিছুই হল না । দুরও । কিছুভবে এটা ভাবতেই কেমন বোকা বোকা লাগছে । ঠিক তখনই আমার ফেসবুকে একটা নক এল । আমি স্বাধারনত অপরিচিত কারো মেসেজের উত্তর দেই না । কিন্তু এই মেসেজটার উত্তর না দিয়ে পারলাম না । কারন ফেসবুক প্রোফাইলের নাম দেখাচ্ছে "জ্বীন আরাফাত" ।
আমি কিছু সময় ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম । এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এরই মধ্যে এই জ্বীন আরাফাত আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও এড হয়ে গেছে !
কিন্তু কিভাবে ? আমি তো একে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই নি ।
আরেকবার মেসেজ !
"হুকুম করুন মালিক । আমি আপনার গোলাম । আপনার একটা ইচ্ছা পূরন করবো"
আমি মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না । এই সবের মানে কি ?
লিখলাম, "এসবের মানে কি ?"
"ফেসবুকে নক দিয়েছি বলে অবাক হচ্ছেন ?"
"তাই কি হওয়ার কথা না ?"
"আসলে সব কিছু আধুনিক হচ্ছে । আমরাই বা কিভাবে পিছিয়ে থাকি কিভাবে ? এখন ঝটপট বলে ফেলুন আপনার একটা ইচ্ছার কথা । আমার আরও কাজ আছে ?"
"তোমার না তিনটা ইচ্ছা পূরন করার কথা ?"
"আগে ছিল । এখন অফার কমিয়ে দিয়েছি । জলদি বলে ফেলেন ইচ্ছার কথা"
আমি কিছু সময় চিন্তা করলাম । তারপর বললাম, "আচ্ছা আমার ইচ্ছা হচ্ছে আমার বর্তমান এবং সামনের সম্ভব্য প্রেমিকা কিংবা বউ যেই হোক না কেন তার যেন কোন ছেলে বেস্টফ্রেন্ড না থাকে । তারা যেন এই পৃথিবী থেকেই গায়েব হয়ে যায়"
মেসেজটা পাঠিয়ে কিছু অপেক্ষা করলাম । তাকিয়ে দেখে মেসেজ সীন হয়েছে । কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ড পরেই জ্বীন আরাফাতের নীল নাম টা কালো হয়ে গেল । আমি "কই, কি হল" লিখে মেসেজ লিখতেই ফেসবুক জানালো ইউ ক্যান্ট রিপ্লাই দিস ! জ্বীন আরাফাত আমাকে ব্লক দিয়ে চলে গেছে । পারবি না বললেই হত ব্লক দেওয়ার কি দরকার ছিল ! বেটা বদ ।
-------০০--------
গল্প নম্বরঃ ০২
-অপু এই অপু !
আরাম করে ঘুমিয়ে ছিলাম । আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল । একট পরেই অনুভব করলাম আমার শরীরে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে । কে ধাক্কা দিচ্ছে সেটা বুঝতেও আমার কষ্ট হল না !
ঘুম আমার কাছে খুবই প্রিয় । আর শীতের ঘুম হলে তো কথাই নেই । সেই ঘুম ভাঙ্গালে আমার বড় রাগ হয় । এটা ইভার জানার কথা তবুও ও আমাকে এই রাতের বেলা ডাকছে কেন ?
আমি বললাম
-কি হল ?
-ভূমিকম্প হচ্ছে !
খানিকটা সময় বোঝার চেষ্টা করলাম আসলেই ভূমিকম্প হচ্ছে কি না ! বুঝতে পারলাম যে আসলেই হচ্ছে । আমি বললাম
-হ্যা হচ্ছে ! এখন কি করবা ! ফেসবুকে স্টাটাস দিবা ?
-ইয়ার্কি ভাল লাগছে না ! আমার ভয় করছে । চল নিচে যাই !
আমি ওর দিকে পাশ ফিরলাম ! তারপর বললাম
-এখন ভূমিকম্প কেন সুনামী হলেও আমি নিচে নামবো না ! বেশি ভয় করলে তুমি নিজে চলে যাও নিচে !
ডিম লাইটের আলোতে ইভার মুখটা দেখতে পাচ্ছি । মেয়েটা সব কিছুতেই এমন ভয় পায় কেন আমি ঠিক বুঝি না ! আমি বললাম
-ভয় পেও না । এদেশে এমন ভূমিকম্প কোন দিন হবে না ! বেশি ভয় লাগলে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো । যদি মরি দুজন এক সাথে মরবো !
আমি আর কথা বাড়ালাম না ! আবার চোখ বন্ধ করলাম । ইভা উঠে একটু নড়াচড়া করলো । এদিক ওদিক হাটা চলা করলো । তারপর যখন বুঝলো যে আমি সত্যিই নামবো না তখন বাধ্য হয়ে আবার শুয়ে পড়লো আমার পাশেই । একটু পরে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ! তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল
-যদি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে তোমার কিন্তু খবর আছে !
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-আচ্ছা ! যদি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে তাহলে এবার থেকে মশারী আমার টাঙ্গাবো ! ঠিক আছে ?
-হয়েছে !
খানিকটা রাগ দেখাতে চাইলো তবে সেটা কাজ হল না । আমার সাথে ওর রাগ কাজ করে না ! তবে অনুভব করতে পারছিলাম যে ও যেন আমাকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, যেন আমি সামনে থাকলেই ভূমিকম্প ওকে কিছু করতে পারবে না !
--------
টুকরো গল্পঃ ভূমিকম্প
----------০০---------
গল্প নম্বরঃ ০৩
ঢাকা শহরের লোকজন এমন যে পাশের বাসার মানুষ মরে পরে থাকলেও বাইরে বের হতে চায় না । কিন্তু যদি একবার একটু ভূমিকম্প অনুভুত হয় তাহলে যে যেমন ভাবে আছে তেমন ভাবেই নিচে দৌড় মারে । আমি অবশ্য কখনই তাড়াহুড়া করি না । কারন আমার কেন জানি মনে হয় বড় ধরনের ভূমিকম্প কোনদিনই এখানে হবে না । আমি বেশির ভাগ সময়ই বাসাতেই থাকি । কিন্তু মায়ের জন্য সেটা পারা যায় না । পারলে আমাকে কোলে করে নিয়ে যায় ।
আজকে বিকেলে যখন পুরো ঢাকাটা কেঁপে উঠলো তখন সবাইকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে মা নিচে চলে গেল । আমি নামতে শুরু করেছি ধিরে ধিরে । অবশ্য চারিপাশ থেকে চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ! কয়েক ধাপ নামতেই আরেকবার কেঁপে উঠলো বিল্ডিংটা !
যখন আমাদের ফ্লোর থেকে এক ফ্লোর নিচে এলাম তখন চোখ গেল সুপ্তিদের বাসার গেটের দিকে । সুপ্তির মা অসহায়ের মত মেয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । সুপ্তির গত পরশু দিন পা ভেঙ্গে গেছে রিক্সা থেকে পরে গিয়ে । ও দরজায় দাড়িয়ে মাকে বলছে
-মা তুমি নিচে নেমে যাও প্লিজ ! আমার কিছু হবে না !
-আমি থাকি আমারও কিছু হবে না ! মরলে দুজন এক সাথে মরবো !
কিন্তু যখন আরেকবার বিল্ডিংটা কেঁপে উঠলো তখন সুপ্তির মা মেয়েকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন ! তিনি ওকে নিয়ে যাবেনই নিচে ! আমার কেন জানি হাসি এল খুব ! তবে সুপ্তির চেহারা দেখে খানিকটা সাহায্য করতে মন চাইলো ! আমি এগিয়ে গেলাম !
ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আন্টি আপনি নিজে যান ! আমি ওকে নিয়ে আসছি !
সুপ্তি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমার কোলে উঠবো না !
-শোনো এটা তর্ক করার সময় নয় ! আরেকবার বড় ঝাকি দিবে এখনই । এখন যদি না নামি তাহলে কিন্তু খবর আছে ! আর তুমি না গেলে তোমার মাও যাবে না ! এটাই তুমি চাও ?
এই কথাটাতেই কাজ হল ! সুপ্তি ওর মায়ের দিকে তাকালো ! আমি সেই সুযোগ না দিয়ে বলল
-আন্টি আপনি ওর হুইল চেয়ারটা নিন ! আমি ওকে তুলছি !
যদিও আমার মনে খানিকটা সন্দেহ ছিল যে আমি ওকে ঠিক মত তুলতে পারবো কি না ! তবে যখন ওকে কোলে নিলাম কেমন যেন হালকাই মনে হল । আসলেই এক মণ মালমাল তুলতে যে ক্ষ্ট এক মণ ওজনের মেয়ে কোলে নিতে সেই কষ্ট হয় না ! আমি ওকে কোলে নিয়েই সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম ! সুপ্তির মা আমার আগে আগে নামছে ! সুপ্তি আমার গলা জড়িয়ে খানিকটা সংকুচিত হয়ে আছে ! আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না ! বরং মজাই লাগছে !
কিন্তু আসক ঘটনা ঘটলো যখন নিচে নেমে এলাম । আমাদের বাসার সিড়িটা একেবারে গেটের কাছ এসেই থেমেছে ! রাস্তা থেকেই দেখা যায় ! আমি ওকে কোলে করে নিয়েই গেটেই কাছে চলে এলাম সেখানে অনেকেই রয়েছে । বিশেষ তুহিন ভাই আমাদের এভাবে দেখে চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইলো ।
আমি ওকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিলাম । তাকিয়ে দেখি ওর মুখ একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ! সেই সাথে তুহিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ একেবারে কালো হয়ে গেছে !
তুহিন ভাই আমাদের একখানে থাকে ! খুব ভাল ছাত্র ! মেয়েদের ক্রাশ, সবাই তাকে পছন্দ করে ! তিনিও অনেককে পছন্দ করেন । কয়েকটা প্রেমও করেছেন তবে ভাল ছাত্রদের এসব দোষ দেখা হয় না ! কদিন থেকেই সে সুপ্তির পেছনে লেগেছেন তবে সে পাত্তা দিচ্ছে না । তবে শোনা যাচ্ছে সেও পাত্তা দিতে শুরু করে করবে খুব জলদি ! এমন সময় এই কাহিনী !
আমি ওদের রেখে সামনে এগিয়ে এলাম । আর অবশ্য কাঁপাকাপি করলো না । সবার ভয় কেটে যে যার বাসায় ফিরে এল । তবে সুপ্তিকে যখন ওর মা লিফ্টের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো আমার দিকে চোখ পড়তেই আমি দেখতে পেলাম সেখানে অন্য রকম কিছু কাজ করছে ।
সেটা টের পেলাম বিকেল বেলাতেই । সুপ্তির মা আমাদের বাসায় এল সুপ্তিকে নিয়ে । আমাকে ধন্যবাদ দিতে । সবাই নাকি এমনটা করে না । সবাই নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত ! সেখানে আমি ওদেরকে ছেড়ে যাই নি !
মায়ের সাথে সুপ্তির মা গল্প শুরু করে দিলে দেখলাম সুপ্তি নিজেই হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে আমার ঘরে এসে হাজির হল ! ও যে আসবে আমি জানতাম ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-থ্যাঙ্কিউ !
আমি বললাম
-কেন ? তোমাকে কোলে নেওয়ার জন্য ?
সুপ্তি কোন কথা না বলে আমার টেবিলের দিকে চলে গেল ! ওখানে আমার কিছু গল্পের বই ছিল সেখান থেকে একটা নিতে নিতে বলল
-তুহিন ভাইয়া খুব বেশি জ্বালাচ্ছে ! আজকের পর আরও জ্বালানো শুরু করবে !
-রাজি হয়ে যাও ! সব দিক দিয়ে সে পার্ফেক্ট !
-আমার এতো পার্ফেক্ট লোক পছন্দ না !
-তাহলে কাকে পছন্দ ?
-সেটা শুনতে হবে না ! আমি এসেছি তোমার সাহায্য নিতে !
-কি রকম ?
-আমি তুহিন ভাইকে বলেছি যে আমাদের ভেতরে কিছু চলছে ! এই জন্যই তুমি আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছো !
-সেকি !! মিথ্যা বলেছো কেন ? আমাদের ভেতরে তো কিছু চলছে না ! শুনো আমি এসব মিথ্যার ভেতরে নাই । পরে ঝামেলা হবে ! আমি .....
আমি এক টানে এতো গুলো কথা বলতে বলতেই দেখি সুপ্তি হুইল চেয়ার টেনে আমার একেবারে সামনে চলে এসেছে ! তারপর উঠে দাড়ালো ! একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হলেও দেখলাম ও আমার সামনেই হেটে দেখালো ! তারপর আবারও চেয়ারে গিয়ে বসলো !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-তুমি তো চলতে পারো ! ইচ্ছে করলেই সিড়ি দিয়ে নামতে পারতে !
সুপ্তি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
-হ্যা পারতাম ! কিন্তু আমার কোলে চড়ার খুব শখ ছিল যে !
-মানে কি !
সুপ্তি এবার একটু জোরে হেসে উঠলো ! তারপর হুইলচেয়ারটা দরজার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল
-অপু তুমি যে গাধা, গাধাই রয়ে যাবে ! বলতে তো আর পারবা না কোনদিন ! আমি ঠিক জানতাম তখন মা বাদে আর অন্তত একটা মানুষ আমাকে না নিয়ে কিছুতেই নিচে যাবে না ! তাই তো ওমন ভাবে অপেক্ষা করছিলাম দরজার সামনে !
তারপর আর কিছু না দরজার দিক দিয়ে বের হয়ে গেল ! আমি অবাক হয়ে সুপ্তির চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম !
মেয়েটা কিভাবে জানলো এতো কিছু !
আমি তো প্রকাশ্যে কখন এমন কোন কিছু কাউকে বলি নি !
সুপ্তিকে যে তীব্রভাবে পছন্দ করি এটা কেবল সবার কাছ থেকেই নয় নিজের কাছ থেকেও লুকিয়ে রেখেছিলাম !
ওটা ও কিভাবে জেনে গেল ?
-----------
অনু গল্পঃ ভূমিকম্প প্রেম
---------০০---------
গল্প নম্বরঃ ০৪
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি এসিটা প্রয়োজনের তুলায় বেশি ঠান্ডা ছাড়াচ্ছে । টেবিলের উপরেই রিমোর্ট ছিল । একেবারে বন্ধ করে দিলাম । ঘরটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে এসেছে । সেই সাথে একটা গুমট ভাবও বিরাজ করছে রুম জুড়ে । উঠে গিয়ে কাঁচের জানালা খুলে দিলাম । রাতের একটা তাজা বাতাস আমার ঘরে প্রবেশ করলো ।
সূর্য অনেক আগেই ডুবে গেছে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আটটার বেশি বেজে গেছে । নীলার তো চলে আসার কথা !
আমি আমার ট্যাবটা হাতে নিলাম । সিসিটিভি ক্যামেরার এপসটা চালু করতেই দেখতে পেলাম নীলাকে ! বাবুর বেবি খাটের পাশেই দাড়িয়ে আছে ।
যাক বাবা ! বাঁচলাম !
নীলাকে মাঝে মাঝে আমার মানুষ না রোবট মনে হয় । একটা মানুষ একই সাথে এতো দিক কিভাবে সামলায় কে জানে ! আমার চেম্বারটা বাসাতে হলেও আমাকে প্রায় সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় । হয় ভিজিটর আসে নয়তো বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে হয় । এক মিনিটও দম ফেলার সময় নেই । আর অন্য দিকে নীলার অফিসটা একটু দুরে । ওকে নিয়মিত অফিসে যেতে হয় তার উপর ঘরও ও নিজেই সামলায় । বাবুকে সামলানোর জন্য একজন আয়া রাখা আছে তবে সে সব সময় থাকতে পারে না । তবুও নীলা কেমন করে যেন সব সামলে নেই ।
তবে আজকে একটু ঝামেলা হয়ে গেছিলো । বাবু কিছু সময়ের জন্য একা হয়ে গেছিলো । আয়া আসে নি আজকে । তবে নীলা বাবুকে ঘুম পাড়িয়েই অফিসে গিয়েছে । আর যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো যদি ঘুম ভাঙ্গে তাহলে যেন আমি ওকে দুধ খাওয়াই । দুধও তৈরি করে রেখে গেছে ।
বাবুর ঘরেই একটা সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা আছে । যেটা আমার এবং নীলার উভয়ের মোবাইলের সাথে সংযোগ করা । বাবু যা করছে সেটা লাইভ আমি আর নীলা দেখতে পাচ্ছি । নীলাকে দেখে আমি খানিকটা স্বস্থি বোধ করলাম । যাক ও চলে এসেছে দেখে ভাল লাগছে । আমি সারা দিনে খুব ব্যস্ত ছিলাম । তাই সন্ধ্যার আগ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । কখন যে সময় চলে গেছে টেরই পায় নি !
আমি ভিডিওর দিকে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলাম । বাবু এখন ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে । যদিও ঘরটা খানিকটা আবছায়া হয়ে আছে । কেবল বেবি খাটের উপর আলোটা পড়ছে যেটাতে বাবুকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । তবে ঘুমানোর আগে তো এমন ছিল না । পুরো ঘরই আলোকিত ছিল ।
আমি বেশি চিন্তা করলাম না । নীলা যখন চলে এসেছে তখন আর সমস্যা নেই । ও নিশ্চয়ই ঘরের আলো কমিয়ে দিয়েছে !
আমি যখন আবার কাজের দিকে মন দেব তখনই আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো । তাকিয়ে দেখি নীলা ফোন দিয়েছে । কি দরকার হল এমন !
-হ্যালো !
-হ্যালো সজিব ?
-হুম ! বল !
-শোন আমার আসতে আরেকটু দেরি হবে, তুমি বাবুকে ফিডার খাইয়েছো দেখে ভাল লাগলো ! এখন ওকে একটু কোলে নাও হেটে বেড়াও । অনেকক্ষন ও খাটে শুয়ে আছে !
আমার কানে আর কথা ঢুকলো না ! আমি আবার আমার ট্যাবটা তুলে নিলাম ! এখনও আবছায়া আয়বয়টা দেখা যাচ্ছে যার দিকে তাকিয়ে বাবু হাসছে । যাকে আমি নীলা মনে করেছিলাম ।
নীলা যদি এখনও বাইরে থাকে তাহলে বাবুর সাথে এই ছায়াটা কে !!
আর নীলা ওর মোবাইলেও দেখেছে তার মানে ও একা ভুল দেখে নি ! নীলা মনে করেছে ওটা আমি !
-হ্যালো শুনছো ! হ্যালো ! বাবুর ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছো কেন ? এই শুনছো.....
আমার কানে আর কিছু গেল না । আমি ফোনটা রেখেই বাবুর ঘরের দিকে দৌড় দিলাম ! জানি না কি দেখবো সেখানে গিয়ে ! আমি দৌড়াতেই থাকি ! আমাকে যতদ্রুত সম্ভব বাবুর কাছে পৌছাতে হবে !
(এডোপ্টেড)
----------০০-----------
গল্প নম্বরঃ ০৫
মিতুর খুব কান্না আসছে । এমন কোন কারন হয় নি তবুও কান্না আসছে । রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো ও । পুরো ফ্ল্যাটে ও ছাড়া আর কেউ নেই, তাই এখন যদি চোখ দিয়ে পানি বের হলেও কিছু যায় আসে না ।
ও নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে যাচ্ছে যে এমন একটা সাধারন কারনে ওর কান্না আসছে । চুলায় হাড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলো । মুরগিরটা একেবারে হয়ে গেছে । এখন নামিয়ে ফেললেই হয়ে যাবে । অথচ ওর ইচ্ছে করছে পুরো হাড়ি শুদ্ধ ড্রেনে ফেলে দিতে । যার জন্য রান্না করছে সেই চলে গেছে বাইরে খাওয়ার জন্য !
অবশ্য এর জন্য ওর নিজেরও দোষ যে নেই এমন না । আর কান্না টা ঠিক এই কারনেই ।
রাজিবের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি । মাস খানেকেরও কম সময় । তার উপর ওরা নতুন বাসায় উঠেছে মাত্র দুদিন হল । ওর স্কুলটার কাছেই বাসাটা নেওয়া হয়েছে যদিও রাজিবের অফিসটা একটু দুর হয়ে যায় । রাজিব ইচ্ছে করেই এই বাসাটা নিয়েছে । মিতু অবশ্য মানা করেছিলো রাজিব শুনে নি । তার বক্তব্য হচ্ছে তুমি ঘর সামলাবে আবার চাকরিও করও করবে এই সুবিধা টুকু অন্তত তোমার পাওয়া উচিৎ যেন পাঁচ মিনিটেই বাসায় আসতে পারো ! একবার ভেবেছিলো যে বিয়ের কর স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিবে তবে রাজিবই বলেছে ছাড়ার কোন দরকার নেই । ওর ভাষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের একটা নিজের পরিচয় থাকা উচিৎ ! অন্তত তার ছেলে মেয়ে যেন তার মায়ের পেশায় গৃহিনী না লেখে ! বলতে গেলে তখন থেকেই রাজিবের প্রতি ওর আকর্ষনটা আরও একটু বেড়ে যায় !
যদিও বিয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে রাজিব কথা বার্তা কম বলে । যেমন টা ও ভেবে রেখেছিলো তেমন রোমান্টিক নয় তবে মানুষ হিসাবে ভাল । মিতুর এই মাঝে ওর প্রতি কেমন একটা অন্য রকম টান শুরু হয়েছে । এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই ।
আজকে তেমন কিছু হয় নি । স্কুল থেকে দুপুরের ভেতরেই ফিরে আসে ও ! স্কুল থেকে ফিরে এসেই ও একটু শুয়ে পরেছিল । ভেবে রেখেছিলো যে সন্ধ্যার একটু আগে আগে ও রাজিবের জন্য ভুনা মাংশ আর খিচুড়ি রান্না করবে । এটা ও খব পছন্দ করে । শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছে গতকাল । দুপুরে রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই ঠিক করেছিলো বিকালে রান্না শুরু করবে !
কিন্তু কখন যে ঘুম চলে এসেছে ও বলতে পারবে না । তাই একটু দেরি হয়ে গেল । সন্ধ্যার রাজিব অফিস থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েও দেখে যে রান্না তখন শেষ হয় নি । একবার জিজ্ঞেস করে, রান্না শেষ হয় নি শুনে বসার ঘরে চলে যায় আবার । তারপরই বলে যে ও একটু বাইরে থেকে আসছে ।
মিতু রাজিবকে আটকানোর চেষ্টা করে । ও ভাল করেই জানে রাজিব মুখে কিছু না বললেো ও বাইরে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য । ওর নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা লেখেছে । আর বিয়ের আগে ও বাইরেই খাওয়া দাওয়া করতো সব সময় ।
রান্না শেষ করে মিতু মন খারাপ করে বসে রইলো বসার ঘরে । নিজের জন্য রুটি বানাতে ইচ্ছে করলো না । আজকে ও না খেয়েই থাকবে । এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো । মিতু দরজা খুলে দেখে রাজিব দাড়িয়ে । হাতে একটা কোকাকোলার বোতল । আরেকটা প্যাকেট !
মিতু কিছু তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো ?
রাজিব অবাক হয়ে বলল
-বাইরে থেকে খেয়ে কেন আসবো ? তুমি রান্না করছো না ! তাও আবার খিচুড়ি আর ভুনা মাংস !
-সত্যিই খেয়ে আসো নি তো ?
-আরে বাবা না !
মিতুর কেন জানি আনন্দ হতে লাগলো খুব বেশি ! কোন সংকোচ ছাড়াই দরজার মুখেই রাজিবকে জড়িয়ে ধরলো ! রাজিব কিছুই বুঝতে পারছিলো না কি হচ্ছে । এই মেয়েটা এমনই বা কেন আচরন করছে ! কয়েক মুহুর্ত পরে মিতু ওকে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল
-তুমি জলদি করে টেবিলে বস । আমি খাবার দিচ্ছি !
তারপর প্যাকেটের দিকে চোখ যেতে বলল
-এই প্যাকেটে কি ?
-তোমার জন্য । তুমি যে রাতে সিদ্ধ আটার রুটি খাও !
মিতু খানিকটা থেমে গেল । গতদিনই রাজিব ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো । মিতু যখন টেবিলে ভাতের বদলে রুটি খাচ্ছিলো রাজিব বলল
-তুমি রাতে ভাত খাও না !
মিতু খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আসলে বাবার ডায়াবেটিক্স ছিল । উনি রাতে রুটি খেতেন । ছোট বেলা থেকে আমিও রুটিই খেতাম বাবার সাথে । অভ্যাস হয়ে গেছে ।
রাজিব আর কিছু জানতে চায় নি ! আর আজকে সেটা সে মনে রেখেছে !
রাজিব বলল
-তুমি আমার জন্যও রান্না কর তার উপর নিজের জন্য রুটি বানাবে ! তাই ভাবলাম রুটি গুলো আমিই নিয়ে আসি ! গরম গরম আছে এখনও । দাড়িয়ে থেকে বানিয়ে নিয়ে এসেছি । তুমিও বসে পড় আমার সাথে
মিতু বলল
-তুমি এই জন্য বাইরে গেছিলে ?
-হ্যা ফেরার সময় মনে ছিল না !
-টেবিলে বস !
মিতু ওর হাত থেকে কোকাকোলা আর রুটির প্যাকেট টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল । লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । সেটা সে আটকানো চেষ্টা করলো না । একটু আগে কান্নাটা ছিল কষ্টের আর এখনকার কান্নাটা আনন্দের !
-------
অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য !
--------০০০------
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৬