সিন্ড্রেলার বাবা যখন ব্যবসার কাজে বাইরে গেল তখনই সিন্ড্রেলার সৎ মায়ের আসল রূপ বের হয়ে এল । সবার আগে সে সিন্ড্রেলার কাছ থেকে ওর স্মার্টফোনটা কেড়ে নিল । স্মার্টফোন কেড়া নেওয়ার আগে সেখানে লগ ইন করে সিন্ড্রেলার ফেসবুক আইডিটা ডিএকটিভেট করতেও ভুল করলো না । তা ছাড়া ভাইবার, হোয়াটস ইমোসহ সব এপ্লিকেশন আনইনস্টল করে দিল । যাতে করে সে কোন ভাবেই তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে ।
সিন্ড্রেলার মনে দুঃখের কোন শেষ ছিল না । তার সৎ মা আর দুই সৎ বোন তাকে সারা দিন জ্বালাতন করতো । সিন্ড্রেলা খুব ভাল ছিল তাই সে সব কিছু সহ্য করতো । বাসার সব কাজ মন দিয়ে করতো । আর এই দিনে সিন্ড্রেলার দুইবোন সারা দিন ফেসবুক ব্রাউজার করতো । সিন্ড্রেলা মাঝে মাঝে কাজ করতে যখন ওদের ঘরে যেত দেখতো ওরা কি মনের আনন্দে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে চ্যাটিং করছে ! সিন্ড্রেলার মন খারাপ হত কিন্তু কিছু বলতো না ।
তারপর একদিন আসল ঘটনা ঘটলো । রাজ্যের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে একটি উত্তেজনাকর পোস্ট করা হল । সেখানে বলা হল হচ্ছে যে "রাজকুমার চাল্সের বাগদানের জন্য রাজ্যের সকল বিবাহ যোগ্য মেয়েকে রাজ্যের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে শেয়ারকৃত ইভেন্টে জয়েন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে এবং সেটি শেয়ার করে সবাই কে জানার সুযোগ করা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে । এই ইভেন্ট থেকে যাচাই বাছাই করে তাদের কে একটি সিক্রেট গ্রুপে এড করা হবে যেখানে তারা রাজকুমার চাল্সের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবেন !
ব্যাস শুরু হয়ে গেল ইভেন্টে জয়েন করা হিরিক । রাজ্যের বিবাহযোগ্য মেয়েরা তো ইভেন্টে গোয়িং দিলোই, মেয়ের মেয়েরাও গোয়িং চাপলো ! তবে রাজ্যের সাইবার সেলের আইটি এক্সপার্টরা এই ইভেন্টটা পর্যবেনক্ষন করছিলো তাই তারা কেবল বিবাহযোগ্য মেয়েদের বাদ দিয়ে আর সবাইকে ইভেন্ট থেকে ব্যান করে দিল ।
নির্ধারিত দিন চলে এল । তার আগেই সবাইকে সেই সিক্রেট গ্রুপে এড করে নেওয়া হয়েছে । এই দিনে রাজকুমার চাল্স সেই সিক্রেট গ্রুপে যোগ দিবেন তারপর তিনি এই গ্রুপে থাকা সবার সাথে চ্যাটিং করবেন । পছন্দ হলে তাদের প্রোফাইলে যাবেন । তাদের সাথে প্রাইভেট চ্যাটিং এও যেতে পারেন ।
রাত এগারোটায় রাজকুমার চাল্স আসবেন গ্রুপে । রাজ্যের সব মেয়ে নিজের নিজের ল্যাপটপ কিংবা স্মার্ট ফোন সামনে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন রাজকুমার আসবেন ।
এদিকে সিন্ড্রেলার দুইবোনও তাদের স্মার্ট ফোন নিয়ে বসে আছে নিজেদের রুমে । কিন্তু সিন্ড্রেলার মন খারাপ । তার স্মার্ট ফোন নেই । সেটা তার সৎ মা নিয়ে নিয়েছে । সে মন খারাপ করে নিজের রুমে শুয়ে রইলো ।
এদিকে রাজকুমার এসে গ্রুপে নিজের একটা পোস্ট শেয়ার দিয়ে সবাইকে বলল নিজের নিজের ছবি পোস্ট করতে কমেন্টে । ব্যাস আর যায় কোথায় ! নিজেদের আটা ময়দা সুজি মিশ্রিত তোলা ছবি এবং পরে ফটোসপ দিয়ে এডিট করা ছবি পোস্ট করতে লাগলো তারা কমেন্টে ! কে কার আগে পোস্ট করে নতুন ছবি । রাজকুমার ছবি দেখতে লাগলো কিন্তু কারো ছবিই তার মন কাড়তে পারলো না । সে কেমন স্ক্রল করে যাচ্ছে আর ছবি দেখে যাচ্ছে ।
এদিকে সিন্ড্রেলা মন খারাপ করে শুয়ে আছে তার রুমে । ঠিক তখনই তার জানলায় একজনের টোকার আওয়াজ পেল । উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তার সত্যিকারের মায়ের বান্ধবী নিনা আন্টি ! সে জানলা দিয়েই ঘরে প্রবেশ করলো । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
সবাই রাজকুমারের ইভেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আর তুমি এখানে চুপ করে শুয়ে আছো কেন ?
সিন্ড্রেলা খুলে বলল সব । তারপর বলল যে এখন আর কিছু করার নেই । ইভেন্টে যোগদানের সময় সীমা চলে গেছে । সেই সিক্রেট গ্রুপে আর এড হতে পারবে না !
তার নিনা আন্টি কেবল মুচকি হাসলো । আর বলল কোন চিন্তা করো না । তুমি হয়তো জানো না যে আমি এক মসয় ছিলাম নাম করা একজন হ্যাকার ! আমি তোমাকে সেই গ্রুপে এড করে নিচ্ছি । তবে আমি কত সময় তোমাকে সেখানে রাখতে পারবো সেটা জানি না কারন রাজ্যের নিয়োগকৃত সাইবার পুলিশেরা আমাদের একটিভিটির উপর চোখ রাখবে । তোমাকে গ্রুপ থেকে রাত বারোটার ভেতরেই লিভ নিতে হবে । এটা মনে রেখো । নয়তো ওরা ধরে ফেলতে পারে যে তুমি অবৈধ ভাবে সেখানে প্রবেশ করেছো ।
সিন্ড্রেলা নিজের আইডিতে লগিন করলো । তারপর নিনা আন্টি তাকে সেই সিক্রেট গ্রুপে এড করে দিল । তারপর বলল তুমি তাহলে চ্যাটিং করো আমি গেলাম । মনে রেখো রাট ১২টার সময়ই কিন্তু গ্রুপ লিভ করবে ।
সিন্ড্রেলার আইডির নাম ছিল ব্রোকেন এঞ্জেল । তার মা মারা যাওয়ার পরেই সে এই নাম চেঞ্জ করেছিলো । তার প্রোফাইলে যে ছবিটা আছে সেটাও খানিকটা মন খারাপ করে তোলা । তবে প্রোফাইলে ওর অনেক ছবি আছে । আর কাভার ফটোতে আছে একজোড়া কাচের জুতার ছবি । এটা ওর অনেক পছন্দের ছবি !
গ্রুপে এড হয়েই সিন্ড্রলার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো । অন্য সবার মত সেও রাজকুমার চাল্সকে ভালবাসো । তার সাথে কথা বলতে চাইতো । তার সাথে একটা সেলফি তুলতে চাইতো ! কিন্তু জানে হয়তো সেটা কোন দিন সম্ভব নয় তাই তার সাথে যদি সরাসরি কোন চ্যাটিং করা যায় সেটাই তার জন্য অনেক বেশি কিছু হবে । সিন্ড্রেলা সবার আগে নিজের একটা ছবি পোস্ট করলো । সিন্ড্রেলার ফটোফেস অনেক ভাল ছিল । ওর আইডিতেই অনেক ছবি ছিল কয়েক বছর আগে তোলা, যখন তার মা বেঁচে ছিল ।
সিন্ড্রেলা কয়েক সেকেন্ড পরেই অবাক হয়ে দেখলো তার পোস্ট করা ছবি একটা লাইক এসেছে । এবং সেটা আর কারো নয় সেটা স্বয়ং রাজকুমার চাল্সের ! সিন্ড্রেলার বুকের ভেতরে এক অজানা আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল কিন্তু তখনও অনেক কিছু হওয়ার বাকি ছিল । সে দেখতে তার প্রোফাইলে একের পর এক নোটিফিকেশন আসতেছে । নোটিফিকেশন বক্স চেক করে দেখে রাজকুমার তার পাবলিকে দেওয়া সব পোস্টে লাইক দিয়েই যাচ্ছে । সিন্ড্রেলার আনন্দের সীমা রইলো না । এবং তারপরেই সেইক্ষন এসে হাজির । রাজকুমার তার ইনবক্সে নক দিল !
-হাই !
সিন্ড্রেলা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলো না ।
এরপর একের পর কথা হতেই লাগলো । সিন্ড্রেনা যেন স্বপ্নের ভেতরে ছিল । কখন যে রাত বারোটা বেজে গেল সে টেরই পেল না । যখন দেখলো আর সময় নেই সেই রাজকুমারের কাছ থেকে জলদি বিদায় নিল ।
রাজকুমার তাকে চ্যাট বক্স থেকে যেতে বারন করলো কিন্তু সিন্ড্রেলার আর সময় ছিল না । রাজকুমারও কথা বলায় এতো ব্যস্ত ছিল যে সিন্ড্রলার প্রোফাইল থেকে কোন ছবিই সে ডাউনলোড করতে পারি নি । শেষে আর উপায় না দেখে চট করে তার প্রোফাইলের একটা স্ক্রিনশট নিয়ে নিল । তার কাভার ফটোতে ছিল একজোড়া কাচের জুতার ছবি ।
তারপর রাজকুমার আবিস্কার করলো যে চ্যাট বক্সের নীল লেখাটা কালো হয়ে গেছে ।
রাককুমারও গ্রুপ লিভ করে চলে গেল ।
পরদিন রাজ্যের সাইবার সেলকে আদেশ দিল ঐ সিক্রেট গ্রুপ প্রত্যেকটা প্রোফাইল চেক করতে । সেই মেয়েটিকে ছিল সেটা খুজে বের করতে বলল । কিন্তু তারা ব্যর্থ হল । কারন সিন্ড্রেলা অনেক আগেই গ্রুপ লিভ করে চলে গেছে । তার আইডিও ডিএকটিভেটেড । কিভাবে খুজে পাবে ।
রাজকুমার কাছে সিন্ড্রেলার কিছুই ছিল না কেবল মাত্র তার ঐ প্রোফাইলের স্ক্রিন শট ছাড়া । তাই দিয়ে খোজা শুরু করলো । আদেশ দেওয়া হল যে রাজ্যের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সবার ফেসবুক আইডিতে লগিন করে তাদের প্রোফাইল দেখে দেখে এই স্ক্রিনশটের সাথে মিলওয়ালা প্রোফাইলটা খুজে বের করতে হবে !
তাই শুরু হয়ে গেল । রাজ্যের সবার বাসায় গিয়ে গিয়ে ওরা প্রোফাইল চেক করতে লাগলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না সেই প্রোফাইল । শেষে যখন সিন্ড্রেলাদের বাসায় এল তখন দুই বোনের প্রোফাইল চেক করা হল কিন্তু মিল পেল না । তখন তাদের মা বলল যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে তাহলে আমার প্রোফাইলেও একটু লগইন করে দেখতে পারেন !
সাইবার সেলের চিফ খানিকটা বিষম খেল এই কথা শুনে ! তারপর বলল
-এই বাড়িতে আরেক একজন মেয়ে আছে আমি যতদুর জানি ।
সৎ মায়ের মুখ খানিকটা কঠিন হয়ে গেল । বলল
-ওর কোন ফেসবুক আইডি নেই ।
-কিন্তু আমাদের সেটা নিজ থেকে দেখতে হবে । আপনি ওকে ডাক দেন ।
অনিচ্ছা স্বত্তেও সিন্ড্রেলাকে ডাক দিলো । তারপর ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-কি তোমার কি কোন আইডি আছে ?
সিন্ড্রেলা মানা নাড়িয়ে মানা করে দিল । জানালো যে ও ফেসবুক চালায় না ।
হতাশ হয়ে সাইবার সেলের চিফ বেরিয়ে পড়লো । রাজ্যের সব গুলো বাসা দেখা হয়ে গেছে । এখন বাইরের রাজ্যে যেতে হবে । যেমন করেই হোক এই প্রোফাইলের মেয়েকে খুজে বের করতেই হবে ।
ঠিক তখনই তার প্রোফাইলে একটা ইনবক্স এসে হাজির । সেখানে একটা প্রোফাইলে স্ক্রিনশট দেওয়া । একটা ছবি দেখা যাচ্ছে যেটা অনেকটাই তাদের কাঙ্খিত প্রোফাইলের সাথে মিল আছে । কিন্তু কে পাঠিয়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না । কিন্তু সেটা দেখার কোন বিষয় নয় কারন প্রোফাইলের মেয়েটাকে সে চিন্তে পেরেছে । সে একটু আগে যে মেয়েটা বলল যে তার কোন ফেসবুক আইডি নেই সেই মেয়েটাই ।
ওরা গাড়ি ঘুরিয়ে আবার ঐ বাসায় গেল । সিন্ড্রেলাকে ডাকা হল আবারও । তারপর সৎ মা আর দুইবোনকে ঘর থেকে বের হয়ে দিয়ে সাইবার সেলের চিফ বলল
-মা মনি আমি জানি তুমিই সেই মেয়ে । এখন তোমার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে ফেলো তো জলদি । তোমার জন্য রাজকুমার অপেক্ষা করছে । সে দুদিন ধরে ঠিক মত নাওয়া খাওয়া করে নি কেবল তোমার চিন্তায় ।
সিন্ড্রেলা আর চুপ থাকতে পারলো না । নিজের আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে করেই ফেলল । ব্যাস তারাও পেয়ে গেল তাদের কাঙ্খিত মেয়ে কে ! সিন্ড্রেলার দুই বোন আর সৎ মা তো নিজেদের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না কে সিন্ড্রেলাই সেই মেয়ে ।
এরপর ঘটনা সব দ্রুত ঘটতে লাগলো । সিন্ড্রেনা নিজের ফেসবুক প্রোফাইল নেম ব্রোকেন এঞ্জেল থেকে এঞ্জেল সিন্ড্রেলা রাখলো । তারপর রিলেশনশীপ স্টাটাস দিয়ে দিল "এঙ্গেইজ টু প্রিন্স চাল্স" রাজকুমারের সাথে তার একটা সেলফি দেওয়া তার প্রোফাইল পিচকারে !
ধুম করে বিয়ের অনুষ্ঠান হল কদিন পরেই । ইভেন্ট খুলে সবাইকে ইনভাইট করা হল ।
তারপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫