এক ঘন জঙ্গলের পাশে এক গ্রামে এক ফেসবুক সেলিব্রেটি থাকতো । পেশায় সে ছিল একজন রাখাল । তার ছিল অনেক গুলো ভেড়া আর ছাগল । ভেড়া আর ছাগলের পাল নিয়ে সে জঙ্গলের পাশে ঘুরে বেড়াতো আর তার স্মার্ট ফোন নিয়ে একের পর এক স্টাটাস দিতো । তার বেশির ভাগ পোস্ট হত কিভাবে তার ভেড়া আর ছাগলেরা কি কি করে । এই শীটি পোস্ট গুলো আবার ফেসবুক সমাজে খুব জনপ্রিয় ছিল । মানুষ তাকে চোখ বুঝে বিশ্বাস করতো ।
মানুষের এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই রাখাল সেলিব্রেটি ঠিক করলো সে কিছুটা মজা করবে !
একদিন মাঠে ছাগল চড়াতে চড়াতে সে একটু মজা করবে ভাবলো । সে তার স্মার্ট ফোন বের করে গুগল থেকে খুজে একটা বাঘের ছবি বের করলো । আসলে এই বাঘটা তার পাশের জঙ্গলেই থাকতো । তারপর ছবিটা পোস্ট করেই সে নিচে লিখলো
"বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !
বাঘ আমাকে খেতে আসছে !
বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !!"
-feeling স্কেয়ার্ড at জঙ্গল
আর যায় কোথায় । সাথে সাথে পোস্টে লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে গেল । সবাই পোস্ট শেয়ার দিতে লাগলো !
কেউ লিখলো
"এই ভাইটিকে কেউ বাঁচান !"
"এমন কেউ কি নেই যে এই জালেম বাঘের কাছ থেকে এই ভাইটিকে বাঁচাতে পারে !"
"আমরা কি পারি না এই রাখাল ভাইটিকে বাঁচাতে !"
"কোথায় আজকে দেখের প্রশাসন ! এই রাখাল বালক কে নিরাপত্তা দিতে পারে না ! আমরা আজকে কোথায় ?"
"এক লাইক দশ দোয়া"
এতো এতো স্টাটাস দেখে রাখাল বালকের গ্রামের থাকা বেশ কয়েকজন কৃষক ছুটে এল । এসে দেখে রাখাল দিব্যি মনের সুখে তার স্মর্টফোনে গেইম খেলছে ! তারা তো খুব রেগে গেল । বলল
এমন ফাজলামো করার মানে কি !
রাখাল বালক বলল, সরি ! আসলে আমার আইডিটা হ্যাক হয়েছে । হ্যাকার বেটা আমার আইডিতে ঢুকে এমন করছে ।
তারা বিরক্ত হয়ে চলে গেল আর বলে গেল সে যেন তার আইডির সিকিউরিটি আর মজবুত করে ! সেই কৃষক রাখালের এই স্টাটাস দেওয়াতে বিরক্ত হয়ে স্টাটাস দিল । তারা কাজ ফেলে তাকে বাচাতে গিয়ে যা দেখে সেটা বর্ণনা করলো ।
ব্যাস ! আবার শুরু হয়ে গেল অনলাইন আলোচনা ! কেউ কেউ তো পারলে রাখাল বালককে দেখে নেয় । মানুষের এমন খেলা করার জন্য তার শাস্তি দাবী করলো ।
রাখাল বালকও স্টাটাস দিয়ে জানালো যে তার আইডিটা খানিক সময়ের জন্য হ্যাক হয়েছিল । তার জন্য সবার যে অসুবিধা হয়েছে সেটার জন্য সে সরি !
ব্যাস! তার সব অন্যায় বৈধ হয়ে গেল । এক মেয়ে লিখলো
-ভাইয়া তোমাকে আমি সবার থেকে বেশি বিশ্বাস করি । কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না । যা হয়েছে তাতে তো তোমার কোন দোষ নেই । আমি তোমার বিশ্বাস করি !
একটু পরেই সেই কন্যার ইনবক্সে বালকের ইণবক্সে হাজির ! কি কথা হল সেটা অবশ্য জানার দরকার নেই ।
এমন করে কটা দিন চলে গেল । তারপর রাখাল বালক আবার মাঠে বসে বসে বোর হচ্ছিলো দেখে আবারও একই কাজ করলো !
"বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !
বাঘ আমাকে খেতে আসছে !
বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !!"
-feeling স্কেয়ার্ড at জঙ্গল
তার এই স্টাটাস দেখে আবারও সেই কৃষকের দল এসে হাজির ! এবারও তারা দেখলো রাখাল বালক তার স্মার্টফোনে গেম খেলছে । এটা দেখে তার খুবই বিরক্ত হয়ে গেল । তাকে বকাবকি করতে গেলেই রাখাল বলল যে তার আইডিটা আবার হ্যাক হয়েছে । তার আসলে কোন দোষ নেই ।
যথারীতি আবার স্টাটাস পোস্টা-পোস্টি হল !
কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে গেল । তবে অনেক বেশি ফ্যান ফলোয়ার থাকার ফলে একবারে তাকে কেউ অবিশ্বাস করতে পারলো না । তবে কেউ কেউ রাখালের এই জোচ্চুরী ঠিক ধরে ফেলল । তার ভেতরে সেই কৃষকের দল ছিল । তারা কি করলো সবাই মিলে রাখাল বালককে ব্লক করে রাখলো যাতে এই সব জিনিস আর তাদের দেখতে না হয় । কাজ ফেলে আর না আসতে হয় !
দিন কেটে যেতে লাগলো । এতোদিন পাশে জঙ্গলের সেই বাঘ সব কিছু দেখছিলো চুপচাপ ! কিভাবে তার নাম ব্যবহার করে রাখাল দিনের পর দিন লাইক কমেন্ট আর শেয়ার পাচ্ছিলো । তারপর বাঘ একদিন সত্যি সত্যি জঙ্গল থেকে বের হয়ে এল । বাঘকে বের হতে দেখে রাখাল ফেসবুকার এবার সত্যি সত্যিই লিখলো
"বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !
বাঘ আমাকে খেতে আসছে !
বাঁচাও !! বাঁচাও !! বাঁচাও !"
-feeling স্কেয়ার্ড at জঙ্গল
অনালইনে সেই স্টাটাস কত বার শেয়ার হল । তবে এবার সবাই এতো চিন্তিত হল না । কারন এবার সবাই মনে করলো সেই হ্যাকার বেটা আবার রাখালের আইডি হ্যাক করেছে । সেই পোস্টের কমেন্টেই সেই হ্যাকার কে গালি দিতে লাগলো !
রাখাল একের পর এক স্টাটাস দিতেই লাগলো কিন্তু কোন কাজ হল না । কৃষকদের মেসেজ পাঠাতে গিয়ে দেখে তারা তাকে ব্লক করে রেখেছে । তারপর যা হওয়ার তাই হল ! বাঘের আঘাতে রাখাল ফেসবুকার মারা পড়লো !
খাওয়া দাওয়া শেষে বাঘ এবার চেক-ইন দিল
"অনেক দিন পরে একটা ভাল খাওয়া দাওয়া হল"
-eating রাখাল at জঙ্গল !
সেই কৃষকের দল রাখাল কে ব্লক করে রাখলেও বাঘকে ফলো করতো । বাঘের স্টাটাস দেখে দৌড়ে এসে দেখলো সব শেষ হয়ে গেছে !
এডোপ্টেড
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪