বনের ভেতর দিয়ে এক ছেলে খরগোশ যাচ্ছিলো । সারা বন জুড়ে তার দ্রুত গতি আর চটপটে চলাচল নিয়ে কথা হয় । সে নাকি খুবই দ্রুত চলতে পারে, তাকে কেউ ধরতেই পারে না । এই নিয়ে খরগোশের গর্বে মাটিতে পা পড়ে না । কিন্তু তবুও খরগোশের মনে সুখ ছিল না । কারন তার এই সুখ কেড়ে নিয়েছিল বনের সন্দরী আর ধীরস্থির এক মেয়ে কচ্ছপ । সেই মেয়ে কচ্ছপকে দেখলে খরগোশের দম যেন বন্ধ হয়ে আসতো । কিন্তু কাউকে সে কিছু বলতে পারতো না । কেবল মুখে বুঝে সহ্য করা ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না । কারন বাপ দাদার আমল থেকেই খরগোশ আর কচ্ছপেরা কোন দিন এক হতে পারে নি । দুইজন যেন দুই মেরুর বাসিন্দা । তাদের মিলন হবার নয় কোন ভাবেই ।
সেদিনও পথে যেতে যেতে খরগোশের সাথে কচ্ছপের দেখা হয়ে গেল । কথা বলা রজন্য সে কচ্ছপকে জ্বালাতে শুরু করলো, একটু ইয়ার্কি করার ইচ্ছে ছিল তার । কারন খরগোশ জানতো রেগে গেলে কচ্ছপকে দেখতে আরও সুন্দর লাগে । মেয়ে কচ্ছপের ছিল সেই পরিমান আত্মসম্মান । সে তখনই খরগোশ কে চ্যালেন্স বসলো । দৌড় প্রতিযোগিতা হবে । দেখা যাক কে জিতে ! কিন্তু খরগোশ সেটা চায় নি কিন্তু কচ্ছপ যে ওর ইয়ার্কি এভাবে সিরিয়াসলি নেবে সে সেটা বুঝতে পারে নি । তাই বাধ্য হয়ে যে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে রাজি হল ।
পুরো জঙ্গল এসে হাজির । সবাই প্রস্তুত ।
পেঁচা বাশি বাজিয়ে দৌড় শুরু করে দিল । খরগোশের যে গতি, সে এক মিনিটেই চলে গেল অর্ধেকের বেশি । তারপর গাছের আড়ালে বসে পড়লো তার প্রিয়তমাকে দেখার জন্য । সে চাইলে তখনই ফিনিং লাইনের কাছে চলে যেতে পারতো কিন্তু এমনটা করলে তার মনের মানুষটি সারা জীবন ছোট হয়ে যাবে । সে তার ভালবাসার মানুষটিকে সবার সামনে তো ছোট করতে পারে না । তাই সে বসেই রইলো । অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন তার মনের মানুষ তাকে ক্রশ করে চলে যাবে । শেষে যখন কচ্ছপের দেখা পেল তখন ও চোখ বুঝে খানিকটা ঘুমের ভান করলো । কচ্ছপ ভাবলো খরগোশ বুঝি ঘুমিয়ে রয়েছে কিন্তু তখনও কান পেতে কচ্ছপের পায়ের আওয়াজ শুনছিল । কচ্ছপ চলে যাওয়ার পরে খরগোশ আবার চোখ মেলল । চাইলে তখনও সে এক নিমিষেই কচ্ছপকে টপকে যেতে পারে কিন্তু সে গেল না । কেবল তার মনের মানুষটিকের দিকে তাকিয়ে রইলো । তাকে জিততে দিল ।
ভালবাসার জন্য খরগোশ সব কিছু ত্যাগ করে দিল । সব থেকে দ্রুত গতির প্রানীর হয়েও ধীর গতির প্রাণির কাছে হেরে গেল । নিজের গৌরবের জিনিস টা ভালবাসার জন্য ত্যাগ করে দিল !
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫২