-মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ?
-মানে ?
-মানে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য রাজি হও প্লিজ !
-অপু সাহেব আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে । বুঝেছেন ! আপনার কাছে রিলেশন করাটা একটা ছেলে খেলা তাই না ?
-আমার ব হু দিনের শখ একটা ডাক্তার মেয়ের সাথে প্রেম করবো । আর আমি খুব ভাল করেই জানি যে ডাক্তারি পাশ করার সাথে সাথেই তোমার বাবা মা তোমাকে কোন ডাক্তারের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে । জীবনে কি করলে তাহলে বল !
-দেখুন...
-সত্যি ! একবার ভেবে দেখো । সারা জীবন মা আর বাবার ইচ্ছার মত করে জীবনটা পার করে দিলে । মাত্র একটা সপ্তাহ নিজের মত কাটাও প্লিজ ! প্লিজ .....
অপুকে আমি বেশ কিছু দিন ধরেই চিনি । অনেক দিন ধরেই ছেলেটা আমার লিস্টে আছে । কিভাবে এড হয়েছিলো আমি নিজেই জানি না । তবে ইদনিং বেশ কথা হয় । আর আমার কেন জানি নিজেরও ছেলেটার সাথে কথা বলতে ভালই লাগে । কদিন আগে ছেলেটা ব্রেক আপ হয়েছে । আমি ওকে শান্তনা দিতে গিয়ে দেখি ছেলেটা তো মোটেই দুঃখে নেই । বরং যেন ব্রেকাপ হয়ে ছেলেটার জন্য ভাল হয়েছে ।
আর আজকে ছেলে অদ্ভুদ একটা কাজ করে বলসো ।
অবশ্য তার একদিন আগে একটা স্টাটাস নিয়ে আমি খানিকটা কনফিউজ ছিলাম । তার নাকি কোন ডাক্তারের সাথে প্রেম করার অনেক শখ ! আর আজকে আমাকে বলে কি না আমার গার্লফ্রেন্ড হবে । আমি রাগ করবো কি আমার কেন জানি হাসি এল । তবে শেষে কথা বার্তা হয়ে এল এক সপ্তাহের জন্য আমাকে তার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে এবং হবেই ।
আমি বললাম
-জি না !
-জি হ্যা !
-না !
-হ্যা !
তারপর ছেলেটা আরেকটা পাগলামো করে বসলো । আমাকে রিলেশনশীপ রিকোয়েস্ট পাঠালো । আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । ছেলেটার মাথায় কি চলছে কে জানে ! তার থেকেও বড় কথা আমার মনের ভেতরে কি চলছে আমি নিজেও জানি না । ছেলেটা সারাটা জীবন আমি সত্যি সত্যিই বাবা মায়ের কথা মতই চলেছি । আমি নিজেকে নিজেই অবাক করে দিয়ে ছেলেটার রিকোয়েস্ট কনফার্ম করে দিলাম ।
তারপর অপুকে ইনবক্স করে বললাম
-এক সপ্তাহ ! ওকে ?
প্রথমে ছেলেটা একটা বড় স্মাইলি দিল । তারপর বলল
-আচ্ছা !
-আর একটা দিনও বেশি না !
-ওকে বাবা ! ওকে ।
তারপর সত্যি সত্যি ছেলেটার সাথে এক সপ্তাহের প্রেম শুরু হয়ে গেল । প্রথম দিন কেবল ফোনে কথাই বললাম । ছেলেটা এতো কথা বলতে পারে । অবশ্য আমার কথা শুনতে এবং বলতে খারাপ লাগছিলো না । ওর জীবনের প্রথম থেকে শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত যেন সব কিছুই আমাকে বলে ফেলল । আমিও রাত জেগে ছেলেটার সাথে অনেক কথাই বললাম ।
জানি সব মিথ্যা তবুও বলতে খারাপ লাগছিলো না ।
পরদিন ক্লাসে গিয়ে সবাই আমাকে কত রকম প্রশ্ন করলো ।
ছেলেটা কে ?
কিভাবে এসব হল !
তারা তো বিশ্বাসই করতে চাইলো না যে আমি এমন একটা কাজ করতে পারি আরও কত কিছু ! আমি বেশি ভাফ প্রশ্নের উত্তরই রহস্যময় ভাবে দিলাম । সবাই খুবই অবাক হল আমার কথা শুনে । আমার অবশ্য মন্দ লাগছিলো না ।
ক্লাস শেষ করে আমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো । অপু আমার ক্যাম্পাসে এসে হাজির । আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । ছেলেটা সবার সামনে এসেই আমার হাত ধরলো । একটু লজ্জা লাগছেও ওর সাথেই ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম । ছেলেটা আসলেই এমন ভাবে কথা বলছিলো যেন কতদিন আমাদের চেনা পরিচয় !
তারপের তিনটা দিন যেন স্বপ্নের মত কেটে গেল । এক সাথে ঘোরাঘুরি মুভি দেখা আর কত কিছু । সত্যি বলতে কি আমি জীবনে যা করি নি এই দুই দিনে সব কাজ করে ফেললাম । চার নাম্বার দিনে আমাদের ঝগড়া বেঁধে গেল । আমি নিজে নিজের ঝগড়া করার ক্ষমতা দেখে আমি নিজঐ অবাক হয়ে গেলাম । পাশের ঘর থেকে মা এসে জানতে চাইলো কার সাথে কথা বলছি ।
ছয় নাম্বার দিনটা আমাদের মাঝে কোন কথাই হল না । ফেসবুকে তাকিয়ে দেখি সে মেয়েদের পচিয়ে স্টাটাস দিতে লাগলো । আমি কোন কথা বললাম না । তবে মজা লাগছিলো । প্রেম করার অনুভুতিটা টের পাচ্ছিলাম । মজাও পাচ্ছিলাম খুব । সাত নাম্বার দিনে অপু নিজে আমার কাছে এসে হাজির আমাকে খানিকটা জোর করে বাইরে নিয়ে এল । আমি বেশ কয়েকবার জানতে চাইলেও বলল না । তবে কিছু সময় পরে টের পেলাম আমরা মাওয়ার দিকে যাচ্ছি । দুপুরে তাজা ইলিশ ভাজা দিয়ে খাওয়া দাওয়া চমৎকার হল । তারপর দুজন ট্রলার ভাড়া করে নদীর বুকে দুজনে বের হয়ে পড়লাম । সত্যি বলতে কি এতো চমৎকার লাগছিলো আমি নিজে বলে বোঝাতে পারবো না । যেতেই ইচ্ছে করছিলো না । যখন ফিরে আসছিলাম তখন অপুর মন খারাপ মনে হল খানিকটা । আমি বললাম
-কি হল আমরা এতো চমৎকার সময় কাটালাম । আর তোমার মন খারাপ ?
-হুম !
-কেন ?
-বৃষ্টি হয় নি একবারও !
-বৃষ্টি দিয়ে কি করবে ?
-ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো । কিন্তু তা আর হল কই !
-থাক সব ইচ্ছে পূরন হতে নেই ।
-তাও ঠিক অবশ্য !
ফেরার পথে বাসের ভেতরে ওর কাধে মাথা দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেই জানি না । ঢাকা এসে ও নিজেই আমাকে ডেকে তুললো । বাস থেকে নেমে নিজেই রিক্সা ঠিক করে আমাকে বাসায় পৌছে দিল । রাত হয়েছিলো তবুও অপুর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো ছেলেটার মন খারাপ খানিকটা !
যাওয়ার সময় ছেলেটা আরেকটা অদ্ভুদ কাজ করলো । আমার কপালে ছোট্ট করে একটা চুম খেল চট করে । তারপর বলল
-থ্যাঙ্কিউ !
-তোমাকেও !
আমি যদি জানতাম ছেলেটার মনে তখন কি চলছে । ঐদিন রাতেই লক্ষ্য কারলাম যে আমার রিলেশনশীপ স্টাটাস আর নেই । অপুকেও আর কোথাও খুজে পেলাম না । একবার মনে হল আমাকে কি ব্লক করে দিল ? পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে ওর আইডি বন্ধ । কেউ কোন কিছু বলতে পারলো না । ও বলেছিলো মাত্র এক সপ্তাহের প্রেমিক হবে । তাই বলে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে ?
তা কিভাবে হয় !
আমি খুব বেশি আমলে নিলাম না । দিন ভাল গেছে । আমিও জানতাম এমন হবে । এর বেশি কিছু না । আমারও প্রথমে এভাবে ব্লক মারার ইচ্ছে ছিল । তবে ছেলেটা নিজেই এভাবে গায়েব হয়ে গেল কেন ?
পরদিন সন্ধ্যায় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এল । আমি জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছিলাম তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো । তাকিয়ে দেখি অপুর ফোন । আমি রিসিভ করলাম ।
-একটু নিচে আসবে ?
-কোথায় তুমি ?
-তোমার বাসার নিচে ।
-কেন ?
-আসো প্লিজ !
আমি খুব বেশি চিন্তা না করে নিচে নেমে এলাম । অপু ছাতা মাথায় দিয়ে অপেক্ষা করছিলো আমি সামনে আসতেই ওর চোখটা আমি কেমন ঘোলা ঘোলা দেখতে পেলাম ! আমি বললাম
-কি হয়েছে ? তোমাকে এমন মনে হচ্ছে কেন ?
-এমনি । দেখো না আজকে বৃষ্টি এসেছে ।
-হুম !
-ভিজবে ?
-কি ! এখন ?
-হ্যা ! আর হয়তো সুযোগ আসবে না ।
-এক সপ্তাহ কিন্তু পার হয়ে গেছে ।
-এই জন্যই তো অনুমুতি চাইছি !
-আচ্ছা চল !
প্রবল বৃষ্টিতে আমরা ছাতা মাথায় দিয়ে একসাথে হাটতে লাগলাম রাস্তার উপরে । খারাপ লাগছিলো না অবশ্য বরং ভাল লাগছিলো অনেক । জানলা দিয়ে মা আমাদের দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে ছিল । তারপরঐ অপু সেই অদ্ভুদ কাজটা করলো । ছাতা ফেলে আমার দিকে এগিয়ে গেল । আমি ওর চোখের তাকিয়েই বুঝে গেলাম ও কি করতে যাচ্ছে ! আমি কেন জানি বাঁধা দিলাম না । চারিদিকে বৃষ্টি পড়ছে । আমার মাথা থেকে ছাতাটা এমনিতেই সরে গেল । আমি একদম ভিজে গেলাম । আমার অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই । আমার দৃষ্টি অপুর দিকে । ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ও আমাকে কি গভীর ভাবে চুমু খেল সেটা আমি বলতে পারবো না ! আমি তখন যেন অন্য জগতে ছিলাম । আমরা দুজনেই দিলাম !
তারপর ও আর আমি বেশ খানিকটা ফুটপাতের উপরে বসে বসে ভিজলাম একসাথে । একটা সময়ে ও উঠে চলে গেল । আমি অদ্ভুদ একটা অনুভুতি অনুভূতি হচ্ছিলো !
কিন্তু পরের দিনেই টের পেলাম আমি কিছু যেন একটা মিস করছি । পরের সপ্তাহে আমি অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম যে আমি অপুকে মিস করছি । ওর সাথে কাটানোর সময়টাকে মিস করতে শুরু করেছি ।
নিজের কাছেই প্রশ্ন করার চেষ্টা করলাম যে এমন কেন হচ্ছে ?
এমন তো হওয়ার কথা না ! আরও সপ্তাহ খানেক পার না হতে হতে আমি বুঝতে পারলাম ছেলেটাকে আমি আসলেই মিস করতে শুরু করেছি । আর আমি কোন ভাবেই সেটা নিজের মন থেকে বের করতে পারছি না । আর এই দিকে ছেলেটার কোন খোজ নেই । মানে সেই যে আইডি বন্ধ করেছে আজও খুলে নি !
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭