somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ল্প-গল্পঃ প্রোজেক্ট নোভা সি-টু

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গল্পের শুরু নিশুতি রোডে


আমার প্রায় দিনেই বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায় । এমন না যে, আমি যেখানে কাজ করি সেখানে অনেক কাজের চাপ বরং আমি ইচ্ছে করেই সেখানে থেকে যাই । কেন যেন কর্ম ক্ষেত্রে থাকতে ভাল লাগে । বাসায় এমন কেউ নেই যে আমার জন্য অপেক্ষা করবে । তার চেয়ে বরং কাজই করে যাই । বছর চারেক আগে বাবা আর মা দুজনেই সবুজ শহরে থাকার কার্ড পেয়ে গেছে । তারা এখন সেখানে থাকে । আমি এখনও রেড সিটি ছাড়ার অনুমুতি পাইনি । জানি না আদৌও এই শহর ছেড়ে সবুজ শহরে যাওয়া হবে কি না ।

মা অবশ্য কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছিলো না । তার এক কথা, আমাকে ছেড়ে সে কিছুতেই যাবে না । তবে সে থাকতেও পারে নি । তাকে ঠিকই চলে যেতে হয়েছে । সিকটেক ফাইভ স্টেটের নিয়ম কানুষ খুবই কড়া । প্রতিটা নিয়ম সবাই কঠিন ভাবে মেনে চলতে হয় । নয়তো সারা জীবন এই রেড জোনেই জীবন কাটাতে হবে । মা অবশ্য তাতেও রাজি ছিল কিন্তু আমি জোর করে তাদের পাঠিয়ে দিলাম । এখন তাদের বয়স হয়েছে । জীবন ভর তারা অনেক কষ্ট করেছে এখন একটু শান্তিতে থাকুক তারা ।

আর তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে একদিন তো আমি যেতেই পারি তাদের কাছে । সেই অনুমুতি তো রয়েছেই । তারা চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি অনেকটা একাই হয়ে গেছি বলতে গেলে । আগে প্রত্যেক সপ্তাহেই যাওয়া হত গ্রিন সিটিতে কিন্তু ইদানিং কেন জানি যাওয়া হয় না । মাসে একবার যাওয়া হয় কিংবা তারও কম । অবশ্য এর পেছনে অন্য একটা কারনও আছে ।

স্টোর হাউজ থেকে বের হতে হতে প্রায় রাত ১২টা বেজে গেল । আমি বাইকটা বের করে নিজের বাসার দিকে রওনা দিলাম । শুনশান নিরবতা চারিদিকে । এতো রাতে কারোই বাইরে থাকার অনুমুতি নেই কেবল মাত্র অল্প কিছু মানুষের বাদ দিয়ে, যাদের কাজ এই রাতের বেলা । আমার মাঝে মাঝে নাইট ডিউটি থাকে, তখন আমাকে এই রাতের বেলাতেই বাসা থেকে বের হতে হয় । আমার রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুমুতি আছে ।

আমি শুনশান নিরব রাস্তা দিয়ে নিজের বাইক চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । এই সময়টাতে নিয়ম কানুন একটু শিথিল হয়ে ওঠে । গার্ডেরা একটু ঝিমুতে থাকে । আমি পাশ দিয়ে চলে গেলেও দেখেও না দেখার ভান করে । মাঝে মাঝে নির্ধারিত গতিসীমা থেকে একটু বেশি তুলে ফেললেও তাই খুব একটা সমস্যা হয় না ।

আমার বাসাটা একেবারে শহরের শেষ মাথায় । পাকা রাস্তা পার করে আরও কিছুটা পথ যেতে হয় । তবে তার আগে বেশ খানিকটা পথ একেবারেই জনমানব শূন্য পথে চলতে হয় । শহরের শেষ মাথায় হওয়ার এখানে গার্ডও নেই । আমার মাঝে মাঝেই এই জায়গায় বাইক চালাতে একটু গা ঝমঝম করে । আমি এই রাস্তাটার নাম দিয়েছি নিশুতি রোড । এক মাত্র আমিই এই রাস্তাটা দিয়ে যাওয়া আশা করি । অবশ্য শহরের আরও কিছু লোক এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তবে সেটা মাঝে খুব বেশি হলে এক কি দুইবার । আসলে এটা একটা বিকল্প পথ । অন্য দিক দিয়েও যাওয়া যায় । রাস্তাটা অন্য স্টেটের দিকে গেছে । তবে সেটা কোথায় আমরা এই শহরের মানুষ কেউ জানি না । আমাদের সেদিকে যাওয়ার কোন অনুমুতি নেই ।

অনেক বার ভেবেছি এখান থেকে চলে যাবো, আরও সামনের কোন জায়গাতে বাসা বানাবো কিন্তু কেন জানি ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে নি । এখানেই এই নির্জনতার ভেতরেই আমার থাকতে ভাল লাগে ।

আমি যখন নিশুতি রাস্তার অর্ধেকটা পার করেছি তখনও একটা আলো মত দেখতে পেলাম সামনে । একটু ভয় হল মনের ভেতরে । এই দ্বাবিংশ শতাব্দিতে এসে রাতের বেলা আলো মত কিছু দেখে অন্য কিছু ভাবাটা খানিকটা হাস্যকরই শোনাবে ।

আমি আরও একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম যে কোন অলৌকিক কারনে আলোটা দেখা যাচ্ছে না । আগুন ধরেছে । আরও একটু কাছে যেতেই আবিস্কার করলাম যে আগুনটা এমনি এমনি ধরে নি । রাস্তার পাশে কোন যান বাহন এক্সিডেন্ট করেছে । সেখানে থেকে আগুনের সুত্রপাত । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে এতো রাতে তো কারো গাড়ি আসার কথা না । তাহলে ?

আমি যখন বাইকটা নিয়ে একেবারে কাছে চলে এলাম তখন সম্ভবত জীবনে সব থেকে অদ্ভুদ আর লোমহর্ষক দৃশ্যটা দেখতে পেলাম । জ্বলতে থাকা গাড়ির আলো আর নিজের বাইকের হেড লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম জলন্ত গাড়ি থেকে কিছুটা দুরে একটা কালো লম্বা চুলের মেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে । এবং সে তার নিজের হাত কামড়ে খাচ্ছে । আলো পড়তেই আমার দিকে তাকালো । তার মুখে লেগে থাকা রক্ত আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম ।

একটা তীব্র ভয়ের স্রোত আমার পুরো শরীর বয়ে বয়ে গেল । মনের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো বাইক থামিও না । পালিয়ে যাও... পালিয়ে যাও ...




নোভার আগমন

আমি পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম । বাইকে ঘুরিয়ে সব থেকে কাছের স্টেশনে যেতে হবে আমাকে । যদিও সেটাও এখান থেকে বেশ খানিকটা দুরে । তবে আশার কথা হচ্ছে আমি বাইক টান দিলে পেছনে পরে থাকা মানুষটা আমাকে ধরতে পারবে না । কিন্তু যখনই আমি বাইকটা টান দিতে যাবো তখনই পেছন থেকে আওয়াজটা কানে এল ।

-হেল্প । প্লিজ হেল্প মি ...

মেয়েটার কন্ঠে এমন কিছু ছিল যে আমার মনে হল মেয়েটা আসলেই বিপদে পরেছে । যতই ভয় পাই না কেন এভাবে সাহায্যের আকুতি প্রত্যাক্ষান করা খুব সহজ কাজ নয় । আমি বাইকটা আবারও মেয়েটার দিকে ফিরালাম । ঠিক থামলাম মেয়েটার সামনে । মেয়েটা ততক্ষনে পাকা রাস্তার উপরে মুখ উল্টে পরে গেছে । দেখে মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়েছে । আমি হাতের ক্ষতের দিকে ভাল করে তাকালাম । প্রথম দর্শনে মনে হয়েছিল মেয়েটা তার হাত কামড়ে খাচ্ছে কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা আসলে মেয়েটা কিছু যেন টেনে বের করতে চেয়েছে । মেয়েটার হাতের ভেতরে এমন কি থাকতে পারে যে যেটা সে টেনে বের করতে চেয়েছে ?

ঠিক তার পাশেই জিনিসটা খুজে পেলাম । ইঞ্চি দুয়েক লম্বা, পাতলা আর খানিকটা চ্যাপটা ! পাতলা জিনিসটা থেকে যে মৃদ্যু আলো জ্বলছে সেটা আমার চোখ এড়ালো না । যখন জিনিসটা চিনতে পারলাম তখন আমার বিশ্ময়ের সীমা রইলো না !

মেয়েটার হাতে একটা ট্র‌াকিং ডিভাইস লাগানো ছিল ।

মানে কি ?

এই মেয়েকে ?

তার হাতে কেন ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো থাকবে ?

নিয়ম অনুযায়ী কোন মানুষের শরীরের এমন কিছু সেট করা যাবে না যেটা দিয়ে তাকে ট্র‌াক করা যায় । সবার কাছে যোগাগাযের জন্য মোবাইল আছে সেটা থাকাই যথেষ্ঠ । কারো শরীরের ভেতরে কিছু স্থাপন করা মানে হচ্ছে তার স্বাধীনতা খর্ব করা, তার চলাচল সীমিত করা । এটা কোন ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না । তাহলে এই মেয়েটার শরীরে এটা লাগানো ছিল কেন ?

আমার মন আবারও কু ডেকে উঠলো । মনের ভেতরে ডেকে কেউ যেন বলে উঠলো এখান থেকে ভালই ভালই কেটে পড় । বিপদে পড়বে !

কিন্তু মেয়েটাকে এভাবে একা রাস্তার উপর ফেলে রেখে যেতে মন বলল না । আমি সবার আগে পা দিয়ে চাপ দিয়ে ডিভাইস টা নষ্ট করে ফেললাম । যে বা যারা মেয়েটার শরীরে এটা স্থাপন করেছিল তারা হয়তো চলেো আসতে পারে । মেয়েটা যেহেতু পালিয়ে এসেছো তাতে মেয়েটার আবার বিপদ না হয় ! আমি জলদি এখান থেকে কেটে পড়ার পরিকল্পনা করলাম ।

পরিকলপনা খুব সহজ । আমি মেয়েটাকে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে সব থেকে কাছের মেডিক্যাল সেন্টারে রেখে আসবো । ব্যাস আমার ঝামেলা শেষ ।

আমি পকেট থেকে রুমাল বের করে মেয়েটার হাতের ক্ষত স্থানে বেঁধে দিলাম । তারপর মেয়েটাকে একটু উঠানোর চেষ্টা করলাম । একটু উঠাতেই মেয়েটা কেমন নড়ে উঠলো । আমি বললাম

-চল তোমাকে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাই ।

-না না না ! ওরা আমাকে ধরে ফেলবে । না ধরে ফেলবে ?

-ওরা কারা ?

-ওরা ধরে ফেলবে। প্লিজ আমাকে বনের ভেতরে কোথাও রেখে আসুন অথবা এখান থেকে দুরে !

-কিন্তু আপনি আহত হয়েছেন ?

-সমস্যা নেই আমি ঠিক হয়ে যাবো । আমাকে দয়া করে এখান থেকে দুরে কোথায়ও রেখে আসুন প্লিজ ।

অন্য কেউ হলে হয়তো আমি এমনটাই করতাম কিন্তু আগেই বলেছি মেয়েটার কন্ঠে কিছু একটা আছে । যেটা আমাকে মেয়েটা কে এভাবে একা ফেলে যেতে ইচ্ছে হল না । আমি বললাম

-আপনি বাইকে আমার পেছনে বসতে পারবেন ?

-মনে হয় পারবো ।

-আচ্ছা আসুন তাহলে ।

যদিও কাজটা ঠিক হচ্ছে না তবুও কিছু করার নেই । মেয়েটাকে কোন ভাবেই একখানে একা ফেলে চলে যাওয়া উপায় নেই । হয়তো মেয়ে নিশ্চাপ অথবা বড় কোন অন্যায় করেছে যার কারনে আমাকেও হয়তো বড় কোন বিপদে পড়তে হতে পারে কিন্তু আমি মেয়েটাকে একা রেখে চলে যেতে পারলাম না ।

বাসায় এসে মেয়েটার হাতে সবার আগে ব্যান্ড এইড লাগিয়ে দিলাম । আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে মেয়েটা খানিকটা সামলে উঠেছে । একটু যে অবাক হলাম না তা বলবো না ! বিশেষ করে জ্বলন্ত গাড়িটার অবস্থা দেখে মনে হয়েছিলো গাড়িটা খুব জোড়ে কিছুর সাথে ধাক্কা লেগেছিলো কিংবা অন্য কিছু হয়েছিলো । এটো বড় এক্সডেন্ট সত্ত্বেও মেয়েটার শরীরের খুব বড় রকমের আঘাতের কোন চিহ্ন নেই । কেবল হাতের আঘাতটা ছাড়া ।

তবে মেয়েটার সাথে এখন কথা বলা ঠিক মনে করলাম না । মেয়েটা আগে একটু বিশ্রাম নিক । মেয়ের হাট মুখ থেকে রক্ত মুখে পরিস্কার করিয়ে দিলাম । তারপর তোয়ালে দিয়ে যকখন মেয়েটার মুখ মুছে দিয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে তখন ছোট খাটো মত একটা ধাক্কার মত খেলাম ।

মেয়েটার চেহারা খুবই সুন্দর । তবে খুব যেন পরিচিতও মনে হল । কোথায় দেখেছি ?

আরও কিছুটা সময় মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটাকে কোথায় দেখেছি আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না । শেষে মনে করা বাদ দিয়ে আমি টিভির ঘরের দিকে রওনা দিলাম । কাল আমার নাইট ডিউটি । একটু রাত করে টিভি দেখবো তারপর একটু বেলা করা ঘুমাবো । কালকে এই মেয়েকে নিয়ে কি করবো সেটা কাল ভাবা যাবে !

দরজাতে খুব জোরে কেউ আঘাত করছে । ঘুম ভাঙ্গার প্রথম কয়েক সেকেন্ড আমি বুঝতে পারলাম না আমি কোথায় আছি । কারন প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে আমি সবার আগে যে দৃশ্যটা দেখি আজকে তেমন কিছু দেখছি না । কিন্তু সেটা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য । নিজের ড্রয়িং রুমটা চিনতে পারলাম মুহুর্তেই ।

আমি টিভির ঘরে শোফার উপরে শুয়ে ছিলাম !

পর মুহুর্তেই সব মনে গেল । গত রাতে কি হয়েছিল, কেন আমি এখানে ?

মেয়েটা ?

মেয়েটা কেমন আছে ?

আমি যখনই নিজের শোবার ঘরের দিকে উঠতে যাবো তখনই আবারও দরজায় ধাক্কার আওয়াজ পেলাম । এবার আরও জোরে । আমার মনে হল যে আমি যদি এখনই দরজা না খুলি তাহলে বাইরে যারা আছে তারা দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়বে । আমি কোন মতে চিৎকার করে জানতে চাইলাম

-কে ?

দরজার বাইরে থেকে প্রায় সাথে সাথেই আওয়াজ এল

-পুলিশ ! দরজা খোল

আমি আমার শোবার ঘরের দিকে যাওয়ার আর সুযোগ পেলাম না । জানি আর গিয়ে লাভও নেই । ওর এতো সময়ে নিশ্চয়ই আমার বাসার চারিপাশে ঘিরে ফেলেছে । আমি দরজার দিকে দৌড়ে গেলাম । তবুও শেষ চেষ্টা করতে হবে ।

আমি দরজা খুলতেই কয়েকজন কালো পোষাক পরা সৈনিক আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো । আমার অনুমুতির তোয়াক্কা না করে ছড়িয়ে পড়তো বাসার ভেতরে ।

খাইছে আমারে স্টেট পুলিশ !

রেড সিটির পুলিসের পোষাক লাল রংয়ের । আমি তো ভেবেছিলাম রেড পুলিশই আসবে কিন্তু এখানে তো স্টেট পুলিশ এসে হাজির । তার মানে অনেক বড় কোন ঝামেলা হয়েছে । ঐ মেয়েটা নিশ্চয়ই সাধারন কেউ না । আমি ধাক্কা খেয়ে যখন নিজেকে খানিকটা সমলেছি তখনই সামনে দাড়ানো লোকটার দিকে আমার চোখ গেল । আমি বেশ বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম ।

মনের ভেতরে প্রথম যে প্রশ্নটা উদোয় হল সেটা হচ্ছে এই লোকটা এখানে কি করছে ?

এই লোকের তো এখানে থাকার কথা না । মোটেই না । আমি আমার চিন্তা ভাবনা আবারও খানিকটা সুস্থির করে নেওয়ার চেষ্টা করলাম । মনে হল আমি খুব বড় কোন ঝামেলাতে পড়তে যাচ্ছি, কিংবা এতো ক্ষনে আমি হয়তো পরেও গেছি ।

মেয়েটা আসলেই আমার বাসাতে নিয়ে আসা উচিৎ হয় নি ।

অবশ্য এই লোক অন্য কোন কাজেও আসতে পারে । আমার এই ভয়টা অনেক দিন থেকেই আছে । খুব বড় ধরের কিছু অপরাধ আমি গোপনে করেছি । তা যদি ধরা পরে তাহলে আমাকে সারা জীবন ব্ল-থ্রী সাগরের কারাগারে কাটাতে হবে ।

আমার সামনে সিকটেক ফাইভ স্টেটের পুলিশ চিফ ইরোন আইভান দাড়িয়ে আছে । পুরো সিকটেক ফাইভ স্টেট এই লোককে জমের মত ভয় পায় । লোকে বলে প্রেসিডেন্টের পরেই এই লোক সব থেকে বেশি ক্ষমতাবান । যে কাউকে যখন তখন কোন কারন দর্শানোর বাদ দিয়েও গায়েব করে দিতে পারে । কারো কাছে তার জবাবদিহি করতে হয় না ।

আমার মনে হল আমি সব কিছু এখনই বলে দেই । কিন্তু তখনই এই লোক আমাকে প্রশ্ন করবে যে আমি কেন তখন পুলিশকে খবর দেই নি । এটার কোন জবাব আমার কাছে নাই । তাহলে ?

ইরোন আইভান আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চুপচাপ হাটতে হাটতে আমার ঘরের শোফার উপর গিয়ে বসলেন । আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না । মনে হল যে সত্য কথাটা বলে ফেলাই ভাল । কিন্তু যখনই বলতে যাবো তখনই ভেতর থেকে সেই চারজন গার্ড ফিরে এল ।

পুলিশ চিফের দিকে তাকিয়ে বলল

-স্যর । ভেতরে কেউ নেই !

নেই !

আমি নিজেই খানিকটা চমকে গেলাম । তবে ওরা যখন খুজে পাই নি তখন নিশ্চয়ই মেয়েটা কোথাও পালিয়ে গেছে । যেতেই পারে !

আমি নিজের ভেতরে একটু ভারহীন অনুভব করলাম । তবে মনের ভেতর থেকে ভয়টা পুরোপুরি চলে গেল না । পুলিশ চিফ আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-কাল তুমি বাসায় এসেছো কখন ?

-এই তো ১২টার দিকে !

-আসার পথে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছো ?

-ক-কই না তো ! অবশ্য এই রাস্তাটা খুব নির্জন । এখানে সব কিছুই অস্বাভাবিক লাগে ।

পুলিশ চিফ কোন কথা না বলে ঘরের চারিদিক দেখতে লাগলো । তারপর বলল

-এতো দুরে থাকো কেন ?

-এমনি স্যার । নির্জনতা ভাল লাগে !

-আচ্ছা !

তারপর সে উঠে পড়লো । আমার দিকে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল

-এখানে আমার নাম্বার আছে । যদি সামান্যতম কোন কিছু অস্বাভাবিক লাগে তাহলে আমার সাথে সাথে ফোন করবে । ঠিক আছে ? খুব বড় একটা ঝালেমা হয়ে গেছে । যদি সঠিক ভাবে সাহায্য করতে পারো তাহলে একেবারে সোজা হোয়াইট সিটিতে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করবো আমি নিজে !

হোয়াইট সিটি !

হোয়াইট সিটি হচ্ছে আমাদএর স্টেটের স্বর্গ বলা চলে । গ্রিন সিটির থেকে সেখানে উচ্চ লেভেলের লোকজনের বাস । শুনেছি সেখানে যারা থাকে তারা যা ইচ্ছে সব করতে পারে । এমন কোন কাজ নেই কিংবা তাদের এমন কোন ইচ্ছা নেই যা অপূর্ণ থাকে !

আমি কার্ডটা হাতে নিতে নিতে বললাম

-অবশ্যই । আমি কোন কিছু দেখতে পেলেই আপনাকে ফোন দিবো !

আমার সামনে দিয়ে ওরা যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিলো ঠিক তেমনি ঝড়ের বেগেই চলে গেল । আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে থেকে ওদের চলে যাওয়া দেখলাম । তারপর দরজা বন্ধ করে নিজের শোবার ঘরের দিকে হাটা দিলাম ।

মনের ভেতরে চিন্তা কাজ করছে মেয়েটা গেল কোথায় ?

কোথায় যাবে ?

পুরো ঘর বাড়ি আবারও খুজে দেখলাম ।

নাহ কোথাও নেই । তাহলে কি দরজা খুলে কোন দিক দিয়ে বের হয়ে গেল ?

না এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই ।

তাহলে ?

তখনই আমার মনে একটা সন্দেহ দেখা দিল । যদিও মন বলছিলো যে এটা হবার নয় । কিন্তু মেয়েটা অন্য কোন যায়গায় যাবে ?

আমি আমার শোবার ঘরের ওয়াল আলমারির কাছে গিয়ে হাজির হলাম । আলমারির একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে চাপ দিতেই আলমারিটা মৃদ্যু শব্দ করে খুলে গেল । একটা সিক্রেটর দরজা !

আমি আগেই বলেছিলাম আমি নিজে কিছু অন্যায় করেছি যেটা জানতে পারলে হয়তো আমাকে সারাটা জীবন ব্ল-থ্রী সাগরের কারাগারে কাটাতে হবে । আমার সেই অন্যায় গুলো এখান থেকে করা । মানে এখানে বসেই করা ।

আমি সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম । যা ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হল । মেয়েটা আমার পিসির সামনে বসে আছে । আমাকে আসতে দেখেই উঠে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-ওরা চলে গেছে ?

আমি তখন অবাক হয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি ! কাল রাতেই আমার কেন জানি মেয়েটার চেহারা একটু একটু পরিচিত মনে হচ্ছিলো । তবে কাল রাতের কারনে আমি ঠিক মত মেয়েটাকে চিন্তে পারি নি । কিন্তু এখন মেয়েটাকে চিন্তে পেরেছি !

কি হচ্ছে এসব আমার সাথে ?

স্টের পুলিশ চিফ ইরোন আইভান কেন এসেছিলো সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না ।

আরে এতো হোয়াইট প্যালেসের ভাবী প্রিন্সেস !

আগামী মাসেই প্রেসিডেন্ডের ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে হতে যাচ্ছে !

কিন্তু এই মেয়ে আমার এখানে কেন ?

কেন ?

আমি আমাদের স্টেটের সব থেকে নিখুত সুন্দরী মার্গারেট নাইরিনের সামনে দাড়িয়ে আছি অথবা মার্গারেট নাইরিন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে । গতকালকে আমি মেয়েটাকে চিনতে না পারার কারন হচ্ছে মেয়েটার চুল কালো ছিল । কিন্তু মার্গারেটের চুলের রং সোনালী ! এ ছাড়া আর কোন দিক দিয়ে মেয়েটার সাথে মার্গারেটের কোন পার্থক্য নেই ।

আমি বললাম

-আপনি এখানে ?

-আসলে ওদের আওয়াজ পেয়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো । পালাবো যে তার কোন উপায় ছিল না । শেষ উপায় না দেখে ওয়াল আলমারীর কাছে আসতেই কেন জানি মনে হল এখানে কিছু একটা অস্বাভাবিকত্ব আছে । কয়েক মিনিটের ভেতরেই সিক্রেট দরজাটা খুজে পাই ।

আমি মুখ হা করে বললাম

-আপনি কিভাবে বুঝলেন ?

-জানি না । কেবল জানি যে জানি ! আর আরেকটা অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে আমার কোন কথা মনে পড়তে না । গত কালকের আগের কোন স্মৃতি আমার মনে পড়ছে না । কিছু না । কেবল কয়েকটা কথা বাদ দিয়ে !

-কি কথা ?

-আমাকে কয়েকটা লোকের কাছ থেকে পালাতে হবে আর একজনের কাছে যেতে হবে । আর কিছু না !

আমি খানিকটা সঙ্কিত গলায় বললাম

-আপনার নিজের নাম মনে আছে তো ?

-আমার নাম.... নোভা ?

-আপনি কি শিওর যে আপনার নাম নোভা ?

-হ্যা ! আমি এটা নিশ্চিত । আমার স্মৃতিতে যা আছে তাতে আমার নাম নোভাই । অন্য কিছু না !

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । আমাদের স্টেটের সব থেকে সুন্দরী মেয়েটা এখন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে অথচ সে নিজের নাম পর্যন্ত ঠিক মত মনে করতে পারতেছে না । আমার এখন কি করা উচিৎ ?




সিসটেক ফাইভ স্টেট

প্রাচীন কালে টমাস রবার্ট ম্যালথাস নামে একজন অর্থনীতিবিদ ও জনমিতিবিদ ছিলেন । তিনি অর্থনীতি ও জনসংখ্যা বিষয়ক ম্যালথাসের তত্ত্ব প্রদানের জন্য বিখ্যাতও হয়েছিলেন । সেই তত্ত্বানুসারে "খাদ্যশস্যের উৎপাদন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে" । টমাস রবার্ট ম্যালথাস উনিশ শতকের প্রথমভাগে এই তত্ত্ব প্রচার করেন । এই তত্ত্ব অনুসারে স্বাভাবিক নিয়মে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যসংকট এমনকী দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী । এই কারণে ম্যালথাস মনে করতেন যে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য । জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা না-গেলে দুর্ভিক্ষ এবং নানান প্রকৃতিক কারণে মানুষ মারা পড়বে এবং এভাবেই জনসংখ্যা উল্লেখযেওগ্যভাবে হ্রাস পাবে ।

ঠিক এমনটাই হয়েছিল । তখন সালটা যতদুর জানি ২০২৭ সাল । আমাদের পৃথিবীর জনসংখ্যা এতো বৃদ্ধি পেয়ে গেছে যে সেখানে মানুষের জন্য সঠিক ভাবে খাদ্য যোগান দেওয়া মুশকিল হয়ে গেছিলো । সেই সাথে প্রকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকতো । তখনকার বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে পৃথিবীর ধারন ক্ষমতা থেকে লোকসংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ার কারনেই এমনটা হচ্ছে । তারপর সেই অন্তিম দিন এসে হাজির হল । পৃথিবীতে খুব বড় মাত্রায় ভুমিকম্প দেখা দিল । সব উচু উচু বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়লো । সেই সাথে এসে হাজির হল সুনামী । কতলোক যে মারা পড়লো সেটার কোন ঠিক নেই । আমি বই পত্র ঘেটে যতদুর জানতে পেরেছি সেখান থেকে জানতে পারে প্রথম ধাক্কায় প্রায় ৭০% মানুস মারা যায় । এর পরে রোগে শোকে অনাহারে মারা যায় আরও অনেক মানুষ । শেষে মোটে ৫ শতাংশ মানুষ বেঁচে ছিল তখন । কিন্তু তারা ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ।

সেই সময়ে অল্প কিছু মানুষ বেঁচে ছিল তাদের ভেতরে জন সিসটেক নামের একলোক নিজের থেকে এগিয়ে এল পৃথিবীর বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে । গড়ে তুললো সেসটেক স্টেস । সব কিছু নিয়ম মত চলতে শুরু করলো । আগের পৃথিবী যে ভুল কাজ করেছিলো তারা সেই ভুল করলো না । জন্ম নিয়ন্ত্রন করা খুব কঠিন ভাবে । সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে কঠিন নিয়ম কার্যকর করা হল । এভাবে খুব ধীরে ধীরে সিসটেক স্টেট বৃদ্ধি পেতে লাগলো । পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে থাকা মানুষ গুলো আস্তে আস্তে এই সিসটেক শহরের দিকে আসতে লাগলো । যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন আরেকটা নতুন শহরের গোড়া পত্তন হয় এবং সেখানেও নতুন ভাবে সব শুরু হয় । প্রথম প্রথম অন্যান্য স্টেট গুলো নতুন স্টেসকে সাহায্য করে এবং সেটাকে স্বয়ংসম্পর্ণ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে । এভাবেই আমাদের সিসটেক ফাইভ স্টেটের জন্ম । এভাবে চলে আসছে । এসব প্রায় আড়াইশ বছর আগের ইতিহাস !

নোভা আমার কথা শুনে চুপ করে রইলো । মেয়েটা নিজে যে মার্গারেট নাইরিন এই কথাটা ও কিভাবে ভুলে গেল আমি সেটা ঠিক এখনও বুঝতে পারে নি । মাথায় কি আঘাত লাগার কারনে এমনটা হয়েছে ? কিন্তু চুল সোনালী থেকে কালো কিভাবে হয়ে গেল এটাও বুঝতে পারছি না ।

আচ্ছা মেয়েটা কি তার বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে ?

অবশ্যই পালিয়ে এসেছে । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মেয়েটা কেন পালাবে ?

মেয়েটার বাবা বর্তমান সিসটেক সায়েন্স এন্ড বায়োটেক ইনস্টিটিউটের প্রধান ব্যক্তি । তার নিজেও ক্ষমতার শেষ নেই । তার নিজের মেয়ে এভাবে কিভাবে পালিয়ে যাবে ? এমন কি বিপদ হতে পারে ?

আমি নিজে চিন্তা করে কোন কুল কিনারা খুজে পেলাম না । তবে এসবের ভেতরে যে কোন ঝামেলা আছে সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । আমি নোভাকে বললাম

-আপনার শেষ কি কথা মনে পড়ে আমাকে কি বলবেন ?

-আমি ঠিক জানি না । কেবল আমি যখন চোখ খুলি একজনকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি । সাদা এপ্রোন পরা ছিল । মুখেও একটা ফেসমাস্ক পরা ছিল । তবে সে যে আমারই মত কেউ ছিল যেটা আমি বুঝতে পারছিলাম । তার চুলের রং আমার মত ছিল না আর চোখ দুটো অন্যরকম ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে সে বলল

-তোমাকে খুব কঠিন একটা কাজ করতে হবে !

আমি জানি না আমার ভেতরে কি হল । আমি তার কথা শুনে বললাম

জি ! আমি নিজের ভেতরেই যেন অনুভব করতে পারছিলাম যে আসলেই আমাকে একটা কঠিন কাজ করার জন্য এই খানে নিয়ে আসা হয়েছে ।

সে বলল

-তোমাকে এখন আমি কিছুই বলতেছি না তবে তুমি আস্তে আস্তে সব নিজেই বুঝতে পারবে যে তোমাকে আসলে কি করতে হবে ।

এইলাইন গুলো বলে নোভা চুপ করে রইলো ।

আমি জানতে চাইলাম

-তারপর ?

-তারপর আমি যখন চোখ খুলি তখন দেখি আমি গাড়িতে চালাচ্ছি তবে সেটা সামলাতে পারছি না । আমার সিটের পেছনে কয়েকজন মানুষ পড়ে আছে । ওদের আর নিজের অবস্থা দেখে আমার কেবল মনে হচ্ছিলো আমার সাথে ওদের একটু আগে হাতাহাতি হয়েছে এবং আমি নিজেই ওদেরকে মেরে ফেলেছি । তারপর গাড়িটা একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায় । আমি ছিটকে বাইরে চলে আসি ।

তখনই আমার প্রথম যে কথাটা মনে পড়ে যে আমার হাতের ভেতরে কিছু একটা আছে এবং সেটা আমাকে বের করতে হবে । কিভাবে এই কাজটা করতে হবে আমাকে কেউ বলে দেই নি তবে আমি জানি যে আমাকে এই কাজটা করতে হবে । ব্যাস । আমি তাই করলাম । তার পরের ঘটনা তুমি জানো !

আমি কি বলবো নিজেই বুঝতে পারছি না । তাহলে কি মেয়েটা মার্গারেট নয় ?

কিন্তু ...... আমি আর ভাবতে চাচ্ছি না । নোভাকে আমি দেখলাম নিজের হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলতে ! আমি হায়হায় করে এগিয়ে আসার আগেই খুলে ফেলল । তারপর আমার দিকে দেখালো ।

একদম ঠিক হয়ে গেছে !

এতো জলদি মেয়েটার শরীরের ক্ষত কিভাবে ঠিক হয়ে গেল ।

আমি বললাম

-এতো জলদি কিভাবে ঠিক হল ?

-জানি না । কেন এতো জলদি ঠিক হওয়ার কথা না ?

-কোন ভাবেই না । কাল যেভাবে তুমি কামড়ে তোমার হাত থেকে ওটা বের করেছিলে সেটা কোন ভাবেই এটো জলদি ঠিক হওয়ার কথা না ।

নোভাকে একটু দ্বিধাগ্রস্থ মনে হল । আমি তো আগে থেকেই কনফিউজ হয়ে আছি । তবে মেয়েটার কথা শুনে মনে হচ্ছে এর পেছনে আসলেই বড় কোন কাহিনী আছে । আর মেয়েটার আচরনও খানিকটা অন্য রকম । এতো সময় আমি মেয়েটাকে আপনি করে বলছিলাম তাকে মার্গারেট ভেবে কিন্তু আপাতত সেটার উপরে আমার নিজের সন্দেহ দেখা দেয়েছে । তার উপরে তার হাতের ক্ষতটা এতো জ্বলদি সেরে ওঠাটাও কেমন মনে হচ্ছে ।

আমি ওর হাট টা আরেকটু ভাল করে দেখতে গিয়ে একটা জিনিস আবিস্কার করে ফেললাম । মেয়েটার হাতে কিছু লেখা আছে !

একটু অস্পষ্ট তবে বোঝা যাচ্ছে । দেখলাম নোভা নিজেও সেটা দেখতে পেয়েছে । ওর চোখেও কেমন একটা দৃষ্টি দেখতে পেলাম । আমি নিজে যেমন কিছু বুঝতে পারছি না মেয়েটাও নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপার গুলো কিছু বুঝতে পারছে না । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-এটা কিসের সংকেত ? কি লেখা এখানে ?

-দাড়াও দেখতেছি ।

আমি সেলফের উপর থেকে ম্যাগনিফাইনিং গ্লাস টা নিয়ে এলাম ।



গ্রীন সিটিতে পদার্পণ

আজকে শনিবার। গ্রীন সিটিতে যাওয়ার দিন। সপ্তাহের এই একটা দিনে আমরা, রেড সিটির লোকেরা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই গ্রীন সিটিতে যেতে পারি। বিশেষ করে যাদের অবস্থা আমার মত অর্থাৎ যাদের ফ্যামিলির সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন সিটিতে থাকে। এই বারটাতে আমার ভালই লাগবে বলতে গেলে বিশেষ করে মায়ের মুখটা দেখতে এই অনুভুতিটা অন্য রকম আনন্দময় হয়ে থাকে ।

কিন্তু আজকে খানিকটা চিন্তার ভেতরে আছি। আজকে কোন কিছু ঠিক স্বাভাবিক না । আজকে আমি কোন স্বাভাবিক কাজের জন্য যাচ্ছি না । মায়ের সাথেও আজকে দেখা করতে যাচ্ছি না । মাকে যখন ফোন করে বললাম যে এই শনিবার আমি আসতে পারবো না তখন মা খুব মন খারাপ করেছিলো । কিন্তু আমার কিছু করার নেই কারন না চাইতেও যে ঝামেলাতে আমি জড়িয়ে পরেছি সেটার শেষ না দেখে আমি ছাড়ছি না । আসলে আমি চাইলেই এই ঝামেলাটা শেষ করে ফেলতে পারে এক মুহুর্তেই । কেবল ফোন হাতে পুলিশ চিফ ইরোন আইভানকে ফোন করলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে । আমি নিজে বাকি জীবনটা খুব সুখ আর শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবো ।

কিন্তু আমার কেন যেন এই শান্তিময় আর এক ঘেয়ে জীবনটা ভাল লাগে না । অন্যায় আর নিয়ম ভাঙ্গার ভেতরে একটা আলাদা উত্তেজনা আছে । অনেক দিন পরে আজকে আমি সেই উত্তেজনা অনুভব করছি !

এর আগে আমি যে অবৈধ কাজ করি নি সেটা বলব না তবে এই সে সবই ছিল কম্পিউটার ভিত্তিক, সব কাজ করেছি ঘরে বসেই। কিন্তু এই প্রথমবার আমি সরাসরি মাঠে নেমে এমন কো কাজকরতে যাচ্ছি। ধরা পরার সম্ভাবনা অনেক খানি । তাই এবারের উত্তেজনাও অনেক বেশি ।

আমি চোখ তুলে নোভার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। মেয়েটার মুখ প্রায় কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। কেবল চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেয়েদের লাইনে আস্তে আস্তে করে এগিয়ে যাচ্ছে । আমার আগেই সিকিউরিটি চেক পার হয়ে যাবে আশা করি। তারপর দুজনকে যেতে হবে একেবারে শেষ প্রান্তে। সেখানে একটা লোক কে আমাদের খুজে বের করতে হবে ।

আমরা কেবল একটা নাম জানি। রাভিস্কি ম্যারি । আগে হোয়াইট সিটির অধিবাসী ছিল কিন্তু এখন সে গ্রীন জোনে থাকে। ঠিক গ্রীন জোনেও না। হোয়াইট আর গ্রীন জোনের মাঝে খানিকটা নো-ম্যান্স ল্যান্ডের মত জায়গা আছে। এই লোক সেখানে থাকে। তাকে কেন ডিমশন দিয়ে নিচে নামানো হয়েছে কেউ বলতে পারে না। এই সব কথা যদিও আমার জানার কথা না তবুও আমি জানি। আরো এমন অনেক কিছুই আছে যা আমার জানার কথা না কিন্তু আমি জানি।

জীবনে আমি সব থেকে ভয়ংকর কাজটা করি মেইন কম্পিউটারের সার্ভারে প্রবেশ করে ডাটা উল্টে পাল্টে দিয়ে। অবশ্য নিজের বাবা মায়ের সুখের জন্য এরকম পদক্ষেপ যে কোন সন্তানই নিতে পারে। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় যে আমি অনেক বড় ঝুকি নিয়ে ফেলেছি। ধরা পরলে নিজের বিপদ তো হতোই আমার বাবা আর মায়ের অবস্থা কি হত আমি জানি না। তবে আমি খুশি যে তারা এখন ভাল আছে সুখে আছে। জীবনের শেষ একটা দিন তারা যে শান্তিতে থাকতে পারতেছে একটা আমার জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার।

আমি নোভাকে সিকিউরিটি বুথ দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখলাম। জানতাম ঝামেলা হবে না। সেরকম ভাবেই ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার প্লানে খুব একটা ফাঁক নেই । আমাদের সিকিউরিটি বুথে কোন মানুষ কিংবা গার্ড নেই । কেবল মাত্র সেখানে একটা স্কেন করার সিস্টেম আছে । সেখানে প্রবেশ করে হাতের ছাপ দিতে হয় । যদি সবুজ আলো জ্বলে ওঠে তাহলে সে প্রবেশ করতে পারে আর অনুমুতি না থাকলে সেখানে লাল বাতি জ্বলে ওঠে । তখন গার্ডটা ভেতর থেকে তাকে বাইরে বের করে দেয় । শনিবারে যাওয়ার জন্য অনুমুতি চাইলেই পাওয়া যায় ।

কাজটা করেছি খব স হজ ভাবে । আমাদের স্টেশনে প্রায় একটা মেয়ে আসে, নাম সোমা আরিয়ান । তার মা অনেক দিন আগে মারা গেছে । গ্রীন সিটির আধিবাসি ছিল সে । তাই এখন তার খুব একটা যাওয়া হয়না গ্রিন সিটিতে । আমি সোমা আরিয়ানের হাতের ছাপ জোগার করেছি । সেটা একটা গ্লোভসে সেট করে নোভার হাতে সেট করে দিয়েছি । যখন নোভা হাতের ছাপটা দিয়ে স্ক্যানে দিবে তখন শোমার নাম উঠবে এবং সেটা গ্রিন দেখাবে । এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে সোমা যদি চলে আসে তখন ? এক মানুষ যখন দুবার স্ক্যান করবে তখন একটা ঝামেলা বেঁধে যাবে নিশ্চয়ই । আমি তাই যথা সম্ভব সকাল সকাল সকাল এসেছি এবং ওকে নিয়ে কেটে পড়লে পারলেই হল ।

যদিও সোমার জন্য একটু খারাপ লাগছে । মেয়েটা একটু বিপদে পড়ে যাবে । তবে সমস্যা হবে না আশা করি । যখন ওকে ঠিক মত চেক করা হবে তখন ওর কোন দোষ কেউ খুজে পাবে না । তখন ওকে ছেড়ে দিবে আশা করি ।

নোভার হাতে যে অক্ষর গুলো লেখা ছিল সেটা দেখে আমি আর নোভা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেলাম । "নোভা সি/টু" । এই শব্দ দুটো ভাল করেই বোঝা যাচ্ছিলো তবে ম্যাগিফাইনিং গ্লাস দিয়ে ভাল করে লক্ষ্য করতেই আরও নতুন কিছু লেখা লক্ষ্য করলাম। ছোট আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা "ফাইন্ড রাভেস্কি ম্যারি"। রাভেস্কি ম্যারিকে খুজে বের করে। যে বা যারা নোভাকে এখানে পাঠিয়েছে সে বলছে রাভেস্কি নামের মানুষটাকে খুজে বের কর । তাহলে হয়তো নোভা এখানে কেন এসেছে কেনই বা নোভা কিছু মনে করতে পারছে না সেসব বুঝতে পারা যাবে । সে কি আসলেই মার্গারেট নাকি অন্য কেউ সেটাও জানা খুব জরুরী ।

আমি কম্পিউটারের বসে গেলেই রাভেস্কি ম্যারি খুজে বের করার জন্য। আমাদের পুরো সিটি একটা সেন্ট্রাল কম্পিউটার দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা হয়। প্রায় সব রকম তথ্য প্রায় সবার জন্যই উন্মুক্ত। এমনটা আসলে ধারনা তবে এমন অনেক কিছুই আছে যা সবার চোখের আড়াল করে রাখা হয়। আমি রাভেস্কি ম্যারির নাম ইম্পুট দিতেই এক্সেস ডিনাইড দেখালো। যদি এই নামে কোন তথ্য না থাকতো তাহলে সার্চ রেজাল্টে কিছুই আসতো না তবে এখানে এক্সেস ডিনাইড এসেছে এর অর্থ হচ্ছে সে আছে কিন্তু তার তথ্য সবার জন্য নয় ! এমন টা সাধারনত হয় যদি নিচের লেভেলের কেউ উপরের লেভেলের কারো তথ্য জানতে চায়। তখন অথোরাইজেশন চাওয়া হয়। তার মানে এই লোক সাধারন কেউ না।

আমাকে এখন অন্য পথ বের করতে হবে । খুব বেশি সময় লাগার কথা না । আমি যখন প্রথমবার অবৈধ পথে মেইণ কম্পিউটারে প্রবশ করি তখন আমার বয়েস ছিল মাত্র পনেরো বছর । স্কুলের রেজাল্ট বের হওয়ার আগের দিন । আমি খুব ভাল করেই জানতাম আমার রেজাল্ট খুব ভাল হবে কিন্তু আমার মনে শান্তি ছিল না । কারন আমি যদি স্কুলে টপ করি তাহলে সেই বয়সেই চলে যেতে হবে গ্রিন জোনে আরও উচ্চতর পড়ালেখার জন্য । এবং আমাকে যেতে হবে একা । আমার বাবা মা এখানেই থাকবে । তাই আমি সেদিন প্রথমে ঢুকেছিলাম সার্ভারে । খুব সুক্ষতার সাথে আমার নাম্বার গুলো নামিয়ে এনেছিলাম ।

আমি কাজ শুরু করতে যাবো তখনই নোভা বলল

কি করছো তুমি ?

-দেখা যাক ।

আমি মনে হয় সাহায্য করতে পারবো ?

-মানে ?

নোভা কিছু না বলে আমাকে উঠে যেতে ইশারা করলো । আমি চেয়ার ছেড়ে দিলাম ওর জন্য । এরপর ও আমাকে অবাক করে অথোরাইজশোন কোড বক্সে কিছু সংখ্যা লিখলো । এন্টার চাপতেই অবাক হয়ে দেখলাম একটা পেইজ এসে হাজির ।

আমি কেবল অবাক হয়ে বললাম

-এটা তুমি কিভাবে করলে ?

-জানি না । কেবল মনে হল যে এখানে একটা কোড লিখলে কাজ হয়ে যাবে । আর এই কোড টা আমি জানি ।

কিছু কিছু হাই-প্রোফাইল মানুষদের আইডেন্টি ফিকেশনের জন্য আলাদা আলাদা নাম্বার আছে । সেগুলো এতোই ভি আইপি যে এই কোড যেকোন জায়গাতে ব্যব হার করলে সেটা এক্সেক করবে । এমন কি এই কোড ব্যাব হার করে ব্যাংক থেকে মিলিয়ন পরিমান মানি কারেন্সিও তুলে ফেলা সম্ভব !

আমি আরেকটু পরীক্ষার জন্য মার্গারেট নাম লিখে সার্চ দিলাম । যথা রীতি সেই অথোরাইজেসন কোড চাইলো । আমি ওকে ওপেন করতে বলতে ও ওটাতেই সেই কোড টা লিখলো । এবং অবাক হয়ে দেখলাম প্রোফাইল টা খুলে গেছে ।

নিজের চেহারা আর নাম দেখে ও খানিকটা সময় বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো । একবার আমার দিকে আরেকবার কম্পিউটার মনিটরের দিকে চেয়ে রইলো । আমি ওকে কি বলবো ? আমার নিজের কাছেই তো এর কোন উত্তর নেই । আমি বললাম

-আচ্ছা আমরা এসব পরে ভাববো । এই রহস্য বের হয়ে যাবে আশা করি । আগের কাজ আগে করতে হবে ।

রাভেস্কি সাহেবের প্রোফাইল থেকেও আমরা তেমন কোন জানতে পারলাম না । যেন কেউ ইচ্ছে করে এই প্রোফাইলের অনেক তথ্য মুছে ফেলেছে । তবে যেটুকু জানার জেনে নিলাম ।

আমি আর নোভা সিকিউরিটি চেক শেষ করে গ্রিন সিটির রাস্তায় ক্যাবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আমার মনটা পেছনে পরে আছে । বারবার মনে হচ্ছে আজকে যদি সোমা আরিয়ান চলে আসে তাহলে বিপদেই পড়তে হবে । একটা ক্যাব আসতে দেখে হাত নাড়লাম । সেটা আমাদের সামনে থেমে যেতেই চটপট উঠে পড়তে যাবো তখনই একটা লাল হুউসেল শুনতে পেলাম । বুঝলাম ঝামেলা শুরু হয়েছে । শোমা আজকে ঠিকই চলে এসেছে । একেই বলে কপাল । আমি চট জ্বলদি উঠে পড়লাম ক্যাবে । ক্যাবওয়ালাকে বললাম সোজা চালাতে । ক্যাবওয়ালা একটু ইতস্তর করলেও পরে আর কিছু না বলে এক্সেলেরটরে চাপ দিল ।



রাভেস্কির সন্ধানে

আমরা শহরে ছাড়িয়ে এসেছি বেশ কিছুটা সময় আগে । শহরের শেষ মাথায় আমাদেরকে নামিয়ে দিল ট্যাক্সিটা । তার নাকি এর থেকে সামনে যাওয়ার আর উপায় নেই । তবে সে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি হল । বলল যে এখান থেকে আমরা নাকি আর কোন যান বাহন পাবো না তবে একটু মানি ইউনিট বাড়িয়ে দিতে হবে । আমি ড্রাইভারকে অপেক্ষা করতে বলে হাটা দিলাম নোভাকে নিয়ে ।

আমি এর আগে এই দিকটাতে কোন দিন আসি নি । আসার দরকারও পড়ে নি । এই দিকটা একদম জনমানবহীন । একেবারে গ্রীন জোনের শেষ সীমানায় একটা গেট দেখা যাচ্ছে । ভেবেছিলাম এদিকটাতে অনেক নিরাপত্তা থাকবে কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না । কেমন যেন খাঁ খাঁ করছে ।

আমি একবার পুরো সিসটেক ফাইফ শহরের পুরো ম্যাপটা দেখেছিলাম । এইদিকের শেষ সীমানার পরে আর কিছু নেই । বেশ খানিকটা ফাকা জায়গা তার পরেই হোয়াইট জোন শুরু তবে হোয়াইট জোনের প্রবেশ পথ এদিকে নয় । ওটার প্রবেশ পথ অন্য দিকে । তাই এদিকে কেউ আসে না । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কিছু মানুষ থাকে । যাদের কে শহর থেকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে কোন কারনে । তবে সেই কারনের কথা কেউ কোন দিন জানতে পারে না ।

আমরা গেটের কাছে যেতেই দুজন গার্ড আমাদের দিকে এগিয়ে এল । আমার কাছে এসে বলল

-এখানে কি চাই ?

-আমরা নোম্যান্স ল্যান্ড যেতে চাই ?

গার্ড দুটো কিছু সময় মুখ চাওয়া চাওয়ী করলো । তারপর বলল

-এই পথ দিয়ে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না । এই কথা তোমরা জানো না ।

-আমাদের যাওয়াটা জরুরী ।

-কোন জরুরী অবস্থাতেও যেতে দেওয়া হবে না । সোজা যেদিকে থেকে এসেছো সেদিকে চলে যাও !

আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আরো গার্ড নিশ্চয়ই আছে আসে পাশে । একেদের আমি একা কোন ভাবেই কাবু করতে পারবো না । নোভার চেহারা এখনও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকাই রয়েছে । হঠাৎই নোভা একটা কাজ করলো । মুখের সামনে থেকে কালো কাপড় টা সরিয়ে দিল । ওর সেই নিখুত চেহারা বেরিয়ে পড়লো ।

গার্ড দুটো কয়েক মুহুর্ত কোন কথা বলতে পারলো না । বিস্মিত হয়ে গেছে নোভাকে দেখে । সম্ভবত ওরা চিনতে পেরেছে নোভাকে ! নোভা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

-চিনতে পেরেছো আমাকে ? না চিনতে পারলেও সমস্যা নেই । তোমাদের অথোরাইজেশন স্ক্যানার টা কোথায় ? নিয়ে এসো !

একজন দৌড়ে গেল গেটের কাছের ছোট্ট পাহারার রুমের ভেতরে । একটু পরেই ফেরৎ এল হাতে একটা ট্যাবের মোট কালো জিনিস নিয়ে । কিছুক্ষন টেপাটেপি করে সেটা নোভার দিকে বাড়িয়ে দিল । নোভাকে দেখলাম সেই কোডটা আবার লিখতে । এবং সাথে সাথে সবুজ সিগনাল উঠে পড়লো ।

-সন্তুষ্ট ?

একজন গার্ডকে দেখলাম বিনয়ে গলে পড়ছে । একটু আগের সেই রুক্ষভাবটার সিটে ফোটাও নেই । বুঝে গেছে নোভা কোন সাধারন মানুষ নয় । যার কাছে এই ভিআইপি অথোরাইজেশন কোড আছে সে যেনতেন মানুষ হতে পারে না । আমরা গেট পার হয়ে ঢুকে পড়লাম নো-ম্যান্স ল্যান্ডের ভেতরে ।





প্রায় মিনিট তিরিশেক হাটার পরে একটা লাল রংয়ের একতলা বাড়ির সামনে এসে থামলাম । হিসাব মত এটাই হওয়ার কথা রাভেস্কির ম্যারির বাসভবন । কিছু সময় আমরা দুজনেই দরজার সামনে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম । সামনের পরিস্থিতি নিয়ে । সামনে কি হতে পারে কিংবা কি ধরনের বিপদে আমরা পড়তে পারি । তারপর সব চিন্তা ভাবনা ঝেড়ে ফেলে আমরা দরজাতে টোকা দিতে যাবো ঠিক তার আগেই দরজা খুলে গেল । ৫৫/৬০ বছরের এক লোক আমাদের সামনে দাড়িয়ে । ছবিতে আমি যে লোকটাকে দেখেছিলাম তার বয়স আরও কম মনে হয়েছিলো । তবে সেটা অনেক আগের হতে পারে । তাই হয়তো এখন ভদ্রলোকোকে এতো বৃদ্ধ লাগছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে নোভার দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । কয়েক মিনিট যেন এভাবেই কেটে গেল । আমি বললাম

-মিস্টার রাভেস্কি ?

লোকটা এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর কোন কথা না বলে আমাদের কে ভেতরে আসার জন্য ইংগিত করলো । আমরা তারপ পেছন পেছন যেতে লাগলাম ।

ঘরের চারিদিকে কেমন অযত্নের ছাপ । বোঝা যাচ্ছে রাভেস্কি ম্যারি সাহেব খুব একটা ভাল অবস্থাতে নেই । কেবল মাত্র বেঁচে আছে কোন ভাবে । আমাদের কে নিয়ে এমন একটা জায়গাতে তিনি থামলেন যেটা দেখে অনেকটা অফিসের মত মনে হল । তারপর আমাদের কে দুোট চেয়ার দেখিয়ে বসতে ইঙ্গিত করলেন । আমরা বসে পড়লাম । দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই । আমাদের কে রেখে উনি ভেতরে চলে গেলেন ।

আমরা দুজনেই কিছু সময় পরে কিছু নাড়াচড়া করার আওয়াজ পেলাম । বুঝতে কষ্ট হল না উনি কিছু যেন খুজতেছেন । কিছু সময় পরে আবারও আমার কাছে ফিরে এলেন । তারপর সোজাসুজি নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমি জানতাম এক না একদিন তুমি আমার কাছে আসবে ! মার্গারেট এমন কোন ব্যবস্থা করবেই ।

আমি বললাম

-আপনি মার্গারেটকে চিনেন ? আসলে আমরা আপনার ব্যাপারে তেমন কোন খোজই বের করতে পারি নি । আমরা .....

আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল

-আমি সবাই কে চিনি । মার্গারেটের বাবা আর আমি আগে এক সাথে কাজ করতাম ।

বলেই ভদ্রলোক কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমি আর নোভা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । মনে হল ভদ্রলোককে নিজে নিজেই সব কিছু বলতে দেওয়া ভাল । তবে নোভা চুপ করে রইলো না । জানতে চাইলো

-আমার সাথে মার্গারেটের কি সম্পর্ক ? ওর চেহারা আর আমার চেহারা একদম এক কিভাবে ?

রাভেস্কি ম্যারি আবারও যেন কিছু সময় চুপ করে বসে রইলো । কিছু যেন ভাবছে । মনে হল আগের কোন সময়ে তিনি চলে গেছেন । তারপর চোখ খুলে নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-কারন মার্গারেটই তুমি আর তুমিই মার্গারেট । তোমার আর মার্গারেটের ভেতরে কোন পার্থক্য নেই ।

আমরা দুজন একসাথে চিৎকার করে উঠলাম !

-মানে ?

রাভেস্কি বলল

-গল্পটা অসম্ভব মনে হবে তবে এই বিজ্ঞানের যুগে কোন কিছুই অসম্ভব নয় ।

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা, তুমি আমারই সৃষ্টি !

নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর দৃষ্টি কেমন ঘোলা হয়ে গেছে । সম্ভবত ও নিজেো বুঝতে পেরেছে ও কে ? ওর চোখে আমি কেমন একটা বিষাদের ছায়া দেখতে পেলাম !

রাভেস্কি ম্যারি তখন তার গল্প শুরু করে দিয়েছে ! আমরা দুজন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । মনে মনে ভাবতে লাগলাম এটাও কি সম্ভব ?



ডা. রাভেস্কির গল্প

-মার্গারেটের জন্য পুরো স্টেস পাগল ছিল । কেবল একটা নয়, সিসটেক স্টেটের যে ছয়টা স্টেট আছে সবাই মার্গারেটের জন্য বলতে গেলে পাগল ছিল । যে কোন মূল্যে তারা মার্গারেট কে পেতে চাইতো । এর ভেতরে প্রেসিডেন্টের ছেলে থেকে শুরু করে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভান পর্যন্ত ছিল । অন্যান্য স্টেটের লোকজনকে ঠেকানো গেলেও নিজের স্টেটের মানুষদেরকে আটকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়লো । সত্যি বলতে কি তারা মার্গারেটকে পাওয়ার জন্য তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করতেও রাজি ছিল । যখন কোন ভাবেই মার্গারেটের মন গলানো গেল না তখন অনেকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে চাইলো । পুরো জীবনের জন্য না হলেও অন্তত একরাতের জন্য তাদের মার্গারেটকে চাই ই চাই । মার্গারেট বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিল । চেনা জানা জানা মানুষ ছাড়া কারো সাথে আর কারো সাথে স্বাধারনত দেখা করতো না ।

আমার সাথে ওর নিয়মিত দেখা হত কারন আমরা একই জায়গাতে কাজ করতাম । স্টেট সায়েন্স ইন্সটিটিউটে ! ও আমার এসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করতো ! তাই আমার সাথে ওর কথা হত মাঝে মাঝে ! যতই দিন যেতে লাগলো মেয়েটা ততই বিষণ্ণ হয়ে উঠতে লাগলো । মাঝে মাঝে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতো যে সে কেন এতো সুন্দর হল । স্বাধারন মেয়েদের মত চেহারা হলেই বরং ভাল হত । একটা স্বাভাবিক জীবন তো তার থাকতো । মেয়েটার এভাবে একলা হয়ে যাওয়া আর গৃহ বন্দী হয়ে যাওয়াটা আমার খাছে খারাপ লাগতো । তাই আমি ওর বাবাকে একটা ভয়ংকর প্রস্তাব দেই ।

-কি করম প্রস্তাব ?

-মার্গারেটের ক্লোন বানানোর প্রস্তাব !

নোভা রাজেস্কি ম্যারির দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়েই রইলো । আমি নোভার দিকে তাকিয়ে দেখি নোভার চোখের ভেতরে এক অচেনা বিষাদ দেখা দিয়েছে ।

রাভেস্কি বলল

-তুমি একেবারে মার্গারেটের হুবাহু কপি । আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে তুমি ওর ক্লোন !

-ক্লোন !!

রাভেস্কি বলল

-ওর বাবা আমাদের বিজ্ঞান ইস্টিটিউটের প্রধান, ড. স্টুয়ার্ড মিলান প্রথমে এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো । আমাদের এই স্টেটে মানব ক্লোন করা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল । প্রাচীন কালে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনেই পৃৃথিবী প্রায় ধ্বংশ হতে বসেছিলো । এখন এই বর্তমানেও মানুষের জন্ম প্রদান করাটা খুব কঠিন নিয়মের সাথে নিয়ন্ত্রন করা হয় । সেখানে আবার বাড়তি মানুষ । আমাদের সরকার এটা জানতে পারলে সবাইকে একেবারে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তো ! ওর বাবা প্রথমেই মানা করে দিল । আমি আর কথা বার্তা বাড়ালাম না !

কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে ড. স্টুয়ার্ড মিলান আমাকে আবারও ডেকে পাঠায় তার ল্যাবে । গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের পুলিশ চিফ ইরোন আইভানও উপস্থিত । তার উপস্থিতিতেই ড. মিলান আমাকে আমার ক্লোন প্রস্তাবের কথা তুলল । তারপর আস্তে আস্তে অনেক কথা হল । আমি জানতাম যে ইরোন নিজেও মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল কিন্তু প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের কারনে সে কিছুই করতে পারছিলো না । তাকে মার্গারেটের আশা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো । প্রেসিডেন্টের বড় ছেলের সাথে মার্গারেটের বাগদান হওয়ার কথা চলছিলো । মার্গারেটের নিজেও তাকে পছন্দ ছিল । এখানে ইরোনের কিছুই করার ছিল না । তাই এই এই প্রোজেক্টে ইন্টারেস্টের কারন টা আমি বুঝতে পারছিলাম । ঠিক হল আমরা এই প্রোজেক্টটা গোপনে চালাবো । যারা যারা মার্গারেটের জন্য পাগল ছিল সবার সাথে যোগাযোগ করে জানানো হবে প্রোজেক্টের কথা । তাদেরকে বলা হবে যে একজন মার্গারেট তাদের কাছে সরবারহ করা হবে কিন্তু সেই জন্য তাদের অর্থ খচর করতে হবে । এভাবেই প্রোজেক্টের অর্থায়ন হবে ।

আসলে মার্গারেট তো একজন ছিল এবং কেবল মাত্র একজনই তাকে পেতে পারে । এটা সবাই জানতো তাই এই সুযোগ যখন আসলো তখন সেটা কেউ হারাতে চাইলো না । বলা চলে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক অর্থ আমাদের হাতে চলে এল । আমি আসলে এই পর্যন্তই জানতাম । কিন্তু এসবের আড়ালে যে আরও ভয়ংকর কিছু চলছিলো সেটা আমি জানতে পারে নি । আমি ....

এই টুকু বলেই রাভেস্কি থামলো । টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এক চুমুকে শেষ করে ফেলল । তারপর আবারও সে বলা শুরু করলো, আমরা মানে আমি মার্গারেট ভেবেছিলাম আমরা কেবল ক্লোনই তৈরি করবো কিন্তু সেটা পেছনেও আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল । ভুলটা আমারই প্রথম ছিল । আমি ইরোকে চিনতে ভুল করেছিলাম । ভেবেছিলাম যে ও কেবল মার্গারেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই হয়তো এমনটা করছে । কিন্তু ইরোনের এর পেছনের আসল উদ্দেশ্য আমি আরও কয়েকদিন পরে টের পাই । আমার ক্লোনিং এর কাজ তখন চলছে খুব দ্রুত । আমাদের আগে উদ্দেশ্য ছিল যে আমরা আগে একটা স্যাম্পল তৈরি করবো সেটা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে তাহলে সামনে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে । প্রথম প্রোজেক্টের নাম ছিল "নোভা সি ওয়ান" । সি ওয়ানের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই আবিস্কার করি যে স্বাভবিকের চেয়েও ক্লোনের বডিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি রয়েছে তাছাড়াও শরীরে আরও কিছু অস্বাভাবিক্ব রয়েছে । বলা চলে নোভাকে বানানো হচ্ছে একেবারে কঠিন আর মজবুত হিসাবে । বাস্তবের মার্গারেট নিখুত সুন্দরী থাকলেও সে ছিল মানুষ । তার মানুষ হিসাবে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল । কিন্তু নোভার বডিতে সেরকম মানুষ্য সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে ।

-যেমন ?

-যেমন নোভা কখনও অসুস্থ হবে না । আহত হলে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে । সব কিছু শিখবে খুব দ্রুত আর তার শারীরিক শক্তি একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকেও অনেক বেশি হবে ।

-আচ্ছা !

আমি বুঝতে পারলাম ঐদিন নোভা কিভাবে এতো দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠলো । রাভেস্কি আবার বলা শুরু করলো

-আরও লক্ষ্য করলাম কেউ নোভার মস্তিস্কে খুব ক্ষদ্র কিছু ন্যানো-চিপ বসিয়ে দিয়েছে । এটা মস্তিস্কের নিউরনের সাথে সংযুক্ত । ব্যাপারটা ডা. মিনাল কে বলতেই তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলেন । তিনি বললেন তার সাবজেক্ট যেন বেশি দিন সার্ভাইভ করতে পারে এই জন্য এমনটা করা হয়েছে ।

আমি বললাম

-আর ন্যানো চিপ গুলো কেন বসানো হয়েছে ?

-আমরা যাতে তাদের কার্যক্রম গুলো দেখতে পারি ?

-নাকি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন এই জন্য ?

-দেখুন আপনি আপনার কাজ করুন । আপনার দায়িত্ব কেবল আপনি পালন করুন । অন্য কিছু দেখার ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন !

-স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম যে এদের উদ্যেশ্য আসলে অন্য কিছু । আমি তার ল্যাব থেকে বের হয়েই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম । আমার কাছে মনে হল কেবল যে এটা স্বাভাবিক কোন কাজ করছে না । এর ভেতরে আরও ঘাপলা আছে । মার্গারেটকে বলতেই সে চোখ কপালে তুলল । প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছিলো না । তার নিজের বাবা এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা ভাবতেই পারে নি । অনেক কান্না কাটি করলো কিছু সময় । পরে আমি তাকে বোঝালাম যে এটা এখন কান্না কাটি করার সময় নয় । আমাদের আগে সব কিছু খুজে বের করতে হবে । দুজনে মিলে খোজ খবর শুরু করলাম । আমি জানতে পারলাম এদের আসল উদ্দেশ্য । এরা আসলে ক্লোন তৈরি করছে ঐ সকম ধনী মানুষের মনরঞ্জনের জন্য নয় তাদেরকে হত্যা করার জন্য । ন্যানো চিপ গুলো ক্লোনের বডিতে প্রবেশ করানো হয়েছে ওদেরকে এখান থেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য । নোভা প্রোজেক্টের ক্লান্টের বলতে গেলে হোয়াইট সিটি সব বড় বড় মানুষজন । সরকারী অফিসার থেকে শুরু করে কয়েকজন মন্ত্রীও পর্যন্ত এর ভেতরে আছে । তাদেরকে একই দিনে এই ক্লোন গুলো সরবারহ করা হবে । বাকি কাজ গুলো ক্লোনেরা নিজেরাই করবে !

আর এই সুযোগে পুলিশ চিফ নিজে ক্ষমতা দখল করবে । প্রেসিডেন্টের ছেলেকে আসল মার্গারেটের বদলে নোভা সি ওয়ান সরবারহ করা হবে । একই রাতের ভেতরে হোয়াইট সিটির সব শীর্ষ স্থানীয় মানুষ গুলো মারা পড়বে । তাদের পথে মাথা তুলে দাড়ানোর মত কেউ থাকবে না । আর সেই সাথে তাদের সাথে থাকবো এক সুপার আর্মি ! যেটা দিয়ে যে কাউকে সামলানো যাবে । এটাই ছিল ওদের প্লান ।

এটা জানার পরেই আমি আর মার্গারেট মিলে ঠিক করলাম যে যে কোন মূল্যেই এই প্রোজেক্ট সফল হতে দেওয়া যাবে না । আমরা এটাকে ধ্বংশ করার প্লান কর ফেললাম । স্যাম্পল বডিকে ধ্বংশ করতেও আমরা সক্ষম হয়ে গেলাম কিন্তু আমি ধরা পড়লাম । আমাকে হয়তো মেরেই ফেলতো তবে আমি খুব সাধারন কোন মানুষ নই তাই আমাকে হত্যা করা হয় নি । আমাকে অনেক দিন ল্যাবের সেলে আটকে রাখার পর শাস্তিস্বরূপ আমাকে এই নো-ম্যান্স ল্যান্ডে নির্বাসনে দেওয়া হয়েছে । সাথে সাথে আমাকে এও জানানো হয়েছে যে যদি আমি বোকার মত কাজ করতে যাই তাহলে তাদের কাছে সব প্রমান পত্র রয়েছে । এই প্রোজেক্টের মূল পরিকল্পনা কারি আমি নিজেই ছিলাম । এটা প্রমান করতে ওদের খুব একটা কষ্ট হবে না । আমি যদি বোকার মত কিছু করতে যাই তাহলে আমাকে সারাটা জীবন জেলের ভাত খেতে হবে অন্য দিকে আমি বাকি জীবনটা এই নো-ম্যান্স ল্যান্ড কাটিয়ে দিতে পারি কোন ঝামেলা ছাড়াই । আমার আসলে কিছুই করার ছিল না । প্রেসিডেন্টের কাছে গেলে আমি নিজেই ফেসে যেতাম । তাই এখানে থাকাটাই সঠিক মনে হল ।

তবে আমি জানতাম এই প্রোজেক্ট এখানে থেমে থাকবে না । তবে আমার কিছু করার ছিল না । জানতাম প্রোজেক্ট নোভা আবার শুরু হবে । সি ওয়ান বন্ধ হয়েছিল খুব জলদিই ওরা নোভাকে নতুন ভাবে শুরু করলো । আই গেস তুমি সেই প্রোজেক্টের প্রথম স্যাম্পল !

নোভা এতো সময় ডা. রাভেস্কির দিকে তাকিয়ে ছিল তার পর আমার দিকে তাকালো । সে যে কোন মানুষ নয় কেবল এককটা স্যাম্পল এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর । আমি ওর মনের কথা বুঝতে পারলাম । আমি উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । বললাম

-আমি জানি তুমি কেমন অনুভব করছো । তবে তুমি কেবল জেনে রেখো যে আর অন্য ১০ মানুষ যেভাবে ভাবে, তাদের যেরকম মন আছে তোমারও সেরকম মন আছে । বুঝতে পেরেছো ! তুমি বুঝতে পারছো আমার কথা ?

আমি নোভার কান্নার আওয়াজ পেলাম । এরকম ভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে যে কারো ভেঙ্গে পড়ার কথা । আমাদের যখন বাবা মা মারা যায় আমাদের অনুভুতি কি রকম হয় আমরা বুঝতে পারি । আর যদি জানা যায় যে আমাদের কোন মা বাবাই ছিল না আমরা ফ্যাক্টরীতে তৈরি হয়েছি তখন আমাদের মনের অবস্থা কেমন হবে ? আমি নোভাকে শান্তনা দিতে লাগলাম । সেই সাথে মেয়েটাকে একটু কাঁদার সুযোগও দিলাম । কাঁদলে একটু হালকাও হবে ।

পেছন থেকে রাভেস্কি বলল

-কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না যদি নোভা সি টু ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করে তাহলে তাহলে নোভার নিয়ন্ত্রন তো ডা. মিলানের হাতে থাকার কথা । নোভার আচরন দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না । তার মানে মার্গারেট ঠিকই তার কাজ করতে পেরেছে !! কিন্তু এসব হল কিভাবে ? তুমি আমার খোজই বা পেলে কিভাবে ?

-ব্যাপারটা আমি বলছি !!

আমরা তিনজনই ঘুরে দাড়ালাম । কারন কথাটা আমরা কেউ বলি নি । কথাটা যে বলেছে সে রাভেস্কির অফিসে রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে । আমরা কথা বার্তায় এতো মশগুল ছিলাম যে সে কখন এই রুমে এসেছে বুঝতেই পারি নি ।

আমাদের সামনে দাড়িয়ে আছে স্টেট পুলিশ চিফ ইরোন আইভান !



মুখোমুখি

-আমাদের প্লান ঠিক মত এগিয়েই যেত যদি না ঐ ছোট্ট দুর্ঘটনা টা না ঘটতো । স্যাম্পলকে বহনকারি ভ্যানটার এক্সিডেন্ট না হলে আজকে হয়তো আমরা এখানে থাকতাম না । তোমাদেরও মারা যাওয়ার কোন পদরকার হত না ।

পুলিশ চিপ কেন যে এসব কথা বলছে সে সব আমার মাথায় ঢুকছে না । আমার মনের কথা যেন পড়ে ফেলল ইরোন আইভান । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-ভাবছো কেন তোমাদের কে এসব কথা বলছি ? বলছি কারন তোমরা তো মারাই যাচ্ছো অন্তত মরার আগে জেনে যাও কেন মারা গেলে । তবে তোমাদের একটা সুযোগ আমি দেব । তোমরা ঠিক যেভাবে মরতে চাও সেভাবেই তোমাদের মারা হবে ।

আমি ইরোন আইভানের চেহারা দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারলাম না । লোকটার কাছে এসব কৌতুক ছাড়া যেন আর কিছুই না । আসলে ক্ষমতা ওর হাতে রয়েছে তাই তো এতো মজা লাগছে !



আমাকে আর নোভাকে চেয়ারের উপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে । কেবল মাত্র আমাকে হাত দুটো পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে পেছন দিকে আটকে রাখা হয়েছে । আমাদের থেকে কয়েক হাত দুরে ইরোন আইভান বসে আছে । তার ঠিক কয়েক গজ দুরে ডা. রাভেস্কিকে দেখা যাচ্ছে । ভয়ে তার মুখ একেবারে শুকিয়ে গেছে । কিন্তু আমার কেন জানি মোটেই ভয় লাগছে না । আমি নোভার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম । মেয়েটা সেই কখন থেকে একেবারে শান্ত হয়ে বসে আছে । একেবারে ইরোন আইভানের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে !

ইরোন আইভান আবারও আমাদের দুজনের দিকে ব্যাঙ্গাত্বক চোখে তাকিয়ে বলল

-তোমরা আসলে আমার কাজ আরও সহজ করে দিয়েছো । এখানে না আসলে আমি তোমাদের থেকে এতো সহজে আমি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতাম না । যাক এবার একেবারে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে আশা করি ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমাকে আমি কত ভাল একটা সুযোগ দিয়েছিলাম । কিন্তু তুমি তো সেটা নিলে না ! কেবল মাত্র একটা ফোন করলে বাকি জীবনটা তোমার কতই না সুখে কাটতো । সেটা না করে একটা ফ্যাক্টরী তৈরি পোডাক্টের জন্য জীবনটা খোয়াতে বসেছো !

আমি কঠিন মুখে বললাম

-এই শব্দটা আর ব্যবহার করবেন না । নোভা .....

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরোন আইভান আবারও হেসে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-নোভা ওর নাম নয় । ওটা প্রোজেক্টের নাম , ওর মডেল নাম্বার সি টু ! বুঝেছো । আমরা যেন প্রোডাক্টের উপরে লেভেল লাগাই ঠিক তেমনি । সি ওয়ান সি টু ....।

-স্টপ ইট ! স্টপ !

আমি কেন এতো জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি নিজেি বলতে পারবো না । নোভার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এই কদিন আমি একেবারে ওর সাথে সাথেই ছিলাম । একেবারে জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষ ! একটা মেয়ে । মাঝের যে কয়টা দিন ও যেখন আমার বাসায় লুকিয়ে ছিল আমি যখন কাজ থেকে বাসায় ফিরে আসতাম অবাক হয়ে দেখতাম ও আমার জন্য রান্না করে রেখেছে ।

আমি প্রথম দিন খুবই অবাক হয়ে গেলাম । সেই সাথে একটা খুশি খুশি অনুভুতিও হল মনের ভেতরে । নোভার দিকে তাকিয়ে বললাম

-এসবের কি দরকার ছিল ?

-কোন কাজ ছিল না ।

-রান্না কোথা থেকে শিখলে ?

-ভিডিও টিউটিরিয়াল দেখে !

আমি মুখে নিয়ে দেখলাম রান্না অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ওকে সেটা বলতে মেয়েটা বা্চ্চা মেয়ের মত খুশি হয়ে উঠলো । আমার মাথার উপর তখন বিরাট একটা ঝামেলা কাজ করছিলো কিন্তু এই ছোট্ট এই টুকু আনন্দের ভেতরে কোন খাদ ছিল না !

এখন ইরোন আইভান যখন নোভাকে ফ্যাক্টরী তৈরি প্রোডাক্ট বলল আমার কেন জানি ভাল লাগলো না । ইচ্ছে হল বেটার মুখে চেপে ধরি ! কিন্তু সেটা চাইলেও করা যাবে না । আমার হাত পেছন থেকে বাঁধা !

আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে আইভান বলল

-এবার তোকে আমি এতো সহজে ছাড়ছি না । আগের বার ভেবেছিলাম কোন ঝামেলা হবে না । ঠিকঠাক মত জায়গা মত ডেলিভারি হয়ে গেলে তোকেও মরতে হত না । রানীর মত থাকতি কিন্তু ....

নোভা বলল

-সেক্স স্লেভ হয়ে ? এর চেয়ে আমি মরে যাওয়া পছন্দ করবো !

নোভা যেন খুব মজার কোন কথা বলেছে । হাহা হাহা করে হেসে ফেলল । তারপর বলল

-ফ্যাক্টরিতে তৈরি বস্তুর আবার এতো আত্মসম্মান !!

তখন নোভা একটা অদ্ভুদ কাজ করলো । ইরোন আইভান আমাদের থেকে খুব বেশি দুরে বসে ছিল না । নোভা মুখ ভর্তি থুথু ইরোনের দিকে ছুড়ে দিল । এবং সেটা নিখুত ভাবে গিয়ে পড়লো ইরোনের মুখের উপরে ।

ঘটনা যে এভাবে ঘটতে পারে সেটা ইরোন নিজেও বুঝতে পারে নি । পর মুহুর্তেই একটা তীব্র রাগের ছাপ দেখতে পেলাম আমি । ইরোন উঠে এসে নোভার গালে জোড়ে একটা চড় মারলো ! কিছুই হয় নি এমন ভাব করে নোভা চড় টা হজম করে নিল !

আমি বললাম

-বড় বীর পুরুষ দেখছি তুমি হে ! একটা মেয়ের পেছন থেকে হাত বেঁধে তাকে চড় মাড়া হচ্ছে !

-চুপ ! একদম চুপ ! ভেবেছিলাম তোদের কে আমি শান্তিতে মারবো কিন্তু সেটা তোরা হতে দিলি না । সবাইকে মজা বুঝাবো !

তারপর নোভার দিকে তাকিয়ে বলল

-দাড়া আজকে তোকে মজা দেখাবো ! তোর আফসোস হবে কেন তুই সেদিন পালিয়েছিলি এই ভেবে !

ইরোন আইভান হাত তুলে একজন কে ডাকলো । হাতের ইশারা পেয়ে একজন কালো পোশাক পরা সৈনিকক দৌড়ে চলে এল । তারা এতোক্ষন দরজার কাছে অস্ত্র হাতে অপেক্ষা করছিলো ।

-জিলানকে ডাক দাও !

লোকটা যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমন করেই দৌড়ে চলে গেল । লোকটা চলে গেলেই ইরোন আইভান আবারও নিজের জায়গাতে গিয়ে বসলো । দেখতে পেলাম ওর চেহারায় আবার সেই কৌতুক ভাবটা চলে এসেছে । নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে নিয়েছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-আমার প্লান আরেকটু হলেই তোমরা নষ্ট করে দিয়েছিলে । তবে ভাগ্যভাল যে সেটা পারো নি । আচ্ছা তোমাদের কি মাথায় একটু বুদ্ধিও নেই ? যখন মার্গারেটের আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারটা প্রবেশ করালে একবারও কি মনে হয় নি যে এই নাম্বারটা তোমাকে অবস্থান আমাদের জানিয়ে দেবে !

আরে তাই তো !

আমার আসলেই নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা মনে হল । এই কথাটা তো আমার মনেই হয় নি । প্রথমবার যখন নোভা আইডি নাম্বারটা প্রবশ করালো তখনও ওটা আমার কম্পিউটার ছিল । সেটার আইপি হাইড করা ছিল বিধায় আমাদের ওরা খুজে পায় নি । কিন্তু একটু আগে যখন ও গার্ডদের কম্পিউটারে ও আইডি কোর্ডটা প্রবেশ করালো তখন সেটা করা হয় নি । তাই আমাদের খোজও বের করতে তাদের খুব একটা কষ্ট হয় নি ।

নোভার দিকে তাকিয়ে মনে হল ও এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না । ওর মাথায় যেন অন্য কিছু কাজ করছে । কি এতো ভাবছে মেয়েটা ! এতো শান্ত আছে কিভাবে ?

আইভান বলল

-আমরা সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিলাম আমার পরিকল্পনা মাফিক । কিন্তু ঐ মার্গারেট আরেকটু হলেই ঝামেলায় ফেলে দিতো আমাদের ।

রাভেস্কি এতো সময় চুপ করে ছিল । সে হঠাৎ বলে উঠলো

-নিয়ন্ত্রন ন্যানো চিপ গুলো ও সরিয়ে ফেলেছিলো তাই না ?

আইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল

-হ্যা । যার ফলে একেবারে পরিপূর্ণ ভাবে মুক্ত চিন্তার অধিকারী হয়ে ওঠে নোভা । তবে সে সব স্মৃতি আর জ্ঞান ওর ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় পায় নি ।

নোভার চোখের মনি যেন একটু নড়ে উঠতে দেখলাম । আমার দিকে তাকাতে আমি ওকে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বলার চেষ্টা করলাম, দেখেছো তো ..... একেবারে মুক্ত চিন্তার অধীকারী । তোমার উপর কারো নিয়ন্ত্রন নেই । তুমি স্বাধীন ঠিক আমার মতই । আমার মত করেই চিন্তা করতে পারো তুমি ! আমার কেন জানি মনে হল নোভা আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছে । ওর চোখ দেখেই আমার সেটা মনে হল !

আইভান তখনও রাভেস্কির সাথে কথা বলেই চলেছে ।

-তোমার এসিস্টেন্ট না । আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম যে ও ব্যাপারটা জানে তাহলে এই ঘটনা ঘটতোই না । তুমি যে ওকে বলে দিয়েছো এটা জানলে এতো কিছু হত না । তোমাকেও মরতে হত না । কিন্তু আর রিস্ক নেওয়া যায় না । এখানেই তোমাদের সলিল সমাধী হবে । নো-ম্যান্স ল্যান্ডে মরবা তাই সিসটেক স্টেট এখানে নাক গলাবেও না । বুঝেছো ? ঠিক মত কবরও ঝুটবে না । আমাদের সাথে হাত মেলালে এমনটা হত না রাভেস্কি ।

তাকিয়ে দেখি রাভেস্কি এবার ভয়ে কুকড়ে গেল । একটু যেন কাঁদতে আরাম্ভ করলো । আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই ষাড়ের মত স্বাস্থ্যবান একজনকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম । ইরোন আইভানের পাশে এসে দাড়ালো । ইরোন নোভাকে দেখিয়ে বলল

-একে পাশে রুমের নিয়ে যাও । আজকে এ তোমার । তবে শর্ত একটাই ওর চিৎকারের আওয়াজ যেন আমি এখান থেকে শুনতে পাই । পারলে আরও কয়েকজন কে নিয়ে যাও ।

আমি নিজের মাঝেই একটা আতঙ্ক অনুভব করলাম । ওরা নোভার সাথে কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে একটা তীব্র ঘৃনা জন্মালো ইরোন আইভানের উপর । এই লোকটা একটু পরেই আমাকে মেরে ফেলবে হয়তো, আমার এখন ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু আমার কেন জানি ভয় লাগছে না আর । একটু আগে যে নোভার জন্য যে আতঙ্ক অনুভব করছিলাম সেটা এখন তীব্র এক রাগে পরিনত হল । আমি নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম ।

-বানচোৎ .... তোকে ....

এই বলে চিৎকার করে উঠে ইরোনের দিকে লাফ দিলাম কিন্তু সেটা মাঝ পথেই থামিয়ে দিলো ষাড়ের মত লোকটা ! আমাকে এতো জোড়ে ধাক্কা মাড়লো যে আমি ছিটকে গিয়ে ঘরের কোনায় গিয়ে পড়লাম । চোখে বন্ধ হয়ে এল ব্যাথার যন্ত্রনায় । চোখ বন্ধ হয়ে আসার আগে দেখতে পেলাম ষাড়টা আমার দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু তখনই ইরোন আইভারের গলা শুনতে পেলাম । সে বলছে

-ওকে ছাড়ো । ও পড়ে থাকুক । তুমি এইটাকে নিয়ে যাও

আমি বিশ্রী একটা হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । চোখ খুলে দেখি ষাড়ের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নোভা উঠে দাড়ালো । আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এতো শান্ত কিভাবে আছে ? ও কি বুঝতে পারছে না ওর সাথে এখন কি হতে যাচ্ছে !

নোভা চলে যেতেই আমি উঠতে গেলে একজন সৈনিক আমার কাছে এসে দাড়ালো । আমার দিকে বন্দুকের নল তাক করে এখানেই পড়ে থাকতে ইশারা করলো । আমি বললাম

-তুই কখনই তোর শয়তানি বুদ্ধিতে সফল হবি না ।

আবারও ইরোন আইভান যেন খুব মজা পেল আমার কথা শুনে । বলল

-আমাকে কে থামাবে শুনি ? তুমি ?

-আমি না থামালেও আমার কম্পিউটার ঠিক ঠিক থামিয়ে দেবে ?

-মানে ?

দেখলাম আইভান যেন একটু সচকিত হয়ে উঠলো । আমি বললাম

-আমাকে এতো কাচা ভাবলে চলবে কেন ? একজন হ্যাকার সব সময় নিজের সেফটির কথা সবার আগে ভাবে । তুমি কি ভেবেছো আমি এসবের কিছুই জানি না । তোমার কি মনে হয় মার্গারেট এতো জায়গা রেখে নোভাকে সেই পথেই কেন পাঠালো যে রাস্তায় আমি যাই !

আমি ইরোন আইভানের চোখে একটু সন্দেহ দেখতে পেলাম । ঠিক এটাই আমি চাই । আমি সব মিথ্যা বলছি তবে ইরোন আইভানের মনে সন্দেহ জাগবেই ।

ইরোন বলল

-মার্গারেট কেন পাঠাবে ওকে ? তোমার কাছে কেন পাঠাবে ?

আমি বললাম

-একটু মনে করে দেখো তো তোমার ক্লায়েন্টের বাসা কোথায় বার নোভাকে বহনকারী ভ্যানটা কোথায় এক্সিডেন্ট করেছে ?

আমি এসবের কিছুই জানি না । কেবল অন্ধকারে ঢিল ছুড়লাম । ঠিকঠাক মত লেগে গেল মনে হল অন্তত ইরোন আইভানের চেহারা দেখে তো তাই মনে হল । আমি বললাম

-আমি অনেক আগে থেকেই মার্গারেটের সাথে যোগাযোগ রাখি ।

-মিথ্যা কথা । কোন ভাবেই তোমার সাথে মার্গারেটে যোগাযোগের কোন উপায় নেই ।

আমি এবার হেসে উঠলাম ।

-সত্যিই নেই ? তোমাকে একটা গোপন কথা বলি । আমার খোজ খবর তো তুমি ভাল করেই নিয়েছো, তাই না ?

ইরোন কোন কথা বলল না । ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বোঝা গেল ঐ দিনের পর আমার ব্যাপারে সে ঠিকই খোজ খবর নিয়েছে । আমি বললাম

-হাই স্কুলের সব পরীক্ষায় যে ছেলেটা টপ করতো সে হঠাৎ করেই ফাইনালে একেবারে নিচের দিকে কিভাবে চলে গেল ? এই প্রশ্ন মনে আসে নি তোমার ? আমি যে মেইন কম্পিউটারকে নিজের ইচ্ছামত নাচাতে পারি সেটা কি তুমি জানো ?

ইরোনের মুখের সন্দেহের চাপটা আরও গভীর হতে দেখে আমি নিজের মিথ্যা বলার জোরটা আরও বাড়িয়ে দিলাম । আমি আবার বললাম

-আমি যদি আজকে ঠিক সাতটা আগে আমার বাসায় না পৌছায় তাহলে ঠিক ঠিক সাতটা এক মিনিটে প্রোজেক্ট নোভা সি টুর ব্যাপার যত তথ্য আছে সব পুরো ওয়েবে ছড়িয়ে পড়বে । সবার আগে সেটা পৌছাবে প্রেসিডেন্টের কাছে ।

-আমি বিশ্বাস করি না ।

-কোরো না । সেটা তোমার ব্যাপার । আমরা তো মরছিই তবে মনে রেখো তুমিও বাঁচবে না । তোমার বিশ্বাসের জন্য আরও একটা কথা বলি ।

এটা বললে আমি জানি ইরোন আইভান ঠিক ঠিক আমার কথা বিশ্বাস করে নেবে । আমি মাঝে মাঝে খুব একটা দুষ্টামী করতাম মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এমনই একটা দুষ্টামী করতে গিয়ে একবারে একটু ঝামেলা হয়ে গেছিলো । আমি বললাম

-বছর খানেক আগে হঠাৎ করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক খানি মানি ক্রেডিট গায়েব হয়ে গেছিলো । মনে আছে ? এমন কি সেটা নিউজেও চলে এসেছিলো । কারন ঠিক ঐ সময়ে একজন সাংবাদিকের একাউণ্ট থেকে বেশ বড় এমাউন্টের ক্রেডিট গায়েব হয়েছিল । সাথে সাথেই খবরটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেটে । সবাই তখন নিজের একাউণ্টে প্রবেশ করে চেক করার জন্য । এতো লোড সার্ভার নিতে না পেরে খানিকটা সময় ডাউন থাকে । প্রায় দুইদিন সেটা ডাউন ছিল । মনে আছে তো ?

ইরোন আইভান আবারও কোন কথা না বলে আমার দিকে এগিয়ে এল । আমি এবার একটু উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম । তবে ধাক্কার ফলে বুকের ব্যাথাটা বেশ টের পাচ্ছিলাম । সম্ভবত কোথাও কোন হাড় ভেঙ্গে গেছে । আমার খুব কাছে আসতেই আমি আমি বললাম

-কাজটা আমি করেছিলাম । চাইলে এও বলতে পারি কিভাবে কাজটা করেছি । বলবো ?

ইরোন আইভান আমার কলার চেপে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই গগন ফাটানো চিৎকারে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো । আমি তো অবাক হয়েছি সাথে সাথে ইরোন আইভান এবং রুমে থাকা সবাই অবাক হয়ে গেছে । কারন চিৎকারটা আসছে পাশে ঘর থেকে যেখানে একটু আগে জিলান নামের ষাড়টা নোভাকে নিয়ে গেছে ! কিন্তু অবাক হওয়ার কারন হচ্ছে চিৎকারটা নোভার নয়, জিলানের !

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । দেখতে পেলাম চারজন সৈনিক দৌড়ে চলে গেল পাশের ঘরের দিকে । ধুপধাপ কয়েক আওয়াজ হল কয়েক মুহুর্ত তারপর সব চুপ । যে একটু আগে আমার দিকে যে বন্দুক তাক করে ছিল তার চোখে আমি দ্বিধা দেখতে পেলাম । কয়েক মুহুর্ত যেন ঠিক বুঝতে পারলো না সে কি করবে । তারপর সেও পাশের ঘরের দিকে হাটা দিলো অস্ত্র তুলে তবে সেটা কয়েক পা মাত্র । মুহুর্তের ভেতরে দেখলাম নোভা দরজার সামনে দাড়িয়ে । এবং এতো দ্রুত সে রিএক্ট করলো যে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । পরমুহুর্তে তাকিয়ে দেখি একটা ফুট সাইজের ছোড়া সৈনিকের গলার কাছে বিধে আছে ।

ইরোন আইভান কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । কি হচ্ছে তার কিছুই সে ঠিক বুঝতে পারছে না । কিন্তু সামলে নিল নিজেকে । তারপর পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে তাক করলো নোভার দিকে ।

আমি ঠিক ওর পেছনে যে দাড়িয়ে আছি সেটা ও ভুলেই গেছে । ও গুলি করতে যাবে ঠিক তখনই আমি শরীর সব শক্তি দিয়ে ইরোন আইভানের পেছনে আমি একটা লাথি দিলাম ।

গুলি চলল ঠিকই তবে সেটা নোভার দিকে গেল না । আর আমার লাথির ধাক্কা সামলাতে না পেরে সোজা ওর নোভার সামনে গিয়ে পড়লো ।

উঠে গিয়ে আবারও পিস্তল তাক করতে গেল কিন্তু সেই সুযোগ ও পেল না । নোভা ইরোন আইভানের দু হাত চপে ধরেছে । কয়েক সেকেন্ড বাদের ইরোনের হাত থেকে পিস্তল খসে পড়লো । ইরোনের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে নোভা ওকে খুব শক্ত করে ধরেছে এবং ও সেটা সহ্য করতে পারছে না । এক সময় ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলো । নোভা বলল

-আমি ফ্যাক্টারিতে তৈরি হতে পারি কিন্তু আমার ভেতরে এমন অনেক কিছুই আছে যা তোমার ভেতরে নেই ! তোমরা আমাকে কিভাবে তৈরি করেছো সেটা ভুলে গেছো ? আমি স্বাধারন কেউ নই, এটা জানো না ?

তারপর আমি মট করে হাড় ভাঙ্গার আওয়াজ পেলাম । ইরোনকে নোভা ছেড়ে দিলো । কিন্তু সে আর উঠতে পারলো না, মাটিতে শুয়ে পড়লো । ইরোন আইভাবের কব্জি হাতের কাছ থেকে অস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে আছে । কোন মানুষ এভাবে কারো হাড় ভেঙ্গে দিতে পারে সেটা আমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না ।

নোভা আমার দিকে এগিয়ে এল । আমার বুকের যেদিকে জিলান ধাক্কা মেয়েছিলো সেটার উপরে হাত রাখলো !

-তুমি ঠিক আছো ?

-তোমার জন্য, বেঁচে আছি ।

নোভা বুকের ওখানে কয়েকবার হাত বুলিয়ে বলল

-হাড় ভাঙ্গে নি । ভয় নেই । চল আমাদের আরও একটু কাজ বাকি আছে ।

তারপর আমরা এদেরকে এখানে রেখেই ডা. রাভেস্কিকে নিয়ে রওনা দিয়ে দিলাম । যাওয়ার আগে কেবল একটাবার আমি পাশের ঘরে একটু উকি দিয়ে দিলাম । হাত পা ছড়িয়ে কালো পোষাক পরা লোক গুলো এমন ভাবে পড়ে আছে যেন কাপড়ের দলা পড়ে আছে ।রাভেস্কি নিজের চোখকে একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছে না একটু আগে সে মারা যাচ্ছিলো এখন সব কিছু কেমন পাল্টে যাচ্ছে ।

আমি ইরোন আইভানকে দেখিয়ে বললাম

-এর কি হবে ?

-ভয় নেই এ কিছু করতে পারবে না । হাতের কব্জির হাড় যেভাবে ভেঙ্গেছে সেটা আর জীবনেো ঠিক হবে না !

আর ওর দিকে খেয়াল দিলাম না । ওকে রেখেই আমরা হোয়াইট প্যালেসের দিকে রওনা দিলাম !



শেষ কথা

আমাদের রেখে যাওয়া ক্যাবটা দেখি তখনও আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে । আমরা তিনজন সেটাতে উঠে বসলাম । পথে কয়েকবার আমাদের আটকানো হল তবে সেই আগের মত করেই নোভা নিজের আইডি কোড দিয়ে সব কিছু পার করে এল আমরা থামলাম সোজা হোয়াইট প্যালেসের সামনে । আমি এখানে কোন দিন আসতে পারবো ভাবতে পারি নি। নোভা সোজা আমাদেরকে নিয়ে হাজির হল প্রেসিন্ডেন্টের ছেলের কাছে ।



ও এতো কিছু চেনে কিভাবে জানতে চাইলে নোভা বলল

-ভুলে যাচ্ছো কেন আমি কার কাছ ক্লোন ? সে যা জানে সেটা আমার ভেতরেও আছে । কিন্তু আমি ওর থেকে সৃষ্টি ওর ভেতরের সব কিছু আমার ভেতরে আছে । ও যা পছন্দ করে আমারও তাই ভাল লাগে । দেখলে না ঐ আইডিটা আমি কিভাবে আপনা আপনি বলে দিলাম ! হয়তো একেবারে নেই তবে আস্তে আস্তে আসতেছে । এই যে এই প্যালেসে আমি কোন দিন আসি নি কিন্তু আমার কাছে সব কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে ।

আমরা প্রেসিডেন্টের ছেলের অফিসের সামনে গিয়ে হাজির হলাম । নোভাকে দেখে গার্ড আমাদের কে সালাম ঠুকলো । বোঝাই যাচ্ছে নোভা এখানে মাঝে মাঝেই আসতো ! কেউ ওকে বাঁধা দিল না কারন ও যে মার্গারেট সেটা আমি আর রাভেস্কি ছাড়া আর কেউ জানে না ।

প্রেসিন্টের ছেলেকে সব বলার পরে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো । কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারলো না । তারপরের কাজ গুলো আরও সহজ হয়েগেল । এক ব্যাটালিয়ান সৈন্য চলে গেল ডা. মিলানের ইনস্টিটিউটে । সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হল । আর উদ্ধার করা হল মার্গারেটকে ! ওর বাবা ওকে আটকে রেখেছিলো যাতে করে ও কাউকেকিছু না বলতে পারে ।

মার্গারেট ব্যস্ত হয়ে গেল নোভাকে নিয়ে । রাভেস্কির আবারও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউের জন্য গুরুত্বপূর্ন হয়ে গেল । কেবল আমারই কোন কাজ রইলো না । আমি যখন চলে আসতে যাবো আমাকে কঠিন করে সাবধান করে দেওয়া হল এসব যেন কাউকে আমি না বলি । স্টেটের নিরাপত্তার জন্যই এমনটা করতে হবে । আমি সম্মতি জানালাম । বললাম যে এমন ঘটনা যে ঘটেছে সেটা আমার এখনই মনে নেই । সামনে মনে থাকবে কিভাবে । আমাকে এও জানানো হল যে আমার এই কাজের জন্য খুব শীঘ্রই আমাকে পুরুস্কার দেওয়া হবে । আমি মুখে হাসি নিয়ে বের হয়ে এলাম ।





যখন বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বের হতে যাবো দেখতে পেলাম নোভা আমার দিকে দৌড়ে আসছে । আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি ওর হার্টবিট খুব ভাল করেই শুনতে পাচ্ছিলাম । আমি বললাম

-তাহলে এটাই শেষ দেখা !

-তাই তো মনে হচ্ছে ! ওরা আমাকে মনে হয় বের হতে দিবে না আর । অবশ্য বের হওয়া ঠিকও হবে না । একই শহরে হুবাহু দুজন থাকলে সমস্যা তো !

আমি হাসলাম ! তারপর বললাম

-জানো এই কটা দিনে আমি তোমার সঙ্গ খুব উপভোগ করেছি । নিরানন্দময় জীবনে তোমার আগমন আমার জন্য চমৎকার একটা আশির্বাদ । আমি সারা জীবন তোমার কথা মনে রাখবো !

-আমিও ! আমার কাছে স্মৃতি বলতে তোমার থেকেই শুরু সেটা !

আমি করিডোর দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলাম তখনও আমার কেন জানি মন খারাপ হতে লাগলো । পেছনে তাকাবো না তাকাবো না করেও তাকিয়ে ফেললাম । তাকিয়ে দেখি নোভা কেমন ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি এখান থেকেই ওর চিকচিক করা অশ্রুজ্বল কনা দেখতে পেলাম । সেটা যে শতভাব মানুষের অশ্রু সে বিষয়ে আমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ রইলো না !





পরিশিষ্টঃ

আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । আমি ঠিক আগের মতই কাজে যাই কাজ থেকে ফিরে আসি । মাঝে মাঝে কম্পিউটার দিয়ে মেইন কম্পিউটারে ঢুকে । এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করি । এই ঘোরা ফেরা করতে করতেই অনেক খবর পেয়েছি । এই এক মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে । ডা. রাভেস্কিকে বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রধান করা হয়েছে । ইরোন আইভানকে অদ্ভুদ কারনে কেউ খুজে পাচ্ছে না । রেকর্ড বলছে তিনি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে গিয়েছিলেন তারপর আর ফিরে আসেন নি ।

মোট ১১৭ জন ধনী আর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হোয়াইট প্যালেটে ডাক হয়েছিল । তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের কি কথা হয়েছে টা অবশ্য কেউ জানে না । তবে অসমর্থিত সুত্র বলছে হোয়াইট প্যালেস থেকে বের হওয়ার সময় সবার মুখই নাকি বেশ গম্ভীর ছিল । আমার অবশ্য বুঝতে কষ্ট হল না কেন গম্ভীর ছিল ।

আমি অবশ্য এসব নিয়ে আর খুব একটা মাথা ঘামাই না । আবার নিয়ম করে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাই । ও হ্যা প্রেসিডেন্টের ছেলে তার কথা রেখেছে । আমার নামে একটা কার্ড ইস্যু হয়েছে । আমি এখন যখন ইচ্ছা আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য গ্রীন সিটিটে যেতে পারি । এমন কি আমি যদি চাই আমি প্রতিদিন কাজ শেষে বাবা মায়ের ওখানে গিয়ে থাকতে পারি । তবে আমার কেন জানি থাকতে ইচ্ছে হয় নি । আমি আমার জায়গাতেই ভাল আছি ।

তবে আমি নোভাকে কেন জানি মিস করি । ঐ দিন চলে আসার সময় ওর চোখের জলটা আমি এখনও ভুলতে পারি নি । মেয়েটা কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । আমি সেই দৃষ্টিকে কিছুতেই ভুলতে পারি না । বিশেষ করে বাসায় আসার সময় সেই নিশুতি রোডের কাছে আসলেই আমার নোভার কথা মনে পড়ে ।

আজকেও যথারীতি যখন আমি কাজ শেষ করে বাসার দিকে আসছিলাম তখনও নোভার কথা মনে পড়লো । বিশেষ করে নিশুতি রোডের কাছে আসতেই মনে হল ঐ তো ওখানে পড়ে ছিল মেয়েটা ! আমি পালাতে গিয়েও থেমে যাই ।

আমি বাইকের গতি বাড়াতে যাবো তখনই একটা অদ্ভুদ কিছু দেখতে পেলাম । রাস্তার ঠিক মাঝে কেউ দাড়িয়ে আছে । আমি খানিকটা খাবি খেলাম । বুকের ভেতরে একটা সুক্ষ ভয়ের ছায়া বয়ে গেল । আমি যখন বাইক ব্রেক করে রাস্তার উপর থেমে গেছি তখন বাইকের আলোতে সেই কেউটাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম ।

আরেকটু কাছে আসতেই আমার মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হল । মনে হল সামনের মানুষটা আমার পরিচিত !

আলোতে যখন আমি ওর মুখ দেখতে পেলাম তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । নোভা আমার কাছে এসে বলল

-এরকম নিশুতি রাতে এরকম নিশুড়ি রাস্তায় বাইক থামানো উচিৎ নয় জনাব ! বিপদ হতে পারে ! আগের বা কি হয়েছিলো মনে নেই ।

আমি কেবল বললাম

-মনে আছে বলেই তো থামালাম !

নোভা আর কোন কথা বলল না ! আমার বাইকের পেছনে চড়ে বসলো ! আমি বাইক বাসার দিকে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম । মনের ভেতরে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । নোভার এখানে থাকার কোন কথা না । ওকে কি ওরা এখানে আসতে দিয়েছে ? নাকি ও পালিয়ে এসেছে ?

আমি প্রশ্ন করতে গিয়েও করলাম না । কোন কিছু দরকার নেই জানার ! যদি দরকার পড়ে তাহলে আবারও পালিয়ে যাবো ওকে নিয়ে । নোভা আমার সাথে রয়েছে এটাই আমার কাছে অনেক কিছু !





(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২০
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×