চেয়ারে বসে ঘুমানোর অভ্যাস খুব একটা নেই তবুও চোখটা লেগে এসেছিল ক্লান্তিতে । হাসপাতালের কিছু সময় আগেও যেখানে হাসপাতালের কোলাহল ছিল এখন সেই কোলাহলটা শোনা যাচ্ছে না । আমার মত কয়েকজন অপেক্ষা করছে । তাদের কাছের কেউ মানুষ নিশ্চয়ই ভর্তি আছে । কেউ কেউ চেয়ারে বসেই নাক ডাকা শুরু করে দিয়েছে । আমি কিছু সময় মোবাইলে ব্রাউজিং করছিলাম । তারপর বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দিলাম । একটু ঘুমানো দরকার । কালকে আবার অফিসে যেতে হবে ।
চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম তখনই নার্সের ডাক শুনলাম !
-মিস্টার অপু হাসান !
আমি চোখ মেলে তাকালাম ।
-জি !
-আপনার রোগী চোখ মেলেছে । আপনাকে দেখতে চাইছে ।
একটু স্বস্তি পেলাম । আইরিনের চোখ তাহলে খুলেছে । আমি বললাম আমি আসবো ?
-হ্যা ! আমার পেছন পেছন আসুন !
এই বলে নার্স আর দেরি করলো না । পেছন ঘুরে হাটতে শুরু করে দিল । আমিও নার্সের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম । কেবিনের ঢুকতেই আইরিনের দিকে চোখ পড়লো । ডাক্তার আছেন একজন । রিপোর্ট বোর্ডে কি যেন লিখছি । মাঝে মাঝে কিছু জানতে চাইছে আইরিনের কাছে । আমি ভেতরে ঢুকেও কোন কথা বললাম না । কেবল আইরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
এই কয়েক ঘন্টার ভেতরের মেয়েটার চেহারার অবস্থা কেমন হয়ে গেছে । এতো শক্ত একটা মেয়ে এতো জলদি ভেঙ্গে যাবে ভাবতে পারি নি । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আইরিন বেশ কিছুটা সময় । ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি এখন চলে যেতে পারেন । আপনার পেসেন্ট এখন আউট অব ডেনজার । তবে আমরা একটু অবজারভেশনে রাখবো একদিন । বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন উনি আমাদের ।
আসলেই আইরিন আমাদের একটু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো । এভাবে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে আমরা ভাবতেই পারি নি । অন্তত আমাদের অফিসের কেউ তো ভাবতেই পারি নি । আমি এখন এই খাটে আধ শোয়া আইরিন আর আমাদের অফিসের ফরমাল পোষাকে আইরিনকে মিলানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু কেন জানি কিছুতেই মেলাতে পারলাম না । মেয়েটার ভেতরে এই কয়েক ঘন্টার ভেতরেই কেমন একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি ।
অফিসে যেখানে মেয়েটার সবার উপর কর্তৃত্ব ফলায় আর এখানে চেহারায় কেমন একটা অসহায়ের ভাব রয়েছে । ডাক্তার ওকে রেখে চলে গেল । নার্সও দেখলাম কিছু সময় পরে চলে গেল । আমি দাড়িয়ে রইলাম । আইরিন তখনও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । কিছু যেন বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না ।
আমি বললাম
-এখন কেমন লাগছে ?
-ভাল ।
-আপনার কিছু লাগবে ?
আইরিন মাথা নাড়লো । একটু যেন লজ্জা পাচ্ছে আমার সাথে কথা বলতে । আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না । দাড়িয়ে থাকবো নাকি চলে যাবো । অফিসে হলে এতো সময়ে আইরিন ঠিক ঠিক আমাকে একটা ঝাড়িয়ে দিয়ে বলত কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছেন কেন ? যান নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করুন । এই কাজটা আজকের ভেতরে শেষ করা চাই ।
কিন্তু এখানে আইরিন তেমন কিছুই বলবে না আমি জানি । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন । এতো সময় অপেক্ষা করেছেন এই জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
আমার কাছে মনে কথাটা মোটেই আইরিনের মনের কথা না । যদিও আইরিন মুখে বলল যে আমি চলে যেতে পারি কিন্তু আমার কেন জানি মনে আইরিন চাচ্ছে আমি এখানে থাকি । অবশ্য মানুষের যখন শরীর খারাপ হয় তখন মানুষ কারো সঙ্গ কামনা করে বিশেষ করে কেউ তার দেখা শোনা করুক এটা চায় । যত শক্ত আর কঠিন মানুষই হোক না কেন সবার চাওয়াই এরকম হয়ে থাকে । আমি একটু হাসি দিয়ে বললাম
-চা খাবেন ?
-চা !!
-হুম । আমি খাবো ভাবছি এক কাপ । আর আজকে না হয় থাকিই এখানে । সমস্যা নেই । বসকে অসুস্থ রেখে বাসায় গেলে বস ঝাড়ি মারতে পারে ।
আমার কথা শুনে আইরিন হেসে ফেলল । তারপর বলল
-থ্যাঙ্কিউ ।
-কেন ?
-এই যে আমার জন্য কষ্ট করছেন । আমি জানি অফিসে আমার খুব একটা পছন্দ করে না কেউ ।
আমি বললাম
-ঠিক অপছন্দ না। ভয় পায় আপনাকে । আপনি যে টাইট দিয়ে রাখেন সবাইকে !
এই লাইনটা আমি অন্য সময় বলতে পারতাম কি না কে জানে তবে দেখলাম আইরিন আবারও হেসে উঠলো । আমি চা নিয়ে ফিরে এলাম । দুজন মিলে চা খেতে খেতে কথা বলতে লাগলাম । কিভাবে আজকে অফিসে সে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলো । আমিই তখনই ওনার অফিসে গিয়েছিলাম কাজে । দেখি আইরিন মেঝেতে পড়ে আছে । একটু আগে একাউন্সের জামিল সাহেব কে সেই ঝাড়ি দিয়েছে সেটা অফিসের সবাই শুনেছে । কই জামিল সাহেবের অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার কথা, তা না পড়ে আছে আইরিন নিজে ।
তারপর লোকজন ডেকে সবাই মিলে ধরাধরি করে অফিসের কাছেই একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে এলাম । প্রথমে বেশ কয়েকজন থাকলেও শেষে আমি রয়ে গেলাম । কেন রয়ে গেলাম আমি জানি না ।
আইরিন বলল
-সবার মত আপনি ও চলে গেলেন না কেন ?
-জানি না । কেন জানি ইচ্ছে হল না । মনে হল যদি কিছু দরকার পরে আপনার । আর কেউ ছিল না তো আপনার কাছের কেউ ।
আমার এই কথ শুনে আইরীনের মুখটা একটু যেন কালো হয়ে গেল । তারপর বলল
-আমার কাছের কেউ নেই । কেউ আসবেও না আমাকে দেখতে !
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । আর কথা ঠিক এগুলো না । আমি এবার বাইরে অপেক্ষা না করে আইরিনের ক্যাবিনে রাখা সোফার উপরেই বসে পড়লাম । ওকে বললাম একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে । আর যদি কোন দরকার পড়ে তাহলে যেন আমাকে ডাক দেয় ।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আইরিন তখনও ঘুমিয়ে আছে । সাদা চাদরের মাঝে গুটুসুটি হয়ে শুয়ে আছে । এই মেয়ে কাল পর্যন্তও আমাদের বকাবকি করেছে কিংবা আমাদের অফিসে সবাই এই মেয়ের ভয় কিংবা জ্বালায় অস্থির হয়ে থাকে এটা আমার কোন ভাবেই এখন বিশ্বাস হল না । কোন কারন নেই তবুও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেক টা সময় । কখন যে আইরিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল সেটা টেরই পেলাম না । আইরিন নিজেও টের পেল যে আমি ওর দিকে এতো সময়ে তাকিয়ে রইলাম । নিজের কাছেই একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিলো । আমি বললাম
-আমি অফিসের দিকে রওনা দেই । একটু বাসায় যাবো আগে । ঠিক আছে ।
আইরিন বলল
-আচ্ছা ।
-আর ডাক্তার কিংবা আপনার যদি কোন কারনে দরকার হয় কোন কিছু না ভেবেই আমাকে ফোন দিবেন । আমাদের অফিসটা কাছেই । আসতে খুব একটা সময় লাগবে না ।
-আচ্ছা ।
যদিও আইরিন আচ্ছা বলল আমার সেই আগের অনুভুতিটা ফিরে এল । আইরিন চাচ্ছে না যে আমি ওকে রেখে অফিসে যাই । আমি দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে যেতেও ঠিক একই কথা মনে হল । মনের ভেতরে কেমন একটা খুঁচখুচে ভাব জমা হয়েই রইলো । বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে অফিসে হাজির হলাম । কেউ কেউ আইরিনের শরীরের খবর জানতে চাইলো । এর বেশি কিছু না । আমার কেন জানি কাজে মন বসলো না ।
আমাদের এই অফিস টা একটা শাখা অফিস । এটার হেড আইরিন নিজে । আজকে যদি অফিস না করে চলেও যাই তাহলে দেখার কেউ নেই । আমি ঘন্টা খানেক অফিসে বসে থেকে আবারও হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম । আসলেই কেমন জানি লাগছিলো । একটা মানুষকে হাসপাতালে একা একা রেখে চলে আসতে ভাল লাগছিলো না বিশেষ করে যেখানে তার দেখার কেউ নেই । যতই আমাদের কে সে ঝাড়ি মারুক বকা দিক, এতো দিন ধরে এক সাথে কাজ করছি ।
আমি যখন আবারও ওর কেবিনে প্রবেশ করলাম তখন আমাকে দেখে আইরিনের চোখটা অনেক টাই উজ্জল হয়ে এল । স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে আমাকে দেখে সে খুশি হয়েছে । আমি বললাম
-অফিসে আজকে বস নেই তো তাই ফাঁকি দিয়ে চলে এলাম ।
আমার ঠাট্টা শুনে আইরিন কেমন বাচ্চাদের মত করে হেসে উঠলো । সত্যি বলতে এতো দিন ওর সাথে কাজ করছি ওভাবে এভাবে হাসতে দেখি নি ।
বিকেলের দিকেই ডাক্তার আইরিনকে রিলিজ করে দিল । ওকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে যখন সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে আসবো তখনই আইরিন আমাকে একটা অদ্ভুদ অনুরোধ করে বসলো ।
ওর শরীর তখন বেশ ভাল হয়ে গেছে । অনেকটাই স্টেবল । বিকেল থেকে ওর সাথে গল্প করছি কথা বলছি । এক সাথে দুজন টিভি দেখছিলাম সময় কাটানোর জন্য । রাতে যখন চলে আসবো তখনই আইরিন আমাকে অনুরোধটা করলো !
টিভির রুমেই বসে ছিলাম । সামনে চায়ের কাপ ।
আইরিন বলল
-একটা অনুরোধ করি ?
-হ্যা । বলুন
-আপনার কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে তবুও ।
আমি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম । কাল থেকে আইরিনের ভেতরে সেই আগের কাঠিন্যের ছিটে ফোটাও নেই । কেমন একটা নরম স্বভাব দেখা যাচ্ছে যেটা ওর চরিত্রের সাথে যায় না । আমি বললাম
-বলুন !
-আজকে রাতে এখানে থেকে যাবেন, প্লিজ ! আসলে একা থাকতে ইচ্ছে করছে না কিছুতেই ।
আমি আসলেই একটু অবাক হয়ে গেলাম । এক অসুস্থ হওয়াটা মেয়েটাকে কিভাবে বদলে দিয়েছে । মাত্র এক দিনে ।
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । সমস্যা নেই ।
-কালকে ছুটির দিন । সমস্যা হবে না তাই খুব !
আমি হাসলাম । আমার কাছে একটু যে অস্বস্থি লাগছিলো না বলবো না তবে মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটাকে এখন সঙ্গ দেওয়াই ভাল । যতই শরীর ভাল হয়ে যাক এভাবে একা একা রেখে যাওয়া কেমন দেখায় । অনেক রাত পর্যন্ত গল্প চলল আমাদের ।
আইরিন যে এতো কথা বলতে পারে আমার ধারনাই ছিল না । যে মেয়েটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা কথা বলতে কোন দিন দেখি নি সেখানে মেয়েটার জন্য কথা বলা থামছেই না ।
আমি বললাম
-আপনি আসলে যেমন টা প্রিটেন্ড করে থাকেন আসলে তেমন নন ।
-কেমন ?
-এই যে আজকে মনে হচ্ছে আসল আপনাকে দেখছি !
-উইক !
শব্দটা বলেই আইরিনের মুখটা একটু যেন মলিন হল ।
-নো নো আমি ঐ কথা বলি নি । আমি আসলে বলতে চেয়েছি যে.....-আমি জানতে চেয়েছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন । কিন্তু বাইরে আমি যতই শক্ত থাকি না কেন কিংবা ভেতরে আমি যে কতটা দুর্বল সেটা আবার আমার কাল মনে পড়েছে । আমি .. আমি যেন সেই আবার ২০ বছর আগে ফিরে গেছিলাম । দুর্বল অস হার একা এক মেয়ে যাকে তার বাবা মার কেউ নিতে চায় নি । কেউ ....
আমি কোন শব্দ খুজে পেলাম না বলার মত । আইরিনর কাঁদতে শুরু করলো । আমি আরও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম । এই সময়ে আমার কি করা উচিৎ আমি আসলেই বুঝতে পারলাম না । আমার পাশেই বসে ছিল । আমি ওর হাতটা ধরে বললাম
-তুমি মোটেই দুর্বল নও । ইণফ্যাক্ট ইউ আর দ্য স্ট্রং ওম্যান আই হ্যাভ এভার সিন । বাট সামটাইমস ইভেন দ্য স্ট্রং ওয়ান নিডস এ সফ্ট হাগ !
আইরিন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ভেজা চোখ নিয়ে । তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো । আমি কেন জানি কোন অস্বস্তি বোধ করলাম এবার । বরং এতোক্ষন যে অস্বস্থি কাজ করছিলো সেটা কেটে গেল । আইরিনের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে । আমি ওর মাথায় একটু হাত রাখলাম । আরও কিছু সময় পরে কাঁন্না থেমে এল । তবে আমাকে ছেড়ে দিল না ।
জড়িয়ে ধরেই আইরিন আমাকে বলল
-তোমাকে এখানে থাকতে বলাতে অবাক হয়েছো তাই না ?
-একটু ! তবে সমস্যা নেই ।
-আমার আচরন কেমন উল্টা পাল্টা লাগছে তোমার কাছে তাই না ?
-হ্যা । তোমাকে যেভাবে চিনি সেরকম কিছু করছো না ।
কিছু সময় চুপ করে থেকে আইরিন আমাকে ছেড়ে আবারও পাশে বসলো । তারপর টিভির সাউন্ডটা আরও েকটু কমিয়ে দিয়ে বলল
-আজকে কেন জানি কেবল পাগলামোই করতে ইচ্ছে করছে । আরেকটু পাগলামো করবো ?
-কি !
-তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুই, শুবো ?
আমি হাসলাম । হাসিতেই অনুমতি পেয়ে আইরিন শোফার উপরেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ।
আমি নিজের অবস্থাটা একটু বিবেচনার কল্পনা করলাম । আসলেই কোন দিন ভাবি নি আমাদের বস কোন দিন এরকম টিপিক্যাল বাঙালী মেয়েদের মত আচরন করতে পারে । কোন দিন ধরনাতেও আসে নি আমার । হঠাৎ আইরিন বলল
-গতকালকে তুমি যখন আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি ।
-কেন ? এটা অবিশ্বাসের কি হল ? একজন মানুষ আরেকজনের জন্য এমনটা করতে পারে না ?
-পারে হয়তো । কিন্তু আমি কোন দিন এরকম টা পাই নি । কোন দিন না । মানুষকে দোষ লাভ নেই আমার নিজের বাবা মাই এমন টা করে নি কোন দিন ।
আমি চেহারায় প্রশ্ণ নিয়ে আইরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আইরিন অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আমার জন্মটা ঠিক প্লান করে হয় নি । ইভেন তারা তখন বিয়েও করে নি । দুর্ঘটনা থেকেই আমি পেটে আসি । তারপর তারা বিয়ে করে । আরও ভাল করে বললে আমার কারনেই বিয়ে করতে বাধ্য হয় এবং আমাকে দুজনেই একটা ঝামেলা মনে করে । সংসার বেশিদিন টিকে নি । আমি যখন সবে মাত্র ক্লাস ওনানে উঠেছি তখন তারা দুজনে দুদিকে চলে যায় কিন্তু আমাকে কেউ নিতে প্রস্তুত ছিল না ।
এই লাইন গুলো বলে আইরিন চুপ করে রইলো । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে । তারপর একটু সামলে বলল
-আমি প্রথম প্রথম বুঝতেই পারতাম না আমাকে ছেড়ে তারা চলে গেছে । কোর্টের মাধ্যমে একটা দফারফা হয় যে তারা কেউ আমাকে রাখবে না কিন্তু আমার বেচে থাকার জন্য যা দরকার তা তারা দুজন মিলে বহন করবে, কোর্টের কারনে বাধ্য হয়েছিল আর কি । তারপর থেকে আমি বোডিং হাউজে মানুষ হতে থাকি । অনেক মানুষ ছিল কিন্তু আমি একা খুব বেশি একা ছিলাম সারা জীবন । একবার সামার ভ্যাকেশনে, সবাই বাসায় চলে গেছে কেবল আমি রয়েছি । আরও কিছু মানুষজন রয়েছে । আমার খুব শরীর খারাপ হল । কিন্তু দেখার কেউ নেই, কেউ একজনও নেই । সেদিন আমার এতো বেশি অসহায় নিজেকে মনে হয়েছিল । গতকালকেও ঠিক তেমনই মনে হচ্ছিল । কিন্তু নার্স যখন বলল আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে আমি ভাবতেই পারি নি । নিজের ভেতরে কি একটা তোলপাড় হচ্ছিলো । রাতে যখন তুমি কেবিনের সোফাতে শুয়ে ছিলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । সারাটা রাতই । আই ডোন্ট নো আমি কি দেখছিলাম কিন্তু আমি তোমার দিক থেকে চোখ সরাতে পারি নি ।
আইরিন আমার দিকে একভাবেই তাকিয়ে আছে । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না ।
আইরিন বলল
-আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে দেয়ার সাম বডি ওয়েটিং ফর মি । সবাইকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো যে দেখো এই ছেলেটা আমার জন্য বাসায় না গিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে । আমার জন্য । আমি ফেলনা কেউ না । আমি ....
আবারও আইরিনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম
-এভাবে ভেবো না নিজেকে । তুমি অবশ্যই ফেলনা কেউ না । তোমার নিজের মূল্য আছে ।
আইরিন বলল
-আই নো । কিন্তু কিছু একটা পরিবর্তন আমার ভেতরে হয়েছে । আমি বুঝতে পারছি । আসলে যে ঘটনা কোন দিন ঘটে নি সেরকম কিছু হয়েছে তো । তাই পাগলামো করছি । কার পরশু ঠিক হয়ে যাবে ।
-তার মানে কালকের পর থেকে আবার আমাদের সবাইকে দৌড়ের উপর রাখা শুরু করবে !
আইরিন হেসে উঠলো
তারপর আমার হঠাৎ করেই মাথাটা উপরে নিয়ে এসে আমার নাকের সাথে নিজের নাকটা স্পর্শ করলো মৃদ্যু ভাবে । তারপর আবারও নিজের মাথাটা আমার কোলের উপর উপরে নিয়ে গিয়ে বলল
-আমাদের মস্পর্ক আর কোন দিনও আগের মত হবে না । আই মিন, ইউ নো হোয়াট আই মিন !
আমি কিছু না বলে কেবল হাসলাম । আসলেই আগের মত আমাদের সম্পর্ক আর রইবে না । না থাকুক । এতোদিন আমরা সবাই কেবল আইরিনের বাইরের কঠিন দিকটাই দেখে এসেছি । কিন্তু ভেতরেও যে এমন একটা দিক আছে সেটা হয়তো টেরই পেত না যদি না কালকের ঘটনা ঘটতো আর আমিও এখানে এভাবে বসে থাকতাম না !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৮