somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মেয়েটি কিংবা তার ভেতরের কেউ ....

২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চেয়ারে বসে ঘুমানোর অভ্যাস খুব একটা নেই তবুও চোখটা লেগে এসেছিল ক্লান্তিতে । হাসপাতালের কিছু সময় আগেও যেখানে হাসপাতালের কোলাহল ছিল এখন সেই কোলাহলটা শোনা যাচ্ছে না । আমার মত কয়েকজন অপেক্ষা করছে । তাদের কাছের কেউ মানুষ নিশ্চয়ই ভর্তি আছে । কেউ কেউ চেয়ারে বসেই নাক ডাকা শুরু করে দিয়েছে । আমি কিছু সময় মোবাইলে ব্রাউজিং করছিলাম । তারপর বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দিলাম । একটু ঘুমানো দরকার । কালকে আবার অফিসে যেতে হবে ।

চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম তখনই নার্সের ডাক শুনলাম !

-মিস্টার অপু হাসান !
আমি চোখ মেলে তাকালাম ।
-জি !
-আপনার রোগী চোখ মেলেছে । আপনাকে দেখতে চাইছে ।
একটু স্বস্তি পেলাম । আইরিনের চোখ তাহলে খুলেছে । আমি বললাম আমি আসবো ?
-হ্যা ! আমার পেছন পেছন আসুন !

এই বলে নার্স আর দেরি করলো না । পেছন ঘুরে হাটতে শুরু করে দিল । আমিও নার্সের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম । কেবিনের ঢুকতেই আইরিনের দিকে চোখ পড়লো । ডাক্তার আছেন একজন । রিপোর্ট বোর্ডে কি যেন লিখছি । মাঝে মাঝে কিছু জানতে চাইছে আইরিনের কাছে । আমি ভেতরে ঢুকেও কোন কথা বললাম না । কেবল আইরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
এই কয়েক ঘন্টার ভেতরের মেয়েটার চেহারার অবস্থা কেমন হয়ে গেছে । এতো শক্ত একটা মেয়ে এতো জলদি ভেঙ্গে যাবে ভাবতে পারি নি । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আইরিন বেশ কিছুটা সময় । ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি এখন চলে যেতে পারেন । আপনার পেসেন্ট এখন আউট অব ডেনজার । তবে আমরা একটু অবজারভেশনে রাখবো একদিন । বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন উনি আমাদের ।

আসলেই আইরিন আমাদের একটু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো । এভাবে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে আমরা ভাবতেই পারি নি । অন্তত আমাদের অফিসের কেউ তো ভাবতেই পারি নি । আমি এখন এই খাটে আধ শোয়া আইরিন আর আমাদের অফিসের ফরমাল পোষাকে আইরিনকে মিলানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু কেন জানি কিছুতেই মেলাতে পারলাম না । মেয়েটার ভেতরে এই কয়েক ঘন্টার ভেতরেই কেমন একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি ।

অফিসে যেখানে মেয়েটার সবার উপর কর্তৃত্ব ফলায় আর এখানে চেহারায় কেমন একটা অসহায়ের ভাব রয়েছে । ডাক্তার ওকে রেখে চলে গেল । নার্সও দেখলাম কিছু সময় পরে চলে গেল । আমি দাড়িয়ে রইলাম । আইরিন তখনও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । কিছু যেন বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না ।
আমি বললাম
-এখন কেমন লাগছে ?
-ভাল ।
-আপনার কিছু লাগবে ?
আইরিন মাথা নাড়লো । একটু যেন লজ্জা পাচ্ছে আমার সাথে কথা বলতে । আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না । দাড়িয়ে থাকবো নাকি চলে যাবো । অফিসে হলে এতো সময়ে আইরিন ঠিক ঠিক আমাকে একটা ঝাড়িয়ে দিয়ে বলত কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছেন কেন ? যান নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করুন । এই কাজটা আজকের ভেতরে শেষ করা চাই ।

কিন্তু এখানে আইরিন তেমন কিছুই বলবে না আমি জানি । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন । এতো সময় অপেক্ষা করেছেন এই জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

আমার কাছে মনে কথাটা মোটেই আইরিনের মনের কথা না । যদিও আইরিন মুখে বলল যে আমি চলে যেতে পারি কিন্তু আমার কেন জানি মনে আইরিন চাচ্ছে আমি এখানে থাকি । অবশ্য মানুষের যখন শরীর খারাপ হয় তখন মানুষ কারো সঙ্গ কামনা করে বিশেষ করে কেউ তার দেখা শোনা করুক এটা চায় । যত শক্ত আর কঠিন মানুষই হোক না কেন সবার চাওয়াই এরকম হয়ে থাকে । আমি একটু হাসি দিয়ে বললাম
-চা খাবেন ?
-চা !!
-হুম । আমি খাবো ভাবছি এক কাপ । আর আজকে না হয় থাকিই এখানে । সমস্যা নেই । বসকে অসুস্থ রেখে বাসায় গেলে বস ঝাড়ি মারতে পারে ।

আমার কথা শুনে আইরিন হেসে ফেলল । তারপর বলল
-থ্যাঙ্কিউ ।
-কেন ?
-এই যে আমার জন্য কষ্ট করছেন । আমি জানি অফিসে আমার খুব একটা পছন্দ করে না কেউ ।
আমি বললাম
-ঠিক অপছন্দ না। ভয় পায় আপনাকে । আপনি যে টাইট দিয়ে রাখেন সবাইকে !

এই লাইনটা আমি অন্য সময় বলতে পারতাম কি না কে জানে তবে দেখলাম আইরিন আবারও হেসে উঠলো । আমি চা নিয়ে ফিরে এলাম । দুজন মিলে চা খেতে খেতে কথা বলতে লাগলাম । কিভাবে আজকে অফিসে সে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলো । আমিই তখনই ওনার অফিসে গিয়েছিলাম কাজে । দেখি আইরিন মেঝেতে পড়ে আছে । একটু আগে একাউন্সের জামিল সাহেব কে সেই ঝাড়ি দিয়েছে সেটা অফিসের সবাই শুনেছে । কই জামিল সাহেবের অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার কথা, তা না পড়ে আছে আইরিন নিজে ।
তারপর লোকজন ডেকে সবাই মিলে ধরাধরি করে অফিসের কাছেই একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে এলাম । প্রথমে বেশ কয়েকজন থাকলেও শেষে আমি রয়ে গেলাম । কেন রয়ে গেলাম আমি জানি না ।

আইরিন বলল
-সবার মত আপনি ও চলে গেলেন না কেন ?
-জানি না । কেন জানি ইচ্ছে হল না । মনে হল যদি কিছু দরকার পরে আপনার । আর কেউ ছিল না তো আপনার কাছের কেউ ।

আমার এই কথ শুনে আইরীনের মুখটা একটু যেন কালো হয়ে গেল । তারপর বলল
-আমার কাছের কেউ নেই । কেউ আসবেও না আমাকে দেখতে !
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । আর কথা ঠিক এগুলো না । আমি এবার বাইরে অপেক্ষা না করে আইরিনের ক্যাবিনে রাখা সোফার উপরেই বসে পড়লাম । ওকে বললাম একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে । আর যদি কোন দরকার পড়ে তাহলে যেন আমাকে ডাক দেয় ।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আইরিন তখনও ঘুমিয়ে আছে । সাদা চাদরের মাঝে গুটুসুটি হয়ে শুয়ে আছে । এই মেয়ে কাল পর্যন্তও আমাদের বকাবকি করেছে কিংবা আমাদের অফিসে সবাই এই মেয়ের ভয় কিংবা জ্বালায় অস্থির হয়ে থাকে এটা আমার কোন ভাবেই এখন বিশ্বাস হল না । কোন কারন নেই তবুও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেক টা সময় । কখন যে আইরিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল সেটা টেরই পেলাম না । আইরিন নিজেও টের পেল যে আমি ওর দিকে এতো সময়ে তাকিয়ে রইলাম । নিজের কাছেই একটু লজ্জা লজ্জা লাগছিলো । আমি বললাম
-আমি অফিসের দিকে রওনা দেই । একটু বাসায় যাবো আগে । ঠিক আছে ।
আইরিন বলল
-আচ্ছা ।
-আর ডাক্তার কিংবা আপনার যদি কোন কারনে দরকার হয় কোন কিছু না ভেবেই আমাকে ফোন দিবেন । আমাদের অফিসটা কাছেই । আসতে খুব একটা সময় লাগবে না ।
-আচ্ছা ।

যদিও আইরিন আচ্ছা বলল আমার সেই আগের অনুভুতিটা ফিরে এল । আইরিন চাচ্ছে না যে আমি ওকে রেখে অফিসে যাই । আমি দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে যেতেও ঠিক একই কথা মনে হল । মনের ভেতরে কেমন একটা খুঁচখুচে ভাব জমা হয়েই রইলো । বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে অফিসে হাজির হলাম । কেউ কেউ আইরিনের শরীরের খবর জানতে চাইলো । এর বেশি কিছু না । আমার কেন জানি কাজে মন বসলো না ।

আমাদের এই অফিস টা একটা শাখা অফিস । এটার হেড আইরিন নিজে । আজকে যদি অফিস না করে চলেও যাই তাহলে দেখার কেউ নেই । আমি ঘন্টা খানেক অফিসে বসে থেকে আবারও হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম । আসলেই কেমন জানি লাগছিলো । একটা মানুষকে হাসপাতালে একা একা রেখে চলে আসতে ভাল লাগছিলো না বিশেষ করে যেখানে তার দেখার কেউ নেই । যতই আমাদের কে সে ঝাড়ি মারুক বকা দিক, এতো দিন ধরে এক সাথে কাজ করছি ।

আমি যখন আবারও ওর কেবিনে প্রবেশ করলাম তখন আমাকে দেখে আইরিনের চোখটা অনেক টাই উজ্জল হয়ে এল । স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে আমাকে দেখে সে খুশি হয়েছে । আমি বললাম
-অফিসে আজকে বস নেই তো তাই ফাঁকি দিয়ে চলে এলাম ।
আমার ঠাট্টা শুনে আইরিন কেমন বাচ্চাদের মত করে হেসে উঠলো । সত্যি বলতে এতো দিন ওর সাথে কাজ করছি ওভাবে এভাবে হাসতে দেখি নি ।

বিকেলের দিকেই ডাক্তার আইরিনকে রিলিজ করে দিল । ওকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে যখন সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে আসবো তখনই আইরিন আমাকে একটা অদ্ভুদ অনুরোধ করে বসলো ।
ওর শরীর তখন বেশ ভাল হয়ে গেছে । অনেকটাই স্টেবল । বিকেল থেকে ওর সাথে গল্প করছি কথা বলছি । এক সাথে দুজন টিভি দেখছিলাম সময় কাটানোর জন্য । রাতে যখন চলে আসবো তখনই আইরিন আমাকে অনুরোধটা করলো !

টিভির রুমেই বসে ছিলাম । সামনে চায়ের কাপ ।
আইরিন বলল
-একটা অনুরোধ করি ?
-হ্যা । বলুন
-আপনার কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে তবুও ।

আমি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম । কাল থেকে আইরিনের ভেতরে সেই আগের কাঠিন্যের ছিটে ফোটাও নেই । কেমন একটা নরম স্বভাব দেখা যাচ্ছে যেটা ওর চরিত্রের সাথে যায় না । আমি বললাম
-বলুন !
-আজকে রাতে এখানে থেকে যাবেন, প্লিজ ! আসলে একা থাকতে ইচ্ছে করছে না কিছুতেই ।

আমি আসলেই একটু অবাক হয়ে গেলাম । এক অসুস্থ হওয়াটা মেয়েটাকে কিভাবে বদলে দিয়েছে । মাত্র এক দিনে ।
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । সমস্যা নেই ।
-কালকে ছুটির দিন । সমস্যা হবে না তাই খুব !

আমি হাসলাম । আমার কাছে একটু যে অস্বস্থি লাগছিলো না বলবো না তবে মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটাকে এখন সঙ্গ দেওয়াই ভাল । যতই শরীর ভাল হয়ে যাক এভাবে একা একা রেখে যাওয়া কেমন দেখায় । অনেক রাত পর্যন্ত গল্প চলল আমাদের ।
আইরিন যে এতো কথা বলতে পারে আমার ধারনাই ছিল না । যে মেয়েটাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা কথা বলতে কোন দিন দেখি নি সেখানে মেয়েটার জন্য কথা বলা থামছেই না ।

আমি বললাম
-আপনি আসলে যেমন টা প্রিটেন্ড করে থাকেন আসলে তেমন নন ।
-কেমন ?
-এই যে আজকে মনে হচ্ছে আসল আপনাকে দেখছি !
-উইক !
শব্দটা বলেই আইরিনের মুখটা একটু যেন মলিন হল ।
-নো নো আমি ঐ কথা বলি নি । আমি আসলে বলতে চেয়েছি যে.....-আমি জানতে চেয়েছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন । কিন্তু বাইরে আমি যতই শক্ত থাকি না কেন কিংবা ভেতরে আমি যে কতটা দুর্বল সেটা আবার আমার কাল মনে পড়েছে । আমি .. আমি যেন সেই আবার ২০ বছর আগে ফিরে গেছিলাম । দুর্বল অস হার একা এক মেয়ে যাকে তার বাবা মার কেউ নিতে চায় নি । কেউ ....

আমি কোন শব্দ খুজে পেলাম না বলার মত । আইরিনর কাঁদতে শুরু করলো । আমি আরও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম । এই সময়ে আমার কি করা উচিৎ আমি আসলেই বুঝতে পারলাম না । আমার পাশেই বসে ছিল । আমি ওর হাতটা ধরে বললাম
-তুমি মোটেই দুর্বল নও । ইণফ্যাক্ট ইউ আর দ্য স্ট্রং ওম্যান আই হ্যাভ এভার সিন । বাট সামটাইমস ইভেন দ্য স্ট্রং ওয়ান নিডস এ সফ্ট হাগ !

আইরিন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ভেজা চোখ নিয়ে । তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো । আমি কেন জানি কোন অস্বস্তি বোধ করলাম এবার । বরং এতোক্ষন যে অস্বস্থি কাজ করছিলো সেটা কেটে গেল । আইরিনের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে । আমি ওর মাথায় একটু হাত রাখলাম । আরও কিছু সময় পরে কাঁন্না থেমে এল । তবে আমাকে ছেড়ে দিল না ।

জড়িয়ে ধরেই আইরিন আমাকে বলল
-তোমাকে এখানে থাকতে বলাতে অবাক হয়েছো তাই না ?
-একটু ! তবে সমস্যা নেই ।
-আমার আচরন কেমন উল্টা পাল্টা লাগছে তোমার কাছে তাই না ?
-হ্যা । তোমাকে যেভাবে চিনি সেরকম কিছু করছো না ।

কিছু সময় চুপ করে থেকে আইরিন আমাকে ছেড়ে আবারও পাশে বসলো । তারপর টিভির সাউন্ডটা আরও েকটু কমিয়ে দিয়ে বলল
-আজকে কেন জানি কেবল পাগলামোই করতে ইচ্ছে করছে । আরেকটু পাগলামো করবো ?
-কি !
-তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুই, শুবো ?
আমি হাসলাম । হাসিতেই অনুমতি পেয়ে আইরিন শোফার উপরেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ।

আমি নিজের অবস্থাটা একটু বিবেচনার কল্পনা করলাম । আসলেই কোন দিন ভাবি নি আমাদের বস কোন দিন এরকম টিপিক্যাল বাঙালী মেয়েদের মত আচরন করতে পারে । কোন দিন ধরনাতেও আসে নি আমার । হঠাৎ আইরিন বলল
-গতকালকে তুমি যখন আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি ।
-কেন ? এটা অবিশ্বাসের কি হল ? একজন মানুষ আরেকজনের জন্য এমনটা করতে পারে না ?
-পারে হয়তো । কিন্তু আমি কোন দিন এরকম টা পাই নি । কোন দিন না । মানুষকে দোষ লাভ নেই আমার নিজের বাবা মাই এমন টা করে নি কোন দিন ।

আমি চেহারায় প্রশ্ণ নিয়ে আইরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আইরিন অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আমার জন্মটা ঠিক প্লান করে হয় নি । ইভেন তারা তখন বিয়েও করে নি । দুর্ঘটনা থেকেই আমি পেটে আসি । তারপর তারা বিয়ে করে । আরও ভাল করে বললে আমার কারনেই বিয়ে করতে বাধ্য হয় এবং আমাকে দুজনেই একটা ঝামেলা মনে করে । সংসার বেশিদিন টিকে নি । আমি যখন সবে মাত্র ক্লাস ওনানে উঠেছি তখন তারা দুজনে দুদিকে চলে যায় কিন্তু আমাকে কেউ নিতে প্রস্তুত ছিল না ।

এই লাইন গুলো বলে আইরিন চুপ করে রইলো । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে । তারপর একটু সামলে বলল
-আমি প্রথম প্রথম বুঝতেই পারতাম না আমাকে ছেড়ে তারা চলে গেছে । কোর্টের মাধ্যমে একটা দফারফা হয় যে তারা কেউ আমাকে রাখবে না কিন্তু আমার বেচে থাকার জন্য যা দরকার তা তারা দুজন মিলে বহন করবে, কোর্টের কারনে বাধ্য হয়েছিল আর কি । তারপর থেকে আমি বোডিং হাউজে মানুষ হতে থাকি । অনেক মানুষ ছিল কিন্তু আমি একা খুব বেশি একা ছিলাম সারা জীবন । একবার সামার ভ্যাকেশনে, সবাই বাসায় চলে গেছে কেবল আমি রয়েছি । আরও কিছু মানুষজন রয়েছে । আমার খুব শরীর খারাপ হল । কিন্তু দেখার কেউ নেই, কেউ একজনও নেই । সেদিন আমার এতো বেশি অসহায় নিজেকে মনে হয়েছিল । গতকালকেও ঠিক তেমনই মনে হচ্ছিল । কিন্তু নার্স যখন বলল আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে আমি ভাবতেই পারি নি । নিজের ভেতরে কি একটা তোলপাড় হচ্ছিলো । রাতে যখন তুমি কেবিনের সোফাতে শুয়ে ছিলে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । সারাটা রাতই । আই ডোন্ট নো আমি কি দেখছিলাম কিন্তু আমি তোমার দিক থেকে চোখ সরাতে পারি নি ।

আইরিন আমার দিকে একভাবেই তাকিয়ে আছে । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না ।
আইরিন বলল
-আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে দেয়ার সাম বডি ওয়েটিং ফর মি । সবাইকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো যে দেখো এই ছেলেটা আমার জন্য বাসায় না গিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে । আমার জন্য । আমি ফেলনা কেউ না । আমি ....

আবারও আইরিনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম
-এভাবে ভেবো না নিজেকে । তুমি অবশ্যই ফেলনা কেউ না । তোমার নিজের মূল্য আছে ।

আইরিন বলল
-আই নো । কিন্তু কিছু একটা পরিবর্তন আমার ভেতরে হয়েছে । আমি বুঝতে পারছি । আসলে যে ঘটনা কোন দিন ঘটে নি সেরকম কিছু হয়েছে তো । তাই পাগলামো করছি । কার পরশু ঠিক হয়ে যাবে ।
-তার মানে কালকের পর থেকে আবার আমাদের সবাইকে দৌড়ের উপর রাখা শুরু করবে !
আইরিন হেসে উঠলো
তারপর আমার হঠাৎ করেই মাথাটা উপরে নিয়ে এসে আমার নাকের সাথে নিজের নাকটা স্পর্শ করলো মৃদ্যু ভাবে । তারপর আবারও নিজের মাথাটা আমার কোলের উপর উপরে নিয়ে গিয়ে বলল
-আমাদের মস্পর্ক আর কোন দিনও আগের মত হবে না । আই মিন, ইউ নো হোয়াট আই মিন !

আমি কিছু না বলে কেবল হাসলাম । আসলেই আগের মত আমাদের সম্পর্ক আর রইবে না । না থাকুক । এতোদিন আমরা সবাই কেবল আইরিনের বাইরের কঠিন দিকটাই দেখে এসেছি । কিন্তু ভেতরেও যে এমন একটা দিক আছে সেটা হয়তো টেরই পেত না যদি না কালকের ঘটনা ঘটতো আর আমিও এখানে এভাবে বসে থাকতাম না !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৮
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×