somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ার্ড কমিশনারের বোন এবং আমার সম্ভাব্য সফল প্রেমের গল্প :D

২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এলাকার কমিশনার সাহেব মাঝে মাঝেই এলাকা পরিদর্শনে বের হয় । এটাকে ঠিক পরিদর্শন না বলে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া বললেই মনে হয় ভাল হয় । এই সময়ে তিনি এলাকার সব কিছু দেখা শুনা করে । কোনটা কোথায় থাকা উচিৎ নয় সেটা দেখে বেড়ান । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যেদিন তিনি পরিদর্শনে বের হন তার আগেই সবাই সব কিছু জেনে যায় । তারপর অস্থায়ী ভাবে সব কিছু ঠিক করে ফেলে ।

উদাহরন দিয়ে বলি । আমি যে হোটেলে খাওয়া দাওয়া করি সেই হোটেল মালিক নিজের হোটেল ছাড়াও রাস্তার মোটামুটি অর্ধেক জায়গা দখল করে চেয়ার টেবিল বসিয়েছে । আজকে খেতে গিয়ে দেখি রাস্তার উপর আর চেয়ার টেবিল কিছু নেই । বুঝলাম আজকে আবারও কমিশনার সাহেব আসবে । অবশ্য আমি আগে থেকেই খোজ পেয়েছিলাম ।

খাওয়া শেষ করতে না করতেই কমিশনটার রাজিম ভাইয়ের দেখা পেয়ে গেলাম । গোটা ৫০ জন লোক তার আশে পাশে ঘুরাফেরা করছে । তিনি সব কিছু দেখছেন । আমি কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বুকে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলাম ।



-ভাই একটা কথা ছিল !

আমার কথা শুনে আসে পাশের সবাই কেমন যেন একটু থতমত খেয়ে গেল । যেখানে সবাই কমিশনারের কথায় হ্যা হ্যা করে যাচ্ছে সেখানে আমি আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এলাম । দেখলাম একজন চামচা মত ছোকড়া এগিয়ে এসে বলল
-কি চাই ?
-ভাইয়ার সাথে একটা সেলফি তুলতে চাই ?
-কি ? কেন ? ভাইয়ের কি আর কোন কাজ নেই নাকি ?

আমি এবার আমাদের কমিশনারের দিকে তাকিয়ে বললাম
-ভাই প্লিজ ! আপনি হচ্ছেন আমাদের এলাকার হিরো । হিরো বলতে একেবারে আসল হিরো । আপনার সাথে সেলফি তুলে যখন ফেসবুকে পোস্ট দিবো তখন আমার ভ্যালু কত বেড়ে যাবে জানেন !! প্লিজ ! একটা মাত্র ছবি !

আমি দেখতে পেলাম কমিশনারের চোখটা খুশিতে চকচক করে উঠলো । ওঠারই কথা । এমন প্রশংসা কেই বা পছন্দ করে না । সবাই তোষামদে গলে যেতে বাধ্য ! আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু মনে এতেই কাজ হয়ে যাবে ।
কমিশনার বলল
-আচ্ছা ঠিক ঠক আছে । একটা সেলফিই তো !
-জি ভাই !
কমিশনারের সাথে একটা সেলফি তুলেই ফেললাম ।
সেলফি তোলার পরে বললাম
-আপনি সাথে সেলফি তুলতে পেরে আজকে আমি খুবই আনন্দিত ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । কোথায় থাকো তুমি ?
-আলীম সাহেবের বাসায় ।
-আচ্ছা !
-ভাই যদিও জানি আমাকে দরকার নেই তবুও যদি কোন দিন আপনার কোন উপকারে আসতে পারি আমাকে নির্দ্বায় বলবেন । বলবেন কি হুকুম করবেন ! আপনার হুকুম শুনতে আমি সদা প্রস্তুত !
-আচ্ছা আচ্ছা ! তোমাদের মত ছেলেদেরই তো দরকার আমার দলে । মাঝে মাঝে এসে কাজ টাজ করে যেও !
-অবশ্যই ! আপনি যখন বলবেন !
-তা কোথায় পড় তুমি ?
আমি বললাম কোথায় পড়ি । নাম শুনে বেশ প্রসণ্ণ হলেন মনে হল । খুশিও হলেন । সবাই ই হয় এমন করে ।

আমাকে রেখে কমিশনার হাটা দিল তার দলবল নিয়ে । আমি দাড়িয়ে রইলাম । মনে মনে হাসলাম কেবল. আপাতত আমার কাজ এখানে শেষ । এখন কেবল অপেক্ষা করার পালা ।

আমার ডাক পড়লো আরও সপ্তাহ খানেক পড়ে । সেদিনের সেই ছোকড়াই আমাকে ডাকতে এল । আমি সুড়সুড় করে হাজির হয়ে গেলাম কমিশনারের অফিসে । আমার দিকে তাকিয়ে কমিশনার বলল
-তুমি সেদিন বলেছিলেন না তুমি কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড় ?
-জি !
-আমার একটা কাজ করে দিতে হবে !
-আপনি কেবল হুকুম করে ভাই । দিতে হবে কেন বলছেন । বলবেন এই কাজটা করে দে !
কমিশনারের মুখে আবারও হাসি দেখা গেল । বলল
-আমার ছোট বোনের পিসিতে কি একটা সমস্যা হয়েছে । কি নাকি করা লাগবে । একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার দরকার । তুমি কি পারবে ? আমি আবার এ ব্যাপারে কম বুঝি !
-আরে পারবো না মানে ? অবশ্যই পারবো । আর আমি না পরলে আমাদের ক্যাম্পাসে নিয়ে যাবো । কোন সমস্যা নেই ।
তারপর কমিশনার পাশের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
-একে বাসায় নিয়ে যা । রুনুকে বলবি কি সমস্যা একে যেন বলে ।


সেই ছোকড়ার সাথে সাথেই কমিশনারের বাসায় এসে হাজির হলাম । দরজা খোলাই ছিল । ছেলেটা ছোট আপা বলে ডাকতেই কমিশনার ছোট বোন বের হয়ে এল ।
একে কে না চেনে । এলাকার সবাই এক নামে চেনে । একটু কথা বলার জন্য এদিক ওদিক ঘোরা ফেরা করে কিন্তু সাহসের অভাবে কিছু বলতে পারে না । আর যা ভাব নিয়ে চলে । অবশ্য ভাব নিয়ে চলা একে মানায়ও । একে তো ভাই কমিশনার তার উপরে কন্যা মাশাল্লা দেখতেও সেই !!
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ?
-আপনাের কম্পুটারের কি জানি সমস্যা ! এরে কইতে কইছে ভাই !
-ইনি কেন ? মিস্ত্রি ?
আমাকে দেখে কি মিস্ত্রির মত মনে হচ্ছে ? আমি একটু কেশে উঠলাম !
ছোকরা বলল
-এই ছেলে পারবে । আপনি একে বলেন ।
রুনু তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-পারবেন আপনি ?
-চেষ্টা করে দেখি ! না পারলে অন্য ব্যবস্থা করা যাবে । আর ভাই যখন পাঠিয়েছে । দেখতে তো হবেই ।
রুনু যেন কথা শুনে একটু বিরক্ত হল । তারপর পাশের ছোকড়ার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । ভাইয়াকে বল যে আজকে যেন একটু জলদি বাসায় আসে । কেমন ?
এই কথার পরেও ছোকড়া দাড়িয়ে রইলো । রুনু বলল
-কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছো কেন ?
-না মানে .....
রুনু বলল
-কোন ভয় নেই । ভাইয়া পাঠিয়েছে না একে । তাহলে ?

আসলে ছোকড়া আমাকে এখানে একা রেখে যেতে ঠিক সাহস পাচ্ছে না । তবুও রুনু ধমক শুনে দরজার দিকে হাটা দিল । আমি রুনুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম । এই মেয়ে এমন ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে কেন আমার দিকে ।
পেছন থেকে এক মহিলা বের হয়ে এল !
রুনু বলল
-মা, ভাইয়া একে পাঠিয়েছে পিসিটা ঠিক করার জন্য ।
তিনি মনে হয় কোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম । আমার দিকে একটু তাকিয়ে বলল
-তোর পিসির কাছে নিয়ে যা ।
রুনু কিছু বলল না । মহিলা আবার যেদিক দিয়ে এসেছিলেন সেদিকেই চলে গেলেন ।
রুনুকে দেখলাম ঘরের অন্য দিকে হাটতে । আমি কি করবো ঠিক বুঝলাম না । আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রুনু বলল
-এই যে মিস্ত্রী সাহেব । আসুন.
আবার মিস্ত্রী ? আমি কি মিস্ত্রী ? এই মেয়ের খবর আছে কিন্তু !

আমি ওর পেছন পেছন এগিয়ে গেলাম । ওর পিসিটা ওর নিজের ঘরে । ওর ঘরের ঢুকতেই ওর হাত দুটো দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলাম । তারপর মুখটা খুব কাছে নিয়ে এসে বললাম
-আমি মিস্ত্রী ? হুম ?
রুনু আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে তারপর বলল
-ছাড় ! মা চলে আসবে !
-আসতে দাও ! দেখুক !
-প্লিজ ! এমন করে না । ভাইয়া জানতে পারলে কি করবে জানো তো !
-হুম ! দেখলে না তোমার ভাইয়াই তো আমাকে এখানে পাঠালো তোমার সমস্যা সমাধানে ! তা ম্যাডামের সমস্যা সমাধান করবো না ?
-যাও ! ফাজিল !
বলে আমাকে সরিয়ে দিয়ে পিসি চালু করতে গেল ।

অনেক দিন আগে কথায় কথায় রুনুলে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে আমি ওদের বাসায় ঢুকবো । আমি জোর গলায় বলেছিলাম যে ওর নিজের ভাই আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে । সেই জন্যই ওর ভাইয়ের সাথে সেলফি, তেল দেওয়া এই সব । আমি যে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এটাই খানিকটা জানানো । তারপর রুনুকে দিয়ে তার ভাইকে জানানো যে তার পিসিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং সেটা যেন তেন ভাবে ঠিক হবে না । একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লাগবে !
আমি নিশ্চিৎ জানতাম যে আমার কথা তার মনে পড়বেই । ঐদিন যেভাবে তেল মেরেছি না মনে পড়ে কি পারে !
রুনু পিসি চালু করে বলল
-দেখো কি সমস্যা ?
-আগে আমার পুরুস্কার !
-কিসের ?
-মনে নেই ? বলেছিলাম আমি যদি আসতে পারি তাহলে কি দিতে হবে !
-আচ্ছা বাবা দেবতো মানা তো করি নি ! আগে পিসিটা একটু দেখো । নয়তো ধরা পড়ে যেতে পারে !


দুই

রুনুকে আমি প্রথম দেখি যেদিন এই এলাকাতে প্রথম আসি সেদিনই । বাসার সামনে ভ্যানে মাল পত্র নিয়ে বসেছিলাম তখন দেখি রুনু সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আমি তাকিয়ে দেখলাম তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলাম । এই আমাদের প্রথম দেখা ।
ঠিক তার পরের দিনে আবার দেখা । আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি । টিউশনীতে যাবো । কঠিন রোড উঠেছে । রুনুকে দেখলাম সামনে দিয়ে আসতে । আমার দিকে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-সামনের মোড়ে গিয়ে একটা রিক্সা ডেকে দিন তো !

আমি অবাক হয়ে কিছু সময় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । তখনও ওর নাম ধাম ওর পরিচয় কিছুই জানি না । তাই একটু অবাক লাগলো । চিনি না জানি না এরকম একজনকে রিক্সা ডেকে দিতে বলা । তাও আবার অনুরোধের সুরে বললেও হয়, বলছে হুকুমের সুরে । আমি বললাম
-আমি ওদিকে যাবো না । পেছনের দিকে যাবো
মেয়েটি আমার দিকে এবার ভাল করে তাকালো । তারপর বলল
-আপনি জানেন আমি কে ?
-তুমি কে সেটা তো আমার জানার দরকার নেই । আছে ? নিজের রিক্সা দরকার নিজে ডেকে নাও । আর কথা না বলে পেছনের দিকে হাটা দিলাম । এখনও দুপুরের খাওয়া হয় নি । কালকেই পেছনের দিকের এই হোটেলের খোজটা পেয়েছি আমি ।

যদিও আমি একবারও পেছনের দিকে তাকাই নি তবে আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটা আমার দিকে খানিকটা অবাক হয়েই তাকিয়ে রয়েছে । যদিও আমার তখনও কোন ধারনা নেই আমি কার সাথে কথা বলছি । রুনুর খোজ পেলাম আরও সপ্তাহ খানেক পরে । সাথেই আমার রুমমেট ছিল । দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম । তখনই রুনুকে দেখতে পেলাম ।

জিজ্ঞেস করতেই আমার রুমমেট সব হড়বড় করে বলে দিল । সত্যি বলতে কি একটু ভয় লাগলো নিজের কাছেই । ঐ দিন মেয়েটা যদি ওর কমিশনার ভাইকে সব বলে দেয় তাহলে আমার খবরই আছে । কে জানে বলে দিয়েছে কি না । আমি পরের কয়েকদিন একটু ভয়ে ভয়ে থাকলাম । কিন্তু একটা সময় ভয় কেটে গেল । মনে হল যে কিছু হবে না । মেয়েটা আমাকে চিনে আমিও মেয়েটাকে চিনি না । কিন্তু ভয় ভাঙ্গলো কয়েকদিন পরেই । আমি ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছিলাম । ধানমন্ডির আল ফ্যাসকোর সামনে দেখি রুনু দাড়িয়ে আছে । খানিকটা বিরক্ত মুখে । আমার কি মনে হল আমি রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম । তারপর রুনুর সামনে গিয়ে হাজির হলাম ।
-আপনি এখানে ?

রুনু আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময় । একবার মনে হল আমাকে মনে হয় ঠিক চিনতে পারছে না কিন্তু পরমুহুর্তেই রুনু বলল
-আপনি আগের দিন আমাকে তুমি করে বলছিলেন !
-ও তাই নাকি ! তাই বলেছি বুঝি !
-জি !
-তো এখানে কি !
-কিছু না । আপনার এখানে কি !
-না আমি দেখলাম আমাদের এলাকার এক সুন্দরী মেয়ে এখানে একা একা দাড়িয়ে আছে । মনে হয় আজকেও রিক্সা খুজে পাচ্ছে না । তাই সাহায্য করতে এলাম ।
-ঐদিন তো সাহায্য করেন নি । আজকে কেন হঠাৎ !
আমি খানিকটা কাব্যবিক সুরেই বললাম
-আমি অতীতকে ভুলে যেতে চাই । আসলে অতীতের ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া মানুষ গুলোই সফলকাম হয় ।
সাধারনত এই ধরনের কথায় মেয়েরা পটে না বরং বিরক্ত হয় । কিন্তু রুনুর মুখে হাসি ফুটতে দেখলাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-একজনের আসার কথা !
মনে মনে বললাম যাহ শালা । এই মেয়ের দেখি আগে থেকেই বয়ফ্রেন্ড আছে । তাহলে আর হল কি ।
রুনু বলল
-না । আমার বয়ফ্রেন্ড না । মেয়ে বন্ধু ।
-আমি বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবছিলাম তোমাকে কে বলল ?
-আপনার চেহারা ।
-চেহারায় লেখা ছিল নাকি ?
-ওরকমই মনে করতে পারেন । যাই হোক ও দেরি করছিল । একটু আগে ফোনে ঝাড়ি মেরেছি বলেছি আসতে হবে না ।
-ভাল করেছো । ঝাড়ি মারাই উচিৎ । চল এখনও চল ।

এইবার আমিস ব থেকে সাহসিকতার কাজটা করলাম । আলফ্রাসকোর সিড়ির দিকে হাটা দিলাম রুনুর হাতটা ধরে । এমন একটা ভাব করলাম যে ওর হাত আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই ধরতে পারি । যখন সিড়ি দিয়ে উপড়ে উঠছিলাম তখনও ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে খানিকটা বিশ্ময় কাজ করছে । কিন্তু সেটা হাসিতে পরিনত হত সময় লাগলো না । সিড়িতে উঠতে উঠতেই রুনু বলল
-ভেরি ব্রেভ । এতো সাহস দেখানো কিন্তু ভাল নয় ।
-জানি । সাথে এও জানি যে মেয়েরা সাহসী ছেলেদের পছন্দ করে ।
-কিন্তু মেয়ের ভাইয়েরা কিন্তু এরকম ছেলে পছন্দ করে না ।
-না করুক । মেয়ে পছন্দ করলে মেয়ের ভাই বোন, বাবা মা সবাই এক সময় ঠিকই পছন্দ করে ফেলবে !

যদিও আমার কোন ধারনা ছিল না আমি কি করছি কিন্তু ঝোকের মাথায় ঠিক ঠিক জায়গায় কোপ পড়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । রুনুর সাথে আমার লুকোচুরি প্রেম শুরু হয়ে গেল । এলাকাতে আমরা এমন ভাবে থাকতাম যেন একে অন্যকে চিনিই না । ও মাঝে মাঝে আমার ক্যাম্পাসে আসতো আমিও যেতাম !


তিন

কমিশনার রাজিম ভাইয়ের সাথে তারপর থেকেই বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল । মাঝে মাঝে ওনার এলাকার কাছে অনেক লোকজন দরকার হত । আমার ডাক পড়তে লাগলো । আমিও যেতে লাগলাম । এবং এক সময় আবিস্কার করলাম যে রাজিম ভাই আমাকে বেশ পছন্দ করতে শুরু করেছে । বিভিন্ন কাজে আমি যেতাম । সব থেকে বেশি পছন্দ করতে শুরু করলো যেদিন আমি ওনার জন্য ভাষনের স্ক্রিপ্ট লিখে দিলাম ।

এলাকাতে একটা ফাংশনের আয়োজন করা হয়েছিল । বেশ নেতা এসে হাজির হবে । রাজিম ভাই চিন্তিত কি ভাষন দিবে সেটা নিয়ে । আমি স্ক্রিপ্ট লিখে দিলাম । রাজিম ভাই যখন স্পিচ দিল । হাত দিল যেন থামতেই চায় না । তারপর থেকে আমি আরও একটু পেয়ারের পাত্র হয়ে উঠলাম । এর মাঝে অবশ্য আরও কয়েকবারই আমি রাজিম ভাইয়ের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছি কম্পিউটার ঠিক করার জন্য । শবে-বরাতের দিন রাজিম নিজে আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে হাজির হল । রাতের খাবার খেলাম একই টেবিলে বসে । রুনু আমার দিকে মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকাচ্ছিলো । মাঝে মাঝে পা দিয়ে খোচাও মারছিলো । আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না কারন পাসে রাজিম ভাই বসে ছিল ।

সময় যেতে লাগলো । রুনুর সাথে প্রেমটাও জমে উঠেছে বেশ । তবে মনের ভেতরে একটা চিন্তা আর ভয় ঠিকই কাজ করছিলো । যদি রাজিম ভাই জেনে যায় তাহলে এই ভালবাসা কিসে পরিনত হবে আমি জানি না । তাই একটা সাহসী কাজ করেই ফেললাম । রুনু আমাকে প্রবল ভাবেই মানা করলো । কিন্তু আমি শুনলাম না । আমার মনে হল কাজটা করেই ফেলা দরকার ।

সোজা গিয়ে হাজির হলাম কামিশনারের অফিসে । আমার চেহারা দেখেই রাজিম ভাই কিছু একটা আচ করতে পারলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হয়েছে রে তোর ? এমন কেন লাগছে ?
-ভাই আপনার সাথে একটা কথা বলতাম ।
-বল !
-একটু একা বলা দরকার ।
ঘরের ভেতরে আরও যারা ছিল সবাইকে চলে যেতে বলল । ঘর ফাকা হলে গেলে রাজিম ভাই বলল
-এবার বল কি হয়েছে । কোন সমস্যা ? কেউ কিছু বলেছে ?
-না ভাই !
আমি আরেকবার চিন্তা করলাম বলবো কি না কিংবা বলা ঠিক হবে কি না । ফলাফল যেকোন দিকে যেতে পারে । আমি বললাম
-ভাই আমি একটা খুব বড়ত অন্যায় করে ফেলেছি আপনার সাথে ।
-কি করেছিস ?
-জানি না ভাই কিভাবে করলাম । আপনি আমাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মত দেখেন নিজের বাসায় নিয়ে আমাকে ভাত পর্যন্ত খাওয়ালেন আর আমি কি করে করলাম এই কাজ টা । আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে । আমি কিভাবে করলাম এই কাজটা ।

এটা যদিও একটু বাড়িয়ে বলছি । আসলে রাজিম ভাইকে ইমোশনালী ব্লাকমেইল করার জন্য বলা । রাজিম ভাইয়ের মুখ দেখে মনে হল কিছুটা কাজ হয়েছেও । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আরে বলবি তো কি করেছিস ?
-ভাই রুনু !
এবার রাজিম ভাই একটু সোজা হয়ে বসলো । আমার কাছে মনে হল যা বলেছি এই পর্যন্তই থাক । আর বেশি কিছু বলার দরকার নেই । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল এতো দুর যখন চলে এসেছি তখন আর অপেক্ষা করে লাভনেই । বললাম
-আপনার পরিবারের সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয় । রুনুর সাথে আমার দেখা হয়েছে অনেক বার । কথাও হয়েছে । কিন্তু কদিন থেকেই আমি লক্ষ্য করলো আমি রুনুর ব্যাপারে অন্য রকম ফিল করা শুরু করেছি ।
-কি বলছিস ?
-জি ভাই । আমি মনে হয় রুনুর প্রেমে পরেছি । কিন্তু এই কথাটা মনে হওয়ার পর থেকেই নিজেকে বড় হীন আর ছোট মনে হচ্ছে । বারবার মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে বিট্রে করেছি । তাই রুনুকে আমার মনের কথা জানানোর আগে আমি আপনাকে বললাম । আমি আপনাকে না জানিয়ে কিছু যদি করি তাহলে আপনাকে পেছন থেকে ছুরি মারা হবে যা আমি কোন দিন পারবো না । এখন আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো । যদি আমাকে শাস্তি দিতে চান তাও আমি মাথা পেতে নেব যদি এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে কালই চলে যাবো । আর কোন দিন আপনার সামনে আসবো না ।

শেষ কথা গুলো বলার সময় গলার স্বর এমন করলাম যে নিজের কন্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম ।
রাজিম ভাই সব শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-রুনু জানে ?
-না ভাই ওকে বলি নি ।
-কিছু বলার দরকার নেই । তোকে চিনি বলে কিছু বলছি না । কালকেই চলে যাবি এলাকা ছেড়ে । তোকে যেন এই এলাকায় আর না দেখি ।
-আচ্ছা !

যখন অফিস থেকে বের হলাম তখন নিজের গালেই একটা চড় মারতে ইচ্ছে । রুনুর কথা শুনলেই মনে ভাল হত । তাহলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হত না । বেশি বুদ্ধি দেখাতে গিয়ে সব কিছু হারাতে হল । রুনু সব শুনেও খুব রাগারাগি করলো ।


সন্ধ্যার সময় আবার যখন আমার ডাক পড়লো তখন একট ভয় পেয়ে গেলাম । মনে হল এবার আমার মাইর খাওয়ার সময় এসেছে । নিজেকে খানিকটা প্রস্তুত করেই নিলাম । কিন্তু রুনুকেও রুমের ভেতরে দেখে খানিকটা অবাক হলাম । আমাকে রাজিম ভাইয়ের অফিসে নয় বরং রুনুদের বাসায় আনা হয়েছে । আমি সোজা হয়ে বসে রইলাম । রুনুও বসে রইলো চুপ করে । রাজিম ভাই বলল
-যা হয়েছে হয়েছে । ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখলাম । অনেক ভেবে দেখেছি ..... তুই ছেলে হিসাবে খারাপও না । ভাল জায়গায় পড়াশুনা করিস ! সব দিক দিয়ে ফিট ....

কি হয়েছে ঠিক বুঝলাম না । কি বলবো ঠিক বুঝতেও পারলাম না । কিছু বলা উচিৎ হবে না ভেবে চুপ করেই রইলাম ।
রাজিম ভাই বলল
-আমি বড় ভাই হয়ে ব্যাপারটার অনুমুতি দিচ্ছি তবে খারাপ কিছু যেন কোন দিন না শুনি !
-কিসের.......
বলতে গিয়ে থেমে গেলাম । রুনু আমাকে থামতে বলল চোখের ইশারায় !

রাজিম ভাই এর পর আরও কতকথা বলতে লাগলো । এখনকার ছেলে মেয়েরা কেমন । কি করে না করে । আমাদের কি করা উচিৎ নয় কিংবা কি করা উচিৎ তবে উনি বেশ খুশি হয়ে আমি এমন কিছু করি নি ।


তারপর আমাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেই উনি চলে গেলেন । আমি রুনুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি হল এসব ?
-কি হবে । আরেকটু হলেই নৌকা ডুবতে বসেছিল । তবে এখন ঠিক আছে !
-মানে কি । কিভাবে হল ? আমি ভেবেছিলাম আমার আজকে খবর আছে ।
-খবরই ছিল যদি আমি কিছু উল্টা পাল্টা বলতাম ।





পরিশিষ্টঃ

আমারকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার বলার পরে আমি যখন রুনুকে সব বললাম তখন রুনু ঠিক বুঝতে পারছিলো না কি বলবে । দুপুরে রাজিম ভাই যখন খেতে যায় তখন রুনুকে জিজ্ঞেস করে যে আমি ওর সাথে কখনও কোন খারাপ ব্যবহার করেছি কি না কিংবা কিছু বলেছি কি না ! তারপর রুনুকে অবাক করে দিয়ে জানতে চায় আমাকে তার কেমন লাগে !
রুনু একটু ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলে যে আমাকে ওর বেশ ভাল লাগে তবে রাজিম ভাইয়ের জন্য যে কিছু বলে নি কোন দিন । সেও তার ভাইয়ের মান সম্মান নিয়ে ভাবে খুব !
ব্যাস এতেই পটে যায় । আমরা দুজনই আমাদের পছন্দের থেকে রাজিম ভাইকে বেশি মূল্যায়ন করেছি সে খুবই খুশি হয়ে ওঠে এবং কথা বলার অনুমুতি দেয় আরও ভাল করে বললে প্রেম করার অনুমুতি দেয় ! তবে অনেক শর্তও জুড়ে দেয় ।


তারপর ?
আমরা দুজন সেই শর্ত গুলো মেনেছি কি না কিংবা আমাদের আসল সত্য রাজিম ভাই কোন দিন জানতে পেরেছে কিনা, সেটা অন্য কোন গল্প ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×